বৃহস্পতিবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০১১

২১। অর্থনৈতিক ব্যবস্থা

উৎস: Islam and Dajjal
এই বিষয়ে লেখার আগে প্রথমেই বোলে নেই যে আমি অর্থনীতিবিদ নই। শুধু যে অর্থনীতিবিদ নই তাই নয়, দুনিয়ার যত বিষয় আছে তার মধ্যে আমার কাছে সবচেয়ে জটিল ও দুর্বোধ্য বিষয় হোচ্ছে অর্থনীতি এবং বোলতে গেলে আমি এর কিছুই বুঝি না। অথচ জড়বাদী পাশ্চাত্যের চিন্তার প্রভাবাধীন সমস্ত পৃথিবীতে এখন বোধহয় এইটাই মানুষের কাছে সবচেয়ে প্রয়োজনীয়, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। দু'চার শতাব্দী আগে পর্য্যন্তও প্রাচ্যের বৌদ্ধ, জৈন, সনাতন ধর্মী ভারতীয় ইত্যাদির কাছে অর্থনীতির অত গুরুত্ব ছিলো না, পার্থিব জীবনের চেয়ে আত্মার ও চরিত্রের উৎকর্ষের সম্মান ছিলো বেশী। একটি কোটিপতির চেয়ে একজন জ্ঞানী, শিক্ষিত, চরিত্রবান কিন্তু গরীব লোককে সমাজ অনেক বেশী সম্মান করতো। আর শেষ ‘দ্বীনে ইসলাম(Islam)' হলো ভারসাম্যযুক্ত (Balanced)। যেমন সমস্ত দ্বীনটাই ভারসাম্যপূর্ণ। যে জন্য এই জাতিটাকে আল্লাহ(Allah) বর্ণনা কোরেছেন ভারসাম্যযুক্ত জাতি বোলে (কোরান- সূরা আল-বাকারা- ১৪৩)। অর্থাৎ এর উভয় জীবনই সমান গুরুত্বপূর্ণ। খ্রীস্টধর্মের বিফলতার জন্য যখন ইউরোপ জাতীয় জীবন থেকে এটাকে বাদ দিয়ে ধর্ম নিরপেক্ষতা বোলে এক নীতি উদ্ভাবন কোরে নিলো, তখন ওটার অর্থনীতি ধার করলো ইহুদীদের কাছে থেকে। কোরতে বাধ্য হলো; কারণ খ্রীস্টধর্মে ইহলৌকিক কোন আইন কানুন নেই সুতরাং অর্থনীতিও নেই। ঈসা (আঃ) এসেছিলেন শুধুমাত্র ইহুদীদের আধ্যাত্মিক সংশোধনের জন্য; ইহুদীদের জাতীয় অর্থাৎ রাজনৈতিক আর্থ-সামাজিক আইন দণ্ডবিধি ইত্যাদি মোটামুটি অবিকৃতই ছিলো। ইউরোপ ইহুদীদের কাছে থেকে অর্থনীতি ধার নিলেও অবিকৃত অবস্থায় নিলো না। তারা ওটার মধ্যে সুদ প্রবর্তন কোরে ধনতন্ত্রে পরিবর্তন কোরে নিলো। এ কাজটা অবশ্য ইহুদীরা আগেই কোরে নিয়েছিলো মুসার (আঃ) ব্যবস্থাকে পরিবর্তন কোরে। মানুষের তৈরী ব্যবস্থা সুষ্ঠু সমাধান দিতে পারে না, কাজেই এই অর্থনীতিও পারলো না। ফল হলো অন্যায়-শোষণ, জাতীয়, সম্পদের অসম বন্টন। এই অন্যায় যখন মানুষের সহ্যের সীমা অতিক্রম করলো তখন তার বিরুদ্ধে মাথা তুলে দাঁড়ালো আরেক অন্যায়; কার্ল মার্কসের রাষ্ট্রীয় পুঁজিবাদ, কমিউনিজম। এটাও সেই মানুষের তৈরী ব্যবস্থা সুতরাং অবশ্যম্ভাবী পরিণতি সেই অন্যায়, শুধু অন্য রকমের অন্যায়। কয়েক বছর আগে এই বইয়ের প্রথম পাণ্ডুলিপিতে লিখেছিলোম এটাও ব্যর্থ হবে। তখন কমিউনিজমের ব্যর্থতার কোন চিহ্ন ফুটে ওঠেনি, আমি ওকথা লিখেছিলাম এই নিশ্চিত জ্ঞানে যে আল্লাহ(Allah)র দেয়া ব্যবস্থা ছাড়া কারো তৈরী ব্যবস্থা প্রকৃত সমাধান দিতে পারে না, পারবে না। অর্থনীতির বিষয়ে আমার জ্ঞান থেকে ঐ ভবিষ্যৎ বাণী কোরেনি, ও জ্ঞান আমার নেই তা প্রথমেই বোলে এসেছি। যখন ঐ কথা লিখেছিলাম তখন ভাবিনি যে এত শীগগিরই এর ব্যর্থতা দেখতে পাবো। আজ কমিউনিজমের ধ্বংস আরম্ভ হোয়ে গেছে এ কথা আর প্রমাণ করার কোন প্রয়োজন নেই।

ইসলামের(Islam) অর্থনীতির উপর বড় বড় অর্থনীতিবিদদের অনেক বই আছে, অথচ আমি অর্থনীতির জটিলতা কিছুই বুঝি না, তা সত্ত্বে এ বিষয়ে কেন লিখছি এর জবাব হোচ্ছে এই যে- কেন জানিনা, এই বই আমাকে লিখতে হবে এই জন্যই কিনা জানিনা, এই দ্বীনের অর্থনীতির মূল ভিত্তি আল্লাহ(Allah) মেহেরবাণী কোরে বুঝতে দিয়েছেন; শুধু সেইটুকুই আমি লিখছি তার বেশী নয়। ভিত্তি বোলতে আমি বোঝাচ্ছি-নীতি, যে নীতির ওপর একটা ব্যবস্থা গড়ে ওঠে। পুঁজিবাদ, ধনতন্ত্রের নীতি হলো জনসাধারণের সম্পদ সাপটে এনে এক বা একাধিক স্থানে জড়ো করা। সমাজতন্ত্রের নীতি হলো জনসাধারণের সম্পদ রাষ্ট্রের হাতে তুলে নেওয়া। মূলে একই কথা, দু'টোই জনসাধারণকে বঞ্চিত করা। পুঁজিবাদে দেশের জাতির সম্পদ পুঞ্জীভূত করে সংখ্যালঘিষ্ঠ মানুষের হাতে ব্যাংক ইত্যাদির মাধ্যমে। যার ফলভোগ করে অতি অল্পসংখ্যক লোক এবং তারা সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষকে বঞ্চিত কোরে বিরাট ধনী হোয়ে যায়। আর সমাজতন্ত্র দেশের জাতির সম্পদ পুঞ্জীভূত করে রাষ্ট্রের হাতে। জনসাধারণকে দেয় তাদের শুধু খাদ্য, পরিধেয়, শিক্ষা ও চিকিৎসা, বাসস্থানের মত প্রাথমিক, মৌলিক প্রয়োজনগুলি, যদিও কার্যক্ষেত্রে তাও সুষ্ঠুভাবে কোরতে ব্যর্থ হোয়েছে। পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় সম্পদ পুঞ্জীভূত কোরে হাতে গোনা কতকগুলি কোটিপতি সৃষ্টি হয়, বাকি জনসাধারণ জীবনের প্রাথমিক মৌলিক প্রয়োজনগুলি থেকেও বঞ্চিত হয়। এই ব্যবস্থা যতটুকু পরিধিতে প্রয়োগ করা হবে ততটুকু পরিধিতেই ঐ ফল হবে। একটি ভৌগলিক রাষ্ট্রে (Nation State) এ ব্যবস্থা প্রয়োগ কোরলে যেমন ঐ রাষ্ট্রের জনসাধারণের ভীষণ দারিদ্রের বিনিময়ে মুষ্টিমেয় কোটিপতি সৃষ্টি হবে ঠিক তেমনি পুঁজিবাদী ব্যবস্থা পৃথিবীময় প্রয়োগ কোরলে কয়েকটি ভৌগোলিক রাষ্ট্র বিপুল ধনী হোয়ে যাবে আর অধিকাংশ রাষ্ট্র চরম দারিদ্রের মধ্যে পতিত হবে যেমন বর্তমানে হোয়েছে। এর কারণ হলো একটি ভৌগলিক রাষ্ট্রের সম্পদ যেমন সীমিত- তেমনি পৃথিবীর সম্পদও সীমিত। সীমিত যে কোন জিনিসকেই কোথাও একত্রিত করা, পুঞ্জিভূত করা মানেই অন্যস্থানে অভাব সৃষ্টি করা। একটা রাষ্ট্রের ভেতরই হোক, আর সমস্ত পৃথিবীতেই হোক, সেটার সম্পদ, যা সমস্ত মানব জাতির মধ্যে ছড়িয়ে থাকার কথা, সেটাকে যদি কোথাও পুঞ্জীভূত করা হয় তবে অন্যত্র অভাব সৃষ্ট হওয়া অবশ্যম্ভাবী। সমাজবাদী, পুঁজিবাদী ও কমিউনিষ্ট (Capitalist & Communist) এই সকল অর্থনৈতিক ব্যবস্থাই মানুষের তৈরী, গায়রুল্লাহর ব্যবস্থা। সুতরাং এর পরিণাম অবশ্যই অন্যায়-অবিচার। অন্যদিকে শেষ জীবন-ব্যবস্থায় অর্থনীতির প্রণেতা স্বয়ং স্রষ্টা, আল্লাহ(Allah)। এই ব্যবস্থার ভিত্তি নীতি হোচ্ছে সম্পদকে মানুষের মধ্যে দ্রুত গতিতে চালিত করা, কোথাও সঞ্চিত হোতে না দেওয়া। পুঁজিবাদ বোলছে সম্পদ খরচ না কোরে সঞ্চয় কর; সবার সঞ্চয় একত্র কর, পুঞ্জীভূত কর (ব্যাংকে), আল্লাহ(Allah) কোরানে বোলছেন খরচ কর, ব্যয় কর, সম্পদ জমা কোরোনা, পুঞ্জীভূত কোরোনা। অর্থাৎ ইসলামের(Islam) অর্থনীতি পুঁজিবাদী অর্থনীতির ঠিক বিপরীত। একটায় সঞ্চয় কর অন্যটায় ব্যয় কর। অন্যদিকে সমাজতন্ত্রী সাম্যবাদী অর্থনীতি ব্যক্তিগত মালিকানা নিষিদ্ধ কোরে জাতির সমস্ত সম্পদ রাষ্ট্রের হাতে পুঞ্জীভূত করে। এটাও ইসলামের(Islam) বিপরীত। কারণ, ইসলাম(Islam) ব্যক্তিগত মালিকানা সম্পূর্ণ স্বীকার করে এবং রাষ্ট্রের হাতে সম্পদ পুঞ্জীভূত করে না। পুঁজিবাদের ও সমাজতন্ত্রের যেমন আলাদা নিজস্ব অর্থনীতি আছে তেমনি ইসলামের(Islam) নিজস্ব অর্থনীতি আছে। এককথায় বোললে বোলতে হয় সেটা হচ্ছে সম্পদকে যত দ্রুত সম্ভব চালিত করা, কোথাও যেন সেটা স্থবির-অনঢ় না হোতে পারে। এই জন্যই কোরানে এই অর্থনীতির বিধাতা, বিধানদাতা বহুবার তাগিদ দিয়েছেন খরচ কর, ব্যয় কর, কিন্তু বোধহয় একবারও বলেননি যে, সঞ্চয় কর। যাকাত দেয়া, খারাজ, খুমস ও ওশর দেয়া এবং তার ওপর সাদকা দান ইত্যাদি খরচের কথা এতবার তিনি বোলেছেন যে, বোধহয় শুধুমাত্র তওহীদ অর্থাৎ জীবনের সর্বক্ষেত্রে একমাত্র আল্লাহ(Allah)কে প্রভু, এলাহ বোলে স্বীকার ও বিশ্বাস করা এবং জেহাদ ছাড়া অন্য কোন বিষয়ে এতবার বলেননি। কারণ, একটা জাতির এবং পরবর্তীতে সমগ্র পৃথিবীতে অর্থাৎ যে কোন পরিধিতে সম্পদ যথাযথ এবং বন্টনের জন্য প্রয়োজন হোচ্ছে সঞ্চয় নয় ব্যয়। একজনের হাতে থেকে অন্য জনের হাতে হস্তান্তর, অর্থাৎ গতিশীলতা। প্রতিটি হস্তান্তর যত দ্রুত হোতে থাকবে তত বেশী সংখ্যক লোক ঐ একই সম্পদ থেকে লাভবান হোতে থাকবে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় যে, ধরুণ একটা এক টাকার নোট। এই নোটটা যার হাতেই পড়লো, সে যথা সম্ভব শীঘ্র সেটা খরচ কোরে ফেলল। সে খরচ যেমন কোরেই হোক, কোন কিছু কিনেই হোক বা দান কোরেই হোক বা কাউকে ধার দিয়েই হোক বা কোন ব্যবসাতে বিনিয়োগ কোরেই হোক। ঐ নোটটা যদি সকাল থেকে রাত পর্য্যন্ত দশজন লোকের হাত বদলায় তবে ঐ এক দিনে নোটটা দশজন লোককে লাভবান করবে। আর যদি একশ' জনের হাত বদলায় তবে একশ' জনকে লাভবান কোরবে। কারণ প্রতিবার হাত বদলাবার সময় দু'জনের মধ্যে একজনকে অবশ্যই লাভবান হোতেই হবে। অর্থাৎ ঐ সীমিত সম্পদটা অর্থাৎ ঐ এক টাকার নোটটা যত দ্রুতগতিতে হাত বদলাবে যত দ্রুতগতিতে সমাজের মধ্যে চালিত হবে তত বেশী সংখ্যক লোককে লাভবান কোরবে; তত বেশী সংখ্যক লোক অর্থনৈতিক উন্নতি কোরবে এবং পরিণতিতে সমস্ত সমাজকে অর্থনৈতিক ভাবে উন্নত কোরবে, সম্পদশালী কোরবে। ঐ গতিশীলতার জন্য যে কোন পরিধির সীমিত সম্পদ সমাজে নিজে থেকেই সুষ্ঠুভাবে বন্টন হোয়ে যাবে কোথাও পুঞ্জীভূত হোতে পারবে না এবং হবার দরকারও নেই। সম্পদের এই গতিশীলতার জন্য নিজে থেকেই সুষম-সুষ্ঠু বন্টন হোয়ে যাবার কারণে একে রাষ্ট্রায়াত্ত করার কোন প্রয়োজন নেই, ব্যক্তির মালিকানাকে নিষেধ করারও কোন প্রয়োজন নেই। ব্যক্তি মালিকানা নিষিদ্ধ করার কুফল, যে কুফলের জন্য রাশিয়া আজও খাদ্যে-পণ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হোতে পারেনি এবং আজও আমেরিকা থেকে লক্ষ লক্ষ টন খাদ্য আমদানী কোরতে হয় সে কুফলও ভোগ কোরতে হয় না। যা হোক, উদাহরণ স্বরূপ যে এক টাকার নোটের কথা বোললাম, সেই নোটটা যদি সমস্ত দিনে কোন হস্তান্তর না হোয়ে কোন লোকের পকেটে বা কোন ব্যাংকে পড়ে থাকে তবে ওটার আসল মূল্য এক টুকরো বাজে ছেঁড়া কাগজের সমান। কারণ সারাদিনে সেটা সমাজের মানুষের কোন উপকার কোরতে পারলোনা, কারো অথনৈতিক উন্নতি কোরতে পারলো না। আবার বোলছি আল্লাহ(Allah)র দেয়া জীবন বিধানের অর্থনীতির বুনিয়াদ-ভিত্তি হলো সম্পদের দ্রুতথেকে দ্রুততর গতিশীলতা (Fast and still faster circulation of wealth)।

কেউ বোলতে পারেন- কেন? টাকার নোটটা অর্থাৎ সম্পদ পকেটে থেকে গেলে, বাক্সে ভরে রাখলে না হয় বুঝলাম ওটা উৎপাদনহীন, নিষ্ফল হোয়ে গেলো, কিন্তু ব্যাংকে জমা পুঁজি তো বিনিয়োগ করা হয় এবং তা উৎপাদনে লাগে। ঠিক কথা, কিন্তু ব্যাংকে জমা করা ঐ পুঁজি বিনিয়োগের গতি স্বাধীন মুক্ত হস্তান্তরের চেয়ে বহু কম, কোন তুলনাই হয় না। ব্যাংকের সম্পদ বিনিয়োগ কোরতে বহু তদন্ত আইন-কানুন লাল ফিতার দৌরাত্ম, এবং তারপরও ঐ বিনিয়োগের সুফল ভোগ করে সমাজের একটি বিশেষ শ্রেণীর মানুষ। শুধু ঐ শ্রেণীটি- যে শ্রেণীটি ইতিমধ্যেই সম্পদশালী, জনসাধারণের অনেক ঊর্দ্ধে। ব্যাংক কি যে চায় তাকেই পুঁজি ধার দেয়? অবশ্যই নয়। যে লোক দেখাতে পারবে যে, তার আগে থেকেই যথেষ্ট সম্পদ আছে কিন্তু আরো চাই, শুধু তাকেই ব্যাংক পুঁজি ধার দেয়, এটা সবারই জানা। যার কিছু নেই, যে ব্যাংকের কাছে যথেষ্ট পরিমাণ সম্পদ বন্ধক দিতে পারবে না তাকে ব্যাংক কখনো পুঁজি ধার দেয় না, দেবে না। এক কথায় তৈলাক্ত মাথায় আরও তেল দেয়া ধনীকে আরো ধনী করা, গরীবকে আরও গরীব করা। সুতরাং ঐ পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় সম্পদের সুষ্ঠু বন্টন অসম্ভব। শেষ ইসলামের(Islam) অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় জনসাধারণকে তাদের ব্যক্তিগত সম্পত্তির অধিকার থেকে বঞ্চিত কোরতে হয়নি সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার মত। জনসাধারণকে ব্যক্তিগত বা সমষ্টিগত ভাবে কোন অর্থনৈতিক উদ্যোগ-প্রচেষ্টাকেও নিষিদ্ধ কোরতে হয়নি। কারণ সম্পদের ঐ দ্রুতগতিই কোথাও সম্পদকে অস্বাভাবিকভাবে পুঞ্জিভূত হোতে দেবে না। পানির প্রবল স্রোত যেমন বালির বাঁধ ভেংগে দেয়, সম্পদের স্রোত তেমনি কোথাও সম্পদকে স্তুপীকৃত হোতে দেবে না। অথচ ব্যক্তিগত অর্থনৈতিক উদ্যোগ প্রচেষ্টার যে শক্তিশালী সুফল তারও ফল ভোগ কোরবে সমাজ। যে ব্যক্তিগত প্রচেষ্টাকে নিষিদ্ধ করার ফলে আজ সমাজতন্ত্রের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ভেংগে পড়েছে, আজ তারা বাধ্য হোচ্ছে মানুষকে ব্যক্তিগত সম্পত্তির ও অর্থনৈতিক প্রচেষ্টার মালিকানার অধিকার ফিরিয়ে দিতে। রাশিয়া ও চীনে এমনকি কিউবায় ইতিমধ্যেই এ নীতি বাস্তবায়নের কাজ শুরু হোয়ে গেছে।

আল্লাহ(Allah)র দেয়া শেষ জীবন-বিধান, দ্বীনে যে অর্থনীতি দিয়েছেন সেটার নীতি বোঝার মত কোরে লিখতে পারলাম কিনা জানিনা। যদি না পেরে থাকি তবে সেটা আমার অক্ষমতা, ব্যর্থতা। ধনতান্ত্রিক ব্যবস্থার মূলনীতি হোচ্ছে সুদ ভিত্তিক পুঁজিবাদ, পরিণাম হোচ্ছে নিষ্ঠুর, অমানবিক অর্থনৈতিক অবিচার, একদিকে মুষ্টিমেয় মানুষের হাতে বিপুল সম্পদ, তাদের পাশবিক ভোগ বিলাস; অন্যদিকে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনসাধারণের কঠিন দারিদ্র, অর্দ্ধাহার-অনাহার-মানবেতর জীবন যাপন। সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার মূলনীতি হোচ্ছে সমস্ত সম্পদ রাষ্ট্রায়ত্ত কোরে মানুষের ব্যক্তিগত সম্পত্তির অধিকার হরণ কোরে সম্পদ বন্টন। এ বন্টন শুধু মৌলিক প্রয়োজনের এবং তা-ও ঐ মানুষের শ্রম ও উৎপাদনের ওপর ভিত্তি কোরে। পরিণাম হোচ্ছে খাদ্য, বস্ত্র, ও ক্ষুদ্র বাসস্থানের বিনিময়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনসাধারনের আত্মাহীন যন্ত্রে পরিণত হওয়া ও মুষ্টিমেয় নেতৃবৃন্দের ভোগ-বিলাস ও প্রাচুর্যের মধ্যে বাস কোরে ঐ বঞ্চিত কৃষক শ্রমিক জনসাধারণের নেতৃত্ব করা। অর্থাৎ রাষ্ট্রীয় পুঁজিবাদ। ঐ দুই ব্যবস্থাই মানুষের-গায়রুল্লাহর সৃষ্টি এবং দুটোরই পরিণাম বৃহত্তর জনসাধারণের ওপর নিষ্ঠুর অবিচার, বঞ্চনা। শেষ দ্বীনের অর্থনৈতিক ব্যবস্থার মূলনীতি হোচ্ছে সমস্ত সম্পদকে যত দ্রুতসম্ভব গতিশীল কোরে দেওয়া এবং অর্থনীতিকে স্বাধীন-মুক্ত কোরে দেওয়া। প্রত্যেক মানুষের সম্পদ সম্পত্তির মালিকানা স্বীকার করা, প্রত্যেকের অর্থনৈতিক উদ্যোগ-প্রচেষ্টাকে শুধু স্বীকৃতি দেওয়া নয় উৎসাহিত করা (কোরান- সূরা আল-বাকারা- ২৭৫)। একদিকে অর্থনৈতিক উদ্যোগ প্রচেষ্টা অর্থাৎ ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্পকে আল্লাহ(Allah) উৎসাহিত কোরছেন অন্যদিকে ক্রমাগত বোলে চলেছেন খরচ কর, ব্যয় কর। উদ্দেশ্য সেই গতিশীল সম্পদের নীতি। পরিণাম সমাজের সর্বস্তরে সম্পদের সুষ্ঠু-সুষম বন্টন, দারিদ্রের ইতি। প্রশ্ন হোতে পারে এই নীতি অর্থাৎ সম্পদকে দ্রুতগতিশীল কোরে দিলে যে সম্পদের অমন সুষ্ঠু বন্টন হোয়ে মানুষের দারিদ্র লুপ্ত হোয়ে যাবে, তার প্রমাণ কি? এর জবাব হোচ্ছে ক) আমি পেছনে লিখে এসেছি, যে সিদ্ধান্ত সূত্র (Premise) হিসাবে আমরা আল্লাহ(Allah)কে স্বীকার ও স্রষ্টা হিসাবে নিয়েছি। সুতরাং স্রষ্টার দেয়া নীতি এবং ব্যবস্থাকে অবশ্যই নির্ভূল ও সঠিক বোলে গ্রহণ কোরতে হবে, নইলে তা যুক্তি-সঙ্গত হবে না। যিনি সৃষ্টি কোরেছেন, তিনিই ভুল কোরছেন এটা যুক্তি সঙ্গত নয় (Fallacious)। তিনি নিজেই বোলেছেন "যিনি সৃষ্টি কোরেছেন তোমরা কি তার চেয়ে বেশী জান?" তারপর নিজেই তার জবাব দিচ্ছেন "তিনি সর্বজ্ঞ" (কোরান- সূরা আল-মূলক- ১৪)। এ যুক্তির কোন জবাব নেই। খ) এই অর্থনীতি যখন প্রয়োগ হোয়েছিলো, তখন তার কি ফল হোয়েছিলো তা ইতিহাস। মানুষের অর্থনৈতিক উন্নতি এমন পর্য্যায়ে উন্নীত হোয়েছিলো যে- মানুষ যাকাত দেবার জন্য হন্যে হোয়ে ঘুরতো, লোক পেতোনা। তর্ক হোতে পারে, সেই বহু যুগ আগে এই অর্থনীতি সফল হোলেও এই আধুণিক যুগে তা কি সফল হবে? এর জবাব হোচ্ছে এই যে, পেছনে বোলে এসেছি এই দ্বীনের সমস্ত ব্যবস্থা সমস্ত আইন-কানুন দণ্ডবিধি সমস্তই প্রাকৃতিক নিয়মের ওপর প্রতিষ্ঠিত। তাই এর এক নাম দ্বীনে ফিতরাত, প্রাকৃতিক জীবন-ব্যবস্থা। প্রাকৃতিক নিয়ম অপরিবর্তনীয়। প্রাকৃতিক নিয়ম-আইন লক্ষ বছরে আগে যা ছিলো আজও তাই আছে, লক্ষ বছরে পরেও তাই থাকবে। আরও একটি প্রশ্ন হোতে পারে- সেটা হলো পুঁজিবাদী ব্যবস্থা যদি সঠিক না হোয়ে থাকে তবে ঐ ব্যবস্থায় পাশ্চাত্য জাতিগুলি এত প্রাচুর্যের মধ্যে বাস কোরছে কেমন কোরে? এর জবাব হোচ্ছে ক) পাশ্চাত্যের অতি ধনী জাতিগুলির মধ্যেও সম্পদের সুষ্ঠু বন্টন নেই, ওসব দেশে একটা ক্ষুদ্র শ্রেণী প্রচণ্ড ধনী, কোটি কোটি ডলার পাউণ্ডের মালিক, কিন্তু প্রতি দেশে গরীব, অতি গরীব, বস্তিবাসী আছে ভিখারী আছে। তবে এ কথা অনস্বীকার্য যে, ও সব দেশে গরীবের সংখ্যা কম; ভিখারীর সংখ্যা কম এবং সার্বিকভাবে সমাজ প্রাচুর্যের মধ্যেই বাস করে। কিন্তু এর কারণ আছে, বিবিধ কারণের মধ্যে সর্ব প্রধান কারণ হলো পাশ্চাত্যের ঐ জাতিগুলি এক সময়ে প্রায় সমস্ত পৃথিবীটাকে সামরিক শক্তি বলে অধিকার কোরে কয়েক শতাব্দী ধোরে শাসন ও শোষণ কোরে নিজেরা ধনী হোয়েছে। ঐ শোষিত দেশগুলির সম্পদ জড়ো হোয়েছে ঐসব দেশে। কাজেই স্বভাবতঃই অত সম্পদ উপচে পড়ে সমাজের অনেকটাকেই সমৃদ্ধ কোরেছে। কিন্তু এ অস্বাভাবিক অবস্থা অর্থনৈতিক সুবিচার নয়। মানব জাতির জন্য সুষম বন্টন নয়। এখানে একটা বিষয়ে মনে রাখতে হবে। এই দ্বীন এসেছে সমস্ত পৃথিবী, সমগ্র মানব জাতির জন্য, কাজেই এর দৃষ্টিক্ষেত্র পৃথিবীময় সমভাবে ব্যাপ্ত; কোন ভৌগোলিক সীমান্তে বা জাতিতে সীমাবদ্ধ নয়। অর্থনৈতিক সুষম-বন্টনের অর্থ ইসলামের(Islam) দৃষ্টিতে সমস্ত মানব জাতির মধ্যে সুষম বন্টনে। পুঁজিবাদ সম্বন্ধে পেছনে বোলে এসেছি সম্পদ কোন স্থানে জড়ো করা মানেই অন্য স্থানে অভাব সৃষ্টি করা। প্রাচ্যের দেশ গুলিকে নিস্বঃ কোরেই পাশ্চাত্য দেশগুলিতে সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলা হোয়েছে। এটা অর্থনৈতিক সুবিচার নয়, এটা ঘোরতর অন্যায়।

আরও একটি অতি প্রয়োজনীয় কথা মনে রাখতে হবে। সেটা হলো মানুষের অর্থনীতির সঙ্গে লোক সংখ্যার ঘনিষ্ঠ সম্বন্ধ রোয়েছে, যেমন রোয়েছে অর্থনীতির সঙ্গে রাজনীতির সম্বন্ধ। সবগুলিই অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত এবং একটা অপরটার ওপর নির্ভরশীল। এর কোনটারই একক কোন সমাধান সম্ভব নয়। শেষ ইসলামে(Islam)ও তাই; এবং যেহেতু এটা সমস্ত পৃথিবী এবং সম্পূর্ণ মানবজাতির জন্য এসেছে, তাই এর সমস্ত বিধান, সমস্ত সমাধানেরই পটভূমি গোটা পৃথিবী। কোন সীমিত পরিধির মধ্যে এর প্রয়োগ সম্পূর্ণভাবে ফলদায়ক হবে না। শুধু আংশিক ভাবে হবে। উদাহরণ স্বরূপ যদি কোন ভৌগলিক রাষ্ট্রে (Nation State) এর শুধু অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রয়োগ ও প্রতিষ্ঠা করা হয় তবে ঐ রাষ্ট্রে প্রভূত অর্থনৈতিক উন্নতি হবে সম্পদের যথেষ্ট সুষম বন্টন হবে। কিন্তু পৃথিবীর সমস্ত ভৌগলিক সীমানা নিশ্চিহ্ন কোরে দিয়ে সমস্ত মানব জাতিকে এক মহা জাতিতে পরিণত কোরে দিলে যতখানি উন্নতি হবে, যত সুষম সম্পদ বন্টন হোয়ে সমস্ত বৈষম্য মিটে যাবে তেমন হবে না। এইজন্য শেষ ইসলামে(Islam) সম্পদ কোথাও পুঞ্জীভূত করা যেমন নিষিদ্ধ তেমনি নিষিদ্ধ পৃথিবীর বুকের ওপর কাল্পনিক দাগ টেনে টেনে এক মানব জাতিকে বহু ভৌগলিক রাষ্ট্রে বিভক্ত কোরে কোথাও অতিরিক্ত জনসংখ্যার জন্য শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থার সৃষ্টি করা, আর কোথাও জনবিরল কোরে রাখা। স্রষ্টার দেয়া বিধান অস্বীকার কোরে আজ পৃথিবীময় দু'টোই করা হোচ্ছে এবং তার পরিণামে কোন ভৌগলিক রাষ্ট্র অতিরিক্ত জনসংখ্যার চাপে চরম দারিদ্র্যে নিস্পেষিত হোচ্ছে আর কোন ভৌগলিক রাষ্ট্র অতি অল্প জনসংখ্যা এবং প্রাকৃতিক সম্পদ সমৃদ্ধ বিরাট রাষ্ট্রে বিপুল সম্পদের মধ্যে মহানন্দে বাস কোরছে। অর্থাৎ পৃথিবীর সম্পদের সুষম-বন্টন হোচ্ছে না। এই মহা-অন্যায় রোধ করার জন্য আল্লাহ(Allah) যে বিধান মানুষকে দিয়েছেন সেটার অর্থনৈতিক নীতি যেমন সম্পদকে কোথাও একত্রিভূত না কোরে সেটাকে অবিশ্রান্তভাবে সমস্ত পৃথিবীময় ঘূর্ণায়মান রাখা (Fast circulating) তেমনি রাজনৈতিক নীতি হোচ্ছে জনসংখ্যা বেড়ে যেয়ে মানুষ যেন কোথাও পুঞ্জীভূত না হয় সেজন্য ভৌগলিক সীমান্ত নিষিদ্ধ করা। পেছনে আমি এক বালতি পানি ঢেলে দেওয়ার একটা উদাহরণ দিয়ে এসেছি শেষ ইসলামের(Islam) রাষ্ট্রনীতি বোঝানোর চেষ্টায়। এখানে ঐ উদাহরণটা আবার পেশ কোরছি। এক বালতি পানি মাটিতে (পৃথিবীতে) ঢেলে দিলে ঐ পানি চারদিকে ছড়িয়ে যাবে এবং স্বাভাবিক নিয়মেই (ফিতরাত) যেখানে গর্ত (দারিদ্র) থাকবে সেটা ভরে দেবে, যেখানে উঁচু (সমৃদ্ধি) থাকবে সেখানে যাবে না এবং ঐ পানি নিজে থেকেই তার সমতল খুঁজে নেবে। ঐ বালতির পানিকে জনসংখ্যা ও সম্পদ বোলে ধোরে নিলেই শেষ ইসলামের(Islam) অর্থনৈতিক ও জনসংখ্যার ব্যাপারে নীতি পরিষ্কার বোঝা যাবে। যতদিন মানুষ আল্লাহ(Allah)র দেয়া অর্থনৈতিক নীতি গ্রহণ ও প্রয়োগ না কোরবে ততদিন দ্রারিদ্র ও প্রাচুর্যের ব্যবধান ঘুচবে না, আর যতদিন মানুষ ‘এক জাতি'- এই নীতি গ্রহণ কোরে সমস্ত ভৌগলিক সীমান্ত মিটিয়ে না দেবে ততদিন পৃথিবীতে জাতিতে জাতিতে সংঘর্ষ-যুদ্ধ ও রক্তপাত (ফাসাদ ও সাফাকুদ্দিমা) বন্ধ হোয়ে শান্তি (ইসলাম) আসবে না। এই হোচ্ছে কঠিন সত্য। ইসলামের(Islam) শেষ সংস্করণের অর্থনীতি সম্বন্ধে আর দু'একটা কথা বোলে শেষ কোরছি। পুঁজির ঠিক বিপরীত অর্থাৎ ব্যয় করার ওপর এই অর্থনীতি ভিত্তি করা হোলেও ব্যক্তির সম্পদ সম্পূর্ণ ব্যয় কোরে নিজে রিক্ত হোয়ে যাওয়াও এর নীতি নয়। এই নীতির প্রণেতা আল্লাহ(Allah) বোলছেন- মানুষের প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদ ব্যয় কোরে ফেলো (কোরান- সূরা আল-বাকারা-২১৯)। কিন্তু আবার সতর্ক কোরে দিয়েছেন-"তারা (মো'মেনরা) যখন ব্যয় করে তখন অপব্যয় করেনা কিন্তু কার্পণ্যও করে না। তাদের ব্যয় করা মধ্যপন্থায় (কোরান- সূরা আল-ফোরকান- ৬৭)।" আবার বোলছেন-তোমাদের হাতকে কাঁধের সাথে কুঁচকে রেখোনা, [এটা আরবী ভাষার একটা প্রকাশভঙ্গী (Idiom) যা কার্পণ্য বোঝায়], আবার একেবারে প্রসারিতও কোরে দিওনা (কোরান- সূরা বনি-ইসরাইল- ২৯)।" অর্থাৎ নিজেদের প্রয়োজনকে বাদ দিয়ে সব দান কোরে নিজেরা নিঃস্ব হোয়ে যেওনা। শেষ ইসলামের(Islam) সমস্ত কিছুর মধ্যে যে ভারসাম্যের কথা বোলে আসছি এখানেও সেই ভারসাম্য, ‘মধ্যপথ'( কোরান- সূরা আল বাকারা ১৪৩) সেরাতুল মুস্তাকীম।

ধনতান্ত্রিক পুঁজিবাদী ব্যবস্থা যে অমানবিক, এটা যে ধনীকে আরও ধনী গরীবকে আরও গরীব করে, একথা আজ যুক্তি-তর্ক দিয়ে প্রমাণ করার দরকার নেই। এই ব্যবস্থার নিষ্ঠুর পরিণতি দেখেই মানুষ বিকল্প ব্যবস্থা খুঁজেছিলো, যদি উম্মতে মোহাম্মদী তাদের ওপর আল্লাহ(Allah)র রসুলের (দঃ) অর্পিত দায়িত্ব ত্যাগ কোরে পরিণামে একটি বিচ্ছিন্ন ঐক্যহীন, অশিক্ষিত, ঘৃণ্য জাতিতে পরিণত না হতো তবে পুঁজিবাদের বিকল্প ব্যবস্থা মানুষকে খুঁজতে হতো না। তাদের ওপর আল্লাহ(Allah)র দেয়া অর্থনৈতিক ব্যবস্থা উম্মতে মোহাম্মদীই প্রতিষ্ঠা কোরে সর্ব রকম অর্থনৈতিক অবিচার নির্মুল কোরে দিতো। যাই হোক, উম্মতে মোহাম্মদী তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হওয়ায় মানুষকে পুঁজিবাদী ব্যবস্থার একটা বিকল্প ব্যবস্থা উদ্ভাবন কোরতে হলো এবং সেটা করা হলো এবং স্বভাবতঃই সেটা ঐ পুঁজিবাদের মতই হলো মানুষ দ্বারা সৃষ্ট এবং সে স্রষ্টা হোলেন কার্ল মার্কস। জয়জয়কার পড়ে গেলো- পাওয়া গেছে, মানুষের অর্থনৈতিক সমস্যার প্রকৃত সমাধান পাওয়া গেছে। আর অর্থনৈতিক অবিচার হবে না, প্রতিটি মানুষ অর্থনৈতিকভাবে সমান হবে, কেউ প্রাচুর্যে বিলাসে কেউ দারিদ্রে বাস কোরবে না। বলা হলো এই হোচ্ছে স্বর্গরাজ্য। কিন্তু হোয়েছে কি? সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলির নেতারা এবং সাধারণ নাগরিক শ্রমিক-কৃষক একই মানের জীবন যাপন করেন কি? একই মানের খাবার খান কি? একই রকম পোষাক পরিচ্ছদ পড়েন কি? অবশ্যই নয়। এই কথায় গত মহাযুদ্ধের একটা ঘটনার কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। পুঁজিবাদী ইংল্যাণ্ডের প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল মস্কো গিয়েছিলেন, কমিউনিস্ট রাশিয়ার রাষ্ট্রনেতা জোসেফ স্ট্যালিনের সাথে যুদ্ধের ব্যাপারে বুদ্ধি পরামর্শ করার জন্য। ক্রেমলিনের বিরাট প্রাসাদে বোসে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা কোরতে কোরতে গভীর রাত্রে চার্চিলের ক্ষিধে পেয়ে গেলো, যদিও রাত্রের প্রথম দিকে তারা যে ভোজ খেয়েছিলেন তা রাশিয়ার সাধারণ মানুষ, শ্রমিক, কৃষক জীবনেও দেখেনি। যাই হোক, ক্ষিধে চাপতে না পেরে চার্চিল বোলেই ফেললেন যে কিছু না খেলে আর চোলছে না। খাওয়া-দাওয়ার পাট আগেই চুকে গিয়েছিলো বোলে স্ট্যালিন আর কাউকে ডাকাডাকি না কোরে উঠে গিয়ে ফ্রিজ খুলে ভেড়ার একটি আস্ত রানের রোস্ট বের কোরে এনে টেবিলে রাখলেন। চার্চিল তো চার্চিলই, এক হাত নেবার লোভ সামলাতে পারলেন না। রোস্ট চিবুতে চিবুতে বোললেন "ইস! কবে আমি এমন কোরতে পারবো যে ইংল্যাণ্ডের প্রতিটি ঘরে ফ্রিজের মধ্যে এমনি ভেড়ার রানের রোস্ট থাকবে"। স্ট্যালিনের গালে এটা ছিলো একটা মারাত্মক চড়। অর্থনৈতিক সাম্যবাদের দেশে রাশিয়ার ঘরে ঘরে ফ্রিজের মধ্যে রানের রোস্ট নেই, স্ট্যালিনের প্রাসাদের ফ্রিজে আছে। কিন্তু বলার কিছু ছিলোনা। স্ট্যালিনকে চুপ কোরে চড়টা হজম কোরতে হোয়েছিলো। স্ট্যালিন যখন চার্চিলকে রানের রোস্ট খাওয়াচ্ছিলেন ও খাচ্ছিলেন, তখন তুমুল যুদ্ধ চোলছে। হিটলারের বাহিনী মস্কোর কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। লক্ষ লক্ষ রাশিয়ান অর্ধাহারে অনাহারে থেকে প্রাণপণে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। হাজার হাজার সৈনিক প্রচণ্ড শীতে জমে মারা পড়ছে। অনেকটা অনুরূপ অবস্থায় এই শেষ জীবন-ব্যবস্থার নেতারা কি কোরেছেন তার একটা তুলনা দেয়া দরকার। এই ইসলাম(Islam) যখন ইসলাম(Islam) ছিলো- অর্থাৎ বিশ্বনবীর (দঃ) কাছ থেকে যারা সরাসরি শিক্ষা-গ্রহণ কোরেছিলেন, তাদের অন্যতম, দ্বিতীয় খলিফা ওমরের (রাঃ) সময় দুর্ভিক্ষ হোয়েছিলো। যতদিন দুর্ভিক্ষ ছিলো ততদিন দুর্ভিক্ষ পীড়িত মানুষ যেমন অর্দ্ধাহারে অনাহারে থাকে তিনিও তেমনি থাকতেন। ওমর (রাঃ) প্রতিজ্ঞা কোরেছিলেন, যতদিন না জনসাধারণ এমন অবস্থায় পৌছবে যে তারা ভালো কোরে খাবার পরও উদ্বৃত্ত থাকবে ততদিন তিনি গোশত-মাখন এমনকি দুধ পর্য্যন্ত খাবেন না এবং খানও নি। তিনি বোলতেন "আমি যদি ঠিকমত খাই তবে আমি কী কোরে বুঝবো আমার জাতি কি কষ্ট সহ্য কোরছে?" এই অর্দ্ধাহারে অনাহারে থেকে খলিফা ওমরের (রাঃ) মুখ রক্তশূন্য ও চুপসে গিয়েছিলো। এই ঘটনা ও ওমরের (রাঃ) ঐ কথা গুলো ঐতিহাসিক সত্য (ইসলামের (Islam) কঠোর বিরুদ্ধবাদী, মহানবীকে (দঃ) প্রতারক, ভণ্ড বোলে প্রমাণ করার চেষ্টায় প্রথম সারির লেখক স্যার উইলিয়াম মুইর এর Annals of Early Caliphate এর ২৩২-২৩৩ পৃঃ দেখুন)।

দু'টো জীবন-ব্যবস্থা (দ্বীন); দু'টোরই দাবী হোচ্ছে মানুষের মধ্যকার অন্যায় অবিচার, বিলুপ্ত করা। দু'টোর নেতাদের মধ্যে অতবড় তফাৎ কেন? সভ্যতার ধ্বজাধারী বর্তমানের কোনও ব্যবস্থার রাষ্ট্রের কোনও প্রধান ওমরের (রাঃ) ঐ উদাহরণ দেখাতে পারবেন, পেরেছেন? অবশ্যই নয়। কারণ ও দ্বীনগুলি মানুষের সৃষ্ট, ভারসাম্যহীন-একচোখ বিশিষ্ট। ওগুলো মানুষের দেহের ও আত্মার ভারসাম্য কোরতে পারেনি। রাষ্ট্রের শক্তিতে একটা ব্যবস্থা মানুষের ওপর চাপিয়েছে কিন্তু মানুষের আত্মা, হৃদয়কে দোলাতে পারে নি, পারবেও না, তাই ব্যর্থ। এর অকাট্ট্য প্রমাণ হোচ্ছে যেসব দেশে সমাজতন্ত্র ও সাম্যবাদ (Communism) প্রতিষ্ঠিত সেইসব দেশের সাধারণ নাগরিকদের আচরণ। ঐসব দেশগুলির নেতৃত্বে যারা আছেন তারা ছাড়া বাকি বিরাট অংশ যার যার ‘স্বর্গরাজ্য' থেকে পালাবার চেষ্টায় ব্যস্ত। দেয়াল দিয়ে, কাঁটা তারের প্রাচীর দিয়ে সীমান্ত বন্ধ কোরে, পুলিশ ও সামরিক বাহিনীর কড়া প্রহরা বসিয়ে, এমন কি সীমান্তে মাইন পেতে রেখেও তাদের ফেরানো যাচ্ছে না। গত বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে এখন পর্য্যন্ত সাম্যবাদের ‘স্বর্গরাজ্য' থেকে পালাবার চেষ্টায় ঐসব দেশের হাজার হাজার লোক প্রাণ দিয়েছে, আহত হোয়েছে। কেমন সে স্বর্গ-যেখান থেকে মানুষ পালাবার জন্য জীবন বাজী রাখে, মৃত্যুর ঝুঁকি নেয়!

1 টি মন্তব্য:

নামহীন বলেছেন...

মহা সত্য উপস্থাপন কোরেছেন, মহামান্য এমামুযযামান