বুধবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০১১

৫। জেহাদ আত্মরক্ষামূলক নয়- আক্রমণাত্মক

এই শেষ নবীর (দঃ) আগে যে সব জীবন ব্যবস্থা, দ্বীন আল্লাহ(Allah) পাঠিয়েছেন সেগুলি মানুষ কেমন কোরে বিকৃত, অকেজো কোরে ফেলেছে তা অবশ্যই আল্লাহ(Allah) জানতেন। তাই এবারও যাতে এই শেষ দ্বীনের ঐ বিকৃতি না হয় সেজন্য আল্লাহ(Allah) তার কোরানে কতকগুলি সতর্কবাণী পরিষ্কারভাবে নিবন্ধভুক্ত কোরলেন। এই মহা প্রয়োজনীয় ব্যাপারে শুধু যে আল্লাহ(Allah) মানুষকে সতর্ক কোরলেন তাই নয়, তার প্রেরিত বিশ্বনবীও (দঃ) যে সব ভাবে পুর্ববর্তী জীবন বিধানগুলি বিকৃত হোয়ে গেছে সেই সব প্রতিটি ব্যাপারে তার অনুগামীদের, তার জাতিকে বারবার সতর্ক কোরে দিলেন। এর আগে ধর্মের বিকৃতি অধ্যায়ে যে সব কারণ লিখে এসেছি এখন তা একটা একটা কোরে লক্ষ্য করুন।

ক) নবীর পৃথিবী থেকে বিদায় নেবার পর অতি ভক্তির প্রাবল্যে তাকে ক্রমশঃ উর্দ্ধে ওঠাতে ওঠাতে স্বয়ং স্রষ্টার, আল্লাহ(Allah)র আসনে বসিয়ে দেয়া বা স্রষ্টাই নবীর মুর্তিতে সশরীরে আবির্ভূত হোয়েছিলেন বিশ্বাস ও প্রচার করা। শেষনবীর (দঃ) অনুসারীরাও যেন সে ভুল না করে সেজন্য আল্লাহ(Allah) পরিষ্কার বোলে দিলেন- পূর্ববর্তী নবীদের মত মোহাম্মদও (দঃ) মানুষ (কোরান- সূরা আলে ইমরান ১৪৪)। তার প্রেরিত রসুলও (দঃ) বারবার একথা এমন জোরালোভাবে বোলে গেলেন যে তা তার জাতির হৃদয়ে প্রোথিত হয়ে গেলো।

খ) পূর্ববর্তী নবীদের উম্মাহগুলির মত ধর্ম ও জীবন ব্যবস্থাকে অতি বিশ্লেষণ কোরে ধ্বংস যাতে না করে সে জন্য আল্লাহ(Allah) সাবধানবাণী উচ্চারণ কোরলেন- দ্বীন নিয়ে বাড়াবাড়ি করোনা (কোরান সূরা আন নিসা ১৭১, সূরা মায়েদা ৭৭)। "দ্বীন নিয়ে বাড়াবাড়ি করোনা" আল্লাহ(Allah)র এই কথার উদ্বৃতি দিয়েছি কোরানের সূরা নিসার ১৭১ নং এবং সুরা মায়েদার ৭৭ নং আয়াত থেকে এবং উভয় স্থানেই আল্লাহ(Allah) সম্বোধন কোরেছেন আহলে কেতাব অর্থাৎ ইহুদী খ্রীস্টান ইত্যাদিদের। যারা এই বইয়ের বক্তব্যের সঙ্গে একমত হবেন না এবং তন্ন তন্ন কোরে এর খুত বের করার চেষ্টা কোরবেন তারা বোলবেন ঐ আয়াত দু'টিতে আল্লাহ(Allah) ইহুদী, খ্রীস্টানদের সম্বোধন কোরেছেন, কাজেই ওগুলি মুসলিম(Muslim)দের ওপর প্রযোজ্য নয়। এ বিষয়ে আমার নিজেরই কিছুটা সন্দেহ থাকায় আমি কোরান সম্পর্কে বিশেষজ্ঞ ও বিশিষ্ট মুফাস্‌সিরদের পরামর্শ নিয়েছি। তাদের অভিমত এই যে, ইহুদী ও খ্রীস্টানদের সম্বোধন কোরে বোললেও ঐ আয়াতগুলি মুসলিম(Muslim)দের ওপরও প্রযোজ্য। তারপর সম্পূর্ণ নিঃসন্দেহ হোলাম যখন দেখলাম বিদায় হজ্বে রসুলুল্লাহ (দঃ) তার উম্মাহকে লক্ষ্য কোরে ঐ একই কথা বোললেন। অর্থাৎ দ্বীন নিয়ে বাড়াবাড়ি করোনা। বিদায় হজ্জে তিনি (দঃ) তো আর ইহুদী নাসারাদের সম্বোধন কোরছিলেন না, যে সব বিষয়ে তার উম্মাহ ভুল কোরে গোমরাহ হোয়ে যাবার বিষয়ে তিনি আশংকা ও ভয় কোরেছিলেন সেই সব বিষয়ে উম্মাহকে শেষবারের মত সাবধান কোরে দিচ্ছিলেন।

রসুল (দঃ) আল্লাহ(Allah)র এই বাণীকে ব্যাখ্যা কোরে তার সাহাবা, সাথীদের বোললেন- আমাকে বেশী প্রশ্ন কোরোনা। তোমাদের পূর্ববর্তী জাতি (উম্মাহ) গুলো তাদের নবীদের বেশী প্রশ্ন করতো। তাই নিয়ে মতভেদ, দলাদলি কোরে ধ্বংস হোয়ে গেছে। কাজেই আমি যেটুকু কোরতে বলি সেটুকুই কর। বেশী কোরতে গেলে আগের জাতিগুলির মত ধ্বংস হোয়ে যাবে।

গ) পূর্ববর্তী উম্মাহগুলির পতনের আরেকটি কারণ ছিলো এই যে, তাদের নবীদের ওপর অবতীর্ণ বইগুলি তারা হয় বিকৃত কোরে ফেলেছিলো না হয় যুদ্ধবিগ্রহ বা প্রাকৃতিক কারণে নষ্ট হোয়ে গিয়েছিলো। এই শেষ বইও যে তিনি নিজে রক্ষা না কোরলে তার শেষ নবীর (দঃ) অনুসারীরা বিকৃত কোরে ফেলবে তা তিনি জানতেন- তাই এটার রক্ষার ভার তার নিজের হাতে রাখলেন (কোরান- আল হিজর ৯)।

এই শেষ ও বিশ্বনবী (দঃ) কী কঠিন প্রতিরোধের সম্মুখীন হোয়ে কী অবর্ণনীয় দুঃখ ও কষ্ট কোরে তার ওপর আল্লাহ(Allah)র দেয়া দায়িত্ব পালন কোরলেন তার বর্ণনা এখানে দরকার নেই- কারণ তা ইতিহাস। আমাদের বিষয় ইতিহাসের চেয়েও বহু প্রয়োজনীয় যা দিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি হয় তা। পূর্ববর্তী নবীদের যে কারণে আল্লাহ(Allah) পৃথিবীতে পাঠিয়েছিলেন তার এই শেষ নবীকেও সেই একই উদ্দেশ্যে পাঠালেন- অর্থাৎ পৃথিবীতে মানুষের জীবনে শান্তি, ইসলাম(Islam) প্রতিষ্ঠা কোরতে। তাকে (দঃ) নির্দেশ দিলেন- পৃথিবীতে যত রকম জীবন ব্যবস্থা দ্বীন আছে সমস্তগুলিকে নিস্ক্রিয়, বাতিল কোরে এই শেষ জীবন ব্যবস্থা মানুষের জীবনে প্রতিষ্ঠা কোরতে (কোরান- সূরা আত্‌তওবা ৩৩, সূরা আল ফাতাহ ২৮, সুরা আস-সাফ ৯)। কারণ শান্তির একমাত্র পথই আল্লাহ(Allah)র দেয়া ঐ জীবন বিধান। আল্লাহ(Allah) তার শ্রেষ্ঠ নবীকে শুধু নামায, রোযা, হজ্ব, যাকাত ইত্যাদি শেখাতে পাঠাননি, ওগুলো তার সেই উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য যে জাতির দরকার সেই জাতির চরিত্র গঠনের প্রক্রিয়া, উদ্দেশ্য নয়। উদ্দেশ্য দ্বীনুল কাইয়্যেমা, সেরাতুল মুস্তাকীমকে পৃথিবীময় প্রতিষ্ঠা।

এই বিশাল দায়িত্ব, সমস্ত পৃথিবীময় এই শেষ জীবন বিধান প্রতিষ্ঠা করা, এক জীবনে অসম্ভব। বিশ্বনবী (দঃ) তার নবীজীবনের তেইশ বছরে সমস্ত আরব উপদ্বীপে এই শেষ জীবন বিধান প্রতিষ্ঠা কোরলেন- ইসলামে(Islam)র শেষ সংস্করণ মানব জীবনের একটি অংশে প্রতিষ্ঠা হলো। কিন্তু তার ওপর আল্লাহ(Allah)র দেয়া দায়িত্ব পূর্ণ হোলনা, তার দায়িত্বসমস্ত পৃথিবী, সম্পূর্ণ মানব জাতি। এর আগে কোন নবীর ওপর সম্পূর্ণ মানব জাতির দায়িত্ব অর্পিত হয়নি। যতদিন সম্পূর্ণ মানব জাতির ওপর এই শেষ জীবন বিধান জাতীয়ভাবে প্রতিষ্ঠা না হবে ততদিন মানুষ জাতি আজকের মতই অশান্তি, যুদ্ধবিগ্রহ অবিচারের মধ্যে ডুবে থাকবে- শান্তি, ইসলাম(Islam) আসবেনা এবং বিশ্বনবীর (দঃ) ওপর আল্লাহ(Allah)র দেয়া দায়িত্বও পূর্ণ হবে না।

আল্লাহ(Allah)র রসুল (দঃ) আংশিকভাবে তার দায়িত্বপূর্ণ কোরে চলে গেলেন এবং তার বাকী কাজ পূর্ণ করার ভার দিয়ে গেলেন তার সৃষ্ট জাতির ওপর, তার উম্মাহর ওপর। প্রত্যেক নবী তার ওপর দেয়া দায়িত্ব পূর্ণ কোরেছেন তার অনুসারীদের, তার উম্মাহর সাহায্যে। কোন নবীই একা একা তার কাজ, কর্তব্য সম্পাদন কোরতে পারেননি। কারণ তাদের প্রত্যেকেরই কাজ জাতি নিয়ে, সমাজ, জনসমষ্টি নিয়ে, ব্যক্তিগত নয়। কেউই পাহাড়ের গুহায়, নির্জনে, বা হুজরায় বোসে তার কর্তব্য করেননি, তা অসম্ভব ছিলো। শেষ নবীর (দঃ) বেলায়ও তার ব্যতিক্রম হয়নি। নবুয়াত পাবার মুহুর্ত থেকে ওফাত পর্যন্ত পৃথিবীর ব্যস্ততম মানুষটির জীবন কেটেছে মানুষের মধ্যে, জনকোলাহলে নিরবিচ্ছিন্ন সংগ্রামে, সশস্ত্র সংগ্রামে- এ ইতিহাস অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। নবুয়াতের সমস্ত জীবনটা বহির্মুখী- যে দ্বীন তিনি আল্লাহ(Allah)র কাছ থেকে এনে আমাদের দিলেন সেটার চরিত্রও হলো বহির্মুখী (Extrovert) সংগ্রামী। আল্লাহ(Allah)র রসুল (দঃ) তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব যে তার উম্মাহর ওপর ন্যস্ত কোরে গেলেন তা যে তার উম্মাহ পূর্ণভাবে উপলব্ধি কোরতে পেরেছিলো তার প্রমাণ হলো তার উম্মাহর পরবর্তী কার্যক্রমের ইতিহাস। কারণ বিশ্বনবীর (দঃ) লোকান্তরের সঙ্গে সঙ্গে তার উম্মাহ তাদের বাড়ীঘর, স্ত্রী-পুত্র, ব্যবসায়-বাণিজ্য এক কথায় দুনিয়া ত্যাগ কোরে তাদের প্রাণপ্রিয় নেতার অসমাপ্ত কাজ পূর্ণ কোরতে দেশ ছেড়ে বাইরে বেরিয়ে পড়েছিলো। এ ইতিহাস অস্বীকার করারও কোন পথ নেই। মানুষের ইতিহাসে এমন ঘটনা নেই যে, একটি সম্পূর্ণ জাতি এক মহান আদর্শ পৃথিবীর বুকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য পার্থিব সব কিছু ত্যাগ কোরে দেশ থেকে বের হয়ে পড়েছে। এবং সে মহান আদর্শ হোচ্ছে সমস্ত পৃথিবীতে এমন একটি জীবন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা যেটা মানুষের সমষ্টিগত এবং ব্যক্তিগত জীবনে পূর্ণ শান্তি আনবে। অর্থাৎ এই জাতিটি তাদের নেতা আল্লাহ(Allah)র শেষ নবী (দঃ) যেমন কোরে মানুষের কল্যাণের জন্য নিজেকে উৎসর্গ কোরে দিয়েছিলেন ঠিক তেমনি কোরে পৃথিবীর মানুষের কল্যাণের জন্য নিজেদের সব কিছু বিসর্জন দিয়ে দেশ ছেড়ে বেরিয়ে পড়লো। তাদের নেতা তাদের বোলেছিলেন আমাকে অনুসরণ কর, আমার সুন্নাহ পালন কর, যে আমার সুন্নাহ ত্যাগ কোরবে সে আমার কেউ নয় (হাদীস )। নেতার সুন্নাহ কি? আল্লাহ(Allah) তার নবীকে (দঃ) নির্দেশ দিচ্ছেন পৃথিবীতে যত জীবন বিধান আছে সে সমস্তগুলির ওপর তোমার কাছে অবতীর্ণ এই জীবন বিধানকে প্রতিষ্ঠা কর (কোরান- সূরা আল ফাতাহ্ ২৮, সূরা আত তওবা ৩৩, সূরা আস্ সাফ ৯)। আল্লাহ(Allah)র রসুল (দঃ) সারাজীবন ধোরে তাই কোরলেন এবং যাবার সময় তার অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করার ভার দিয়ে গেলেন তার সৃষ্ট জাতিটার ওপর। স্রষ্টার সর্বশ্রেষ্ঠ রসুল (দঃ) যে জাতি সৃষ্টি কোরলেন সে জাতিও সর্বশ্রেষ্ঠ ( কোরান- সূরা আলে ইমরান ১১০), সে জাতি সে উম্মাহ, তাদের নেতার ওপর অর্পিত দায়িত্বপূর্ণ কোরতে সমস্ত কিছু কোরবান কোরে নেতার পাশে এসে দাঁড়ালো, নিজেদের প্রাণ উৎসর্গ কোরে দিলো।

এই উম্মাহর সহায়তায় শেষ নবী (দঃ) সমস্ত আরবে শেষ জীবন বিধান প্রতিষ্ঠা কোরে চলে গেলেন। তার সৃষ্ট জাতি কিন্তু ভুলে গেলো না যে তাদের নেতার দায়িত্ব শেষ হয়নি, তার ওপর আল্লাহ(Allah)র দেয়া দায়িত্ব হোচ্ছে সমস্ত পৃথিবীতে এই দ্বীন প্রতিষ্ঠা করা। কারণ তিনি ছিলেন সমস্ত মানব জাতির জন্য প্রেরিত এবং সেই দায়িত্ব এসে পড়েছে এবার তাদের ওপর। তাই ইতিহাসে দেখি বিশ্বনবী (দঃ) ওফাতের সঙ্গে সঙ্গে তার উম্মাহ পৃথিবীর সমস্ত কিছু ত্যাগ কোরে আরব থেকে বের হোয়ে পড়েছিলো। একটা জাতি তাদের দেশ ত্যাগ (migration) কোরে অন্য স্থানে চলে গেছে, এমন ঘটনা ইতিহাসে আছে। কিন্তু সেগুলোর কারণ দ্বিগ্বিজয়, অন্য জাতির আক্রমণ, দুর্ভিক্ষ, আবহাওয়ার পরিবর্তন হোয়ে দেশ বাসের অযোগ্য হোয়ে যাওয়া ইত্যাদি। কিন্তু একটা আদর্শ স্থাপন ও প্রতিষ্ঠা করার জন্য একটা গোটা জাতির দেশ থেকে বের হোয়ে যাওয়া মানুষের ইতিহাসে আর নেই। আমরা যদি আমাদের মুসলিম(Muslim) জীবনের অর্থ খুঁজে পেতে চাই তবে ইতিহাসের এই নজীরবিহীন ঘটনাকে আমাদের গভীর ভাবে বুঝতে হবে। প্রথম কথা হলো বিশ্বনবীর সঙ্গীরা(রাঃ) আসহাব এই যে অস্ত্র হাতে আরব থেকে বের হোয়ে পড়লেন এ কাজ ঠিক হলো কি হলো না? রসুলুল্লাহ (দঃ) জীবনভর যে শিক্ষা দিলেন ঐ কাজটি সে শিক্ষার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ কি না? যদি না হোয়ে থাকে তবে পরিষ্কার বলা যায় যে, তবে আল্লাহ(Allah)র সর্বশেষ সর্বশ্রেষ্ঠ রসুলের (দঃ) জীবন বৃথা। কারণ তার ওফাতের কয়েক মাসের মধ্যেই তার সৃষ্ট জাতি, উম্মাহ, তার একান্ত সঙ্গী সহচররা তার শিক্ষার বহির্ভুত একটি কাজ আরম্ভ কোরে দিলেন। শুধু তাই নয়, লক্ষ্য করার বিষয় হলো এই যে, সমগ্র জাতিটা একযোগে এ কাজটা আরম্ভ কোরে দিলো এবং পাঁচ লক্ষ মানুষের জাতিটির মধ্য থেকে একটি মানুষও এর প্রতিবাদ তো দূরের কথা, সর্ব প্রকারে ঐ কাজে সাহায্য কোরলেন। বহু হাদীস উল্লেখ করা যায় যা থেকে পরিষ্কার বোঝা যায় যে, শেষনবী (দঃ) নিশ্চিত ছিলেন যে তার সাহাবা (রাঃ) তার দেয়া শিক্ষায় সম্পূর্ণভাবে শিক্ষিত হোয়েছিলেন, তার শিক্ষার মর্মবাণী তারা উপলব্ধি কোরতে পেরেছিলেন এবং তাদের নেতার বিশ্বনবীর (দঃ) প্রকৃত নায়েব অর্থাৎ প্রতিনিধি হবার যোগ্যতা অর্জন কোরেছিলেন।

এ ব্যাপারে দু'একটি হাদীস উল্লেখ করা অসঙ্গত হবে না। রসুলুল্লাহ (দ) বোলেছেন- আমার সঙ্গীরা উজ্জ্বল তারকার মত- তাদের যে কাউকে মানুষ অনুসরণ কোরতে পারে [হাদীস ওমর বিন খাত্তাব (রাঃ) থেকে রাযিন মেশকাত]। এর অর্থ হোচ্ছে মহানবী স্বয়ং তার সঙ্গীদের ইসলাম(Islam) কি, এর উদ্দেশ্য কি, ঐ উদ্দেশ্য অর্জনের প্রক্রিয়া কি সবই শিক্ষা দিয়েছেন সুতরাং প্রকৃত ইসলাম(Islam) কি তা ঐ আসহাবদের চেয়ে বেশী কেউ জানতে বুঝতে পারতে পারে না, তা অসম্ভব। কারণ তারা আল্লাহ(Allah)র রসুলের সঙ্গে সর্বদা থেকে, তার সঙ্গে অবিরত সংগ্রাম কোরে তার প্রতি সুখ-দুঃখে অংশীদার হোয়ে যে প্রকৃত শিক্ষা তার কাছ থেকে লাভ কোরেছেন সে শিক্ষা পরবর্তীতে কারো পক্ষে সম্ভব নয়। আরেকটি হাদীসে বিশ্বনবী (দঃ) বোলেছেন আমার উম্মাহ ভবিষ্যতে তেহাত্তর ভাগে (ফেরকায়) বিভক্ত হোয়ে যাবে। এবং ঐ তেহাত্তর ফেরকার মধ্যে একটি ফেরকা জান্নাতী (অর্থাৎ সঠিক ইসলামে থাকবে) আর বাকী বাহাত্তর ফেরকাই আগুনে নিক্ষিপ্ত (না'রি) হবে। ঐ একমাত্র জান্নাতী ফেরকা কোনটা এই প্রশ্নের জবাবে আল্লাহ(Allah)র রসুল (দঃ) বোললেন, যার ওপর আমি ও আমার সাহাবীরা আছি [হাদীস- আবদুল্লাহ বিন আমর (রাঃ) থেকে- তিরমিযি, মেশকাত]। এ ব্যাপারে অগুনতি হাদীস উল্লেখ করা যায় যাতে সংশয়ের কোন অবকাশ থাকে না যে মহানবী (দঃ) জানতেন যে তিনি তার আসহাবদের প্রকৃত দ্বীন শিক্ষা দিতে সক্ষম হোয়েছিলেন।

এখন একটা অতি প্রয়োজনীয় প্রশ্ন হোচ্ছে এই , যে কাজটা শেষ নবীর (দঃ) উম্মাহ তার ওফাতের প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই আরম্ভ কোরে দিলো অর্থাৎ অস্ত্র হাতে স্বদেশ থেকে বের হোয়ে পড়লো এর অর্থ কি? আবার বোলছি এই জীবন ব্যবস্থায় অর্থাৎ ইসলামের (Islam) উদ্দেশ্য ও পদ্ধতির গুরুত্ব নির্দেশনায় এই ঘটনা একটি অতি প্রয়োজনীয় বিষয়। উম্মতে মোহাম্মদীর পতনের মূলে যে কয়েকটি প্রধান কারণ কাজ কোরেছে তার মধ্যে অন্যতম হোচ্ছে এই ঐতিহাসিক ঘটনার মূল্যায়ণে পরবর্তী কালের উম্মাহর ব্যর্থতা। ইসলাম(Islam)কে যারা বিকৃতরূপে দেখাতে চান তারা বলেন- এই অভিযান ছিলো একটি সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন। একথা সত্যি হোলে দুঃখের সঙ্গে বোলতে হয় যে, স্রষ্টার শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি, মানব জাতির আদর্শ, যাকে আল্লাহ(Allah) স্বয়ং পৃথিবীর ওপর তার রহমত, করুণা বোলে বর্ণনা কোরেছেন তিনি একটি পরদেশলোভী রক্তপিপাসু জাতি সৃষ্টি কোরে গিয়েছিলেন। এই অভিযোগ যে সত্য নয় তার প্রমাণ হলো এই যে, আলেকজাণ্ডার, চেঙ্গিস, হালাকু খানের সাম্রাজ্যবাদী বিজয় ছিলো ক্ষণস্থায়ী। এগুলোর আয়ু কয়েক বছরের বেশী হতে পারেনি কোথাও। আর মোহাম্মদের (দঃ) উম্মাহর অভিযানের ফলে পৃথিবীর যে অংশটুকুতে ইসলাম(Islam) প্রতিষ্ঠা হোয়েছিলো সেটুকুতে আজ চৌদ্দশ' বছর পরও তা মৃতপ্রায় হোলেও বেঁচে আছে। ইসলাম(Islam)কে কালিমালিপ্ত করার চেষ্টায় অন্য যে অভিযোগটি করা হয় তা হোচ্ছে, উম্মতে মোহাম্মদীর ঐ সামরিক অভিযানের উদ্দেশ্য ছিলো মানুষকে জোর কোরে ধর্মান্তরিত করা। এ অভিযোগও যে মিথ্যা তার প্রমাণ হলো এই যে, যে বিরাট এলাকায় এই শেষ জীবন ব্যবস্থা তারা প্রতিষ্ঠা কোরেছিলেন সে এলাকা তারা একচ্ছত্রভাবে শাসন করেছেন বহু শতাব্দী ধোরে। জোর কোরে ধর্মান্তরিত কোরলে মরক্কো তেকে বোর্নিও পর্যন্ত এই ভূভাগে আজ ইসলাম(Islam) ছাড়া আর কোন ধর্মের অস্তিত্ব থাকতো না। তদানিন্তন পৃথিবীর বোধহয় সবচেয়ে পশ্চাদপদ, সবচেয়ে অশিক্ষিত, সবচেয়ে দরিদ্র এই জাতিটি হঠাৎ কোরে মরুভূমির গভীর অভ্যন্তর থেকে একযোগে বেরিয়ে এসে শক্তিশালী সভ্যজগতের মুখোমুখী হোয়ে দাঁড়ালো। এ কথা বুঝতে কোন অসুবিধা নেই যে, ঐ উম্মাহ নিশ্চয়ই ঐ কাজটাকে তাদের সর্বশ্রেষ্ঠ, সর্বপ্রথম ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কর্তব্য বোলেই বিবেচনা কোরেছিলেন। তা না হলে রসুলাল্লাহর (দঃ) ওফাতের সঙ্গে সঙ্গে তারা একযোগে ঐ কাজ কোরতে সব কিছু ত্যাগ কোরে আরব থেকে বের হোয়ে পড়তেন না। বিশ্বনবীর (দঃ) সাহচর্যে থেকে তার কাছ থেকে সরাসরি যারা এই জীবন ব্যবস্থার মর্মবাণী, উদ্দেশ্য, প্রক্রিয়া শিক্ষা কোরেছিলেন তারা কি বোঝেননি কোন কর্তব্য বড়, কোন কর্তব্য ছোট? কোনটা আগে কোনটা পরে (Priotiry)? মহানবীর (দঃ) আসহাব যদি তা না বুঝে থাকেন তবে আমরা চৌদ্দশ' বছর পরে তা বোঝার কথা চিন্তাও কোরতে পারি না। তাহলে বিশ্বনবীর (দঃ) উম্মাহর ঐ কাজের প্রকৃত অর্থ কি?

এই মহা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা অর্থাৎ উম্মতে মোহাম্মদীর আরব থেকে বের হোয়ে অন্যান্য জাতির সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হোয়ে যাওয়ার প্রকৃত অর্থ এই যে, রসুলুল্লাহর (দঃ) কাছ থেকে সরাসরি ইসলাম(Islam) শিক্ষা করার ফলে তারা সঠিকভাবে বুঝেছিলেন ইসলাম(Islam) কি, এর উদ্দেশ্য কি, ঐ উদ্দেশ্য অর্জন করার প্রক্রিয়া কি, কোনটা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়, কোনটা কম প্রয়োজনীয়। তারা বুঝেছিলেন আল্লাহ(Allah)র প্রতি ইবলিসের চ্যালেঞ্জ হোচ্ছে সে মানুষকে প্ররোচনা দিয়ে দ্বীন অর্থাৎ আল্লাহ(Allah)র দেয়া জীবন বিধানকে হয় বিকৃত না হয় অস্বীকার কোরিয়ে মানুষকে দিয়ে বিধান তৈরী কোরিয়ে মানুষকে অশান্তি, অবিচার, যুদ্ধ রক্তপাতের মধ্যে পতিত করাবে। আর সেই অন্যায়, অবিচার আর রক্তপাত থেকে মানুষকে রক্ষা করার জন্য আল্লাহ(Allah) যে জীবন ব্যবস্থা তার নবীর (দঃ) মাধ্যমে পাঠালেন সেটাকে সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা করা হোচ্ছে তাদের সর্বপ্রধান ও সর্বপ্রথম কর্তব্য। ঐ শিক্ষাই তাদের নেতা, স্রষ্টার সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি, তার শেষ ও বিশ্বনবী (দঃ) তাদের দিয়ে গিয়েছিলেন, নিজে কোরে তাদের হাতে কলমে শিখিয়ে গিয়েছিলেন। অর্থাৎ মানব জাতিকে অশান্তি, অবিচার, অন্যায়, রক্তপাত, যুদ্ধ থেকে বাঁচাবার জন্য পৃথিবীতে শান্তি, ইসলাম(Islam), প্রতিষ্ঠার জন্য, যে জন্য বিশ্বনবীকে (দঃ) আল্লাহ(Allah) পৃথিবীতে পাঠিয়েছিলেন, ঐ জাতি নিজেদের সব কিছু কোরবান কোরে সেই কাজ কোরতে আরব থেকে বাইরে বেরিয়ে পড়েছিলেন।

আজ যদি কোন কমিউনিষ্টকে প্রশ্ন করা যায় যে, তোমরা পৃথিবীময় সংগ্রাম করছো, বহু কোরবাণী করেছো, কমিউনিজমকে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা করার জন্য সশস্ত্র সংগ্রাম করছো, এসব কেন করছো? ঐ কমিউনিষ্ট অবশ্যই জবাব দেবেন যে, পৃথিবীতে যে অর্থনৈতিক ব্যবস্থা চালু আছে সেটার পরিণাম হোচ্ছে অর্থনৈতিক অবিচার, শোষণ, অবর্ণনীয় দুঃখ কষ্ট। কাজেই সেটাকে ভেঙ্গে সেখানে কমিউনিজম চালু করলে সম্পদ সুষ্ঠু বন্টন হবে, মানুষ খেয়ে পরে বাঁচবে এবং মানুষের ঐ কল্যাণের জন্য পৃথিবীময় কমিউনিষ্টরা নিজেদের সব কিছু উৎসর্গ কোরে সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন- অর্থাৎ মানুষের কল্যাণের জন্য তারা নিজেদের উৎসর্গ কোরেছেন। ঠিক ঐ কারণেই অর্থাৎ মানব জাতির বৃহত্তর কল্যাণের জন্য বিশ্বনবীর (দঃ) সৃষ্ট জাতি পার্থিব সব কিছু ত্যাগ কোরে সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলো। শুধু তফাৎ এই যে, কমিউনিষ্টরা যে ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা কোরতে সংগ্রাম কোরছে তা মানুষের তৈরী যা শান্তি, ইসলাম(Islam) আনতে পারবে না, আরও অশান্তি সৃষ্টি হবে। আর বিশ্বনবীর (দঃ) জাতি, উম্মাহ যে ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা কোরতে সংগ্রাম কোরেছিলেন সে ব্যবস্থা হলো স্বয়ং স্রষ্টার তৈরী ব্যবস্থা, দ্বিতীয় তফাৎ হলো মানুষের তৈরী বোলে কমিউনিজম মানুষের শুধু অর্থনৈতিক মুক্তির একটা ব্যবস্থা তৈরী কোরেছে। মানুষের জীবনের অন্যান্য দিক সম্বন্ধে ওটার কোন বক্তব্য নেই। কিন্তু মানুষ শুধু দেহ নয় আত্মাও, শুধু জড় নয় আধ্যাত্মিকও। পক্ষান্তরে আল্লাহ(Allah) যে জীবন ব্যবস্থা দিয়েছেন তা মানুষের দেহের ও আত্মার প্রয়োজনের নিখুঁত সংমিশ্রন (কোরান- সূরা আল বাকারা ১৪৩)। এই ভারসাম্যযুক্ত জীবন ব্যবস্থাকে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা কোরে মানব জাতির মধ্যে শান্তি, ইসলাম(Islam), আনয়ন করাই হচ্ছে একমাত্র উদ্দেশ্য, যে জন্য আল্লাহ(Allah) তার শ্রেষ্ঠ ও শেষ নবীকে (দঃ) পৃথিবীতে পাঠিয়েছিলেন। যে কাজ এক জীবনে সমাপ্ত করা অসম্ভব, সে কাজের ভিত্তি তিনি স্থাপন কোরলেন সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে সমগ্র আরব উপদ্বীপকে এই শেষ জীবন বিধানের অধীনে এনে। এই সময়ের মধ্যে অর্থাৎ তার জীবিত কালের সংগ্রামের মাধ্যমে তিনি (দঃ) তার সৃষ্ট জাতিকে হাতে কলমে শিখিয়ে গেলেন ইসলামে(Islam)র উদ্দেশ্য (সমস্ত পৃথিবীতে এই জীবন বিধান প্রতিষ্ঠা কোরে মানব জাতির মধ্যে শান্তি, ইসলাম(Islam), স্থাপন করা) ও প্রক্রিয়া (সালাত, সওম, হজ, যাকাত ইত্যাদি)। এবং তার সৃষ্ট জাতিকে গভীরভাবে উপলব্ধি কোরিয়ে গেলেন যে তার অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করার দায়িত্ব তার (দঃ) পরে তাদের ওপর সম্পূর্ণভাবে অর্পিত হবে। যারা এ দায়িত্ব পালন কোরবেনা তারা আর তার জাতিভুক্ত থাকবে না।

এই হলো ঐ জাতির উম্মাহর সমস্ত কিছু কোরবান কোরে দল বেঁধে আরব থেকে বের হোয়ে পড়ার একমাত্র কারণ। এবং ঐ জাতিই হলো সত্যিকার অর্থে উম্মতে মোহাম্মদী-মোহাম্মদের (দঃ) জাতি। ঐ জাতি তাদের নেতার ওপর আল্লাহ(Allah)র অর্পিত দায়িত্ব ও তার ওফাতের পর ঐ বিরাট দায়িত্ব তাদের ওপর এসে পড়া সম্বন্ধে এত সজাগ ও সচেতন হয়েছিলেন এবং ঐ দায়িত্ব এমন গভীর ভাবে উপলব্ধি কোরেছিলেন যে, তাদের নেতা আল্লাহ(Allah)র রসুল (দঃ) বিদায় নেবার মাত্র আট মাসের মধ্যে তারা অস্ত্র হাতে সব কিছু ত্যাগ কোরে আরব থেকে বের হোয়ে পড়েছিলেন। আর ঐ আট মাসও দেরী বোধ হয় হতোনা যদি কয়েকটি মিথ্যা নবী আর মোনাফেকরা মাথাচাড়া দিয়ে না উঠতো, যাদের দমন, শায়েস্তা কোরতে ঐ আট মাস সময় লেগেছিলো। মোট কথা এ ইতিহাস অস্বীকার করার কোন উপায় নেই যে, রসুলুল্লাহর (দঃ) ওফাতের সঙ্গে সঙ্গে তার সৃষ্ট জাতিটা অস্ত্র হাতে দেশ থেকে বের হোয়ে পড়েছিলো। যে জাতি আল্লাহ(Allah)র রসুলের (দঃ) পদতলে বসে তার কাছ থেকে সরাসরি ইসলাম(Islam) কি তার শিক্ষা লাভ কোরেছিলো সেই জাতি যদি নেতার চলে যাবার পর সর্বপ্রথম ঐ কাজটি আরম্ভ করে তবে নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, ঐ কাজটিকেই তারা উম্মতে মোহাম্মদী হিসাবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং সর্বপ্রধান কাজই ভেবেছিলেন। কারণ তারা উপলব্ধি কোরেছিলেন যে, এ কাজ অর্থাৎ এ জীবন ব্যবস্থা সমগ্র মানব জাতির পূর্ণ জীবনে যতদিন প্রতিষ্ঠিত না হবে ততদিন শেষ রসুল (দঃ) এবং তার উম্মাহর উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য অর্জন করা হবে না, তাদের কাজ শেষ হবে না। তাই ইতিহাসে দেখি এই উম্মাহ তার নেতার (দঃ) আরদ্ধ কাজ কোরতে পৃথিবীকে তিনটি শর্ত দিয়েছেন। তারা পৃথিবীর যে দিকেই গেছেন সেদিকেই তারা তাদের বিরোধীদের তিনটি শর্ত দিয়েছেন। এ শর্ত তিনটি তারা শিখেছিলেন তাদের নেতা আল্লাহ(Allah)র রসুলের (দঃ) কাছ থেকে। কারণ তিনিও বিরোধীদের ঠিক ঐ তিনটি শর্তই দিতেন। শর্তগুলি হোচ্ছে-

প্রথমতঃ আল্লাহ(Allah)র সার্বভৌমত্ব তওহীদ ও বিশ্বনবীকে (দঃ) স্বীকার কোরে নিয়ে শেষ জীবন বিধান গ্রহণ কর। তাহলো তোমরা আমাদের ভাই হোয়ে যাবে এবং আমাদের সঙ্গে একত্র হোয়ে পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে আমাদের সহযোগী হয়ে যাবে।

দ্বিতীয়তঃ তাতে যদি সম্মত না হও তবে রাষ্ট্রশক্তি ও শাসনভার আমাদের হাতে ছেড়ে দাও, আমরা শেষ জীবন ব্যবস্থা অনুযায়ী শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করবো, তোমরা ব্যক্তিগতভাবে যে যার ধর্মে আছো তাই থাকবে। আমরা বিন্দুমাত্র হস্তক্ষেপ কোরবনা, তোমাদের একজোড়া ছেঁড়া জুতোও নেবনা। কিন্তু তোমাদের মধ্যে যারা আমরা শত্রু দ্বারা আক্রান্ত হোলে আমাদের পক্ষ হোয়ে যুদ্ধ কোরবে না (শুধু যুদ্ধক্ষম লোক) তারা মাথা পিছু একটা কর দেবে।

তৃতীয়তঃ যদি এটাও স্বীকার না কর তবে আর যুদ্ধ ছাড়া পথ নেই। কারণ এই জীবন ব্যবস্থা পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা কোরতে বিশ্বনবীর (দঃ) ওপর স্রষ্টার অর্পিত দায়িত্ব পূর্ণ কোরে পৃথিবীতে শান্তি, সুবিচার প্রতিষ্ঠা কোরতে, ইবলিসের চ্যালেঞ্জে আল্লাহ(Allah)কে জয়ী করাতে আমরা পার্থিব সব কিছু বিসর্জন দিয়ে এখন প্রাণ বিসর্জন দিতে এসেছি। তবে যুদ্ধ কোরে বিজয়ী হোয়ে যদি আমাদের তোমাদের ওপর এই জীবন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা কোরতে হয় তাহোলেও তোমাদের ধর্মে হস্তক্ষেপ করবোনা, তবে তোমাদের যোদ্ধাদের বন্দী করবো।

বিশ্বনবীর (দঃ) উম্মাহর এই প্রচেষ্টা- জেহাদ, পৃথিবীতে শান্তি ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার এই সংগ্রামকে বহুভাবে বিকৃত করার চেষ্টা হয়েছে। অমুসলিম(Muslim)রা তো বটেই এমন কি মুসলিম(Muslim) নামধারী কিন্তু প্রকৃতপক্ষে মোশরেক ও কাফেররাও এই সংগ্রামকে জোর কোরে মানুষকে ধর্মান্তরিত করার প্রচেষ্টা বোলে প্রমাণ করার চেষ্টা কোরেছেন। এ ছাড়াও এক শ্রেণীর বিশ্বাসী মুসলিম(Muslim)ও আছেন যারা ইসলামে(Islam)র যুদ্ধকে শুধুমাত্র আত্মরক্ষামূলক (Defensive) বোলে মনে করেন। এরা প্রমাণ হিসাবে কোরানের সুরা বাকারার ১৯০ নম্বর আয়াত উল্লেখ করেন যেখানে আল্লাহ(Allah) যুদ্ধের অনুমতি দিচ্ছেন শুধু তাদের বিরুদ্ধে যারা মুসলিম(Muslim)দের আক্রমণ করে এবং সুরা বাকারার দু'শ ছাপ্পান্ন নম্বর আয়াত উল্লেখ করেন সেখানে আল্লাহ(Allah) বোলছেন ধর্মে কোন জবরদস্তি নেই অর্থাৎ শক্তি প্রয়োগ কোরে কাউকে ধর্মান্তরিত করা নিষেধ কোরে দিচ্ছেন। এক কথায় মুসলিম(Muslim)দের শুধু আত্ম-রক্ষামূলক যুদ্ধেরই অনুমতি দেয়া হোয়েছে। প্রকৃতপক্ষে উপরোক্ত ঐ আদেশগুলি আল্লাহ(Allah) দিয়েছিলেন ইসলামে(Islam)র অতি প্রথম দিকে যখন এ জীবন-ব্যবস্থায় বিশ্বাসীদের সংখ্যা অতি অল্প সমস্যা তখন প্রধানতঃ আত্ম-রক্ষা। যখনই এ অবস্থা কেটে যেয়ে বিশ্বনবী (দঃ) ও তার সাহাবারা যথেষ্ট শক্তিশালী হোয়ে উঠলেন তখন আর ঐ আদেশের বা অনুমতি আল্লাহ(Allah)ই বদলে দিয়ে নিজেরা অগ্রসর হোয়ে বিরোধীদের, অবিশ্বাসীদের আক্রমণ কোরে পরাজিত কোরতে আদেশ দিলেন। তখন আদেশ এলো- সশস্ত্র সংগ্রাম কর যতক্ষণ না অন্যায়, অশান্তি (পৃথিবী থেকে) নির্মূল হোয়ে সেখানে আল্লাহ(Allah)র দেয়া দ্বীন প্রতিষ্ঠিত হয় (কোরান- সূরা আনফাল ৩৯)। অর্থাৎ যে কথা আগে বোলে এসেছি- পৃথিবীতে প্রচলিত সমস্ত রকম দ্বীন, অর্থাৎ জীবন-ব্যবস্থার মূল উৎপাটন করে আল্লাহ(Allah)র দেওয়া শেষ জীবন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠাই আল্লাহ(Allah)র লক্ষ্য এবং বিশ্বনবীকে(দঃ) পাঠাবার উদ্দেশ্যই তাই। আল্লাহ(Allah) আরো পরিষ্কার কোরে মুসলিম(Muslim)দের বোলছেন- তোমাদের কী হোল ? তোমরা আল্লাহ(Allah)র রাস্তায় সশস্ত্র সংগ্রাম করছোনা অথচ দুর্বল অক্ষম পুরুষ, নারী আর শিশুরা অত্যাচারিত হোয়ে চিৎকার কোরে বোলছে- হে আমাদের প্রতিপালক প্রভু! এই অত্যাচারীদের দেশ থেকে আমাদের বের কোরে নাও। তোমার কাছ থেকে অভিভাবক নিযুক্ত কর। তোমার কাছ থেকে আমাদের সাহায্যকারী দাও (কোরান- সূরা আন নিসা ৭৫)। এখানেও সেই একই কথা, ভুল জীবন ব্যবস্থা গ্রহণের অবশ্যম্ভাবী ফল হিসাবে মানুষ যে অন্যায়, অত্যাচার আর অবিচারের যাতাকলে নিস্পিষ্ট হচ্ছে তা থেকে মানুষকে উদ্ধার করার জন্য আল্লাহ(Allah) উম্মতে মোহাম্মদীকে আদেশ কোরছেন সশস্ত্র সংগ্রাম কোরতে। আত্মরক্ষমূলক নয়, নিজেরা অগ্রগামী হোয়ে সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে সমস্ত পৃথিবীকে এই শেষ জীবন বিধানের মধ্যে নিয়ে আসার এই পরিষ্কার আদেশ থাকা সত্ত্বেও, বিশ্বনবীর (দঃ) জীবনে এর বহু প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও অসংখ্য "ইসলামী চিন্তাবিদেরা" ইসলামে(Islam)র সশস্ত্র সংগ্রামকে শুধু আত্মরক্ষামূলক বোলে প্রমাণ করার ব্যর্থ চেষ্টা কোরেছেন।এমনকি কিছুসংখ্যক আইনজ্ঞ ইসলামে(Islam)র প্রথম দিকে অবতীর্ণ আত্মরক্ষামূলক যুদ্ধের অনুমতি ও ধর্মে শক্তি প্রয়োগ নাই (কোরান- সুরা আল বাকারা ২৫৬) এর ভিত্তি কোরে অভিমত দিয়েছেন যে, ইসলাম(Islam) শুধু আত্মরক্ষামূলক যুদ্ধ সমর্থন করে। এই ভুল অভিমত ও আকীদার পেছনে প্রকৃত পক্ষে কাজ কোরেছে

ক) ইসলামে(Islam)র উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য সম্বন্ধে সঠিক আকীদার অভাব।

খ) দ্বীন বোলতে কি বোঝায় সে সম্বন্ধে আকীদার ভুলে অন্যান্য প্রচলিত ধর্মের, বিশেষ কোরে খ্রীস্টান ধর্মের ধারণার অর্থাৎ আকীদার অনুকরণ।

গ) হীনমন্যতায় আপ্লুত হোয়ে পাশ্চাত্যের কাছে কৈফিয়ৎ দেয়া যে, তোমরা যে আমাদের দোষারোপ কর যে আমরা তলোয়ারের জোরে আমাদের ধর্ম বিস্তার কোরেছি তা ঠিক নয়- কারণ দেখো আমাদের কোরানেই আছে যে, "ধর্মে বলপ্রয়োগ নেই।" এই মেরুদণ্ডহীন কৈফিয়ৎ দানকারীরা ও পাশ্চাত্যের কাছে করজোড়ে ক্ষমাপ্রার্থীরা চিন্তা কোরে দেখেন নাই যে ঐ কাজ কোরে তারা উম্মতে মোহাম্মদীর মুজাহিদ, মহানবীর (দঃ) আসহাবদের শুধু অন্যায়কারী আখ্যা দিয়েছেন তাই নয় তারা এও বুঝিয়েছেন যে, বিশ্বনবী (দঃ) নিজেই কোরানের ঐ আয়াত আদেশগুলি বুঝতে পারেননি, কিন্তু তারা সঠিকভাবে বুঝেছেন (নাউজুবিল্লাহ)। হীনমন্যতা মানুষকে কোথায় নিয়ে যেতে পারে। আল্লাহ(Allah) মহানবীকে (দঃ) যখন যথেষ্ট শক্তিশালী কোরলেন তখনই তিনি আরবের বিভিন্ন দিকে সামরিক অভিযান পাঠিয়ে সমস্ত আরবকে আল্লাহ(Allah) প্রদত্ত জীবন ব্যবস্থার অধীনে নিয়ে আসলেন, ঐ ইতিহাসকে কেউ অস্বীকার কোরতে পারবেন না। ঐ সব অভিযানের সেনাপতিদের সবাইকে তিনি নির্দেশ দিয়ে দিতেন সেই তিনটি শর্ত প্রথমে তাদের দিতে। প্রথম ও দ্বিতীয় শর্ত গ্রহণ না কোরলে যুদ্ধ কোরে পরাজিত কোরে তাদের ইসলামে(Islam)র শাসন ব্যবস্থার মধ্যে নিয়ে আসাই ছিল তার (দঃ) নির্দেশ। তারপর বিশ্বনবীর (দঃ) ওফাতের পরপরই আবু বকর (রাঃ) আভ্যন্তরীন গোলযোগ দমন করার সঙ্গে সঙ্গে ইরাক ও সিরিয়ার দিকে মুসলিম(Muslim) বাহিনী পাঠিয়ে দিলেন, এ ইতিহাসও অস্বীকার করার সাধ্য নেই। তখন পারসিকরা ও বাইজানটাইন রোমানরা ইসলামে(Islam)র বিরুদ্ধে আক্রমণ করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলো এমন কোন প্রমাণ নেই। প্রকৃতপক্ষে ঐ দুই বিশ্বশক্তি আরবদের কোন তোয়াক্কাই করতো না। আরবদের সম্বন্ধে ছিলো তাদের অপরিসীম অবজ্ঞা, একথা ইতিহাস। আবু বকরের (রাঃ) পর বাকী তিন খোলাফায়ে রাশেদুন (রাঃ) ও তারও পর ৬০/৭০ বছর পর্যন্ত একটানা এ সংগ্রাম চলেছে তাও কারুর অস্বীকার করার পথ নেই। আল্লাহ(Allah) শুধু আত্মরক্ষামূলক যুদ্ধের অনুমতি দিয়েছেন যারা বলেন তারা প্রকারান্তরের রসুলুল্লাহ (দঃ) থেকে শুরু কোরে এই উম্মাহর ৬০/৭০ বছর পর্যন্ত সমস্ত খলিফাদের (রাঃ) ও আসহাবদের আল্লাহ(Allah)র আদেশ বুঝতে অসমর্থ বোলে প্রমাণ কোরতে চেষ্টা করেন। তারা খৃস্টানদের কাছে কৈফিয়ৎ দিয়ে কৃতার্থ হোতে যেয়ে কত বড় ধৃষ্টতা করেন তা তারা বোঝেন না। ইসলামে(Islam)র প্রাথমিক দুর্বলতার সময়ে শুধু আত্মরক্ষার যুদ্ধের অনুমতি ও পরে অবস্থার পরিবর্তনে নিজেরা উদ্যোগী হোয়ে শত্রুকে আক্রমণ করার মতো পরিবর্তন আল্লাহ(Allah) আরও ব্যাপারে কোরেছেন। একে আমরা বোলতে পারি কোন ব্যাপারে পর্যায়ানুক্রমিক বিকাশ। উদাহরণ হিসাবে নেয়া যায় মদ খাওয়া (Strong drink) এটা হঠাৎ কোরে নিষেধ করা হয়নি। প্রথমে নির্দেশ এলো মাতাল অবস্থায় সালাতে (নামাযে) যোগ দিও না (কোরান- সূরা আন নিসা ৪৩)। এতে সূরা পান অনেকটা কমে গেলো। এর বেশ পরে আল্লাহ(Allah)র নির্দেশ এলো সুরাপানের মধ্যে ভালও আছে, মন্দও আছে কিন্তু ভালোর চেয়ে ওতে মন্দের ভাগ বেশী(কোরান- সূরা আল বাকারা ২১৯)। অত্যন্ত মৃদু নিষেধাজ্ঞা, যেন আল্লাহ(Allah) স্নেহ কোরে বুঝিয়ে বোলছেন। আরও কমে গেলো মদ খাওয়া। তারপর এলো সরাসরি আদেশ মদ খাবে না (কোরান- সূরা আল মায়েদা ৯৩)। এখন যদি ঐ প্রথম নির্দেশ ধোরে বসি এবং বলি শুধু মাতাল হয়ে নামায পড়াই নিষেধ তাহলে কেমন হবে?

প্রথম আত্মরক্ষার যুদ্ধের অনুমতি দেবার পর পরবর্তী কালে উপযুক্ত সময়ে আল্লাহ(Allah) অনেকবার পরিষ্কার আদেশ দিয়েছেন উদ্যোগী হয়ে, অগ্রগামী হয়ে সামরিকভাবে অন্যান্য জাতির সম্মুখীন হোয়ে তাদের প্রথমে এই শেষ ইসলাম(Islam)কে গ্রহণ কোরতে আমন্ত্রণ কোরতে। যদি তাতে তারা সম্মত না হয় তবে তাদের শাসনভার মুসলিম(Muslim)দের হাতে ছেড়ে দিতে, যাতে তারা আল্লাহ(Allah)র দেওয়া জীবন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা কোরে সর্বরকম অন্যায়, অবিচার, অশান্তি নির্মূল কোরে মানুষের মাঝে শান্তি ফিরিয়ে আনতে পারেন- কারণ সব কিছুর মূলেই ঐ আসল উদ্দেশ্য- শান্তি, ইসলাম(Islam) প্রতিষ্ঠা করা। আর তাই প্রতি নবীর সময় প্রতি ধর্মের আসল নাম ইসলাম(Islam), শান্তি। যদি ঐ জাতিগুলো এই দুই শর্তের কোন শর্ত গ্রহণ না করে তবে আল্লাহ(Allah) ও তার রসুলের (দঃ) সরাসরি আদেশ হোচ্ছে তাদের আক্রমণ কোরে পর্যুদস্ত কোরে তাদের শাসনভার মুসলিম(Muslim)দের হাতে তুলে নেয়ার। আল্লাহ(Allah) ও তাঁর রাসুলের (দঃ) ঐ হুকুম পালন কোরে এই উম্মাহ শত শত আক্রমণাত্মক যুদ্ধ কোরেছে এটা ইতিহাস।

যে পর্যায়ক্রমিক বিকাশের কথা বোলছি এই সংগ্রামের ব্যাপারে এখানেই তার শেষ নয়। আল্লাহ(Allah) তো তার নবীকে (দঃ) দায়িত্ব দিয়েছেন এই শেষ জীবন বিধানকে সংগ্রামের এবং সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে সমস্ত পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা করার। কাজেই প্রথমে আরবের মোশরেকদের পরাভুত করার পর তিনি ঐ ক্রমবিকাশের ধারা ধোরেই পরবর্তীতে আরবের বাইরে আহলে কিতাব অর্থাৎ ইহুদী ও খ্রীস্টানদেরও বিরুদ্ধে যুদ্ধ কোরে তাদেরও এই জীবন ব্যবস্থা, দ্বীনের অধীনে নিয়ে আসার আদেশ দিয়েছেন। তিনি বোলছেন- যাদের ওপর কেতাব নাজেল হোয়েছে (ইহুদী, খ্রীস্টান ইত্যাদি) তাদের মধ্যে যারা আল্লাহ(Allah) ও শেষ বিচারের দিন বিশ্বাস করে না, যা আল্লাহ(Allah) ও তার রসুল নিষিদ্ধ কোরেছেন তা নিষিদ্ধ মনে করে না এবং সত্য দ্বীনকে স্বীকার করে না তাদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রাম কর যে পর্যন্ত না তারা পর্যুদস্ত, পরাজিত হোয়ে জিজিয়া কর দেয় (কোরান- সূরা আত তওবা ২৯)। এই আয়াতে বা এর আগে পরে কোথাও আল্লাহ(Allah) এ শর্ত রাখেননি যে ইহুদী খ্রীস্টানরা আক্রমণ কোরলে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কর। বরং এটা সরাসরি আদেশ মো'মেনদের নিজেদের অগ্রগামী হোয়ে তাদের আক্রমণ কোরে পর্যুদস্ত করার জন্য। এই জাতি যতদিন আল্লাহ(Allah)র এই আদেশ পালন কোরে গেছে, নিজেদের সবকিছু কোরবান কোরে আরব থেকে বহির্গত হোয়ে সশস্ত্র সংগ্রাম কোরে গেছে ততদিন আল্লাহ(Allah) তাদের সঙ্গে ছিলেন। কারণ তখন তারা আল্লাহ(Allah)র আদেশও পালন কোরেছেন তাদের নবীর সুন্নাহও পালন কোরেছেন। তাই তারা তাদের চেয়ে বহুগুণ শক্তিশালী বিশ্বশক্তিগুলিকেও যুদ্ধে পরাজিত কোরে রাষ্ট্র শক্তি অধিকার কোরে আল্লাহ(Allah)র দ্বীন, জীবন ব্যবস্থা কার্যকরী কোরে শান্তি, ইসলাম(Islam) প্রতিষ্ঠা কোরেছেন। আল্লাহ(Allah) এই জাতিকে বোলে দিয়েছিলেন- তোমাদের কী হোয়েছে যে, যখন তোমাদের বলা হয় আল্লাহ(Allah)র রাস্তায় (সশস্ত্র সংগ্রাম) অভিযানে বের হও, তখন তোমরা যেন মাটির সাথে মিশে যাও; তোমরা কি তাহোলে এই দুনিয়াকেই আখেরাতের চেয়ে পছন্দ করছো? কিন্তু এই দুনিয়ার আরাম আখেরাতের তুলনায় অতি সামান্য। তোমরা যদি (জেহাদের) অভিযানে বের না হও তবে তোমাদের কঠিন শাস্তি দেব এবং তোমাদের বদলে অন্য জাতিকে মনোনীত করবো। তোমরা তার (আল্লাহ(Allah)র) কোনও ক্ষতি কোরতে পারবে না (কারণ) আল্লাহ(Allah) সর্বশক্তিধর (কোরান- সূরা আত তওবা ৩৮-৩৯)।

আল্লাহ(Allah) যে মিথ্যা ভয় দেখাননি তার প্রমান ইতিহাস। আল্লাহ(Allah) ও তার রসুলের (দঃ) অর্পিত দায়িত্ব জেহাদ ছেড়ে দিয়ে ফতোয়াবাজী ও আত্মা ঘষামাজায় ব্যস্ত হবার শাস্তি হলো এই যে, এই জাতিকে ইহুদী খ্রীস্টান জাতি গুলির দাসে পরিণত কোরে দেয়া হলো। অভিযানে বের না হবার অর্থাৎ জেহাদ ছেড়ে দেবার শাস্তি আল্লাহ(Allah) বোলছেন কঠিন শাস্তি ও অন্য জাতিকে মনোনীত করা অর্থাৎ তাদের গোলাম কোরে দেয়া। ঐ কঠিন শাস্তিটা শুধু এই দুনিয়ায় নয় ঐ দুনিয়াতে, আখেরাতেও। দুনিয়ার শাস্তি অন্য জাতির দাসত্ব কতখানি হৃদয়বিদারক তা ইতিহাস পড়ে দেখুন। যারা এই দ্বীনের প্রকৃত আকীদা স্বয়ং আল্লাহ(Allah)র রসুলের (দঃ) কাছে থেকে শিক্ষা কোরেছিলেন তাদের একজন, আবু বকর (রাঃ) জাতিকে লক্ষ্য কোরে বোলেছিলেন- হে মুসলিম(Muslim) জাতি! তোমরা কখনও জেহাদ ছেড়ো না, জেহাদ ছাড়লে আল্লাহ(Allah) তোমাদের অপমান অপদস্থ না কোরে ছাড়বেন না। এই জাতির ইতিহাস আবু বকরের (রাঃ) কথার সত্যতার স্বাক্ষী। আজকের এই ‘মুসলিম(Muslim)' জাতির আকীদা আবু বকরের (রাঃ) আকীদার ঠিক বিপরীত আকীদা। জেহাদ, সশস্ত্র সংগ্রাম এই জাতির আকীদা থেকে ধুয়ে মুছে বাদ দেয়া হোয়েছে। এটা আর বর্তমানের উম্মতে মোহাম্মদীর দাবীদার জাতির আকীদা নয়। ইসলামে(Islam)র জেহাদ, সশস্ত্র সংগ্রাম আত্মরক্ষামুলক নয়, কিন্তু জেহাদ ছেড়ে দেবার পর থেকে হাজার বছরেরও বেশী সময় ধোরে অবিশ্রান্ত মিথ্যা প্রচারের ফলে আজ এই জাতির আকীদা ও ঈমানের মধ্যে এই মিথ্যা স্থান কোরে নিয়েছে। আল্লাহ(Allah) কোরানে জেহাদ সম্বন্ধে কি বোলেছেন, কতবার বোলেছেন তার রসুল (দঃ) সশস্ত্র সংগ্রাম সম্বন্ধে কী বোলেছেন (এবং দশ বছরের কম সময়ে আটাত্তরটি সশস্ত্র যুদ্ধ পরিচালনা কোরেছেন) এবং সর্বোপরি তার আসহাব প্রকৃত উম্মতে মোহাম্মদীর শত বৎসরের নিরবিচ্ছিন্ন সশস্ত্র সংগ্রামের ইতিহাস পড়ার পরও কোন মানুষ সংগ্রামবিহীন ইসলাম(Islam) চিন্তা কোরতে পারে একথা ভাবতেও অসম্ভব মনে হয়। ইংরাজীতে brain wash বোলে একটা কথা আছে অর্থাৎ মগজ ধোলাই। জেহাদ সম্বন্ধে এই মগজ ধোলাই অত্যন্ত সফলতার সাথে করা হোয়েছে। অবশ্য এজন্য তারা সময় পেয়েছেন প্রচুর, প্রায় তেরশ বছর।

বিশ্ব নবীর (দঃ) মক্কা জীবনে সশস্ত্র যুদ্ধের কথা ওঠে না। কারণ দু'একশ' লোক একটা জাতির বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ মানে আত্মহত্যা। কিন্তু তার মানে এ নয় যে অস্ত্র ধারণ নীতি ছিলো না বা নীতি বিরুদ্ধ ছিলো। হেরা গুহায় এই দ্বীন অবতীর্ণ হবার মুহূর্ত থেকেই সশস্ত্র সংগ্রাম এর প্রধানতম নীতি (আকীদা) ছিলো। নীতি প্রয়োগ করা হয়নি কারণ তখনও শক্তি সঞ্চয় করা হয়নি। মদীনায় হিজরতের সঙ্গে সঙ্গে নীতি প্রয়োগ আরম্ভ করা হলো। যারা এই জাতির ইতিহাস ভালো কোরে পড়েননি এবং আত্মরক্ষার যুদ্ধের মিথ্যা প্রচারের শিকার হোয়েছেন তাদের ধারণা বদরের যুদ্ধই ইসলামে(Islam)র প্রথম যুদ্ধ। তারা হয়তো জানেন না যে, বদরের যুদ্ধের আগেই মহানবীর (দঃ) মোট সাতটি সশস্ত্র অভিযান শত্রুর বিরুদ্ধে প্রেরণ কোরেছিলেন। একেবারে প্রথম অভিযানটি উবাইদা বিন হারেসের (রাঃ) অধীনে ৬০ থেকে ৮০ জন অশ্বারোহী, উষ্ট্রারোহীর দলকে ওয়াদ্দান নামক স্থানে পাঠানো হয়। সেখানে সা'দ বিন আবু ওয়াক্কাস (রাঃ) কোরেশদের লক্ষ্য কোরে প্রথম তীর ছোড়েন (সিরাত রাসুলুল্লাহ- ইবনে ইসহাক)। এখানে ভাববার কথা আছে। মক্কায় মুসলিম(Muslim) মোমেনদের ওপর একতরফা অত্যাচার ছিলো, মোমেনদের প্রতিরোধের শক্তি ছিলো না। মদিনায় হিজরতের সঙ্গে সঙ্গেই যেটুকু শক্তি সঞ্চয় হলো ঐটুকু নিয়েই আল্লাহ(Allah)র রসুল (দঃ) সশস্ত্র অশ্বারোহীর দল শত্রুর উদ্দেশ্যে পাঠাতে শুরু কোরেছিলেন। এখন যদি দেখা যায় মদীনায় হিজরতের পর মোমেনদের সাথে মোশরেকদের প্রথম সাক্ষাতেই সা'দ (রাঃ) আক্রমনের অপেক্ষা না কোরেই প্রথম তাদের লক্ষ্য কোরে তীর নিক্ষেপ করেন তবে অবশ্যই বোলতে হবে যে আক্রান্ত না হোলে আক্রমণ কোরব না এ নীতি নিশ্চয়ই মুসলিম(Muslim)দের ছিলো না। তাছাড়া নীতি আত্মরক্ষামূলক হোলে মহানবী (দঃ) অশ্বারোহীদের প্রথম আক্রমণ নিষেধ কোরে দিতেন এবং সা'দ (রাঃ) আল্লাহ(Allah)র রসুলের (দঃ) নির্দেশ অমান্য কোরে বিনা প্ররোচনায় কখনও প্রথম তীর ছুঁড়তেন না।

এই প্রথম দল প্রেরণের সঙ্গে সঙ্গেই বিশ্বনবী (দঃ) আরও একটি সশস্ত্র অশ্বারোহী দল পাঠান। এ দলে অশ্বারোহী, উষ্ট্রারোহীর সংখ্যা ছিলো ত্রিশ জন এবং এর নেতৃত্ব দেন মহাবীর হামযা বিন আবদুল মুত্তালিব (রাঃ)। এই দলের সাথে আবু জাহেলের নেতৃত্বে তিনশ' অশ্বারোহীর একটি দলের সাক্ষাৎ হয় সমুদ্র তীরবর্তী এক স্থানে। ইবনে ইসহাক লিখছেন মাজীদ বিন আমর নামে অন্য গোত্রের একটি শান্তিপ্রিয় লোক মাঝে পড়ে মধ্যস্থতা না কোরলে সংঘাত বেঁধে যেতো (সিরাত রাসুলাল্লাহ- ইবনে ইসহাক। অনুবাদ- A Guillaume পৃঃ ২৮৩)। লক্ষ্য করুন মুসলিম(Muslim)রা ত্রিশ জন এবং মোশরেকরা তিনশ' অর্থাৎ শত্রু দশগুন বেশী। নীতি আগ্রাসী হোলেও ঐ অবস্থায় সুবুদ্ধির কাজ ছিলো সংঘাত এড়িয়ে যাওয়া। কিন্তু মাজীদ মধ্যস্থতা না কোরলে মৃত্যুভয়হীন দুঃসাহসী ঐ ত্রিশ জনই তিনশ' শত্রুকে আক্রমণ কোরে বোসতেন। আল্লাহ(Allah) ও তার রসুলের সামরিক নীতি আত্মরক্ষামূলক হোলে মহাসম্মানিত সাহাবা হামযা (রাঃ) সেটার অসম্মান কোরে আক্রমণ কোরতেন কি? এর পর মহানবী স্বয়ং কোরায়েশদের বিরুদ্ধে বুয়াত ও উশায়রায় দুইটি অভিযানে নেতৃত্ব দেন। এছাড়া উশায়রায় অভিযান থেকে ফেরার পরই তিনি (দঃ) মদীনায় উট লুণ্ঠণকারী কুরয বিন জাবেরের পশ্চাদধাবন কোরে সাফাওয়ান উপত্যকা পর্যন্ত যান। এরপর আল্লাহ(Allah)র রসুল (দঃ) আবদুল্লাহ বিন জাহশ (রাঃ) কে আটজন উষ্ট্ররোহীর দলের নেতৃত্ব দিয়ে মক্কা ও তায়েফের মধ্যবর্তী নাখলা নামক স্থানে পাঠান। এইখানে তারা মক্কার কোরায়েশদের একটি কাফেলার দেখা পান। দিনটি ছিলো রজব মাসের শেষ দিন। এখানে বোলে নেয়া দরকার যে আরবদের মধ্যে চারটি মাস হারাম বা অলংঘনীয় মনে করা হতো। এই কয়েকমাস সর্বপ্রকার যুদ্ধ, মারামারি কঠোরভাবে নিষিদ্ধ ছিলো। মহাশত্রুকেও হাতে পেলে কেউ তাকে আঘাত কোরত না। জাহশ এবং তার সাথীরা (রাঃ) সমস্যায় পড়ে গেলেন। কি করা যায় এখন? আক্রমণ কোরলে নিষিদ্ধ মাস লংঘন করা হয়। আবার না কোরলে কাফেলাটা হাত ছাড়া হোয়ে যায়। সাহাবারা (রাঃ) নিজেদের মধ্যে পরামর্শ কোরে আক্রমণ করাই স্থির কোরলেন। সাহাবারা তখন মাত্র ছয় জন, কারণ উট হারিয়ে যাওয়ায় দু'জন উট খুঁজতে পেছনে পড়ে গিয়েছিলেন। ঐ ছয় জনের আক্রমণেই মোশরেকদের কাফেলার একজন তীরের আঘাতে নিহত হলো, দুইজন আত্মসমর্পণ করলো আর বাকিগুলো ছত্রভঙ্গ হোয়ে পালিয়ে গেল। কাফেলার মালপত্র ও ঐ দু'জন বন্দী নিয়ে সাহাবারা মদীনায় ফিরে এলেন। নিষিদ্ধ মাসে যুদ্ধ ও মানুষ হত্যা করা হোয়েছে বোলে বিশ্বনবী (দঃ) ইতঃস্ততায় পড়ে গেলেন। বন্দী ও গনিমতের মাল গ্রহণ না কোরে অমিমাংসিত অবস্থায় রেখে দিলেন আল্লাহ(Allah)র নির্দেশের অপেক্ষায়। অচিরেই আল্লাহ(Allah)র নির্দেশ এসে গেলো। আল্লাহ(Allah) তার নবীকে (দঃ) জানালেন- তারা তোমাকে নিষিদ্ধ মাসে যুদ্ধের ব্যাপারে প্রশ্ন করে। ঐ মাসে যুদ্ধ (অবশ্যই) একটি গুরুতর বিষয়। কিন্তু মানুষকে আল্লাহ(Allah)র পথ থেকে বিরত রাখা, তাকে অস্বীকার করা, পবিত্র মসজিদে (মানুষের গমনাগমন) বাধা দেওয়া এবং সেখান থেকে সেখানকার লোকজন বহিস্কার করা, আল্লাহ(Allah)র কাছে তার চেয়েও গুরুতর বিষয় (কোরান- সুরা আল বাকারা ২১৭)।

এই পরিষ্কার নির্দেশ আসার পর মহানবী (দঃ) বন্দী ও গণিমতের মাল যথারীতি গ্রহণ করলেন। যারা ইসলামে(Islam)র যুদ্ধকে আত্মরক্ষামূলক বোলে বোলতে চান অর্থাৎ যাদের সম্বন্ধে আল্লাহ(Allah) বোলেছেন- তোমাদের কী হোয়েছে যে, যখন তোমাদের বলা হয় আল্লাহ(Allah)র রাস্তায় অভিযানে বের হও, তখন তোমরা যেন মাটির সাথে মিশে যাও (কোরান- সূরা আত তওবা ৩৮), তারা এই ঘটনাকে তাদের পক্ষে যুক্তি হিসাবে দাঁড় করাবার চেষ্টা করেন। গোজামিল দেবার চেষ্টায় তারা বলেন- এই ঘটনায় অর্থাৎ সাহাবারা (রাঃ) অগ্রগামী হোয়ে কাফেলা আক্রমণ করায় বিশ্বনবী (দঃ) ক্রুদ্ধ হোয়েছিলেন।

প্রথম কথা হলো তারা অসত্য বলেন, তিনি ক্রুদ্ধ হননি। বোলেছিলেন আমি তো তোমাদের নিষিদ্ধ মাসে যুদ্ধ কোরতে আদেশ করিনি (সিরাত রসুলাল্লাহ- ইবনে ইসহাক, অনুবাদ-A Guillaume পৃঃ ২৮৭)।

দ্বিতীয় হলো আল্লাহ(Allah)র রসুল (দঃ) এখানে যুদ্ধ করা সম্বন্ধে বোলছেন না, বোলছেন শুধু নিষিদ্ধ মাস লংঘন করার কথা। অর্থাৎ যুদ্ধ কোরেছো ঠিকই কোরেছো, নিষিদ্ধ মাসে কেন কোরলে? তারপর আল্লাহ(Allah) যখন এ ব্যাপারে তার নির্দেশ দিলেন সেখানেও যুদ্ধ কোরে কাফেলা আক্রমণ কোরে সাহাবারা ভুল কোরেছেন কিনা সে সম্বন্ধে আল্লাহ(Allah) কোন কথা বোলছেন না। কারণ প্রশ্নই তা নয়, বোলছেন তারা প্রশ্ন কোরছে "নিষিদ্ধ মাসে যুদ্ধ সম্বন্ধে" তারপর আল্লাহ(Allah) তো সম্পূর্ণ পরিষ্কারই কোরে দিলেন যে-

ক) আক্রমনাত্মক যুদ্ধ তো ঠিক আছেই । এমন কি

খ) নিষিদ্ধ মাসেও আক্রমণাত্মক যুদ্ধ ঠিক আছে।

অথচ আশ্চর্যের ব্যাপার এই ঘটনাকে আক্রমনাত্মক যুদ্ধের বিপক্ষে প্রমাণ হিসাবে দাঁড় করাবার চেষ্টা করা হয়। আকীদার কী সাংঘাতিক বিকৃতি।

নিজের আসহাব (রাঃ) যাদের সম্বন্ধে মহানবী (দঃ) বোলেছেন তারা প্রত্যেকে এক একটি নক্ষত্রের মত, মানুষ তাদের যে কাউকে অনুসরণ কোরতে পারে, সেই আসহাব যারা আল্লাহ(Allah)র রসুলের (দঃ) পদতলে বোসে ইসলাম(Islam) কী, এর উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য কী, এর সামরিক নীতি কী- এসব শিক্ষা কোরেছিলেন তারাই ঠিক, নাকি কয়েকশ' বছর পর যখন ইসলাম(Islam) বিকৃত, বিপরীত হোয়ে পরিণামে শত্রুর গোলামে পরিণত, তখনকার মানুষের অভিমত ঠিক? সাহাবাদের ইতিহাস কি? সাহাবাদের তর্কাতীত ইতিহাস এই যে যতদিন তাদের প্রাণপ্রিয় নেতা আল্লাহ(Allah)র রসুল (দঃ) তাদের মধ্যে ছিলেন ততদিন তারা তার সঙ্গে থেকে অবিশ্রান্তভাবে সংগ্রাম কোরে গেছেন। তারপর যখন তিনি তাদের মধ্য থেকে চলে গেলেন তখন তারা ঐ সংগ্রাম এক মুহূর্তের জন্যও না থামিয়ে পার্থিব সব কিছু বিসর্জন দিয়ে অস্ত্র হাতে সদলবলে আরব থেকে বের হোয়ে যেয়ে তদানিন্তন পৃথিবীর দুইটি মহাশক্তিকে (Super powers) এক যোগে আক্রমণ কোরে তাদের পরাজিত কোরলেন। তারপর তাদের একটা অংশ আরব উপদ্বীপ থেকে বের হোয়ে উত্তর আফ্রিকা আক্রমণ কোরে একের পর এক যুদ্ধে বিজয়ী হোতে হোতে সমস্ত উত্তর আফ্রিকা জয় কোরে আটলান্টিক মহাসাগরের উপকূলে পৌঁছে গেলেন। খলিফা ওমরের (রাঃ) অনুমতি নিয়ে চার হাজার মুসলিম(Muslim) সৈন্য নিয়ে আমর বিন আ'স (রাঃ) যখন মিশর আক্রমণ কোরেছিলেন তখন মিশরীয়রা মুসলিম(Muslim) জাতিকে আক্রমণ করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন এমন কথা আজ পর্যন্ত কোন ইতিহাসবিদ প্রমাণসহ লিখতে পারেননি। তারপর মুসলিম(Muslim) বাহিনী আটলান্টিক মহাসাগরের কুল পর্যন্ত পৌঁছতে যে সমস্ত জাতিগুলিকে সামরিকভাবে পরাজিত কোরেছিলো তাদের মধ্যে বারবার, নুবীয়ান ইত্যাদি জাতিগুলি তখন পর্যন্ত ইসলাম(Islam) বোলে একটি নতুন দ্বীন বা মুসলিম(Muslim) বোলে একটি নতুন জাতির নাম পর্যন্ত শুনেনি, মুসলমানদের আক্রমণ করার কথা চিন্তা করা দূরে থাক। উত্তর আফ্রিকা সম্পূর্ণ দখল কোরে সেখানে আল্লাহ(Allah)র সত্য দ্বীন প্রতিষ্ঠা করার পর এই উম্মতে মোহাম্মদী যখন ভূমধ্যসাগর পার হোয়ে স্পেন আক্রমণ করলো তখন স্পেনীয়রা সিংহাসন নিয়ে রাজনৈতিক গোলামালে ব্যস্ত। ভূমধ্যসাগর পার হোয়ে এসে আরব, ইরাক, সিরিয়া ও সমগ্র উত্তর আফ্রিকার শাসক উম্মতে মোহাম্মদীকে আক্রমণ করার কথা তাদের স্বপ্নেরও বাইরে।

এতো গেলো এই জাতির একটি বাহুর কথা। অন্য বাহুর ইতিহাসও ঐ একই। শত্রুর কোন প্ররোচনা ছাড়াই ঐ বাহুও যুদ্ধের পর যুদ্ধে ইসলাম(Islam) বিরোধীদের পরাজিত কোরে অতি অল্প সময়ের মধ্যে চীন সীমান্ত পর্যন্ত পৌঁছে গেলো। এদের মধ্যে অধিকাংশ কখনও ইসলামে(Islam)র, মুসলিমের নামও শোনেনি। যারা ইসলামে(Islam)র জেহাদ, কিতাল, সশস্ত্র সংগ্রামের নীতিকে শুধু আত্মরক্ষমূলক বোলে প্রচার করেন তারা হয় এই জাতির ইতিহাসই পড়েননি, অর্থাৎ নিদারুণ অজ্ঞতা, আর না হয় পরাজিত, অপমানিত, ধুলিস্মাৎ গোলাম জাতি যে হীনমন্যতার রোগে ভুগে তারা সেই রোগে ভুগছেন। দশ হাজার আসহাব মুজাহিদ নিয়ে স্বয়ং রসুলাল্লাহ (দঃ) মক্কা যখন অধিকারের জন্য রওনা হোলেন তখন মক্কার অধিবাসীদের মুসলিম(Muslim) বাহিনীকে আক্রমণ তো দূরের কথা, কোন প্রতিরোধ পর্যন্ত গড়ে তোলার শক্তি ছিলোনা- যে কারণে মক্কা বিনা যুদ্ধে জয় হোয়েছিলো- এ কথা ইতিহাস। আক্রমণাত্মক যুদ্ধ যদি আল্লাহ(Allah)র আদেশের পরিপন্থী হোয়ে থাকে রসুলাল্লাহ (দঃ) আল্লাহ(Allah)র আদেশ ভঙ্গ কোরেছিলেন? (নাউজুবিল্লাহ)।

আসল কথা হোচ্ছে- আল্লাহ(Allah) বিশ্বনবীকে (দঃ) পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন এই জন্য যে তিনি যেন পৃথিবীতে প্রচলিত সব রকম (পূর্ববর্তী বিকৃত ধর্ম ও মানুষের তৈরী জীবন ব্যবস্থা) দ্বীন অর্থাৎ জীবন-ব্যবস্থাগুলি অকেজো, নিষ্ক্রিয়, বিলুপ্ত কোরে দিয়ে এই শেষ ইসলাম(Islam)কে সমগ্র পৃথিবীময় প্রতিষ্ঠা করেন। অর্থাৎ আল্লাহ(Allah) শেষনবীকে (দঃ) তার জীবনের সমস্ত কর্মকাণ্ডের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নির্দিষ্ট কোরে দিলেন। যে কেউ মহানবীর (দঃ) জীবনী পড়লেই দেখতে পাবেন তার সমস্তটা পবিত্র জীবন ঐ একটি মাত্র কাজে ব্যয় হয়েছে আল্লাহ(Allah)র নির্দিষ্ট কোরে দেয়া লক্ষ্য অর্জনের জেহাদে।

জেহাদ শব্দের অর্থ হলো কোন লক্ষ্য অর্জনের জন্য পূর্ণভাবে চেষ্টা করা (Struggle) সর্বতোভাবে, অক্লান্তভাবে চেষ্টা করা। আর অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করা হলো কিতাল, অর্থাৎ সশস্ত্র সংগ্রাম। তাহলে কিতাল, সশস্ত্র সংগ্রাম হলো জেহাদের একটা অংশ। সামগ্রিকভাবে এই জীবন-ব্যবস্থাকে সমস্ত পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা করার প্রয়াস, সংগ্রামে সব রকমের চেষ্টাই অন্তর্ভুক্ত। প্রথমে যুক্তি দিয়ে, বুঝিয়ে, লিখে, হাতে-কলমে দেখিয়ে এবং কোন কিছুতেই কাজ না হোলে সশস্ত্র সংগ্রাম অর্থাৎ কিতালের মাধ্যমে। মানুষ তার অভ্যস্থ বিশ্বাসে এত যুক্তিহীন যে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই শেষ পর্যন্ত হাতে অস্ত্র নিতে হোয়েছে। বিশ্বনবীকেও (দঃ) তার আসহাবদেরও। তাই কিছুদিনের মধ্যেই জেহাদ (প্রচেষ্টা) ও কিতাল (সশস্ত্র যুদ্ধ) একার্থবোধক হোয়ে গিয়েছিলো। মানুষকে এই জীবন-ব্যবস্থায় আসতে, তা না আসলেও তাদের ওপর এই নতুন শাসন ব্যবস্থা স্থাপন কোরতে অধিকাংশ মানুষ রাজী হবে না, শেষ পর্যন্ত শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে তা কোরতে হবে তা স্রষ্টা জানেন, কারণ এই মানব জাতি তিনিই সৃষ্টি কোরেছেন। তাই এই জীবন-ব্যবস্থায় কিতাল অর্থাৎ সশস্ত্র সংগ্রামের ওপর এত গুরুত্ব অর্পিত হোয়েছে। সর্বশ্রেষ্ঠ সম্মান মুজাহিদ ও শহীদদের জন্য রাখা হোয়েছে। আমার মনে হয় এই দ্বীনকে মানব জীবনে প্রতিষ্ঠার প্রয়াসের সামরিক ভূমিকা সবচেয়ে সঠিকভাবে পেশ কোরেছেন আবুযর (রাঃ)। তিনি বোলেছেন- আল্লাহ(Allah)র রাস্তায় জেহাদ ইসলামে(Islam)র বিশেষ কর্তব্য। এই জেহাদের মাধ্যমে মুসলিম(Muslim)রা লোকদের গলায় শিকল দিয়ে আনে। অতঃপর ঐ লোকগণই স্বেচ্ছায় ইসলাম(Islam) গ্রহণ কোরে নেয় (হাদীস- বোখারী )। এই হাদীসে আবুযর (রাঃ) তিন শর্তের দ্বিতীয় ও তৃতীয় শর্তের অবস্থার কথা বোঝাচ্ছেন। উভয় শর্তেই অন্যান্য ধর্মের সব মানুষ ব্যক্তিগতভাবে যার যার ধর্মেই থাকতে পারবে, কিন্তু জাতীয়, রাষ্ট্রীয়, আইন হবে শেষ ইসলাম(Islam) অনুযায়ী সুতরাং তারা ঘনিষ্টভাবে মুসলিম(Muslim)দের সংস্পর্শে আসবে, ইসলাম(Islam)কে ঘনিষ্টভাবে জানতে পারবে এবং স্বচক্ষে দেখবে কেমন কোরে এই নতুন জীবন-বিধান সব অন্যায়, অবিচার, অশান্তি দূর কোরে পরিপূর্ণ শান্তি ও সুবিচার মানুষের মধ্যে প্রতিষ্ঠা করলো। তখন তারা নিজে থেকেই স্বেচ্ছায় এই দ্বীনে প্রবেশ কোরবে। যদি মুজাহিদরা অস্ত্র হাতে তাদের সম্মুখীন না হোতেন, যদি যুদ্ধ করে রাষ্ট্রীয় শক্তি অধিকার না কোরতেন তবে ঐ সুযোগ তারা পেতোনা, প্রচারণার শিকার হোয়ে চিরদিনই তারা এই নতুন জীবন-বিধানকে অস্বীকার কোরতে থাকতো।

তা হোলে, ইসলামে(Islam)র সামরিক নীতি আত্মরক্ষামুলক (Defensive) না আক্রমণাত্মক (Offensive) এ প্রশ্নের উত্তরে আমরা অনায়াসে বোলতে পারি- আক্রমণাত্মক। কিন্তু আজ আক্রমণাত্মক বোলতে যে রাজ্য জয়ের, সামাজ্য বিজয়ের অর্থ বোঝায় সে অর্থে নয়। ইসলামে(Islam)র আক্রমণাত্মক নীতি আদর্শ বিস্তারের, যে আদর্শ পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা হোলে মানব জাতির মধ্যে থেকে অন্যায়, অবিচার, অশান্তি, রক্তপাত বন্ধ হবে, শান্তি (ইসলাম(Islam)) স্থাপিত হবে। কোন দেশের একটা অংশ যদি সে দেশের সরকারকে অগ্রাহ্য কোরে সেই অংশে অন্যায়, অত্যাচার, যুলুম শুরু করে এবং সে জন্য দেশের সরকার যদি পুলিশ বা সৈন্যবাহিনী পাঠিয়ে সেখানে দুষ্কৃতিকারীদের আক্রমণ কোরে, তাদের পরাজিত কোরে সেখানে আবার আইন-শৃংখলা ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা করে তবে তাকে যদি আক্রমণাত্মক যুদ্ধ বলা যায়, তবে ইসলামে(Islam)র সামরিক নীতিও সেই দৃষ্টিতে আক্রমণাত্মক। আল্লাহ(Allah) পরিষ্কার ভাষায় বোলছেন- তাদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রাম কোরতে থাক যে পর্যন্ত না অশান্তি, অন্যায়, শেষ হোয়ে আল্লাহ(Allah)র দ্বীন (জীবন-ব্যবস্থা) প্রতিষ্ঠিত হয় (কোরান- সূরা আল আনফাল ৩৯)। এর চেয়ে স্পষ্টভাবে আর আল্লাহ(Allah) কী বোলবেন। এবং এই জন্যই তিনি একবার নয়, কয়েকবার, তার শেষনবীকে (দঃ) বোলেছেন- তিনিই (আল্লাহ(Allah)) তাঁর রসুলকে সঠিক পথ ও সত্যদ্বীন দিয়ে (পৃথিবীতে) পাঠিয়েছেন এই জন্য যে, তিনি (রসুল) যেন তা অন্যান্য সমস্ত দ্বীনকে পরাভূত করে একে প্রতিষ্ঠিত করেন (কোরান- সূরা তওবা ৩৩, সূরা ফাতাহ ২৮, সূরা আস সাফ ৯)। এই বিশাল দায়িত্বকে পূর্ণভাবে উপলব্ধি করেছিলেন বলেই বিশ্বনবী (দঃ) বোলেছেন- আমি আদেশ পেয়েছি (আল্লাহ(Allah)র) পৃথিবীর মানুষের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রাম চালিয়ে যেতে যে পর্যন্ত না তারা সাক্ষ্য দেয় যে আল্লাহ(Allah) ছাড়া উপাস্য নেই এবং আমি মোহাম্মাদ আল্লাহ(Allah)র রসুল এবং সালাত প্রতিষ্ঠা করে ও যাকাত দেয় [হাদীস- আবদুল্লাহ এবনে ওমর (রাঃ) থেকে বোখারী]। এবং আল্লাহ(Allah)র ঐ বহুবার পুনরাবৃত্তি করা আদেশ যাকে জোর গুরুত্ব দেবার জন্য তিনি নিজে ঐ কথার সাক্ষী হয়েছেন (আমিই এ কথার সাক্ষী হিসাবে যথেষ্ট) (কোরান- সূরা আল ফাতাহ ২৮) এবং রসুলাল্লাহর উপরোক্ত হাদীস দিয়ে তার সমর্থন, এ দু'টোর আসল অর্থ যে উম্মতে মোহাম্মদী হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি কোরেছিলেন তার অকাট্য প্রমাণ এই যে, ঐ উম্মাহ বিশ্বনবীর (দঃ) ওফাতের সঙ্গে সঙ্গে তাদের পার্থিব সব কিছু কোরবান কোরে তাদের নেতার ওপর আল্লাহ(Allah)র দেয়া দায়িত্বপূর্ণ কোরতে তাদের দেশ থেকে বের হোয়ে পড়েছিলেন। রসুলাল্লাহর (দঃ) প্রকৃত সুন্নাহ পালন কোরেছিলেন।

আল্লাহ(Allah) যে তার এক লাখ চব্বিশ হাজার বা মতান্তরে দুই লাখ চব্বিশ হাজার নবী রসুল (আঃ) পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন তার উদ্দেশ্য কী? একমাত্র উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষকে এমন একটা জীবন-বিধান, দ্বীন দেয়া যেটা অনুসরণ কোরে মানুষের জীবন পরিচালিত কোরলে মানুষ অন্যায়, অবিচার, অশান্তি, ও রক্তপাতহীন, প্রগতিশীল একটা জীবনে বাস কোরতে পারে। এর প্রধান শর্ত হলো আল্লাহ(Allah)কে একমাত্র জীবন-বিধাতা বোলে স্বীকার করে নেওয়া, একমাত্র প্রভু স্বীকার করা, (তওহীদ)। কারণ তা না কোরলে তার দেয়া জীবন বিধানকে একমাত্র জীবন-বিধান বোলে স্বীকার করার প্রশ্ন আসে না। দ্বিতীয়তঃ যার মাধ্যমে আল্লাহ(Allah) ঐ বিধান পাঠালেন তাকে প্রেরিত বোলে স্বীকার করা, স্বভাবতঃই। ঐ নবী রসুলদের জীবনের একমাত্র কর্তব্য ছিলো, একমাত্র লক্ষ্য ছিলো যার যার জাতি, কওমের জীবনে ঐ দ্বীন, জীবন-বিধান প্রতিষ্ঠা করা এবং তারা আজীবন ঐ প্রচেষ্টা, সংগ্রাম চালিয়ে গেছেন। তাদের জাতি, জনগোষ্ঠী থেকে যারা ঐ সব নবী রসুলদের (আঃ) ওপর বিশ্বাস এনে তাদের মাধ্যমে অবতীর্ণ জীবন-ব্যবস্থাকে স্বীকার কোরেছেন তাদের ওপর অবশ্য কর্তব্য হোয়ে গেছে তাদের যার যার নবীকে সর্বতোভাবে সাহায্য করা, যে পর্যন্ত না তাদের নবীর ওপর আল্লাহ(Allah)র অর্পিত দায়িত্ব পূর্ণ করা হয়। শেষ নবীর (দঃ) আগে সব নবীদের ওপর জীবন-বিধান আল্লাহ(Allah) পাঠিয়েছিলেন শুধু তাদের যার যার জাতি, কওম ও জনগোষ্ঠীর জন্য এবং ঐ নবীদের ওপর বিশ্বাসীরা তাদের যার যার নবীর সঙ্গে এক হোয়ে যেয়ে তাদের স্বর্বস্ব দিয়ে সাহায্য কোরেছেন যাতে তাদের সমস্ত জাতি বা জনগোষ্ঠীই তাদের নবীর দ্বীন গ্রহণ করে।

উদারহণ স্বরূপ ধরুন, মূসার (আঃ) কথা। আল্লাহ(Allah) তাকে পাঠিয়েছিলেন প্রধান দু'টি কাজ দিয়ে। একটা হলো ফারাওয়ের নির্যাতন থেকে ইহুদীদের উদ্ধার কোরে মিশর থেকে বের কোরে আনা। আরেকটা হলো ইহুদীদের জন্য জীবন-ব্যবস্থা দেয়া, যেমন অন্যান্য সব নবী রসুলদের ওপর দেয়া হোয়েছিলো। মুসা (আঃ) প্রথমে ইহুদীদের মিশর থেকে বের কোরে আনলেন, তারপর ইহুদীদের জাতীয়, পারিবারিক ও ব্যক্তি জীবনে আল্লাহ(Allah)র দেয়া জীবন-বিধান প্রতিষ্ঠা কোরলেন ও সেই সঙ্গে তার ওপর আল্লাহ(Allah)র দেয়া উভয় দায়িত্ব পূর্ণ কোরলেন। ধরুন যদি মুসা (আঃ) তার দ্বিতীয় দায়িত্বপূর্ণ না কোরতে পারতেন অর্থাৎ সম্পূর্ণ ইহুদী জাতি তার মাধ্যমে আসা জীবন-বিধান (অর্থাৎ Law of Moses) স্বীকার ও গ্রহণ করার আগে তিনি পৃথিবীর থেকে চলে যেতেন, তবে কি হতো? বা ধরুন অর্দ্ধেক ইহুদী জাতি মুসার (আঃ) উম্মাহ অর্থাৎ জাতিতে পরিণত হলো, বাকী অর্দ্ধেক হলো না। ধরুন অর্দ্ধেক ইহুদীদের মিশর থেকে উদ্ধার কোরে আনার পর মুসার (আঃ) মৃত্যু হোল, তখন কি হতো? নিঃসন্দেহে বলা যায় মুসা (আঃ) উদ্ধারকৃত অর্দ্ধেক ইহুদীদের নসিয়ত কোরে যেতেন যে আমার দায়িত্ব পালন শেষ হলো না, আমি চলে গেলাম, আমার বাকী দায়িত্ব অর্থাৎ বাকী অর্দ্ধেক ইহুদীদের উদ্ধারের ভার তোমাদের ওপর দিয়ে গেলাম। যে অর্দ্ধেক ইহুদীদের মুসা (আঃ) উদ্ধার কোরতে সক্ষম হোয়েছিলেন তারা যদি মুসার (আঃ) মতই সর্বতোভাবে তাদের বাকী অর্দ্ধেক ইহুদীদের উদ্ধারের চেষ্টা চালিয়ে যেতো তবেই তাদের মুসার (আঃ) প্রকৃত উম্মাত বলা যেতো। কারণ তারা মুসার (আঃ) বর্তমানে যেমন তাকে অনুসরণ করেছিলো, তার ওফাতের পরও তার ওপর অর্পিত দায়িত্বকে পূর্ণ করার জন্য সংগ্রাম চালিয়ে গেলো। আর যদি মুসার (আঃ) মৃত্যুর পর ঐ অর্দ্ধেক ইহুদী বাকী অর্দ্ধেককে উদ্ধার করার কোন প্রচেষ্টা, সংগ্রাম না করে, ও কথাই ভুলে যায় তবে তারা আর মুসার (আঃ) প্রকৃত উম্মাহ নয়, কেয়ামতে মুসা (আঃ) তাদের তার উম্মাহ বোলে স্বীকার কোরবেন না।

পূর্ববর্তী অন্যান্য নবীদের মত মুসাও (আঃ) এসেছিলেন সীমিত দায়িত্ব নিয়ে। শুধুমাত্র বনি ইসরাইলকে মিশর থেকে উদ্ধার ও তাদের নতুন জীবন-বিধান (সেই পুরোন ইসলাম(Islam)) দিতে। আর মোহাম্মদ (দঃ) কে আল্লাহ(Allah) পাঠালেন সমস্ত পৃথিবী, সমগ্র মানবজাতিকে এই জীবন-ব্যবস্থার অধীনে নিয়ে আসার দায়িত্ব দিয়ে। এ বিশাল দায়িত্ব যে এক জীবনে পালন করার প্রশ্নই আসে না তা যিনি এ দায়িত্ব অর্পণ কোরেছেন তিনিও জানেন, আর যার ওপর অর্পণ করেছেন তিনিও জানেন। তারা এও জানেন যে, পুর্ববর্তী নবীদের উম্মাহগুলির মত শেষ নবীর (দঃ) উম্মাহর ওপরও তাদের নবীর (দঃ) দায়িত্ব অর্পিত হবে এবং হোয়েছে। ঐ উম্মাহ যে তাদের ঐ দায়িত্ব পূর্ণভাবে উপলব্ধি কোরেছিলেন এবং তা তাদের আকীদাভুক্ত হোয়ে গিয়েছিলো তার প্রমাণ তাদের আমল, কাজ যা ইতিহাস। এ ছাড়া তাদের আরব থেকে বের হোয়ে সশস্ত্র সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ার আর কোন ব্যাখ্যা হোতে পারে না। কারণ আগেই বোলে এসেছি, এ ছাড়া যদি রাজ্য জয়, সাম্রাজ্য স্থাপন তাদের উদ্দেশ্য হোয়ে থাকে তবে স্বীকার কোরতে হবে যে, মানব জাতির মুকুটমনি, বিশ্বনবী (দঃ) তার সারা জীবন সাধনা কোরে, অপরিসীম দুঃখ, কষ্ট, অত্যাচার সহ্য কোরে একটি পররাজ্য লোভী রক্তপিপাসু জাতি সৃষ্টি কোরে গিয়েছিলেন (নাউযুবিল্লাহ)। আর না হোলে স্বীকার কোরতে হয় যে তারা তলওয়ারের জোরে পৃথিবীর মানুষকে ধর্মান্তরিত কোরতে নিজেদের সর্বস্ব ত্যাগ কোরে দেশ থেকে বের হোয়ে পড়েছিলেন- অর্থাৎ আল্লাহ(Allah) যে ধর্মে বল প্রয়োগ নিষিদ্ধ কোরে দিয়েছেন (কোরান- সূরা বাকারা ২৫৬)। তা তারা বুঝেননি বা বুঝলেও তার তোয়াক্কা করেননি (নাউযুবিল্লাহ)। এর কোনটাই নয়। মোহাম্মদের (দঃ) উম্মাহ, উম্মতে মোহাম্মদী তাদের নবী তাদের মধ্য হোতে চলে যাবার সঙ্গে সঙ্গে নবীর সুন্নাহ পালন কোরে মানুষ জাতিকে এই জীবন ব্যবস্থার মধ্যে নিয়ে আসতে সব ত্যাগ কোরে বের হয়ে গেলো, তাদের নবীর (দঃ) প্রকৃত সুন্নাহ পালন করলো। তাদের নবী বোলেছিলেন- যে আমার সুন্নাহ ত্যাগ করলো সে আমার কেউ নয় (হাদীস)। এই কথা বোলে তিনি তার ঐ সুন্নাহ বুঝিয়েছিলেন বোলেই ইতিহাসে দেখি তারা এমন কাজ কোরলেন যা আপাত দৃষ্টিতে বুদ্ধিমানের কাজ বোলে মনে হয় না। কারণ বোলছি- বিশ্বনবীর (দঃ) ওফাতের সঙ্গে সঙ্গে আরবের বিভিন্ন জায়গায় এই শেষ ইসলামে(Islam)র বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান আরম্ভ হোল, তার ওপর আবার কয়েকজন মিথ্যা নবুয়তের দাবীদার। এই বিরুদ্ধ শক্তি যে অত্যন্ত প্রবল ছিলো এবং নতুন ইসলামী রাষ্ট্রের অবস্থা যে কতখানি নাজুক ও আশংকাজনক হোয়ে দাঁড়িয়েছিলো তার প্রমাণ ইয়ামামার যুদ্ধসহ অন্যান্য যুদ্ধগুলির প্রচণ্ডতা। যে কোন বিচক্ষণ লোকের দৃষ্টিতে মনে হবে যে ঐ মহাবিপদ কাটিয়ে ওঠার পর ঐ সদ্যোজাত ছোট্ট রাষ্ট্রের নেতাদের উচিত ছিলো সময় ব্যয় করা, জাতির ভিত্তি ও নিরাপত্তা আরও সুদৃঢ় করার জন্য। পৃথিবীর দু'টি বিশ্ব শক্তির মুখোমুখী হবার আগে উচিৎ ছিলো নিজেদের অবস্থান আরও দৃঢ় করা, আরও প্রশিক্ষণ নেওয়া, অস্ত্রশস্ত্র, রসদের যথেষ্ট বন্দবস্ত করা। কিন্তু ইতিহাসে দেখি বিদ্রোহ দমন কোরে মদীনাতে ফিরে আসার আগেই সেনাপতি খালেদ বিন আল ওয়ালিদের (রাঃ) কাছে আবু বকরের (রাঃ) হুকুম গেলো ওখান থেকেই পারস্য সাম্রাজ্যের দিকে অগ্রসর হোয়ে তাদের সামনে সেই তিন শর্ত পেশ করার এবং সেই সামান্য সংখ্যক যুদ্ধক্লান্ত সৈন্য নিয়েই খালেদ (রাঃ) রওনা হোয়ে গেলেন। অবশ্যই তার সামনে লক্ষ্য হোল পারশ্য সাম্রাজ্য আক্রমণ করা, কারণ প্রথম বা দ্বিতীয় শর্ত মেনে নেবার সম্ভাবনা শূন্যের কোঠায়, কারণ পারশ্য সাম্রাজ্য তখন দুই বিশ্ব শক্তির অন্যতম। যারা ইসলামে(Islam)র সামরিক নীতি শুধুমাত্র আত্মরক্ষামূলক বোলে চালাতে চান তাদের জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি যে, এই সময় পারশ্য শক্তি ইসলাম(Islam)কে আক্রমণ কোরতে আসেই নাই এমন কি আক্রমণের কোন প্রস্তুতিও কোরছিলো বলে ইতিহাসে কোন প্রমাণ নেই।

আসল কারণ তা নয়। আসল কারণগুলো হলো নেতা (দঃ) তাদের মধ্য থেকে চলে যাবার পর নেতার সংগ্রাম যেন একটুক্ষণের জন্যও বন্ধ না হয়, না থামে, এমনি ছিলো তাদের মনের অবস্থা, আকীদা। নেতার অসমাপ্ত কাজকে সমাপ্তির পথে অগ্রসর করাতে, নিজেদের উম্মতে মোহম্মদী প্রমাণ কোরতে তাদের দেরী সহ্য হয়নি। ঐ বিশাল কাজের জন্য যে নিজেদের প্রস্তুত কোরে নিতে হবে এ কথা সাধারণ জ্ঞানে বুঝেও অতটুকু তর তাদের সয়নি। কারণ তারা ছিলেন সত্যিকার উম্মতে মোহাম্মদী, মোহাম্মদের (দঃ) নিজের হাতে গড়া জাতি, যাদের তিনি নিজে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন ইসলামে(Islam)র উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য কি এবং তার প্রক্রিয়া কি। তাই এরপর ইতিহাসে দেখি ঐ সদ্য প্রসূত জাতি, যার নারী-পুরুষ, বৃদ্ধ-শিশু মিলিয়ে পাঁচ লাখও সংখ্যায় হবেনা, টাকা নাই, পয়সা নাই, প্রাকৃতিক সম্পদ নাই, কিছুই নাই, প্রায় নিরস্ত্র, তবুও তাদের উদ্দেশ্য সাধনের জন্য দেশ থেকে বের হোয়ে যেয়ে তদানিন্তন পৃথিবীর দুই বৃহৎ শক্তি- যাদের আমরা বলি পরাশক্তি (Super Power) তাদের অপরিমীত সম্পদ, অসংখ্য লোকবল, উন্নত প্রযুক্তি এবং বিরাট সুসজ্জিত, সুশিক্ষিত সামরিক বাহিনীগুলির সম্মুখীন হোয়ে দাঁড়ালো। সামরিক দৃষ্টিকোণ থেকে এ যেন ছিলো এক আত্মহত্যার মত। যে মুজাহিদরা আরব থেকে বেরে হোয়ে ঐ বিশ্ব শক্তিগুলির সামনে দাঁড়িয়ে তাদের নবীর সুন্নাহ অনুযায়ী তিন শর্ত দিয়েছিলেন শুধু তাদের আত্মহত্যাই নয়, তাদের ঐ নতুন জাতিটিরও আত্মহত্যা। কারণ যদি তারা ঐ অসম যুদ্ধে হেরে যেতেন তবে তাদের ঐ দুঃসাহসের, হঠকারিতার শাস্তি দিতে ঐ বিশ্ব শক্তিদু'টো আরবের ভেতরে ঢুকে ঐ নতুন রাষ্ট্রটাকে ধ্বংস কোরে দিতে পারতো এবং তাহলে আজ ইসলাম(Islam) বোলে কোন দ্বীন, মুসলিম(Muslim) বোলে কোন জাতি থাকতো না।

এসব সত্ত্বেও ইতিহাস হলো এই যে, ঐ বিশ্ব শক্তি দু'টি উম্মতে মোহাম্মদীর তিন শর্তের মধ্যে শেষ শর্তটিই বেছে নিয়েছিলো এবং ফলে নিজেরা টুকরো টুকরো হয়ে ধ্বংস হোয়ে গিয়েছিলো এবং মাত্র ৬০/৭০ বছরের মধ্যে পশ্চিমে মরক্কোতে, আটলান্টিক মহাসাগরের উপকূল থেকে পুর্বে চীনের সীমান্ত আর উত্তরে কাস্পিয়ান সাগর থেকে দক্ষিণে ভারত মহাসাগর পর্যন্ত বিরাট এলাকায় এই শেষ জীবন-ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হোয়েছিল। আপাতদৃষ্টিত অসম্ভব এই মহা বিজয় কি কোরে সম্ভব হোল এ এক প্রশ্ন। এর উত্তর হলো, যেহেতু ঐ উম্মাহ, জাতি আল্লাহ(Allah)র শেষ নবীর (দঃ) অসমাপ্ত কাজ পূর্ণ কোরতে জীবনের সব কিছু ত্যাগ কোরে বের হোয়ে পড়েছে কাজেই আল্লাহ(Allah) স্বয়ং ঐ উম্মাহর সঙ্গে থেকে তাদের সাহায্য করেছিলেন, আর আল্লাহ(Allah) যাদের সাহায্যকারী, অভিভাবক তাদের পরাজিত করে কোন শক্তি? ঐ উম্মাহও জানতেন আল্লাহ(Allah) যে কারণে পৃথিবীতে তার নবীদের বিশেষ কোরে তার শেষ নবীকে (দঃ) পাঠিয়েছিলেন- অর্থাৎ সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে পৃথিবীতে আল্লাহ(Allah)র দেয়া দ্বীন প্রতিষ্ঠা, তাই কোরতে তারা অগ্রসর হোয়েছেন কাজেই তাদের সাহায্য কোরতে আল্লাহ(Allah) প্রতিশ্রুতিবদ্ধ(কোরান- সুরা বাকারা ২৫৬)। আল্লাহ(Allah)র সাহায্য সম্পর্কে কতখানি নিশ্চিত হোলে কোন মানুষ [আবু বকর (রাঃ)], খালেদ বিন ওয়ালিদ (রাঃ)কে মাত্র আঠার হাজার রণক্লান্ত সৈন্য নিয়ে বিশ্বশক্তি পারসিক সাম্রাজ্য আক্রমণ কোরতে আদেশ দেন এবং অন্য আরেক জন [ওমর (রাঃ)] আমর ইবনুল আ'সকে (রাঃ) মাত্র চার হাজার মুজাহিদ নিয়ে পূর্বে রোমান সাম্রাজ্যের অধীন মিশর আক্রমণের আদেশ দিতে পারেন। আবু বকর (রাঃ) ও ওমর (রাঃ) দু'জনেই যে ভুল করেননি, আল্লাহ(Allah) যে সত্যই তাদের সর্বোতভাবে সাহায্য কোরেছিলেন তার প্রমাণ পরবর্তী ইতিহাস। ঐ উম্মাহ ৬০/৭০ বছর পর্যন্ত সংখ্যায় তাদের চেয়ে দ্বিগুণ, তিনগুণ এমনকি কোন কোন যুদ্ধে পাঁচ, ছয়গুণ বেশী শত্রুর সঙ্গে লড়েছেন কিন্তু কোন গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধে পরাজিত হননি।

আল্লাহ(Allah)র শেষ বই এই কোরান ও তার শেষ নবীর (দঃ) জীবনী ও তার হাদীসগুলি যারা এমন কি ভাসা ভাসা ভাবেও পড়েছেন তারাও লক্ষ্য না কোরে পারবেন না যে, এই শেষ জীবন-ব্যবস্থার অনুসারীদের মধ্যে সর্বোচ্চ পুরস্কার ও সর্বোচ্চ সম্মান রাখা হোয়েছে সশস্ত্র সংগ্রামে প্রাণ উৎসর্গকারীদের (শহীদ) জন্য। সবার কাজের বিচার হবে, তাদের হবে না, প্রথম রক্তবিন্দু মাটিতে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের সমস্ত পাপ, সমস্ত গুণাহ আল্লাহ(Allah) মুছে ফেলে তাদের সঙ্গে সঙ্গে জান্নাত দাখেল করে দেবেন। এ পুরস্কার আর কাউকে দেবার প্রতিশ্রুতি দেননি। শুধু তাই নয়, আল্লাহ(Allah) আমাদের বোলছেন- তোমরা তাদের মৃত পর্যন্ত বোলবে না (কোরান- সূরা আল বাকারা ১৫৪, সূরা আলে ইমরান ১৬৯)। তারা শহীদ হউন, কিন্তু আমাদের চোখে তো অন্তত তারা অন্যের মতই মারা গেলেন। কিন্তু তবু আমাদের মুখ দিয়েও বলার অধিকার নেই যে তারা মরে গেছেন। উম্মতে মোহাম্মদীর, মো'মেনের, মুসলিমের সর্বশ্রেষ্ঠ পুরস্কার ও সর্বশ্রেষ্ঠ সম্মান। কতখানি স্নেহের চোখে দেখলে আল্লাহ(Allah) এ সম্মান দিতে পারেন। সশস্ত্র সংগ্রামে, যুদ্ধক্ষেত্রে প্রাণ উৎসর্গকারীকে সর্বশ্রেষ্ঠ পুরস্কার ও সম্মান দেয়ার প্রকৃত অর্থ কি? এর অর্থ হচ্ছে, এই জাতির উম্মাহর জন্য আল্লাহ(Allah) লক্ষ্য স্থির কোরে দিয়েছেন। আর তা হোচ্ছে সমস্ত পৃথিবীতে শেষ নবীর (দঃ) মাধ্যমে প্রেরিত শেষ জীবন-বিধান প্রতিষ্ঠা কোরে সমস্ত মানব জাতির জীবনে ন্যায় ও শান্তি আনয়ন করা। আল্লাহ(Allah) খুব ভাল কোরেই তার সৃষ্ট মানুষকে জানেন। তিনি জানেন যে, পূববর্তী বিকৃত ধর্মগুলিতে ও মানুষের নিজেদের তৈরী ব্যবস্থাগুলিকে মানুষ এমন অন্ধভাবে আকড়ে ধরে আছে যে, সবিনয়ে আহ্বান কোরলেই তারা তা ছেড়ে সঠিক পথে আসবে না। লক্ষ যুক্তি প্রমাণ তবলীগ কোনো কাজে আসবেনা। তারা বাধা দেবে, সর্বতোভাবে দেবে এবং সশস্ত্রভাবে দেবে এবং সেই সশস্ত্র বাধাকে ভেঙ্গে এই দ্বীনকে প্রতিষ্ঠা কোরতে হবে। অন্য কথায় পৃথিবীতে প্রচলিত সব রকম ভুল ও অন্যায় ব্যবস্থাকে সশস্ত্র সংগ্রামে পরাভূত কোরে মানুষের জীবনে শান্তি প্রতিষ্ঠার চেষ্টায় যারা নিজেদের প্রাণ উৎসর্গ কোরলেন তারা হোলেন শহীদ। একদিকে ইবলিসের চ্যালেঞ্জে আল্লাহ(Allah)কে জয়ী করার জন্য, অন্যদিকে পৃথিবীর মানুষের কল্যাণের জন্য পার্থিব সব কিছু এবং শেষ পর্যন্ত নিজেদের প্রাণটুকুও কোরবাণী কোরে দেওয়ার চেয়ে বড় কাজ আর কি হতে পারে? তাই এর পুরষ্কার ও সম্মান আল্লাহ(Allah)র কাছে সবচেয়ে বড়। এই জন্য এই দ্বীনে এর সামরিক দিকটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং আল্লাহ(Allah) ও তার রসুল (দঃ) এই দিকটাকেই সবচেয়ে প্রাধান্য ও জোর দিয়েছেন। সামরিক দিক এই জাতিকে কতখানি প্রভাবিত কোরেছিলো, সমস্ত জাতিটার চরিত্র কতখানি পরিবর্তীত কোরে ফেলেছিলো তার একটু আভাস দিচ্ছি। আগে পারসিকরা বিশ্বাস করতো যে, একজন পারসিক সৈন্য দশজন আরবের সমান। তারা অবজ্ঞা ভরে আরবদের ডাকতো ভিক্ষুকের জাত বোলে। এ বিশ্বাস এক তরফা ছিলোনা। আরবরাও একজন পারসিক সৈন্যকে যুদ্ধক্ষেত্রে দশজন আরবীর সমান মনে করতো। দক্ষিণ আরবে ইয়ামন পারসিকরা শাসন করতো একজন গভর্নরের অধীনে কিছু সংখ্যক মাত্র সৈন্য দিয়ে। আভ্যন্তরীণ আরব এত নিঃস্ব ছিলো যে ওখানে গভর্ণর বা সৈন্য রাখার মত কোন আকর্ষণ আছে বোলে তারা মনে করতো না। ও দিকটায় কোন বিশেষ ঘটনা বা গোলযোগ হোলে ইয়ামনের গভর্ণর দু'একটা পুলিশ পাঠিয়ে দেয়াকেই যথেষ্ট মনে করতেন। বিশ্বনবী (দঃ) যখন পৃথিবীর বিভিন্ন শাসকদের এই শেষ জীবন-ব্যবস্থা গ্রহণ করার আহ্বান জানালেন তখন পারস্যের সম্রাট (খসরু) পারভেজ অপমানিত বোধ কোরে তার ইয়ামনের গভর্ণর বাযানকে আদেশ দিলেন মোহাম্মদ (দঃ) নামের আরবটাকে ধৃষ্টতার জন্য গ্রেফতার কোরে তার কাছে রাজধানীতে পাঠিয়ে দিতে। সম্রাটের আদেশ পেয়ে গভর্ণর বাযান কি কোরলেন তা লক্ষ্য করুন। তিনি রসুলুল্লাহকে (দঃ) গ্রেফতার করার জন্য মদীনায় দু'জন পুলিশ পাঠিয়ে দিলেন (মোহাম্মদ ইবনে ইসহাক, তাবারী, ইয়াযীদ বিন আবু হাবিব)। এখানে চিন্তা করার বিষয় এই যে, ইয়ামন আরব উপদ্বীপেই অবস্থিত এবং মক্কা-মদীনা থেকে খুব দুরও নয়। যখনকার কথা হোচ্ছে তখন বিশ্বনবীকে (দঃ) নিয়ে আরবময় হুলুস্থুল, বদর ও ওহোদের যুদ্ধ ছাড়াও অনেক ছোট-খাটো সংঘর্ষ হয়ে গেছে। মহানবী (দঃ) মদীনায় সর্বেসর্বা। গভর্ণর হিসাবে এসব খবর বাযানের জানা না থাকা অসম্ভব। তা সত্ত্বেও তাকে গ্রেফতার করার জন্য মাত্র দু'জন পুলিশ পাঠানো থেকে বোঝা যায় পারসিক শক্তি আরবদের কতখানি অবজ্ঞার চোখে দেখতো।

তারপর সব মিলিয়ে মাত্র তেইশ বছরের সাধনায় বিশ্বনবী (দঃ) ঐ আরবকেই রূপান্তরিত কোরলেন একটি জাতিতে, যে জাতি ঐ পারসিকদের যুদ্ধক্ষেত্রে তুলোর মতে উড়িয়ে দিলো। দেখা গেলো তখন একটা মুসলিম(Muslim) মুজাহিদ দশটা পারসিক সৈন্যের সমান। অর্থাৎ একদম উল্টো। তফাৎটা লক্ষ্য করুন, এক পুরুষেরও তফাৎ নয়, মাত্র কয়েকটা বছর, এবং সেই মানুষগুলিই যারা নিজেরাই স্বীকার কোরতেন যে একজন পারসিক সৈন্য দশজন আরবের সমান, তারাই যখন ইসলাম(Islam) গ্রহণ কোরে সেই পারসিকদের মুখোমুখী হোয়ে দাঁড়ালেন তখন দেখা গেলো, এবার তারাই একজন, দশজন পারসিক সৈন্যের সমান। এই তফাৎ কিসে আনলো? নিঃসন্দেহে ইসলাম(Islam)। অর্থাৎ এই জীবন-ব্যবস্থা, এই দ্বীন একজন মানুষকে দুর্দ্ধর্ষ যোদ্ধায় পরিণত করে, একটি জাতিকে যুদ্ধক্ষেত্রে অপরাজেয় করে দেয়। যদি তা না করে তবে সেটা আর বিশ্বনবীর (দঃ) শেখানো ইসলাম(Islam) নয়, তা বর্তমানের বিকৃত, প্রাণহীন, তথাকথিত, বিপরীতমুখী ইসলাম(Islam)। ইসলাম(Islam)কে জাতীয় ও ব্যক্তিগত জীবনে প্রতিষ্ঠা কোরলে নিজে থেকেই স্বতঃস্ফূর্তভাবে একটি জাতি দুর্দ্ধর্ষ যোদ্ধায় পরিণত হতে বাধ্য, এমনি কোরেই আল্লাহ(Allah) এই জীবন-ব্যবস্থাটা তৈরী কোরেছেন, এবং কাজেই এর শ্রেষ্ঠ পুরস্কার ও সম্মান যোদ্ধাদের জন্য রেখেছেন। কারন পরম জ্ঞানী আল্লাহ(Allah) জানেন যে, যতই প্রচার, তবলীগ করা হোক শেষ পর্যন্ত ঐ সশস্ত্র সংগ্রাম ছাড়া এ দ্বীনকে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা করানো যাবে না। যারা ইসলামে(Islam)র কিতাল অর্থাৎ সশস্ত্র সংগ্রামকে শুধু আত্মরক্ষামূলক বোলে মনে করেন তাদের জ্ঞাতার্থে নিবেদন এই যে, তাই যদি হতো তবে মহানবীর (দঃ) আসহাব তার ওফাতের পর দল বেধে আরব থেকে অস্ত্র হাতে বের হোয়ে পৃথিবীকে শাসন ক্ষমতা তাদের হাতে ছেড়ে দেবার আহ্বান কোরতেন না, আরবে বোসেই তারা মহাউৎসাহে বর্তমানের মুসলিম(Muslim)দের মতো নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত ইত্যাদি কোরতে থাকতেন। এবং তাহলে আজ যারা একে শুধু আত্মরক্ষার যুদ্ধ বলেন তারা নামাবলী গায়ে দিয়ে মুর্তিপূজা কোরতেন, কিম্বা গলায় ক্রশ ঝুলিয়ে গীর্জায় যেতেন, আর না হোলে বুদ্ধ মুর্তির সামনে চোখ বুজে বোসে বুদ্ধং শরনং গচ্ছামী জপতেন।

কিন্তু কথা আছে। আহ্বান কোরে, বুঝিয়ে মানুষকে এই জীবন-বিধানের আওতায় আনার চেষ্টায় বিফল হোয়ে অস্ত্র ধরা এবং মানুষকে অস্ত্রের জোরে ধর্মান্তরিত করা- এই দু'য়ের মধ্যে সুক্ষ্ম অথচ বিরাট এক পার্থক্য আছে। আল্লাহ(Allah)র রসুল (দঃ) তার জীবনেই ঐ পার্থক্যকে পরিষ্কারভাবে তার সাহাবাদের অর্থাৎ উম্মতে মোহাম্মদীকে বুঝিয়ে দিয়ে গেছেন এবং ঐ উম্মাহ পরবর্তীকালে তা অক্ষরে অক্ষরে পালন কোরে গেছেন। পার্থক্যটা হলো এই- একদিকে যেমন আল্লাহ(Allah) বিশ্বনবীকে (দঃ) জানিয়ে দিলেন যে তাকে তিনি পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন এই জন্য যে তিনি (নবী) পৃথিবীর সমস্ত রকম জীবন-ব্যবস্থাকে নিষ্ক্রিয়, অকেজো কোরে দিয়ে এই ব্যবস্থা, শেষ ইসলাম(Islam)কে পৃথিবীময় প্রতিষ্ঠা করেন (কোরান- সূরা ফাতাহ ২৮, আত তওবা ৩৩, আস সাফ্ ৯)। ঐ সঙ্গে তিনি উম্মতে মোহাম্মদীকে আদেশ কোরেছেন সশস্ত্র সংগ্রাম কোরে এই দ্বীন সমস্ত পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা কোরে সমস্ত অশান্তি, অন্যায়, রক্তপাত নিশ্চিহ্ন কোরে পৃথিবীতে শান্তির রাজ্য প্রতিষ্ঠা কোরতে (কোরান- আল আনফাল ৩৯)। তার (দঃ) নিজের প্রতি আল্লাহ(Allah)র ঐ আদেশ এবং মুসলিম(Muslim) উম্মাহর প্রতি আল্লাহ(Allah)র আদেশকে একত্র কোরলে যা হয় রসুলাল্লাহ (দঃ) তা আমাদের জানিয়ে দিচ্ছেন। বোলছেন- আমি আদিষ্ট হোয়েছি (আল্লাহ(Allah) কর্তৃক) সশস্ত্র সংগ্রাম চালিয়ে যেতে যে পর্যন্ত না পৃথিবীর মানুষ আল্লাহ(Allah)কে একমাত্র প্রভু ও আমাকে তার প্রেরিত বোলে স্বীকার কোরে নেয়, সালাত প্রতিষ্ঠা করে ও যাকাত দেয় [হাদীস- আবদুল্লাহ এবনে ওমর (রাঃ) থেকে বোখারী, মেশকাত]। এক কথায় জেহাদ কার্যতঃ মুসলিম(Muslim) জাতির জন্য অবশ্য কর্তব্য, ফরদ হোয়ে গেলো।

এখানে জেহাদ বোলতে আমি সশস্ত্র সংগ্রাম, কিতালকে বোঝাচ্ছি। কারণ নিজ আত্মার, রিপুর, কু-প্রবৃত্তির বিরুদ্ধে জেহাদ থেকে শুরু কোরে কথা বোলে, যুক্তি দিয়ে, লিখে মানুষকে ইসলামে(Islam)র দিকে আহ্বান করার জেহাদতো আছেই, আমি উপরোক্ত ব্যাপারে সশস্ত্র সংগ্রামের কথা বোলছি এই জন্য যে, কোরানের যে আয়াত ও বিশ্বনবীর (দঃ) যে হাদীসের উদ্ধৃতি দিলাম, উভয়টাকেই আল্লাহ(Allah) ও তার রসুল (দঃ) জেহাদ শব্দ ব্যবহার করেননি, কোরেছেন কিতাল শব্দ ব্যবহার, যার অর্থ সশস্ত্র সংগ্রাম, যুদ্ধ। অন্য দিকে তেমনি আল্লাহ(Allah) নির্দেশ দিচ্ছেন জোর কোরে কাউকে ধর্মান্তরিত কোরবে না (কোরান- সূরা আল বাকারা ২৫৬)। আল্লাহ(Allah) তার নবীকে (দঃ) ও তার উম্মাহকে আদেশ দিচ্ছেন সশস্ত্র সংগ্রাম কোরে সমস্ত পৃথিবীর মানুষকে এই শেষ ইসলামে(Islam)র মধ্যে নিয়ে আসতে, আবার বোলছেন কাউকে জোর কোরে ধর্মান্তরিত কোরবে না- আপাতদৃষ্টিতে এ অসামঞ্জস্যপূর্ণ আদেশকে শেষ নবী (দঃ) পরিষ্কার কোরে দিয়েছেন অনেক বার। যখনই তিনি তার মুজাহিদদের কোন শত্রুর বিরুদ্ধে পাঠিয়েছেন, প্রত্যেকবার তিনি তাদের নির্দেশ দিয়ে দিয়েছেন যে প্রত্যেক সংঘর্ষের আগে বিরোধীদের তিনটি শর্ত দেবে। যে শর্তগুলি এর আগে উল্লেখ কোরে এসেছি। উদ্দেশ্য অতি পরিষ্কার। এ দ্বীন আমাদের সমস্ত পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা কোরতেই হবে, তা না হোলে পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে না। এই কাজ কোরতেই আল্লাহ(Allah) তার নবীকে (দঃ) পাঠিয়েছেন। এই কোরতেই আমরা পার্থিব সর্বকিছু কোরবান কোরে এখন প্রাণটাও কোরবান কোরতে তোমাদের সামনে দাঁড়িয়েছি। কিন্তু উদ্দেশ্য আমাদের কাউকে জোর কোরে ধর্মান্তরিত করা নয়। উদ্দেশ্য রাষ্ট্রীয়, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থা হবে এই শেষ ইসলামে(Islam)র ব্যবস্থা অনুযায়ী। কিন্তু যাদের ইচ্ছা তারা ব্যক্তিগতভাবে তাদের পুর্ববর্তী বিকৃত দ্বীনকে ধোরে রাখতে পারে, আমাদের আপত্তি নেই।

যুদ্ধ কোরে, জোর কোরে রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে অধিকার ও ব্যক্তিকে তার সম্পূর্ণ স্বাধীন ইচ্ছার ওপর ছেড়ে দেয়া- এই দ্বীন বিস্তারের জেহাদ ও "ধর্মে শক্তি প্রয়োগ নেই"- এর সীমারেখা ও পার্থক্য। এই সীমারেখা সম্বন্ধে উম্মতে মোহাম্মদীর ধারণা অর্থাৎ আকীদা কত পরিষ্কার ছিলো তা আমরা দেখি খলিফা ওমরের (রাঃ) কাজে। পবিত্র জেরুসালেম শহর মুজাহিদ বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করার পর খলিফা ওমর বিন খাত্তাব (রাঃ) ঘুরে ঘুরে শহরের দর্শনীয় বস্তুগুলি দেখার সময় যখন খ্রীস্টানদের একটি অতি প্রসিদ্ধ গীর্জা দেখছিলেন তখন নামাযের সময় হওয়ায় তিনি গীর্জার বাইরে যেতে চাইলেন। জেরুজালেম তখন সবেমাত্র মুসলিম(Muslim)দের অধিকারে এসেছে, তখনও কোন মসজিদ তৈরীই হয়নি, কাজেই নামায খোলা ময়দানেই পড়তে হতো। জেরুসালেমের প্রধান ধর্মাধ্যক্ষ বিশপ সোফ্রোনিয়াস ওমরকে (রাঃ) অনুরোধ কোরলেন ঐ গীর্জার মধ্যেই তার সঙ্গী-সাথীদের নিয়ে নামায পড়তে। ভদ্রভাবে ঐ অনুরোধ প্রত্যাখ্যান কোরে ওমর (রাঃ) গীর্জার বাইরে যেয়ে নামায পড়লেন। কারণ কি বোললেন তা লক্ষ্য করুন। বললেন- আমি যদি ঐ গীর্জার মধ্যে নামায পড়তাম তবে ভবিষ্যতে মুসলিম(Muslim)রা সম্ভবতঃ একে মসজিদে পরিণত কোরে ফেলতো। একদিকে ইসলাম(Islam)কে পৃথিবীময় প্রতিষ্ঠিত কোরতে সর্বস্ব পণ কোরে দেশ থেকে বেরিয়ে সুদূর জেরুসালেমে যেয়ে সেখানে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ইসলাম(Islam) প্রতিষ্ঠা, অন্যদিকে খ্রীস্টানদের গীর্জা যেন কোন অজুহাতে মুসলিম(Muslim)রা মসজিদে পরিণত না করে সে জন্য অমন সাবধানতা। এই হলো "ধর্মে বল প্রয়োগ নেই" এবং ‘সশস্ত্র সংগ্রাম করো যে পর্যন্ত না পৃথিবী থেকে সমস্ত অন্যায়, রক্তপাত, অশান্তি শেষ হোয়ে না যায়' এর প্রকৃত অর্থ। ঐ অর্থ এবং তফাৎ বিশ্বনবীর (দঃ) আসহাব এবং উম্মতে মোহাম্মদী সঠিকভাবে বুঝেছিলেন বোলেই তারা সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে পৃথিবীর যে বিরাট অংশে দ্বীন ইসলাম(Islam) প্রতিষ্ঠা কোরেছিলেন সেখানে ইসলামিক, রাজনৈতিক, আর্থ-সামাজিক ও আইন প্রশাসন ব্যবস্থা চালু কোরলেও কাউকে বল প্রয়োগে কিম্বা প্রলোভন দেখিয়েও ধর্মান্তরিত করেননি। কোরলে ঐ বিরাট ভূখণ্ডে আজ একটাও অসুমলিম থাকতে পারতো না। বরং অন্যান্য ধর্মের মন্দির, গীর্জা সীনাগগের রক্ষা ও নিরাপত্তার ভার ছিলো মুসলিম(Muslim)দের হাতে। অমুসলিম(Muslim)দের ধর্মীয় স্বাধীনতাসহ সব রকমের অধিকারকে রক্ষা কোরতে ইসলামী রাষ্ট্র ও মুসলিম(Muslim) প্রশাসন কত দূর গেছে তার হাজারো ঘটনা ইতিহাস হোয়ে আছে, যা পড়লে হতবাক হয়ে যেতে হয়। এমন ঘটনা দিয়ে এই উম্মাহর ইতিহাস ভরপুর যেখানে তারা একটি অমুসলিম(Muslim) জাতির সামরিক প্রতিরোধ চুর্ণ কোরে তাদের ইসলামী আইন ও শাসনের অধীনে এনেছে, তারপর অল্পদিনের মধ্যেই এই নতুন জীবন-ব্যবস্থার ফলে সুবিচার, শান্তি ও নিরাপত্তা দেখে অভিভূত হোয়ে দলে দলে অমুসলিম(Muslim) স্বেচ্ছায় ইসলামে(Islam) প্রবেশ কোরেছে, ফলে মুসলিম(Muslim)রা সংখ্যাগরিষ্ঠে পরিণত হোয়েছে। সশস্ত্র সংগ্রাম কোরে তাদের ইসলামে(Islam)র জীবন-ব্যবস্থার অধীনে না আনলে লক্ষ যুক্তি-তর্কে ও তবলীগে এটা ঘটতে পারতো না। তাই আবুযর (রাঃ) বোলেছিলেন- আল্লাহ(Allah)র রাস্তায় জেহাদ ইসলামে(Islam) এক বিশেষ কর্তব্য। এই জেহাদের মাধ্যমে মুসলিম(Muslim)রা লোকদের গলায় শিকল দিয়ে নিয়ে আসে; অতঃপর ঐ লোকগণই স্বেচ্ছায় ইসলাম(Islam) গ্রহণ কোরে নেয়।

মানব জাতির নিখুত আদর্শ স্রষ্টার শ্রেষ্ঠ রসুলের (দঃ) অনুসারী এই মহাজাতির এই যে চরম আত্মত্যাগ এর একমাত্র কারণ সমস্ত পৃথিবীতে শান্তি, ইসলাম(Islam) স্থাপন, ইবলিসের যে চ্যালেঞ্জ আল্লাহ(Allah) গ্রহণ করেছেন তাতে আল্লাহ(Allah)কে জয়ী করা। আল্লাহ(Allah)র জন্য ও মানুষের কল্যাণের জন্য উভয় দিক থেকেই এর চেয়ে বড়, এর চেয়ে মহান কাজ, মহান আমল আর সম্ভব নয়। তাই সর্বজ্ঞানী সর্বশ্রেষ্ঠ বিচারক স্রষ্টা এই সর্বত্যাগী সংগ্রামীদের জন্য রেখেছেন তার সর্বশ্রেষ্ঠ পুরস্কার- বিনা বিচারে দেহান্তরের সঙ্গে সঙ্গে সর্বত্তোম জান্নাত আর রেখেছেন এ উম্মাহর সর্বশ্রেষ্ঠ সম্মান- তাদের মৃত পর্যন্ত বলার ওপর নিষেধাজ্ঞা। অথচ সভ্যতার দাবীদার পাশ্চাত্যের বুদ্ধিবাদী এবং শিক্ষিতরা এই মহান ব্রতকে সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন, তলোয়ারের জোরে ধর্মান্তর করা বোলে অভিহিত করেছেন। শুধু তাই নয় তাদের শিক্ষায় শিক্ষিত প্রাচ্যের, এমন কি এই জাতির অন্তর্ভূক্ত অনেক বুদ্ধিজীবীও তাদের প্রভুদের সুরে সুর মিলিয়েছেন। তবে সবাই নয়। এ দ্বীনের, জীবন ব্যবস্থার বিরোধী পাশ্চাত্যের পণ্ডিতদের প্রত্যেকেই যে অন্ধ তা নয়। কেউ কেউ আছেন ও ছিলেন যারা সত্য আংশিকভাবে হলেও দেখতে পেয়েছেন এবং স্বীকার কোরেছেন। যেমন De Lacy O Leary লিখেছেন 'History makes it clear, however, that the legend of the fanatical muslims sweeping throuh the world and forcing Islam at the point of the sword upon conquered races is one of the most fantastically absurd myths that historians have ever repeated.' অর্থাৎ- যাহোক, ইতিহাসই একথা পরিষ্কার কোরে দেখায় যে, ইতিহাসবেত্তারা যত কিছু পুনরাবৃত্তি কোরেছেন তার মধ্যে পৃথিবীতে দ্রুত ধাবমান ধর্মান্ধ গোড়া মুসলিম(Muslim) তলোয়ারের জোরে অন্য জাতিগুলির ওপর ইসলাম(Islam) চাপিয়ে দিচ্ছে, এই উপকথা অত্যন্ত উদ্ভট কল্পনা ও হাস্যকর মিথ্যার অন্যতম (Islam at the cross Roads- D Lacy O Leary)। এখানে লক্ষ্য করুন লেখক Repeated, পুনরাবৃত্তি শব্দটা ব্যবহার কোরেছেন অর্থাৎ এই উদ্ভট কল্পনা ও হাস্যকর মিথ্যাটি যে তথাকথিত ইতিহাসবেত্তারা বারবার উল্লেখ কোরেছেন, লিখেছেন সে সম্বন্ধে তিনি সচেতন।

এ গেলো তলোয়ারের জোরে ইসলাম(Islam) চাপিয়ে দেয়ার ব্যাপার। তারপর কেন এ সংগ্রাম এ সম্বদ্ধে ইতিহাসবেত্তা Lothrop লিখেছেন- Forgetting the chronic rivalries and blood feuds which had consumed their energies in internecine strife, and welded into a glowing unity by the fire of their new found faith, the Arabs poured forth from their deserts to conquer the earth for Allah the One true God. (The New World of Islam- Lothrop).অর্থাৎ "যে পুরাতন প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও পুরুষানুক্রমিক রক্তাক্ত বিবাদের দরুণ ও আত্মকলহে তাদের শক্তি নিঃশেষ হচ্ছিল তা ভুলে যেয়ে এবং নতুন বিশ্বাসের আগুনে উজ্জ্বল ঐক্যে দৃঢ় সংবদ্ধ হোয়ে আরবরা তাদের মরুভূমি থেকে বানের ঢলের মত নির্গত হলো- এক এবং সত্য আল্লাহ(Allah)র জন্য পৃথিবী জয় কোরতে।" তারপর এ ‘দ্বীন’ জীবন-বিধান যে কোনও জাতি বা গোত্র বা ঐ ধরনের কোনও কিছুর মধ্যে সীমিত থাকার জন্য নয়, এ দ্বীনকে অধ্যয়ন করার পর এ কথাও অনুধাবন কোরতে পেরেছেন অনেকেই। যেমন বিশ্বনবী (দঃ) সম্বন্ধে লিখতে চেয়ে Joseph I Nunan লিখেছেনঃ His creed ........ necessarily connotes the existance of a Universal empire. অর্থাৎ তাঁর (মোহাম্মদ) ধর্ম অবশ্যই একটি বিশ্ব সাম্রাজ্যের অর্থ বহন করে (Islam and European Civilization- Joseped I Nunam)।

মনে রাখতে হবে যে খ্রীস্টান Nunan এ কথা মহানবী (দঃ) বা ইসলামে(Islam)র প্রশংসায় বোলছেন না, বোলছেন নিন্দা কোরে। অর্থাৎ বিশ্ব সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার মত নিন্দনীয় কাজ হোচ্ছে মোহাম্মদের (দঃ) এবং তার ধর্মের। এটা যে Nunan এর দৃষ্টিতে সাম্রাজ্যবাদ তার কারণ পৃথিবীময় একটা আদর্শ, একটি সংবিধান প্রতিষ্ঠা তাদের আকীদায় (Concept) এ আসেনা। আমার বক্তব্য হোচ্ছে, ঐ সব খ্রীস্টান চিন্তাবিদরা যে সত্য এই দ্বীনে দেখতে পেয়েছেন অর্থাৎ

ক) তলোয়ারের জোরে মানুষকে এ দ্বীন গ্রহণ কোরতে বাধ্য করা হয়নি।

খ) এই উম্মাহ একটি আদর্শ প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম কোরেছে এবং

গ) ঐ আদর্শটি সমস্ত পৃথিবীর মানব জাতির জন্য। এই সত্য আজ এই জাতির সমস্ত রকম কাজ, চিন্তা এবং আকীদার বাইরে। ওগুলো কোনোটার মধ্যেই আজ এই জাতি নেই। আছে হাস্যকর খুটিনাটির মধ্যে জড়িয়ে, স্থবির হোয়ে মাকড়শার জালে আবদ্ধ মাছির মত। দ্বীনের প্রকৃত উদ্দেশ্য বিশ্বনবীর (দঃ) ও তার আসহাবদের (রাঃ) প্রকৃত সুন্নাহ থেকে যে তারা লক্ষ কোটি মাইল দূরে সে বোধ পর্যন্ত হারিয়ে গেছে।

আমরা ইতিহাসে পাই, এই প্রকৃত উম্মতে মোহাম্মদী, মোমেন ও মুসলিম(Muslim) উম্মাহ শেষ নবীর (দঃ) ওফাতের পর থেকে তার আরদ্ধ কাজ চালিয়ে গেলো এবং পৃথিবীর এক বিরাট এলাকা তাদের অধীনে এলো, মানব জাতির একটা উল্লেখযোগ্য অংশকে শেষ জীবন ব্যবস্থার সুফল উপহার দিলো। এ বিজয়কে অমুসলিম(Muslim) ইতিহাসবেত্তারা সাম্রাজ্যবাদী বিজয় এবং মুসলিম(Muslim) শাসনাধীন এলাকাকে ইসলামী সাম্রাজ্য বোলে অভিহিত কোরেছেন, এমনকি নিজস্ব স্বত্তাহীন মুসলিম(Muslim) ইতিহাসবেত্তারাও তাদের নকল কোরে একে "মুসলিম(Muslim) সাম্রাজ্য, ইসলামী সাম্রাজ্য" ইত্যাদি বোলে আখ্যা দিয়েছেন। তারা বোঝেননি যে সামরিক শক্তিবলে দখল কোরলেও ওটা ‘সাম্রাজ্য' ছিলো না, ছিলো একটা আদর্শ প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম। সাম্রাজ্যবাদ যে শোষণ ও অন্যায় করে, ওটা ছিলো তার ঠিক উল্টো, শোষণ ও অন্যায় বন্ধ কোরে ন্যায় ও শান্তি প্রতিষ্ঠা। ইতিহাসকে সত্যান্বেষী মন দিয়ে পড়লে ঐ ইতিহাসবেত্তারা দেখতে পেতেন যে যারা আল্লাহ(Allah)র দেয়া দ্বীন, জীবন-ব্যবস্থাকে প্রতিষ্ঠা কোরতে সশস্ত্র বাধা দেয়নি তাদের কোন সম্পদ মুসলিম(Muslim) বাহিনী হস্তগত করেনি, তাদের কোন শোষণ করেনি। প্রত্যেক মুসলিমের ওপর যে কর ধরা হতো অমুসলিমের ওপরও সেই কর ধরা হতো। কেবলমাত্র যারা শত্রু দ্বারা আক্রান্ত হোলে অস্ত্র ধোরতে রাজী ছিলো না তাদের রক্ষার জন্য তাদের ওপর একটা সামান্য অতিরিক্ত কর ধরা হতো। তাও দুর্বল, বৃদ্ধ, স্ত্রীলোক, শিশু এমন কি রোগাক্রান্ত লোকদের বাদ দিয়ে শুধু যুদ্ধক্ষম, কিন্তু অস্ত্র ধোরতে রাজী নয়, এমন লোকদের ওপর ঐ কর ধরা হতো- যার নাম জিজিয়া। অমুসলিম(Muslim)দের মধ্যে যারা আক্রান্ত হোলে মুসলিম(Muslim)দের সাথে নিজেদের রক্ষার জন্য অস্ত্র ধোরতে রাজী ছিলো তাদের ওপর ঐ জিজিয়া ধরা হতো না। এর চেয়ে ন্যায্য নীতি আর কি হোতে পারে? এই আদর্শ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামকে যারা সাম্রাজ্যবাদ বোলে নাম দিয়েছে তারাই অস্ত্রের বলে সমস্ত প্রাচ্য অধিকার কোরে তাকে নিঃশেষে শোষণ কোরেছে তা আজ ইতিহাস।

এইখানে একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ও উল্লেখ করা প্রয়োজন মনে কোরছি। ইসলামে(Islam)র এই যে উদ্দেশ্য পুরণের নীতি- অর্থাৎ পার্থিব জীবনের সব কিছু আল্লাহ(Allah)র রাস্তায় কোরবান কোরে দিয়ে শেষে প্রাণটুকু পর্যন্ত তাকে নিবেদন কোরে সশস্ত্র সংগ্রাম কোরে জয়ী হোয়ে বিজিত জাতির অন্যায় জুলুমের আইন ও শাসন ব্যবস্থা ফেলে দিয়ে সেখানে আল্লাহ(Allah)র দেয়া জীবন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা, অথচ বিজিত জাতির মানুষগুলির ব্যক্তিগত জীবনে যে কোন ধর্ম পালন করার পূর্ণ স্বাধীনতা দান- এই নীতি নিঃসন্দেহে প্রমাণ করে যে, ইসলাম(Islam) অনেক বেশী অগ্রাধিকার দেয় জাতীয় জীবনকে, আইনকে, শাসনতন্ত্রকে, ব্যক্তি জীবনকে নয়। ইসলামে(Islam)র উদ্দেশ্য হোলো শাসন ব্যবস্থা দখল কোরে সেখানে আল্লাহ(Allah)র দেয়া আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা, যেটা করা হোলে সামাজিক ও জাতীয় জীবনে ন্যায়বিচার, শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে। ব্যক্তি যদি তার ব্যক্তিগত জীবনে ভুল পথ আঁকড়িয়ে থাকে তবে সে তার ফল ভোগ কোরবে ঐ ব্যক্তিগত ভাবে, জাতীয় জীবনে নয়। জাতীয় জীবন যদি ভুল আইন কানুনের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকে তবে ব্যক্তি জীবন সৎ কাজের ওপর থাকলেও তা স্থায়ী হবে না। বৃহত্তর জাতীয় জীবনের চাপে ও প্রভাবে তা বিলীন হোয়ে যাবে। যেমন বর্তমান পৃথিবীতে লক্ষ কোটি মানুষ অতি নিষ্ঠার সাথে ধর্মকর্ম, সৎ কাজ, কোরলেও পৃথিবী অন্যায় অবিচারে, রক্তপাতে পূর্ণ হোয়ে আছে এবং প্রতিদিন ঐসব অতি দ্রুত হারে বাড়ছে, যেকোন পরিসংখ্যানই একথা বোলে দেবে। ব্যক্তিগত ভাবে সাধু হোয়ে থাকা ও জাতীয় জীবনকে ভুল আইন কানুন ইত্যাদির হাতে ছেড়ে দেওয়ার ফলে মানব জাতি আজ শুধু প্রচণ্ড অশান্তিতেই ভুগছে না, প্রলয়ংকরী আনবিক যুদ্ধে ধ্বংস হোয়ে যাওয়ার মুখে এসে দাঁড়িয়েছে। সর্বাত্মক সংগ্রাম (জেহাদ ও কিতাল) কোরে অন্য জাতিগুলির রাষ্ট্র ব্যবস্থা অধিকার কোরে সেখানে আল্লাহ(Allah)র দেয়া শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা কোরেও ব্যক্তি ধর্মজীবনকে তার স্বাধীন ইচ্ছার ওপর ছেড়ে দেয়া, শুধু ছেড়ে দেয়া নয়, তাদের ধর্মগুলিকে রক্ষা করার দায়িত্ব সরকারীভাবে গ্রহণ করা প্রমাণ করে যে, দ্বীন ইসলামে(Islam)র মূল উদ্দেশ্য হোচ্ছে জাতীয়, রাষ্ট্রীয়, ব্যক্তিগত নয়। তা না হোলে যুদ্ধে জয়ী হোয়ে তারা পরাজিত জতিগুলিকে তাদের ধর্ম ত্যাগ কোরে শেষ ইসলাম(Islam)কে গ্রহণ করতে বাধ্য কোরতেন এবং তা করলে আল্লাহ(Allah)র নির্দেশ ‘ধর্মে কোন জবরদস্তি নেই' অমান্য করা হতো এবং শত্রুদের "তলোয়ারে জোরে মুসলিম(Muslim)রা ধর্মান্তরিত কোরেছে" এ অপবাদ সত্য হতো।

সংক্ষেপে বোললে বোলতে হয় রাসুলাল্লাহর (দঃ) আসহাবরা (রাঃ) অর্থাৎ উম্মতে মোহাম্মদী হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি কোরেছিলেন যে, তাদের অস্তিত্বের অর্থই হোলো তাদের নেতা বিশ্বনবী মোহাম্মদের (দঃ) সুন্নাহ অনুসরণ করা, অর্থাৎ তিনি সারাজীবন ভর যে কাজটি কোরেছেন সেই কাজ চালিয়ে যাওয়া। সে কাজটি হচ্ছে, যেহেতু তিনি (দঃ) সমস্ত পৃথিবীর জন্য প্রেরিত হোয়েছেন কাজেই পৃথিবীময় এই শেষ ইসলাম(Islam) প্রতিষ্ঠা করার সংগ্রাম করা। সে সংগ্রাম মানুষকে বুঝিয়ে, কথা বোলে, লিখে এবং সশস্ত্রভাবে, সর্বতোভাবে। মহানবীর (দঃ) জীবিতকালে তারা তাদের পার্থিব যা কিছু ছিলো সব দিয়ে এবং শেষে প্রাণটুকু দিয়ে তাকে তার দায়িত্ব পুরণে সাহায্য কোরেছেন, তার প্রতি কাজে প্রতি প্রচেষ্টায় তার সাথে থেকে তাকে আপ্রাণ সাহায্য কোরেছেন। তার প্রতিটি সুখ-দুঃখের তারা অংশীদার হোয়েছেন। তারপর যখন তিনি তাদের মাঝ থেকে চলে গেলেন তখন তারা তাদের নেতার কাজে যেন কোন বিরতি না হয় সেজন্য সেই সংগ্রাম পূর্ণভাবে চালু রাখলেন। সেই কাজের বিরাটত্ব, সংকট, বিপদ তাদের এক মুহূর্তের জন্য দ্বিধাগ্রস্থ কোরতে পারলোনা। কারন তারা তাদের নেতার (দঃ) পবিত্র মুখে শুনেছিলেন এই বলতে যে, যে আমার সুন্নাহ ত্যাগ করবে সে আমাদের কেউ নয় (হাদীস )। তারা বুঝেছিলেন ‘তার (দঃ) বা তাদের কেউ নয়' অর্থ উম্মতে মোহাম্মদীই নয় এবং তার সুন্নাহ হলো পৃথিবীতে এই জীবন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম- সশস্ত্র সংগ্রাম। বিশ্বনবীর (দঃ) আসহাব তাদের নিজেদের উম্মতে মোহাম্মদী হবার অর্থ কী বুঝেছিলেন এবং ঐ উম্মাহ কিসের প্রভাবে একটা অবজ্ঞাত, উপেক্ষিত জাতি থেকে এক রাতে বিশ্বজয়ী শক্তিতে রূপান্তরিত হোয়েছিলেন তা দেখাতে ইতিহাস থেকে দু'একটা ঘটনা পেশ কোরছি।

উম্মতে মোহাম্মদীর মুজাহিদ বাহিনী শেষ ইসলাম(Islam) পৃথিবীর বুকে প্রতিষ্ঠা কোরতে কোরতে আফ্রিকা মহাদেশের পশ্চিম উপকূলে যখন যেয়ে পৌঁছলেন তখন তারা দেখলেন তাদের সম্মুখে মহাসমুদ্র, আর সামনে এগোবার পথ নেই। তখন নেতার (দঃ) ও উম্মাহর উদ্দেশ্য সাধনে নিবেদিতপ্রাণ সেনাপতি উকবা বিন না'ফে আটলান্টিক মহাসমুদ্রে তার ঘোড়া নামিয়ে দিলেন এবং যতদূর পর্যন্ত ঘোড়ার পায়ের নীচে মাটি পাওয়া গেলো ততদূর এগিয়ে গেলেন এবং তারপর আসমানের দিকে দু'হাত তুলে বোললেন- ইয়া আল্লাহ(Allah)! এই মহাসমুদ্র বাধা না দিলে আমরা তোমার রাস্তায় আরও সম্মুখে অগ্রসর হোতাম। আরও দেখুন পশ্চিমদিকে মুজাহিদ বাহিনীর সেনাপতি আমর (রাঃ) মিশরের আর্চ বিশপের কাছে যে প্রতিনিধি দল পাঠালেন তার দলপতি নিগ্রো উবায়দা (রাঃ) আর্চ বিশপকে কী বোললেন। একজন নিগ্রোর সাথে ঘৃণাভরে আর্চ বিশপ প্রথমে কথাই বোলতে চাননি। পরে যেহেতু সেনাপতি আমর (রাঃ) ঐ নিগ্রোকেই দলপতি কোরে পাঠিয়েছেন কাজেই বাধ্য হোয়ে তার সাথে কথা বোলতে হলো। উবায়দা (রাঃ) আর্চ বিশপকে বোললেন, "আমাদের বাহিনীতে আমার মত এক হাজার কালো লোক আছে। আমরা শত শত্রু বাহিনীর সাথে একসাথে যুদ্ধ কোরতে তৈরী আছি। আমরা বেঁচেই আছি শুধু আল্লাহ(Allah)র রাস্তায় যুদ্ধ করার জন্য। আমরা ধন দৌলতের কোন পরওয়া করি না। আমাদের শুধু পেটের ক্ষুধা মেটানো আর পরার কাপড়ের বেশী আর কিছুই চাই না। এই পৃথিবীর জীবনের আমাদের কাছে কোন দাম নেই। এর পরের জীবনই আমাদের কাছে সব।" এ ঘটনা ইসলামে(Islam)র ইতিহাসে তো আছেই যারা আমাদের কোন কিছুই ভালো দেখেন না তাদের ইতিহাসবেত্তারাও এই ঘটনাকে সত্য বোলে গ্রহণ কোরেছেন (দেখুন S.S. Leeder এর Veiled Mysteries of Egypt ৩৩২ পৃঃ থেকে ৩৩৫ পৃঃ )। উম্মতে মোহাম্মদীর অবিশ্বাস্য বিজয়ের মুলে ছিলো ঐ আকীদা, ঐ দৃষ্টিভঙ্গি ইসলামে(Islam)র উদ্দেশ্য সম্বন্ধে, এবং ঐ আকীদাই তাদের পরিণত কোরেছিল এক দুর্দ্ধর্ষ যোদ্ধা, অপরাজেয় জাতিতে যাদের নাম শুনলে অমুসলিমের আত্মা পর্যন্ত কেঁপে উঠতো। বিশ্বনবীর (দঃ) উম্মাহ এবং প্রতিনিধি হিসাবে সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে সমস্ত পৃথিবীতে এই শেষ ইসলাম(Islam)কে মানুষের রাজনৈতিক অর্থনৈতিক, প্রশাসনিক ও আইনগত জীবনে প্রতিষ্ঠা কোরে মানব জাতির মধ্যে শান্তি (ইসলাম) প্রতিষ্ঠাই হচ্ছে শেষ ইসলামে(Islam)র সর্বপ্রধান ও সর্বপ্রথম লক্ষ্য এবং রসুলাল্লাহর (দঃ) প্রকৃত সুন্নাহ এ কথা আশাকরি উপস্থাপিত কোরতে পেরেছি।

1 টি মন্তব্য:

সম্রাট শফিউল বাসার (বাদল) বলেছেন...

নিঃসন্দেহে জীহাদ আক্রমনাত্তক| জীবন ও সম্পদ দিয়ে কখনো মনের বিরুদ্ধে জীহাদ করা যায় না| যারা মনের বিরুদ্ধে জীহাদের কথা বলেন তারা সংরাম না করার নিমিত্তে সত্যকে গোপন করেন|