বুধবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০১১

১। প্রথম কথা

উৎস: Islam and Dajjal

এই পৃথিবীতে মানুষ নামে যে প্রাণীটি তার আধিপত্য বিস্তার করে রেখেছে সে নিষ্ফল অহংকারে ভাবছে যে সে আজ সভ্যতার(Civilization) চুড়ায় বুক ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সে ভাবছে তার লক্ষ লক্ষ বছরের অস্তিত্বের মধ্যে আজকের মত সার্বিক সফলতা তার আর কখনো হয়নি। তার পেছনের লক্ষ বছরের অতীতের দিকে সে কৃপা আর অনুকম্পার দৃষ্টি দিয়ে চেয়ে দেখছে। আকাশের বিদ্যুতকে সে বেধে চাকরের মত কাজ করাচ্ছে, নদীর গতিকে সে মোড় ফিরিয়ে ফসল ফলাচ্ছে, তার গতি রুদ্ধ কোরে বিদ্যুত তৈরী কোরছে, সে লক্ষ লক্ষ মাইল দূরের চাঁদে গিয়ে ফিরে এসেছে। শুধু তাই নয়, সে জানে আর কিছু দিন পর সে গ্রহ থেকে গ্রহান্তরে ঘুরে বেড়াবে।

মানুষ নামের এই প্রাণীটিকে কে বোলে দেবে যে- যে সভ্যতা(Civilization)র অহঙ্কারে তুমি বুক ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে আছ সে সভ্যতা(Civilization)তো শুধু ঐটুকুই করে নি, সে আরও কোরেছে। সে তোমাকেই ধ্বংস করার জন্য পারমাণবিক বোমা তৈরী কোরেছে, সে সভ্যতা(Civilization)ই কয়েক মিনিটের মধ্যে হিরোশীমা আর নাগাসাকিতে তোমার কয়েক লক্ষ বৃদ্ধ, যুবক, নারী ও শিশুকে হত্যা কোরেছে, সেই সভ্যতা(Civilization)ই মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে দুইটি মহাযুদ্ধে তোমাদেরই এগার কোটি মানুষকে হত্যা কোরেছে।

পৃথিবীর মানুষ আজ বিক্ষুদ্ধ। বাইরে যত সফলতার অহংকার থাকুক মনের গভীরে মানুষ আজ দেউলিয়া, দিশাহারা। যে কোন দিনের সংবাদপত্র খুলুন, দেখবেন পৃথিবীময় অশান্তি, ক্রোধ, রক্তারক্তি, অন্যায়, অবিচার আর হাহাকারের বর্ণনা। রাষ্ট্রগত ভাবে যুদ্ধ, দলগত ভাবে হানাহানি, ব্যক্তিগতভাবে সংঘাত আর রক্তারক্তির হৃদয়বিদারী বর্ণনা। পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি দেশে, বিশেষ কোরে যে সব দেশ এই যান্ত্রিক সভ্যতা(Civilization)কে গ্রহণ কোরেছে, সে গুলোতে প্রতি বছর খুন, যখম, ডাকাতি, ধর্ষণ, বোমাবাজি আর অপহরনের সংখ্যা দ্রুত গতিতে বেড়ে চলেছে। এমন কি বেগুনাহ, নিস্পাপ শিশুরা পর্য্যন্ত এই মানুষরূপী শয়তানদের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না। এক দিক দিয়ে মানুষ যেমন বিজ্ঞানের শিখরে উঠছে অন্য দিক দিয়ে ঠিক তেমনি ভাবে সে সব রকমের অন্যায়ের চুড়ান্তে গিয়ে পৌছুচ্ছে। মানুষের আত্মা আজ ত্রাহী সুরে চিৎকার কোরছে কেন? কেন মানুষ তার জ্ঞান আর বিজ্ঞানের প্রগতিকে মনুষ্যত্বের উন্নতির পরিবর্তে তাকে অবনতির গভীর অতলে নিয়ে যাচ্ছে? তার যে অতীত ইতিহাসের দিকে মানুষ কৃপার দৃষ্টিতে চেয়ে দেখছে তার যে কোন বিশেষ মুহূর্ত আজকের যে কোন বিশেষ মুহূর্তের সঙ্গে তুলনা কোরলে সে দেখবে যে, মানুষ হিসাবে সে বর্তমানে কত নিচুতে নেমে গেছে। বেশী দূর যেতে হবে না, শুধু এই বিংশ শতাব্দীতে সে যত মানুষের প্রাণ হত্যা কোরেছে, গত দশ শতাব্দীর সমস্ত যুদ্ধ বিগ্রহে তার ভগ্নাংশও করে নি। শুধু হত্যা নয়, অন্যায়ের প্রতিটি ক্ষেত্রে সে তার পূর্ব পুরুষদের সমস্ত বেকর্ড ভেঙ্গে ফেলেছে। আত্মার এই নিদারুণ পতনের সঙ্গে বিজ্ঞানের প্রযুক্তির (Technology) ধ্বংশকারী শক্তির যোগের পরিণতি চিন্তা কোরে মানুষ আজ শিউরে উঠছে।

মানুষ আজ যে সভ্যতা(Civilization)র বড়াই কোরছে সত্যি কি এটা সভ্যতা(Civilization)? আমি বোলবো, না, এটা সভ্যতা(Civilization) নয়। এটা আত্মাহীন বিবেকহীন একটা যান্ত্রিক প্রগতি মাত্র, যে প্রগতি মানুষকে যত সে যান্ত্রিকভাবে এগুচ্ছে, তত তাকে মানুষ হিসাবে টেনে নিচে নামাচ্ছে- তাকে কিছুতেই আর যাই হোক সভ্যতা(Civilization) বোলে আখ্যা দেয়া যায় না। এই যান্ত্রিক প্রগতি সে এত দূরে নিয়ে গেছে যে, ইতিমধ্যেই তার হাতে আজ যে পারমাণবিক (Nuclear) অস্ত্র জমেছে তা দিয়ে, বিশেষজ্ঞদের মতে, আমাদের এই পৃথিবী নামক গ্রহটাকে ভেঙ্গে দেয়া যায়। ভেঙ্গে যে আজও দেয় নি তার কারণ এই সভ্যতা(Civilization) নয়, নর নারী শিশু পশু সব নিহত হবে এ কোমল মানবিক বৃত্তিও নয়, কারণ ভয়। ভয় যে শত্রুর সঙ্গে সে নিজেও যাবে। যুক্তরাষ্ট্র জানে সে যদি তার শত্রু সোভিয়েত ইউনিয়নকে ধ্বংস কোরতে চায় তবে যতক্ষণে তার আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপনাস্ত্র (I.C.B.M.) রাশিয়াতে পৌছে রাশিয়ার নর নারী শিশুদের মাটির সঙ্গে মিশিযে দেবে, ততক্ষণে রাশিয়ার ক্ষেপনাস্ত্রও আমেরিকার দিকে অর্দ্ধেক রাস্তা পার হোয়ে আসবে এবং আমেরিকারও ঠিক সেই দশাই ঘটবে। রাশিয়াও জানে, সে যদি আমেরিকাকে ধ্বংস কোরতে চায় তবে তারও ঠিক তেমনি দশাই হবে। মানবতা নয়, দয়া নয়, ন্যায়ের প্রতি সম্মান নয়, অন্যায়ের প্রতি বিরূপতা নয়, কত কোটি মানুষ, শিশু পশু নিহত হবে, এ অনুভূতিও নয়- শুধু ভয়, শত্রুকে মারলে আমিও মরব। মানবতা ও ন্যায়ের খাতিরে যে এই হত্যাযজ্ঞ থেকে এরা বিরত নয় তার প্রমাণ নাগাসাকি ও হিরোশিমা। নিজের পরিণামের এই ভয়ই শুধু পৃথিবী ধ্বংসকারী অস্ত্রগুলোকে ব্যবহার থেকে মানুষকে বিরত রেখেছে। যান্ত্রিক 'সভ্য' ভাষায় এরই নাম (Deterent), দা'তাত। যে মুহ র্তে রাশিয়া বা আমেরিকা নিশ্চিত ভাবে বুঝবে, যে যান্ত্রিক প্রগতিতে আমরা এতদূর এগিয়েছি, এমন অস্ত্র তৈরী কোরতে পেরেছি যে শত্রুর আঘাত আমি সম্পূর্ণভাবে ঠেকাতে পারব এবং আমার আঘাতকে সে ঠেকাতে পারবে না সে মুহ র্তে সে শত্রুকে আঘাত হানবে। কোন ন্যায়-অন্যায় বোধ, কোন দয়া-মায়া-মমতা তাদেরকে এতটুকু দেরী করাতে পারবে না। এটা আজ আর কোন গোপনীয় কথা নয় যে, শত্রুর শক্তিই পৃথিবীর ছোট বড় রাষ্ট্রগুলিকে প্রলয়ংকরী যুদ্ধ শুরু করা থেকে ঠেকিয়ে রেখেছে। এই সেদিনও আমেরিকার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ফোর্ড পরিষ্কার ভাষায় বলেছেন যে দা'তাত (Deterent) কিছু নয়- আমাদের সামরিক শক্তিই হচ্ছে শান্তির সবচেয়ে বড় গ্যারন্টি। অর্থাৎ সোজা কথায় আমেরিকা পারমাণবিক ইত্যাদি শক্তিতে যতক্ষণ ততটুকু শক্তিশালী থাকবে যে, তাকে আঘাত কোরলে আঘাতকারীকেও মরতে হবে, শুধু ততক্ষণই আমেরিকা নিরাপদ। উল্টো দিকে রাশিয়ার সম্বন্ধেও ঐ একই কথা।

দু'জনে দু'জনের বুকের ওপর বন্দুক নিশানা কোরে দাঁড়িয়ে আছে। কেউ ট্রিগার টিপছেনা শুধু এই কারণে যে একজন ট্রিগার টিপলে অন্যজনও টিপবে। আর দু'জনেই শেষ হবে। শুধু ভয়ের ওপর ভিত্তি কোরে আজ যে মানুষ বোলে জাতিটা কোন মতে বেঁচে আছে এটাকে যদি কেউ সভ্যতা(Civilization) বোলে অভিহিত করে তবে তার সাথে আমি একমত নই। এতো সভ্যতা(Civilization) নয়ই শুধু একটি যান্ত্রিক প্রগতি এবং এমনি অবস্থা অনির্দিষ্ট কালের জন্য চলতে পারে না। মানুষ যদি এখনও না বুঝে যে তার এ আত্মাহীন যান্ত্রিক (Technological) প্রগতির পথ ছেড়ে তারা এই যান্ত্রিক জ্ঞান মানুষের কল্যাণের কাজে লাগাতে হবে, তার আত্মাকে উন্নত কোরতে হবে এবং বর্তমান সমাজ ব্যবস্থাকে ভেঙ্গে ফেলে নতুন ভাবে গড়তে হবে। তবে আজ হোক আর হোক বন্দুকের ট্রিগার একজনকে টিপতেই হবে ( এই অংশ সোভিয়েত ইউনিয়ন ধ্বংস হবার আগে লেখা)।

আমি জানি আমার সঙ্গে অনেকেই একমত হবেন না। বোলবেন, না, না, মানুষ এমন আত্মহত্যার কাজ কোরবেনা। তাদের কাছে আমার নিবেদন হলো এই যে, মানুষ ইচ্ছে কোরে এই আত্মহত্যা কোরবেন না ঠিক- কিন্তু দু'জন একে অন্যের বুকের ওপর বন্দুক তাক করে চিরদিন দাঁড়িয়ে থাকতে পারবেনা এও ঠিক কিনা? মানুষ ইচ্ছে কোরে এই আত্মহত্যা কোরবেনা ঠিক, কিন্তু অবস্থা (Circumstances) বাধ্য কোরবে একজন না একজনকে ট্রিগার টিপতে। এ শতাব্দীতে মানুষ দু'টো বিশ্বযুদ্ধ (World War) কোরেছে। প্রথমটা ধরুন। ১৯১৪ সনে যে দিন যুদ্ধ শুরু হয় তার আগের দিন যদি সমস্ত পৃথিবীতে একটা গণভোট (Referendum) নেয়া হোত এই বোলে যে, যুদ্ধ চাও কি চাওনা, তবে যুদ্ধের পক্ষে মানুষ কোন ভোট দিতো না, দিলেও শূণ্যের কোঠার কাছাকাছি। এমন কি যারা পরের দিন মহাযুদ্ধ আরম্ভ কোরেছিল তারাও না। কিন্তু প্রথম বিশ্বযুদ্ধ কি বাঁধেনি? সেই যুদ্ধে চার কোটি মানুষ হতাহত হয়নি? তারপর সেই ভয়াবহ অভিজ্ঞতার মাত্র একুশ বছর পর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগের দিন যদি আবার পৃথিবীময়- এমন কি যে সব দেশ যুদ্ধ শুরু করলো তাদের সহ গণভোট নেয়া যেতো, তবে তারও ফল ঐ আগের গণভোটের মতই হোত- যুদ্ধের পক্ষে শূণ্যের কোঠায়। কিন্তু তাতে কি দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ বন্ধ হোয়েছে? হয়নি- এবং সে যুদ্ধে সাত কোটি মানুষ নামক প্রাণী হতাহত হোয়েছে, বিভৎসভাবে পঙ্গু হোয়েছে, কোটি কোটি স্ত্রীলোক বিধবা হোয়েছে, কোটি কোটি ছেলেমেয়ে বাপ-মা হারিয়েছে, কোটি কোটি স্ত্রীলোক ধর্ষিতা হোয়েছে। অর্থাৎ পৃথিবীময় মানুষও যদি কোন বিশেষ ব্যাপার না চায়, তবুও তা হয়; এবং পৃথিবীময় মানুষও যদি কোন ব্যাপার চায়, যেমন শান্তি, তা হয় না।

কেন? আগেই বোলেছি- অবস্থা (Circumstances) আর এই অবস্থার জন্ম হয় মানুষেরই কাজের ফলে- তার কর্মফল সে আর এড়াতে পারে না শত অনিচ্ছা থাকলেও। হাজার চেষ্টা কোরলেও পরিণতি তাকে ভোগ কোরতেই হয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী লয়েড জর্জ কেমন কোরে যুদ্ধ আরম্ভ হলো তা লিখতে যেয়ে লেখেছেন-“We all slithered into it” অর্থাৎ আমরা কেমন যেন পিছলিয়ে ওর মধ্যে পড়ে গেলাম। আজ পৃথিবীর চারদিক থেকে আর্ত মানুষের হাহাকার উঠছে- শান্তি চাই, শান্তি চাই। দুর্বলের ওপর সবলের অত্যাচারে, দরিদ্রের ওপর ধনীর বঞ্চনায়, শোষণে, শাসিতের ওপর শাসকের অবিচারে, ন্যায়ের ওপর অন্যায়ের বিজয়ে, সরলের ওপর ধুর্ত্তের বঞ্চনায়, পৃথিবী আজ মানুষের বাসের অযোগ্য হোয়ে পড়েছে। নিরপরাধ ও শিশুর রক্তে আজ পৃথিবীর মাটি ভেজা। এ অবস্থা বিনা কারণে হয়নি। অন্য কোন গ্রহ থেকে কেউ এসে পৃথিবীতে এ অবস্থা সৃষ্টি করেনি। মানুষ নিজেই এই অবস্থার স্রষ্টা। তাই পৃথিবীতে শান্তির জন্য এত চেচামেচি, এত লেখা, এত কথা, এত শান্তির প্রচার- কিছুই হোচ্ছে না। শুধু হোচ্ছে না নয়, সমস্ত রকম পরিসংখ্যান (Statistics) বোলে দিচ্ছে যে, একমাত্র যান্ত্রিক উন্নতি ছাড়া আর সমস্ত দিক দিয়ে মানুষ অবনতির পথে যাচ্ছে- এবং দ্রুত যাচ্ছে। পরিসংখ্যান বোলছে, পৃথিবীর প্রতিটি দেশে খুন, হত্যা, চুরি, ডাকাতি, রাহাজানি, ধর্ষণ ইত্যাদি সর্বরকম অপরাধ প্রতি বছর বেড়ে চলেছে ববং বেড়ে চলেছে লাফিয়ে লাফিয়ে। এমন কোন দেশ নেই যেখানে অপরাধের সংখ্যা কমছে। এর শেষ কোথায়? এর পরিণতি চিন্তা কোরে সুস্থ মস্তিষ্ক মানুষ আজ দিশাহারা। এর ওপর আবার ভয়াবহ বিপদ দাঁড়িয়েছে পারমাণবিক অস্ত্রের। এ সবই, অর্থাৎ এই অবস্থা প্রমাণ কোরছে যে মানব জাতি আজ পর্য্যন্ত এমন একটা জীবন-ব্যবস্থা তার নিজের জন্য সৃষ্টি বা প্রণয়ন কোরতে পারেনি যেটা পালন কোরলে যান্ত্রিক উন্নতি সত্ত্বেও মানুষ এই পৃথিবীতে শান্তিতে বাস কোরতে পারে।

তাহোলে উপায় কি? মানুষের ভবিষ্যত নিদারুণ পরিণতিকে এড়াবার পথ কি?

পথ আছে, উপায় আছে। কিন্তু সে পথ গ্রহণ করার সময় খুব বেশী নেই। সেই পথেরই সন্ধান এই বই। যে পথে চললে, যে জীবন ব্যবস্থা গ্রহণ ও প্রতিষ্ঠা কোরলে মানুষ জাতি অপ্রতিরোধ্যভাবে তার আত্মহত্যার দিকে এগিয়ে যাবে না, তার বুদ্ধি ও মনের, দেহের ও আত্মার এমন একটা সুষ্ঠু, ভারসাম্য মিশ্রণ দেবে যা তাকে দু'দিকেই উন্নতির শিখরে নিয়ে যাবে। এমন পথ খুঁজতে গেলে সর্বপ্রথম মানুষকে একটা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নিতে হবে। যে সিদ্ধান্তের ওপর তার সাফল্য ও বিফলতা সম্পূর্ণভাবে নির্ভর কোরবে। সেটা হোচ্ছে ধীরস্থির, নিরপেক্ষভাবে চিন্তা কোরে সিদ্ধান্ত করা যে, এই পৃথিবী ও মহাবিশ্বের কোন স্রষ্টা আছেন, কি নেই।

সাধারণ বুদ্ধিতেই এটা পরিষ্কার বোঝা যায় যে, মানুষ পৃথিবীতে কোন্ পথে কিভাবে চললে নিরাপত্তা ও শান্তির মধ্যে থাকতে পারবে তা স্রষ্টা থাকলে বা না থাকলে এই উভয় অবস্থাতেই একই হওয়া সম্পূর্ণ অসম্ভব। আরও সহজ কোরতে গেলে- আপনাকে যদি কোনও বিশেষ একটি দেশে যেতে হয়, তবে সর্ব অবস্থাতেই আপনার সিদ্ধান্ত কি একই হবে? যদি সেই দেশটাতে দৃঢ় আইন-কানুন, বিচারালয়, কর্তব্যনিষ্ঠ, দক্ষ, পুলিশ থাকে, অথবা সেই দেশটাতে কোন সরকার, আইন-কানুন, পুলিশ এমনকি কোর্ট-কাচারী কিছুই না থাকে- এই উভয় অবস্থাতেই কি আপনি একইভাবে সেই দেশে প্রবেশ কোরবেন এবং একইভাবে বিচরণ কোরবেন? কোন দ্বিধা না কোরে বলা যায় যে- অবশ্যই নয়। প্রথম অবস্থায় আপনি একা এবং নিরস্ত্র সে দেশে প্রবেশ কোরবেন এবং নির্ভয়ে ঘুরে বেড়াবেন। এবং দ্বিতীয় অবস্থায় আপনি একা সে দেশে অবশ্যই প্রবেশ কোরবেন না। যদি যেতেই হয় তবে আপনি দল গঠন কোরবেন, অস্ত্র সজ্জিত হবেন এবং চলাফেরার সময় অত্যন্ত সতর্ক এবং সাবধান হবেন। যেহেতু দেশে আইন নেই তাই আপনার অস্ত্রই হবে আইন। অর্থাৎ ঐ দেশে একটা শক্তিশালী সরকার থাকা বা না থাকার ওপর আপনার মত, পথ, কাজ সর্ব কিছু শুধু বদলাচ্ছে না একেবারে উল্টো হয়ে যাচ্ছে। কাজেই স্রষ্টা আছেন কি নেই এই সিদ্ধান্তের ওপর সম্পূর্ণ নির্ভর কোরছে মানুষের সত্যিকারের শান্তিময়, সুখি প্রগতির পথ কিম্বা বিপথ। মানব জাতি হিসাবে, মানুষ আজও এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেনি, তাই তার মত ও পথের এত বিভিন্নতা, এত সংঘর্ষ। কাজেই মানব জাতিকে সামগ্রিকভাবে আজ স্থির সিদ্ধান্ত নিতেই হবে যে স্রষ্টা আছেন কি নেই, কারণ আজ শুধু মানুষে মানুষে যুদ্ধ, রক্তারক্তি, হানাহানি, অশান্তি আর অস্রু নয় এগুলো দিয়ে তার অতীত ও বর্তমান পূর্ণ হোয়ে আছে- আজ বাজী তার একেবারে অস্তিত্বের ।

1 টি মন্তব্য:

নামহীন বলেছেন...

মনোযোগ দিয়ে শেষ পর্যন্ত পড়লাম। এক কথায় বিবেক জাগানিয়া লেখা। পৃথিবীর সকল নেতাদের পড়ানো উচিত।