বৃহস্পতিবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০১১

২৩। ধর্ম-কর্মের ব্যর্থতা

উৎস: Islam and Dajjal
এর আগে আমি কয়েকবার মহানবীর (দঃ)রোযা ও তাহাজ্জুদের অর্থহীনতার একটি হাদীস উল্লেখ কোরে এসেছি, কিন্তু কোরেছি অতি সংক্ষেপে। ইসলামের(Islam) প্রকৃত আকীদা বুঝতে হোলে এই হাদীসটির প্রকৃত অর্থ বোঝা অতি প্রয়োজন। রসুলাল্লাহ (দঃ) বোলেছেন "এমন সময় আসবে যখন মানুষ রোযা কোরবে তা শুধু না খেয়ে ক্ষুধার্ত হোয়ে থাকা হবে, (অর্থাৎ রোযা হবে না) এবং রাত্রে তাহাজ্জুদ নামায পড়বে তা শুধু ঘুম নষ্ট করা হবে" (অর্থাৎ তাহাজ্জুদ হবে না)। এই হাদীসে মহানবী (দঃ) কাদের বোঝাচ্ছেন? অতি প্রথম কথাই হলো মানুষ বোলতে তিনি তাদের বোঝাচ্ছেন যারা নিজেদের মুসলিম বোলে মনে করি। কারণ তিনি অন্য নবীদের উম্মত খ্রীস্টান-ইহুদীদের সম্বন্ধে বোলছেন না। দ্বিতীয় কথা হলো হাজারো রকমের এবাদতের মধ্য থেকে মাত্র দু'টি তিনি বেছে নিয়েছেন। একটি রোযা অন্যটি তাহাজ্জুদ। তৃতীয় হলো এর একটা ফরদ-বাধ্যতামূলক, অন্যটি নফল- নিজের ইচ্ছাধীন। বিশ্বনবী (দঃ) পাঁচটি বাধ্যতামূলক ফরয এবাদত থেকে একটি এবং শত শত নফল এবাদত থেকে একটি বেছে নেয়ার উদ্দেশ্য হলো এই মনস্তত্তের দিক দিয়ে আল্লাহ(Allah) রসুল ও দ্বীনের ওপর পরিপূর্ণ ঈমান ছাড়া কারো পক্ষে এক মাস রোযা রাখা বা নিয়মিত তাহাজ্জুদ পড়া সম্ভব নয়। এমনকি মোকাম্মল ঈমান আছে এমন লক্ষ লক্ষ মানুষ আছে যারা তাহাজ্জুদ পড়েন না। অর্থাৎ রসুলাল্লাহ বোঝাচ্ছেন তাদের যাদের পরিপূর্ণ দৃঢ় ঈমান আছে আল্লাহ(Allah)-রসুল-কোরান ও ইসলামের(Islam) ওপর। এই হাদীসে তিনি মোনাফেক বা লোক দেখিয়ে করা যায় অর্থাৎ রেয়াকারীদের বোঝাননি। কারণ যে সব এবাদত লোক দেখিয়ে করা যায় অর্থাৎ মসজিদে যেয়ে নামায-হজ্জ-যাকাত ইত্যাদি একটিও উল্লেখ করেননি। মোনাফেক রিয়াকারী বোঝালে তিনি অবশ্যই এগুলি উল্লেখ করতেন যেগুলি লোক দেখিয়ে করা যায়। তিনি ঠিক সেই দু'টি এবাদত উল্লেখ কোরলেন যে দুটি মোনাফেক ও রিয়াকারীর পক্ষে অসম্ভব, যে দু'টি লোকজন দেখিয়ে করাই যায় না, যে দুটি পরিপূর্ণ ঈমান নিয়েও সবাই কোরতে পারে না। সুতরাং নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, তিনি ভবিষ্যত বাণী কোরেছেন যে এমন সময় আসবে যখন আমার উম্মতের মানুষ পরিপূর্ণ ঈমানের অধিকারী হোয়ে নামায-রোযা-হজ্জ-যাকাত-তাহাজ্জুদ ইত্যাদি সর্ববিধ এবাদত কোরবে কিন্তু কোন কিছুই হবে না, কোন এবাদত গৃহীত-কবুল হবে না। যদি দীর্ঘ এক মাসের কঠিন রোযা এবং মাসের পর মাস বছরের পর বছর শীত-গ্রীষ্মের গভীর রাত্রে শয্যা ত্যাগ করা তাহাজ্জুদ নিস্ফল হয়, তবে অন্যান্য সব এবাদত অবশ্যই বৃথা। এখন প্রশ্ন হোচ্ছে যারা শুধু পরিপূর্ণ বিশ্বাসী অর্থাৎ মোকাম্মল ঈমানদারই নয়, রোযাদার ও তাহাজ্জুদী ও তাদের এবাদত নিস্ফল কেন? তাছাড়া তাদের ইবাদতই যদি বৃথা হয় তবে অন্যান্য সাধারণ মুসলিমদের(Muslim) এবাদতের কি দশা?

মহানবীর (দঃ) ঐ ভবিষ্যৎ বাণীর একমাত্র সম্ভব উত্তর হোচ্ছে এই যে, তিনি যাদের কথা বোলছেন তারা গত কয়েক শতাব্দী ও আজকের দুনিয়ার মুসলিম নামধারী জাতি। আল্লাহ(Allah) ও তাঁর রসুল (দঃ) এই জাতির সম্মুখে যে উদ্দেশ্য স্থাপন কোরে দিয়েছিলেন আকীদার বিকৃতিতে জাতি তা বদলিয়ে অন্য উদ্দেশ্য স্থাপন কোরে নিয়েছে। আল্লাহ(Allah) রসুলের (দঃ) স্থাপিত উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য যে ঐক্যবদ্ধ, সুশৃংখল, দুর্জেয় যোদ্ধা চরিত্রের প্রয়োজন, সেই চরিত্র তৈরীর জন্য যে প্রশিক্ষণ- সেই প্রশিক্ষণ এবং আরও অন্যান্য ব্যাপারকে উর্দ্ধে স্থান দেয়া হয়েছে। উদ্দেশ্যই যেখানে নেই বা বিকৃত সেখানে প্রশিক্ষণের আর কোন দাম অর্থ থাকতে পারে না। কাজেই ঐসব প্রশিক্ষণ অর্থাৎ নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত ইত্যাদি সর্ব প্রকার এবাদত আজ নিস্ফল, অর্থহীন। এতে কোন সন্দেহ নেই যে আমার এই কথায় বর্তমানের এই জাতিটি- যেটা নিজেকে শুধু মুসলিম নয় একেবারে উম্মতে মোহাম্মদী বোলে নিজেকে মনে করে- এই জাতি তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠবে। বিশেষ করে ক্ষিপ্ত হোয়ে উঠবে এই জাতির সেই অংশ যেটা আল্লাহ(Allah) রসুলের কঠোর সতর্ক বাণী ও নিষেধ অগ্রাহ্য কোরে, সেরাতুল মুস্তাকীম ও দ্বীনুল কাইয়্যেমা (জীবনের সর্বক্ষেত্রে একমাত্র আল্লাহ(Allah)র দেয়া বিধান ছাড়া সমগ্র বিধান অস্বীকার, নামায ও যাকাত প্রতিষ্ঠা) ত্যাগ কোরে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের মাধ্যমে ফতোয়াবাজী কোরে জাতিকে শত টুকরোয় ভেঙ্গে খান খান কোরে দিয়েছেন। এবং ক্ষিপ্ত হোয়ে উঠবে সেই অন্য অংশটি যেটা আত্মার উৎকর্ষ ও আল্লাহ(Allah)র সান্নিধ্যের নাম কোরে জাতির সম্মুখে আল্লাহ(Allah) ও রসুলের (দঃ) স্থাপিত উদ্দেশ্য বদলিয়ে অন্য উদ্দেশ্য স্থাপন কোরেছেন, যে জাতিকে বিশ্ব নবী (দঃ) অস্ত্র হাতে দেশ থেকে বের কোরে যুদ্ধে ঠেলে দিয়েছিলেন সে জাতির হাত থেকে অস্ত্র ছিনিয়ে নিয়ে তসবিহ ধরিয়ে দিয়ে টেনে খানকায় বসিয়ে দিয়েছেন, জাতির বহির্মুখী দৃষ্টিভঙ্গীকে অন্তর্মুখী কোরে তাকে কাপুরুষে পরিণত কোরেছেন, সিংহকে ইদুরে পরিণত কোরেছেন। তাদের কাছে আমার সবিনয় নিবেদন, ঐ সহি হাদীসে রসুলুল্লাহ (দঃ) কাদের বোঝাচ্ছেন তা মেহেরবাণী কোরে ব্যাখ্যা করুন। মনে রাখবেন মহানবী (দঃ) নিস্ফল বোলছেন যে নির্দিষ্ট দুটি এবাদত ওদুটিই পূর্ণ ঈমান ছাড়া করা কারো পক্ষে সম্ভব নয়; দূর্বল ঈমান নিয়েও নয়, মোনাফেক বা লোক দেখানো তো প্রশ্নই ওঠে না, কারণ রোযা লোক দেখিয়ে করা যায় না, আর গভীর রাত্রে উঠে একা একা তাহাজ্জুদ পড়ায়, লোক দেখানো, রেয়ার প্রশ্নই উঠে না। যেসব এবাদত দুর্বল ঈমান নিয়ে করা যায়, মোনাফেকরা রেয়াকারীরা কোরতে পারে তার একটাও বিশ্বনবী (দঃ) উল্লেখ করেননি। অকপট সত্যান্বেষী মন নিয়ে চিন্তা কোরলে তারা দেখতে পাবেন যে আল্লাহ(Allah)র দেয়া জীবন ব্যবস্থাকে জাতীয় জীবনে অস্বীকার কোরে মানুষের তৈরী জীবন ব্যবস্থা গ্রহণ কোরে পরিণতিতে পৃথিবীতে যে অন্যায়-অবিচার শোষণ-রক্তপাত হোচ্ছে সে সবের বিরুদ্ধে সংগ্রাম না কোরে সে সব থেকে মুখ ফিরিয়ে যারা মহা এবাদতে মশগুল হোয়ে আছেন আল্লাহ(Allah) বিরোধী আদর্শ প্রচারে যারা প্রচণ্ড বিরোধ গড়ে তুলছেন না, যারা মসলাবাজী কোরে জাতীর ঐক্য ধ্বংস কোরে যাচ্ছেন তারাই হোচ্ছেন রসুলাল্লাহর (দঃ) ঐ ভবিষ্যতবাণীর লক্ষ্য। আল্লাহ(Allah) বোলছেন, এই জাতিকে লক্ষ্য কোরে বোলছেন, "তোমরাই শ্রেষ্ঠ জাতি (উম্মাহ) কারণ মানব জাতির মধ্যে থেকে তোমাদিগকে উত্থিত করা হয়েছে এই জন্য যে (তোমরা মানুষকে) সৎ কার্য করার আদেশ দান এবং অসৎ কাজ থেকে বিরত কোরবে, আল্লাহ(Allah)কে বিশ্বাস কোরবে (কোরান- সূরা আলে-ইমরান ১১০)।" অর্থাৎ এই উম্মাহকে মানব জাতির মধ্য থেকে সৃষ্টিই করা হোয়েছে মানুষকে অসৎ কাজ (আল্লাহ(Allah)র বিধানের বিরোধী কাজই হলো অসৎ কাজ) থেকে নিবৃত্ত করা ও সৎ কাজ (আল্লাহ(Allah)র বিধান অনুযায়ী কাজই হোচ্ছে শুধু সৎকাজ) করার আদেশ করার জন্য এবং এই কাজ করার জন্যই সে জাতি শ্রেষ্ঠ জাতি। যে বা যারা এবাদতের নাম কোরে আল্লাহ(Allah)র যিকরের নাম কোরে বা যে কোন ছুতোয় বিরোধীতার ভয়ে, পার্থিব ক্ষতির ভয়ে, যে জন্য তাদের মানবজাতির মধ্য থেকে উত্থিত করা সেই কাজ থেকে পালায় তবে সে বা তারা আর সেই শ্রেষ্ঠ জাতির মধ্যেই নেই এবং সুতরাং তাদের সব রকম এবাদত অর্থহীন নিস্ফল [যখন সৎকাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ করার দায়িত্ব পালনত্যাগ করে তখন মানুষের কোন আমল আল্লাহ(Allah)র দরবারে কবুল হয় না (হাদীস তিরবানী)]।

এইখানে আরও একটি কথা বুঝে নেয়া প্রয়োজন। কোরানের এই আয়াতে আল্লাহ(Allah) সৎকাজের জন্য যে শব্দটি ব্যবহার কোরেছেন সেটা হলো আদেশ, আরবীতে 'আমর'। আদেশ তখনই করা যায় যখন যে আদেশকে কাজে পরিণত করা যায়, অর্থাৎ কাজে পরিণত করার শক্তি থাকে, নইলে খুব জোর অনুরোধ করা যায়। অসৎ কাজ থেকে মানুষকে বিরত করার ব্যাপারেও তাই। মানুষকে অর্থাৎ সমাজকে সৎকাজ করার আদেশ এবং অসৎ কাজ থেকে বিরত রাখার শক্তি শুধু রাষ্ট্রের থাকে অন্য কারো নয়। অন্য যে কেউ কোরতে গেলে তাকে শুধু অনুরোধ বা কাকুতি-মিনতি কোরতে হবে। কিন্তু আল্লাহ(Allah) অনুরোধ শব্দ ব্যবহার করেননি, কোরেছেন 'আমর' আদেশ অর্থাৎ ঐ কাজ রাষ্ট্র-শক্তি হাতে নিয়ে কোরতে হবে। উপদেশ ও অনুরোধে যে ও কাজ হবে না তার প্রমাণ বর্তমান মানব সমাজ। এই সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ, অন্যায় কাজ থেকে মানুষকে বিরত রাখা যে আল্লাহ(Allah) উপদেশ, অনুরোধের মাধ্যমে করা বোঝাননি তা পরিষ্কার হোয়ে যায় তার কোরানের আরেকটি আয়াতে। তিনি বোলেছেন- এরা (মো'মেন) তারা, যাদের আমি তাদের পৃথিবীতে (বা পৃথিবীর যে কোন অংশে) ক্ষমতায় প্রতিষ্ঠিত করলে সালাত (নামায) কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং ন্যায়, সৎ কাজের আদেশ দেয়, এবং অন্যায়, অসৎ কাজ থেকে বিরত করে (কোরান- সূরা আল-হজ ৪১)। এখানে লক্ষ্য করুন-মানুষকে ন্যায় কাজের আদেশ এবং অন্যায় থেকে বিরত রাখার জন্য আল্লাহ(Allah) কী পূর্বশর্ত দিচ্ছেন। তিনি বোলছেন আমি তাদের পৃথিবীতে (বা পৃথিবীর যে কোন অংশে) ক্ষমতায় প্রতিষ্ঠিত করার পর, কারণ তিনি ভালো কোরেই জানেন যে, ন্যায় কাজের আদেশ ও মানুষকে অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখা এ দু'টোর কোনটাই সম্ভব নয় রাষ্ট্রশক্তি ছাড়া। এই আয়াতের একটি আয়াত আগে তিনি সশস্ত্র সংগ্রামের অনুমতি দিচ্ছেন। অর্থাৎ সশস্ত্র সংগ্রাম কোরে জয়ী হোয়ে, ক্ষমতায় প্রতিষ্ঠিত হয়ে তবে ঐ ন্যায় কাজের আদেশ ও অন্যায় থেকে বিরত রাখা। যারা অনুরোধ উপদেশ কাকুতি-মিনতি কোরে ঐ কাজ কোরতে চেষ্টা কোরছেন, তারা পণ্ডশ্রম কোরছেন।

কোন মন্তব্য নেই: