বৃহস্পতিবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০১১

১৮। দুনিয়া, যুল্‌ম্‌, সবর ও এবাদতের অর্থ

প্রায়ান্ধত্বের, দৃষ্টির সংকীর্ণতার ফলে আকীদার সাংঘাতিক বিকৃতি এই দ্বীনে এসে এর প্রকৃত উদ্দেশ্যই ধ্বংস কোরে দিয়েছে তা পরিষ্কার কোরে বোলতে পারলাম কিনা জানি না। প্রকৃতপক্ষে এই বিকৃতি শুধু ধ্বংসই করেনি উদ্দেশ্যকেই উল্টো দিকে কোরে দিয়েছে। এই বিকৃতি দ্বীনের শুধু ছোট ছোট ব্যাপার নয়, এর একেবারে মূল, বুনিয়াদী বিষয়গুলিকেও পাল্টে দিয়েছে। যে তওহীদের ওপর শুধু এই শেষ দ্বীন নয়, আদম (আঃ) থেকে মোহাম্মদ (দঃ) পর্য্যন্ত প্রতিটি দ্বীন প্রতিষ্ঠিত, সেই তওহীদ পর্য্যন্ত আকীদার (Concept) বিকৃতির ফলে শুধু আংশিক অর্থাৎ ব্যক্তিগত পর্য্যায়ে সীমাবদ্ধ হোয়ে গেছে। অথচ আংশিক তওহীদ যে তওহীদই নয়, সেটা যে খাঁটি শেরক এবং সেই শেরকের মধ্যে বাস কোরে শুধু যে কোন এবাদতই যে আল্লাহ(Allah)র কাছে গৃহীত হবে না তাই নয়, এই শেরক মাফ না করার জন্য আল্লাহ(Allah) প্রতিশ্রুতিবদ্ধ সে উপলব্ধিই হারিয়ে গেছে এবং সারা দুনিয়াময় এই জাতি মহা সমারোহে নিষ্ফল নামায, রোজা, হজ্জ্ব যাকাত এবং আরও বহু নফল এবাদত কোরে যাচ্ছে। বুনিয়াদী বিষয়গুলি সম্বন্ধেই যেখানে আকীদা বিকৃত সেখানে ছোট ছোট বিষয়গুলি সম্বন্ধে তো কথাই নেই। এর দু'একটা ব্যাপারের উদাহরণ পেছনে দিয়ে এসেছি। এবার দেখাব যে কোরানের কতকগুলি শব্দের অর্থ পর্য্যন্ত এই বিকৃতির ফলে আল্লাহ(Allah) যে অর্থে ও উদ্দেশ্যে ব্যবহার কোরেছেন তা থেকে অন্য অর্থে ব্যবহৃত হোচ্ছে। মূল বিষয় সম্বন্ধে যখন ধারণা বিকৃত হয় তখন ঐ বিকৃতি ঐ সমগ্র বিষয়টির ছোট বড় সব কিছুকেই বিকৃত কোরে দেয়।

প্রথমে ‘দুনিয়া' শব্দটি। কোরানে আল্লাহ(Allah) এ শব্দটি যে অর্থে ব্যবহার কোরেছেন, মহানবী (দঃ) যে অর্থে ব্যবহার কোরেছেন আজ সে অর্থে ব্যবহার হয় না। এই পরিবর্তন আরম্ভ হলো যখন এই দ্বীনে ভারসাম্যহীন সুফীবাদ প্রবেশ করলো। সুফীবাদের কায়-কারবার সব কিছু শুধু আত্মার ব্যাপার নিয়ে, ভারসাম্যহীন, পক্ষান্তরে আল্লাহ(Allah) ও তার রসুলের (দঃ) শেখানো ইসলাম(Islam) হলো দ্বীনে ওয়াসাত (কোরান- সূরা আল-বাকারা-১৪৩) দুনিয়া ও আখেরাতের, দেহের ও আত্মার এক ভারসাম্যযুক্ত মিলন। এর যে কোন একটাকে এমন কি আংশিকভাবেও ছেড়ে দিলে এর ভারসাম্য নষ্ট হোয়ে যায়। পূর্ববর্তী ‘ধর্ম'গুলির যে বিকৃত রূপ আজ পৃথিবীতে বর্তমান সেগুলিতে শুধু আত্মার ও আধ্যাত্মিক উন্নতির দিকটাই আছে। সুফীবাদ, ঐগুলির মত আত্মার শুদ্ধির প্রক্রিয়াকেই একমাত্র কর্তব্য বোলে মনে করে, অর্থাৎ তাই তাদের আকীদা। ঐ বিকৃত ‘ধর্ম'গুলির ও সুফীদের আত্মার উৎকর্ষ ও কেরামত করার শক্তি জন্মালেই হলো, বাকি পৃথিবীর মানুষ যত খুশী অন্যায়-অবিচার করুক, দুর্বলের ওপর সবল যত পারে অত্যাচার করুক, মানুষে মানুষে যত রক্তপাত হোক তাতে তাদের কিছু আসে যায় না। কিন্তু শেষ ইসলাম(Islam) এসেছে সমস্ত দুনিয়াময় শান্তি (ইসলাম) প্রতিষ্ঠা কোরতে এবং তাও সংগ্রাম- সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে। যেখানে দুনিয়াতেই একটি জীবন-ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম সেখানে সেই দুনিয়াকেই ত্যাগ বা তার গুরুত্ব কমিয়ে দেয়া কি কোরে অর্থবহ? আল্লাহ(Allah) কোরানে মোমেনদের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন যে, নিশ্চয়ই তিনি তাদের পৃথিবীর জমিন ও ক্ষমতা দান কোরবেন, যেমন তিনি পূর্ববর্তী মোমেনদেরও দান কোরেছিলেন (কোরান- সূরা আন-নূর-৫৫)। মোমেনদের যে তিনি পৃথিবীর ওপর আধিপত্য, শক্তি দিতে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন এ ব্যাপারে একটিমাত্র আয়াত উদ্ধৃত কোরলাম, কোরআনে এ প্রতিশ্রুতি বহু বার আছে। পৃথিবীর জমিন ও ক্ষমতার সোজা অর্থ যে রাষ্ট্রীয় শক্তি ও আধিপত্য তা বুঝতে কি ব্যাখ্যার প্রয়োজন আছে? যে জাতির উদ্দেশ্যই হলো পৃথিবীর রাষ্ট্রশক্তি অধিকার কোরে আল্লাহ(Allah)র দেয়া আইন-কানুন প্রতিষ্ঠা করা- সে জাতির কাছে দুনিয়া শব্দের অর্থ এবং অন্যান্য বিকৃত ধর্ম ও সুফিবাদের কাছে দুনিয়া শব্দের অর্থ অবশ্যই একই অর্থ হোতে পারে না এ কথা সাধারণ জ্ঞানেই (Common Sense) বোঝা যায়। শেষ ইসলামে(Islam)র উদ্দেশ্য ও বিকৃত ধর্মগুলির ও সুফীবাদের উদ্দেশ্য একেবারে বিপরীতমুখী। বর্তমানে এই উম্মাহ তার অস্তিত্বের অর্থ ও উদ্দেশ্যের ঠিক বিপরীত দিকে চলছে, তাই দুনিয়া শব্দের অর্থও তার কাছে পূর্ববর্তী অন্যান্য বিকৃত ধর্মগুলির মতই হোয়ে গেছে। কোরানে আল্লাহ(Allah) ও হাদীসে তার রসুল (দঃ) দুনিয়া শব্দ বোলতে অন্য অর্থ বোঝাচ্ছেন। সেটা হলো এই- আল্লাহ(Allah) ও তার রসুল (দঃ) এই জাতির, উম্মাহর জন্য যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য স্থির কোরে দিয়েছেন সেই লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অর্জনের পথে এই পৃথিবীতে যা কিছু বাঁধা হোয়ে দাঁড়াবে তাই দুনিয়া। আল্লাহ(Allah)র রসুল (দঃ) কি কি লক্ষ্য স্থির কোরে দিয়েছেন তা পেছনে বহুবার বোলে এসেছি। আল্লাহ(Allah) দুনিয়াকে প্রত্যাখ্যান কোরতে বলেন নি, তা বোললে তিনি কখনই আমাদের বোলতেন না এই দোয়া কোরতে যে- আমাদের পালনকারী! আমাদের এই দুনিয়াকে সুন্দর কোরে দাও এবং আখেরাতকেও সুন্দর কোরে দাও (কোরান- সূরা আল-বাকারা-২০১)। শুধু তাই নয়, আল্লাহ(Allah) যে দোয়া আমাদের শিক্ষাচ্ছেন সেটাতে আখেরাত অর্থাৎ পরজীবনকে আগে বোলে দুনিয়া জীবনকে পরে বোলতে পারতেন। বলেননি, আগে দুনিয়া তারপর আখেরাত বোলেছেন এবং সঠিক বোলেছেন। কারণ দুনিয়া আমাদের পরীক্ষা ক্ষেত্র, কর্মক্ষেত্র। এরই প্রতিফলন হবে আমাদের আখেরাত। কর্মক্ষেত্রই যদি আমাদের অসুন্দর হয়, ব্যর্থতাময় হয় তবে অবশ্যই আখেরাতও হবে অসুন্দর, ব্যর্থ। আজকের ‘মুসলিম(Muslim)' জাতির ইহজীবন যেমন অশিক্ষায়, কুশিক্ষায়, দারিদ্র্যে, ক্ষুধায় জর্জরিত, পরজীবনও হবে তেমনি কুৎসিত, ইহকালে যেমন অন্যান্য জাতির ঘৃণার, অবজ্ঞার পাত্র, পরকালেও হবে তেমনি ঘৃণার পাত্র, এই জীবনে যেমন অন্যের অনুকরণ, নকলকারী- ঐ জীবনেও দাঁড়াতে হবে তাদেরই সাথে। কাজেই আল্লাহ(Allah) প্রথমে দুনিয়া বোলছেন। ‘ধার্মিকরা' যে আকীদায় দুনিয়া দেখেন তাই যদি ঠিক হতো অর্থাৎ এ দুনিয়া কিছু নয় এর কোন দাম নেই, এটা অত্যন্ত ঘৃণ্য জিনিস, আধ্যাত্মিক উন্নতির পথে বাধা, তবে দুনিয়াকে সুন্দর করার জন্য দোয়া করতে আল্লাহ(Allah) নিশ্চয়ই বোলতেন না, বোলতেন দুনিয়া ত্যাগ করো। আরও একটা জিনিস লক্ষ্য করার আছে। দুনিয়া ও আখেরাতকে সুন্দর করার দোয়া শিখিয়ে তারপর আল্লাহ(Allah) বোলছেন, "এবং আগুনের শাস্তি থেকে রক্ষা করো।" অর্থাৎ যার দুনিয়া ও আখেরাত দুটোই সুন্দর, শুধু সেই রক্ষা পাবে আগুনের শাস্তি থেকে। আবার সেই ভারসাম্য, সেই পুলসেরাতের কথা এসে যাচ্ছে। পুলসেরাত যে পার হোতে পারবে না, যার ভারসাম্য নেই, সে পড়বে কোথায়? অবশ্যই আগুনে, কারণ পুলসেরাত জাহান্নামের ওপর থাকবে।

প্রকৃত মোমেনের কাছে দুনিয়া শব্দের অর্থ ও আকীদা হলো এই যে, সে এই পার্থিব জীবনকে যতটুকু সম্ভব সুন্দর কোরতে চেষ্টা কোরবে। এই পৃথিবীতে সে যত কাজ কোরবে তা যত সম্ভব সুন্দর কোরে, নিখুঁত কোরে কোরতে চেষ্টা কোরবে। ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকরি-বাকরি, যার যে পেশা, বৃত্তি, দায়িত্ব সেগুলোতে সে তার পক্ষে যতদূর সম্ভব সুষ্ঠুভাবে, সুন্দরভাবে কোরতে চেষ্টা কোরবে। এটা দুনিয়া নয় দ্বীনদারী। বরং কেউ যদি তার পেশায়, দায়িত্বে গাফলতি করে, তার কর্তব্যে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন না করে তবে সেটাই হবে দুনিয়াদারী, গোনাহ। নবী করীম (দঃ) বোলেছেন- যখন এই দুনিয়ার কাজ কোরবে তখন এমনভাবে কোরবে যেন তুমি অমর, চিরঞ্জীব, আর যখন দ্বীনের কাজ কোরবে তখন এমনভাবে কোরবে যেন তুমি পরের দিন মারা যাবে। আবার সেই ভারসাম্য, ওয়াসাতা। যতক্ষণ একটা মানুষ অন্যকে না ঠকিয়ে, মিথ্যা না বোলে সততার সাথে তার পেশা কোরে যাবে, উপার্জন কোরবে ততক্ষণ সে এবাদত কোরছে, দ্বীনের কাজে কোরছে। আর যে মুহুর্তে সে কোন কাজে মিথ্যা বা প্রতারণার আশ্রয় নেবে সেই মুহুর্তে সে দুনিয়ায় পতিত হবে। একদিন ফজরের নামাযের পর মহানবী (দঃ) মসজিদে বসা ছিলেন, এমন সময় দেখা গেলো এক যুবক রাস্তা দিয়ে হন্ হন্ কোরে বাজারের দিকে যাচ্ছে। একজন সাহাবা (দঃ) বোললেন- যুবকটা দুনিয়ার কাজে যাচ্ছে, কত না ভালো হতো যদি সে এখানে এসে বসতো। এ কথা শুনে রসুলুল্লাহ (দঃ) প্রতিবাদ কোরে বোললেন- যদি সে তার পরিবার পোষণের জন্য হালাল উপার্জনের জন্য, ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য বাজারের দিকে যেয়ে থাকে তবে তার প্রতি পদক্ষেপে সওয়াব লেখা হচ্ছে। লক্ষ্য করুন মহানবী (দঃ) হালাল উপার্জন উল্লেখ কোরলেন। যদি সে ঐ ব্যবসা-বাণিজ্য বা যে কোন পেশায় মিথ্যার আশ্রয় নেয় তবে আর তা এবাদত রোইল না, দুনিয়া হোয়ে গেলো। ঐ হালাল উপার্জন দিয়ে ভালোভাবে থাকায়, ভালোভাবে খাওয়া-পরায় ইসলামে(Islam) বাধা নেই, কোন নিষেধ নেই। কিন্তু ঐ উপার্জন ঐ সম্পদ যদি তাকে আল্লাহ(Allah)র রাস্তায় কোন কাজ থেকে বিরত করে, দ্বীনের কাজে ব্যয় করা থেকে বিরত করে তখন তা দুনিয়া। শুধু সম্পদ নয়, এই পৃথিবীর যা কিছু আল্লাহ(Allah)র রাস্তায় বাধা হবে তাই দুনিয়া। সেটা সম্পদ হোক, স্ত্রী-পুত্র-পরিজন হোক, যাই হোক। ঐ দুনিয়াকে আল্লাহ(Allah) রসুল (দঃ) ত্যাগ কোরতে বোলেছেন। শুধু যে ভালোভাবে থাকা, ভালো খাওয়া-পরা তাই নয়, সাজ-সজ্জা, আড়ম্বর, জাঁক-জমক পর্য্যন্ত আল্লাহ(Allah) মুসলিম(Muslim)দের নিষিদ্ধ করেন নাই। যিনত শব্দের অর্থ হলো, সাজ-সজ্জা, জাঁক-জমক, আড়ম্বর ইত্যাদি। আল্লাহ(Allah) তার রসুলকে বোলছেন- বলো, আল্লাহ(Allah) তার উপাসকদের (মানব জাতি) জন্য যে সাজ-সজ্জা, জাঁক-জমক দান কোরেছেন, এবং যে হালাল ও পবিত্র সম্পদ (জীবিকা) দান কোরছেন, তা কে নিষিদ্ধ করলো? (আরও) বলো- ঐগুলি (সাজ-সজ্জা, জাঁক-জমক, আড়ম্বর ইত্যাদি) এই পৃথিবীর জীবনের জন্য (সবার জন্য) এবং কেয়ামতের দিনে শুধু মোমেনদের জন্য (কোরান- সূরা আল-আ'রাফ-৩২)। আবার ঐ যিনাত সম্বন্ধেই অন্য সূরায় বোলছেন- জেনে রাখ, এই পৃথিবীর জীবন আমোদ-প্রমোদ, জাঁজ-জমক, দম্ভ ও সম্পদ, সন্তান বৃদ্ধির প্রতিযোগিতা ছাড়া আর কি? ( কোরান- সূরা আল-হাদীদ-২০) আপাতঃ দৃষ্টিতে দু'রকমের কথা মনে হয়। কিন্তু আসলে দু'রকমের নয়। আল্লাহ(Allah) বৈরাগ্য নিষিদ্ধ কোরেছেন তাই পার্থিবভাবে উন্নত জীবন-যাপন, এমন কি আড়ম্বর, জাঁক-জমকও নিষিদ্ধ করেননি। কিন্তু জেনে রাখতে হবে এবং সর্বদা মনে রাখতে হবে যে আসলে এগুলি মূল্যহীন, আল্লাহ(Allah)র রাস্তায় আল্লাহ(Allah)র রসুলের দ্বীনের কাজে ওগুলি, বিনা দ্বিধায় কোরবাণী কোরতে হবে। প্রয়োজনের সময় যদি ও গুলি ত্যাগ, কোরবাণী না করা যায় তবেই তা দুনিয়া হোয়ে গেলো।

আপাতঃ দৃষ্টিতে ওমনি পরস্পর বিরোধী কথা বোলেছেন রসুলুল্লাহ (দঃ)। বোলেছেন- ‘ইসলামে(Islam) বৈরাগ্য নেই', ইসলামে(Islam)র বৈরাগ্য-সন্ন্যাস হোচ্ছে জেহাদ ও হজ্ব (হাদীস)। মুসলিম(Muslim) যখন জেহাদে যায় তখন অবশ্যই তার ঘর-বাড়ী, সম্পদ, স্ত্রী-পুত্র, পরিজন, সংসার ছেড়ে যায় অর্থাৎ সন্ন্যাস গ্রহণ করে। শুধু এই একমাত্র সন্ন্যাসই ইসলাম(Islam) অনুমতি দেয়, শুধু অনুমতি নয় উৎসাহিত করে। অন্য যে সন্ন্যাসটি হাদীসে পাচ্ছি অর্থাৎ হজ্ব, ওটা এক সময়ে সন্ন্যাসই ছিলো, কারণ তখনকার দিনে দূরদেশ থেকে হজ্বে গেলে বাড়ী ফিরে আসার নিশ্চয়তা ছিল না। বর্তমানে হজ্ব আর সে রকম পূর্ণভাবে সন্ন্যাসের পর্য্যায়ে পড়ে না। মুসলিম(Muslim) যখন জেহাদে যায় তখন সে আর ফিরে আসার আশা করে না, কারণ তার সামনে তখন লক্ষ্য হয় এই জাতির সর্বশ্রেষ্ঠ পুরষ্কার, সর্বশ্রেষ্ঠ সম্মান শাহাদাত। বিশ্বনবী (দঃ) নিজ হাতে যে জাতি সৃষ্টি কোরেছিলেন, নিজে যাদের শিক্ষা-ট্রেনিং দিয়েছিলেন সেই সম্পূর্ণ জাতিটিই ঐ দৃষ্টিকোণ থেকে একটি সন্ন্যাসীর জাতি হোয়ে গিয়েছিলো। অন্যান্য ধর্মের ও বর্তমানের সুফীদের সন্ন্যাসের সঙ্গে ঐ উম্মাহর সন্ন্যাসের তফাৎ হলো এই যে- এরা নিজেদের ব্যক্তিগত আত্মার উন্নতির জন্য বৈরাগ্য-সন্ন্যাস গ্রহণ করেন, আর এই উম্মাহর সন্ন্যাসীরা সমস্ত মানব জাতির কল্যাণ ও শান্তির জন্য সংসার ত্যাগ কোরে সন্ন্যাস গ্রহণ করেন। এরা সন্ন্যাস গ্রহণ কোরে তসবিহ, বদনা, জপমালা, কমণ্ডলু হাতে সংসার ত্যাগ করেন বা হুজরায় ঢুকেন আর উম্মতে মোহাম্মদী অস্ত্র হাতে সংসার ত্যাগ করেন। আল্লাহ(Allah)-রসুল (দঃ) সন্ন্যাসকে নিষিদ্ধ কোরে দিলেন, অথচ দুটো ফরদ কাজ জেহাদ ও হজ্বকে সন্ন্যাস আখ্যা দিলেন। ঘোর পরস্পর বিরোধী মনে হচ্ছে, তাই নয় কি? যিনিই এই দ্বীনের মর্মবাণী বুঝবেন তার কাছেই আর বিরোধী মনে হবে না, তার কাছে সম্পূরক। আজ ‘মুসলিম(Muslim)' জাতির কাছে ‘দুনিয়া' শব্দের অর্থ আর অন্যান্য বিকৃত ধর্মগুলির সংসার শব্দের অর্থ একই অর্থ। প্রকৃত মুসলিমে(Islam)র আকীদায় দুনিয়া হলো শুধু তাই যা তাকে সমস্ত পৃথিবীতে এই দ্বীন প্রতিষ্ঠায় বাধা হোয়ে দাঁড়ায়- সেটা যাই হোক, সম্পদই হোক, স্ত্রী-পুত্র-পরিজনই হোক, এমন কি নিজের প্রাণের মায়াই হোক। ঐ বাধা না হোলে পৃথিবীর সব কিছু সে ভোগ কোরবে। আরও একভাবে প্রচলিত সন্ন্যাস ও ইসলামে(Islam)র সন্ন্যাসে প্রকট তফাৎ রোয়েছে। প্রচলিত বৈরাগ্য স্বার্থপর; নিজের আত্দার উন্নতির জন্য। কাজেই সংসারের ঝামেলা ত্যাগ কোরলেও নিজের প্রাণ উৎসর্গ কোরতে রাজী নয়, কারণ প্রাণ গেলে তো আর উন্নতির প্রশ্ন থাকে না। আর ইসলামে(Islam)র বৈরাগ্য-সন্ন্যাস অন্যের জন্য, সমস্ত মানব জাতির জন্য, আল্লাহ(Allah)র জন্য এবং শুধু সংসার নয় নিজের প্রাণ পর্য্যন্ত উৎসর্গ কোরে। কাজেই ঐ দুনিয়া ত্যাগ নিষিদ্ধ, পরকালে যার কোন পুরষ্কার নেই, আর ইসলামে(Islam)র বৈরাগ্য ফরদ এবং পরকালে এমন পুরষ্কার ও সম্মান রয়েছে যে তার কাছাকাছিও অন্য পুরষ্কার নেই, অন্য সম্মান নেই।

কোরানে দুনিয়া শব্দের অর্থ বিকৃত অর্থে নেওয়ার এই ফল হোয়েছে যে, বর্তমানের ‘মুসলিম(Muslim)' জাতির একটা অংশ অত্যন্ত ‘পরহেযগার' হোয়ে গেছেন। কাজে-কর্মে ‘এবাদতে' তারা সংসার বিমুখ, শিক্ষিত ও ধনী হওয়া সত্ত্বেও তারা প্যান্ট না পরে টাখনুর ওপর পাজামা পরেন, লম্বা দাড়ী রাখেন, গোঁফ নেই, হাতে তসবিহ নিয়ে পাঁচবার মসজিদে দৌঁড়ান। এদের মধ্যে অনেক লক্ষপতি, কোটিপতি আছেন। এই দুনিয়াবিমুখ অতি মুসলিম(Muslim)দের কাছে যেয়ে যদি বলেন যে আফগানিস্তানে মুজাহিদরা জিতলে সেখানে ইসলামী(Islam) রাষ্ট্র হবে এই ভয়ে আমেরিকানরা মুজাহিদদের অস্ত্রশস্ত্র সরবরাহ একদম কমিয়ে দিয়েছে। অন্যদিকে রাশিয়া তাদের তাবেদার নাস্তিক কমিউনিস্ট সরকারকে ঢালাওভাবে অস্ত্রশস্ত্র সরবরাহ কোরছে। তাই মুজাহিদরা এখন তাদের সাথে পেরে উঠছে না। আল্লাহ(Allah) বোলছেন তিনি মো'মেনদের জান-মাল জান্নাতের বিনিময়ে কিনে নিয়েছেন (কোরান- সূরা আত-তওবা-১১১, সূরা আন-নিসা-৭৪)। আমরা আপনার জান চাচ্ছি না, আপনার লাখ লাখ টাকা আছে, তা থেকে আমাদের মাত্র এক লাখ টাকা দান করুন, আমরা মুজাহিদদের সাহায্য কোরব। বোলে দেখেন ঐ দুনিয়া বিমুখ পরহেযগার অতি মুসলিম(Muslim) আপনাদের কত টাকা দান করেন। খুব সম্ভব তিনি আপনাদের দশ/বিশ টাকা দিয়ে রেহাই পেতে চেষ্টা কোরবেন। তার ঐ দুনিয়া বিমুখতার কোন দাম আল্লাহ(Allah)র কাছে নেই কারণ আল্লাহ(Allah) এ দুনিয়া বিমুখতার অনুমতি দেননি। আল্লাহ(Allah) যে দুনিয়াকে ত্যাগ কোরতে বোলেছেন- অর্থাৎ এই দ্বীনের প্রয়োজনে নিজের প্রাণসহ সব কিছু কোরবান করা- সেইখানেই তিনি ব্যর্থ। তিনি আসলে দুনিয়াতে ডুবে আছেন। কোরানে আল্লাহ(Allah) ‘দুনিয়া' বোলতে কী বোঝাচ্ছেন সেটা রসুলুল্লাহ (দঃ) তার সাহাবাদের যা বুঝিয়েছিলেন সেইটা বোলতে কী বোঝাচ্ছেন সেটা রসুলুল্লাহ (দঃ) তার সাহাবাদের যা বুঝিয়েছিলেন সেইটা ঠিক, নাকি চৌদ্দশ' বছর পর এখন আমাদের ‘ধর্মীয়' নেতারা যেটা বোঝাচ্ছেন সেইটা ঠিক? যারা সরাসরি মহানবীর (দঃ) সম্মুখে থেকে ইসলাম(Islam) শিক্ষা কোরেছিলেন তাদের একজনের উদ্ধৃতি আবার দিচ্ছি। মুসলিম(Muslim) বাহিনীর সেনাপতি ওবায়দা (রাঃ) মিশরের খ্রীস্টান শাসক আর্চ বিশপকে বোলেছিলেন-"আমরা বেঁচেই আমি শুধু আল্লাহ(Allah)র রাস্তায় যুদ্ধ করার জন্য (অর্থাৎ পৃথিবীতে এই জীবন-ব্যবস্থা-দ্বীন মানুষের জীবনে প্রতিষ্ঠার জন্য)। আমাদের শুধু পেটের ক্ষুধা নিবারণ আর পরার কাপড়ের চেয়ে বেশী কিছু চাই না। এই দুনিয়ার জীবনের কোন দাম আমাদের কাছে নেই- এর পরের জীবনই (আখেরাত) আমাদের কাছে সব”। দুনিয়া ও আখেরাত সম্বন্ধে এই ধারনা(আকীদা) শুধু ওবায়দারই (রাঃ) ছিলো না, প্রত্যেকটি সাহাবারই ছিলো, কারণ তারা সবাই ঐ আকীদা শিক্ষা কোরেছিলেন স্বয়ং বিশ্ব নবীর (দঃ) কাছ থেকে। তাদের একজনও তসবিহ হাতে নিয়ে খানকায়, হুজরায় পলায়ন করেননি। তাদের শিক্ষক (দঃ) তাদের শিক্ষা দিয়েছিলেন- "ইসলামে(Islam) দুনিয়া ত্যাগ নেই, ইসলামে(Islam)র দুনিয়া ত্যাগ হোচ্ছে জেহাদ আর হজ্ব"। সেই শিক্ষায় শিক্ষিত হোয়ে সমস্ত জাতি ইসলামে(Islam)র সন্ন্যাস গ্রহণ করলো, হাতে নিলো তহবিহ নয়, তলোয়ার, চললো খানকার পানে নয়, বিরাট পৃথিবীর পানে, আজকের ঠিক উলটো।

দ্বিতয়টি- যুলুম। কোরানে এই শব্দটি আল্লাহ(Allah) অনেক ব্যবহার কোরেছেন। এরও প্রকৃত অর্থ হারিয়ে গেছে। এর অর্থ করা হয় অত্যাচার, মারধর ইত্যাদি। কোরানের সব ইংরেজী অনুবাদেও এ শব্দটিকে (Tyrrany, Opression) অনুবাদ করা হোয়েছে। আসলে যুলম শব্দের অর্থ ও থেকে অনেক ব্যাপক। আল্লাহ(Allah) যে অর্থে এই শব্দ ব্যবহার কোরেছেন তা সংক্ষেপে এই- যা হওয়া বা করা উচিৎ নয়, তা হওয়া বা করা এবং যা হওয়া বা করা উচিৎ তা না হওয়া বা না করা। এক কথায় অন্যায়। প্রশ্ন হোতে পারে-ন্যায়-অন্যায়ের মাপকাঠি কি? উত্তর হোচ্ছে স্রষ্টা যে মাপকাঠি ঠিক কোরে দিয়েছেন সেই মাপকাঠি মোতাবেক যেটা ন্যায় এবং যেটা অন্যায়। আল্লাহ(Allah) যে জীবন-ব্যবস্থা, ন্যায়-অন্যায়ের মাপকাঠি মানুষকে দিয়েছেন সেই মাপকাঠি দিয়ে না মেপে মানুষের কাজকে যদি মানুষের গড়া মাপকাঠি দিয়ে মাপা হয় তবে তার অবশ্যম্ভাবী পরিণতি হবে অন্যায়-যুলম। জীবনের যে অঙ্গনেই (Facet) তা করা হবে সেই অঙ্গনেই অন্যায় হবে, যুলম হবে। এই জন্যই আল্লাহ(Allah) বোলেছেন- যা অবতীর্ণ করা হোয়েছে (কোরান) সেই মোতাবেক যারা শাসন-বিচার করে না তারা যালেম (কোরান- সূরা আল-মায়েদা-৪৪, ৪৫, ৪৬)। অর্থাৎ বিচার ও শাসনে ন্যায়-অন্যায়ের মাপকাঠি হিসাবে আল্লাহ(Allah)র দেয়া মাপকাঠি কোরানকে যারা নেয় না, নিজেরা ইচ্ছামত মাপকাঠি তৈরী করে নেয় তারা যালেম অর্থাৎ অন্যায়কারী কারণ তাদের কাজের ফলে অন্যায় সংঘটিত হবে, অবিচার সংঘটিত হবে। উদাহরণ স্বরূপ ধরুন-দুটি দেশ; একটি দেশের শাসনকর্তা স্রষ্টার দেয়া ন্যায়-অন্যায়ের মাপকাঠি দিয়ে বিচার করেন, স্রষ্টার দেয়া দণ্ডবিধি অনুসারে শাস্তি ও পুরষ্কার দেন, শাস্তির ব্যাপারে কাউকে ক্ষমা করেন না, কঠিন শাস্তিকে লঘুও করেন না। আপাতঃ দৃষ্টিতে তিনি নির্দয়, যালেম। অন্য দেশটির শাসক স্রষ্টার দেয়া ব্যবস্থাকে অতি কঠোর মনে কোরে নিজের তৈরী ব্যবস্থায় বিচার করেন, অপরাধীদের লঘুদণ্ড দেন বা মাফই কোরে দেন। আপাতঃ দৃষ্টিতে তিনি একজন সহৃদয় শাসনকর্তা। কিন্তু কোরানের সংজ্ঞা অনুযায়ী আল্লাহ(Allah)র দৃষ্টিতে প্রথম জন ন্যায়বান ও দ্বিতীয় জন যালেম। কারণ, প্রথম জনের দ্বারা স্রষ্টার নির্দ্ধারিত বিচার ও শাস্তি প্রয়োগের ফলে সমাজ থেকে অপরাধ প্রায় অন্তর্হিত হোয়ে যাবে, মানুষ নিরাপত্তায় ও শান্তিতে বাস কোরতে পারবে। দ্বিতীয় জনের সহৃদয়তায় লঘু শাস্তির ফলে অপরাধীরা উৎসাহিত হবে, দেশে অপরাধ বাড়বে এবং বহুলোক অপরাধের শিকার বা মযলুম হবে; অর্থাৎ ঐ সহৃদয় শাসকের কাজের ফলে সমাজের ওপর যুলম, অন্যায় হবে। এর উদাহরণ রেখে গেছেন আল্লাহ(Allah)র রসুল (দঃ)। একবার এক প্রভাবশালী ও সম্ভ্রান্ত বংশীয় মহিলা চুরি কোরেছেন বোলে বিচারে প্রমাণিত হলো। এই শেষ ইসলামে(Islam)র (পূর্ববর্তী কোন কোন ইসলামে(Islam)ও ছিলো) দণ্ডবিধিতে (Panel Code) চুরির শাস্তি হলো হাত কেটে দেয়া। সমাজে ঐ মহিলার অত্যন্ত সম্মানিত অবস্থার কথা বিবেচনা কোরে অনেক নেতৃস্থানীয় আসহাব (রাঃ) মহানবীকে (দঃ) ক্ষমা প্রদর্শন কোরতে অনুরোধ কোরলেন। রসুলাল্লাহর (দঃ) চেয়ে দয়াল আর কে আছেন বা ছিলেন? যাকে স্বয়ং আল্লাহ(Allah) রউফুর রহীম এবং রাহমাতুলি্লল আলামিন বোলে আখ্যায়িত কোরেছেন? নিশ্চয়ই নয়। কিন্তু সেই রউফুর রহীম (দঃ) তার প্রিয় আসহাবের অত অনুরোধ সত্ত্বেও সেই প্রভাবশালী মহিলাকে ক্ষমা কোরলেন না। বোললেন- আমার মেয়ে ফাতেমাও (রাঃ) যদি চুরি করে তবে তার হাতও কেটে ফেলতে আমি আদেশ দেব। তিনি যদি দয়া কোরে ঐ মহিলাকে ক্ষমা কোরে দিতেন, তবে তিনি স্রষ্টার দেয়া ব্যবস্থা অমান্য কোরতেন, অন্যায় অর্থাৎ যুলম কোরতেন। যুলম শব্দের অর্থ আরও ব্যাপক। মনে করুন আপনি দেয়ালের গায়ে একটি পেরেক লাগাবেন। আপনি হাতুড়ী দিয়ে ঐ পেরেক না ঠুকে আপনার টেবিলে রাখা ধাতব একটা ছাইদানী বা ফুলদানী দিয়ে পেরেকটা ঠুকলেন। আপনার দেয়ালে পেরেক ঠোকা হবে ঠিকই, কিন্তু আপনি ঐ ছাইদানী বা ফুলদানীর ওপর যুলম কোরলেন, অন্যায় কোরলেন, কারণ ওগুলো পেরেক ঠোকার জন্য তৈরী হয়নি।

তৃতীয় শব্দটি সবর। এ শব্দটিও কোরানে গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল কোরে আছে এবং আল্লাহ(Allah) বহুবার ব্যবহার কোরেছেন। কাজেই এর প্রকৃত অর্থ জানা প্রয়োজন। বর্তমানে এর অর্থ করা হয় ধৈর্যধারণ করা, চুপচাপ সহ্য করা ইত্যাদি। অর্থাৎ শব্দগুলি শোনার সঙ্গেই মনে একটা জড়তা, অসাঢ় ভাবের সৃষ্টি হয়, ইংরেজীতে যাকে বলে Passive অক্রিয়। কিন্তু সবর শব্দের আসল অর্থ, অর্থাৎ যে অর্থে আল্লাহ(Allah) ও রসুল (দঃ) ব্যবহার কোরেছেন তা বর্তমানে চালু অর্থের ঠিক বিপরীত। প্রচণ্ড গতিশীল (Dynamic) ইসলাম(Islam)কেই যেমন স্থবির (Static) কোরে ফেলা হোয়েছে, তেমনি কোরানের সবর শব্দটার অর্থকেও নিষ্ক্রিয় (Passive, inert) অর্থে নেয়া হোচ্ছে। এর প্রকৃত অর্থ হলো কোন উদ্দেশ্য অর্জন কোরতে অটলভাবে সমস্ত কিছু সহ্য করা। যত বাধা আসুক, যত বিপদ-আপদ আসুক, যত কষ্ট হোক, কিছুতেই হতাশ না হোয়ে, ভেংগে না পড়ে, সুদৃঢ়ভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া। অর্থাৎ এই শব্দের অর্থ সম্পূর্ণভাবে সক্রিয় (Active এবং Dynamic)। উদাহরণ হিসাবে কোরানে আল্লাহ(Allah) মো'মেন মুজাহিদদের অনেক জায়গায় জেহাদে এবং কিতালে অর্থাৎ যুদ্ধে সবর কোরতে বোলেছেন। আজ-কালকার বিকৃত অর্থ নিলে প্রথমতঃ যুদ্ধেই যাওয়ার প্রয়োজন নেই এবং নেহায়েৎ গেলেও শত্রুর সামনে লাইন কোরে মাটিতে বোসে থাকতে হবে। শত্রু এসে যতই মারুক, পিটুক, ধৈর্য ধোরে বোসে থাকতে হবে; অর্থাৎ যুদ্ধে যাওয়ারই কোন অর্থ হয় না। আল্লাহ(Allah) সে অর্থে জেহাদে সবর কোরতে বলেন নি। তিনি সবর কোরতে বোলেছেন মানে শত্রু যত বেশী হোক, শক্তিশালী হোক, আমাদের যত কষ্ট-বিপদ-অসুবিধা-ভয় হোক, কোন কিছুতে ভ্রুক্ষেপ না কোরে একটুকুও বিচলিত না হোয়ে প্রাণপণে যুদ্ধ, সংগ্রাম, প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে, পরাজয় স্বীকার কোরবে না। এই হোচ্ছে প্রকৃত সবর। সবর শব্দের সবচেয়ে কাছাকাছি ইংরেজী শব্দ হচ্ছে Perseverance এবং বাংলা ‘সংকল্পের দৃঢ়তা'। শুধু যুদ্ধে নয়, জীবনের প্রতি ক্ষেত্রে, এমন কি পার্থিব কাজেও সবরের ফল কৃতকার্যতা, সফলতা। যে ব্যবসায়ী সবর নিয়ে ব্যবসা কোরবে সে সফলকাম হবে, যে শিল্পী সবর নির্ভর কোরে শিল্পকার্য কোরবে সে বিখ্যাত হবে ইত্যাদি। কারণ এটা প্রাকৃতিক নিয়ম যে নিয়মের ওপরই পূর্ববর্তী ও শেষ ইসলাম(Islam) প্রতিষ্ঠিত। আল্লাহ(Allah) বোলেছেন- আমি স্বয়ং সবর অবলম্বনকারীদের সাথে আছি (কোরান- সূরা আল-বাকারা-১৫৩)। যারা নিষ্ক্রিয়, অসাঢ়, জড় সবর নিয়ে বোসে আছেন বোসে বোসে অন্যায়-যুলমকে মুখ বুঁজে সহ্য করাকেই সবর ভাবছেন তারা আল্লাহ(Allah) কোরানে যে সবরের কথা বোঝাচ্ছেন সে সবরে নেই, তার উল্টোটায় আছেন, কাজেই আল্লাহ(Allah)ও তাদের সাথে নেই।

কোরানে আরও কিছু শব্দ আছে যেগুলোকে প্রকৃত অর্থে আজ নেয়া হয় না। এর আসল কারণ হলো ইসলামে(Islam)র উদ্দেশ্য, ও প্রক্রিয়া সম্বন্ধে আকীদার সম্পূর্ণ বিকৃতি। তিনটি অতি প্রয়োজনীয় শব্দ নিয়ে আলোচান কোরলাম। শব্দগুলির এই প্রকৃত অর্থ মনে রেখে কোরান পড়ে দেখবেন, কোরান নতুন আলোকে ধরা দেবে।

আকীদার এই বিকৃতি এই জাতিকে তার প্রকৃত লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য থেকে শুধু বিচ্যুতই করেনি, একেবারে বিপরীত দিকে চালনা কোরছে এবং তাই আল্লাহ(Allah), রসুল ইত্যাদি সম্বন্ধে দৃঢ় বিশ্বাস থাকা সত্ত্বেও কার্যতঃ মোশরেক ও কাফের হোয়ে গেছে এবং তাই আল্লাহ(Allah)র রহমত ও সাহায্য থেকে সম্পূর্ণভাবে বঞ্চিত হোয়ে আছে। পেছনে বোলে এসেছি এই জাতি যে সময় থেকে তার লক্ষ্যচ্যুত হলো অর্থাৎ সংগ্রাম ও সশস্ত্র সংগ্রাম ছেড়ে দিলো, ঠিক তখন থেকেই আকীদা বিকৃত হোতে শুরু হলো। কিম্বা বলা যায় আকীদা বিকৃত হবার ফলেই তারা সর্বশ্রেষ্ঠ কর্তব্য জেহাদ ছেড়ে দিলো। জেহাদ ছেড়ে দেবার ফলে যে সময় পাওয়া গেলো সে সময় ব্যবহার হোতে শুরু হলো এ দ্বীনের সূক্ষ্ম বিশ্লেষণে, যে কাজটা আল্লাহ(Allah) নিষেধ কোরে দিয়েছিলেন এবং যে কাজকে তার রসুল (দঃ) কুফর বোলে আখ্যায়িত কোরেছেন। ঐ অতি বিশ্লেষণের অবশ্যম্ভাবী পরিণতিতে এই ঐক্যবদ্ধ জাতি কেমন কোরে বহু মাযহাবে ও ফেরকায় টুকরো টুকরো হোয়ে গেলো তা পেছনে বোলে এসেছি, এবং এও বোলে এসেছি যে ঐ চুলচেরা বিশ্লেষণের অন্যতম অবশ্যম্ভাবী পরিণতিতে শুধু ঐ বিশ্লেষণকারী পণ্ডিত আলেমরা নন- গোটা জাতিরই দৃষ্টি সংকুচিত হোতে হোতে প্রায়ান্ধ হোয়ে গেলো। ঐ প্রায়ান্ধ দৃষ্টি নিয়ে তারা পরবর্ত্তিতে আকায়েদের (আকীদার বহু বচন) ওপর বহু বই কেতাব লিখেছেন, বহু পাণ্ডিত্যপূর্ণ বিশ্লেষণ কোরেছেন। কিন্তু শেরক, বহুত্ববাদ সম্বন্ধে তাদের আকীদা, দৃষ্টি ঐ প্রায়ান্ধতার কারনেই কাঠ-পাথরের মুর্ত্তির বাইরে দেখতে পারেনি। প্রাথমিক যুগের (অর্থাৎ ফেকাহকে একটা বিরাট জটিল শাস্ত্রে পরিণত করার যুগে) শেরক বোলতে অবশ্যই কাঠ-পাথরের দেব-দেবীদেরই বোঝাতো। তারপর ঐ যুগ শেষ হবার পর যখন নতুন তন্ত্রঃমন্ত্রের দেব-দেবীর যুগ শুরু হলো ততদিনে পরবর্তী যুগের ‘আলেম' পণ্ডিতদের নিজস্ব বোলতে কিছুই ছিলোনা। পূর্ববর্তী ফকিহদের চর্বিত চর্বন ছাড়া তাদের আর কিছু করার মত জ্ঞানও ছিলো না, দৃষ্টিও ছিলো না। ফিকাহ তখন বিশ্লেষণের শেষ প্রান্তে এসে স্থবির হোয়ে গেছে, ইজতিহাদের পথ বন্ধ হোয়ে গেছে। সুতরাং পরবর্তীতে যে ‘আলেম সমাজ' (এরা প্রকৃত আলেম নয়, এদের মুফতী বলা যায়) এই জাতির ধর্ম-কর্মের নির্দেশনা ও পরিচালনার ভার পান- তারা পূর্ববর্তী ফকিহ, মুজতাহিদদের পদাঙ্ক অনুসরণ কোরে কাঠ পাথরের মূর্তি পূজাকেই একমাত্র শেরক্ মনে কোরে তার বিরুদ্ধে অবিশ্রান্তভাবে লিখে গিয়েছেন এবং যাচ্ছেন। খুব যারা বেশী এগিয়েছেন তারা কবরকে সম্মান, কবর বাঁধাই, কবরে মোমবাতি জ্বালানো ইত্যাদি পর্য্যন্ত গেছেন। কিন্তু এই পণ্ডিতদের জ্ঞান স্থবির হোয়ে গেলেও, গতিশীলতা হারিয়ে ফেললেও আল্লাহ(Allah) তার সৃষ্টির মধ্যে যে গতিশীলতা ও বিবর্তণ দিয়ে দিয়েছেন তা তো আর স্থবির হোতে পারে না। তা ঠিকই এগিয়ে চলেছে এবং যথা সময়ে নতুন উপাস্য-ইলাহ গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, সাম্যবাদ, একনায়কত্ব, ধনতন্ত্র ইত্যাদির জন্ম দিয়েছে। কিন্তু যখন এই নতুন দেব-দেবীরা জন্ম নিলো তখন এই দ্বীনের যারা নিয়ন্ত্রক, ধারক-বাহক অর্থাৎ, আমরা যাদের ‘আলেম' বোলে জানি তারা এবং তাদের চিন্তাধারা স্থবির (Static)হোয়ে গেছে, বর্তমান সম্বন্ধে তারা অজ্ঞ, পূর্ববর্তী আলেমরা যা নির্দ্ধারিত কোরে গেছেন তার বাইরে কোন কিছু চিন্তা করা বা বোঝা তাদের সাধ্যের বাইরে। সুতরাং নতুন দেব-দেবীর জন্মের পরও তাদের দৃষ্টি আগের সেই কাঠ-পাথরের মুর্ত্তিপূজার শেরকের মধ্যেই নিবদ্ধ রইলো, তা থেকে ফিরে নতুন মুর্ত্তিগুলিকে দেখতে পেলো না, চিনতেও পারলো না, সেগুলিকে নতুন এলাহ বোলে চিহ্নিতও কোরতে পারলো না। ফকিহরা এবং তাদের অনুসারী গত কয়েক শতাব্দীর ‘আলেম', ‘ধর্মীয় নেতারা’ চৌদ্দশ' বছর আগের সেই লা'ত, মানাত, ওজ্জার দিকেই তাকিয়ে রোইলেন। তারা বুঝলেন না যে হাবলের জায়গায় গণতন্ত্র নিয়ে নিয়েছে, মানাতের জায়গায় এসে বোসেছে সমাজতন্ত্র, ওজ্জার আসনে এসে বোসেছে ধনতন্ত্র, কালী মূর্ত্তির জায়গায় দাঁড়িয়ে গেছে ফ্যাসিবাদ, লা'তের আসনে রাজতন্ত্র।

ইসলামী(Islam) চিন্তাবিদ, লেখক ও ধর্মের নেতাদের এই দুর্ভাগ্যজনক ব্যর্থতার ফলে আজ একশ' কোটির এই জাতি আল্লাহ(Allah) ও তার রসুলকে (দঃ) পূর্ণভাবে বিশ্বাস কোরেও, বহু নামায, রোজা, হজ্ব, তাহাজ্জদ, মোরাকেবা, মোশাহেদা কোরেও আকীদার বিকৃতির ফলে এই নতুন দেব-দেবীদের স্বীকার ও গ্রহণ কোরে মোশরেক ও কাফের হোয়ে আছে এবং তাই আল্লাহ(Allah)র রহমত থেকে বঞ্চিত ও পৃথিবীতে ঘৃণিত। বর্তমান ‘মুসলিম(Muslim)' জাতিকে কার্যতঃ (De Facto) মোশরেক ও কাফের বলায় যদি কারো ক্রোধ উদ্দীপ্ত হয় তবে তাকে- তাদের স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে আল্লাহ(Allah) বহুবার এই প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে; যদি আমরা মোমেন হই তবে তিনি সর্বদিক দিয়ে আমাদিগকে দুনিয়ার সবার ওপর শ্রেষ্ঠ রাখবেন, দুনিয়ার কর্তৃত্ব আমাদের হাতে দেবেন। আমরা যদি মোমেন হোয়ে থাকি, মুসলিম(Muslim) হোয়ে থাকি এবং তারপরও যদি দুনিয়ার সবার ওপর শ্রেষ্ঠ না থেকে থাকি তবে স্বীকার কোরতে হবে যে আল্লাহ(Allah) তার প্রতিশ্রুতি পালন কোরছেন না (নাউযুবিল্লাহ), অন্য সিদ্ধান্ত অসম্ভব।

আকীদা অর্থাৎ দৃষ্টিভঙ্গী, সমগ্র ব্যাপারটা সম্বন্ধে একটা পূর্ণ দৃষ্টির (Concept) বিকৃতির আরেক ফল হলো এবাদত বোলতে কি বোঝায় সে সম্বন্ধে ভুল ধারণা। ‘ধর্মীয়' নেতাদের অতি সংকুচিত দৃষ্টির ফলে এবং তাদের শিক্ষার ফলে সাধারণ মানুষের মনে এবাদত শব্দের অর্থ নামায, রোযা, হজ্ব, যাকাত, মোরাকাবা, মোশাহেদা, যিকর, তসবিহ ইত্যাদি ‘ধর্ম-কর্ম'। এ ধারণা শুধু আংশিকভাবে সত্য। প্রকৃতপক্ষে এবাদত শব্দের অর্থ অনেক ব্যাপক। এক কথায় এবাদতের অর্থ বলা সম্ভব নয়, তবে যদি এক লাইনে বোলতে হয় তবে এবাদত হলো আল্লাহ(Allah) যে জিনিসকে যে কাজের জন্য সৃষ্টি কোরেছেন সেই কাজ সঠিকভাবে করা হলো এবাদত। আল্লাহ(Allah) বোলেছেন- তিনি যে এই বিশাল সৃষ্টি কোরেছেন, সে সৃষ্টির ছোট-বড় প্রতি অনু-পরমাণু তার এবাদত করে (কোরান-সূরা আন-নহল-৪৮, ৪৯)। এর অর্থ এই যে আল্লাহ(Allah) তার সৃষ্ট চাঁদ, সূর্য, আগুন, পানি, বাতাস, বিদ্যুৎ ইত্যাদি প্রত্যেক সৃষ্ট জিনিসকে যেটাকে যে কাজের জন্য সৃষ্টি কোরেছেন, যে নিয়ম বেঁধে দিয়েছেন ঠিক সেই মোতাবেক কাজ কোরে যাওয়া হলো সেই জিনিসের জন্য এবাদত। এই বিশাল সৃষ্টির প্রত্যেকটি পদার্থ অনিবার্যভাবে তাদের ওপর নির্দিষ্ট কর্তব্য কোরে যাচ্ছে অর্থাৎ স্রষ্টার এবাদত কোরে যাচ্ছে। মানুষও আল্লাহ(Allah)র সৃষ্ট এবং তাকেও তিনি সৃষ্টি কোরেছেন এবাদত করার জন্য। অর্থাৎ যে কাজের জন্য তাকে সৃষ্টি কোরেছেন সেইটা করাই হোচ্ছে মানুষের এবাদত। আল্লাহ(Allah) তার শেষ জীবন-বিধানের সংবিধান কোরানে বোলেছেন-"আমি মানুষকে আমার এবাদত ছাড়া আর কিছুই করার জন্য সৃষ্টি কোরিনি"(কোরান- সূরা আল-হুজরাত-৫৬)। বর্তমানে ‘এবাদত' শব্দ যে আকীদায় নেয়া হয় তা ঠিক হোলে মন্দিরে, মসজিদে, গীর্জায় বা ঘরে বোসে যে উপাসনা, ইত্যাদি ‘ধর্ম-কর্ম' করা হয়, এর বাইরে আর যা কিছু মানুষ করে- তা এবাদতের সংজ্ঞার, সীমার বাইরে করে, সুতরাং আল্লাহ(Allah)র আদেশ অমান্য করে। এবং তা হোলে এমন একটা মানুষও সৃষ্টি হয়নি যে এবাদতের ঐ সংজ্ঞা লংঘন করেনি এবং কোরছেনা। ‘ধর্ম-কর্ম' এবাদতের সংজ্ঞা নয়। ওগুলো সমগ্র এবাদতের অংশ মাত্র। আগুন, পানি, বাতাস, বিদ্যুৎ, মাটি, দূর-দূরান্তের নক্ষত্র, নেবুলা, গ্রহ এ গুলোর কোনটাই মসজিদে, মন্দিরে, চার্চে যেয়ে এবাদত করে না, কিন্তু তারা নিরবচ্ছিন্নভাবে, এক মুহুর্তেরও বিরতি ছাড়া আল্লাহ(Allah)র এবাদত কোরে যাচ্ছে। সূর্য তাপ-আলো বিকীরণ কোরছে, সে স্রষ্টার এবাদত কোরছে, চাঁদ সূর্য থেকে আলো নিয়ে তা প্রতিফলিত কোরে স্নিগ্ধ আলো বিলাচ্ছে, সে উপাসনা কোরছে; বাতাস মেঘপুঞ্জকে পৃথিবীর এখান থেকে ওখানে নিয়ে যেয়ে আবহাওয়া সৃষ্টি কোরছে, সে স্রষ্টার এবাদত কোরছে। এই এবাদত, উপাসনা শুধু প্রাকৃতিক সৃষ্টির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই, আল্লাহ(Allah)র সৃষ্ট প্রাকৃতিক সৃষ্টির সাহায্য নিয়ে মানুষ যেসব জিনিষ সৃষ্টি করে সেসব জিনিসও ঠিক তেমনিভাবেই আল্লাহ(Allah)র এবাদত করে। আপনি সুইচ টিপলেন, বালব জ্বলে উঠলো, বিদ্যুৎ আলো জ্বালিয়ে তার এবাদত করলো, অর্থাৎ যে কাজ করার জন্য সে সৃষ্ট হোয়েছে তাই করলো। এমনিভাবে লক্ষ কোটি সৃষ্ট জিনিষ যথাযথভাবে যে যেজন্য সৃষ্ট হোয়েছে তা কোরে যাচ্ছে, এবাদত কোরে যাচ্ছে, কোথাও কণা মাত্র বিচ্যুতি নেই। মানুষও সৃষ্ট, কিন্তু অন্যান্য সব সৃষ্টের সঙ্গে তার একটা মৌলিক তফাৎ আছে। সেটা হলো তার মধ্যে স্বয়ং স্রষ্টার আত্মা থাকার কারণে তার নিজস্ব ইচ্ছা-শক্তি আছে যা অন্য কোন সৃষ্টের মধ্যে নেই। ইচ্ছা হোলে এবাদত, যে জন্য তার সৃষ্টি, করবো, ইচ্ছা হোলে করবো না। এ শক্তি আর কোন সৃষ্টের নেই, ফেরেশতা অর্থাৎ দেব-দেবীদেরও নেই। কাজেই তা সত্ত্বেও মানুষ আল্লাহ(Allah)র এবাদত করে, কোরতে বাধ্য হয়। যেমন সে খেতে-পরতে, ঘুমাতে, প্রজনন কোরতে, সুখ-দুঃখে অনুভব কোরতে ইত্যাদি বহু রকম কাজে বাধ্য হয় যেগুলো এবাদত। তাই আল্লাহ(Allah) কোরানে, মুসলিম(Muslim)-অমুসলিম(Muslim), বিশ্বাসী-অবিশ্বাসী নির্বিশেষে মানুষকে তার ‘এবাদ' অর্থাৎ এবাদতকারী বোলে উল্লেখ কোরেছেন(কোরান- সূরা আল-আ'রাফ- ৩১, ৩২)। যে সব কাজের জন্য আল্লাহ(Allah) মানুষ সৃষ্টি কোরেছেন ধর্ম-কর্ম হোচ্ছে তার একটা অংশ। আল্লাহ(Allah)র নির্দিষ্ট কোরে নিষিদ্ধ কোরে দেয়া কাজ বাদে আর সব কাজ এবাদত, সব তার উপাসনা। তার বৈধ খাওয়া-দাওয়া, হাসি-কান্না, কথা-বার্তা, পছন্দ-অপছন্দ, স্নেহ-ভালবাসা, খেলা-ধূলা, উপার্জ্জন, সবই তার এবাদত।

কোন মন্তব্য নেই: