বৃহস্পতিবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০১১

৩৩। সংগ্রামের বিফলতার কারণ

ইবলিস ও তার সাঙ্গ-পাঙ্গদের প্ররোচনায় (ওয়াসওয়াসা) নবী-রসুলদের (আঃ) মাধ্যমে আল্লাহ(Allah) যে দ্বীনুল কাইয়্যেমা মানুষের জন্য প্রেরণ কোরেছেন তা অস্বীকার কোরে মানুষ নিজেরাই যে বিভিন্ন রকমের দ্বীন, জীবন-ব্যবস্থা সৃষ্টি কোরে সেই মোতাবেক তাদের রাষ্ট্রীয় ও সমষ্টিগত জীবন পরিচালনা কোরছে সেই সমস্ত রকম জীবন-ব্যবস্থা মিটিয়ে দিয়ে পৃথিবীময় আল্লাহ(Allah)র সার্বভৌমত্ব অর্থাৎ তওহীদ প্রতিষ্ঠা কোরে মানব জাতির মধ্যে জীবনের সর্বস্তরে ন্যায়-বিচার, সম্পদের সুষ্ঠু বন্টন কোরে শান্তি (ইসলাম) প্রতিষ্ঠা করার জন্য আল্লাহ(Allah) তার শেষ রসুলকে (দঃ) পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন; এ সত্য পেছনে কোরান হাদীস থেকে পরিষ্কার দেখিয়ে এসেছি। এ কথাও বোলে এসেছি যে, এই বিরাট কাজ কারো এক জীবনে সম্ভব নয়। তাই আল্লাহ(Allah)র রসুল (দঃ) একটি জাতি, উম্মাহ সৃষ্টি করলেন তাঁর চলে যাবার পর ঐ বিরাট কাজ চালিয়ে যেতে এবং তা পূর্ণ কোরতে। এই কাজ করার প্রক্রিয়া, তরিকা আল্লাহ(Allah) নির্দিষ্ট কোরে দিলেন সংগ্রাম, সশস্ত্র সংগ্রাম (কিতাল) [এবং যুদ্ধ কর তাদের (অবিশ্বাসীদের, তওহীদ বিরোধীদের) বিরুদ্ধে যে পর্য্যন্ত না সমস্ত অন্যায়-অবিচার নির্মূল হোয়ে যায় এবং দ্বীন (জীবন-ব্যবস্থা) সম্পূর্ণ ভাবে আল্লাহ(Allah)র হয়। সূরা আল-আনফাল- ৩৯]। সুতরাং তার রসুল (দঃ) সারা নবী জীবনের সাধনায় এমন একটি জাতি গঠন কোরলেন যেটাকে একটি জাতি না বোলে বরং একটি সামরিক বাহিনী বলাই সঠিক হয়। আল্লাহ(Allah)র নির্দেশে ব্যক্তিগতভাবে তার জাতিকে যুদ্ধের প্রশিক্ষণ দেওয়ার ফলে জাতির প্রতিটি মানুষ মৃত্যু-ভয়হীন দুর্দ্ধর্ষ যোদ্ধায় পরিণত হলো। তার পৃথিবী থেকে চলে যাবার পর নেতৃত্বের অভাব না হয় সেজন্য প্রথম দিকের যুদ্ধগুলি নিজে নেতৃত্ব দিয়ে পরে এক এক অভিযানে ভিন্ন ভিন্ন সম্ভাবনাময় যোদ্ধাকে সেনাপতি নিযুক্ত কোরে এমন শত শত সামরিক নেতৃত্ব সৃষ্টি কোরলেন যাদের প্রত্যেকে পরে বিশ্বের প্রখ্যাত রণ-নায়কদের শোচনীয় ভাবে পরাজিত কোরেছিলেন। এমনি কোরে একটি অজ্ঞাত, অশিক্ষিত, নিরক্ষর ও চরম দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে একটি অপরাজেয় যোদ্ধা জাতিতে পরিণত কোরে, তার উপর আল্লাহ(Allah)র দেয়া দায়িত্ব এই নতুন যোদ্ধা জাতির উপর অর্পন কোরে মহানবী (দঃ) তার স্রষ্টার কাছে চলে গেলেন। ইতিহাস সাক্ষী তার সৃষ্ট জাতিটি অর্থাৎ "উম্মতে মোহাম্মদী" তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব পূর্ণভাবে উপলব্ধি কোরে, তাদের বাড়ী-ঘর, ব্যবসা-বাণিজ্য, জমি-জমা, স্ত্রী-পুত্র এক কথায় দুনিয়া ত্যাগ কোরে অস্ত্র হাতে আরব থেকে বের হয়ে পড়েছিলেন। এই ‘উম্মাহ'র আকীদা এই ছিলো যে, এই কাজই হোচ্ছে সেই সুন্নাহ যে সুন্নাহর কথা আল্লাহ(Allah)র নবী (দঃ) বোলেছেন- যে বা যারা তার (দঃ) সুন্নাহ ত্যাগ করবে সে বা তারা তাঁর (দঃ) কেউ নয়, অর্থাৎ তাঁর উম্মাহ নয়।

৬০/৭০ বছরের মধ্যে অর্দ্ধেক পৃথিবীতে অন্যান্য সমস্ত দ্বীন নিষ্ক্রিয় কোরে এই শেষ দ্বীনের প্রতিষ্ঠা করার পর দুর্ভাগ্যক্রমে এই জাতির আকীদা বদলে গেলো, বিকৃত হোয়ে গেলো। আল্লাহ(Allah) ও তাঁর রসুল (দঃ) তাদের সামনে যে লক্ষ্য, উদ্দেশ্য স্থাপন কোরেছিলেন তা অদৃশ্য হোয়ে গেলো এবং অন্য লক্ষ্য, অন্য উদ্দেশ্য এসে সে স্থান দখল কোরে নিলো। কোন জিনিষের প্রকৃত উদ্দেশ্য যদি বিকৃত বা বদলে যায় তবে সে জিনিষের আর কোন দাম থাকে না। আকীদা বিকৃত হোয়ে উদ্দেশ্য বিকৃত হবার ফলে এই জাতি আর জাতি হিসাবে উম্মতে মোহাম্মদী রোইল না। এর পরের ঘটনা প্রবাহও ইতিহাস। সে ইতিহাস এই যে, নেতার (দঃ) সুন্নাহ পালনের কর্তব্য ত্যাগের ফলে এই জাতির ঐক্য ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হোয়ে গেলো, জাতির সর্ব প্রধান বৈশিষ্ট্য, অপরাজেয় যোদ্ধার চরিত্র শেষ হোয়ে গেলো, এবং যে শত্রুদের তারা সংখ্যায়, অস্ত্রে, সম্পদে বহু কম হোয়েও একদা শোচনীয়ভাবে পরাস্থ কোরেছিলো যুদ্ধে, সেই শত্রুর আক্রমণে পরাজিত হোয়ে তারা তাদের দাসে পরিণত হলো এবং দুই শতাব্দীর বেশী সময় ধোরে পশুর মত তাদের পদ সেবা করলো। এই বিপর্যয়ের কারণ পেছনে লিখে এসেছি, বুঝাতে পেরেছি কিনা জানি না। যাই হোক, গত কয়েক যুগ থেকে এই জাতি আবার পৃথিবীতে আপন স্থান অধিকারের জন্য চেষ্টা কোরছে, এই জীবন-ব্যবস্থাকে আবার তার প্রকৃত স্থানে অধিষ্ঠিত করার প্রচেষ্টা চোলছে। পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে এই সংগ্রাম চোলছে। এই প্রচেষ্টা, সংগ্রাম আরম্ভ হোয়েছে বেশ কয়েক যুগ আগে থেকে এবং এ পর্য্যন্ত বহু মূল্যবান প্রানও এ সংগ্রামে নিবেদিত হোয়েছে। মাঝারি এবং ছোট প্রচেষ্টা গুলিকে বাদ দিয়েও প্রধান যে কয়েকটি আন্দোলনের নাম করা যায়- তার মধ্যে মধ্য এশিয়ায় ইখওয়ানুল মুসলেমিন, এই উপমহাদেশে জামায়াতে ইসলামী, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় দারুল ইসলাম(Islam), আলজেরিয়ায় ইসলামিক স্যালভেশণ ফ্রন্ট, এবং জাম'য়া, মিশরে জেহাদ ও ইসলামিক গ্রুপ, তিউনিশিয়ায় আন-নাহদা ইত্যাদি। সবগুলিই যার যার এলাকায় ইসলাম(Islam) প্রতিষ্ঠা কোরতে ব্যর্থ হোয়েছে। এই আন্দোলনগুলি বিলুপ্ত হোয়ে যায় নি অবশ্য, তাই তারা স্বীকার কোরবেন না যে এগুলো ব্যর্থ হোয়েছে- কিন্তু প্রকৃত পক্ষে এই সব আন্দোলন এখন ব্যর্থ, যদিও এগুলির নেতৃত্ব ও কর্মীদের বিশ্বস্ততা (Sincerity), সততা এবং আন্তরিকতা সম্বন্ধে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই, এদের কোরবাণী সম্বন্ধেও সন্দেহের অবকাশ নেই। এদের অনেক নেতাকে ফাঁসি দেয়া হয়েছে, অনেক প্রাণ এরা কোরবাণী কোরেছেন। এদের ব্যর্থতার কারণ হচ্ছে- রসুলুল্লাহর (দঃ) জাতির, প্রকৃত উম্মতে মোহাম্মদীর আকীদার সঙ্গে এদের আকীদার এখনও অনেক ব্যবধান রোয়েছে, এবং আকীদার ব্যবধান রোয়েছে বোলেই তরীকার অর্থাৎ প্রক্রিয়াতেও অনেক তফাৎ রোয়েছে।

আল্লাহ(Allah)র রসুলের (দঃ) এবং তাঁর উম্মাতের অন্যতম আকীদা এই ছিলো যে, সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে প্রতিরোধকারীদের পরাজিত কোরে এই জীবন-বিধানকে সমস্ত পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা কোরতে হবে। এ ব্যাপারে ইতিহাস পরিষ্কার যে বিশ্বনবীর (দঃ) নিজের সংক্ষিপ্ত জীবনে আটাত্তুরটি যুদ্ধ ছাড়াও তার চলে যাবার পর ৬০/৭০ বছর পর্য্যন্ত তাঁর সৃষ্ট জাতি নিরবচ্ছিন্ন যুদ্ধ চালিয়ে যেয়ে যে বিজয় লাভ কোরেছিলো তাকে অমুসলিম ইতিহাসবেত্তারাও মানব জাতির ইতিহাসে অনন্য ও বিস্ময়কর বোলে বর্ণনা কোরেছেন। বর্তমানে যারা ইসলাম(Islam)কে আবার প্রতিষ্ঠিত কোরতে চাচ্ছেন তাদের সে আকীদা নেই। যেহেতু আকীদা এক নয়, কাজেই স্বভাবতঃই প্রক্রিয়াও এক নয়। বর্তমানে এরা বক্তৃতা, মিটিং, মিছিল কোরে ইসলাম(Islam) প্রতিষ্ঠা কোরতে চাচ্ছেন- তা কোন দিনও সফল হবে না। যদি হয়ও তবে সেটা মহানবীর (দঃ) মাধ্যমে প্রেরিত ইসলাম(Islam) হবে না। সেটা এমন একটা ইসলাম(Islam) হবে যেটার মধ্যে পৃথিবীর সমস্ত মানুষ প্রবেশ কোরলেও ইবলিসই জয়ী থাকবে, আল্লাহ(Allah) নয়। মিটিং-মিছিল কোরে ইসলাম(Islam) প্রতিষ্ঠা সম্ভব হোলে বিশ্বনবীর (দঃ) ও তাঁর আসহাবদের অমন সর্বস্ব কোরবাণী কোরে মহাবিপ্লব কোরতে হতো না। তা হলো তিনি ঘোষণা কোরতেন না- "জান্নাতের দরওয়াজাগুলি তলওয়ারের ছায়ার নীচে" [হাদীস- আবু মুসা (রাঃ) থেকে- বুখারী, মুসলিম(Muslim), মেশকাত]। বর্তমানের আন্দোলনগুলির মধ্যে ইখওয়ানুল মুসলেমিনের নেতা শহীদ সৈয়দ কুতুবের আকীদা এদিক দিয়ে অনেকটা ঠিক ছিলো। কারণ তার আকীদা ছিলো এই যে, ইসলামের জেহাদ অগ্রগামী নিজ উদ্যোগে আরম্ভ করা, আত্মরক্ষামূলক নয়, এবং ইসলাম(Islam) প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে ও প্রক্রিয়ায় কারো সাথে কোন আপোষ নাই। তার এ আকীদার ফলশ্রুতিতে তিনি ও তার বহু সহযোগী যোদ্ধা এই দ্বীনের সর্বশ্রেষ্ঠ পুরষ্কার সর্বশ্রেষ্ঠ সম্মান শাহাদাত লাভ কোরে বিনা বিচারে শ্রেষ্ঠ জান্নাতে প্রবেশ কোরেছেন। কিন্তু পরবর্তীতে তার অনুসারীরা তার আকীদা পরিত্যাগ কোরে শেরকের সাথে আপোষ করে এবং প্রক্রিয়া বদল কোরে মিটিং, মিছিল এবং গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচনে অংশ নিতে আরম্ভ করে এবং বর্তমানে তাদের দিয়ে আর কোন বিপ্লব সম্ভব নয়। অন্য একটি সংঘঠিত আন্দোলন ‘জামায়াতে ইসলামী'। অনেকটা সঠিক আকীদার কারণে ইখওয়ানুল মুসলেমীন প্রথম দিকে যেটুকু সাফল্য লাভ করেছিলো এই জামায়াতে ইসলামীর সেটুকুও নেই। এদের আকীদায় ইসলামে জেহাদ আত্মরক্ষামূলক। অর্থাৎ পরাজিত, হীনমন্যতায় আপ্লুত, অন্য জীবন বিধানে বিশ্বাসীদের কাছে কৈফিয়ত দান কারীদের যে আকীদা সেই আকীদা। এই আকীদায় বিশ্বাসীদের দ্বারা বিপ্লব অসম্ভব। এই জামায়াত গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। যদিও তারা জোর দিয়ে বলেন যে তাদের গণতন্ত্র পাশ্চাত্যের নয়, ইমলামী গণতন্ত্র। তারা বোঝেন না যে ইসলামে কোন ভেজাল দেয়া যায় না, দিলে সেটা আর ইসলাম(Islam) থাকে না। তাদের ইসলামী গণতন্ত্র যে প্রক্রিয়ায় ইসলাম(Islam) প্রতিষ্ঠা কোরতে চায় অর্থাৎ মিটিং, মিছিল, শ্লোগান, বক্তৃতা এবং গায়রুল্লাহর প্রক্রিয়ায় নির্বাচন কোরে-সেটা সেই পাশ্চাত্যের সরকারী ক্ষমতা দখলের প্রক্রিয়া, বিপ্লব নয়। ইসলাম(Islam)কে প্রতিষ্ঠা কোরতে একমাত্র পথ বিশ্বনবীর (দঃ) পথ, সে পথে মিটিং, মিছিল, শ্লোগান নেই, তিনি তা করেন নি। বক্তৃতা, মিটিং, মিছিল কোরে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার চেষ্টা আলজেরিয়ার ইসলামিক স্যালভেশন ফ্রন্টও কোরেছিলো এবং সে আন্দোলন জামায়াতে ইসলামীর চেয়ে অনেক বেশী সাফল্য লাভ কোরেছিলো, অর্থাৎ পাশ্চাত্যে-প্রথায় বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে নির্বাচনে জয় লাভ কোরেছিলো, যা জামায়াত আজও কোথাও পারেনি। কিন্তু সেখানে কি তারা ইসলামিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা কোরতে পেরেছে? পারে নি। অন্যরাও পারবে না ‘হেকমতের' দোহাই দিয়ে গায়রুল্লাহর, ‘তাগুতে'র সাথে আপোষ এবং তাদের ব্যবস্থা গ্রহণ কোরে কখনও ইসলাম(Islam) প্রতিষ্ঠা করা যাবে না।

‘হেকমতের' সাথে কাজ করার যুক্তি দেয়ার পরিস্থিতি রসুলুল্লাহর (দঃ) জীবনেও এসেছিলো। মক্কার মোশরেক নেতারা যখন তাকে আরবের বাদশাহ বানাতে প্রস্তাব দিয়েছিল এই শর্তে যে, তিনি (দঃ) তাদের দেব-দেবীগুলোর বিরুদ্ধে কথা বোলবেন না, তখন তিনি ‘হেকমতের' কথা চিন্তা কোরলে এই ভাবতে পারতেন যে, আরবের বাদশাহ হোলে আমি যা কোরতে চাই তা অনেক সহজ হোয়ে যাবে। কারণ তখনকার দিনের বাদশাহী আজকের দিনের বাদশাহদের মত ছিলোনা, তখনকার দিনের রাজা-বাদশাহরা ছিলেন সর্বেসর্বা, তাদের হুকুমই ছিলো আইন। মানুষের প্রাণের মালিক ছিলেন রাজা-বাদশাহরা। হাজার মানুষের মাথা কাটার হুকুম দিলেও তা বিনা প্রশ্নে কাটা হতো। মহানবী (দঃ) ভাবতে পারতেন কিছুদিনের জন্য দেব-দেবীদের বিরুদ্ধে কথা বলা বন্ধ কোরে রাজশক্তি হাতে নিয়ে আস্তে আস্তে সমাজকে বদলিয়ে তওহীদে পরিবর্তিত করলে তো খুব ‘হেকমতের' সঙ্গে কাজ করা হয়, তাতে অনেক কম কষ্ট হবে, অনেক প্রাণ বেঁচে যাবে, আমার কাজও হোয়ে যাবে। তিনি তা ভাবেন নি, করেনও নি। তিনি আপোষহীন সংগ্রাম ও বিপ্লবের পথ বেছে নিয়েছিলেন আর তাই তিনি (দঃ) মানব ইতিহাসের বৃহত্তর বিপ্লব সৃষ্টি কোরেছিলেন।

বিশ্বনবীর (দঃ) জীবন ও তার সৃষ্ট জাতিটির ইতিহাস পড়লে যে সত্যটি দিনের আলোর মত উদ্ভাসিত হোয়ে ওঠে তা হলো এই যে- তিনি (দঃ) তার সৃষ্ট সম্পূর্ণ জাতিটিকে একটি সামরিক বাহিনীতে পরিণত কোরেছিলেন। এই জাতির প্রতিটি মানুষ শুধু যে যোদ্ধায় পরিণত হোয়ে গিয়েছিলো তাই না, ভয়ঙ্কর, দুর্দ্ধর্ষ যোদ্ধায় পরিণত হোয়ে গিয়েছিলো, সমষ্টিগত ও ব্যক্তিগত উভয়ভাবে। সামান্য সংখ্যক লেখাপড়া জানা মানুষ ছাড়া আর সবাই ছিলেন নিরক্ষর। ঐ সামান্য সংখ্যক মানুষ ক'টিও অপরাজেয় দুর্দ্ধর্ষ যোদ্ধায় রূপান্তরিত হোয়ে গিয়েছিলেন এ কথা ইতিহাস। বিশ্বনবীর (দঃ) সৃষ্ট ঐ জাতিটির মধ্যে ফকির, দরবেশ, ফকিহ, মুফাসসিরদের ছড়াছড়ি ছিলো না। বর্তমানের বিকৃত আকীদার শিকার যারা ঐ জাতির মধ্যে দু'চার জনকে ফকিহ, মুফাসসির বোলে চিহ্নিত কোরতে চান, ইতিহাসে আমরা তাদেরকেও দেখতে পাই মহাযোদ্ধা হিসেবে- প্রতিটি যুদ্ধের ময়দানে। তাসাওয়াফকে গুরুত্ব দেবার চেষ্টায় যে একটিমাত্র মানুষ খুঁজে বের করা হোয়েছে সেই ওয়ায়েস করণী (রাঃ) তলোয়ার হাতে যুদ্ধক্ষেত্রে শহীদ হোয়েছেন। সমস্ত জাতিটির মধ্যে একটি মানুষও খুঁজে পাওয়া যেত না যার গায়ে একাধিক অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন ছিলো না। বিশ্বনবী (দঃ) জাতিটির চরিত্রে যে শৃংখলা প্রতিষ্ঠা কোরলেন, লক্ষ্য কোরলে দেখা যায় সেটাও সামরিক শৃংখলা। কারণ, শিক্ষা দিলেন-শুধু জাতীয় নেতা নয়, যে এলাকায় যে নেতা নিযুক্ত হবে তার প্রতিটি আদেশ-নির্দেশ-নিষেধ বিনা প্রশ্নে কাজে পরিণত কোরতে হবে। শিক্ষা দিলেন-কান কাটা নিগ্রো ক্রীতদাসও যদি নেতা নিযুক্ত হন তাহোলেও কোরতে হবে। যে শিক্ষার ফলে বিশিষ্ট, প্রথম স্তরের সাহাবা আবু যর (রাঃ) স্বয়ং রসুলুল্লাহর (দঃ) সুন্নাহ বিসর্জন দিলেন; যদিও তার পক্ষে সেটার প্রয়োজন ছিলোনা, কারণ মিনায় ওসমানের (রাঃ) মত তার কোন সম্পত্তি ছিলোনা। এখানে দেখুন স্বয়ং মহানবীর (দঃ) কাছ থেকে দ্বীন-ই ইসলাম(Islam) যিনি শিক্ষা কোরেছিলেন, তিনি সুন্নাহ এবং শৃংখলার মধ্যে কোনটার প্রাধান্য দিলেন এবং তার গুরুত্ববোধের (Priority) মাপকাঠি কি! এই শৃংখলাবোধ যেন জাতির সর্বস্তরে সমান কার্যকরী হয় সে জন্য মহানবী (দঃ) নির্দেশ দিলেন যে, "এমন কি মাত্র দু'জন লোকও যদি কোথাও যায় তবে ঐ দুই জনের মধ্যেও একজনকে নেতা ঠিক কোরে নিতে হবে এবং তার আদেশ মতে চোলতে হবে"। এ যদি সামরিক শৃংখলা না হয়, তবে সামরিক শৃংখলা কাকে বলে? আমি পেছনে দেখিয়ে এসেছি যে নামায চরিত্র গঠনের ছাঁচ (Mould)। এই ছাঁচে ঢালাই কোরে যে চরিত্র গঠন করা হয়, তাতে হাজারো রকম উদ্দেশ্য থাকলেও সর্বপ্রধান হোচ্ছে সামরিক শৃংখলা। দু'জন লোক নামায পড়লেও এক জনকে এমাম (নেতা) বেছে নিয়ে তার নির্দেশ মোতাবেক রুকু-সেজদা কোরতে হবে, তার নির্দেশ সামান্যতম অমান্য কোরলে নামায হবে না।

এই শেষ দ্বীনকে যেমন ধর্ম এবং ধর্ম-নিরপেক্ষ (Religious and Secular) এই ভাগে বিভক্ত করা যায় না তেমনি এই জাতিতে, উম্মাতেও সামরিক এবং বেসামরিক (Military and Civilian) কোন বিভাজন নেই। এই জাতিভুক্ত প্রতিটি মানুষকেই হোতে হবে নির্ভীক যোদ্ধা, যে লোক তা নয়, এই জাতির সর্বপ্রধান চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য তার নেই। যে জাতিকে সৃষ্টিই করা হোয়েছে সশস্ত্র সংগ্রাম কোরে সমস্ত পৃথিবীকে এই দ্বীনের ছত্রচ্ছায়ায় নিয়ে আসতে, সে জাতির কোন লোক যদি যোদ্ধা না হয় তবে স্বভাবতঃই সে এই জাতির অন্তর্গত হবার প্রাথমিক যোগ্যতা রাখে না। বর্তমানের কোন দেশের কোন মানুষ যদি সেই দেশের সামরিক বাহিনীতে ভর্তি হোতে চায় এই শর্তে যে- সে যুদ্ধ কোরবে না- তবে তাকে কি বাহিনীতে ভর্তি করা হবে? কিম্বা বর্তমানের কোন সামরিক বাহিনীর কোন লোক যদি যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নিতে-যোদ্ধা হোতে না চায় তবে তাকে ঐ বাহিনীতে রাখা হবে কি? না তাকে বহিষ্কার করা হবে? এই জাতিতেও তাই। স্বয়ং বিশ্বনবী (দঃ) বোলেছেন-"যে মানুষ (এখানে তিনি এই জাতিভূক্ত মানুষ বোঝাচ্ছেন) জীবনে কখনও জেহাদে অংশ গ্রহণ কোরলো না বা ইচ্ছাও কোরলো না সে (অন্য সর্ব রকম এবাদত সত্ত্বেও) মোনাফেকীর একটি শাখায় অবস্থিত অবস্থায় মারা গেলো [হাদীস- আবু হোরায়রা (রাঃ) থেকে- মুসলিম(Muslim), মেশকাত]।" মনে রাখতে হবে মোনফেকী কুফর এবং শেরকের চেয়েও ঘৃণ্য এবং সাতটি জাহান্নামের সবচেয়ে নীচে, ভয়াবহটিতে দেওয়া হবে মোনাফেকদের (কোরান- সূরা আন-নিসা-১৪৫)। বর্তমানের বিপরীতমুখী এই ইসলামের বিকৃত আকীদা থেকে দৃষ্টি ও ধারনাকে মুক্ত কোরে উম্মুক্ত মন নিয়ে মহানবীর (দঃ) প্রবর্তিত ইসলামের দিকে চাইলে যে ইসলাম(Islam)টিকে দেখা যায় সেটি পুরোপুরি একটি সামরিক সংগঠন- যে সংগঠনের সর্ব প্রধান উদ্দেশ্য হলো সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে সমস্ত বিরোধী শক্তিকে পরাজিত কোরে সমস্ত পৃথিবীতে ইসলামের শেষ সংস্করণকে রাষ্ট্রীয় (এক রাষ্ট্র), সামাজিক ও অর্থনৈতিক জীবনে প্রতিষ্ঠা করা। এইটাই এই সংগঠনের সর্ব প্রধান উদ্দেশ্য বোলেই এর সর্বশ্রেষ্ঠ পুরষ্কার এবং সম্মান আল্লাহ(Allah) রেখেছেন এই সংগ্রামে জীবন ও সম্পদ উৎসর্গকারী যোদ্ধাদের জন্য। বিশ্বনবী (দঃ) মানুষকে ইসলামের মাহাত্ম্য বুঝিয়ে এর গুণাবলি বর্ণনা কোরে একে গ্রহণ করাতে চেষ্টা করেন নি। তা কোরলে তিনি আরবের বিভিন্ন স্থানে প্রচারক পাঠিয়ে তবলীগ কোরতেন। ইতিহাস তা বলে না- ইতিহাস বলে তিনি ছোট-বড় সশস্ত্র বাহিনী পাঠিয়েছেন। তাদের বলে দিয়েছেন যে তারা অমুসলিম(Muslim) গোত্রদের নিকট যেয়ে তাদের আল্লাহ(Allah)র দ্বীন গ্রহণ কোরে এই উম্মাহর মধ্যে শামিল হোয়ে যেতে আহ্বান করতে। তাতে যদি তারা রাজি না হয় তবে তাদের বোলতেন যে তাহোলে তাদের শাসন-ব্যবস্থা মুসলিম(Muslim)দের হাতে ছেড়ে দিতে, ব্যক্তিগতভাবে তারা যে দ্বীনে থাকতে চায় থাকুক। কিন্তু এ দুই প্রস্তাবের কোনটি না মানলে তাদের আক্রমণ কোরে পরাজিত কোরে তাদের শাসনভার মুসলিম(Muslim)দের হাতে তুলে নিতে। অমুসলিমদের সাথে যুক্তি-তর্ক কোরে ইসলামের গুণাবলী বর্ণনা কোরে তাদের ইসলাম(Islam) গ্রহণ করানোর জন্য তিনি কখনই নিরস্ত্র তবলিগী দল পাঠান নি। ও পন্থায় ইসলাম(Islam)কে পৃথিবীতে-পৃথিবীতে কেন শুধুমাত্র আরবেও-প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হতো না তা আল্লাহ(Allah) ও বিশ্বনবী (দঃ) জানতেন, তাই তাদের নীতিই তা ছিলো না। একথা যিনি অস্বীকার কোরবেন তিনি এই জাতির ইতিহাসই অস্বীকার কোরছেন।

সুতরাং বর্তমানে প্রচার কোরে, যুক্তি-তর্ক কোরে, মিটিং-মিছিল কোরে, নির্বাচন কোরে ইসলাম(Islam)কে যে পুনর্বাসন চেষ্টা চলছে তা শুধু ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে। কারণ, তা আল্লাহ(Allah)র রসুলের (দঃ) প্রদর্শিত পথ নয়, তার তরিকা নয়। পেছনে একবার লিখেছি পাশ্চাত্যের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় মিটিং-মিছিল কোরে, শ্লোগান দিয়ে খুব হোলে সরকারি ক্ষমতা দখল করা যেতে পারে। কিন্তু সেটা হবে সাময়িক; কারণ জনাসাধারণকে ধাপ্পাবাজী কোরে পক্ষে না রাখতে পারলে বিরুদ্ধ দল ধাপ্পাবাজী করে মেয়াদ শেষ হোলেই ঐ ‘ইসলামী' সরকারকে গদীচ্যুত কোরবে। কিন্তু এখন দেখছি এই প্রক্রিয়ায় ঐ প্রথমবারের মতও ক্ষমতায় যাওয়া যায় না-জনাসাধারণের সংখ্যাগরিষ্ঠের সমর্থন থাকলেও না; উদাহরণ আলজেরিয়া এবং তুর্কী। অন্য যে কোন আদর্শে বিশ্বাসী এক দল লোক যদি সেই প্রচার, মিটিং, মিছিল কোরে দেশের জনসাধারণের বৃহত্তর অংশের সমর্থন লাভ কোরতে পারে তবে সে দল নির্বাচনে জয়ী হোয়ে সে দেশের ক্ষমতা দখল কোরতে পারে, সরকার গঠন কোরতে পারে। কেউ শারীরিকভাবে বাধা দেবে না কারণ এখন সারা বিশ্বে গণতন্ত্রের জোয়ার বইছে। উদাহরণ পশ্চিমবঙ্গে কমিউনিস্ট সরকার। নির্বাচনে জয়ী হবার কারণে কমিউনিস্ট হওয়া সত্ত্বেও তাদের ক্ষমতায় যেতে দেওয়া হোয়েছে কারণ ওটা ইসলাম(Islam) নয়। কিন্তু আলজেরিয়ায় যখন জনগণের ভোটে ইসলামী আদর্শে বিশ্বাসী স্যালভেশন দল বিপুলভাবে জয়লাভ কোরলো তখন তাদের ক্ষমতায় যেতে দেয়া হলো না, সরকারও গঠন কোরতে দেয়া হলো না। তাদের নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলো এবং বর্তমানে সামরিক শাসন তাদের উপর অকথ্য নির্য্যাতন চালাচ্ছে, তাদের গ্রেফতার কোরছে, হত্যা কোরছে। কিন্তু সামরিক শাসনের ঘোর বিরোধী, গণতন্ত্রের জন্য কান্নাকাটি কোরে যারা চোখের পানিতে পৃথিবী ভিজিয়ে ফেলেন তারা একটি কথাও বোলছেন না। ওদিকে বার্মার গণতান্ত্রিকদের হাতে ক্ষমতা তুলে না দেওয়ার অপরাধে যুক্তরাষ্ট্র থেকে শুরু কোরে এই দেশেরও গণতান্ত্রিকদের ধ্বজাধারীরা চেঁচিয়ে গলা ভেঙ্গে ফেলছেন। পাকিস্তান আণবিক বোমা তৈরী করে নাই, অন্তত প্রমাণ নেই, কিন্তু শুধু সন্দেহের ওপর ভিত্তি কোরে পাশ্চাত্য শক্তিগুলো তাকে সর্ব প্রকার সাহায্য দেয়া বন্ধ কোরে দিয়েছে, কিন্তু ভারত প্রকাশ্যে আণবিক বোমা বিস্ফোরণ কোরেছে, তবুও তাকে কোন রকম সাহায্য দেয়া বন্ধ করা হয়নি। উপরন্তু আণবিক অস্ত্র তৈরীর জন্য অত্যাবশ্যক ইউরোনিয়াম ও হেভি ওয়াটার সরবরাহ অব্যাহত রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র ও পাশ্চাত্য শক্তিগুলি। নাইজেরিয়ার একটি অংশ যখন বিচ্ছিন্ন হোয়ে স্বাধীন হবার জন্য সশস্ত্র সংগ্রাম শুরু কোরেছিলো তখন পাশ্চাত্যের শক্তিগুলো ঐ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সর্বতোভাবে সাহায্য কোরেছিলো, কিন্তু কাশ্মিরীরা যখন স্বাধীন হবার সংগ্রাম কোরছে তখন সমস্ত পৃথিবী ভারতকে সমর্থন কোরছে এমন কি ‘মুসলিম(Muslim)' আরবরা। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে যাবার পর যে সব রাজ্য স্বাধীনতা ঘোষণা কোরেছে তারা পাশ্চাত্যের পূর্ণ সমর্থন পেয়েছে, কিন্তু বসনিয়া ঐ একই কাজ কোরলেও তার উপর অস্ত্র আমদানীর নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগ করা হোয়েছে, যার ফলে প্রায় নিরস্ত্র অবস্থায়, যাদুঘর থেকে প্রথম মহাযুদ্ধের সময়ের অস্ত্র বের কোরে তাই দিয়ে যুদ্ধ কোরতে কোরতে নিশ্চিহ্ন হবার পথে এ লিষ্টের তালিকার, শেষ নেই।

এ সমস্তের মূলে রোয়েছে একটি মাত্র কারণ- তা হলো এই যে, এরা মুসলিম(Muslim)। স্বার্থের প্রয়োজনে খ্রীস্টান-ইহুদীদের সাথে হাত মেলাবে, যেমন বর্তমানে-ইহুদী হিন্দুর হাতে হাত মেলাবে, বৌদ্ধ খ্রীস্টান বা হিন্দুর সাথে হাত মেলাবে। কিন্তু কোন অবস্থাতেই অন্য কোন জাতি মুসলিম(Muslim)দের সাথে হাত মিলাবে না। এই জাতির একমাত্র বন্ধু এবং অভিভাবক হোচ্ছেন আল্লাহ(Allah)। কিন্তু তার দেয়া দায়িত্ব ও তার রসুলের (দঃ) সুন্নাহ ত্যাগ কোরে পাশ্চাত্যের জীবন-ব্যবস্থা গ্রহণ কোরে কার্যতঃ মোশরেক ও কাফের হোয়ে যাবার পর থেকে তিনি এই জাতির অভিভাবকত্ব ত্যাগ কোরেছেন বহু আগেই। সর্বশক্তিমান আল্লাহ(Allah) যে জাতির অভিভাবক সে জাতি বিজাতির দাস হোতে পারে না। গত দু'শ বছরের গোলামী প্রমাণ যে তিনি এই জাতির অভিভাবকত্ব স্বীকার করেন না। কাজেই যেখানে পৃথিবীর সমস্ত জাতিই এই জাতির বিরোধী এবং যে একমাত্র প্রভু ও অভিভাবক এর ছিলেন তিনিই একে ত্যাগ কোরেছেন; সুতরাং এর বর্তমান পরিণতিই স্বাভাবিক এবং তাই-ই হোচ্ছে। এই জাতির স্রষ্টা বিশ্বনবী (দঃ) এই পরিণতি দেখতে পেয়েছিলেন। তাই তিনি ভবিষ্যত বাণী কোরেছেন- "অচিরেই এমন সময় আসছে যখন অন্যান্য জাতিগুলি তোমাদের (মুসলিম(Muslim) জাতির) বিরুদ্ধে একে অপরকে ডাকবে যেমন কোরে খাবার সময় মানুষ একে অপরকে খেতে ডাকে। কেউ একজন প্রশ্ন করলেন- তখন কি আমরা সংখ্যায় এত নগণ্য থাকবো? তিনি (দঃ) বোললেন- না। তখন তোমরা সংখ্যায় অগণিত হবে, কিন্তু হবে স্রোতে ভেসে যাওয়া আবর্জনার মত এবং আল্লাহ(Allah) তোমাদের শত্রুদের হৃদয় থেকে তোমাদের সম্বন্ধে ভয় উঠিয়ে নেবেন এবং তোমাদের হৃদয়ে দুর্বলতা ঢুকিয়ে দেবেন। একজন প্রশ্ন কোরলেন- হে রসুলুল্লাহ! এই দুর্বলতার কারণ কি হবে? তিনি (দঃ) জবাব দিলেন- দুনিয়ার প্রতি ভালবাসা এবং মৃত্যুর প্রতি বিমুখতা" [হাদীস-সাওবান (রাঃ) থেকে আবু দাউদ, মেশকাত]। এই হাদীস পড়ে মনে হয় আল্লাহ(Allah)র রসুল (দঃ) গত কয়েক শতাব্দীর ইতিহাস চোখের সামনে দেখে দেখে ঐ কথা কয়েকটি বোলছেন। যে জাতির অবিশ্বাস্য সামরিক বিজয়ের কারণ নির্ণয় কোরতে যেয়ে পাশ্চাত্যের প্রথম শ্রেণীর ইতিহাস বেত্তারা সিদ্ধান্ত কোরেছেন যে কারণ হোচ্ছে তাদের মৃত্যুর প্রতি চরম অবজ্ঞা, তাদের ভাষায় (Utter Comtempt for death)। মৃত্যুর প্রতি চরম অবজ্ঞা অর্থ অবশ্যই এই দুনিয়ার প্রতি চরম নির্লোভতা, এবং শাহাদাতের প্রতি দুর্নিবার আকর্ষণ। আর যখনকার কথা বিশ্বনবী (দঃ) উল্লেখ কোরেছেন অর্থাৎ গোলামীর কয়েক শতাব্দী এবং বর্তমান- এখন চরিত্রের ঠিক বিপরীত অবস্থান- দুনিয়া প্রীতি এবং মৃত্যুভয়, শাহাদাতের আকাংখা তো বহু দূরের কথা। উম্মতে মোহাম্মদীর চরিত্রের এই একেবারে বিপরীত চরিত্রের অধিকারী হোয়েও কিন্তু এই বর্তমান ‘মুসলিম(Muslim)' জাতি ধর্ম-কর্মের পরাকাষ্ঠা ও তাকওয়ার অনুশীলন কোরে চোলেছেন চোখ-কান বুঁজে। চোলেছেন যে হেদায়াতের, সেরাতুল মুস্তাকীমের ঠিক বিপরীত দিকে সে বোধশক্তি নেই। বর্তমানে বিভিন্ন ‘মুসলিম(Muslim)' দেশের অর্থাৎ ভৌগলিক রাষ্ট্রে ইসলাম(Islam)কে পুনঃ প্রতিষ্ঠিত কোরতে যেসব আন্দোলন ও সংগঠন কাজ কোরছে এদের কোনটাতেই সামরিক সংগঠনকে সে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে না যে গুরুত্ব এই দ্বীনের মর্মবাণীতে আল্লাহ(Allah) ও তার রসুল গেঁথে দিয়েছেন। আকীদার বিকৃতি ও হীনমন্যতার কারণে এগুলি প্রত্যেকটাই কম বেশী পাশ্চাত্যের প্রক্রিয়া গ্রহণ কোরেছে ইসলাম(Islam)কে ভেজাল কোরে দিয়েছে। এই ভেজালের পরিণতিতে জন্ম গ্রহণ কোরেছে ইসলামিক সমাজতন্ত্র ও ইসলামিক গণতন্ত্র। গত মহাযুদ্ধে জার্মানী, জাপান ও ইটালি জিতলে জন্মগ্রহণ করতো ইসলামিক ফ্যাসিবাদ। ইসলামের নাম নিয়ে ভেজাল ইসলাম(Islam) কখনই প্রকৃত ইসলাম(Islam) প্রতিষ্ঠা কোরতে পারবে না।

বিশ্বনবীর (দঃ) উম্মাহ জেহাদ ও কিতালের প্রয়োজনীয়তা, গুরুত্ব সম্যকভাবে উপলব্ধি কোরেছিলেন, এই দ্বীনে এর স্থান (Priority) কোথায় তাও পরিষ্কারভাবে বুঝেছিলেন। কারণ তারা দ্বীনুল ইসলামের আকীদা শিক্ষা কোরেছিলেন আর কারো কাছ থেকে নয়, স্বয়ং আল্লাহ(Allah)র রসুলের (দঃ) কাছ থেকে। তারা বুঝেছিলেন তাদের ঘাড়ে কত বিরাট দায়িত্ব, তাই তারা সর্বস্ব কোরবান কোরে দ্বীনুল কাইয়্যেমাকে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠার সশস্ত্র অভিযানে বের হোয়ে পড়েছিলেন। তারপর ৬০/৭০ বছর পর যখন নবীর (দঃ) কাছ থেকে শেখা আকীদা এই জাতি ভুলে গেলো, তখন তারা সশস্ত্র সংগ্রাম ছেড়ে দিয়ে (জাতি হিসাবে) ফতোয়াবাজী, আত্মার ঘষা-মাজা, (জেহাদে আকবর) ও সুন্নাহ (নেতার দাড়ি-মোচ, খাওয়া-দাওয়া, পেশাব-পায়খানা) পালন কোরতে আরম্ভ করলো। আল্লাহ(Allah) বোলেছিলেন-তোমারা যদি (সামরিক) অভিযানে বের না হও তবে তিনি (আল্লাহ(Allah)) তোমাদিগকে মর্মন্তুদ শাস্তি দিবেন এবং অন্য জাতিকে তোমাদের স্থলাভিষিক্ত কোরবেন (কোরান- সূরা আত্ তওবা-৩৯)। আল্লাহ(Allah) তার প্রতিশ্রুতি কখনও ভঙ্গ করেন না, এখানেও করেন নি। এই দ্বীনের সর্বশ্রেষ্ঠ কাজ, সর্ব প্রধান দায়িত্ব ত্যাগ করার ঐ মর্মন্তুদ শাস্তি কি দিলেন তা ইতিহাস। যুদ্ধে পরাজয়, অপমান, লাইন কোরে দাঁড় করিয়ে গুলি, জীবন্ত কবর, আগুনে পুড়িয়ে হত্যা ছাড়াও এই জাতির মেয়েদের পাইকারী ধর্ষণের পর হত্যা ও ইউরোপের ও আফ্রিকার বেশ্যালয়ে তাদের বিক্রী! তারপর দু'একটি ছোট এলাকা ছাড়া সমস্ত জাতিটির হাত থেকে ক্ষমতা ছিনিয়ে নিয়ে সে স্থানে ইউরোপের বিভিন্ন খ্রীস্টান জাতিগুলির হাতে তুলে দেওয়া ও এই জাতিকে তাদের ক্রীতদাসে পরিণত করা। আল্লাহ(Allah) অক্ষরে অক্ষরে তার প্রতিশ্রুতি পালন কোরলেন। আল্লাহ(Allah)র দ্বীন, জীবন-ব্যবস্থা সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব ত্যাগ করার যে শাস্তি দিলেন তাতে দু'টি কথা প্রমাণ হয়। প্রথমটি এই যে অবিশ্বাসীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে তিনি এই জাতিকে সাহায্য কোরলেন না, কারণ আল্লাহ(Allah) সাহায্য করলে পরাজয় অসম্ভব। যেমন ইতিপূর্বে তিনি কোরে আসছিলেন, যখন এই জাতি সর্ব দিক দিয়ে ঐ অবিশ্বাসীদের চেয়ে দুর্বল ছিলো তখন তারা প্রতিটি যুদ্ধে জয়লাভ কোরেছিলো। দ্বিতীয় হলো-যখন তিনি এই জাতির হাত থেকে ক্ষমতা ছিনিয়ে নিয়ে খ্রীস্টানদের হাতে দিয়ে দিলেন এবং এদেরকে তাদের ক্রীতদাস বানিয়ে দিলেন তখন প্রমাণ হোয়ে গেলো যে আল্লাহ(Allah)র দৃষ্টিতে এই জাতি আর মোমেনও নয়, মুসলিম(Muslim)ও নয়, উম্মতে মোহাম্মদীও নয়। কারণ তা হোলে তাদের ঐ পরিণতি সম্ভব নয়। মোমেনদের জন্য আল্লাহ(Allah) সাহায্যের ও জয়ের প্রতিশ্রুতি কোরানে সর্বত্র ছড়িয়ে আছে।

বর্তমানের এই শেরক ও কুফরীর অবস্থার মধ্যে থেকেও যে সব প্রতিষ্ঠান আবার আল্লাহ(Allah)র দ্বীন প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালাচ্ছে তারা পারছে না কেন তা বোলতে চেষ্টা কোরেছি, পেরেছি কিনা জানি না। গুরুত্ব, অগ্রাধিকার (Priority), আকীদার একটা অংশ। আকীদা সঠিক না হওয়া পর্য্যন্ত এই অগ্রাধিকার (Priority) সঠিক হবে না। বর্তমানে পৃথিবীতে যত প্রচেষ্টা চোলছে তার একটাতেও এই দ্বীনের প্রকৃত আকীদা ও সেই সঙ্গে সঠিক অগ্রাধিকার নেই। এই দ্বীনে জেহাদের যে স্থান তা কোথাও দেয়া হয়নি। কথাটা বোঝাবার চেষ্টায় আমি একটি অণু চিত্র পেশ কোরছি:-


ইসলামে সশস্ত্র সংগ্রামের প্রকৃত স্থান। ঈমানের পরই যেটা সর্ব প্রধান কর্তব্য।


এই স্তরে কোথাও কোন সংগঠন আছে বোলে আমার জানা নেই।



এই স্তরে সশস্ত্র সংগ্রামকে আত্মরক্ষামূলক নয় আক্রমণাত্মক বোলে স্বীকার করা হোয়েছে কিন্তু তাকে কার্যে রূপ দেয়া হয়নি।


এই স্তরে পশ্চিম এশিয়ার এখওয়ানুল মুসলেমীন, দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দারুল ইসলাম(Islam) ইত্যাদি সংগঠন সমূহ।



এই স্তরে সশস্ত্র সংগ্রামকে শুধু আত্মরক্ষামূলক বোলে স্বীকৃতি দেয়া হোয়েছে।


এই স্তরে পশ্চিম আফ্রিকার ইসলামিক স্যালভেশন আন্দোলন, মধ্য এশিয়ার জামায়াতে ইসলামী সহ বিভিন্ন সংগঠনসমূহ যারা পাশ্চাত্যের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় ইসলামিক শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।



এই স্তরে আকীদায় সশস্ত্র সংগ্রামের কোন স্থানই কার্যতঃ নেই। এরা এই দ্বীনের দিক-দর্শনের (Orientation) ঠিক বিপরীতগামী।


এই স্তরে তবলীগ জামাত, বিভিন্ন সুফী তারিকাসমূহ, কাদিয়ানী ইত্যাদি।


দুই ও তিন নম্বর স্তরের সংগঠনগুলির আকীদা সঠিক না হওয়ায় তারা ইসলামী বিপ্লবের পথ ছেড়ে পাশ্চাত্য রাজনৈতিক প্রক্রিয়া অর্থাৎ মিটিং, মিছিল, শ্লোগান ও নির্বাচনের পথ ধোরেছে, অর্থাৎ কুফরী ও শেরক ব্যবস্থার সাথে আপোষ (Compromise) কোরেছে। নিজেদের কাজকে সঠিক প্রমাণ করার জন্য এরা যুক্তি দেখাচ্ছে হেকমতের, কৌশলের। এটা হেকমত নয়, শেরক। কারণ যে ব্যবস্থা ধ্বংস করা উদ্দেশ্য- সেই ব্যবস্থাই গ্রহণ করা, মেনে নেয়া হেকমত নয়; শেরক। আল্লাহ(Allah)র রসুলকে (দঃ) জিজ্ঞাসা করা হোয়েছিলো - সবচেয়ে বড় কাজ (আমল) কি? তিনি বোললেন-"আল্লাহ(Allah)র ও তাঁর রসুলের প্রতি বিশ্বাস (তওহীদ)। আবার জিজ্ঞাসা করা হলো তারপর কোন কাজ? তিনি বোললেন- আল্লাহ(Allah)র পথে জেহাদ"[হাদীস - আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বুখারী ও মুসলিম(Muslim)]। অর্থাৎ ঈমানের পরই জেহাদের স্থান। এই জেহাদকে বাদ দিয়ে বা এর যে গুরুত্ব (Priority) আল্লাহ(Allah) ও তাঁর রসুল (দঃ) দিয়েছেন- সেটা না দিয়ে যত হিকমতই করা হোক না কেন, সমস্ত নিষ্ফল হোচ্ছে এবং হবে। এই ভুল পথে যে সব মূল্যবান প্রাণ কোরবান হোয়েছে তারা হাশরের দিন প্রশ্ন রাখবে তাদের ভুল পথে পরিচালনার জন্য।

আকীদার বিকৃতির জন্য মুসলীম বোলে পরিচিত এই জনসংখ্যাটি যেমন আল্লাহ(Allah)-রসুলের (দঃ)প্রদর্শিত সেরাতুল মুস্তাকীমের, হেদায়াতের অর্থাৎ প্রকৃত তওহীদ ও জেহাদের পথ ছেড়ে দিয়ে অতি তাকওয়ার সাথে বিপরীত দিকে চোলছে, তেমনি ঐ আকীদার বিকৃতির কারণে সে সব সংগঠন ইসলাম(Islam)কে রাষ্ট্রীয় পর্য্যায়ে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা কোরছে তারাও সফল হোচ্ছে না। পেছনে বোলে এসেছি কতকগুলি সংগঠন রসুলের (দঃ) সুন্নাহ অর্থাৎ বিপ্লবের পথ ত্যাগ কোরে পাশ্চাত্যের শিক্ষা দেয়া রাজনৈতিক জনসভা, মিছিল, শ্লোগান দিয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়ে গায়রুল্লাহর ব্যবস্থাকে গ্রহণ কোরে ইসলাম(Islam) প্রতিষ্ঠার চেষ্টা কোরছেন। ঐ সঙ্গে এ কথাও বোলে এসেছি যে এরা হাজার বছরেও সফল হবে না । ইতিমধ্যেই তা প্রমাণ হোয়ে গেছে আলজেরিয়ায়। অন্য কিছু সংগঠন ও পথে না যেয়ে বা ও পথে বিফল হোয়ে সন্ত্রাসের পথ অবলম্বন কোরেছে। এরা এখানে ওখানে বোমা মেরে, পর্যটকদের গাড়ীতে বোমা মেরে রাষ্ট্রের সশস্ত্র বাহিনীর সাথে খণ্ড-যুদ্ধ কোরে এবং ইসলাম(Islam) বিরোধী কার্যকলাপের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হোয়ে ইসলাম(Islam) প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালাচ্ছে। এও সফল হবে না। এ গুলোর কোনটাই রসুলের (দঃ) সুন্নাহ নয়। তার মক্কী জীবনের তের বছর তিনি বা তাঁর আসহাব কোন অন্যায়ের প্রতিবাদ করেন নি, কাফের, মোশরেকদের সঙ্গে তাদের জীবনধারা নিয়ে কোন সংঘর্ষ বাধান নি, তাদের মদ খাওয়ায়, জুয়া খেলায় বা অন্য কোন পাপ কার্যে তিনি বাধা দিতে যাননি। তিনি ও তার আসহাব শুধু নিরবচ্ছিন্নভাবে তাদের বোলে গেছেন যে তোমরা শেরক ছেড়ে দাও, এক আল্লাহ(Allah)কে প্রভু, জীবনের সর্বস্তরের প্রভু বোলে স্বীকৃতি দাও। তিনি জানতেন তার ঐ ডাকে সাড়া দিলেই আল্লাহ(Allah)র আইন প্রতিষ্ঠা হবে। একটা একটা কোরে অন্যায় দূর কোরতে হবে না, সমস্ত অন্যায়-অবিচার তওহীদের বানের ঢলের স্রোতে ভেসে যাবে। মক্কা তার ডাকে সাড়া দিল না, তওহীদ স্বীকার করলো না- মদীনা করলো। মক্কা তওহীদ স্বীকার কোরে নিলে যা হতো মদীনা স্বীকার করায় তাই হলো-একই কথা। তওহীদ প্রতিষ্ঠা হলো মানে আল্লাহ(Allah)র আইন প্রতিষ্ঠা হলো, ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হলো। এটাই ছিলো আল্লাহ(Allah) ও তাঁর রসুলের (দঃ) মুখ্য উদ্দেশ্য, কারণ রাষ্ট্রশক্তি ছাড়া ইসলাম(Islam) অর্থহীন, রাষ্ট্রশক্তি ছাড়া আল্লাহ(Allah)র কোন আইন কার্যকরী করা সম্ভব নয়। এবং আল্লাহ(Allah)র আইন, অর্থনীতি, দণ্ডবিধি ইত্যাদি যদি কার্যকরীই না করা যায় তবে বাকি যা থাকে তা অর্থহীন- আজ যেমন ইসলাম(Islam) ব্যক্তি জীবনের চার দেয়ালে আটকে অর্থহীন হোয়ে আছে। যে সমস্ত সংগঠন আল্লাহ(Allah)র আইনকে পৃথিবীর বুকে প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম চালাচ্ছে তাদের সর্ব প্রথম কর্তব্য হলো প্রথমে তাদের আকীদা সঠিক কোরে নেয়া। আকীদাকে সঠিক করার সঙ্গে সঙ্গে অগ্রাধিকার (Priority) সঠিক কোরে নেয়া। জেহাদ ও কিতালকে আল্লাহ(Allah)-রসুল যে গুরুত্ব দিয়েছেন সেই গুরুত্ব দেয়া। তা না হোলে সমস্ত প্রচেষ্টা বিফল হোতে বাধ্য।

প্রকৃত ইসলাম(Islam) তেরশ' বছর আগে হারিয়ে গেছে। আজ ‘মুসলিম(Muslim)' অমুসলিম সব জাতিগুলিই পাশ্চাত্যের রাজনৈতিক, আর্থ-সামাজিক, আইন-কানুন, দর্শনের প্রভাবাধীন। ইহুদী খ্রীস্টান সভ্যতা(Civilization)র প্রচণ্ড প্রভাব সমস্ত পৃথিবীকে এমন আচ্ছন্ন কোরে ফেলেছে যে, পৃথিবীর সমস্ত জাতিগুলি ব্যক্তি জীবনে যাই বিশ্বাস করুক সমষ্টিগত জীবনে অন্ধভাবে ঐ সভ্যতা(Civilization)র নকল কোরছে। শুধুমাত্র মুসলিম(Muslim) জাতির মধ্যে কতকগুলি সংগঠন ছাড়া অন্য কোন জাতি ইহুদী-খ্রীস্টান সভ্যতা(Civilization)র সমষ্টি জীবনের ব্যবস্থা অর্থাৎ রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, আইন-কানুন ইত্যাদি প্রত্যাখ্যান কোরে নিজস্ব ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালাচ্ছে না। এই মুসলিম(Muslim) জাতির ভেতর যে সংগঠনগুলো সে চেষ্টা কোরছে; ওগুলো ছাড়া আরও ছোট খাট অনেক আছে। কিন্তু ছোট বড় কোনটাই ঐ ইহুদী-খ্রীস্টান সভ্যতা(Civilization)র জীবন-দর্শনের প্রভাব থেকে সম্পূর্ণভাবে মুক্ত নয়। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর সাম্যবাদ, অর্থাৎ কমিউনিজম যখন মহা পরাক্রমশালী, তখন ইসলাম(Islam)কে প্রতিষ্ঠার জন্য যে সব প্রচেষ্টা করা হোয়েছিলো তাতে সাম্যবাদও সমাজতন্ত্রের সাথে ইসলামের সাদৃশ্য প্রমাণ করার চেষ্টা করা হতো। ঐ প্রচেষ্টায় কোরানের বিশেষ বিশেষ আয়াতগুলিকে প্রধান্য দেয়া হতো, যেগুলোতে আল্লাহ(Allah) নিজেকে আসমান-যমীনের সব কিছুর মালিক বোলে ঘোষণা কোরছেন। উদ্দেশ্য-সব কিছুর মালিকানা যখন আল্লাহ(Allah)র তখন সাম্যবাদ ও সমাজতন্ত্রের মত ইসলামেও ব্যক্তি মালিকানা নেই। বিশ্বনবীর (দঃ)লক্ষ সাহাবাদের মধ্য থেকে বেছে নেয়া হলো আবু যরকে (রাঃ) একমাত্র আদর্শ বোলে, কারণ, তার ব্যক্তিগত মতামতের সঙ্গে সমাজতন্ত্রের দর্শনের কিছুটা মিল ছিলো। সমাজতন্ত্রের সাথে ইসলামের এত যখন মিল তখন সৃষ্টি করা হলো ইসলামিক সমাজতন্ত্র। প্রায় তিনটি মুসলিম(Muslim) সংখ্যাগরিষ্ট দেশেই এই ইসলামিক সমাজতন্ত্রের সংগঠন হোয়েছিলো এবং পাকিস্তানের যুলফিকার আলী ভুট্টোর ইসলামিক সমাজতান্ত্রিক (পি.পি.পি) দল সহ কয়েকটি দেশে কিছু দিনের জন্য সরকারও গঠন কোরেছিলো। তারপর সাম্যবাদ, সমাজতন্ত্রের ব্যর্থতার কারণে যখন সেগুলো ম্লান হোয়ে গেলো তখন ধনতান্ত্রিক গণতন্ত্র জোরদার হোয়ে উঠেছে। এখন চেষ্টা চোলছে প্রমাণ কোরতে যে ইসলাম(Islam) গণতান্ত্রিক, নাম দেয়া হোচ্ছে ইসলামিক গণতন্ত্র। সেই আগের মতই কোরান থেকে বেছে বেছে আয়াত নেয়া হোচ্ছে। ইহুদী-খ্রীস্টান পদ্ধতির সঙ্গে আপোষকে অর্থাৎ শেরক ও কুফরের সঙ্গে আপোষকে যথার্থ প্রমাণের চেষ্টায় মহানবীর (দঃ) মদীনায় ইহুদী ও মোশরেকদের সঙ্গে চুক্তির ঘটনা উপস্থিত করা হোচ্ছে। বলা হোচ্ছে প্রয়োজনে আল্লাহ(Allah)র রসুলও (দঃ) মদীনার ইহুদী ও মোশরেকদের সঙ্গে আপোষ কোরেছিলেন। এর নাম এরা দিয়েছেন হেকমত। যে গণতন্ত্রের সার্বভৌমত্ব আল্লাহ(Allah) নয়, সংখ্যাগরিষ্ঠের, সেই গণতন্ত্রকে স্বীকার কোরে নিয়ে সেই পদ্ধতিতে রাজনীতি কোরে, মিটিং, মিছিল, শ্লোগান দিয়ে এবং সেই পদ্ধতির নির্বাচনে অংশ নিয়ে নিজেদের কাজকে সঠিক প্রমাণ করার চেষ্টায় এরা এমন অন্ধ হোয়েছেন যে, আপোষ ও চুক্তির মধ্যে বিরাট তফাৎ দেখতে পান না। আকীদা বিকৃতির জন্য ইসলামের প্রকৃত রূপ, অগ্রাধিকার এ সব এরা বোঝেন না বোলে বিশ্বনবীর (দঃ) ইহুদী ও মোশরেকদের সঙ্গে চুক্তিকে তাদের নিজেদের শেরক ও কুফরের সাথে আপোষের সঙ্গে একই পর্যায়ে ফেলেছেন। আপোষ হলো কিছু দেয়া কিছু নেয়া, বিরুদ্ধ পক্ষের কিছু দাবী মেনে নেয়া ও নিজেদের কিছু দাবী বিরুদ্ধ পক্ষকে মেনে নেয়ানো। মদীনার চুক্তিতে বিশ্বনবী (দঃ) বিরুদ্ধ পক্ষের অর্থাৎ ইহুদী ও মোশরেকদের পদ্ধতির, (System) একটি ক্ষুদ্রতম কিছুও মেনে নেন নি, ইসলামের জীবন-ব্যবস্থার, দ্বীনের সামান্য কিছুও তাদের ওপর চাপান নি। কারণ তিনি আপোষ কোরছিলেন না। তিনি মদীনা রক্ষার জন্য শুধু একটি নিরাপত্তা চুক্তি (Security Treaty) কোরেছিলেন। সম্পূর্ণ চুক্তিটির উদ্ধৃতি এখানে দিতে গেলে বই বড় হোয়ে যাবে, শুধু প্রধান প্রধান শর্ত্তগুলো পেশ করছি। (ক) মদীনা শত্রু কর্তৃক আক্রান্ত হোলে ইহুদী ও মোশরেকরা মুসলিম(Muslim)দের সঙ্গে একত্র হোয়ে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কোরবে। (খ) যুদ্ধে ইহুদী ও মোশরেকরা তাদের নিজেদের খরচ বহন কোরবে, মুসলিম(Muslim)রা নিজেদের খরচ বহন কোরবে, যত দিনই যুদ্ধ চলুক। (গ) ইহুদী ও তাদের সম গোত্রের লোকজন রসুলুল্লাহর (দঃ) অনুমতি ছাড়া কারো বিরুদ্ধে যুদ্ধ কোরতে পারবে না। (ঘ) এই চুক্তির অধীন সমস্ত গোত্রগুলির মধ্যে যে কোন প্রকার বিরোধ বা গণ্ডগোল যাই হোক না কেন সমস্ত বিচার মহানবীর (দঃ) কাছে হোতে হবে। এই কয়টিই হলো মহানবীর (দঃ) ও মদীনার ইহুদী-মোশরেকদের মধ্যে চুক্তির প্রধান প্রধান (Saliet) বিষয়, যে চুক্তিটাকে মদীনার সনদ বলা হয়। চুক্তির ঐ প্রধান প্রধান বিষয়গুলির দিকে মাত্র একবার নজর দিলেই এ কথায় কারো দ্বিমত থাকতে পারে না যে, বিন্দুমাত্র ত্যাগ স্বীকার না কোরেও মহানবী (দঃ) এমন একটি চুক্তিতে ইহুদী ও মোশরেকদের আবদ্ধ কোরলেন- যে চুক্তির ফলে তিনি কার্যতঃ (De Facto) মদীনার ইহুদী ও মোশরেকদের নেতায় পরিণত হোলেন। তাদের নিজেদের যুদ্ধের খরচ নিজেরা বহন কোরে মহানবীর (দঃ) অধীনে মুসলিম(Muslim)দের সঙ্গে একত্র হোয়ে যুদ্ধ করার, মহানবীর (দঃ) বিনা অনুমতিতে কারো সঙ্গে যুদ্ধ না করার ও নিজেদের মধ্যেকার সমস্ত রকম বিবাদ-বিসম্বাদের বিচারের ভার মহানবীর (দঃ) হাতে ন্যস্ত করার শর্তে আবদ্ধ কোরে তিনি যে চুক্তি কোরলেন তা নিঃসন্দেহে একাধারে একটি রাজনৈতিক, কুটনৈতিক ও সামরিক বিজয়। মদীনা রক্ষার ব্যবস্থা তো হলোই, তার ওপর তিনি কার্যতঃ মুসলিম(Muslim)-অমুসলিম(Muslim) সকলের নেতায় পরিণত হোলেন। যারা ‘হেকমতের' দোহাই দিয়ে ইসলামী বিপ্লবের পথ ‘জেহাদ' ত্যাগ কোরে পাশ্চাত্যের রাজনৈতিক পদ্ধতি গ্রহণ কোরে মিটিং, মিছিল, শ্লোগান দিয়ে, মানুষের সার্বভৌমত্বের সংগঠনের অধীনে নির্বাচনে অংশগ্রহণ কোরছেন, কিন্তু বিনিময়ে অপর পক্ষ থেকে বিন্দুমাত্র প্রতিদান বা ত্যাগ স্বীকার পাননি, তারা কেমন কোরে তাদের ঐ শেরক ও কুফরের কাজকে বিশ্বনবীর (দঃ) ঐ মহা বিজয়ের সঙ্গে একই পর্যায়ে ফেলে তাকে ছোট করেন তা বোঝা সত্যিই মুশকিল।

কোন মন্তব্য নেই: