রবিবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০১১

******লেখকের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি

জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নী

এ যামানার এমাম, এমামুয্‌যামান (The Leader of the time)



আল্লাহর দীন (দীনুল হক) প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রকৃত উম্মতে মোহাম্মদীর যে মোজাহেদগণ আরবের মরুপ্রান্তর থেকে এ উপমহাদেশে এসেছিলেন তাদেরই উত্তরসূরী যামানার এমাম, এমামুয্‌যামান (The Leader of the time) জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নী ১৯২৫ সনে টাঙ্গাইলের করটিয়ার হাজার বছরের ঐতিহ্যবাহী পন্নী পরিবারে শবে বরাতের শেষ রাত্রে জন্মগ্রহণ করেন ৷ গ্রামের স্কুলের পাঠ শেষে তিনি প্রথমে সা’দত কলেজ এবং পরে কোলকাতায় ইসলামিয়া কলেজে অধ্যয়ন করেন ৷ ছাত্র জীবনেই তিনি ব্রিটিশ বিরোধী সংগ্রামে যুক্ত হোয়ে পড়েন ৷ সেই সুবাদে মহাত্মা গান্ধী, কায়েদে আযম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ, অরবিন্দু বোস, শহীদ সোহরাওয়ার্দী, আল্লামা এনায়েত উল্লাহ খান মাশরেকী, মাওলানা সাইয়্যেদ আবুল আ’লা মওদুদী এদের সংস্প আসেন ৷ ১৯৬৩ সালে তিনি প্রাদেশিক আইন পরিষদের সদস্য (এম.পি) নির্বাচিত হন৷


বুদ্ধি হবার পর থেকেই তিনি দেখতে পান সমস্ত মোসলেম জগত কোন না কোন পাশ্চাত্য প্রভুর গোলাম ৷ তখন থেকেই একটি প্রশ্ন তাঁর মনে নাড়া দিতে থাকে যে, মুসলমান বোলে পরিচিত জাতিটিই যদি আল্লাহর মনোনীত জাতি হোয়ে থাকে তাহোলে তাদের এই ঘৃণিত দাসত্বের কারণ কি? একসময় আল্লাহর অশেষ রহমে এ প্রশ্নের জবাব তিনি পেতে আরম্ভ কোরলেন ৷ একটু একটু কোরে, সারা জীবন ধোরে তিনি বুঝতে পারলেন কোথায় সেই শুভংকরের ফাঁকি, যে ফাঁকিতে পড়ে আজ যাদের পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জাতি হবার কথা--তারা পৃথিবীর নিকৃষ্টতম জাতিতে পরিণত হোয়েছে ৷ তিনি বুঝলেন, চৌদ্দশ’ বছর আগে মহানবী যে দীনকে সমস্ত জীবনের সাধনায় আরবে প্রতিষ্ঠা কোরেছিলেন এবং পরবর্ত্তীতে তাঁর প্রকৃত উম্মাহ অর্দ্ধ পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা কোরেছিলেন, সেই দীনটি আর আজ আমরা ‘এসলাম ধর্ম’ বোলে যে দীনটি অনুসরণ কোরি এই দু’টি দীন পরস্পর-বিরোধী, বিপরীতমুখী দু’টো এসলাম ৷ ফলে রসুলের নিজ হাতে গড়া জাতিটি এবং বর্ত্তমানের মোসলেম জনসংখ্যাটিও সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী ৷ এসলামের সঠিক আকীদা, তওহীদের মর্মবাণী, এবাদতের অর্থ, মো’মেন, মোসলেম, উম্মতে মোহাম্মদী হবার শর্ত্ত, হেদায়াহ-তাকওয়া, সালাতের (নামায) সঠিক উদ্দেশ্য, দীন প্রতিষ্ঠার তরিকা পাঁচ দফা কর্মসূচি এবং কিভাবে তাকে প্রয়োগ কোরতে হয় ইত্যাদিসহ আরো বহু বিষয় তিনি আল্লাহর দয়ায় বুঝতে পারলেন ৷ রসুল ১৪০০ বছর আগে আখেরী যামানায় দাজ্জালের আবির্ভাব সম্পর্কে যে ভবিষ্যদ্বাণী কোরে গিয়েছেন সেইসব হাদীসের রূপক বর্ণনা থেকে প্রমাণ কোরলেন যে বর্ত্তমান ইহুদী-খ্রীস্টান যান্ত্রিক ‘সভ্যতা’ই হোচ্ছে সেই ভয়ঙ্কর দানব ৷ তিনি তার এ উপলব্ধিগুলি লেখনীর মাধ্যমে প্রকাশ কোরলেন এবং প্রকৃত এসলামকে সারা পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৯৫ সালে ‘হেযবুত তওহীদ’ নামে একটি আন্দোলনের সূচনা কোরলেন ৷ এই লক্ষ্যে তিনি তাঁর নিজের সমস্ত সম্পদ অকাতরে বিলিয়ে দিয়েছেন এবং সামাজিক অবস্থানকে নির্দ্বিধায় পরিত্যাগ কোরেছেন ৷ তিনি এমন এক পরশপাথর যার সংস্পর্শ মানুষকে জান্নাতের শান্তি দেয় ৷ গত ১৬ বছর ধোরে শত প্রতিকূলতার মধ্যেও আল্লাহর প্রত্যক্ষ সাহায্যে দৃঢ়চেতা, আত্মপ্রত্যয়ী এ মহান ব্যক্তি নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন হাজার বছরের ফেকাহ, তফসির আর ফতোয়ার পাহাড়ের নিচে যে সহজ-সরল (সেরাতুল মোস্তাকীম) এসলাম চাপা পড়ে রোয়েছে সেই এসলামকে তার মৌলিক, অনাবিল রূপে উদ্ধার কোরে মানুষের সামনে উপস্থিত কোরতে ৷

******এই বই পড়ে যাদের হৃদয়তন্ত্রীতে আল্লাহর তওহীদের ঝংকার উঠবে

এই বই পড়ে যাদের হৃদয়তন্ত্রীতে আল্লাহর তওহীদের ঝংকার উঠবে, হেদায়াতের জন্য যাদের প্রাণ আকুল হবে তাদের জন্য যোগাযোগের ঠিকানা:-

হেযবুত তওহীদ, গ্রাম-করটিয়া, জেলা-টাঙ্গাইল।


31/32 P.K. Roy Road, Pustak Bhaban, Banglabazar, Dhaka.
Phone: 0167-0174643, 0167-0174651.
Email: click here

বৃহস্পতিবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০১১

৩৭। শেষ কথা

উৎস: Islam and Dajjal
আল্লাহ(Allah) তার শেষ রসুল বিশ্বনবী মোহাম্মদের (দঃ) মাধ্যমে দ্বীনুল ইসলামের(Islam) যে শেষ সংস্করণটি সমস্ত পৃথিবীর মানুষের জন্য পাঠালেন, যে দ্বীন অনুসরণ করার ফল হিসাবে পাঁচ লাখ জনসংখ্যার একটি নিঃস্ব, নিরক্ষর জাতি তদানিন্তন পৃথিবীর দুইটি বিশ্ব শক্তিকে সামরিকভাবে পরাজিত কোরে অর্দ্ধেক পৃথিবীতে দ্বীনুল হক্ককে প্রতিষ্ঠা কোরেছিলেন, সেই ইসলামের(Islam) মর্মবাণী এই বইয়ে উপস্থাপিত কোরেছি। কে এই আকীদা গ্রহণ কোরে হেদায়াত হবেন কে হবেন না জানি না। কারণ হেদায়াতের ভার আমার ওপর নেই, নবীদের হাতেও ছিলো না, হেদায়াতের শক্তি একমাত্র আল্লাহ(Allah)র হাতে। আমাদের দায়িত্ব শুধু প্রচেষ্টা। সেই প্রচেষ্টায় আমাদের গ্রামে একটি সংগঠন করা হোয়েছে, প্রকৃত ইসলাম(Islam)কে(Islam) প্রতিষ্ঠা কোরতে। নাম দেয়া হোয়েছে হেযবুত তওহীদ। হিয্‌ব শব্দের অর্থ হোচ্ছে দল আর তাওহীদ হোচ্ছে সার্বভৌমত্ব- অর্থাৎ (আল্লাহ(Allah)র) সার্বভৌমত্বের দল। ১৯৯৪ সনের মার্চ মাসে এই সংগঠন প্রতিষ্ঠা হোলেও ইতিমধ্যেই অনেক চিহ্ন পাওয়া গেছে যাতে বোঝা যায় রহমানুর রহীম আল্লাহ(Allah)র সস্নেহ দৃষ্টি এই সংগঠনের ওপর বিরাজ কোরছে। কারণ যখনই কোন সমস্যা দেখা দিচ্ছে, প্রশ্ন আসছে, ঠিক সময়মত তিনি প্রত্যেকটির সমাধান কোরে দিচ্ছেন এবং সে সব সমাধান আসছে তার কোরান তার প্রিয় রসুলের হাদীস থেকে একেবারে অভ্রান্ত সমাধান হয়ে। মনে হচ্ছে যেন আল্লাহ(Allah)ই অলৌকিকভাবে এই সংগঠনের পথ-নির্দেশনা নিয়ন্ত্রণ কোরছেন।

আল্লাহ(Allah)র এই অপার রহমতের বিস্তৃত বিবরণে যাব না, বই ইতিমধ্যেই অনেক বড় হোয়ে গেছে। শুধু একটি মাত্র অনুগ্রহের, দানের উল্লেখ কোরবো।

প্রত্যেক সংগঠনেরই একটি কর্মসূচী থাকে। থাকতেই হয়, কারণ কর্মসূচী হোচ্ছে ঐ সংগঠনের উদ্দেশ্য, লক্ষ্য অর্জনের প্রক্রিয়া, তরিকা। গত কয়েক শতাব্দী থেকে এই দ্বীনের পুনর্জাগরণের জন্য মুসলিম(Muslim) দুনিয়ায় বিভিন্ন স্থানে বিভিন্নসংগঠন জন্ম নিয়েছে। এই সমস্ত সংগঠনের প্রত্যেকেরই এক একটি কর্মসূচী আছে, ঐ সমস্ত সংগঠনের নেতারা চিন্তা-ভাবনা, আলাপ-আলোচনা, গবেষণা কোরে তাদের সংগঠনগুলির জন্য কর্মসূচী তৈরী কোরে সেই মোতাবেক তাদের সংগঠনগুলিকে পরিচালিত কোরেছেন তাদের যার যার অভিষ্ঠ লক্ষ্যের দিকে। সুতরাং হেযবুত তওহীদেরও একটি কর্মসূচীর প্রয়োজন ছিলো। জন্মের পর থেকে এক বছর পর্য্যন্ত এই সংগঠনের কোন কর্মসূচী ছিলো না। তারপর সর্বশ্রেষ্ঠ করুনাময় আল্লাহ(Allah) তার শেষ রসুলকে (দঃ) এই পৃথিবীতে তার দ্বীনুল হক্ককে প্রতিষ্ঠার জন্য যে পাঁচ দফা কর্মসূচী দান কোরেছিলেন এবং যে কর্মসূচীটি রসুল (দঃ) তার কর্মজীবনে সম্পূর্ণভাবে বাস্তবায়িত কোরে তার উম্মাহর ওপর অর্পন কোরে আল্লাহ(Allah)র কাছে চলে গিয়েছিলেন এবং তার উম্মাহ ৬০/৭০ বছর সেটাকে অনুসরণ করার পর তা ত্যাগ কোরেছিলো- সেই মহান কর্মসূচী আল্লাহ(Allah) এই হেযবুত তওহীদকে আবার নতুন কোরে উপহার দিয়েছেন। এবং দিয়েছেন এমনভাবে যাকে অলৌকিক ছাড়া আর কিছু বলা যায় না। আজ পৃথিবীর সমস্ত সংগঠনের কর্মসূচী মানুষের তৈরী, আর হেযবুত তওহীদের কর্মসূচী, এই মহাবিশ্বের স্রষ্টা স্বয়ং আল্লাহ(Allah)র তৈরী। আল্লাহ(Allah)র এই মহা অনুগ্রহের শুকরিয়া আদায় করার শক্তি আমাদের নেই।

আল্লাহ(Allah)র তৈরী কর্মসূচীকে বাদ দিয়ে লক্ষ মিটিং, মিছিল, শ্লোগান আর নির্বাচন কোরেও দ্বীন প্রতিষ্ঠা হবে না, মাথায় বিছানা আর বদনা নিয়ে লক্ষ মসজিদে ঘুরলেও দ্বীন প্রতিষ্ঠা হবে না। গত অর্দ্ধ শতাব্দী থেকে ওগুলি করা হোচ্ছে। আল্লাহ(Allah)র দ্বীন কোথাও প্রতিষ্ঠিত হয় নি, হবে না। রসুলাল্লাহর (দঃ) একদিন আসরের নামাযের পর হঠাৎ পূর্ব দিকে চেয়ে খুশী হোয়ে হাসলেন। সাহাবারা জিজ্ঞাসা কোরলেন তিনি অমন কোরে হাসলেন কেন? জবাবে বিশ্বনবী (দঃ) বোললেন- ভবিষ্যতে ইসলাম(Islam) বিকৃত হোয়ে যাবার পর হিন্দের (ভারতের) পূর্বে একটি সবুজ দেশ থেকে প্রকৃত ইসলাম(Islam) পুনর্জীবন লাভ কোরবে। পাঠক, পাঠিকাগণ! আপনারা মেহেরবাণী কোরে আল্লাহ(Allah)র রহমানুর রহীমের কাছে এই আবেদন করুন, যে সে দেশ যেন এই বাংলাদেশ হয় এবং যে সংগঠনের মাধ্যমে প্রকৃত দ্বীনুল ইসলাম(Islam) নবজীবন লাভ কোরবে সেটা যেন এই হেযবুত তওহীদ হয়। আমীন।





এই বই পড়ে যাদের হৃদয়তন্ত্রীতে আল্লাহর তওহীদের ঝংকার উঠবে, হেদায়াতের জন্য যাদের প্রাণ আকুল হবে তাদের জন্য যোগাযোগের ঠিকানা:-

হেযবুত তওহীদ, গ্রাম-করটিয়া, জেলা-টাঙ্গাইল।


31/32 P.K. Roy Road, Pustak Bhaban, Banglabazar, Dhaka.
Phone: 0167-0174643, 0167-0174651.
Email: info@hezbuttawheed.com

৩৬। আমার কথা

উৎস: Islam and Dajjal
আমার কথা শেষ হোয়ে এসেছে। লেখা আমার পেশা নয়। সব কথা গুছিয়ে বোঝাবার মত কোরে লিখতে পারিনি, জানি, তবু অকপটে লিখেছি। জায়গায় জায়গায় হয়তো শক্ত হোয়ে গেছে। নরম হবার চেষ্টা বিশেষ কোরিনি। কারণ এই জাতিটি, যেটাকে আল্লাহ(Allah) সর্বশ্রেষ্ঠ জাতি বোলেছেন, আজ তা সর্বনিকৃষ্ট জাতিতে পরিণত হোয়েছে। ঈমান অর্থাৎ আল্লাহ(Allah)-রসুলে (দঃ) বিশ্বাস মোটামুটি ঠিক থাকা সত্ত্বেও আকীদা (concept) বিকৃত হোয়ে যাওয়ার ফলে, অর্থাৎ শেষ ইসলামের উদ্দেশ্য ও উদ্দেশ্য অর্জনের প্রক্রিয়া-প্রশিক্ষণ সম্বন্ধে অন্ধ হোয়ে যাওয়ার ফলে। একে ঘুম থেকে উঠাবার জন্য শক্ত আঘাত ছাড়া উপায় নেই-তাই দিয়েছি। জানিনা, কয়জনের ঘুম ভাঙ্গবে, কয়জনের অন্ধত্ব ঘুচবে। হেদায়াত, পথ-প্রদর্শন নিশ্চয়ই আমার হাতে নয়, আল্লাহ(Allah) বোলেছেন- তা তার হাতে। কাকে তিনি হেদায়াত কোরবেন, অন্ধত্ব ঘুচাবেন, কাকে নয়, আমি জানিনা। আমি শুধু জানি- আল্লাহ(Allah)র শেষ প্রেরিত, শেষ রসুল মোহাম্মদ (দঃ) বিন আবদুল্লাহ যে জীবন-ব্যবস্থা, যে দ্বীন আল্লাহ(Allah)র কাছ থেকে এনে মানব জাতিকে উপহার দিয়েছিলেন, আজকের ইসলাম(Islam) সেই দ্বীন নয়, যে জাতি তিনি সৃষ্টি কোরে গিয়েছিলেন, আজকের মুসলিম(Muslim) নামধারী উম্মতে মোহাম্মদীর দাবীদার এই বিরাট জাতিটি সেই জাতিও নয়। সংস্কৃতিতে একটা কথা আছে- ফলেন পরিচয়তে! গাছের ফল থেকেই তার পরিচয়, শত যুক্তি তর্কে তা বদলানো যাবে না। কাজেই চার পাঁচ লাখ মানুষের সেই ছোট্ট জাতিটির কাজের ফল, আর গত কয়েক শতাব্দী ধোরে যে বিরাট জাতিটি শত্রুর গোলামী-দাসত্ব করলো, এবং দাসত্ব থেকে আংশিক মুক্তি পাওয়ার পরও যে জাতি স্বেচ্ছায় দাসত্ব কোরছে, গয়রুল্লাহর এবাদত করছে, এই দু'টোকেই সেই একই জাতি বোলে বিশ্বাস করা, একটি সুমিষ্ট আম গাছ আর একটি তিক্ত মাকাল ফলের গাছ, দু'টোকেই একই গাছ বোলে বিশ্বাস করা বা যুক্তি-তর্ক দিয়ে তা প্রমাণ করার চেষ্টার মতই নির্বুদ্ধিতা ও নিস্ফল।

বুদ্ধি হবার পর থেকেই আমার মনে প্রশ্ন নাড়া দিচ্ছিলো। তখন আমরা একটি পাশ্চাত্য খ্রীস্টান শক্তির দাস। শুধু আমরা নই, প্রায় সমস্ত মুসলিম(Muslim) জগত কোন ও না কোন পাশ্চাত্যের গোলাম। এই বিশাল জাতিটাকে ইউরোপের ছোট ছোট রাষ্ট্রগুলি টুকরো টুকরো কোরে ভাগ কোরে এক এক রাষ্ট্র এক এক টুকরো চুষে খাচ্ছিলো। সবার কাছে, শুনতাম, বিশেষ কোরে ওয়াজে মওলানা-মৌলভীদের কাছ থেকে যে এই একমাত্র ধর্ম, জাতিই আল্লাহ(Allah)র কাছে গৃহীত, আর সব দোযখে যাবে। আমরাই, বিশেষ কোরে তারা, আল্লাহ(Allah)র অতি প্রিয়, আমাদের জন্য আল্লাহ(Allah) জান্নাত সাজিয়ে গুছিয়ে রেখেছেন। কিন্তু মনে খটকা লাগতো, তাই যদি হবে, শুধু আমরাই যদি সত্য পথের পথিক হই, তবে আমাদের এই ঘৃণার দাসত্ব কেন? তাদের কাছে প্রশ্ন কোরলে তারা বুঝিয়ে দিতেন- আল্লাহ(Allah) অন্যদের অর্থাৎ আমাদের খ্রীস্টান প্রভুদের এই দুনিয়া ভোগ কোরতে দিয়েছেন এ জন্য যে তাদের পরকালে জাহান্নামে দেবেন আর আমাদের দারিদ্র, অশিক্ষা, আর গোলামীর মধ্যে রেখেছেন এই জন্য যে আমাদের আখেরাত অর্থাৎ পরকালে সুখ দেয়া হবে। কোরান-হাদীস উল্লেখ কোরে বুঝিয়ে দিতেন- এই দুনিয়াটা কত খারাপ জায়গা। এর কোন কাজে লিপ্ত না হোয়ে, চোখ-কান বুঁজে নামায, রোযা, ইত্যাদি করতে করতে জীবনটা কাটিয়ে দিতে পারলেই পরকালে একেবারে জান্নাতুল ফেরদৌসে জায়গা পাওয়া যাবে। ঐ বয়সে তাই বুঝলাম। কিন্তু পরে যখন ইতিহাস পড়লাম তখন দেখলাম যে মহানবীর (দঃ) পর তার সৃষ্ট জাতি পৃথিবীতে ঠিক সেই স্থান দখল কোরে ছিলো যে স্থানে আজ আমাদের প্রভু ঐ ইউরোপীয় জাতিগুলি দখল কোরে আছে। অর্থাৎ অর্থনৈতিক, সামরিক, রাজনৈতিক, পার্থিব, সম্পদ, শিক্ষায়, বিজ্ঞানে, নতুন বিষয় অনুসন্ধানে, বিজ্ঞানের নতুন নতুন শাখার গবেষণায়, পৃথিবীর অজানা জায়গায় দুঃসাহসিক অভিযানে তারা যা ছিলেন আজ পাশ্চাত্য জগত তাই হোয়েছে। মওলানা- মৌলভী সাহেবেরা যে জবাব দিয়েছিলেন তার মানে এই হয় যে- ইসলামের প্রাথমিক যুগের ঐ মুসলিম(Muslim)দের আল্লাহ(Allah) ইহজগত দিয়ে দিয়েছিলেন আখেরাতে জাহান্নাম দেবেন বোলে এবং তখনকার ইউরোপীয়ানদের এবং বর্তমানের আমাদের জান্নাত দেবেন বোলে।

মন সায় দেয়নি। কোথায় যেন কী একটা ভয়ংকর গোলমাল আছে, কোথাও এক বিরাট শুভংকরের ফাঁকি আছে। অবচেতন মন থেকে বোধহয় স্রষ্টার কাছে প্রার্থনা পৌঁছে গিয়েছিলো- আমাকে বুঝিয়ে দাও! আমাকে বুঝিয়ে দাও! তোমার সর্বশ্রেষ্ঠ রসুল, তোমার শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি, সমস্ত মানব জাতির আদর্শ কোরে যাকে তুমি তৈরী কোরেছো (কোরান- সূরা আল-আহযাব ২১)। যার নামে স্বয়ং তুমি আল্লাহ(Allah) তোমার মালায়েকদের নিয়ে দরুদ ও সালাম পাঠাও (কোরান- সূরা আল-আহযাব ৫৬), তার জাতি আজ ঘৃণিত দাস কেন? দেখতে পাচ্ছি এরা তোমায় বিশ্বাস করে। তা না কোরলে তো আর নামায পড়তো না, রোযা রাখতো না, যাকাত দিতো না, হজ্জ্ব করতো না, দাড়ী রাখতো না, মোছ কাটতো না, এত নফল এবাদত করতো না। এরা তো এ সবই করে, শুধু তাই নয় এদের মধ্যে অনেকে তো খানকায় বোসে কঠিন আধ্যাত্বিক সাধনাও করে। তবু কেন আমরা বিধর্মীদেীর পদদলিত দাস? কোথায় গলদ, কোথায় ফাঁকি?

এই মহাবিশ্বের সর্বশক্তিমান স্রষ্টা বোধহয় তার এক অতি নগণ্য পাপী সৃষ্টের মনের আকুল জিজ্ঞাসা শুনলেন। ধীরে ধীরে একটু একটু কোরে আমার মনের প্রশ্নের উত্তর আসতে লাগলো- সারা জীবন ধোরে। এখানে একটু, ওখানে একটু, বইয়ের পাতায়, ছোটখাট ঘটনায়, নিজের চিন্তার মধ্যে দিয়ে এমন কি চিন্তা না কোরেও হঠাৎ নিজে নিজেই জবাব মনের মধ্যে এসে যাওয়া, এমনি কোরে পেঁয়াজের খোসা ছাড়াবার মত একটি একটি কোরে সমস্ত আবরণ ঝোরে পড়ে গেছে। গিয়ে আমার সেই 'কেন'র জবাব আমাকে দেয়া হোয়েছে- এই পরিণত বয়সে। আজ আমি জানি কোথায় গলদ, কোথায় সেই শুভংকরের ফাঁকি, যে ফাঁকিতে পড়ে আজ যার পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জাতি হবার কথা- সে পৃথিবীর নিকৃষ্টতম জাতিতে পরিণত হোয়েছে। আজ আমি জানি, যে একত্ববাদের, তওহীদের ওপর ভিত্তি কোরে পৃথিবীর সমস্ত জীবন-ব্যবস্থা, দ্বীন অবতীর্ণ হোয়েছিলো, সেই একত্ববাদ, তওহীদ যেমন পৃথিবীর কোন জাতির মধ্যে নেই, তেমনি এই তথাকথিত 'মুসলিম(Muslim)' জাতির মধ্যেও নেই। অন্য সব ধর্ম ও জাতি যেমন এবং যতখানি বহুত্ববাদের (শিরক) ও নাস্তিক্যে ডুবে আছে এই জাতিও ততখানিই ডুবে আছে। অন্য ধর্মের মানুষগুলোর মত এই ধর্মের মানুষগুলোও বুঝছেনা, কেমন কোরে আজ আর তারা মুসলিম(Muslim) নেই। আকীদার (Concept) বিকৃতিতে তওহীদ এদের কাছে শুধু মাটির, পাথরের তৈরী মূর্তিকে সাজদা না করার মধ্যে সীমাবদ্ধ। আল্লাহ(Allah)র শেষ রসুলের (দঃ) মাধ্যমে প্রেরিত ইসলামের শেষ সংস্করণ আর বর্তমানের "ইসলাম(Islam) ধর্ম" যে দু'টি সম্পূর্ণ ভিন্ন ও বিপরীতমুখী জিনিষ তা পরম করুণাময় আল্লাহ(Allah)র রহমে আজ আমার কাছে দিনের আলোর মত পরিষ্কার।

প্রভুর কাছে চেয়েছিলাম বুঝতে কোন অপরাধে, কোন গলদে তার শ্রেষ্ঠ রসুলের জাতি দারিদ্র্যে, অশিক্ষায়, কুশিক্ষায়, প্রায় পশু পর্যায়ের জীবে পরিণত হোয়ে মোশরেক ও কাফেরদের গোলামে পরিণত হলো। রহমানুর রহীমের অনুগ্রহে তা বুঝে মহা বিপদে পড়ে গেলাম। ঘাড়ে এসে পড়লো ভয়াবহ দায়িত্ব। জানতে পারলাম মহানবীর (দঃ) বাণী- যে লোক জ্ঞান পেয়েও তা মানুষকে জানায় না, দেয় না, কেয়ামতে তার পেটে আগুন পুরে দেওয়া হবে। আরো জানলাম তিনি (দঃ) এও বোলেছেন- যে হাশরের দিনে তার মুখে আগুনের লাগাম পড়ানো হবে। এর অর্থ এ দায়িত্ব যেমন কোরেই হোক ঘাড় থেকে নামাতেই হবে। ভেবে দেখলাম আমার সামনে দু'টো পথ। প্রথমটা, যে সত্য আমাকে বোঝানো হোয়েছে তা প্রকাশ্যে প্রচার করা। দ্বিতীয়টা-লিখে মানুষকে জানানো। প্রথমটার কথা চিন্তা কোরতেই বিশ্বনবীর (দঃ) আরেকটা হাদীস মনে এলো। তা হোচ্ছে এই যে-দ্বীন যখন বিকৃত হোয়ে যাবে তখন যে ব্যাক্তি প্রকৃত দ্বীনকে মানুষের মধ্যে প্রচার কোরবে, তার দরজা, স্থান নবীদের দরজা থেকে মাত্র এক দরজা (step) নীচু হবে। এ হাদীসের মর্ম বড় ভয়াবহ। প্রত্যেক প্রেরিত, নবী যখন তার পূর্ববর্তী নবীর মাধ্যমে দেয়া দ্বীনের বিকৃতি শোধরাতে চেষ্টা কোরেছেন, মানুষকে বিপথ থেকে সঠিক পথে আনতে চেষ্টা কোরেছেন তখন তার ভাগ্যে জুটেছে অপমান, বিদ্রুপ, বিরোধিতা ও সর্বপ্রকার অত্যাচার। আর ঐ অপমান, অত্যাচারের পুরোভাগে সবসময় থেকেছে ঐ বিকৃতি ধর্মের পুরোহিত, যাজক শ্রেণী। নবী-রসুলদের কোন পথ ছিলো না ঐ অপমান অত্যাচার সহ্য করা ছাড়া, কারণ তাদের পাঠানোই হোয়েছিলো ঐ কাজ দিয়ে। কিন্তু নবী-রসুল না হোয়েও যদি কোন সাধারণ মানুষ ঐ কাজ কোরতে যায়, তবে তারও ভাগ্যে তাই জুটবে যা প্রত্যেক নবী-রসুলের ভাগ্যে জুটেছে। তাই মহানবী (দঃ) বোলেছেন সেই সাধারণ মানুষেরও সম্মান হবে নবীদের চেয়ে মাত্র এক ধাপ কম। এমন কি শেষনবী (দঃ) এ কথাও বোলে দিয়েছেন যে দ্বীন ইসলামে যে মাহদী (আঃ) আসবেন তাকে প্রবল বিরোধিতা কোরবে এই বর্তমান ইসলামের হর্তা-কর্তারা। যাইহোক, আমার মত অতি সাধারণ এবং অতি গোনাহগার মানুষ, নবী-রসুলেরা যে পথে হেঁটে গেছেন সে পথের ধুলি স্পর্শ করার যোগ্যতাও যার নেই, সেই চরিত্রও নেই, আমার পক্ষে ঐ কাজ করা সম্ভব নয়। স্বভাবতঃই আমাকে দ্বিতীয় পথ বেছে নিতে হোয়েছে- যার ফল এই বই। এই পথ বেছে নিতেও দ্বিধা এসেছে, কারণ আমি লেখক নই, গুছিয়ে বোলতে পারব না, হয়ত বোঝাতেও পারব না। কিন্তু তৃতীয় পথ নেই। আরও একটা কারণ আছে এই কাজে হাত দেবার। নবীদের (আঃ) মাধ্যমে আল্লাহ(Allah) মানুষকে যুগে যুগে পথ দেখিয়ে এসেছেন অন্যায়, অত্যাচার, রক্তপাত না কোরে শান্তিতে মানুষকে পৃথিবীতে বাস করার। মানুষ কয়েক শতাব্দী আগে পর্য্যন্ত শুধু তাই অনুসরণ কোরে এসেছে, কখনো অবিকৃতরূপে, কখনও বিকৃতরূপে। এ সম্বন্ধে পেছনে বোলে এসেছি। এটা শেষ হলো আজ থেকে কয়েক শতাব্দী আগে, কেন শেষ হলো তাও পেছনে বোলে এসেছি। যাইহোক, এর নেট ফল হোয়েছে একটা 'সভ্যতা(Civilization)র' সৃষ্টি যেটা মানুষের জীবনের একটি দিকই শুধু দেখতে পায়-দেহের দিক, বস্তুর দিক, এবং শুধু এই দিকটার ওপর ভিত্তি কোরেই তাদের ঐ 'সভ্যতা(Civilization)', তাদের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক সমস্ত ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। যেটাকে বলা হয় ইহুদী-খ্রীস্টান সভ্যতা (Judio-Christian-Civilization) অর্থাৎ বর্তমান পাশ্চাত্য বস্তুতান্ত্রিক ভারসাম্যহীন 'সভ্যতা(Civilization)'। এই সভ্য সমাজের একটা অতি ছোট অংশ মানুষের আত্মার দিকটার খানিকটা দেখাশোনা করে, নানা রকম সেবামুলক কাজ করে যার কোন শক্তিশালী প্রভাব নেই সমাজের বৃহত্তর জীবনে। ঐ বস্তুতান্ত্রিক 'সভ্যতা(Civilization)র' সঙ্গে যোগ হোয়েছে যান্ত্রিক ও পদ্ধতিগত উন্নতি। যেহেতু ঐ সভ্যতা(Civilization) এক মানব জাতিকে ভৌগলিক, ভাষা, গায়ের রং ইত্যাদি নানাভাবে বিভক্ত কোরে দিয়েছে এবং ঐ বিভক্ত ভাগগুলি ঐ ভারসাম্যহীন বস্তুতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গীতে বিশ্বাসী, তাই বিজ্ঞানের ও তার প্রয়োগগত উন্নতির (Technological advancement) প্রধান অংশই কাজে লাগানো হচ্ছে যার যার পার্থিব স্বার্থ সংরক্ষণে এবং অন্যকে বঞ্চিত কোরে নিজে লাভবান হওয়ার চেষ্টায়। অন্যদিকে স্রষ্টার দেয়া পদ্ধতিতে মানব জাতিকে এক জাতি বলা হোয়েছে এবং একে কোনভাবেই ভাগ-বিভক্ত করার অনুমতি দেয়া হয়নি এবং যেহেতু এতে মানুষের দেহ ও আত্মার সব প্রয়োজনের ভারসাম্যযুক্ত ব্যবস্থা রয়েছে তাই এই দুইয়ের সম্মিলনের অবশ্যম্ভাবী ফল শান্তি ও প্রগতি। স্রষ্টার দেয়া জীবন-বিধানকে অস্বীকার কোরে, নাস্তিক্যের ওপর ভিত্তি কোরে পাশ্চাত্য 'সভ্যতা(Civilization)' মানব জাতিকে আজ এমন পর্য্যায়ে নিয়ে এসেছে যে আজ সমগ্র মানব জাতিটাই পারমাণবিক আত্মহত্যার দোড়গোড়ায় এসে দাঁড়িয়েছে। এ আত্মহত্যাটা শুধু তাদের হবে না, আমরা যারা ঘৃণিত হীনমন্যতায় আল্লাহ(Allah)র দেয়া জীবন-ব্যবস্থাকে তাদের মত ব্যক্তি জীবনে সীমাবদ্ধ কোরে রেখে, সমষ্ঠি জীবনে তাদের নকল কোরছি-আমাদেরও হবে। যদিও সময় বেশী নেই, তবু এখনও যদি পাশ্চাত্য তাদের নিজেদের গড়া জীবন-ব্যবস্থা পরিত্যাগ কোরে স্রষ্টার শেষ বিধান, শেষ ইসলাম(Islam)কে গ্রহণ করে তবে এ বিভৎস আত্মহত্যার হাত থেকে বেঁচে যেতে পারে। আর তারা যদি তা নাও করে তবে এই বিরাট জাতি, যেটা তার অন্তহীন অজ্ঞতায়, আকীদায় অন্ধত্বে নিজেকে মুসলিম(Muslim) ও উম্মতে মোহম্মদী বোলে মনে কোরে আত্মতৃপ্তিতে ডুবে আছে, তাকে ধাক্কা দিয়ে বলা যে- জাগো, দেখো তুমি কোথায় আছো, সমষ্টিগত জীবনে আল্লাহ(Allah)কে বাদ দিয়ে পাশ্চাত্যের, গায়রুল্লাহর এবাদত কোরতে কোরতে কোথায় এসেছো। আখেরাত তো বহু আগেই গেছে, আল্লাহ(Allah) রসুলের চোখে তো জাতি হিসাবে কার্যতঃ মোশরেক ও কাফের হোয়েছো কয়েক শতাব্দী আগেই, এখন ওদের সাথে সাথে এই পার্থিব আত্মহত্যারও সম্মুখীন হোয়েছো। এখনও সময় আছে তওবা কোরে শেরক ও কুফরী ত্যাগ কোরে মুসলিম(Muslim) হবার, উম্মতে মোহম্মদী হওয়াতো অনেক পরের কথা। শুধু মুসলিম(Muslim) হিসাবে নয়, মানুষ হিসাবেও এ দায়িত্ব পালনও এই লেখার এক উদ্দেশ্য।

এই বই লিখে টাকা উপার্জন আমার উদ্দেশ্য নয় এ কথা বলা দরকার করে না। একটা দাম রাখা হোয়েছে নীতিগতভাবে-ইনশাল্লাহ পুনঃমুদ্রনের আশায়। এই বইয়ের কোন স্বত্ব নেই। যে কেউ এই বই পুনঃমুদ্রণ কোরে প্রকাশ কোরতে পারবেন। শুধু দুই শর্ত। (ক) ঐ পুনঃমুদ্রণ এই বইয়ের নির্ভুল (Exact) নকল হোতে হবে, কোথাও সামান্য ভুলও থাকতে পারবে না, অন্ততঃ বক্তব্যের অর্থ বা উদ্দেশ্য বদলে যায় এমন ভুল থাকতে পারবে না। (খ) যদি কেউ কোন বিষয় (point) আরও ভালো কোরে প্রকাশ কোরতে চান, বা বইয়ের বক্তব্যের সমর্থনে আরও সুন্দর যুক্তি, প্রমান বা তথ্য যোগ কোরতে চান- এক কথায় এই বইকে আরও সুন্দর, আরও যুক্তিবহ করতে চান, তবে এই বইয়ের কোন্ কোন্ লাইনে কি পরিবর্তন, পরিবর্দ্ধন কোরতে চান তা উল্লেখ কোরে এই বইয়ের প্রকাশকের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে। ভাষান্তর (Translation) কোরলেও তা প্রকাশককে দেখিয়ে অনুমতি নিতে হবে।

এই বইয়ের বক্তব্যের প্রচণ্ড বিরোধিতা হবে- সে সম্বন্ধে আমি নিশ্চিত। তা যদি না হবে তবে বুঝবো আমি সত্য লিখতে পারিনি, শেষ ইসলাম(Islam) তার প্রকৃত আলোকে মানুষের সামনে পেশ কোরতে ব্যর্থ হোয়েছি। এ বিরোধিতা আসবে ইহুদী-খ্রীস্টান (Judio-Christian) 'সভ্যতা(Civilization)র পদ্ধতিতে 'শিক্ষিত' বর্তমান নেতৃত্বের ও তাদের অনুসারীদের (Agent) কাছ থেকে, বর্তমানের বিকৃত দ্বীনের পুরোহিত, যাজকদের কাছ থেকে, ধর্ম যাদের রুজী-রোজগারের পথ, তাদের কাছ থেকে, ইউরোপীয়ান খ্রীস্টানরা মুসলিম(Muslim) জগত অধিকার কোরে মাদ্রাসা স্থাপন কোরে ইসলাম(Islam) শিক্ষার ছদ্মবেশে যে ধ্বংসকারি ফতোয়াবাজী শিক্ষা দিয়েছিলো সেই শিক্ষায় 'শিক্ষিত'দের কাছ থেকে, অন্যায়, অবিচার, অত্যাচার, রক্তপাত নির্মূল কোরে পৃথিবীতে আল্লাহ(Allah)র দ্বীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের জন্য নবী করিম (দঃ) তার উম্মতের হাতে যে তলোয়ার ধোরিয়ে দিয়েছিলেন সেই তলোয়ার ফেলে দিয়ে তসবিহ হাতে নিয়ে যারা খানকায় ঢুকেছেন তাদের কাছ থেকে। এক কথায় সর্বদিক থেকে। আগেই বোলছি- লেখক নই, তাই যা বোলতে চেয়েছি তা গুছিয়ে লিখতে পারিনি। আগের কথা পরে হোয়ে গেছে, পরের কথা আগে। যেখানে যে কথা হবার, সেখানে না হোয়ে অন্যখানে হোয়ে গেছে। এক কথা অনেকবার বলা হোয়েছে যাকে বলে পুনরাবৃত্তি (Repeatation)। একে ঠিক কোরতে চেষ্টা করিনি, কারণ এ অভিযোগ আল্লাহ(Allah)র কোরান সম্বন্ধেও আছে- অর্থাৎ এক কথা আল্লাহ(Allah)ও অনেকবার বোলেছেন। সেই ত্রুটিহীন সোবহানের বই কোরানেও যদি তাই থাকে তবে আমি কোন ছার? এই সব ত্রুটি সত্ত্বেও যাদের সত্য গ্রহণের মন আছে, যারা বুঝতে চাইবেন, তারা ইনশাল্লাহ বুঝতে পারবেন আমি কী বোলতে চেয়েছি। তাদের মধ্যে যাদের আর্থিক সামর্থ আছে, আল্লাহ(Allah) যাদের রেযেক অন্যের চেয়ে বেশী দিয়েছেন তাদের কাছে অনুরোধ, তারা যেন এই বই পুনঃ মুদ্রণ করেন, যত বেশী সংখ্যায় সম্ভব হয়। আজকের 'মুসলিম(Muslim)' জাতি বহু নফল এবাদত করতে রাজী কিন্তু আল্লাহ(Allah)র রাস্তায় দুই পয়সা খরচ করতে রাজী নয়। অথচ আল্লাহ(Allah) বোলেছেন- আমি মোমেনের সম্পদ ও প্রাণ জান্নাতের বদলে কিনে নিয়েছি (কোরান- সূরা আত-তওবা ১১১)। আমরা ঈমানের দাবীদার কিন্তু জানমাল আল্লাহ(Allah)র রাস্তায় কোরবাণী কোরতে রাজী নই। আমার অক্ষম কলম দিয়ে যা এই বইয়ে লিখেছি তা আমার কথা নয়- আল্লাহ(Allah) আর তার রসুল (দঃ) যা বোলেছেন তাই বোলছি এবং কোথায় বোলেছেন তার উদ্ধৃতিও দিয়েছি। মাত্র একটি কি দু'টি বিষয়ে আমি আমার নিজের অভিমত পেশ কোরেছি এবং ঐ অভিমত গ্রহণ কোরতে কাউকে জোর কোরছি না, ঐগুলি সম্বন্ধে কেউ আমার সঙ্গে একমত না হোলে আমার কোন আপত্তি নেই।

৩৫। লা'নত (অভিশাপ)

উৎস: Islam and Dajjal
সর্বশক্তিমান আল্লাহ(Allah) কোরানে বিভিন্ন জাতি, গোষ্ঠী, গোত্র, এমন কি ব্যক্তিকে তার কৃতকর্মের জন্য লা'নত অর্থাৎ অভিশাপ দিয়েছেন। তার অভিশাপ মানেই নির্মম শাস্তি। আল্লাহ(Allah), যার চেয়ে বড় ক্ষমাশীল নেই, যার চেয়ে বড় দয়াশীল নেই, যার কাছে ক্ষমা চাইলে তিনি বার বার ক্ষমার আশ্বাস দিয়েছেন, সেই তিনিই যখন অভিশাপ দেন তখন নিশ্চিতভাবে বলা যায় যে সেই ব্যক্তি বা গোত্র বা গোষ্ঠী বা জাতি ক্ষমার যোগ্যতা ছাড়িয়ে বহুদূর চোলে গেছে, সেই গফুরুর রাহীমেরও ক্ষমার সীমানা ছাড়িয়ে গেছে। কোরানে দেখা যায় তিনি বিভিন্নভাবে, প্রধানতঃ তিন ভাবে লা'নত দিয়েছেন। একঃ তিনি শুধু নিজে দিয়েছেন। দুইঃ অন্যের মুখ দিয়ে দিয়েছেন। তিনঃ তিনি তার মালায়েক অর্থাৎ ফেরেশতা ও মানব জাতি সম্মিলিতভাবে লা'নত দিয়েছেন। উদাহরণঃ শুধু তার একার লা'নত তিনি দিচ্ছেন তাদের, যুদ্ধ কোরতে বোললে যারা ভয়ে মুর্ছিত, মৃতপ্রায় হোয়ে যায় (কোরান সূরা-মোহাম্মদ ২৩, ২৪), কাফেরদের (সূরা-আহাযাব ৬৪), মোনাফেকদের (সূরা আল আহযাব ৬০, ৬১), যালেমদের (অন্যায়কারীদের) (সূরা হুদ ১৮) ইত্যাদি। অন্যের মুখ দিয়ে লা'নত তিনি দিচ্ছেন বনি ইসরাইলের কাফেরদেরঃ একবার দাউদ (আঃ) কে দিয়ে আরেকবার ঈসা (আঃ) কে দিয়ে (সূরা আল মায়েদা ৮১)। আর তিনি, তার মালায়েক ও মানব জাতির সম্মিলিত লা'নত দিচ্ছেন দু'বার। একবার দিচ্ছেন সেই সব কাফেরদের যারা মৃত্যু পর্য্যন্ত আল্লাহ(Allah)র দ্বীনকে অস্বীকার কোরে কাফের অবস্থাই মারা গেলো। তাদের সম্বন্ধে আল্লাহ(Allah) বোলছেন- তারা (জাহান্নামে) চিরদিন থাকবে। তাদের শাস্তি কমানোও হবেন, বিরতিও দেয়া হবেনা (কোরান সূরা আল-বাকারা ১৬১, ১৬২)। আরেকবার দিচ্ছেন তাদের, যারা একবার সত্য গ্রহণ করার পর কুফরে (অবিশ্বাসে) ফিরে গেছে (কোরান সূরা আল-মায়েদা ৮৬, ৮৯)।

আল্লাহ(Allah)র একার দেয়া লা'নত, অন্যের মুখ দিয়ে দেয়া লা'নত আর আল্লাহ(Allah), তার মালায়েক ও মানব জাতির সম্মিলিত লা'নত; এই তিন রকমের লা'নতের মধ্যে সবচেয়ে ভয়ংকর লা'নত হোচ্ছে ঐ সম্মিলিত লা'নত সন্দেহ নেই। অন্যের মুখ দিয়ে তিনি যে দু'বার বনি ইসরাইল অর্থাৎ ইহুদী জাতিকে লা'নত দিলেন তার পরিণাম দেখলেই বোঝা যাবে যে সম্মিলিত লা'নত কত ভয়ংকর হবে। ইহুদী জাতির ওপর প্রথম লা'নত তিনি দিলেন দাউদের (আঃ) মুখ দিয়ে। ফল হলো এই যে, ব্যাবিলোনের রাজা (নবুশ্যাড্ নেযার) ইহুদীদের আক্রমন কোরে পরাজিত করলো। ব্যাবিলোনীয় সৈন্যরা তাদের ঘরে ঘরে প্রবেশ কোরে তাদের হত্যা করলো, বাকি সমস্ত লোকজনকে বন্দী কোরে সমস্ত জাতিটাকে ক্রীতদাসে পরিণত কোরে তাদের স্বদেশ ব্যাবিলোনে নিয়ে গেল, ইহুদীদের ডেভিড মন্দীর (Temple of David) ধ্বংশ কোরে দিলো। এ শাস্তি আল্লাহ(Allah) দিলেন খ্রীস্টপূর্বাব্দ ৫৮৬ সনে। সম্পূর্ণ জাতিটি ব্যাবিলোনে বহু বছর ক্রীতদাসের জীবন যাপনের পর আল্লাহ(Allah)র দয়ার উদ্রেগ হলো। তিনি তাদের আবার সিরিয়ায় ফিরিয়ে এনে তাদের ওপর দয়া কোরলেন। ইহুদীরা আবার ধনে-জনে সমৃদ্ধ হোয়ে উঠলো, তারা তাদের ডেভিড মন্দীর পুনঃনির্মান করলো। তারপর যখন তারা আবার বিপথগামী হলো তখন আল্লাহ(Allah) পাঠালেন তার নবী ঈসাকে (আঃ)। ঈসা (আঃ) এসে বনি ইসরাইলীদের ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি ও সীমালংঘন থেকে বিরত কোরতে চেষ্টা কোরলেন, কিন্তু ব্যর্থ হোলেন। তখন তার মুখ দিয়ে আল্লাহ(Allah) তাদের দ্বিতীয় বার লা'নত দিলেন। এই দ্বিতীয় লা'নতের ফলে ৭০ খ্রীস্টাব্দে রোমান টিটাস ইহুদীদের আক্রমন কোরে তাদের পাইকারীভাবে হত্যা করলো, তাদের মেয়েদের নিয়ে গেলো, ধন-সম্পত্তি সব লুটে নিলো, ইহুদীদের ডেভিড মন্দীর (Temple of David) সহ তাদের রাজধানী যেরুজালেম শহর সম্পূর্ণ ধ্বংস কোরে দিলো এবং তারপর সমস্ত সিরিয়া থেকে সমস্ত জাতিটাকে সমূলে উচ্ছেদ কোরে দিলো। হাজার হাজার বছরের বাসস্থান থেকে উৎখাত হোয়ে ইহুদীরা ইউরোপের বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নিলো। সেই ৭০ খ্রীস্টাব্দ থেকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পর্য্যন্ত অর্থাৎ প্রায় দুই হাজার বছর এই ইহুদী জাতির ইতিহাস কি? তাদের ইতিহাস হোচ্ছে এই যে আল্লাহ(Allah)র লা'নতের ফলে ইউরোপের যে দেশেই তারা আশ্রয় নিয়েছে, বসতি স্থাপন কোরেছে, সেই দেশের সমস্ত মানুষ তাদের অবজ্ঞা কোরছে, ঘৃণা কোরেছে। আমরা শুকর যেমন ঘৃণা করি- তেমনি ঘৃণা কোরেছে। শুধু ঘৃণা কোরেই তারা ক্ষান্ত হয়নি। মাঝে মাঝেই ইউরোপের খ্রীস্টানরা দলবদ্ধ হোয়ে ইহুদীদের বসতি আক্রমন কোরে তাদের পুরুষদের হত্যা কোরে মেয়েদের বেঁধে নিয়ে গেছে, সম্পত্তি লুটপাট কোরে বাড়ি-ঘর আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছে। এই কাজটা ইউরোপীয় খ্রীস্টানরা প্রতিটি ইউরোপীয়ান রাষ্ট্রে এতবার কোরেছে যে ইউরোপীয় ভাষায় একে বোঝাবার জন্য একটি নতুন শব্দেরই সৃষ্টি হোয়েছে। সেটা Pogrom, যার আভিধানিক অর্থ হলো Organised Killing and Plunder of a Community of People, বাংলায় "সুসংগঠিত ভাবে সম্প্রদায় বিশেষকে হত্যা ও লুণ্ঠন।" দু'হাজার বছর ধোরে অভিশপ্ত ইহুদীদের ওপর ঐ Pogrom চালাবার পর শেষ Pogrom আল্লাহ(Allah) করালেন হিটলারকে দিয়ে। তাকে দিয়ে তিনি ইউরোপের ইহুদীদের ওপর চরম অত্যাচার করালেন ও তাদের ছয় মিলিয়ন অর্থাৎ ৬০ লক্ষ ইহুদীদের হত্যা করালেন। এ হিসাবটা অবশ্য ইহুদীদের করা সুতরাং বাড়াবাড়ী হোতে পারে, কিন্তু হিটলারের হাতে যে লক্ষ লক্ষ ইহুদী মারা গেছে তা ঐতিহাসিক সত্য। দাউদের (আঃ) মুখ দিয়ে লা'নত অর্থাৎ অভিশাপ দেয়ার ফল হিসাবে নেবুশ্যাড্নেয়ার কে দিয়ে ডেভিড মন্দীর ধ্বংস কোরে সমস্ত ইহুদী জাতিটাকে বন্দী কোরে ব্যাবিলোনে নিয়ে যেয়ে সেখানে শত শত বছর দাসত্বের জীবন কাটানোর পর যেমন আল্লাহ(Allah) জাতিটার ওপর থেকে লা'নত উঠিয়ে নিয়েছিলেন, তেমনি ঈসার (আঃ) মুখ দিয়ে লা'নত দেবার ফল হিসাবে রোমান টিটাসকে দিয়ে ইহুদীদের পুনঃনির্মিত ডেভিড মন্দীরসহ এবার সম্পূর্ণ যেরুযালেম শহরটাই ধ্বংস কোরে দিয়ে ইহুদী জাতিটাকেই তাদের জন্মভূমি থেকে একেবারে উচ্ছেদ কোরে ইউরোপীয়দের দিয়ে তাদের ওপর দু'হাজার বছর ধোরে অবজ্ঞা, ঘৃণা আর Pogrom কোরিয়ে মনে হয় এখন আল্লাহ(Allah) তাদের ওপর থেকে তার লা'নত উঠিয়ে নিয়েছেন। কারণ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে তাদের ওপর আর Pogrom হোচ্ছেনা এবং তারা বর্তমানে একটি শক্তিশালী ও সম্মানিত জাতি।

এখন মুসলিম(Muslim) বোলে পরিচিত জাতিটির দিকে দৃষ্টি দেয়া যাক। অস্বীকার করার কোন উপায় নেই যে আল্লাহ(Allah) লা'নত দিলে কোন জাতির যে দশা হয়, এই জাতির দশা ঠিক তাই। সিরিয়া থেকে ইহুদীরা যে ভাবে উৎখাত হোয়েছিলো, স্পেন থেকে ঠিক তেমনিভাবে উৎখাত হোয়েছে। সমস্ত ইউরোপে ইহুদী জাতি যেমন ঘৃণিত, লাঞ্ছিত, অত্যাচারিত হোয়েছে, মুসলিম(Muslim) বোলে পরিচিত এই জাতি সমস্ত পৃথিবীময় তেমনি ঘৃণিত, লাঞ্ছিত, অত্যাচারিত, অপমানিত হোচ্ছে। তফাৎ এই যে ইহুদীদের শাস্তি ইউরোপের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিলো আর এই জাতির ওপর শাস্তি সমস্ত পৃথিবীময়। এর কারণ আছে; ইহুদী জাতি একটি ছোট জাতি, এই জাতির মধ্যে আল্লাহ(Allah)র যে নবী প্রেরিত হোয়েছিলেন তার দায়িত্বও ছিলো সীমাবদ্ধ, শুধু ইহুদী জাতির মধ্যে, কাজেই অভিশপ্ত অর্থাৎ মালাউন হবার পর তার শাস্তিও ছিলো ইউরোপের মধ্যে সীমিত। আর মুসলিম(Muslim) বোলে পরিচিত জাতিটি যিনি গঠন করেন সেই বিশ্বনবী (দঃ) প্রেরিত হোয়েছেন সমস্ত পৃথিবীর জন্য, সম্পূর্ণ মানব জাতির জন্য। তাই তার জাতির শাস্তি ও পুরস্কার দু'টোই পৃথিবীময়, কোথাও সীমিত নয়। ইউরোপের যে যে রাষ্ট্রে ইহুদীরা বসতি স্থাপন কোরেছিলো সেই সেই রাষ্ট্রের লোকেরা তাদের ওপর Pogrom কোরেছে। এই মুসলিম(Muslim) জাতি পৃথিবীর যেখানেই আছে সেই দেশের মানুষ দিয়ে অত্যাচারিত, অপমানিত, লাঞ্ছিত হোচ্ছে। খ্রীস্টানদের হাতের কাছে যেখানে মুসলিম(Muslim) আছে সেখানে খ্রীস্টানদের দিয়ে (বসনিয়া-হারজেগোভিনা, সুদান, ফিলিপাইন, ইথিওপিয়া), ইহুদীদের দিয়ে (পশ্চিম এশিয়া প্যালেষ্টাইন), বৌদ্ধদের দিয়ে (চীন, মায়ানমার, থাইল্যাণ্ড, কমপুচিয়া ভিয়েতনাম), হিন্দুদের দিয়ে (সমস্ত ভারত ও কাম্মীর)। অর্থাৎ পাঁচটি প্রধান ধর্মের চারটিকে দিয়েই পৃথিবীর সর্বত্র মুসলিম(Muslim) নামের এই জাতিটাকে পেষা হোচ্ছে। আর সে পেষা কেমন পেষা? তাদের গুলী কোরে, ধারাল অস্ত্র দিয়ে, ট্যাঙ্ক দিয়ে পিষে হত্যা করা হোচ্ছে, তাদের বাড়ি-ঘর জ্বালিয়ে দেয়া, তাদের মেয়েদের ধোরে নিয়ে যেয়ে ধর্ষণ করা হোচ্ছে, ধর্ষনের পর হত্যা করা হোচ্ছে, ইউরোপের ও অন্যান্য স্থানের বেশ্যালয়ে বিক্রি করা হোচ্ছে। বসনিয়ায় খ্রীস্টান সার্বরা যা কোরেছে তার নজীর মানুষের ইতিহাসে নেই। খ্রীস্টান সার্বরা ৭০ হাজার মুসলিম(Muslim) নারীকে ধর্ষণ কোরে গর্ভবতী কোরেছে, তাদের সাত মাস পর্য্যন্ত আটকে রেখেছে যাতে তারা খ্রীস্টানদের ঔরসজাত সন্তানগুলি গর্ভপাত কোরে ফেলে দিতে না পারে। মালাউন ইহুদীদেরও আল্লাহ(Allah) এমন শাস্তি দেন নাই। পৃথিবীর বড় বড় জাতিগুলি দিয়ে শাস্তি দিয়েও খুশী না হোয়ে আল্লাহ(Allah) অপমানের চুড়ান্ত করার জন্য ভারতের আসামের গাছ-পাথর উপাসক একটি পাহাড়ী উপজাতি দিয়ে মুসলিম(Muslim) নামধারী এই জাতিকে গুলি কোরে, তীর দিয়ে, কুপিয়ে হত্যা করাচ্ছেন, বাড়ি-ঘর জ্বালিয়ে দিয়ে উচ্ছেদ করাচ্ছেন। এ যদি আল্লাহ(Allah)র লা'নতের ফল না হয় তবে লা'নত কাকে বলে?

কেন এই লা'নত? যে জাতিকে আল্লাহ(Allah) বোলেছেন তোমরা যদি মো'মেন হও তবে পৃথিবীর প্রভূত্ব, কর্তৃত্ব তোমাদের হাতে দেব এবং সত্যই সেই ছোট্ট জাতির হাতে তাই দিয়েছিলেন। বর্তমান মুসলিম(Muslim) জাতির হাতে পৃথিবীর প্রভূত্ব, তো দূরের কথা, এ জাতি আজ পৃথিবীর অন্য প্রত্যেক জাতি দিয়ে অপমানিত, অত্যাচারিত, লাঞ্ছিত, পরাজিত, এক কথায় নিকৃষ্টতম জাতি। আল্লাহ(Allah)র লা'নতের প্রতিটি ছাপ আজ এই জাতির দেহে চিহ্নিত। অথচ এই জাতি সেই মো'মেন হবার দাবীদার। আমরা মো'মেন অর্থাৎ আল্লাহ(Allah) ও তার রসুলে বিশ্বাসী হোলে আল্লাহ(Allah) মিথ্যা বোলেছেন (নাউজুবিল্লাহ)। কেন এই লা'নত? এর জবাব হোচ্ছে এইঃ আল্লাহ(Allah) বোলেছেন যারা আল্লাহ(Allah) ও রসুলের ওপর ঈমান এনে তারপর কুফরে প্রত্যাবর্তন কোরছে তাদের ওপর আল্লাহ(Allah), আল্লাহ(Allah)র মালায়েকদের ও মানব জাতির সম্মিলিত লা'নত (অভিশাপ) (কোরান-সূরা আলে ইমরান ৮৬-৮৯)। এই বইয়ে আমি দেখিয়েছি যে তওহীদ অর্থ হোচ্ছে ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয়, আইন-কানুন, দণ্ডবিধি, অর্থনীতি ইত্যাদি সর্ব বিষয়ে বিশেষ কোরে সমষ্টিগত জীবনে আল্লাহ(Allah)র সার্বভৌমত্বকে স্বীকার কোরে ও বিশ্বাস কোরে নেয়া এবং আল্লাহ(Allah)র দ্বীনকে সমস্ত পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম, জেহাদ করা। প্রমাণ, আল্লাহ(Allah) বোলছেন- মো'মেন শুধু তারাই যারা আল্লাহ(Allah) ও তার রসুলকে বিশ্বাস করে (অর্থাৎ জীবনের সর্বস্তরে আল্লাহ(Allah)র বিধান ছাড়া আর কাউকে মানে না) তারপর তা থেকে বিচ্যূত হয় না এবং নিজেদের প্রাণ ও সম্পদ দিয়ে (তা প্রতিষ্ঠার জন্য) আল্লাহ(Allah)র রাস্তায় সংগ্রাম, জেহাদ করে (কোরান- সূরা হুজরাত ১৫)। অর্থাৎ মো'মেন হবার জন্য আল্লাহ(Allah) দু'টি শর্ত ও সংজ্ঞা দিচ্ছেন। একটা জীবনের সর্বস্তরে আল্লাহ(Allah)র সাবভৌমত্ব স্বীকার অর্থাৎ তওহীদ এবং দ্বিতীয়টি সেই তওহীদকে সমস্ত পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম। এই দু'টোর যে কোন একটা বাদ গেলেই সে বা তারা আর মো'মেন নয়। সারারাত তাহাজ্জদ পড়লেও নয়, সারা বছর রোযা রাখলেও নয়। মুসলিম(Muslim) হবার দাবীদার এই জাতি বহু শতাব্দী আগেই তওহীদ প্রতিষ্ঠার জেহাদ ছেড়ে দিয়েছে যার ফলে আল্লাহ(Allah) তার প্রতিশ্রুতি মোতাবেক (কোরন- সূরা আত্-তওবা ৩৮, ৩৯) এই জাতিকে খ্রীস্টান জাতিগুলির দাসে পরিণত কোরে দিয়েছেন। এ তওহীদকে (আল্লাহ(Allah)র একত্ব ও সার্বভৌমত্ব) সার্বিক জীবন থেকে প্রত্যাখ্যান কোরে সমষ্টিগত জীবনে খ্রীস্টান, ইহুদীদের সার্বভৌমত্ব গ্রহণ কোরে আল্লাহ(Allah)র সার্বভৌমত্বকে শুধু ব্যক্তি জীবনে সীমাবদ্ধ করায় অর্থাৎ শেরক ও কুফরে ফিরে যাওয়ায় এই জাতিকে লা'নত দিয়েছেন। তাই মালাউন (অভিশপ্ত) ইহুদী জাতির ওপর যে শাস্তি দেওয়া হোয়েছিলো তার চেয়েও বেশী শাস্তি হোচ্ছে এই মুসলিম(Muslim) নামধারী জাতিটির ওপর। কারণ ইহুদী জাতিকে আল্লাহ(Allah) লা'নত দিয়েছিলেন তা দিয়েছিলেন তিনি একা এবং অন্যের মুখ দিয়ে আর আমাদের লা'নত তিনি দিয়েছেন তার অসংখ্য মালায়েক এবং মানব জাতিকে সঙ্গে নিয়ে সম্মিলিতভাবে।

আমি জানি বর্ত্তমানের মুসলিম(Muslim) নামধারী জাতিটাকে যে জাতি হেদায়েতহীন তাকওয়া নিয়ে অতি ব্যস্ত আছে, তাকে আল্লাহ(Allah) তার মালায়েক আর মানব জাতি দ্বারা অভিশপ্ত বোললে সেটা কেমন চটে যাবে। তারা যদি না মানেন তবে আমার অনুরোধ তারা আমাকে বুঝিয়ে দিন যে অভিশপ্ত ইহুদীদের চেয়েও ভয়ংকর শাস্তি আমাদের কেন হোচ্ছে। সে সত্য আল্লাহ(Allah) তার অসীম করুনায় আমাকে ইলহাম ও এল্কার মাধ্যমে দান কোরেছেন তা যদি আমি মানুষের ভয়ে প্রকাশ না করি তবে আমি পূর্ণ (মোকাম্মেল) ঈমান নিয়ে আল্লাহ(Allah)র সামনে দাঁড়াতে পারব না। আল্লাহ(Allah)র লা'নতের নির্মম শাস্তি সত্বেও এই জাতি তওবা কোরে তওহীদে সেরাতুল মুস্তাকীমে, দ্বীনুল কাইয়্যেমায়, জেহাদে ফিরে না এসে নির্বোধের মত নামায, রোযা, হজ, যাকাত ও হাজার রকমের নফল এবাদত ও তাকওয়া কোরে যাচ্ছে আর ভাবছে তাদের জন্য জান্নাতের দরজায় লাল কার্পেট বিছিয়ে রাখা হোয়েছে। লা'নতের অন্যতম শাস্তি বোধশক্তির লোপ, তাই এত সওয়াবের কাজের পরও এত নির্মম শাস্তি কেন তা বুঝে আসেনা। এ ব্যাপারে আমার মনে একটা উদাহরণ ভেসে ওঠে। মনে করুন একটি লোক বহু কষ্টে টাকা-পয়সা খরচ কোরে পৃথিবীর অন্য প্রান্ত থেকে একটি দুস্প্রাপ্য ফুলের গাছ যোগাড় কোরে এনে বাগানে লাগালো ও অতি যত্নের সাথে পরিচর্য্যা কোরতে লাগলো। সে অধির আগ্রহে দিন গুনতে থাকলো- কবে সেই গাছে অপূর্ব সেই ফুলটি ফুটবে। অনেক যত্ন, পরিচর্য্যার পর অনেক দিন পর ফুল গাছে অতি বিচিত্র ফুলটি এলো। অনেক লোক সেই আশ্চর্য ফুল দেখতে এলো। পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে লোকটি দেখলো তার গরু সে ফুলটাকে খেয়ে ফেলেছে। রাগে, দুঃখে পাগল হোয়ে সে গরুটাকে দড়ি দিয়ে বেঁধে লাঠি নিয়ে মারতে লাগলো। মারতে মারতে সে গরুটার মাথা ফাটিয়ে দিলো, পা গুলো ভেংগে ফেললো, গরুর গায়ের চামড়া ফেটে গিয়ে রক্ত ঝরতে লাগলো। কিন্তু গরুটা কি বুঝতে পারবে কেন তাকে অমন শাস্তি দেওয়া হোচ্ছে? পারবে না। বর্তমানের এই মুসলিম(Muslim) জাতিও তার নির্মম শাস্তির কারণ বুঝতে পারছেনা।

৩৪। জান্নাতী ফেরকার দায়িত্ব

উৎস: Islam and Dajjal
রাহমানুর রহীম সর্বশ্রেষ্ট দয়ালু আল্লাহ(Allah) পৃথিবীর মানুষের জন্য, সম্পূর্ণ মানব জাতির জন্য যে জীবন-ব্যবস্থা তার সর্বশেষ রসুল মোহাম্মদের (দঃ) মাধ্যমে দিলেন তা তিনি কোরলেন অতি সহজ, অতি সরল, এ কথা পেছনে অনেক বার বোলে এসেছি। একমাত্র তাকেই জীবন বিধাতা বোলে বিশ্বাস ও গ্রহণ করা এবং মোহাম্মদের (দঃ) মাধ্যমে যে জীবন-ব্যবস্থা, দ্বীন পাঠানো হয়েছে তা সমগ্র জীবনে প্রতিষ্ঠা করা বিশেষ কোরে জাতীয় জীবনে, ব্যস। এইটুকুই তিনি চান, এইটুকুই কোরলে তিনি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন অন্যান্য ব্যক্তিগত গোনাহের মাফ এবং জান্নাতের। একেই তিনি বোলছেন সেরাতুল মুস্তাকীম, এইটুকুই তিনি আদম (আঃ) থেকে মোহাম্মদ (দঃ) পর্যন্ত চেয়ে আসছেন। তাই একে তিনি বোলছেন দ্বীনুল কাইয়্যেমা। যার সরাসরি অর্থ হোচ্ছে যে দ্বীন, জীবন-ব্যবস্থা কায়েম, চিরস্থায়ী, সনাতন। আল্লাহ(Allah)র এই একমাত্র দাবী এই উপমহাদেশেও তার পূর্ববর্তী নবীদের (আঃ) মাধ্যমে এসেছে। কারণ তিনি পৃথিবীর কোন মানব গোষ্ঠীকে শান্তির পথ, ব্যবস্থা দিতে ভুল করেননি(কোরান- সূরা আল-ফাতির ২৪)। কারণ ভুল-ত্রুটি তার জন্য অসম্ভব। এই উপ-মহাদেশের বিভিন্ন ধর্মের মানুষদের তারা কোন ধর্মের অনুসারী প্রশ্ন কোরলে তারা জবাব দেন-সনাতন ধর্ম। এই সনাতন ধর্ম কি তা আল্লাহ(Allah) কোরানে আমাদের জানিয়ে দিচ্ছেন। বোলছেন- অকপট, অকৃত্রিম হৃদয়ে, একাগ্র লক্ষ্যে (হানিফ) তার এবাদত করা, সালাত কায়েম করা ও যাকাত দেয়া হোচ্ছে দ্বীনুল কাইয়্যেমা, চিরন্তন, সনাতন দ্বীন। এবং বোলছেন এর বেশী তো আমি আদেশ করিনি (কোরান-সূরা আল বাইয়েনাহ ৫)। তারপর এই দ্বীনুল কাইয়্যেমা সম্বন্ধে অন্যত্র উল্লেখ কোরতে যেয়ে তিনি একাগ্র লক্ষ্য ও (হানিফ) শব্দটা আবার ব্যবহার কোরেছেন। বোলেছেন, "তোমাদের মুখ একাগ্র লক্ষ্যে দ্বীনের প্রতি নিবন্ধ রাখ, ঐ হোচ্ছে দ্বীনুল কাইয়্যেমা (কোরান সূরা আর-রুম ৩০)।" তারপর আবার বোলছেন, "তোমাদের মুখ একাগ্র লক্ষ্যে দ্বীনুল কাইয়্যেমার প্রতি নিবন্ধ রাখ (কোরান সূরা আর রুম ৪৩)”। দেখা যাচ্ছে দ্বীনুল কাইয়্যেমাকে বোলতে যেয়ে আল্লাহ(Allah) দু'টি শব্দ বারবার ব্যবহার কোরেছেন। একটি মুখ, অন্যটি হানিফ। হানিফ শব্দের অর্থ হলো মনকে অন্য কোন দিকে বিক্ষিপ্ত হোতে না দিয়ে একাগ্র লক্ষ্যে কোন কিছু করা। এগুলিকে একত্র করলে পাওয়া যাচ্ছে- আল্লাহ(Allah) বোলছেন তোমরা মনকে অন্য কোন দিকে বিক্ষিপ্ত হোতে না দিয়ে একাগ্র লক্ষ্যে দ্বীনুল কাইয়্যেমার দিকে তোমাদের মুখ নিবন্ধ রাখ, এবং দ্বীনুল কাইয়্যেমা হোচ্ছে (ক) একমাত্র আল্লাহ(Allah) ও তার দেয়া দ্বীন, (তওহীদ), (খ) সালাত (নামায) কায়েম করা ও (গ) যাকাত দেয়া। কত সংক্ষিপ্ত, কত সহজ কত সরল। আর এই সহজ-সরল পথই হলো সেরাতুল মুস্তাকীম। এই সরল, সহজ সংক্ষিপ্ত দ্বীনের দিকেই আল্লাহ(Allah) আমাদের মুখ ও মন একাগ্রলক্ষ্যে স্থির রাখতে বোলছেন এই জন্য যে, তা হোলে জাতির মধ্যে অতিরিক্ততা আসবে না, মতভেদ হোয়ে ফতোয়াবাজী হোয়ে জাতি ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হোয়ে যাবে না, ধ্বংস হোয়ে যাবে না, ঐক্য অটুট থাকবে।

দ্বীনুল কাইয়্যেমা এবং সেরাতুল মুস্তাকীম মাত্র তিনটি ব্যপারের সমষ্টি-তাওহীদ, সালাত আর যাকাত। এ কথা কোরান এবং হাদীস থেকে দেখিয়ে এলাম। কত সহজ। কিন্তু এই সহজ কথাই বোঝাতে পারলাম কিনা, জানি না। কারণ মানুষের মন যখন সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম, ক্ষুদ্রতম ব্যাপারে, জটিল ব্যাপারে জড়িয়ে যায়, যেমন আমাদের ‘ধর্মীয়' নেতাদের গেছে, তখন সে আর বিরাট সহজ-সরল সত্য দেখতে পায় না। যেমন একটি পিঁপড়া একটা পাহাড় বা পর্বত সমগ্রভাবে দেখতে পায় না। এই জন্যই বোধহয় সর্বজ্ঞানী স্বয়ং, আল্লাহ(Allah) এই দ্বীনুল কাইয়্যেমার মত, সেরাতুল মুস্তাকীমের মত সহজ-সরল ব্যাপার সম্বন্ধে বোলছেন- এই হোচ্ছে দ্বীনুল কাইয়্যেমা, কিন্তু অধিকাংশ মানুষই তা বোঝে না (কোরান- সূরা আর রুম ৩০)। কোরানে দ্বীনুল কাইয়্যেমাকে তিনটি ব্যাপারের সমষ্টি হিসাবে পেলেও হাদীসে পাচ্ছি, আল্লাহ(Allah)র রসুল (দঃ) একে আরও সহজ কোরে একেবারে একটিমাত্র ব্যাপারে সীমাবদ্ধ কোরে ফেলেছেন- সেটা হোচ্ছে তওহীদ। অবশ্য আজকের দুনিয়ায় যে ব্যক্তিগত তওহীদ চালু আছে, অবশ্যই সে তওহীদ নয়। আল্লাহ(Allah) যে তওহীদ আমাদের কাছে চান, সেই তওহীদ, জীবনের সর্বস্তরে বিশেষ কোরে জাতীয় জীবনের তওহীদ। এ ব্যাপারে পেছনে বোলে এসেছি। তবে কি আল্লাহ(Allah)র রসুল (দঃ) কোরানের সীমা অতিক্রম কোরে দ্বীনুল কাইয়্যেমাকে তিনটির বদলে একটা ব্যাপারে সীমাবদ্ধ কোরেছেন? অসম্ভব! কারণ কোন নবীই তা পারেন না। তার ওপর মহানবী (দঃ) ছিলেন জীবন্ত কোরান। এর অর্থ হোচ্ছে রহমানুর রহীম আল্লাহ(Allah)র কাছ থেকে অনুমতি (Authority) পেয়েই তিনি ঐ ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বোলেছেন- নিশ্চয়ই আল্লাহ(Allah)র হক তার বান্দার ওপর এই যে সে শেরক কোরবে না; এবং আল্লাহ(Allah)র ওপর বান্দার এই হক যে- যে শেরক কোরবে না তাকে তিনি কোন শাস্তি দেবেন না [মু'য়াজ (রাঃ) থেকে- বোখারী, মুসলিম(Muslim), মেশকাত]। এই সহজ-সরল পথ সেরাতুল মুস্তাকীম, দ্বীনুল কাইয়্যেমা থেকে দ্বীনকে কোথায় টেনে নিয়ে আসা হোয়েছে। ফলে জাতি আর আজ মুসলিম(Muslim) নেই, অতি মুসলিম(Muslim) হোয়ে গেছে। এই জাতি আজ আর রসুলাল্লাহর (দঃ) সৃষ্ট শুধু মুসলিম(Muslim) হোয়ে খুশী নয় সে অতি মুসলিমে(Muslim) পরিণত হোয়েছে। এই বাড়াবাড়ি, সীমা লংঘণ আল্লাহ(Allah) ও রসুল (দঃ) বহুবার নিষেধ করা সত্ত্বেও তা করা হোয়েছে খুব সওয়াবের কাজ মনে কোরে। এই ধ্বংসকারী প্রবণতা আজকের নয়, স্বয়ং নবী করিমের (দঃ) সময়ও ছিলো। রমযান মাসে স্ত্রীদের চুমু দেওয়া ও সফরে রোযা না রাখার অনুমতি এই জীবন-ব্যবস্থায় আছে বোলেই স্বয়ং বিশ্বনবী (দঃ) তাই কোরতেন। রমযানের রোযা রেখেও আমাদের আম্মাদের উম্মুল মো'মেনিনদের চুমু দিতেন এবং সফরে বের হোলে রোযা রাখতেন না। কিন্তু তা সত্ত্বেও কিছু লোক গজালেন যারা তাকওয়ায় স্বয়ং আল্লাহ(Allah)র রসুলের (দঃ) চেয়েও ওপরে যেতে চাইলেন। তারা রমযান মাসে তাদের স্ত্রীদের চুমু দেয়া থেকে বিরত হলেন এবং সফরে বের হলেও রোযা রাখতে লাগলেন। এই খবর শুনে মহানবী (দঃ) রাগান্বিত হোয়ে মসজিদে যেয়ে মিম্বরে উঠে বোললেন-"তাদের কি অবস্থা হবে যারা আমি নিজে যা করি তা থেকে বিরত হোয়েছে? আল্লাহ(Allah)র কসম! তাদের চেয়ে আমি আল্লাহ(Allah) সম্বন্ধে বেশী জানি, তাদের চেয়ে আমি আল্লাহ(Allah)কে বেশী ভয় করি [হাদীস -আয়েশা (রাঃ) থেকে, বোখারী, মুসলিম(Muslim), মেশকাত]।" বিশ্বনবীর (দঃ) সময়ের ঐ অতি মুসলিম(Muslim)দের সঙ্গে আজকের দুনিয়ার অতি মুসলিম(Muslim)দের তফাৎ এই যে ঐ সময়ের ঐ অতি মুসলিম(Muslim)রা শুধুমাত্র স্ত্রীদের চুমা আর সফরের রোযার ব্যাপারে অতি মুসলিম(Muslim) হবার চেষ্টা কোরেছিলেন, কিন্তু নিজেরা, প্রকৃত তওহীদে বিশ্বাসী অর্থাৎ মোমেন ছিলেন, দুর্দ্ধর্ষ যোদ্ধা ছিলেন এবং বিশ্বনবীর (দঃ) তাড়া খেয়ে নিশ্চয়ই বাড়াবাড়ি ত্যাগ কোরে তওবা কোরে আবার সীমার মধ্যে ফিরে গিয়েছিলেন। অর্থাৎ রোযা রেখে স্ত্রীদের চুমু দিতে শুরু কোরলেন এবং সফরে বের হোলে রোযা ত্যাগ কোরলেন। আর আজকের অতি মুসলিম(Muslim)রা যোদ্ধা তো ননই এবং ঐ দুই ব্যাপার ছাড়াও আরও হাজারো খুঁটিনাটিতে অতি মুসলিম(Muslim), কিন্তু ডুবে আছেন খাঁটি শেরকের মধ্যে এবং তাদের তাড়া দিয়ে সীমার মধ্যে ফিরিয়ে নেবার কেউ নেই। তাদের একথা বুঝিয়ে দেয়ার কেউ নেই যে, যে তওহীদে বিশ্বাস আনলে অর্থাৎ জাতীয় ও ব্যক্তিগত জীবনে একমাত্র আল্লাহ(Allah)র দেয়া জীবন-বিধান, দ্বীনকে প্রতিষ্ঠা করলে ছোটখাট ব্যাপার বাদ দেন, চুরি ও ব্যাভিচারের মত কবীরা গোনাহ কোরেও মানুষ জাহান্নামের আগুন থেকে বেঁচে যাবে, জান্নাতে প্রবেশ কোরবে, সেই তওহীদকে বাদ দিয়ে হাজারো তুচ্ছ অপ্রয়োজনীয় ব্যাপার নিয়ে অতি মুসলিম(Muslim) হোয়ে কোন লাভ হবে না। শুধু অতিরিক্ততার, আল্লাহ(Allah) রসুলের (দঃ) দেয়া সীমা লংঘণের গোনাহ করা হবে। কে এদের বোলে দেবে যে যাদের মধ্যে তওহীদই নেই (কারণ শুধু ব্যক্তিগত তওহীদ আল্লাহ(Allah)র কাছে গ্রহণীয় তওহীদ নয়) যাদের পায়ের তলে মাটিই নেই, তাদের অত কষ্ট কোরে নিজেদের একমাস না খাইয়ে রেখে, গভীর রাত্রে ঘুম নষ্ট কোরে কোন লাভ নেই, মহানবীর (দঃ) হাদীস মোতাবেকই নেই। স্মরণ করুন আল্লাহ(Allah)র রসুলের (দঃ) সেই হাদীসটির কথা আরেকবার। যেটায় তিনি একটি সরল-সোজা লাইন থেকে ডান দিকে কতকগুলি এবং বাম দিকে কতকগুলি লাইন টানলেন এবং বোললেন-শয়তান এই রাস্তাগুলিতে ডাকতে থাকবে। এই বোলে তিনি কোরান থেকে এই আয়াত পড়লেন- নিশ্চয়ই এই হোচ্ছে আমার (আল্লাহ(Allah)র) সহজ-সরল পথ সেরাতুল মুস্তাকীম। সুতরাং এই পথেই চলো, অন্য পথে চলো না, (অন্যপথে) চললে তা তোমাদের তার (আল্লাহ(Allah)র) পথ থেকে (চতুর্দিকে) বিচ্ছিন্ন কোরে দেবে। এইভাবে তিনি (আল্লাহ(Allah)) নির্দেশ দিচ্ছেন, যেন তোমরা সাবধানে পথ চলতে পার [কোরান- সূরা আল-আনাম ১৫৪ এবং হাদীস- আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ (রাঃ) থেকে- আহমদ, নিসায়ী, মেশকাত]। আল্লাহ(Allah) ও তার রসুলের (দঃ) সরাসরি আদেশকে অমান্য কোরে সেরাতুল মুস্তাকীমকে ত্যাগ কোরে এই জাতি আজ অতি মুসলিম(Muslim) হোয়ে শতধা বিচ্ছিন্ন হোয়ে গেছে।

আজ দুনিয়াময় মুসলিম(Muslim) বোলে যে জাতিটি পরিচিত সেটা বহু ভাগে বিভক্ত। এর প্রত্যেক ভাগ অর্থাৎ ফেরকা, মযহাব, বিশ্বাস করে যে সেই ভাগটাই শুধু প্রকৃত ইসলামে(Islam) আছে, বাকি সব মযহাব, ফেরকা পথভ্রষ্ট, ঠিক যেমন অন্যান্য ধর্মের লোকেরা নিশ্চিত যে তাদের ধর্মই সঠিক, অন্য সব ধর্মের মানুষ নরকে যাবে। কিন্তু আসলে অন্যান্য সব ধর্ম যেমন তাদের নবীদের (আঃ) দেখানো পথ থেকে বিচ্যুত হোয়ে পথভ্রষ্ট হোয়ে গেছে, মুসলিম(Muslim) নামধারী এই জাতিও তার নবীর (দঃ) প্রতিষ্ঠিত পথ থেকে তেমনি ভ্রষ্ট হোয়ে গেছে, যতখানি পথভ্রষ্টতা, বিকৃতি আসলে, পূর্বে আল্লাহ(Allah) নতুন নবী পাঠিয়েছেন, এই জাতিতে ততখানি বিকৃতি বহু পূর্বেই এসে গেছে। নতুন নবী আসেননি, কারণ, নবুওয়াত শেষ হোয়ে গেছে এবং শেষ রসুলের (দঃ) প্রতিষ্ঠিত পথে, প্রকৃত ইসলামে(Islam) আবার ফিরে যাওয়ার জন্য অবিকৃত কোরান ও রসুলের হাদীস আছে যা অন্যান্য ধর্মে নেই। শেষ ইসলামে(Islam)র বিভক্তিগুলির মধ্যে দ্বিতীয় বৃহত্তম ভাগ হোচ্ছে শিয়া মযহাব। এই মযহাবের পণ্ডিতরাও কোরান-হাদীসের চুলচেরা বিশ্লেষণে সুন্নী পণ্ডিতদের চেয়ে পেছনে পড়ে নেই এবং তাদের পাণ্ডিত্যের ফলে শিয়া মযহাবও অগুনিত ফেরকায় বিভক্ত হোয়ে গেছে সুন্নীদের মত। ফলে প্রকৃত ইসলামে(Islam)র উদ্দেশ্য থেকে শিয়া-সুন্নী উভয় মযহাবই বহু দূরে। কে বেশী দূরে কে কম দূরে এ পরিমাপ করা আমার উদ্দেশ্যও নয়, আমার সাধ্যও নয়, আমি শুধু এইটুকুই জানি যে মহানবীর (দঃ) কথিত একটিমাত্র ফেরকা বাদে শিয়া-সুন্নীসহ আর সমস্ত ফেরকা, মাযহাব আগুনে নিক্ষিপ্ত হবে, অর্থাৎ মহানবীর (দঃ) ইসলামে(Islam) নেই। সেই একমাত্র ফেরকা কোন্ ফেরকা তা পেছনে দেখিয়ে এসেছি। সুন্নীরা যেমন বিশ্বনবীর (দঃ) প্রকৃত সুন্নাত ত্যাগ কোরে আল্লাহ(Allah)-রসুলের নিষিদ্ধ চুলচেরা বিশ্লেষণ কোরে উম্মাহটাকে টুকরো টুকরো কোরে ভেংগে দিলেন এবং হাত থেকে তলোয়ার ফেলে দিয়ে তসবিহ নিয়ে খানকায়, হুজরায় ঢুকে উম্মাহর বর্হিমুখী (Extrovert) গতিকে অন্তর্মুুখী কোরে একে স্থবির কোরে দিলেন (Introvert), তেমনি শিয়ারাও তাদের মযহাবকে চুলচেরা বিশ্লেষণ কোরে বহু ভাগে ভাগ কোরে দিলেন এবং নবীর (দঃ) প্রকৃত সুন্নাহ অর্থাৎ দ্বীনকে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠার সংগ্রামকে বাদ দিয়ে বহু পূর্বের এক দুর্ভাগ্যজনক ঘটনাকে নিয়ে মাতম করাটাকেই সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্ম-কর্ম হিসাবে গ্রহণ কোরলেন। মাতম করা কোন জীবন্ত জাতির মুখ্য কাজ হোতে পারে না, মৃত জাতির হোতে পারে। উম্মতে মোহাম্মদীর দাবীদার কিন্তু কার্যতঃ শেরক ও কুফরীর মধ্যে নিমজ্জিত এই জাতির এখন উপায় কি? এর একমাত্র আশা আজ তেহাত্তর ফেরকার সেই একমাত্র জান্নাতী ফেরকা। এই ফেরকার লোক কোথায়? তাদের খুঁজে পাওয়া কঠিন, কারণ তারা একত্রে এক জায়গায় নেই, তারা এই বিরাট জাতির মধ্যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছেন এবং সংখ্যায় অতি সামান্য। কিন্তু যেহেতু রসুলুল্লাহ (দঃ) সেই একমাত্র জান্নাতী ফেরকার কথা বোলে গেছেন কাজেই তারা অবশ্যই আছেন। আজ তাদের ওপর বিরাট, বিশাল দায়িত্ব। একশ' ত্রিশ কোটির এই জাতির বৃহত্তর অংশ আল্লাহ(Allah)-রসুল ও ইসলামে(Islam) বিশ্বাসী, শুধু বিশ্বাসী নয়, দৃঢ় বিশ্বাসী। কিন্তু এর প্রকৃত উদ্দেশ্য, সেই উদ্দেশ্য অর্জনের প্রক্রিয়া, শেষ নবীকে (দঃ) কেন পাঠান হোয়েছিলো, আল্লাহ(Allah) মানুষের কাছে কি চান, কতটুকু চান, এসব সম্বন্ধে ভুল ধারণা অর্থাৎ সমগ্র রূপটির, আকীদার বিকৃতির কারণে দৃঢ় বিশ্বাসী হোয়েও শেরক ও কুফরীর মধ্যে ডুবে আছে। সেই যে ফকীহরা বোলে গেছেন যে মোকাম্মল ঈমান থাকা সত্ত্বেও আকীদার ভুলে মানুষ মোশরেক ও কাফের হোতে পারে। কাজেই আল্লাহ(Allah)র কোন রহমত এখন এ জাতির ওপর নেই বোলেই যে জাতিকে আল্লাহ(Allah) মানব জাতির মধ্যে শ্রেষ্ঠ বোলে সম্বোধন কোরেছেন(কোরান- সূরা আলে-ইমরান ১১০) সে জাতি আজ সর্ব দিক দিয়ে সর্ব নিকৃষ্ট। ঐ জান্নাতী ফেরকার ওপর আজ দায়িত্ব হলো এই পথভ্রষ্ট জাতিকে আবার বিশ্বনবীর (দঃ) ইসলামে(Islam) ফিরিয়ে আনার। এই জান্নাতী ফেরকার কাজ হবে কঠিন, অতি কঠিন। মুখোমুখী হোতে হবে ঠিক তেমনি বাধার- যে সব বাধার-প্রতিরোধের সম্মুখীন হোয়েছিলেন প্রত্যেক নবী। প্রতিরোধ আসবে চারিদিক থেকে, আসবে পাশ্চাত্য পদ্ধতিতে শিক্ষায় যাদের মগজ ধোলাই হোয়েছে তাদের কাছ থেকে, আসবে তাদের কাছ থেকে আল্লাহ(Allah)-রসুল বা ইসলামে(Islam)র নাম শুনলে যাদের পা থেকে মাথা পর্যন্ত জ্বলে যায়, আসবে অন্যান্য ধর্মের মানুষের কাছ থেকে, আর সবচেয়ে কঠিন প্রতিরোধ আসবে এই শেষ ইসলামে(Islam)র ধ্বজ্বাধারীদের কাছ থেকে ধর্ম যাদের কাছে জীবিকা, উপার্জনের পথ। মনে রাখতে হবে আল্লাহ(Allah)র রসুলকে(দঃ) সবচেয়ে কঠিন বাধা দিয়েছিলো আরবের তদানিন্তন ধর্মের পুরোধা, কাবার রক্ষণাবেক্ষণকারী কোরায়েশরা, সাধারণ লোকজন নয়, দূর মদীনার মোশরেকরাও নয়। মদীনার মানুষ তাকে সাহায্য কোরেছিলেন, তাঁকে আশ্রয় দিয়েছিলেন। আরও মনে রাখতে হবে ঈসার (আঃ) বিরুদ্ধে কঠিনতম প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলো তারই ধর্মের আলেম, ধার্মিকরা, রাব্বাই-সাদ্দুসাইরা অর্থাৎ ধর্মের ধারক-বাহকরা। প্রকৃত দ্বীনের দিকে বিশ্বনবীর (দঃ) প্রবর্তিত ইসলামে(Islam)র দিকে মানুষকে ডাক দিলে তারা অত প্রাণপনে প্রতিরোধ করবে প্রথমতঃ এই জন্য যে তাদের অহংকারে আঘাত লাগবে। কী! আমরা মাদ্রাসায় পড়াশোনা কোরে এতদিন কোরান-হাদীস ঘেটে ইসলাম(Islam) বুঝি নাই, আর এরা দাবী কোরছে ইসলাম(Islam) বোঝার। দ্বিতীয় কারণ, তাদের কায়েমী স্বার্থের, উপার্জনের পথের সর্বনাশ! মিলাদ পড়িয়ে, মুর্দা দাফন কোরে, ওয়াজ-মাহফিল-এজতেমা কোরে, মুর্দার কুলখানি কোরে- এক কথায় অন্যান্য ধর্মের মত পৌরহিত্য কোরে এবং ভারসাম্যহীন, বিকৃত তাসাওয়াফের পীরি-মুরিদী কোরে যে সহজ উপজীবিকার পথ আছে তা বিপর্যস্থ হোয়ে যাওয়া। প্রধানতঃ এই দুই কারণেই এরা ভবিষ্যতে মাহদীকেও(আঃ) প্রাণপণে প্রতিরোধ কোরবে।

যুক্তি-তর্ক দিয়ে বুঝিয়ে একজন খ্রীস্টান বা হিন্দু বা বৌদ্ধকে ধর্মান্তরিত করা যতখানি প্রায় অসম্ভব বা কঠিন, একজন শিয়াকে সুন্নী বানানো বা একজন সুন্নীকে শিয়া বানানো, বা কাউকে এক ফেরকা থেকে অন্য ফেরকায় বদলানো ততখানি কঠিন, ততখানিই প্রায় অসম্ভব। তা হোলে এই জাতির এই উম্মাহর ঐক্যের উপায় কি? উপায় আছে। জান্নাতী ফেরকাকে মাঠে নামতে হবে। তারপর বাহাত্তর ফেরকাকে বোলতে হবে- ভাই! তোমাদের মধ্যে মাসলা-মাসায়েল নিয়ে যত মতভেদই থাক, তোমরা তো অন্ততঃ এক আল্লাহ(Allah)য়, এক রসুলে আর এক কোরানে বিশ্বাস কর। মেহেরবানী কোরে শুধু এর উপর তোমরা ঐক্যবদ্ধ হও। বাকি যত মতভেদ আছে সেগুলি তোমাদের ব্যক্তিগত জীবনে ওমনি থাক, আপত্তি নেই, ওগুলি নিয়ে মতান্তর সৃষ্টি করোনা। যেখানে আল্লাহ(Allah)র নবী (দঃ) বহুবার বোলেছেন যে আল্লাহ(Allah)কে একমাত্র এলাহ (জাতীয় ও ব্যক্তিগত জীবনে) বোলে গ্রহণ কোরে নিলেই জাহান্নামের আগুন আর স্পর্শ কোরতে পারবে না, জান্নাতে প্রবেশ কোরবে, সেখানে অনাব্যশ্যক খুটিনাটি নিয়ে মতান্তর কোরে ধ্বংস হোয়ে যাওয়া কতখানি বোকামী কতখানি নির্বুদ্ধিতা। যে জাতিকে আল্লাহ(Allah) আদেশ কোরেছেন সমস্ত মতভেদ ত্যাগ কোরে সকলে ইস্পাতের মত কঠিন ঐক্যবদ্ধ হোয়ে আল্লাহ(Allah)র দেয়া রজ্জু অর্থাৎ তার দেয়া জীবন-বিধানকে আঁকড়ে ধোরে রাখতে, কোন বিচ্ছিন্নতাকে প্রশ্রয় না দিতে (কোরান-সূরা আল-ইমরান ১০৩)। সে জাতি তুচ্ছ খুঁটিনাটি মসলা-মাসায়েলের তর্ক নিয়ে শতধা বিচ্ছিন্ন, আল্লাহ(Allah)র পরিষ্কার সরাসরি আদেশ লংঘনকারী। যে মসলা-মাসায়েলের মাকড়শার জালে এই জাতি নিজেকে জড়িয়ে ফেলে স্থবির হোয়ে গেছে, অথর্ব হোয়ে গেছে, সেই মসলা-মাসায়েল থেকে নিজেদের মুক্ত কোরতে বললে এই হতভাগ্য জাতি তা শুনবে না, মানবে না, কারণ আজ মহা নবীর (দঃ) প্রকৃত সুন্নাহ জেহাদের চেয়ে, পৃথিবীতে এই দ্বীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের চেয়ে, দাড়ি, মোচ কতখানি লম্বা হবে তা তাদের কাছে অনেক বেশী দরকারী, অনেক বেশী প্রয়োজনীয়। কাজেই তাদের বোলতে হবে, যার যতটুকু খুশী দাড়ি, মোচ রাখো, যার যে পাশে ইচ্ছা শোও, যার যতটুকু ইচ্ছা টাখনুর ওপর পাজামা পর, কিন্তু ওগুলো নিয়ে কোন মতান্তর সৃষ্টি না কোরে শুধু আল্লাহ(Allah)র ওয়াহদানীয়াতে আর মোহাম্মদের (দঃ) নবুয়তের ওপর একত্র হও, অন্য কোন কথা উত্থাপন কোরো না। আল্লাহ(Allah) ও রসুলের(দঃ) ওপর দৃঢ় বিশ্বাস ঈমান থাকা সত্ত্বেও আকীদার বিকৃতির ফলে কার্যতঃ শেরক ও কুফরের মধ্যে নিমজ্জিত জাতিকে মনে করিয়ে দিতে হবে বা দাড়ি, মোচ, পাজামা, নফল এবাদতের কথা বাদ দিন, একেবারে, খোদ কোরানেরও কোন আয়াতের অর্থ ও উদ্দেশ্য নিয়ে কোন মতভেদ মতান্তর কুফর। বোলেছেন স্বয়ং রসুলুল্লাহ (দঃ) এবং বোলেছেন রাগান্বিত হোয়ে [হাদীস আব্দুল্লাহ বিন ওমর (রাঃ) থেকে-মুসলিম(Muslim), মেশকাত]। রাগান্বিতের কারণ এই মতভেদই হোলো কোন জাতির অনৈক্য ও পরিণামে ধ্বংসের কারণ। শুধু জাতি কেন, যে কোন প্রতিষ্ঠান, সমিতি বা দলকে এমন কি একটা পরিবারকেও ধ্বংস কোরে দেবার জন্য মতভেদ অনৈক্য যথেষ্ট।

মহানবীর(দঃ) সময়ে শিয়া ছিলো না, সুন্নী ছিলো না, কোন মযহাব কোন ফেরকা ছিলো না এ কথা ইতিহাস। তার (দঃ) সময়ে ইসলামে(Islam) যা ছিলো না তেমন কিছু যোগ করা হোচ্ছে বেদা'ত এবং বেদা'তের এই সংজ্ঞা সর্ববাদিসম্মত। তা হোলে সমস্ত মযহাব, সমস্ত ফেরকা বেদা'ত শেরকের সম পর্যায়ের গুনাহ, অমার্জনীয় অপরাধ, যে অপরাধ ক্ষমা না করার জন্য আল্লাহ(Allah) প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কাজেই জান্নাতী ফেরকার অন্যতম কর্তব্য হবে এই জাতিকে বলা যে আকীদার বিকৃতির ফলে তুমি তওহীদেই নেই। গায়রুল্লাহর আইন-কানুনের মধ্যে বাস কোরে তার রিরুদ্ধে প্রতিবাদ, প্রতিরোধ না কোরে শেরকে নিমজ্জিত অবস্থায় আছ, তোমার আবার মযহাব কি? ফেরকা কি? একই সংজ্ঞায় প্রচলিত ভারসাম্যহীন বিকৃত সুফীবাদের তরিকাগুলিও বেদা'ত। কারণ, বিশ্বনবীর (দঃ) সময় কোন তরিকা ছিলো না, এ কথা সর্ববাদিসম্মত ইতিহাস। তার সময়ে যেমন একটি মাত্র জাতি ছিলো, "উম্মতে মোহাম্মদী" তেমনি তরিকাও মাত্র একটিই ছিলো, "তরিকায়ে মোহাম্মদী"। ঐ তরিকা ছিলো বিপ্লবী, সংগ্রামী, জীবন উৎসর্গকারী, বহির্মুখী, বিস্ফোরণমুখী। আর এখন প্রচলিত বিভিন্ন তরিকাগুলি ঠিক বিপরীতমুখী, অন্তর্মুখী। তরিকায়ে মোহাম্মদীর হাতে ছিলো অস্ত্র, কর্মক্ষেত্র ছিলো উন্মুক্ত পৃথিবী। বর্তমানের তরিকাগুলির হাতে তসবিহ, কর্মক্ষেত্র খানকায়, হুজরায় চার দেয়ালের ভেতরে। তরিকায়ে মোহাম্মদী তাদের প্রাণ জেহাদে উৎসর্গ কোরে ঐ তরিকার সর্বশ্রেষ্ঠ পুরস্কার, সর্বশ্রেষ্ঠ সম্মান শাহাদাত ও আল্লাহ(Allah)র ভালবাসা লাভ করার জন্য দেশ ছেড়ে দেশান্তর বছরের পর বছর যুদ্ধ কোরে কাটিয়ে দিতেন। বর্তমানের তরিকা প্রাণ উৎসর্গ দূরে থাক, সামান্যতম সংঘর্ষ, সামান্যতম বিপদের সম্ভাবনা যেখানে আছে, তা অতি সন্তর্পণে এড়িয়ে চলেন এক কথায় ঐ তরিকা আর এই তরিকা ঠিক বিপরীত মুখী। একটি পুর্বমূখী অন্যটা পশ্চিম মুখী; একটা উত্তর মুখী অন্যটা দক্ষিণ মুখী।

সুতরাং জান্নাতী ফেরকার কোন মানুষকে যদি বাহাত্তর ফেরকার কেউ প্রশ্ন করে আপনি শিয়া না সুন্নী, না আহলে সুন্নাত আল জামাত, না আহলে হাদীস, হানাফী না শাফেয়ী, না মালেকী, না হাম্বলী, না অন্য কিছু? তবে তার জবাব হবে- ভাই! আমি ওসবের কোনটাই নই। আমি তো শুধু প্রাণপণে চেষ্টা কোরছি মো'মেন ও উম্মতে মোহাম্মদী হোতে। একটা বিল্ডিং, ইমারতের মধ্যে প্রবেশ কোরলে তবে তো প্রশ্ন আসতে পারে আমি কোন কামরায় আছি? আমরা ইসলামে(Islam)র ইমারতের মধ্যেই নেই, কোন কামরায় থাকি সে প্রশ্ন তো অবান্তর!

জান্নাতী ফেরকার অন্যতম কর্তব্য হবে মুসলিম(Muslim) বোলে পরিচিত এই জনসংখ্যাকে প্রশ্ন করা, যে আল্লাহ(Allah)র রসুলের (দঃ) সঙ্গে সর্বদা থেকে, তার সঙ্গে প্রতিটি সংগ্রামে সঙ্গী হয়ে সরাসরি তার কাছে থেকে যারা ইসলাম(Islam) কি, তা শিখেছিলেন, তারাই ঠিক ইসলাম(Islam) শিখেছিলেন, না আজকের মওলানা, মওলবী, পীর-মশায়েকরা যে ইসলাম(Islam) এই জাতিকে শেখান এই ইসলাম(Islam) ঠিক? আল্লাহ(Allah)র রসুলের (দঃ) শেখানো ইসলামে(Islam)র বিপরীতমুখী বর্তমানের বিকৃত ইসলামে(Islam)র ধারক-বাহকরাও অস্বীকার করতে পারবে না যে এই দ্বীনে সর্বশ্রেষ্ঠ পুরস্কার ও সর্বশ্রেষ্ঠ সম্মান রাখা আছে শহীদদের জন্য। আল্লাহ(Allah)র দেয়া সহজ-সরল পথ, সেরাতুল মুস্তাকীমকে দ্বীনুল কাইয়্যেমাকে যারা এক কঠিন দুর্বোধ্য দ্বীনে পরিণত কোরে বাহাত্তর ফেরকায় বিভক্ত কোরে এর শক্তি নিঃশেষ কোরে দিয়েছেন, আর যারা বিশ্বনবী (দঃ) যে উম্মাহর হাতে তলোয়ার ধোরিয়ে দিয়ে তাকে ঘর থেকে বের কোরে পৃথিবীতে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন, সেই উম্মাহর হাত থেকে তলোয়ার ছিনিয়ে নিয়ে, তার হাতে তসবিহ ধোরিয়ে দিয়ে তাকে পেছনে টেনে খানকায়, হুজরায় বসিয়ে দিয়ে তার গতি রুদ্ধ কোরে স্থবির, অনঢ় কোরে দিয়েছেন, তাদের কাজের সম্মিলিত ফল এই হোয়েছে যে এই উম্মাহর চরিত্রের যে প্রধান বৈশিষ্ট্য, অপরাজেয়, দুর্দ্ধর্ষ যোদ্ধা তা লুপ্ত হোয়ে সর্বপ্রধান বৈশিষ্ট্য হোয়েছে পলায়নপর কাপুরুষতা। প্রতি অন্যায়, প্রতি অবিচারের বিরুদ্ধে যে যুদ্ধংদেহী মনোভাব এই উম্মাহর চরিত্রে মহানবী (দঃ) সৃষ্টি কোরেছিলেন তা পর্যবসিত হয়েছে সমস্ত অন্যায়, সমস্ত অবিচার থেকে অতি সযত্নে এড়িয়ে গা বাঁচিয়ে চলায়, অন্যায়কে গ্রহণ করায়, ঘৃণ্য কাপুরুষতায়। জান্নাতী ফেরকার প্রধান কর্তব্য হবে এই উম্মাহর হারিয়ে যাওয়া সেই জেহাদী যোদ্ধা চরিত্রকে আবার জাতির জীবনে ফিরিয়ে আনা। এটা করতে গেলে জান্নাতী ফেরকাকে একটি জিনিষ ভালো কোরে বুঝে নিতে হবে। শুধু বুঝে নিতে নয়, হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি কোরতে হবে। উপলব্ধি কোরতে হবে এই দ্বীনে জেহাদ (সংগ্রাম) ও কিতালের (সশস্ত্র যুদ্ধ) গুরুত্ব কতখানি। যে কোন সংগঠনের (হোক সেটা জাতি, গোষ্ঠী, পরিবার, সমিতি, যাই হোক) শ্রেষ্ঠ পুরস্কার, শ্রেষ্ঠ সম্মান কার জন্য নির্দিষ্ট করা হয় তা থেকে অবশ্যই সেই সংগঠনের প্রধান উদ্দেশ্য পরিষ্কার বোঝা যায়- তাই নয় কি? শেষ ইসলামে(Islam), উম্মতে মোহাম্মদীতে সর্বশ্রেষ্ঠ পুরস্কার, সর্বশ্রেষ্ঠ সম্মান রাখা হোয়েছে শহীদদের জন্য, এ ব্যাপারে কারো দ্বিমত নেই। শহীদ কারা? কোন সন্দেহ নেই যে পৃথিবীতে চালু বিভিন্ন জীবন-ব্যবস্থা (দ্বীন) গুলিকে বিলুপ্ত কোরে দিয়ে এই শেষ ইসলাম(Islam)কে প্রতিষ্ঠা কোরে ইবলিসের চ্যালেঞ্জে আল্লাহ(Allah) ও রসুলকে (দঃ) জয়ী কোরে মানব জাতির মধ্যে থেকে অন্যায়, অবিচার, অশান্তি (ফাসাদ), যুদ্ধ ও রক্তপাত (সাফাকু দ্দিমা) বন্ধ কোরে ন্যায়, সুবিচার ও শান্তি (ইসলাম(Islam)) প্রতিষ্ঠা করার জন্য সশস্ত্র যুদ্ধে প্রাণ বিসর্জনকারী যোদ্ধারা হলেন শহীদ। অর্থাৎ এক কথায় এই দ্বীনের সর্বপ্রধান চরিত্র হোচ্ছে- সংঘাতমুখী, সংঘর্ষমুখী, অন্যায় ও অবিচারের সাথে সংঘাত, সংঘর্ষ। যে দ্বীনে, যে সংগঠনে এই সংঘাত এই সংঘর্ষ নেই, শুধু নেই নয়, সর্বপ্রধান লক্ষ্য নয়; সেই দ্বীন বিশ্বনবী মোহাম্মদের (দঃ) দ্বীন নয়, সে দ্বীনের- সে সংগঠনের অনুসারীরা উম্মতে মোহাম্মদীও নয়। তারা সারা রাত নামায পড়লেও নয়, সারা বৎসর রোযা রাখলেও নয়। কারণ শেষ ইসলামে(Islam)র সর্বপ্রধান চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যই তাদের মধ্যে নেই। আল্লাহ(Allah)র রসুলের (দঃ) বাণী মোতাবেক এদের রোযা উপবাস, তাহাজ্জুদ ঘুম নষ্ট করা।

পেছনে বোলে এসেছি আল্লাহ(Allah) তার সর্বশ্রেষ্ঠ পুরস্কার ও সম্মান রেখে দিয়েছেন এই বহির্মুখী, সংঘাতমুখী, সংঘর্ষমুখী যোদ্ধাদের জন্য। তারা যুদ্ধে প্রাণ বিসর্জন কোরে মরে গেলেও তাদের সম্মানে আমাদের এ কথা বলার অধিকার দেয়া হয়নি যে তারা মরে গেছেন। আমাদের বোলতে হবে তারা জীবিত, আমাদের মতই জীবিত। এই সম্মান এ উম্মাহর আর কাউকেও দেয়া হয়নি। কোন আলেম, ফকিহ, মুফাসসিরকে- কোন ফকির, দরবেশকে দেয়া হয়নি। শুধু তাই নয়, মানব জাতির মধ্যে যারা সর্বশ্রেষ্ঠ, সেই নবী রসুলদের চেয়েও কতকগুলি ব্যাপারে আল্লাহ(Allah) শহীদদের বেশী বৈশিষ্ট্য দিয়েছেন। বিশ্বনবী (দঃ) বোলেছেন- আল্লাহ(Allah) শহীদগণকে পাঁচটি নেয়ামত দান কোরেছেন, যা নবীদেরও দেননি। (১) সকল নবীর এবং আমারও রূহ কবয কোরবেন মালেক-উল-মওত। কিন্তু শহীদদের রূহ কবয কোরবেন স্বয়ং আল্লাহ(Allah)তায়ালা। (২) মওতের পর সকল নবীগণকে এবং আমাকেও গোসল দেয়া হবে। কিন্তু শহীদদের গোসল দেয়া হবে না। (৩) সকল নবীগণকে এবং আমাকেও কাফন দেয়া হবে, কিন্তু শহীদদের কাফন দেয়া হবে না। (৪) সকল নবীগণকে এবং আমাকেও মৃত বলা হবে, কিন্তু শহীদদের মৃত বলা হবে না, তারা জীবিত। (৫) নবীরা যার যার উম্মতের লোকজনের জন্য শাফায়াত কোরতে পারবেন এবং আমিও (আমার উম্মতের জন্য শাফায়াত কোরতে পারবো) কিন্তু শহীদরা কিয়ামতের দিনে সমস্ত উম্মতের লোকজনের জন্য শাফায়াত কোরতে পারবেন (মৃত্যুর আগে ও পরে-মওলানা আবদুল মতীন-শর্ষিনা আলীয়া লাইব্রেরী পৃ ৯১)।

এ কথা কি আরও পরিষ্কার কোরে বলার দরকার আছে যে, এই দ্বীনে যদি যোদ্ধা অর্থাৎ সংঘর্ষকারী, সংঘাতকারীদের জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ পুরস্কার ও সম্মান আল্লাহ(Allah) রেখে থাকেন এবং পাঁচটি বিষয়ে সে সম্মান নবীদেরও ছাড়িয়ে যায়, তবে এই দ্বীনের প্রতিটি মানুষের চরিত্র কী হোতে হবে? নিঃসন্দেহে বলা যায় যে সে চরিত্র হোতে হবে অপরাজেয় দুর্দ্ধর্ষ যোদ্ধার চরিত্র, সংঘাতমুখী চরিত্র। এই জাতির ইতিহাসে আমরা ঠিক তাই পাই। রসুলুল্লাহর (দঃ) সময়েও তাই, তার ওফাতের পরও ৬০/৭০ বছর পর্য্যন্ত তাই পাই। আর কী প্রচণ্ড সে সংঘাত, কী দুর্বার সে সংঘর্ষের গতি যে, মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে দু'টি বিশ্ব-শক্তি সে গতির সামনে চুরমার হোয়ে গেলো, অর্দ্ধেক পৃথিবী নতজানু হোয়ে গেলো। প্রাণ উৎসর্গকারী যোদ্ধাদের জন্য ঐ সর্বশ্রেষ্ঠ পুরস্কার ও সম্মান আল্লাহ(Allah)তায়ালা রেখেছেন এই জন্যই যেন এই উম্মাহর প্রতিটি মানুষ যেন শেরক ও কুফরের বিরুদ্ধে-অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে ভয়ঙ্কর যোদ্ধায় পরিণত হয়। কারণ, মানুষ নামের এই জীবের যিনি স্রষ্টা তিনি ভালো কোরেই জানেন যে শুধু উপদেশ বিতরণ কোরলেই তারা অতি শান্ত, ন্যায়পরায়ন, সুবিচারক জীবে পরিণত হবে না। সংগ্রাম, সশস্ত্র সংগ্রাম কোরে বিদ্রোহী মানুষকে আল্লাহ(Allah)র আইনের অধীনে আনতে হবে, তারপর আল্লাহ(Allah)র দেয়া দণ্ডবিধি মোতাবেক শাস্তি ও পুরস্কার দিয়ে মানুষকে নিয়ন্ত্রণ কোরতে হবে। তা না হোলে ইবলিস আল্লাহ(Allah)কে যে চ্যালঞ্জ দিয়েছে তাতে ইবলিসই জয়ী থাকবে। এই জাতিকে, এই উম্মাহকে সৃষ্টিই করা হোয়েছে ঐ উদ্দেশ্যে, কাজেই ঐ সংগ্রামমুখী, সংঘর্ষমুখী চরিত্রই যদি এর না থাকে তবে এর অস্তিত্বই অর্থহীন। এর নামায, রোযা ইত্যাদি সর্বরকম এবাদত তো বটেই, এমন কি যে দু'টি এবাদত প্রকৃত, খালেস, মোকাম্মল ঈমান ছাড়া সম্ভব নয়, রোযা ও নিয়মিত তাহাজ্জুদ, তাও না খেয়ে থাকা ও ঘুম নষ্ট করার পর্য্যায়ে পর্যবসিত হোয়ে যাবে।

রাসুলাল্লাহ (দঃ) বর্ণিত জান্নাতী ফেরকার কর্তব্য হবে এই জাতিকে বুঝিয়ে দেয়া যে, বাহ্যিক দৃষ্টিতে যা দেখা যায় তা প্রয়োজনীয় নয়, আসল বিষয় হোচ্ছে চরিত্র এবং আকীদা। একজন পবিত্র চরিত্রের উচ্চ স্তরের মানুষ আর একজন জঘণ্য চরিত্রের খুনী অপরাধীর বাইরের দৃশ্য প্রায় একই রকম। দু'জনেরই হাত, পা, মাথা, মুখ সবই আছে। এমন কি ঐ দুশ্চরিত্র খুনীর বাহ্যিক দৃশ্য, চেহারা ঐ সৎচরিত্র মানুষের চেয়ে সুন্দরও হোতে পারে। শুধু ভেতরের চরিত্রের জন্যই একজন জান্নাতী, অন্যজন জাহান্নামী, এমন কি পৃথিবীর বিচারেও একজন সম্মানিত, অন্যজন জেল ফাঁসির উপযুক্ত। বর্তমানে আমরা ইসলাম(Islam) মনে কোরে যে দ্বীনটাকে আঁকড়ে আছি এটার বাইরের চেহারা মোটামুটি আল্লাহ(Allah)র রসুলের মাধ্যমে প্রেরিত দ্বীনের মত। বাইরে থেকে যেগুলি দেখা যায় যেমন- যেকের আসকার, সালাত (নামায), রোযা, হজ্জ, যাকাত, দাড়ি, টুপি, কাপড় চোপড় ইত্যাদি নানাবিধ কার্যকলাপ। কিন্তু ভেতরের প্রকৃত চরিত্র নবীর (দঃ) ইসলামে(Islam)র চরিত্রের একেবারে সরাসরি বিপরীত। সেটা সিংহের চরিত্র, এটা শিয়ালের চরিত্র, সেটা মৃত্যুভয়হীন শাহাদাত পাগল দুর্দ্ধর্ষ যোদ্ধা, এটা মৃত্যুভয়ে ভীত খরগোশ। চরিত্র বিপরীত হওয়ার দরুন বাইরের ঐ দৃশ্যতঃ সাদৃশ্যের কোন দাম নেই। উম্মতে মোহাম্মদীর ভেতরের চরিত্র বর্হিমুখী, বিস্ফোরণমুখী ও সংঘাতমুখী হওয়া যে কতখানি প্রয়োজনীয়, কতখানি গুরুত্বপূর্ণ- যা বোঝাতে অগুনতি হাদীসের মধ্য থেকে মাত্র দু'টি পেশ কোরছি। একবার মহানবী (দঃ) বোললেন- আমার ওপর যদি নবুয়তের দায়িত্ব না থাকতো তবে আমি জেহাদের ময়দানে শহীদ হোয়ে যেতাম। অন্য সময় বোললেন- যার হাতে আমার জীবন (আল্লাহ(Allah)) তার শপথ। আমি কেমন আকুল কামনা করি যে, আমি যেন শহীদ হই, তারপর আমাকে জীবিত করা হয়, আমি আবার শহীদ হই, আমাকে আবার জীবিত করা হয়, আবার শহীদ হই, আবার জীবিত করা হয় এবং আমি আবার শহীদ হই [হাদীস- বোখারী, মুসলিম(Muslim), মেশকাত]। প্রশ্ন হোচ্ছে-সমস্ত নবীদের নেতা, আল্লাহ(Allah)র শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি, সমস্ত মানব জাতির মধ্যে যে একটি মাত্র মানুষ যিনি মাকামে-মাহমুদায় আসন পাবেন, এক কথায় আল্লাহ(Allah)র পরই যার স্থান তিনি কী পেলেন যুদ্ধ ক্ষেত্রে, সংঘর্ষে প্রাণ বিসর্জন দেবার মধ্যে যে একবার নয়, দুবার নয়, চার চার বার তিনি আকুল কামনা কোরছেন? কারণ, নবী হোয়ে তিনি জানেন যে ইবলিসের বিরুদ্ধে আল্লাহ(Allah)র পক্ষ হোয়ে আল্লাহ(Allah)কে জয়ী করার যুদ্ধে যে বা যারা চরম ত্যাগ কোরবে, আল্লাহ(Allah) তাদের ওপর কত খুশী, তিনি তাদের কতখানি ভালবাসেন। তাই বিশ্বনবী (দঃ), বিশ্বনবী হোয়েও, সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হোয়েও খুশী নন, তিনি (দঃ) চার চার বার যুদ্ধক্ষেত্রে প্রাণ বিসর্জন দেবার জন্য আকুল কামনা কোরছেন। কিন্তু পারছেন না, কারণ তার ওপর নবুয়তের বিশাল, বিরাট দায়িত্ব দেয়া আছে যে জাতি সশস্ত্র সংগ্রাম কোরে আল্লাহ(Allah)কে ইবলিসের বিরুদ্ধে জয়ী কোরে পৃথিবীতে শান্তি ও সুবিচার প্রতিষ্ঠা কোরবে সেই জাতি সৃষ্টি করার বিশাল দায়িত্ব। সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হোয়েও যে জেহাদে প্রাণ বিসর্জন করার জন্য আল্লাহ(Allah)র রসুল (দঃ) আকুল কামনা কোরছেন, সেই জেহাদকে জীবন থেকে সম্পূর্ণ বিসর্জন দিয়ে সেই নবীর (দঃ) উম্মতের দাবীদাররা মহা উৎসাহে নানা ছোটখাট অপ্রয়োজনীয় ব্যাপার আকড়ে ধোরে ‌‌‌‌‌‘ধর্ম-কর্ম' কোরছেন। যে মহানবী (দঃ) বোলছেন তওহীদে প্রকৃত বিশ্বাসীকে ব্যাভিচার ও চুরির মত গুনাহে কবীরাও জান্নাত থেকে ফেরাতে পারবে না, জাহান্নামের আগুন তাকে স্পর্শ কোরতে পারবে না, বোলেছেন তওহীদ জান্নাতের দরজার চাবি, সেই মহানবীর (দঃ) উম্মতের দাবীদাররা তাদের জাতীয় জীবন থেকে আল্লাহ(Allah)র দেয়া আইন-কানুন, দণ্ডবিধি প্রভৃতি প্রত্যাখ্যান, বাতিল কোরে সেখানে খ্রীস্টান-ইহুদীদের আইন-কানুন, দণ্ডবিধি গ্রহণ ও প্রয়োগ কোরে; অর্থাৎ দুই এলাহ, দুই উপাস্যকে গ্রহণ কোরে মোশরেক হোয়েও নিখুঁতভাবে নামায, রোযা, হজ্জ ও নানা রকমের নফল এবাদত কোরে অহংকারে স্ফীত হোয়ে ভাবছেন জান্নাতের দরজায় তাদের জন্য লাল কার্পেট বিছানো আছে। এখনও যদি উদ্দেশ্য ও উদ্দেশ্য অর্জনের প্রক্রিয়ার তফাৎ তারা না বোঝেন, উদ্দেশ্য বিসর্জন দিয়ে প্রক্রিয়াকেই উদ্দেশ্য মনে কোরে তাই নিয়ে মহা ব্যস্ত হোয়ে থাকেন, মহা প্রয়োজনীয় ও সামান্য প্রয়োজনীয়র তফাৎ (Priority) না বুঝেন তবে অপেক্ষা করুন বর্তমানে এই জাতির দুর্দশার চেয়েও আরও ঘৃণ্য দুর্দশার, আরও চরম অপমানের আরও ভয়াবহ শাস্তির। এই দুনিয়াতেই, এবং তারপর ঐ দুনিয়ায় ভয়ঙ্কর আযাবের। এদের বর্তমান নামায রোযা হজ্জ যাকাত ও চুলচেরা নিখুঁত নফল এবাদত যেমন পৃথিবীর নিকৃষ্ট জাতির অবস্থান থেকে ওপরে ওঠাতে পারেনি, তেমনি ঐ দুনিয়াতেও আল্লাহ(Allah)র কঠিন আযাব থেকে বাঁচাতে পারবেন না।

জান্নাতী ফেরকার অন্যতম কর্তব্য হবে এই জাতির ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন বাহাত্তুর ফেরকাকে ডেকে বলা যে- আপনারা যত ফেরকা মযহাবেই বিভক্ত হোয়ে থাকুন, আপনারা এক আল্লাহ(Allah)র, এক নবীতে এবং এক কোরানে বিশ্বাসী তো? তাহলে জাতির এই দুঃসময়ে, যখন ঐক্য এতো প্রয়োজনীয়, এখন শুধু এর ওপর সবাই একত্র হোয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ান। মযহাবের ফেরকার যে অনৈক্য আছে তা যদি বিলুপ্ত কোরতে না পারেন, তবে ঐক্যের খাতিরে তা ব্যক্তিগত পর্য্যায়ে রেখে দিন, বাইরে আনবেন না। শিয়া শিয়াই থাকুন, ব্যক্তিগত, পারিবারিক এমন কি সামাজিক পর্য্যায়ে আপনারা আপনাদের মযহাব ফেরকা মেনে চলুন যত ইচ্ছা মাতম করুন, কিন্তু জাতীয়ভাবে সমস্ত মুসলীম জাতির সঙ্গে আল্লাহ(Allah)র একত্বের, তওহীদের এবং মোহাম্মদের (দঃ) খতমে নবুয়াতের ব্যাপারে এক হোয়ে সবার সঙ্গে একই মঞ্চে এসে দাঁড়ান। সুন্নী সুন্নীই থাকুন ব্যক্তিগত, পারিবারিক সামাজিক ব্যাপারে, কিন্তু জাতীয়ভাবে শিয়ার পাশে এসে দাঁড়ান। এমনি ভাবে হানাফী, শাফেয়ী, হামবেলি, মালেকী, ইত্যাদি যত রকমের দুর্ভাগ্যজনক ধ্বংসকারী বিভক্তি আছে সব ব্যাক্তিগত ও পারিবারিক পর্যায়ে রেখে, জাতীয় পর্যায়ে এক আল্লাহ(Allah)র এক নবীতে বিশ্বাসী হিসাবে, এক জাতি হিসাবে এক মঞ্চে এসে দাঁড়ান ও আল্লাহ(Allah)র রাস্তায় সংগ্রাম জেহাদ আরম্ভ করুন। এক আল্লাহ(Allah)য়, এক রসুলে এক কোরানে বিশ্বাসের দাবীদার এই জাতি যদি এ ডাকে সাড়া না দেয়, তবে জান্নাতী ফেরকার কিছু করার নেই। তারা আল্লাহ(Allah)র আর তার রসুলের (দঃ) কাছে সাফ থাকবেন। তবে ডাকের মত ডাক দিতে হবে। যেমন কোরে নবী রসুলরা (আঃ) চিরকাল মানুষকে ডাক দিয়ে এসেছেন। তাদের প্রচণ্ড বিরোধিতা করা হোয়েছে, অপমান করা হোয়েছে, নিপীড়ন করা হোয়েছে, এমন কি হত্যা করা হোয়েছে, কিন্তু তাদের ডাক বন্ধ করা যায় নি। শত অত্যাচার সহস্র বিরোধিতা তাদের নিবৃত্ত কোরতে পারেনি। তেমনি ডাক দিতে হবে। জান্নাতী ফেরকার নিরাশ হবার কারণ নেই। এই ফেরকা জান্নাতী কেন? রসুলাল্লাহর (দঃ) প্রকৃত সুন্নাহ পালনকারী বোলেই তো? তাহোলে তিনি কত অত্যাচার কত বিরোধিতা কত অপমান ও নিগ্রহ সহ্য কোরেছেন সে সুন্নাহ সে উদাহরণ তো তাদের সামনেই আছে। তবে ভয় কিসের? জান্নাতী ফেরকা তো আল্লাহ(Allah) ছাড়া আর কাউকে ভয় করে না।

জান্নাতী ফেরকাকে সর্বক্ষণ মনে রাখতে হবে তারা জান্নাতী কেন, কেমন কোরে। এজন্য তাদের মনে কোরিয়ে দিতে চাই বিশ্বনবীর (দঃ) সেই হাদীসটা যেটাতে তিনি ব্যাখ্যা এবং নির্দিষ্ট কোরে দিয়েছেন তেহাত্তুর ফেরকার মধ্যে জান্নাতী ফেরকা কোনটা। বোলেছেন শুধু সেই ফেরকা যে ফেরকা আমি ও আমার আসহাব যার ওপর আছি তার ওপর আছে ও থাকবে। বাকি বাহাত্তুর ফেরকা না'রি, অর্থাৎ আগুনে নিক্ষিপ্ত হবে, জাহান্নামী। এ কথার অন্যতম অর্থ হোচ্ছে উম্মতে মোহম্মদীর আদর্শ শুধুমাত্র বিশ্বনবী মোহাম্মদ (দঃ) এবং তার সঠিক অনুসারী সাহাবীরা (রাঃ) আর কেউ নয়। বিশ্বনবী (দঃ) ও তার আসহাব কিসের ওপর ছিলেন তা পেছনে দেখিয়ে এসেছি, যদিও দেখাবার দরকার করেনা। কারণ এটা অবিসংবাদিত ইতিহাস যে তাদের প্রত্যেকের জীবন পৃথিবীতে দ্বীন-ই-ইসলাম(Islam)কে প্রতিষ্ঠার জন্য অস্ত্র হাতে সংগ্রামে, যুদ্ধে, অন্যায়, অবিচারের সঙ্গে সংঘাতে ব্যয় হোয়েছে। একথাও ইতিহাস যে মহানবীর (দঃ) সাক্ষাৎ সাহাবাগণের মধ্যে অতি নগন্য সংখ্যক মানুষ ছাড়া প্রায় সবার কবর তাদের স্বদেশ আরবের বাইরে হোয়েছে। অর্থাৎ তারা আল্লাহ(Allah)র দ্বীন পৃথিবীর বুকে প্রতিষ্ঠা কোরে সমস্ত অবিচার, অন্যায় অত্যাচার বন্ধ কোরে পৃথিবীময় শান্তি, ইসলাম(Islam), স্থাপন করার সংগ্রামে ইসলামে(Islam)র সন্ন্যাস গ্রহণ কোরে সেই যে দেশ থেকে বের হোয়েছিলেন, আর ঘরে ফেরেন নি। ঐটি হোচ্ছে সেই ইসলাম(Islam) যে ইসলাম(Islam) বিশ্বনবী মোহাম্মদ (দঃ) তার আসহাবদের (রাঃ) শিখিয়েছিলেন এবং বোলেছেন ঐ ইসলামে(Islam)র ওপর তিনি (দঃ) ও তার আসহাব আছেন। যারা ঐ ইসলামে(Islam)র ওপর আছেন, শুধু তারা হোচ্ছেন এবং হবেন সেই জান্নাতী ফেরকা। আজ যে ইসলাম(Islam) মানুষকে শিক্ষা দেয়া হয় সেটা ঐ ইসলামে(Islam)র ঠিক বিপরীতমুখী "ইসলাম(Islam)"। মহানবী (দঃ) ও তার আসহাবের (রাঃ) ইসলাম(Islam) ছিলো গয়রুল্লাহর সৃষ্ট সমস্ত জীবন ব্যবস্থা পর্যুদস্ত, ধ্বংস কোরে পৃথিবীময় আল্লাহ(Allah)র সৃষ্ট জীবন ব্যবস্থা, দ্বীন প্রতিষ্ঠা করা, সেখানে গয়রুল্লাহর সঙ্গে সামান্যতম আপোষের স্থান ছিলোনা। আর আজ 'ধর্মীয়' নেতারা যে ইসলাম(Islam) শিক্ষা দেন সেই ইসলাম(Islam) গয়রুল্লাহর সমস্ত ব্যবস্থাকে সর্বান্তঃকরণে স্বীকার কোরে নেয়, সমস্ত অন্যায়ের কাছে মাথা নত কোরে দেয়, সমস্ত অত্যাচার থেকে কাপুরুষের মত পলায়ন কোর গর্তে ঢুকে প্রাণ বাঁচায়। মহানবীর (দঃ) ও তার আসহাবের (রাঃ) ইসলামে(Islam)র সঙ্গে এই ইসলামে(Islam)র মিল শুধু বাহ্যিক দৃশ্যে, নামায, রোযা, হজ, যাকাত ইত্যাদিতে, একটা শক্তিশালী রাইফেলের সাথে যাত্রাদলের কাঠের বন্দুকের যতখানি মিল ততখানি, তার বেশী নয়। মানব জাতির শ্রেষ্ঠ বিপ্লবী বিশ্বনবী মোহাম্মদকে (দঃ) কাঠের বন্দুক তৈরী করার জন্য আল্লাহ(Allah) পৃথিবীতে পাঠান নি।

জানিনা, বোঝাতে পেরেছি কিনা যে ইসলামে(Islam)র প্রকৃত আকীদা (Concept) কি। যে আকীদা সঠিক না হোলে আল্লাহ(Allah), রসুল, কোরানে দৃঢ় ও মোকাম্মল ঈমান থাকা সত্ত্বেও মানুষ মোশরেক ও কাফের হোয়ে যেতে পারে। যেতে পারে নয়, বর্তমানের এই 'মুসলিম(Muslim)' জাতি তাই গেছে। যদি আংশিকভাবেও পেরে থাকি তবে অন্ততঃ কিছু লোকের কাছে পরিষ্কার হোয়েছে যে প্রকৃত ইসলাম(Islam), যে ইসলাম(Islam) মহানবী মোহাম্মদ (দঃ) পৃথিবীতে এনেছেন এর সর্বপ্রধান চরিত্র হোচ্ছে গয়রুল্লাহর সঙ্গে সংঘাতমুখী, শুধু বহির্মুখী (Extrovert) নয়, একেবারে বিস্ফোরণমুখী (Explosive)। এর প্রাথমিক ইতিহাসই এ কথার অকাট্ট প্রমাণ, কোন যুক্তি-তর্কের প্রয়োজন করেনা। অন্য যে কোন আকীদা, মতবাদ এর ঘোর বিরোধী এবং এর প্রাণঘাতী শত্রু। বাইরের লক্ষ কোটি শত্রুও এই দ্বীনের সে ক্ষতি করতে পারবেনা যে ক্ষতি ঐ বিস্ফোরণমুখী চরিত্রের বিপরীত কোন আকীদা, মতবাদ কোরতে পারবে এবং কোরছে। উম্মাহর ভবিষ্যত সম্বন্ধে আল্লাহ(Allah) মহানবীকে (দঃ) যে জ্ঞান দিয়েছিলেন সেই জ্ঞানের আলোকে তিনি তার জাতির সম্বন্ধে অনেক ভবিষ্যত বাণী কোরে গেছেন যেগুলি হাদীস হোয়ে আমাদের কাছে পৌঁছেছে। এই প্রসঙ্গে একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ হাদীস পেশ কোরছি। বিশ্বনবী (দঃ) বোলেছেন- আমার উম্মাহর মধ্যে নানারকম মতবাদ সৃষ্টি হোয়ে অনেক ফেরকা সৃষ্টি হবে। তার মধ্যে এমন ফেরকা সৃষ্টি হবে যারা অতি উৎকৃষ্ট কথা বলবে কিন্তু তাদের কাজ হবে ঘৃণিত। তারা কোরান পড়বে কিন্তু তা তাদের গলার ভিতর দিয়ে নিচে যাবে না। (অর্থাৎ কোরানের প্রকৃত উদ্দেশ্য, মর্মবাণী তাদের হৃদয়ে প্রবেশ কোরবেনা)। তারা সৃষ্টির জঘন্যতম জীব হবে। সুখী সেই যে তাদের হত্যা করবে এবং সুখী সেই যে তাদের দ্বারা নিহত হবে। তারা(ঐ ফেরকার লোক সকল) আল্লাহ(Allah)র বই (কোরান) এর দিকে মানুষকে ডাকবে, কিন্তু আমাদের কোন কিছুই তারা কার্যকর কোরবেনা। যারা তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কোরবে তারা আল্লাহ(Allah)র কাছে তাদের নিজেদের চেয়েও প্রিয় হবে, (অর্থাৎ আল্লাহ(Allah)র অতি, অতি প্রিয় হবে)। তারা (সাহাবাগণ) জিজ্ঞাসা কোরলেন- ইয়া রসুলাল্লাহ! তাদের চিহ্ন কি হবে? (অর্থাৎ আমরা তাদের চিনব কি থেকে?) তিনি [মহানবী (দঃ)] জবাব দিলেন- তারা দল বেঁধে গোল গোল হোয়ে বসবে (হাদীস- আবু সায়ীদ আল-খুদরী (রাঃ) ও আনাস বিন মালেক (রাঃ) থেকে-আবু দাউদ, মিশকাত]। এই হাদীসটি ভালো কোরে বুঝে নেবার প্রয়োজন আজ খুব বেশী, বিশেষ কোরে যারা আল্লাহ(Allah) ও তার রসুলের (দঃ) কাছে নিজেদের উম্মতে মোহাম্মদী, অন্ততঃ মুসলিম(Muslim) বোলে গৃহিত হোতে চান। প্রথম কথা হলো রসুলাল্লাহ (দঃ) তার এই হাদীসে যাদের কথা বোঝাচ্ছেন তারা মোনাফেক নয়, মোশরেক নয়, কাফেরও নয়, কারণ এর কোন শব্দই তিনি ব্যবহার করেন নি। বরং বোলছেন তারা তার উম্মতের মধ্যেই বহু ফেরকার এক ফেরকা। ঐ ফেরকা যদি জেনে শুনে মানুষকে বিপথগামী করার জন্য কোরানের ভুল ব্যাখ্যা কোরে কোরানের দিকে ডাকতো তবে তাদের মোনাফেক বা মোশরেক বা কাফের বলা যেতো এবং মহানবীও (দঃ) তাই বোলতেন। কিন্তু তিনি তা বলেন নি। এর অর্থ হলো ঐ ফেরকা অকৃত্রিম, আন্তরিক ভাবেই কোরানে বিশ্বাসী, কিন্তু আকীদার বিকৃতির দরুন কোরানের প্রকৃত অর্থ, মর্ম তারা বুঝবে না, (তারা কোরান পড়বে কিন্তু তা তাদের গলার ভিতর দিয়ে নিচে অন্তরে যাবে না)। আমাদের কোন কিছুই তারা কার্যকর কোরবেনা অর্থ বিশ্বনবী (দঃ) ও তার সাহাবারা (রাঃ) যে সারা জীবন বিরতিহীন জেহাদ ও কিতাল (সশস্ত্র যুদ্ধ) কোরছেন তা তারা কার্যকর কোরবেনা। কাফের নয়, মোশরেক নয়, মোনাফেক নয়, নিজের উম্মাহর এক অংশের বিরুদ্ধে তিনি (দঃ) যুদ্ধের আদেশ দিচ্ছেন, এত রাগান্বিত তিনি কেন হোয়েছেন? এই জন্য হোয়েছেন যে তিনি আল্লাহ(Allah)র নির্দেশে তার উম্মাহর জন্য যে বহির্মূখী (Extrovert) দিক নির্দেশনা দিয়েছেন, ঐ গোল গোল হোয়ে বসা ফেরকা সেই দিক নির্দেশনার ঠিক উল্টো দিক নির্দেশনা শিক্ষা দিয়ে তার উম্মাহকে অন্তর্মূখী কোরে দেবে। তিনি সারা জীবন অবিশ্বাস্য পরিশ্রম কোরে, নির্মম অত্যাচার সহ্য কোরে কঠিনতম সাধনায় যে অপরাজেয় দুর্দ্ধর্ষ যোদ্ধা জাতি সৃষ্টি কোরেছিলেন, এই ফেরকা "আজ আর অস্ত্রের জেহাদ অর্থাৎ কিতাল নেই" শিক্ষা দিয়ে তার (দঃ) উম্মাহকে পলায়নপর কাপুরুষে পরিণত কোরবে। এক কথায় তার (দঃ) নবী জীবনের সমস্ত সাফল্য ধূলিস্যাৎ কোরে দেবে, অর্থহীন কোরে দেবে। এই ফেরকার পরিচিতির জন্য মহানবী (দঃ) যে চিহ্ন তার আসহাবকে এবং হাদীসের মধ্য দিয়ে আমাদের জানিয়ে দিচ্ছেন তা বুঝে নেয়ার দায়িত্ব আমি পাঠক-পাঠিকাদের ওপর ছেড়ে দিচ্ছি। কারা মসজিদে মসজিদে মানুষকে ডেকে গোল হোয়ে বসে? কারা মানুষকে সর্বরকম অপরাধের সঙ্গে সংঘাত, সংঘর্ষ থেকে পলায়ন কোরে গর্তে ঢুকতে শিক্ষা দেয়? কারা গায়রুল্লাহ, আল্লাহ(Allah)র শত্রুদের কাছে মাঠ ছেড়ে দিয়ে ব্যক্তিগতভাবে রসুলুল্লাহর (দঃ) কতকগুলি নিতান্ত ব্যক্তিগত, কম প্রয়োজনীয় অভ্যাসের নকল করা শেখায়, যে অভ্যাসগুলি তার নবী জীবনের মুখ্য, প্রধান ও বিপ্লবী উদ্দেশ্যের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক রাখে না? কারা অস্ত্রের জেহাদ কিতাল বাদ দিয়ে শুধু জেহাদে আকবর, নফসের জেহাদের কথা বলে যেখানে রসুলাল্লাহ (দঃ) ও তার আসহাব সারা জীবন অস্ত্র হাতে যুদ্ধ কোরে সমষ্টি ও ব্যক্তিগতভাবে অপরাজেয় যোদ্ধায় পরিণত হোয়েছিলেন? বিশ্বনবী (দঃ) তার আপন হাতে গড়া জাতির সম্মুখে একটি আদর্শ প্রতিষ্ঠার যে বিশ্বজয়ী উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য স্থাপন কোরেছিলেন এবং সেই লক্ষ্য অর্জনের জন্য যে লক্ষ লক্ষ প্রাণ কোরবান করা হোয়েছিলো, সেই লক্ষ্য থেকে জাতিকে বিচ্যুত কোরে, জাতির আকীদাকে বিপরীতমুখী কোরে দিয়ে তাদের মাথায় বিছানা আর বদনা চাপিয়ে দিয়ে মসজিদে মসজিদে কারা ঘোরায়?

এই ঘৃণ্য ফেরকা, আল্লাহ(Allah)র রসুলের (দঃ) শিক্ষার বিপরীত শিক্ষায় মানুষকে অন্তর্মুখীতার কোন অবিশ্বাস্য পর্য্যায়ে নিতে যাচ্ছে তার একটা সাম্প্রতিক উদাহরণ পেলাম। আমাদের গ্রাম থেকে কয়েক মাইল দূরে একটি গ্রামের মসজিদে এই জামাতের লোকজন বসে তাদের 'ইসলাম(Islam)' তবলীগ করছিলো। এমন সময় ঐ সমজিদ থেকে মাত্র শ'খানেক গজ দূরেই একটি বাড়ীতে আগুন লেগে যায়। পাড়া-প্রতিবেশী ও গ্রামবাসীরা দৌঁড়ে এসে চেষ্টা কোরে আগুন নিভায়। কিন্তু মসজিদে বসা ঐ জামাতের লোকজন কোন পরওয়া না কোরে আল্লাহ(Allah)-রসুলের এবং "ইসলামে(Islam)র" আলোচনায় ব্যস্ত রইলো কারণ তাদের আকীদায় তারা অত্যন্ত সওয়াবের কাজ করছিলো। সওয়াবের ঐ কাজ ছেড়ে কি আর তারা মানুষের বাড়ীর আগুন নেভানোর মত দুনিয়াদারীর কাজ কোরতে যেতে পারে? কার্ল মার্কস ধর্মকে আফিম বোলেছেন- স্বয়ং মার্কসও বোধহয় ভাবতে পারেননি যে ঐ আফিম মানুষকে অমানুষিকতার কোন পর্য্যায়ে নিয়ে যেতে পারে। ঐ গ্রামের সাধারণ মানুষগুলি কার্ল মার্কসের মতবাদ না জানলেও সেদিন মসজিদের ঐ অত্যন্ত পরহেজগার 'ইসলাম(Islam)' প্রচারকারীদের বেশ কিছু উত্তম-মধ্যম দিয়ে দিয়েছিলেন।

জান্নাতী ফেরকাকে মনে রাখতে হবে যে- আজ তারা পৃথিবীতে ইসলাম(Islam) নামে প্রচলিত যে ধর্মটি দেখছেন সেটা বিশ্বনবী মোহাম্মদের (দঃ) প্রবর্তিত জীবন-বিধান ইসলামে(Islam)র বুনিয়াদ থেকে যে সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন শুধু তাই নয়, এর আকীদা ওটার ঠিক বিপরীতমুখী। কাজেই বিশ্বনবীর (দঃ) ইসলাম(Islam) যে চরিত্রের মানুষ ও জাতি সৃষ্টি কোরতো এটা তার ঠিক বিপরীত চরিত্রের মানুষ ও জাতি সৃষ্টি কোরছে। এই জন্যই পৃথিবীময় যে কিছু কিছু চেষ্টা চোলছে রাষ্ট্রীয় পর্য্যায়ে আল্লাহ(Allah)র আইন প্রতিষ্ঠার, তা কোথাও সফল হোচ্ছে না, হবে না।

আরও একটি অত্যন্ত জরুরী কথা জান্নাতী ফেরকাকে মনে রাখতে হবে এবং মনে রাখতে হবে সর্বক্ষণ। সেটা হলো এই যে, এই দ্বীনের এক নাম হোচ্ছে দ্বীনুল ফিতরাহ। ফিতরাহ শব্দের অর্থ হোচ্ছে স্বাভাবিক, প্রাকৃতিক। আল্লাহ(Allah) এই যে বিরাট, বিশাল সৃষ্টি কোরেছেন একে তিনি অসংখ্য নিয়ম-কানুন দিয়ে বেঁধে দিয়েছেন যার বাইরে যাবার কোন উপায় কারো নেই। এই নিয়মগুলির কতকগুলি বাহ্যিক, দৃশ্যমান অর্থাৎ চোখে দেখা যায়, কতকগুলি চোখে দেখা যায় না। উদাহরণস্বরূপ আগুনে হাত দিলে হাত পুড়ে যায়, এটা চোখে দেখা যায়। মাধ্যাকর্ষণ (Gravitation) পৃথিবীর সব কিছুকে সর্বক্ষণ টেনে ধোরে রাখছে এটা চোখে দেখা যায় না। মানুষের জন্য যে জীবন-বিধান, দ্বীন তিনি দিলেন এটাকেও তিনি ঐ অসংখ্য নিয়মের অধীন ও ওর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কোরে দিলেন। অর্থাৎ এই দ্বীনকে গ্রহণ ও প্রয়োগ করার না করার ফল ঐ স্বাভাবিক, প্রাকৃতিক নিয়ম মোতাবেকই হবে। আমরা মুসলিম(Muslim) আর ওরা অমুসলিম(Muslim) এই কারণে প্রাকৃতিক নিয়ম বদলাবে না। উদাহরণ দিচ্ছি-আল্লাহ(Allah) বোলছেন "তোমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে শত্রুর মোকাবেলা কর"। ঐক্যবদ্ধ হোতে তিনি আদেশ কোরছেন এই জন্য যে, তিনি প্রাকৃতিক নিয়ম এই কোরছেন যে ঐক্য বিচ্ছিন্নতার চেয়ে শক্তিশালী এবং এটা সবার জন্য এবং সর্ব সময়ে, সর্ব অবস্থায়। যদি একদল মুসলিম(Muslim) আরেক দল অমুসলিমে(Muslim)র সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়, সে সংঘর্ষ যে ধরনেরই হোক না কেন, এবং মুসলিম(Muslim)রা যদি ঐক্যবদ্ধ না হয় এবং অমুসলিম(Muslim)রা যদি ঐক্যবদ্ধ হয়, তবে তারা মুসলিম(Muslim) হওয়া সত্ত্বেও পরাজিত হবে ঐ প্রাকৃতিক নিয়মে। এই রকম অসংখ্য নিয়ম আল্লাহ(Allah) তৈরী কোরেছেন এবং ঐগুলিই তিনি কোরানে আমাদের জানিয়ে দিয়েছেন। ঐ নিয়মগুলি মুসলিম(Muslim), অমুসলিম(Muslim) নির্বিশেষে প্রযোজ্য, ঐ নিয়মগুলি অন্ধ, ওগুলো মুসলিম(Muslim) অমুসলিম(Muslim) তফাৎ দেখবে না। উম্মতে মোহাম্মদী ইস্পাতের মত ঐক্যবদ্ধ হোয়ে গিয়েছিলো। তাই সর্বক্ষেত্রে তাদের শত্রু পরাজিত হোয়েছিলো। অবশ্য আরও কারণ ছিলো এবং সেগুলোও ঐ প্রাকৃতিক স্বাভাবিক নিয়ম। যেমন দ্বন্দ্বযুদ্ধে (Single Combat) শত্রুদের বিখ্যাত যোদ্ধাদের পরাজিত করা। দ্বন্দ্বযুদ্ধে ঐক্যের প্রশ্ন আসে না, আসে ব্যক্তিগতভাবে কে বড় যোদ্ধা সেই প্রশ্ন। উম্মতে মোহাম্মদী দ্বীনুল ফিতরাহর অর্থ বুঝেছিলেন তাই এ-ও বুঝেছিলেন যে শুধু ঈমানের জোরে শত্রুর বিখ্যাত যোদ্ধাদের দ্বন্দ্বযুদ্ধে পরাজিত করা যাবে না। তাই তারা নামাযে যে ঐক্য, শৃংখলা ও নিয়মানুবর্তিতার শিক্ষা দেয় সেটা ছাড়াও অস্ত্র চালনা, দ্বন্দ্ব যুদ্ধের কৌশল ইত্যাদি শিক্ষার সাধনা কোরতেন। মনে হয় তাদের অবসর সময় প্রায় সম্পূর্ণভাবে ঐ প্রশিক্ষণেই ব্যয় হোত, কারণ তা না হোলে যারা এক সময় পারশ্যের ও রোমানদের ঐ যোদ্ধাদের সম্মুখীন হওয়ার চিন্তাও কোরতে পারতেন না, তারা কেমন কোরে প্রায় প্রতি দ্বন্দ্বযুদ্ধে তাদের শোচনীয়ভাবে পরাভূত কোরতে পেরেছিলেন যার ফলে শত্রুদের বাহিনীর মধ্যে ত্রাসের সঞ্চার হোয়েছিলো। উম্মতে মোহাম্মদীর সঙ্গে দ্বন্দ্ব যুদ্ধে যেতে তাদের বিখ্যাত যোদ্ধাদের অন্তরেও ভীতির উদ্রেক হতো।

আল্লাহ(Allah)র শেষনবীর (দঃ) উম্মাহর ইতিহাসকে বর্তমান পর্য্যন্ত গভীরভাবে লক্ষ্য করলে একে চারটি প্রধান পর্বে (Phase) ভাগ করা যায়। প্রথম পর্ব- প্রচণ্ড গতিশীল (Dynamic)। এই পর্ব রসুলাল্লাহ (দঃ) থেকে শুরু কোরে পরবর্তী ৬০/৭০ বছর পর পর্য্যন্ত। এই সময়ে এই উম্মাহ প্রকৃত মোমেন, মুসলিম(Muslim) এবং প্রকৃত উম্মতে মোহাম্মদী। এই সময়ের উম্মাহর আকীদা ছিল সঠিক, কাজেই তারা তাদের উদ্দেশ্য, উদ্দেশ্য অর্জনের প্রক্রিয়া, জীবন বিধানের গুরুত্বের পরিমাপ (Priority) ইত্যাদি সম্বন্ধে তাদের ধারণা ছিলো পরিষ্কার। তা ছিলো বোলেই ঐ অল্প সময়ের মধ্যে ঐ ছোট্ট জাতিটি তদানিন্তন পৃথিবীর দুইটি বিশ্বশক্তিকে পরাজিত কোরে অর্দ্ধেক পৃথিবীতে আল্লাহ(Allah)র দেয়া জীবন-ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা কোরতে পেরেছিলেন। দ্বিতীয় পর্ব- স্থবির বা স্থিতাবস্থা (Static)। এই পর্বে উম্মাহ তার লক্ষ্য ভুলে গেলো জাতি হিসাবে জেহাদ ও কিতাল ছেড়ে দিলো এবং পৃথিবীর অন্যান্য রাজা-বাদশাহদের মত শান-শওকতের সঙ্গে রাজত্ব কোরতে লাগলো। আদর্শ বিস্তারের ভার নিলেন ছোট ছোট দল বা ব্যক্তি। এই পর্বে এই উম্মাহ জাতি হিসেবে প্রকৃত উম্মতে মোহাম্মদী থেকে বিচ্যুত হোয়ে শুধু মুসলিম(Muslim) হোয়ে গেলো। এই স্থবির পর্বেই আবির্ভুত হোলেন বহু ফকিহ, মুফাস্সির, মোহাদ্দিস ইত্যাদিরা এবং ভারসাম্যহীন সুফীরা। এই পর্ব স্থায়ী রইলো কয়েক শতাব্দী, ইউরোপিয়ান খ্রীস্টান শক্তির কাছে সামরিকভাবে পরাজিত হোয়ে তাদের ঘৃণিত গোলামে পরিণত হওয়া পর্য্যন্ত। তৃতীয় পর্ব- পতন ও দাসত্ব (Fall & Slavery)। এই পর্বে এই জাতি দাস এবং যেহেতু আল্লাহ(Allah)র আইন-কানুন তাদের জাতীয় জীবন থেকে নির্বাসন দেয়া হলো, কাজেই এরা মোশরেক, অন্ততঃ কার্যত মোশরেক ও কাফের। এই পর্ব চলছে গত চল্লিশ বছর আগে পর্য্যন্ত। চতুর্থ পর্ব- বর্তমানে চলছে। বছর চল্লিশ আগে কতকগুলি কারণে ঐ ইউরোপিয়ান শক্তিগুলি এই উম্মাহকে বাহ্যতঃ রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক দাসত্ব থেকে মুক্তি দিলেও অর্থনৈতিকভাবে এর প্রধান ভাগ তাদের বিগত প্রভুদের করুণার ওপর বেঁচে আছে। আর তার চেয়ে বড় কথা হলো আপাতঃ মুক্তি পেলেও এই উম্মাহ তাদের বিগত প্রভূদের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক দণ্ডবিধি শিক্ষানীতি আইন-কানুন ইত্যাদি তৃতীয় পর্বের দাসত্বের সময়ের মতই চালু রেখেছে। কাজেই এই জাতি এখনও কার্যতঃ সেই মোশরেক ও কাফেরই আছে।

আজ পৃথিবীতে ইবলিসই জিতে আছে। যে অন্যায়, অবিচার, অশান্তি ও রক্তপাতের কথা মালায়েকরা আদম তৈরীর বিরুদ্ধে কারণ হিসাবে পেশ কোরেছিলেন আজ সত্যই তাই দিয়ে পৃথিবীপূর্ণ হোয়ে আছে। মোহাম্মদ (দঃ)কে দিয়ে আল্লাহ(Allah) যে জাতি সৃষ্টি করিয়েছিলেন ইবলিসকে পরাজিত কোরে পৃথিবীতে শান্তি ও বিচার প্রতিষ্ঠা কোরতে, সে জাতি এখন ইবলিসের পক্ষ হোয়ে লড়ছে। তবে কি ইবলিসের সঙ্গে আল্লাহ(Allah)র চ্যালেঞ্জে আল্লাহ(Allah) হেরে যাবেন? না- যাবেন না। এ সম্বন্ধে আল্লাহ(Allah)র সেনাপতি (দঃ) আগেই আমাদের বোলে দিয়েছেন। তিনি বোলছেন- নবুয়াতের পর আসবে নবুয়াতের আদর্শেই খেলাফত। তারপর আসবে অন্যায়কারী রাজতন্ত্র, তারপর আসবে শান-শওকত বিশিষ্ট শক্তিশালী রাজতন্ত্র এবং তারপর আবার আসবে নবুয়াতের আদর্শের খেলাফত [হাদীস-হুযায়ফা (রাঃ) থেকে- নু'মান বিন বশীর, আহমদ, মেশকাত]। ইতিহাসবিদদের বোলে দিতে হবে না যে শেষটি ছাড়া বিশ্বনবীর (দঃ) প্রত্যেকটি ভবিষ্যতবানী অক্ষরে অক্ষরে সত্য হোয়েছে। শেষটি এখনও ভবিষ্যত এবং নিঃসন্দেহে ওটাও সত্য হবে, নবুওতের আদর্শে শেষ বারের মতো আবার সারা বিশ্বে খেলাফত প্রতিষ্ঠিত হবে মানে উম্মতে মোহাম্মদী আবার তার উদ্দেশ্য ও দায়িত্ব বুঝতে পারবে এবং অতীতে যে কাজ আরম্ভ কোরেও আকীদার বিকৃতিতে অসমাপ্ত রেখেছিলো তা আবার শুরু কোরবে এবং সমাপ্ত কোরবে, সমস্ত মানব জাতিকে আল্লাহ(Allah)র দেয়া জীবন-ব্যবস্থার অধীনে এনে পৃথিবীতে শান্তি ও ন্যায় বিচার অর্থাৎ ইসলাম(Islam) প্রতিষ্ঠা কোরে জান্নাতের সুখ-শান্তি স্থাপন কোরবে। বিশ্বনবী (দঃ) আরও বোললেন- "আমার এই উম্মত বৃষ্টির মত; বৃষ্টির আরম্ভ সবচেয়ে ভালো, না শেষ ভালো বলা মুশকিল [হাদীস- আনাস (রাঃ) থেকে তিরমিযি, মেশকাত]।" অন্য একটি রেওয়াতে জাফর (রাঃ) বলছেন- রসুলুল্লাহ (দঃ) একদিন বোললেন- "সুসংবাদ! সুসংবাদ! আমার এই উম্মতের তুলনা একটি বৃষ্টির মত; এর প্রথমই ভালো না শেষ ভালো বলা যায় না। (তারপর বোললেন) এই উম্মাহ কেমন কোরে ধ্বংস হবে যার আরম্ভে আমি, মধ্যে মাহদী এবং শেষে ঈসা? কিন্তু মধ্যবর্তী সময়ের সব বিপথগামী, পথভ্রষ্ট; তারা আমার নয়, আমিও তাদের নই [হাদীস- জাফর (রাঃ) থেকে রাযীন, মেশকাত]।" হাদীস দু'টি একে অপরের সম্পূরক। তুলনাটা একদম এক-‘বৃষ্টি'। আনাস (রাঃ) প্রথমটুকু বোলে আর বলেননি, হয়ত মনে ছিলো না, কিম্বা মহানবী (দঃ) পরে ঠিক কি বোলেছিলেন সে সম্বন্ধে মনে সন্দেহ থাকায় বাকিটুকু আর বলেননি। আর জাফর (রাঃ) তার পরেরটুকু মনে রেখেছিলেন বোলেই পুরোটা বর্ণনা কোরেছেন। দেখা যাচ্ছে বিশ্বনবী (দঃ) বোলছেন তার উম্মাহ শেষ যামানায় আবার ফিরে তার নিজের হাতে গড়া জাতির মতই মহান হবে, এবং এতখানি এক রকম হবে যে তার (দঃ) নিজের পক্ষেই বলা মুষ্কিল যে কোনটা ভলো। এই সঙ্গে দেখুন মহানবী (দঃ) আর কি বোলছেন। তিনি বোলছেন এই যে প্রথম ও শেষ, এর মাঝখানে যারা থাকবে তারা তাঁর (দঃ) নয়, তিনিও তাদের নন। এরা কারা? এরা ঐ প্রথম ও শেষের মাঝখানে যারা, অর্থাৎ আমরা। তিনি (দঃ) যাদের নন, তারা যার নয় তারা কি উম্মতে মোহাম্মদী? অবশ্যই নয়। পেছনে বোলে এসেছি বর্তমানের এই বিরাট ‘মুসলিম(Muslim)' জাতি আল্লাহ(Allah), রসুল, কোরানে দৃঢ় ঈমান থাকা সত্ত্বেও ভূল ও বিকৃত আকীদার (Concept) জন্য মহানবীর (দঃ) প্রদর্শিত পথের ঠিক বিপরীতমুখী হোয়ে কার্যতঃ মোশরেক হোয়ে গেছে। এই কথা শুনে এই জাতির ধার্মিকরা কতখানি তেলে-বেগুনে চটে গেছেন তা আমাকে বোলতে হবে না। কিন্তু ওটাতো আমার কথা নয়, রসুলুল্লাহর (দঃ) কথা।

চৌদ্দশ' বছর আগে যখন শেষনবীর (দঃ) ওপর নবুয়াত অর্পিত হলো তখন থেকে পৃথিবীর আয়ুর শেষ দিনটি পর্য্যন্ত, শেষ মানুষটি পর্য্যন্ত পথ প্রদর্শক হলেন একমাত্র মোহাম্মদ (দঃ)। ঠিক যখন কোরানের প্রথম আয়াত অবতীর্ণ হলো তার আগের মুহূর্ত পর্য্যন্ত নবী ও পথ প্রদর্শক ছিলেন ঈশা (আঃ) ও সমসাময়িক অন্যান্য নবীরা (আঃ) (হযরত ঈসার (আঃ) সময়েও যে পৃথিবীর অন্যত্র আরও নবীরা ছিলেন না তা বলা যাবে না, কারণ তিনি (আঃ) ছিলেন শুধু মাত্র বনী ইসরাইলীদের জন্য নবী)। বিশ্বনবী মোহাম্মাদের (দঃ) ওপর নবুয়াত অর্পিত হবার মুহূর্ত থেকে মানব জাতির শেষ মানুষটি পর্য্যন্ত শাফায়াতকারী একমাত্র তিনি, তিনি ছাড়া আর পথ নেই মুক্তি পাবার। অন্য কোন নবী আসবেন না আমাদের জন্য শাফায়াত করার জন্য, তাদের অধিকারও থাকবে না, তাদের নিজেদের উম্মত নিয়েই তারা ব্যস্ত থাকবেন হাশরের দিন। সেই একটি মাত্র মানুষ যার শাফায়াত, সুপারিশ ছাড়া শুধু কৃত-কর্মের হিসাব দিয়ে যখন পার হবার কোন উপায় থাকবে না- সেই একমাত্র মানুষটি যদি বলেন-"তারা আমার নয়, আমি তাদের নই" তা হোলে জাহান্নাম ছাড়া আমাদের আর কোন জায়গা আছে? তারপর অন্য হাদীসে পাই-আবু ওবায়দা (রাঃ) একদিন বিশ্বনবীকে(দঃ) প্রশ্ন কোরলেন- "ইয়া রসুলুল্লাহ! আমরা যারা ইসলাম(Islam) গ্রহণ কোরলাম এবং আপনার সঙ্গে থেকে কঠিন জেহাদ কোরলাম, আমাদের চেয়েও ভাল কোন কেউ আছে?” জবাবে মহানবী (দঃ) বোললেন-"হ্যাঁ আছে। আমার পর (ভবিষ্যতে) মানুষ আসবে যারা আমাকে না দেখেও আমাকে বিশ্বাস কোরবে [হাদীস- আবু ওবায়দা (রাঃ) থেকে- আহমদ মেশকাত]”। হাদীসটি লক্ষ্য করুন। প্রশ্ন কোরছেন আর কেউ নয় বিশিষ্ট সাহাবা আবু ওবায়দা (রাঃ), যিনি নবুয়াতের প্রথম দিকেই ইসলাম(Islam) গ্রহণের পর থেকে প্রতিটি প্রত্যক্ষ ও সশস্ত্র সংগ্রামে বিশ্বনবীর (দঃ) সঙ্গে থেকে যুদ্ধ কোরেছেন, ওহোদের যুদ্ধে আল্লাহ(Allah)র নবী (দঃ) আহত হোলে তাকে রক্ষার জন্য ছুটে যান, শিরস্ত্রাণের লোহার আংটা তার (দঃ) পবিত্র মাথায় ঢুকে গেলে যিনি দাঁত দিয়ে কামড়ে সে আংটা বের কোরতে যেয়ে নিজের একাধিক দাঁত ভেঙ্গে ফেলেন, আল্লাহ(Allah)র রসুল (দঃ) চরম বিশ্বস্ততার প্রমাণ হিসাবে যাকে "আল-আমিন" উপাধিতে ভুষিত করেন (যে উপাধি তার (দঃ) নিজের উপাধি ছিলো), যিনি পরবর্তীকালে সিরিয়ায় প্রেরিত মুসলিম(Muslim) বাহিনীর সেনাপতি রূপে এন্টিয়ক, হিমস, এলেপ্পো, দামেশ্ক ইত্যাদি এই দ্বীনের অধীনে নিয়ে আসেন, এবং যেটা সবচেয়ে বড়-আশারাতুল মোবাশশারার একজন বোলে যাকে রসুলুল্লাহ (দঃ) সুসংবাদ দেন। আরও লক্ষ্য করুন- আবু ওবায়দা (রাঃ) প্রশ্নের মধ্যে নির্দিষ্ট বক্তব্যটি (Point) কি? "আমরা যারা আপনার সঙ্গে থেকে কঠিন সংগ্রাম (জেহাদ) কোরলাম"। এই প্রশ্নের মধ্যেই পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে নবীর সঙ্গে থেকে কোন কাজটাকে তার আসহাবরা সর্বশ্রেষ্ঠ কাজ মনে কোরতেন। আবু ওবায়দার (রাঃ) মত অন্যতম শ্রেষ্ঠ সাহাবা এ কথা বোললেন না যে আমরা যারা আপনার সঙ্গে থেকে নামায পড়লাম, রোযা রাখলাম, হজ্ব কোরলাম, যিকর কোরলাম, মেসওয়াক কোরলাম, কুলুখ নিলাম, জোব্বা পরলাম, দাড়ী রাখলাম, মোচ কাটলাম। কারণ তারা জানতেন আসল কাজ কোনটা, কারণ তারা ইসলাম(Islam) শিখেছিলেন স্বয়ং আল্লাহ(Allah)র রসুলের (দঃ) কাছ থেকে। কাজেই তাদের আকীদা ছিলো সঠিক এবং আকীদা সঠিক ছিলো বোলেই তাদের গুরুত্বের অগ্রাধিকার (Priority) জ্ঞানও সঠিক ছিলো। তারা এও জানতেন ঐ সশস্ত্র সংগ্রাম বাদ দিয়ে বাকি আর সব কিছুই নিখুঁতভাবে করা হলোও তাদের (রাঃ) জীবন সম্পূর্ণ ব্যর্থ হতো। যাই হোক আবু ওবায়দার প্রশ্নের জবাবে শেষ নবী (দঃ) বোলছেন "হ্যাঁ, তোমাদের চেয়েও উত্তম মুসলিম(Muslim) ভবিষ্যতে আসবে যারা আমাকে না দেখেও তোমরা যেমন আমাকে বিশ্বাস করছো এমনি কোরেই বিশ্বাস কোরবে।" প্রশ্ন হোচ্ছে বর্তমান বিশ্বের মুসলিম(Muslim)রা, আমরা কি রসুলল্লাহকে (দঃ) না দেখেও তাকে আল্লাহ(Allah)র রসুল বোলে পরিপূর্ণভাবে বিশ্বাস করি না? অবশ্যই করি, নিঃসন্দেহে করি। তা হোলে আমরা কি নবীর সাহাবাদের চেয়ে আরো উত্তম মুসলিম(Muslim)? বিশেষ কোরে আশারাতুল মোবাশশারার অন্যতম, ‘আল আমীন' ওবায়দা বিন জাররাহর (রাঃ) চেয়েও উত্তম মুসলিম(Muslim)? নিশ্চয়ই নয়। কারণ আবু ওবায়দার (রাঃ) সঙ্গে আমাদের মিল শুধু রাসুলাল্লাহকে (দঃ) বিশ্বাসের মধ্যে সীমাবদ্ধ, আর কোন মিল নেই। ভবিষ্যতে যারা আসছেন তারা আবু ওবায়দা (রাঃ) এবং অন্যান্য আসহাবদের চেয়েও উত্তম মুসলিম(Muslim) (নবীর হাদিস মোতাবেক) কারণ তাদের আকীদা সঠিক হবে, তারা ঠিক আসহাবদের মতই সংগ্রাম, সশস্ত্র সংগ্রাম কোরবেন দ্বীনকে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠার জন্য। তফাৎ শুধু এই হবে যে তাদের সঙ্গে বিশ্বনবীর (দঃ) আকাশচুম্বী ব্যক্তিত্ব থাকবে না, সেই পবিত্র উপস্থিতি থাকবে না, সেই বিরাট প্রেরণা দানকারী নেতৃত্ব থাকবে না। ঐ তফাৎটুকুর জন্যই তারা আসহাবদের চেয়েও উত্তম মুসলিম(Muslim), উত্তম উম্মতে মোহাম্মদী।

এ ছাড়াও মহানবীর (দঃ) বিভিন্ন ভবিষ্যতবাণী থেকে দেখা যায় তার উম্মাহ আবার তার আকীদা ফিরে পাবে, আবার সে ভুলে যাওয়া উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য ফিরে পাবে, আবার সে উদ্দেশ্য ও উদ্দেশ্য অর্জনের প্রক্রিয়া- প্রশিক্ষণের তফাৎ পরিষ্কার বুঝতে পারবে এবং আবার সে মহানবীর (দঃ) আসহাবদের মত ইস্পাতের মত ঐক্য নিয়ে সশস্ত্র সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে সমস্ত পৃথিবীতে আল্লাহ(Allah)র দেয়া শেষ জীবন-ব্যবস্থার অধীনে নিয়ে এসে পৃথিবীময় ন্যায় বিচার, সম্পদের ন্যায় বন্টন চালু কোরে, সমস্ত যুদ্ধ-বিগ্রহ রক্তপাত বন্ধ কোরে শান্তি, ইসলাম(Islam) প্রতিষ্ঠা কোরবে। বিশ্বনবীর (দঃ) দেয়া বৃষ্টির উপমার মাঝখানে আমরা জাহান্নামের আস্তাকুঁড়ে পড়ে থাকবো।

বর্তমানের এই বিপরীতমুখী উম্মাহ যে একদিন আবার তার প্রকৃত আকীদা ফিরে পাবে এবং তার বর্তমান গতি উল্টিয়ে আল্লাহ(Allah) ও বিশ্বনবী (দঃ) যে দিক-নির্দেশনা দিয়েছিলেন সেই দিকে চলতে শুরু কোরবে সে সম্বন্ধে কোন সন্দেহ নেই, কারণ সে কথা বিশ্বনবী (দঃ) নিজেই বোলে গেছেন। তিনি বোলছেন- পৃথিবীতে এমন কোন গৃহ বা তাঁবু থাকবে না যেখানে এই ইসলাম(Islam) প্রবেশ না কোরবে [হাদীস-মিকদাদ (রাঃ) থেকে আহমদ, মেশকাত]। অর্থাৎ সমস্ত মানবজাতি একদিন এই শেষ জীবন-ব্যবস্থা গ্রহণ কোরবে। এটা হোতেই হবে-কারণ এটা যদি না হয় তবে আল্লাহ(Allah)র সর্বশ্রেষ্ঠ রসুল (দঃ) তার ওপর আল্লাহ(Allah)র দেয়া দায়িত্ব পূর্ণ কোরতে ব্যর্থ হবেন। তা হোতেই পারে না। আল্লাহ(Allah) তাকে উপাধি দিয়েছেন রহমতুল্লিল আলামীন, মানব জাতির ওপর (আল্লাহ(Allah)র) রহমত, সে উপাধি অর্থবহ হবে না, তা হোতেই পারে না। কাজেই এমন দিন আসতেই হবে যেদিন সমগ্র মানবজাতি তার (দঃ) মাধ্যমে প্রেরিত শেষ জীবন-বিধান গ্রহণ কোরে তা তাদের সামগ্রিক জীবনে প্রয়োগ ও প্রতিষ্ঠা কোরবে এবং তার ফল হিসাবে মানুষের জীবন থেকে সমস্ত ফাসাদ (অন্যায়-অবিচার) ও সাফাকুদ্দিমা (হত্যা, রক্তপাত, যুদ্ধ) নিঃশেষ হোয়ে পরিপূর্ণ শান্তিতে (ইসলাম(Islam)) বাস কোরবে। সেটা হবে জান্নাতি ফেরকার জেহাদের ফলে, তাদের নিরবচ্ছিন্ন চেষ্টার ও শাহাদাতের ফলে। সেদিন কবে আসবে জানিনা। তবে অতি নিশ্চিত সত্য এই যে সে দিন আসবেই আসবে। প্রকৃত উম্মতে মোহাম্মদী ইবলিসের চ্যালেঞ্জে আল্লাহ(Allah)কে জয়ী করাবে এবং জয়ী করাবে নিজেদের জান-মাল কোরবান কোরে সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে, বিশ্বনবীর (দঃ) প্রকৃত সুন্নাহ পালন কোরে, তার ব্যক্তিগত কতকগুলি নিরাপদ সুন্নাহ নকল কোরে নয়। এইখানে একটি কথা আছে। বিশ্বনবীর (দঃ) হাদীস মোতাবেক সমস্ত পৃথিবীতে এই দ্বীনুল হক প্রতিষ্ঠা হবার অর্থ কি এই যে পৃথিবীতে মুসলিম(Muslim) ছাড়া আর কোন ধর্মের মানুষ থাকবে না? না, অবশ্যই তা নয়। ইনশাআল্লাহ(Allah), যখন সমস্ত পৃথিবীতে এই জীবন-বিধান প্রতিষ্ঠিত হবে, তখনও খ্রীস্টান, ইহুদী, হিন্দু, বৌদ্ধ ইত্যাদি সব ধর্মের মানুষই থাকবে। কিন্তু তারা থাকবে ব্যক্তিগতভাবে তাদের ধর্ম নিয়ে, মানব জাতির রাষ্ট্র, অর্থনীতি, দণ্ডবিধি, রাজনীতি ইত্যাদি সমস্ত পরিচালিত হবে মানব জাতির জন্য আল্লাহ(Allah)র দেয়া সংবিধানগুলির শেষ সংস্করণ কোরান ও হাদীসের ওপর ভিত্তি কোরে। এর উদাহরণ (Precedence) নজীর উম্মতে মোহাম্মদী রেখে গেছেন। অর্দ্ধেক পৃথিবীতে কোরান ও হাদীসের শাসন রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিষ্ঠা কোরলেও কারো ব্যক্তি-জীবনে তারা হস্তক্ষেপ করেননি। তাই তাদের শাসনের অধীনে হাজার হাজার খ্রীস্টান, ইহুদী, অগ্নি উপাসক ইত্যাদি বিনা বাধায় তাদের ধর্মকর্ম কোরে গেছে। শুধু তাই নয়, ঐ সব ধর্মের উপাসনালয়গুলির নিরাপত্তার ভার ছিলো ঐ উম্মতে মোহাম্মদীর ওপর যারা তা যথাযথ পালন কোরেছেন। এই ইতিহাস নিঃশংসয়ে প্রমাণ করে যে এই দ্বীনে রাষ্ট্রীয়, রাজনৈতিক, আর্থ-সামাজিক, আইন ইত্যাদি শুধু মুখ্যই নয়, ব্যক্তিগত দিকটার মূল্য অতি সামান্য। যেমন প্রমাণ করে সমষ্টিগত তৌহীদ, ব্যাভিচার, চুরির মত ব্যক্তিগত গোনাহকে মুছে দেয়, যেমন শাহাদাত সমস্ত জীবনের ব্যক্তিগত গোনাহ ভাসিয়ে দেয়।

৩৩। সংগ্রামের বিফলতার কারণ

ইবলিস ও তার সাঙ্গ-পাঙ্গদের প্ররোচনায় (ওয়াসওয়াসা) নবী-রসুলদের (আঃ) মাধ্যমে আল্লাহ(Allah) যে দ্বীনুল কাইয়্যেমা মানুষের জন্য প্রেরণ কোরেছেন তা অস্বীকার কোরে মানুষ নিজেরাই যে বিভিন্ন রকমের দ্বীন, জীবন-ব্যবস্থা সৃষ্টি কোরে সেই মোতাবেক তাদের রাষ্ট্রীয় ও সমষ্টিগত জীবন পরিচালনা কোরছে সেই সমস্ত রকম জীবন-ব্যবস্থা মিটিয়ে দিয়ে পৃথিবীময় আল্লাহ(Allah)র সার্বভৌমত্ব অর্থাৎ তওহীদ প্রতিষ্ঠা কোরে মানব জাতির মধ্যে জীবনের সর্বস্তরে ন্যায়-বিচার, সম্পদের সুষ্ঠু বন্টন কোরে শান্তি (ইসলাম) প্রতিষ্ঠা করার জন্য আল্লাহ(Allah) তার শেষ রসুলকে (দঃ) পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন; এ সত্য পেছনে কোরান হাদীস থেকে পরিষ্কার দেখিয়ে এসেছি। এ কথাও বোলে এসেছি যে, এই বিরাট কাজ কারো এক জীবনে সম্ভব নয়। তাই আল্লাহ(Allah)র রসুল (দঃ) একটি জাতি, উম্মাহ সৃষ্টি করলেন তাঁর চলে যাবার পর ঐ বিরাট কাজ চালিয়ে যেতে এবং তা পূর্ণ কোরতে। এই কাজ করার প্রক্রিয়া, তরিকা আল্লাহ(Allah) নির্দিষ্ট কোরে দিলেন সংগ্রাম, সশস্ত্র সংগ্রাম (কিতাল) [এবং যুদ্ধ কর তাদের (অবিশ্বাসীদের, তওহীদ বিরোধীদের) বিরুদ্ধে যে পর্য্যন্ত না সমস্ত অন্যায়-অবিচার নির্মূল হোয়ে যায় এবং দ্বীন (জীবন-ব্যবস্থা) সম্পূর্ণ ভাবে আল্লাহ(Allah)র হয়। সূরা আল-আনফাল- ৩৯]। সুতরাং তার রসুল (দঃ) সারা নবী জীবনের সাধনায় এমন একটি জাতি গঠন কোরলেন যেটাকে একটি জাতি না বোলে বরং একটি সামরিক বাহিনী বলাই সঠিক হয়। আল্লাহ(Allah)র নির্দেশে ব্যক্তিগতভাবে তার জাতিকে যুদ্ধের প্রশিক্ষণ দেওয়ার ফলে জাতির প্রতিটি মানুষ মৃত্যু-ভয়হীন দুর্দ্ধর্ষ যোদ্ধায় পরিণত হলো। তার পৃথিবী থেকে চলে যাবার পর নেতৃত্বের অভাব না হয় সেজন্য প্রথম দিকের যুদ্ধগুলি নিজে নেতৃত্ব দিয়ে পরে এক এক অভিযানে ভিন্ন ভিন্ন সম্ভাবনাময় যোদ্ধাকে সেনাপতি নিযুক্ত কোরে এমন শত শত সামরিক নেতৃত্ব সৃষ্টি কোরলেন যাদের প্রত্যেকে পরে বিশ্বের প্রখ্যাত রণ-নায়কদের শোচনীয় ভাবে পরাজিত কোরেছিলেন। এমনি কোরে একটি অজ্ঞাত, অশিক্ষিত, নিরক্ষর ও চরম দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে একটি অপরাজেয় যোদ্ধা জাতিতে পরিণত কোরে, তার উপর আল্লাহ(Allah)র দেয়া দায়িত্ব এই নতুন যোদ্ধা জাতির উপর অর্পন কোরে মহানবী (দঃ) তার স্রষ্টার কাছে চলে গেলেন। ইতিহাস সাক্ষী তার সৃষ্ট জাতিটি অর্থাৎ "উম্মতে মোহাম্মদী" তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব পূর্ণভাবে উপলব্ধি কোরে, তাদের বাড়ী-ঘর, ব্যবসা-বাণিজ্য, জমি-জমা, স্ত্রী-পুত্র এক কথায় দুনিয়া ত্যাগ কোরে অস্ত্র হাতে আরব থেকে বের হয়ে পড়েছিলেন। এই ‘উম্মাহ'র আকীদা এই ছিলো যে, এই কাজই হোচ্ছে সেই সুন্নাহ যে সুন্নাহর কথা আল্লাহ(Allah)র নবী (দঃ) বোলেছেন- যে বা যারা তার (দঃ) সুন্নাহ ত্যাগ করবে সে বা তারা তাঁর (দঃ) কেউ নয়, অর্থাৎ তাঁর উম্মাহ নয়।

৬০/৭০ বছরের মধ্যে অর্দ্ধেক পৃথিবীতে অন্যান্য সমস্ত দ্বীন নিষ্ক্রিয় কোরে এই শেষ দ্বীনের প্রতিষ্ঠা করার পর দুর্ভাগ্যক্রমে এই জাতির আকীদা বদলে গেলো, বিকৃত হোয়ে গেলো। আল্লাহ(Allah) ও তাঁর রসুল (দঃ) তাদের সামনে যে লক্ষ্য, উদ্দেশ্য স্থাপন কোরেছিলেন তা অদৃশ্য হোয়ে গেলো এবং অন্য লক্ষ্য, অন্য উদ্দেশ্য এসে সে স্থান দখল কোরে নিলো। কোন জিনিষের প্রকৃত উদ্দেশ্য যদি বিকৃত বা বদলে যায় তবে সে জিনিষের আর কোন দাম থাকে না। আকীদা বিকৃত হোয়ে উদ্দেশ্য বিকৃত হবার ফলে এই জাতি আর জাতি হিসাবে উম্মতে মোহাম্মদী রোইল না। এর পরের ঘটনা প্রবাহও ইতিহাস। সে ইতিহাস এই যে, নেতার (দঃ) সুন্নাহ পালনের কর্তব্য ত্যাগের ফলে এই জাতির ঐক্য ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হোয়ে গেলো, জাতির সর্ব প্রধান বৈশিষ্ট্য, অপরাজেয় যোদ্ধার চরিত্র শেষ হোয়ে গেলো, এবং যে শত্রুদের তারা সংখ্যায়, অস্ত্রে, সম্পদে বহু কম হোয়েও একদা শোচনীয়ভাবে পরাস্থ কোরেছিলো যুদ্ধে, সেই শত্রুর আক্রমণে পরাজিত হোয়ে তারা তাদের দাসে পরিণত হলো এবং দুই শতাব্দীর বেশী সময় ধোরে পশুর মত তাদের পদ সেবা করলো। এই বিপর্যয়ের কারণ পেছনে লিখে এসেছি, বুঝাতে পেরেছি কিনা জানি না। যাই হোক, গত কয়েক যুগ থেকে এই জাতি আবার পৃথিবীতে আপন স্থান অধিকারের জন্য চেষ্টা কোরছে, এই জীবন-ব্যবস্থাকে আবার তার প্রকৃত স্থানে অধিষ্ঠিত করার প্রচেষ্টা চোলছে। পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে এই সংগ্রাম চোলছে। এই প্রচেষ্টা, সংগ্রাম আরম্ভ হোয়েছে বেশ কয়েক যুগ আগে থেকে এবং এ পর্য্যন্ত বহু মূল্যবান প্রানও এ সংগ্রামে নিবেদিত হোয়েছে। মাঝারি এবং ছোট প্রচেষ্টা গুলিকে বাদ দিয়েও প্রধান যে কয়েকটি আন্দোলনের নাম করা যায়- তার মধ্যে মধ্য এশিয়ায় ইখওয়ানুল মুসলেমিন, এই উপমহাদেশে জামায়াতে ইসলামী, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় দারুল ইসলাম(Islam), আলজেরিয়ায় ইসলামিক স্যালভেশণ ফ্রন্ট, এবং জাম'য়া, মিশরে জেহাদ ও ইসলামিক গ্রুপ, তিউনিশিয়ায় আন-নাহদা ইত্যাদি। সবগুলিই যার যার এলাকায় ইসলাম(Islam) প্রতিষ্ঠা কোরতে ব্যর্থ হোয়েছে। এই আন্দোলনগুলি বিলুপ্ত হোয়ে যায় নি অবশ্য, তাই তারা স্বীকার কোরবেন না যে এগুলো ব্যর্থ হোয়েছে- কিন্তু প্রকৃত পক্ষে এই সব আন্দোলন এখন ব্যর্থ, যদিও এগুলির নেতৃত্ব ও কর্মীদের বিশ্বস্ততা (Sincerity), সততা এবং আন্তরিকতা সম্বন্ধে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই, এদের কোরবাণী সম্বন্ধেও সন্দেহের অবকাশ নেই। এদের অনেক নেতাকে ফাঁসি দেয়া হয়েছে, অনেক প্রাণ এরা কোরবাণী কোরেছেন। এদের ব্যর্থতার কারণ হচ্ছে- রসুলুল্লাহর (দঃ) জাতির, প্রকৃত উম্মতে মোহাম্মদীর আকীদার সঙ্গে এদের আকীদার এখনও অনেক ব্যবধান রোয়েছে, এবং আকীদার ব্যবধান রোয়েছে বোলেই তরীকার অর্থাৎ প্রক্রিয়াতেও অনেক তফাৎ রোয়েছে।

আল্লাহ(Allah)র রসুলের (দঃ) এবং তাঁর উম্মাতের অন্যতম আকীদা এই ছিলো যে, সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে প্রতিরোধকারীদের পরাজিত কোরে এই জীবন-বিধানকে সমস্ত পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা কোরতে হবে। এ ব্যাপারে ইতিহাস পরিষ্কার যে বিশ্বনবীর (দঃ) নিজের সংক্ষিপ্ত জীবনে আটাত্তুরটি যুদ্ধ ছাড়াও তার চলে যাবার পর ৬০/৭০ বছর পর্য্যন্ত তাঁর সৃষ্ট জাতি নিরবচ্ছিন্ন যুদ্ধ চালিয়ে যেয়ে যে বিজয় লাভ কোরেছিলো তাকে অমুসলিম ইতিহাসবেত্তারাও মানব জাতির ইতিহাসে অনন্য ও বিস্ময়কর বোলে বর্ণনা কোরেছেন। বর্তমানে যারা ইসলাম(Islam)কে আবার প্রতিষ্ঠিত কোরতে চাচ্ছেন তাদের সে আকীদা নেই। যেহেতু আকীদা এক নয়, কাজেই স্বভাবতঃই প্রক্রিয়াও এক নয়। বর্তমানে এরা বক্তৃতা, মিটিং, মিছিল কোরে ইসলাম(Islam) প্রতিষ্ঠা কোরতে চাচ্ছেন- তা কোন দিনও সফল হবে না। যদি হয়ও তবে সেটা মহানবীর (দঃ) মাধ্যমে প্রেরিত ইসলাম(Islam) হবে না। সেটা এমন একটা ইসলাম(Islam) হবে যেটার মধ্যে পৃথিবীর সমস্ত মানুষ প্রবেশ কোরলেও ইবলিসই জয়ী থাকবে, আল্লাহ(Allah) নয়। মিটিং-মিছিল কোরে ইসলাম(Islam) প্রতিষ্ঠা সম্ভব হোলে বিশ্বনবীর (দঃ) ও তাঁর আসহাবদের অমন সর্বস্ব কোরবাণী কোরে মহাবিপ্লব কোরতে হতো না। তা হলো তিনি ঘোষণা কোরতেন না- "জান্নাতের দরওয়াজাগুলি তলওয়ারের ছায়ার নীচে" [হাদীস- আবু মুসা (রাঃ) থেকে- বুখারী, মুসলিম(Muslim), মেশকাত]। বর্তমানের আন্দোলনগুলির মধ্যে ইখওয়ানুল মুসলেমিনের নেতা শহীদ সৈয়দ কুতুবের আকীদা এদিক দিয়ে অনেকটা ঠিক ছিলো। কারণ তার আকীদা ছিলো এই যে, ইসলামের জেহাদ অগ্রগামী নিজ উদ্যোগে আরম্ভ করা, আত্মরক্ষামূলক নয়, এবং ইসলাম(Islam) প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে ও প্রক্রিয়ায় কারো সাথে কোন আপোষ নাই। তার এ আকীদার ফলশ্রুতিতে তিনি ও তার বহু সহযোগী যোদ্ধা এই দ্বীনের সর্বশ্রেষ্ঠ পুরষ্কার সর্বশ্রেষ্ঠ সম্মান শাহাদাত লাভ কোরে বিনা বিচারে শ্রেষ্ঠ জান্নাতে প্রবেশ কোরেছেন। কিন্তু পরবর্তীতে তার অনুসারীরা তার আকীদা পরিত্যাগ কোরে শেরকের সাথে আপোষ করে এবং প্রক্রিয়া বদল কোরে মিটিং, মিছিল এবং গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচনে অংশ নিতে আরম্ভ করে এবং বর্তমানে তাদের দিয়ে আর কোন বিপ্লব সম্ভব নয়। অন্য একটি সংঘঠিত আন্দোলন ‘জামায়াতে ইসলামী'। অনেকটা সঠিক আকীদার কারণে ইখওয়ানুল মুসলেমীন প্রথম দিকে যেটুকু সাফল্য লাভ করেছিলো এই জামায়াতে ইসলামীর সেটুকুও নেই। এদের আকীদায় ইসলামে জেহাদ আত্মরক্ষামূলক। অর্থাৎ পরাজিত, হীনমন্যতায় আপ্লুত, অন্য জীবন বিধানে বিশ্বাসীদের কাছে কৈফিয়ত দান কারীদের যে আকীদা সেই আকীদা। এই আকীদায় বিশ্বাসীদের দ্বারা বিপ্লব অসম্ভব। এই জামায়াত গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। যদিও তারা জোর দিয়ে বলেন যে তাদের গণতন্ত্র পাশ্চাত্যের নয়, ইমলামী গণতন্ত্র। তারা বোঝেন না যে ইসলামে কোন ভেজাল দেয়া যায় না, দিলে সেটা আর ইসলাম(Islam) থাকে না। তাদের ইসলামী গণতন্ত্র যে প্রক্রিয়ায় ইসলাম(Islam) প্রতিষ্ঠা কোরতে চায় অর্থাৎ মিটিং, মিছিল, শ্লোগান, বক্তৃতা এবং গায়রুল্লাহর প্রক্রিয়ায় নির্বাচন কোরে-সেটা সেই পাশ্চাত্যের সরকারী ক্ষমতা দখলের প্রক্রিয়া, বিপ্লব নয়। ইসলাম(Islam)কে প্রতিষ্ঠা কোরতে একমাত্র পথ বিশ্বনবীর (দঃ) পথ, সে পথে মিটিং, মিছিল, শ্লোগান নেই, তিনি তা করেন নি। বক্তৃতা, মিটিং, মিছিল কোরে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার চেষ্টা আলজেরিয়ার ইসলামিক স্যালভেশন ফ্রন্টও কোরেছিলো এবং সে আন্দোলন জামায়াতে ইসলামীর চেয়ে অনেক বেশী সাফল্য লাভ কোরেছিলো, অর্থাৎ পাশ্চাত্যে-প্রথায় বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে নির্বাচনে জয় লাভ কোরেছিলো, যা জামায়াত আজও কোথাও পারেনি। কিন্তু সেখানে কি তারা ইসলামিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা কোরতে পেরেছে? পারে নি। অন্যরাও পারবে না ‘হেকমতের' দোহাই দিয়ে গায়রুল্লাহর, ‘তাগুতে'র সাথে আপোষ এবং তাদের ব্যবস্থা গ্রহণ কোরে কখনও ইসলাম(Islam) প্রতিষ্ঠা করা যাবে না।

‘হেকমতের' সাথে কাজ করার যুক্তি দেয়ার পরিস্থিতি রসুলুল্লাহর (দঃ) জীবনেও এসেছিলো। মক্কার মোশরেক নেতারা যখন তাকে আরবের বাদশাহ বানাতে প্রস্তাব দিয়েছিল এই শর্তে যে, তিনি (দঃ) তাদের দেব-দেবীগুলোর বিরুদ্ধে কথা বোলবেন না, তখন তিনি ‘হেকমতের' কথা চিন্তা কোরলে এই ভাবতে পারতেন যে, আরবের বাদশাহ হোলে আমি যা কোরতে চাই তা অনেক সহজ হোয়ে যাবে। কারণ তখনকার দিনের বাদশাহী আজকের দিনের বাদশাহদের মত ছিলোনা, তখনকার দিনের রাজা-বাদশাহরা ছিলেন সর্বেসর্বা, তাদের হুকুমই ছিলো আইন। মানুষের প্রাণের মালিক ছিলেন রাজা-বাদশাহরা। হাজার মানুষের মাথা কাটার হুকুম দিলেও তা বিনা প্রশ্নে কাটা হতো। মহানবী (দঃ) ভাবতে পারতেন কিছুদিনের জন্য দেব-দেবীদের বিরুদ্ধে কথা বলা বন্ধ কোরে রাজশক্তি হাতে নিয়ে আস্তে আস্তে সমাজকে বদলিয়ে তওহীদে পরিবর্তিত করলে তো খুব ‘হেকমতের' সঙ্গে কাজ করা হয়, তাতে অনেক কম কষ্ট হবে, অনেক প্রাণ বেঁচে যাবে, আমার কাজও হোয়ে যাবে। তিনি তা ভাবেন নি, করেনও নি। তিনি আপোষহীন সংগ্রাম ও বিপ্লবের পথ বেছে নিয়েছিলেন আর তাই তিনি (দঃ) মানব ইতিহাসের বৃহত্তর বিপ্লব সৃষ্টি কোরেছিলেন।

বিশ্বনবীর (দঃ) জীবন ও তার সৃষ্ট জাতিটির ইতিহাস পড়লে যে সত্যটি দিনের আলোর মত উদ্ভাসিত হোয়ে ওঠে তা হলো এই যে- তিনি (দঃ) তার সৃষ্ট সম্পূর্ণ জাতিটিকে একটি সামরিক বাহিনীতে পরিণত কোরেছিলেন। এই জাতির প্রতিটি মানুষ শুধু যে যোদ্ধায় পরিণত হোয়ে গিয়েছিলো তাই না, ভয়ঙ্কর, দুর্দ্ধর্ষ যোদ্ধায় পরিণত হোয়ে গিয়েছিলো, সমষ্টিগত ও ব্যক্তিগত উভয়ভাবে। সামান্য সংখ্যক লেখাপড়া জানা মানুষ ছাড়া আর সবাই ছিলেন নিরক্ষর। ঐ সামান্য সংখ্যক মানুষ ক'টিও অপরাজেয় দুর্দ্ধর্ষ যোদ্ধায় রূপান্তরিত হোয়ে গিয়েছিলেন এ কথা ইতিহাস। বিশ্বনবীর (দঃ) সৃষ্ট ঐ জাতিটির মধ্যে ফকির, দরবেশ, ফকিহ, মুফাসসিরদের ছড়াছড়ি ছিলো না। বর্তমানের বিকৃত আকীদার শিকার যারা ঐ জাতির মধ্যে দু'চার জনকে ফকিহ, মুফাসসির বোলে চিহ্নিত কোরতে চান, ইতিহাসে আমরা তাদেরকেও দেখতে পাই মহাযোদ্ধা হিসেবে- প্রতিটি যুদ্ধের ময়দানে। তাসাওয়াফকে গুরুত্ব দেবার চেষ্টায় যে একটিমাত্র মানুষ খুঁজে বের করা হোয়েছে সেই ওয়ায়েস করণী (রাঃ) তলোয়ার হাতে যুদ্ধক্ষেত্রে শহীদ হোয়েছেন। সমস্ত জাতিটির মধ্যে একটি মানুষও খুঁজে পাওয়া যেত না যার গায়ে একাধিক অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন ছিলো না। বিশ্বনবী (দঃ) জাতিটির চরিত্রে যে শৃংখলা প্রতিষ্ঠা কোরলেন, লক্ষ্য কোরলে দেখা যায় সেটাও সামরিক শৃংখলা। কারণ, শিক্ষা দিলেন-শুধু জাতীয় নেতা নয়, যে এলাকায় যে নেতা নিযুক্ত হবে তার প্রতিটি আদেশ-নির্দেশ-নিষেধ বিনা প্রশ্নে কাজে পরিণত কোরতে হবে। শিক্ষা দিলেন-কান কাটা নিগ্রো ক্রীতদাসও যদি নেতা নিযুক্ত হন তাহোলেও কোরতে হবে। যে শিক্ষার ফলে বিশিষ্ট, প্রথম স্তরের সাহাবা আবু যর (রাঃ) স্বয়ং রসুলুল্লাহর (দঃ) সুন্নাহ বিসর্জন দিলেন; যদিও তার পক্ষে সেটার প্রয়োজন ছিলোনা, কারণ মিনায় ওসমানের (রাঃ) মত তার কোন সম্পত্তি ছিলোনা। এখানে দেখুন স্বয়ং মহানবীর (দঃ) কাছ থেকে দ্বীন-ই ইসলাম(Islam) যিনি শিক্ষা কোরেছিলেন, তিনি সুন্নাহ এবং শৃংখলার মধ্যে কোনটার প্রাধান্য দিলেন এবং তার গুরুত্ববোধের (Priority) মাপকাঠি কি! এই শৃংখলাবোধ যেন জাতির সর্বস্তরে সমান কার্যকরী হয় সে জন্য মহানবী (দঃ) নির্দেশ দিলেন যে, "এমন কি মাত্র দু'জন লোকও যদি কোথাও যায় তবে ঐ দুই জনের মধ্যেও একজনকে নেতা ঠিক কোরে নিতে হবে এবং তার আদেশ মতে চোলতে হবে"। এ যদি সামরিক শৃংখলা না হয়, তবে সামরিক শৃংখলা কাকে বলে? আমি পেছনে দেখিয়ে এসেছি যে নামায চরিত্র গঠনের ছাঁচ (Mould)। এই ছাঁচে ঢালাই কোরে যে চরিত্র গঠন করা হয়, তাতে হাজারো রকম উদ্দেশ্য থাকলেও সর্বপ্রধান হোচ্ছে সামরিক শৃংখলা। দু'জন লোক নামায পড়লেও এক জনকে এমাম (নেতা) বেছে নিয়ে তার নির্দেশ মোতাবেক রুকু-সেজদা কোরতে হবে, তার নির্দেশ সামান্যতম অমান্য কোরলে নামায হবে না।

এই শেষ দ্বীনকে যেমন ধর্ম এবং ধর্ম-নিরপেক্ষ (Religious and Secular) এই ভাগে বিভক্ত করা যায় না তেমনি এই জাতিতে, উম্মাতেও সামরিক এবং বেসামরিক (Military and Civilian) কোন বিভাজন নেই। এই জাতিভুক্ত প্রতিটি মানুষকেই হোতে হবে নির্ভীক যোদ্ধা, যে লোক তা নয়, এই জাতির সর্বপ্রধান চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য তার নেই। যে জাতিকে সৃষ্টিই করা হোয়েছে সশস্ত্র সংগ্রাম কোরে সমস্ত পৃথিবীকে এই দ্বীনের ছত্রচ্ছায়ায় নিয়ে আসতে, সে জাতির কোন লোক যদি যোদ্ধা না হয় তবে স্বভাবতঃই সে এই জাতির অন্তর্গত হবার প্রাথমিক যোগ্যতা রাখে না। বর্তমানের কোন দেশের কোন মানুষ যদি সেই দেশের সামরিক বাহিনীতে ভর্তি হোতে চায় এই শর্তে যে- সে যুদ্ধ কোরবে না- তবে তাকে কি বাহিনীতে ভর্তি করা হবে? কিম্বা বর্তমানের কোন সামরিক বাহিনীর কোন লোক যদি যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নিতে-যোদ্ধা হোতে না চায় তবে তাকে ঐ বাহিনীতে রাখা হবে কি? না তাকে বহিষ্কার করা হবে? এই জাতিতেও তাই। স্বয়ং বিশ্বনবী (দঃ) বোলেছেন-"যে মানুষ (এখানে তিনি এই জাতিভূক্ত মানুষ বোঝাচ্ছেন) জীবনে কখনও জেহাদে অংশ গ্রহণ কোরলো না বা ইচ্ছাও কোরলো না সে (অন্য সর্ব রকম এবাদত সত্ত্বেও) মোনাফেকীর একটি শাখায় অবস্থিত অবস্থায় মারা গেলো [হাদীস- আবু হোরায়রা (রাঃ) থেকে- মুসলিম(Muslim), মেশকাত]।" মনে রাখতে হবে মোনফেকী কুফর এবং শেরকের চেয়েও ঘৃণ্য এবং সাতটি জাহান্নামের সবচেয়ে নীচে, ভয়াবহটিতে দেওয়া হবে মোনাফেকদের (কোরান- সূরা আন-নিসা-১৪৫)। বর্তমানের বিপরীতমুখী এই ইসলামের বিকৃত আকীদা থেকে দৃষ্টি ও ধারনাকে মুক্ত কোরে উম্মুক্ত মন নিয়ে মহানবীর (দঃ) প্রবর্তিত ইসলামের দিকে চাইলে যে ইসলাম(Islam)টিকে দেখা যায় সেটি পুরোপুরি একটি সামরিক সংগঠন- যে সংগঠনের সর্ব প্রধান উদ্দেশ্য হলো সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে সমস্ত বিরোধী শক্তিকে পরাজিত কোরে সমস্ত পৃথিবীতে ইসলামের শেষ সংস্করণকে রাষ্ট্রীয় (এক রাষ্ট্র), সামাজিক ও অর্থনৈতিক জীবনে প্রতিষ্ঠা করা। এইটাই এই সংগঠনের সর্ব প্রধান উদ্দেশ্য বোলেই এর সর্বশ্রেষ্ঠ পুরষ্কার এবং সম্মান আল্লাহ(Allah) রেখেছেন এই সংগ্রামে জীবন ও সম্পদ উৎসর্গকারী যোদ্ধাদের জন্য। বিশ্বনবী (দঃ) মানুষকে ইসলামের মাহাত্ম্য বুঝিয়ে এর গুণাবলি বর্ণনা কোরে একে গ্রহণ করাতে চেষ্টা করেন নি। তা কোরলে তিনি আরবের বিভিন্ন স্থানে প্রচারক পাঠিয়ে তবলীগ কোরতেন। ইতিহাস তা বলে না- ইতিহাস বলে তিনি ছোট-বড় সশস্ত্র বাহিনী পাঠিয়েছেন। তাদের বলে দিয়েছেন যে তারা অমুসলিম(Muslim) গোত্রদের নিকট যেয়ে তাদের আল্লাহ(Allah)র দ্বীন গ্রহণ কোরে এই উম্মাহর মধ্যে শামিল হোয়ে যেতে আহ্বান করতে। তাতে যদি তারা রাজি না হয় তবে তাদের বোলতেন যে তাহোলে তাদের শাসন-ব্যবস্থা মুসলিম(Muslim)দের হাতে ছেড়ে দিতে, ব্যক্তিগতভাবে তারা যে দ্বীনে থাকতে চায় থাকুক। কিন্তু এ দুই প্রস্তাবের কোনটি না মানলে তাদের আক্রমণ কোরে পরাজিত কোরে তাদের শাসনভার মুসলিম(Muslim)দের হাতে তুলে নিতে। অমুসলিমদের সাথে যুক্তি-তর্ক কোরে ইসলামের গুণাবলী বর্ণনা কোরে তাদের ইসলাম(Islam) গ্রহণ করানোর জন্য তিনি কখনই নিরস্ত্র তবলিগী দল পাঠান নি। ও পন্থায় ইসলাম(Islam)কে পৃথিবীতে-পৃথিবীতে কেন শুধুমাত্র আরবেও-প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হতো না তা আল্লাহ(Allah) ও বিশ্বনবী (দঃ) জানতেন, তাই তাদের নীতিই তা ছিলো না। একথা যিনি অস্বীকার কোরবেন তিনি এই জাতির ইতিহাসই অস্বীকার কোরছেন।

সুতরাং বর্তমানে প্রচার কোরে, যুক্তি-তর্ক কোরে, মিটিং-মিছিল কোরে, নির্বাচন কোরে ইসলাম(Islam)কে যে পুনর্বাসন চেষ্টা চলছে তা শুধু ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে। কারণ, তা আল্লাহ(Allah)র রসুলের (দঃ) প্রদর্শিত পথ নয়, তার তরিকা নয়। পেছনে একবার লিখেছি পাশ্চাত্যের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় মিটিং-মিছিল কোরে, শ্লোগান দিয়ে খুব হোলে সরকারি ক্ষমতা দখল করা যেতে পারে। কিন্তু সেটা হবে সাময়িক; কারণ জনাসাধারণকে ধাপ্পাবাজী কোরে পক্ষে না রাখতে পারলে বিরুদ্ধ দল ধাপ্পাবাজী করে মেয়াদ শেষ হোলেই ঐ ‘ইসলামী' সরকারকে গদীচ্যুত কোরবে। কিন্তু এখন দেখছি এই প্রক্রিয়ায় ঐ প্রথমবারের মতও ক্ষমতায় যাওয়া যায় না-জনাসাধারণের সংখ্যাগরিষ্ঠের সমর্থন থাকলেও না; উদাহরণ আলজেরিয়া এবং তুর্কী। অন্য যে কোন আদর্শে বিশ্বাসী এক দল লোক যদি সেই প্রচার, মিটিং, মিছিল কোরে দেশের জনসাধারণের বৃহত্তর অংশের সমর্থন লাভ কোরতে পারে তবে সে দল নির্বাচনে জয়ী হোয়ে সে দেশের ক্ষমতা দখল কোরতে পারে, সরকার গঠন কোরতে পারে। কেউ শারীরিকভাবে বাধা দেবে না কারণ এখন সারা বিশ্বে গণতন্ত্রের জোয়ার বইছে। উদাহরণ পশ্চিমবঙ্গে কমিউনিস্ট সরকার। নির্বাচনে জয়ী হবার কারণে কমিউনিস্ট হওয়া সত্ত্বেও তাদের ক্ষমতায় যেতে দেওয়া হোয়েছে কারণ ওটা ইসলাম(Islam) নয়। কিন্তু আলজেরিয়ায় যখন জনগণের ভোটে ইসলামী আদর্শে বিশ্বাসী স্যালভেশন দল বিপুলভাবে জয়লাভ কোরলো তখন তাদের ক্ষমতায় যেতে দেয়া হলো না, সরকারও গঠন কোরতে দেয়া হলো না। তাদের নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলো এবং বর্তমানে সামরিক শাসন তাদের উপর অকথ্য নির্য্যাতন চালাচ্ছে, তাদের গ্রেফতার কোরছে, হত্যা কোরছে। কিন্তু সামরিক শাসনের ঘোর বিরোধী, গণতন্ত্রের জন্য কান্নাকাটি কোরে যারা চোখের পানিতে পৃথিবী ভিজিয়ে ফেলেন তারা একটি কথাও বোলছেন না। ওদিকে বার্মার গণতান্ত্রিকদের হাতে ক্ষমতা তুলে না দেওয়ার অপরাধে যুক্তরাষ্ট্র থেকে শুরু কোরে এই দেশেরও গণতান্ত্রিকদের ধ্বজাধারীরা চেঁচিয়ে গলা ভেঙ্গে ফেলছেন। পাকিস্তান আণবিক বোমা তৈরী করে নাই, অন্তত প্রমাণ নেই, কিন্তু শুধু সন্দেহের ওপর ভিত্তি কোরে পাশ্চাত্য শক্তিগুলো তাকে সর্ব প্রকার সাহায্য দেয়া বন্ধ কোরে দিয়েছে, কিন্তু ভারত প্রকাশ্যে আণবিক বোমা বিস্ফোরণ কোরেছে, তবুও তাকে কোন রকম সাহায্য দেয়া বন্ধ করা হয়নি। উপরন্তু আণবিক অস্ত্র তৈরীর জন্য অত্যাবশ্যক ইউরোনিয়াম ও হেভি ওয়াটার সরবরাহ অব্যাহত রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র ও পাশ্চাত্য শক্তিগুলি। নাইজেরিয়ার একটি অংশ যখন বিচ্ছিন্ন হোয়ে স্বাধীন হবার জন্য সশস্ত্র সংগ্রাম শুরু কোরেছিলো তখন পাশ্চাত্যের শক্তিগুলো ঐ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সর্বতোভাবে সাহায্য কোরেছিলো, কিন্তু কাশ্মিরীরা যখন স্বাধীন হবার সংগ্রাম কোরছে তখন সমস্ত পৃথিবী ভারতকে সমর্থন কোরছে এমন কি ‘মুসলিম(Muslim)' আরবরা। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে যাবার পর যে সব রাজ্য স্বাধীনতা ঘোষণা কোরেছে তারা পাশ্চাত্যের পূর্ণ সমর্থন পেয়েছে, কিন্তু বসনিয়া ঐ একই কাজ কোরলেও তার উপর অস্ত্র আমদানীর নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগ করা হোয়েছে, যার ফলে প্রায় নিরস্ত্র অবস্থায়, যাদুঘর থেকে প্রথম মহাযুদ্ধের সময়ের অস্ত্র বের কোরে তাই দিয়ে যুদ্ধ কোরতে কোরতে নিশ্চিহ্ন হবার পথে এ লিষ্টের তালিকার, শেষ নেই।

এ সমস্তের মূলে রোয়েছে একটি মাত্র কারণ- তা হলো এই যে, এরা মুসলিম(Muslim)। স্বার্থের প্রয়োজনে খ্রীস্টান-ইহুদীদের সাথে হাত মেলাবে, যেমন বর্তমানে-ইহুদী হিন্দুর হাতে হাত মেলাবে, বৌদ্ধ খ্রীস্টান বা হিন্দুর সাথে হাত মেলাবে। কিন্তু কোন অবস্থাতেই অন্য কোন জাতি মুসলিম(Muslim)দের সাথে হাত মিলাবে না। এই জাতির একমাত্র বন্ধু এবং অভিভাবক হোচ্ছেন আল্লাহ(Allah)। কিন্তু তার দেয়া দায়িত্ব ও তার রসুলের (দঃ) সুন্নাহ ত্যাগ কোরে পাশ্চাত্যের জীবন-ব্যবস্থা গ্রহণ কোরে কার্যতঃ মোশরেক ও কাফের হোয়ে যাবার পর থেকে তিনি এই জাতির অভিভাবকত্ব ত্যাগ কোরেছেন বহু আগেই। সর্বশক্তিমান আল্লাহ(Allah) যে জাতির অভিভাবক সে জাতি বিজাতির দাস হোতে পারে না। গত দু'শ বছরের গোলামী প্রমাণ যে তিনি এই জাতির অভিভাবকত্ব স্বীকার করেন না। কাজেই যেখানে পৃথিবীর সমস্ত জাতিই এই জাতির বিরোধী এবং যে একমাত্র প্রভু ও অভিভাবক এর ছিলেন তিনিই একে ত্যাগ কোরেছেন; সুতরাং এর বর্তমান পরিণতিই স্বাভাবিক এবং তাই-ই হোচ্ছে। এই জাতির স্রষ্টা বিশ্বনবী (দঃ) এই পরিণতি দেখতে পেয়েছিলেন। তাই তিনি ভবিষ্যত বাণী কোরেছেন- "অচিরেই এমন সময় আসছে যখন অন্যান্য জাতিগুলি তোমাদের (মুসলিম(Muslim) জাতির) বিরুদ্ধে একে অপরকে ডাকবে যেমন কোরে খাবার সময় মানুষ একে অপরকে খেতে ডাকে। কেউ একজন প্রশ্ন করলেন- তখন কি আমরা সংখ্যায় এত নগণ্য থাকবো? তিনি (দঃ) বোললেন- না। তখন তোমরা সংখ্যায় অগণিত হবে, কিন্তু হবে স্রোতে ভেসে যাওয়া আবর্জনার মত এবং আল্লাহ(Allah) তোমাদের শত্রুদের হৃদয় থেকে তোমাদের সম্বন্ধে ভয় উঠিয়ে নেবেন এবং তোমাদের হৃদয়ে দুর্বলতা ঢুকিয়ে দেবেন। একজন প্রশ্ন কোরলেন- হে রসুলুল্লাহ! এই দুর্বলতার কারণ কি হবে? তিনি (দঃ) জবাব দিলেন- দুনিয়ার প্রতি ভালবাসা এবং মৃত্যুর প্রতি বিমুখতা" [হাদীস-সাওবান (রাঃ) থেকে আবু দাউদ, মেশকাত]। এই হাদীস পড়ে মনে হয় আল্লাহ(Allah)র রসুল (দঃ) গত কয়েক শতাব্দীর ইতিহাস চোখের সামনে দেখে দেখে ঐ কথা কয়েকটি বোলছেন। যে জাতির অবিশ্বাস্য সামরিক বিজয়ের কারণ নির্ণয় কোরতে যেয়ে পাশ্চাত্যের প্রথম শ্রেণীর ইতিহাস বেত্তারা সিদ্ধান্ত কোরেছেন যে কারণ হোচ্ছে তাদের মৃত্যুর প্রতি চরম অবজ্ঞা, তাদের ভাষায় (Utter Comtempt for death)। মৃত্যুর প্রতি চরম অবজ্ঞা অর্থ অবশ্যই এই দুনিয়ার প্রতি চরম নির্লোভতা, এবং শাহাদাতের প্রতি দুর্নিবার আকর্ষণ। আর যখনকার কথা বিশ্বনবী (দঃ) উল্লেখ কোরেছেন অর্থাৎ গোলামীর কয়েক শতাব্দী এবং বর্তমান- এখন চরিত্রের ঠিক বিপরীত অবস্থান- দুনিয়া প্রীতি এবং মৃত্যুভয়, শাহাদাতের আকাংখা তো বহু দূরের কথা। উম্মতে মোহাম্মদীর চরিত্রের এই একেবারে বিপরীত চরিত্রের অধিকারী হোয়েও কিন্তু এই বর্তমান ‘মুসলিম(Muslim)' জাতি ধর্ম-কর্মের পরাকাষ্ঠা ও তাকওয়ার অনুশীলন কোরে চোলেছেন চোখ-কান বুঁজে। চোলেছেন যে হেদায়াতের, সেরাতুল মুস্তাকীমের ঠিক বিপরীত দিকে সে বোধশক্তি নেই। বর্তমানে বিভিন্ন ‘মুসলিম(Muslim)' দেশের অর্থাৎ ভৌগলিক রাষ্ট্রে ইসলাম(Islam)কে পুনঃ প্রতিষ্ঠিত কোরতে যেসব আন্দোলন ও সংগঠন কাজ কোরছে এদের কোনটাতেই সামরিক সংগঠনকে সে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে না যে গুরুত্ব এই দ্বীনের মর্মবাণীতে আল্লাহ(Allah) ও তার রসুল গেঁথে দিয়েছেন। আকীদার বিকৃতি ও হীনমন্যতার কারণে এগুলি প্রত্যেকটাই কম বেশী পাশ্চাত্যের প্রক্রিয়া গ্রহণ কোরেছে ইসলাম(Islam)কে ভেজাল কোরে দিয়েছে। এই ভেজালের পরিণতিতে জন্ম গ্রহণ কোরেছে ইসলামিক সমাজতন্ত্র ও ইসলামিক গণতন্ত্র। গত মহাযুদ্ধে জার্মানী, জাপান ও ইটালি জিতলে জন্মগ্রহণ করতো ইসলামিক ফ্যাসিবাদ। ইসলামের নাম নিয়ে ভেজাল ইসলাম(Islam) কখনই প্রকৃত ইসলাম(Islam) প্রতিষ্ঠা কোরতে পারবে না।

বিশ্বনবীর (দঃ) উম্মাহ জেহাদ ও কিতালের প্রয়োজনীয়তা, গুরুত্ব সম্যকভাবে উপলব্ধি কোরেছিলেন, এই দ্বীনে এর স্থান (Priority) কোথায় তাও পরিষ্কারভাবে বুঝেছিলেন। কারণ তারা দ্বীনুল ইসলামের আকীদা শিক্ষা কোরেছিলেন আর কারো কাছ থেকে নয়, স্বয়ং আল্লাহ(Allah)র রসুলের (দঃ) কাছ থেকে। তারা বুঝেছিলেন তাদের ঘাড়ে কত বিরাট দায়িত্ব, তাই তারা সর্বস্ব কোরবান কোরে দ্বীনুল কাইয়্যেমাকে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠার সশস্ত্র অভিযানে বের হোয়ে পড়েছিলেন। তারপর ৬০/৭০ বছর পর যখন নবীর (দঃ) কাছ থেকে শেখা আকীদা এই জাতি ভুলে গেলো, তখন তারা সশস্ত্র সংগ্রাম ছেড়ে দিয়ে (জাতি হিসাবে) ফতোয়াবাজী, আত্মার ঘষা-মাজা, (জেহাদে আকবর) ও সুন্নাহ (নেতার দাড়ি-মোচ, খাওয়া-দাওয়া, পেশাব-পায়খানা) পালন কোরতে আরম্ভ করলো। আল্লাহ(Allah) বোলেছিলেন-তোমারা যদি (সামরিক) অভিযানে বের না হও তবে তিনি (আল্লাহ(Allah)) তোমাদিগকে মর্মন্তুদ শাস্তি দিবেন এবং অন্য জাতিকে তোমাদের স্থলাভিষিক্ত কোরবেন (কোরান- সূরা আত্ তওবা-৩৯)। আল্লাহ(Allah) তার প্রতিশ্রুতি কখনও ভঙ্গ করেন না, এখানেও করেন নি। এই দ্বীনের সর্বশ্রেষ্ঠ কাজ, সর্ব প্রধান দায়িত্ব ত্যাগ করার ঐ মর্মন্তুদ শাস্তি কি দিলেন তা ইতিহাস। যুদ্ধে পরাজয়, অপমান, লাইন কোরে দাঁড় করিয়ে গুলি, জীবন্ত কবর, আগুনে পুড়িয়ে হত্যা ছাড়াও এই জাতির মেয়েদের পাইকারী ধর্ষণের পর হত্যা ও ইউরোপের ও আফ্রিকার বেশ্যালয়ে তাদের বিক্রী! তারপর দু'একটি ছোট এলাকা ছাড়া সমস্ত জাতিটির হাত থেকে ক্ষমতা ছিনিয়ে নিয়ে সে স্থানে ইউরোপের বিভিন্ন খ্রীস্টান জাতিগুলির হাতে তুলে দেওয়া ও এই জাতিকে তাদের ক্রীতদাসে পরিণত করা। আল্লাহ(Allah) অক্ষরে অক্ষরে তার প্রতিশ্রুতি পালন কোরলেন। আল্লাহ(Allah)র দ্বীন, জীবন-ব্যবস্থা সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব ত্যাগ করার যে শাস্তি দিলেন তাতে দু'টি কথা প্রমাণ হয়। প্রথমটি এই যে অবিশ্বাসীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে তিনি এই জাতিকে সাহায্য কোরলেন না, কারণ আল্লাহ(Allah) সাহায্য করলে পরাজয় অসম্ভব। যেমন ইতিপূর্বে তিনি কোরে আসছিলেন, যখন এই জাতি সর্ব দিক দিয়ে ঐ অবিশ্বাসীদের চেয়ে দুর্বল ছিলো তখন তারা প্রতিটি যুদ্ধে জয়লাভ কোরেছিলো। দ্বিতীয় হলো-যখন তিনি এই জাতির হাত থেকে ক্ষমতা ছিনিয়ে নিয়ে খ্রীস্টানদের হাতে দিয়ে দিলেন এবং এদেরকে তাদের ক্রীতদাস বানিয়ে দিলেন তখন প্রমাণ হোয়ে গেলো যে আল্লাহ(Allah)র দৃষ্টিতে এই জাতি আর মোমেনও নয়, মুসলিম(Muslim)ও নয়, উম্মতে মোহাম্মদীও নয়। কারণ তা হোলে তাদের ঐ পরিণতি সম্ভব নয়। মোমেনদের জন্য আল্লাহ(Allah) সাহায্যের ও জয়ের প্রতিশ্রুতি কোরানে সর্বত্র ছড়িয়ে আছে।

বর্তমানের এই শেরক ও কুফরীর অবস্থার মধ্যে থেকেও যে সব প্রতিষ্ঠান আবার আল্লাহ(Allah)র দ্বীন প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালাচ্ছে তারা পারছে না কেন তা বোলতে চেষ্টা কোরেছি, পেরেছি কিনা জানি না। গুরুত্ব, অগ্রাধিকার (Priority), আকীদার একটা অংশ। আকীদা সঠিক না হওয়া পর্য্যন্ত এই অগ্রাধিকার (Priority) সঠিক হবে না। বর্তমানে পৃথিবীতে যত প্রচেষ্টা চোলছে তার একটাতেও এই দ্বীনের প্রকৃত আকীদা ও সেই সঙ্গে সঠিক অগ্রাধিকার নেই। এই দ্বীনে জেহাদের যে স্থান তা কোথাও দেয়া হয়নি। কথাটা বোঝাবার চেষ্টায় আমি একটি অণু চিত্র পেশ কোরছি:-


ইসলামে সশস্ত্র সংগ্রামের প্রকৃত স্থান। ঈমানের পরই যেটা সর্ব প্রধান কর্তব্য।


এই স্তরে কোথাও কোন সংগঠন আছে বোলে আমার জানা নেই।



এই স্তরে সশস্ত্র সংগ্রামকে আত্মরক্ষামূলক নয় আক্রমণাত্মক বোলে স্বীকার করা হোয়েছে কিন্তু তাকে কার্যে রূপ দেয়া হয়নি।


এই স্তরে পশ্চিম এশিয়ার এখওয়ানুল মুসলেমীন, দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দারুল ইসলাম(Islam) ইত্যাদি সংগঠন সমূহ।



এই স্তরে সশস্ত্র সংগ্রামকে শুধু আত্মরক্ষামূলক বোলে স্বীকৃতি দেয়া হোয়েছে।


এই স্তরে পশ্চিম আফ্রিকার ইসলামিক স্যালভেশন আন্দোলন, মধ্য এশিয়ার জামায়াতে ইসলামী সহ বিভিন্ন সংগঠনসমূহ যারা পাশ্চাত্যের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় ইসলামিক শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।



এই স্তরে আকীদায় সশস্ত্র সংগ্রামের কোন স্থানই কার্যতঃ নেই। এরা এই দ্বীনের দিক-দর্শনের (Orientation) ঠিক বিপরীতগামী।


এই স্তরে তবলীগ জামাত, বিভিন্ন সুফী তারিকাসমূহ, কাদিয়ানী ইত্যাদি।


দুই ও তিন নম্বর স্তরের সংগঠনগুলির আকীদা সঠিক না হওয়ায় তারা ইসলামী বিপ্লবের পথ ছেড়ে পাশ্চাত্য রাজনৈতিক প্রক্রিয়া অর্থাৎ মিটিং, মিছিল, শ্লোগান ও নির্বাচনের পথ ধোরেছে, অর্থাৎ কুফরী ও শেরক ব্যবস্থার সাথে আপোষ (Compromise) কোরেছে। নিজেদের কাজকে সঠিক প্রমাণ করার জন্য এরা যুক্তি দেখাচ্ছে হেকমতের, কৌশলের। এটা হেকমত নয়, শেরক। কারণ যে ব্যবস্থা ধ্বংস করা উদ্দেশ্য- সেই ব্যবস্থাই গ্রহণ করা, মেনে নেয়া হেকমত নয়; শেরক। আল্লাহ(Allah)র রসুলকে (দঃ) জিজ্ঞাসা করা হোয়েছিলো - সবচেয়ে বড় কাজ (আমল) কি? তিনি বোললেন-"আল্লাহ(Allah)র ও তাঁর রসুলের প্রতি বিশ্বাস (তওহীদ)। আবার জিজ্ঞাসা করা হলো তারপর কোন কাজ? তিনি বোললেন- আল্লাহ(Allah)র পথে জেহাদ"[হাদীস - আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বুখারী ও মুসলিম(Muslim)]। অর্থাৎ ঈমানের পরই জেহাদের স্থান। এই জেহাদকে বাদ দিয়ে বা এর যে গুরুত্ব (Priority) আল্লাহ(Allah) ও তাঁর রসুল (দঃ) দিয়েছেন- সেটা না দিয়ে যত হিকমতই করা হোক না কেন, সমস্ত নিষ্ফল হোচ্ছে এবং হবে। এই ভুল পথে যে সব মূল্যবান প্রাণ কোরবান হোয়েছে তারা হাশরের দিন প্রশ্ন রাখবে তাদের ভুল পথে পরিচালনার জন্য।

আকীদার বিকৃতির জন্য মুসলীম বোলে পরিচিত এই জনসংখ্যাটি যেমন আল্লাহ(Allah)-রসুলের (দঃ)প্রদর্শিত সেরাতুল মুস্তাকীমের, হেদায়াতের অর্থাৎ প্রকৃত তওহীদ ও জেহাদের পথ ছেড়ে দিয়ে অতি তাকওয়ার সাথে বিপরীত দিকে চোলছে, তেমনি ঐ আকীদার বিকৃতির কারণে সে সব সংগঠন ইসলাম(Islam)কে রাষ্ট্রীয় পর্য্যায়ে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা কোরছে তারাও সফল হোচ্ছে না। পেছনে বোলে এসেছি কতকগুলি সংগঠন রসুলের (দঃ) সুন্নাহ অর্থাৎ বিপ্লবের পথ ত্যাগ কোরে পাশ্চাত্যের শিক্ষা দেয়া রাজনৈতিক জনসভা, মিছিল, শ্লোগান দিয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়ে গায়রুল্লাহর ব্যবস্থাকে গ্রহণ কোরে ইসলাম(Islam) প্রতিষ্ঠার চেষ্টা কোরছেন। ঐ সঙ্গে এ কথাও বোলে এসেছি যে এরা হাজার বছরেও সফল হবে না । ইতিমধ্যেই তা প্রমাণ হোয়ে গেছে আলজেরিয়ায়। অন্য কিছু সংগঠন ও পথে না যেয়ে বা ও পথে বিফল হোয়ে সন্ত্রাসের পথ অবলম্বন কোরেছে। এরা এখানে ওখানে বোমা মেরে, পর্যটকদের গাড়ীতে বোমা মেরে রাষ্ট্রের সশস্ত্র বাহিনীর সাথে খণ্ড-যুদ্ধ কোরে এবং ইসলাম(Islam) বিরোধী কার্যকলাপের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হোয়ে ইসলাম(Islam) প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালাচ্ছে। এও সফল হবে না। এ গুলোর কোনটাই রসুলের (দঃ) সুন্নাহ নয়। তার মক্কী জীবনের তের বছর তিনি বা তাঁর আসহাব কোন অন্যায়ের প্রতিবাদ করেন নি, কাফের, মোশরেকদের সঙ্গে তাদের জীবনধারা নিয়ে কোন সংঘর্ষ বাধান নি, তাদের মদ খাওয়ায়, জুয়া খেলায় বা অন্য কোন পাপ কার্যে তিনি বাধা দিতে যাননি। তিনি ও তার আসহাব শুধু নিরবচ্ছিন্নভাবে তাদের বোলে গেছেন যে তোমরা শেরক ছেড়ে দাও, এক আল্লাহ(Allah)কে প্রভু, জীবনের সর্বস্তরের প্রভু বোলে স্বীকৃতি দাও। তিনি জানতেন তার ঐ ডাকে সাড়া দিলেই আল্লাহ(Allah)র আইন প্রতিষ্ঠা হবে। একটা একটা কোরে অন্যায় দূর কোরতে হবে না, সমস্ত অন্যায়-অবিচার তওহীদের বানের ঢলের স্রোতে ভেসে যাবে। মক্কা তার ডাকে সাড়া দিল না, তওহীদ স্বীকার করলো না- মদীনা করলো। মক্কা তওহীদ স্বীকার কোরে নিলে যা হতো মদীনা স্বীকার করায় তাই হলো-একই কথা। তওহীদ প্রতিষ্ঠা হলো মানে আল্লাহ(Allah)র আইন প্রতিষ্ঠা হলো, ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হলো। এটাই ছিলো আল্লাহ(Allah) ও তাঁর রসুলের (দঃ) মুখ্য উদ্দেশ্য, কারণ রাষ্ট্রশক্তি ছাড়া ইসলাম(Islam) অর্থহীন, রাষ্ট্রশক্তি ছাড়া আল্লাহ(Allah)র কোন আইন কার্যকরী করা সম্ভব নয়। এবং আল্লাহ(Allah)র আইন, অর্থনীতি, দণ্ডবিধি ইত্যাদি যদি কার্যকরীই না করা যায় তবে বাকি যা থাকে তা অর্থহীন- আজ যেমন ইসলাম(Islam) ব্যক্তি জীবনের চার দেয়ালে আটকে অর্থহীন হোয়ে আছে। যে সমস্ত সংগঠন আল্লাহ(Allah)র আইনকে পৃথিবীর বুকে প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম চালাচ্ছে তাদের সর্ব প্রথম কর্তব্য হলো প্রথমে তাদের আকীদা সঠিক কোরে নেয়া। আকীদাকে সঠিক করার সঙ্গে সঙ্গে অগ্রাধিকার (Priority) সঠিক কোরে নেয়া। জেহাদ ও কিতালকে আল্লাহ(Allah)-রসুল যে গুরুত্ব দিয়েছেন সেই গুরুত্ব দেয়া। তা না হোলে সমস্ত প্রচেষ্টা বিফল হোতে বাধ্য।

প্রকৃত ইসলাম(Islam) তেরশ' বছর আগে হারিয়ে গেছে। আজ ‘মুসলিম(Muslim)' অমুসলিম সব জাতিগুলিই পাশ্চাত্যের রাজনৈতিক, আর্থ-সামাজিক, আইন-কানুন, দর্শনের প্রভাবাধীন। ইহুদী খ্রীস্টান সভ্যতা(Civilization)র প্রচণ্ড প্রভাব সমস্ত পৃথিবীকে এমন আচ্ছন্ন কোরে ফেলেছে যে, পৃথিবীর সমস্ত জাতিগুলি ব্যক্তি জীবনে যাই বিশ্বাস করুক সমষ্টিগত জীবনে অন্ধভাবে ঐ সভ্যতা(Civilization)র নকল কোরছে। শুধুমাত্র মুসলিম(Muslim) জাতির মধ্যে কতকগুলি সংগঠন ছাড়া অন্য কোন জাতি ইহুদী-খ্রীস্টান সভ্যতা(Civilization)র সমষ্টি জীবনের ব্যবস্থা অর্থাৎ রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, আইন-কানুন ইত্যাদি প্রত্যাখ্যান কোরে নিজস্ব ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালাচ্ছে না। এই মুসলিম(Muslim) জাতির ভেতর যে সংগঠনগুলো সে চেষ্টা কোরছে; ওগুলো ছাড়া আরও ছোট খাট অনেক আছে। কিন্তু ছোট বড় কোনটাই ঐ ইহুদী-খ্রীস্টান সভ্যতা(Civilization)র জীবন-দর্শনের প্রভাব থেকে সম্পূর্ণভাবে মুক্ত নয়। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর সাম্যবাদ, অর্থাৎ কমিউনিজম যখন মহা পরাক্রমশালী, তখন ইসলাম(Islam)কে প্রতিষ্ঠার জন্য যে সব প্রচেষ্টা করা হোয়েছিলো তাতে সাম্যবাদও সমাজতন্ত্রের সাথে ইসলামের সাদৃশ্য প্রমাণ করার চেষ্টা করা হতো। ঐ প্রচেষ্টায় কোরানের বিশেষ বিশেষ আয়াতগুলিকে প্রধান্য দেয়া হতো, যেগুলোতে আল্লাহ(Allah) নিজেকে আসমান-যমীনের সব কিছুর মালিক বোলে ঘোষণা কোরছেন। উদ্দেশ্য-সব কিছুর মালিকানা যখন আল্লাহ(Allah)র তখন সাম্যবাদ ও সমাজতন্ত্রের মত ইসলামেও ব্যক্তি মালিকানা নেই। বিশ্বনবীর (দঃ)লক্ষ সাহাবাদের মধ্য থেকে বেছে নেয়া হলো আবু যরকে (রাঃ) একমাত্র আদর্শ বোলে, কারণ, তার ব্যক্তিগত মতামতের সঙ্গে সমাজতন্ত্রের দর্শনের কিছুটা মিল ছিলো। সমাজতন্ত্রের সাথে ইসলামের এত যখন মিল তখন সৃষ্টি করা হলো ইসলামিক সমাজতন্ত্র। প্রায় তিনটি মুসলিম(Muslim) সংখ্যাগরিষ্ট দেশেই এই ইসলামিক সমাজতন্ত্রের সংগঠন হোয়েছিলো এবং পাকিস্তানের যুলফিকার আলী ভুট্টোর ইসলামিক সমাজতান্ত্রিক (পি.পি.পি) দল সহ কয়েকটি দেশে কিছু দিনের জন্য সরকারও গঠন কোরেছিলো। তারপর সাম্যবাদ, সমাজতন্ত্রের ব্যর্থতার কারণে যখন সেগুলো ম্লান হোয়ে গেলো তখন ধনতান্ত্রিক গণতন্ত্র জোরদার হোয়ে উঠেছে। এখন চেষ্টা চোলছে প্রমাণ কোরতে যে ইসলাম(Islam) গণতান্ত্রিক, নাম দেয়া হোচ্ছে ইসলামিক গণতন্ত্র। সেই আগের মতই কোরান থেকে বেছে বেছে আয়াত নেয়া হোচ্ছে। ইহুদী-খ্রীস্টান পদ্ধতির সঙ্গে আপোষকে অর্থাৎ শেরক ও কুফরের সঙ্গে আপোষকে যথার্থ প্রমাণের চেষ্টায় মহানবীর (দঃ) মদীনায় ইহুদী ও মোশরেকদের সঙ্গে চুক্তির ঘটনা উপস্থিত করা হোচ্ছে। বলা হোচ্ছে প্রয়োজনে আল্লাহ(Allah)র রসুলও (দঃ) মদীনার ইহুদী ও মোশরেকদের সঙ্গে আপোষ কোরেছিলেন। এর নাম এরা দিয়েছেন হেকমত। যে গণতন্ত্রের সার্বভৌমত্ব আল্লাহ(Allah) নয়, সংখ্যাগরিষ্ঠের, সেই গণতন্ত্রকে স্বীকার কোরে নিয়ে সেই পদ্ধতিতে রাজনীতি কোরে, মিটিং, মিছিল, শ্লোগান দিয়ে এবং সেই পদ্ধতির নির্বাচনে অংশ নিয়ে নিজেদের কাজকে সঠিক প্রমাণ করার চেষ্টায় এরা এমন অন্ধ হোয়েছেন যে, আপোষ ও চুক্তির মধ্যে বিরাট তফাৎ দেখতে পান না। আকীদা বিকৃতির জন্য ইসলামের প্রকৃত রূপ, অগ্রাধিকার এ সব এরা বোঝেন না বোলে বিশ্বনবীর (দঃ) ইহুদী ও মোশরেকদের সঙ্গে চুক্তিকে তাদের নিজেদের শেরক ও কুফরের সাথে আপোষের সঙ্গে একই পর্যায়ে ফেলেছেন। আপোষ হলো কিছু দেয়া কিছু নেয়া, বিরুদ্ধ পক্ষের কিছু দাবী মেনে নেয়া ও নিজেদের কিছু দাবী বিরুদ্ধ পক্ষকে মেনে নেয়ানো। মদীনার চুক্তিতে বিশ্বনবী (দঃ) বিরুদ্ধ পক্ষের অর্থাৎ ইহুদী ও মোশরেকদের পদ্ধতির, (System) একটি ক্ষুদ্রতম কিছুও মেনে নেন নি, ইসলামের জীবন-ব্যবস্থার, দ্বীনের সামান্য কিছুও তাদের ওপর চাপান নি। কারণ তিনি আপোষ কোরছিলেন না। তিনি মদীনা রক্ষার জন্য শুধু একটি নিরাপত্তা চুক্তি (Security Treaty) কোরেছিলেন। সম্পূর্ণ চুক্তিটির উদ্ধৃতি এখানে দিতে গেলে বই বড় হোয়ে যাবে, শুধু প্রধান প্রধান শর্ত্তগুলো পেশ করছি। (ক) মদীনা শত্রু কর্তৃক আক্রান্ত হোলে ইহুদী ও মোশরেকরা মুসলিম(Muslim)দের সঙ্গে একত্র হোয়ে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কোরবে। (খ) যুদ্ধে ইহুদী ও মোশরেকরা তাদের নিজেদের খরচ বহন কোরবে, মুসলিম(Muslim)রা নিজেদের খরচ বহন কোরবে, যত দিনই যুদ্ধ চলুক। (গ) ইহুদী ও তাদের সম গোত্রের লোকজন রসুলুল্লাহর (দঃ) অনুমতি ছাড়া কারো বিরুদ্ধে যুদ্ধ কোরতে পারবে না। (ঘ) এই চুক্তির অধীন সমস্ত গোত্রগুলির মধ্যে যে কোন প্রকার বিরোধ বা গণ্ডগোল যাই হোক না কেন সমস্ত বিচার মহানবীর (দঃ) কাছে হোতে হবে। এই কয়টিই হলো মহানবীর (দঃ) ও মদীনার ইহুদী-মোশরেকদের মধ্যে চুক্তির প্রধান প্রধান (Saliet) বিষয়, যে চুক্তিটাকে মদীনার সনদ বলা হয়। চুক্তির ঐ প্রধান প্রধান বিষয়গুলির দিকে মাত্র একবার নজর দিলেই এ কথায় কারো দ্বিমত থাকতে পারে না যে, বিন্দুমাত্র ত্যাগ স্বীকার না কোরেও মহানবী (দঃ) এমন একটি চুক্তিতে ইহুদী ও মোশরেকদের আবদ্ধ কোরলেন- যে চুক্তির ফলে তিনি কার্যতঃ (De Facto) মদীনার ইহুদী ও মোশরেকদের নেতায় পরিণত হোলেন। তাদের নিজেদের যুদ্ধের খরচ নিজেরা বহন কোরে মহানবীর (দঃ) অধীনে মুসলিম(Muslim)দের সঙ্গে একত্র হোয়ে যুদ্ধ করার, মহানবীর (দঃ) বিনা অনুমতিতে কারো সঙ্গে যুদ্ধ না করার ও নিজেদের মধ্যেকার সমস্ত রকম বিবাদ-বিসম্বাদের বিচারের ভার মহানবীর (দঃ) হাতে ন্যস্ত করার শর্তে আবদ্ধ কোরে তিনি যে চুক্তি কোরলেন তা নিঃসন্দেহে একাধারে একটি রাজনৈতিক, কুটনৈতিক ও সামরিক বিজয়। মদীনা রক্ষার ব্যবস্থা তো হলোই, তার ওপর তিনি কার্যতঃ মুসলিম(Muslim)-অমুসলিম(Muslim) সকলের নেতায় পরিণত হোলেন। যারা ‘হেকমতের' দোহাই দিয়ে ইসলামী বিপ্লবের পথ ‘জেহাদ' ত্যাগ কোরে পাশ্চাত্যের রাজনৈতিক পদ্ধতি গ্রহণ কোরে মিটিং, মিছিল, শ্লোগান দিয়ে, মানুষের সার্বভৌমত্বের সংগঠনের অধীনে নির্বাচনে অংশগ্রহণ কোরছেন, কিন্তু বিনিময়ে অপর পক্ষ থেকে বিন্দুমাত্র প্রতিদান বা ত্যাগ স্বীকার পাননি, তারা কেমন কোরে তাদের ঐ শেরক ও কুফরের কাজকে বিশ্বনবীর (দঃ) ঐ মহা বিজয়ের সঙ্গে একই পর্যায়ে ফেলে তাকে ছোট করেন তা বোঝা সত্যিই মুশকিল।