বৃহস্পতিবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০১১

৩১। তাবুকের পরীক্ষা

উৎস: Islam and Dajjal
সমস্ত বইটিতে আমি দেখাতে চেষ্টা কোরেছি যে আকীদার বিকৃতির কারণে মুসলিম(Muslim) নামের এই জাতিটি আল্লাহ(Allah) ও রসুল (দঃ) যে দিক পানে এর গতি নির্দিষ্ট কোরে দিয়েছিলেন, তার ঠিক বিপরীত পানে চোলছে এবং চোলছে অতি তাকওয়ার সাথে। এই জাতি একথা বুঝতে পারছেনা যে, আল্লাহ(Allah) রসুলের পথের বিপরীত দিকে চোললে শত সহস্র তাকওয়াও নিষ্ফল, অর্থহীন, তা তাদের জান্নাতে নিয়ে যেতে পারবেনা। এই বিপরীত পথ এই জাতিকে নিয়ে গেছে এবং যাচ্ছে এই পৃথিবীতেই অন্য জাতির কাছে পরাজয় অপমান, ঘৃণিত গোলামীতে এবং পরকালে কঠিন শাস্তির পানে। আমি দেখাতে চেষ্টা কোরেছি যে, ইবলিসের চ্যালেঞ্জে জয়ী হবার জন্য আল্লাহ(Allah) তার রসুলকে (দঃ) যে দ্বীন জীবন-বিধান দিয়ে পৃথিবীতে পাঠালেন তা প্রতিষ্ঠা করার জন্য পথ, প্রক্রিয়া, তরিকা (Process) স্থির কোরলেন সামরিক। অর্থাৎ আল্লাহ(Allah) তার প্রেরিতকে (দঃ) এই নির্দেশ দিলেন না যে, তুমি মানুষকে বক্তৃতা, ওয়ায কোরে যুক্তি দিয়ে, এই দ্বীনের মাহাত্ম-গুণ বর্ণনা কোরে মানুষকে এটা গ্রহণ কোরতে আহ্বান কর। এ নির্দেশও দিলেন না যে তবলীগ কোরে পৃথিবীর মানুষকে এই দ্বীনে প্রবেশ করাও। এ নির্দেশ আল্লাহ(Allah) দেননি এই কারণে যে তিনি নিজে এই মানব জাতির স্রষ্টা, তিনি এর মনস্তত্বেরও স্রষ্টা। তাই তিনি জানেন যে এই মানুষের দেহের-মনের ভিতরে শক্তিশালী শয়তানকে প্রবেশ করার অনুমতি দেবার পর খুব কম সংখ্যক মানুষই এমন থাকবে যারা তাদের বিবেক, বুদ্ধি, যুক্তি, ব্যবহার কোরে দ্বীনের এই প্রকৃত শ্রেষ্ঠত্ব বুঝে রসুলের (দঃ) ঐ আহ্বানকে মেনে নিয়ে এই দ্বীন গ্রহণ কোরবে। কাজেই তিনি তার রসুলকে(দঃ) নির্দেশ দিলেন সামরিক শক্তি বলে এই কাজ করার। তার এই আদেশ কোরানময় ছড়িয়ে আছে। আল্লাহ(Allah)র এই নীতিকে বুঝে তার রসুল (দঃ) ঘোষণা কোরলেন "আমি আদিষ্ট হোয়েছি সশস্ত্র যুদ্ধ চালিয়ে যেতে যে পর্য্যন্ত না সমস্ত মানব জাতি এক আল্লাহ(Allah)কে সর্বময় প্রভু বোলে স্বীকার করে এবং আমাকে তার প্রেরিত বোলে মেনে নেয় (হাদীস)।" পেছনে বোলে এসেছি এ কাজ অর্থাৎ সমস্ত মানব জাতিকে এই দ্বীনের অধীনে আনা এক জীবনে অসম্ভব একথা আহাম্মকও বুঝবে। তাছাড়া সশস্ত্র যুদ্ধের মাধ্যমে ঐ কাজ কোরতে গেলে অবশ্যই এমন একটি জাতি গঠন কোরতে হবে- যে জাতির সর্ব প্রধান চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যই হবে মৃত্যু ভয়হীন, দুর্দ্ধর্ষ যোদ্ধা। যে জাতি সমস্ত কিছু ভুলে তাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যে হবে অনঢ় (হানিফ), ঐক্য হবে ইস্পাত, সবরে (অটলভাবে অধ্যবসায়, প্রচেষ্টা চালাতে) হবে অদম্য। এর যে কোনটির অভাবে সাফল্য আসবেনা। কারণ উদ্দেশ্য, লক্ষ্য অতি বিরাট- সমস্ত মানব জাতির ওপর এই জীবন-বিধান প্রতিষ্ঠা। এমনি একটি দুর্দ্ধর্ষ সামরিক জাতি গঠন কোরতে হবে বোলেই আল্লাহ(Allah) এই জাতির জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ সম্মান ও সর্বশ্রেষ্ঠ পুরষ্কার স্থির কোরলেন ঐ বিরাট ও মহান উদ্দেশ্য অর্জনে যারা সশস্ত্র যুদ্ধে প্রাণ কোরবানী কোরবেন তাদের জন্য। শত সহস্র পাপ গুনাহ কোরলেও তাদের হিসাব নেয়া হবে না, কোন প্রশ্ন করা হবেনা, দেহ থেকে আত্মা বের হওয়ার সাথে সাথে তাদের সর্বোত্তম জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে। এতো গেলো পুরষ্কার। আল্লাহ(Allah) তাদের এমন সম্মান কোরলেন যে, তারা মরে গেলেও আমাদের অধিকার দেয়া হলো না তাদের মৃত বলার। আল্লাহ(Allah)র এই একটি মাত্র কাজ থেকেই এ কথা পরিষ্কার হোয়ে যায় যে, এই দ্বীনের সবচেয়ে বড়, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় কোনটি। আমি পেছনেও বোলে এসেছি আবারও বোলছি একটি প্রতিষ্ঠানের ঘোষিত পুরষ্কার যদি বিশ্ব অলিম্পিকে হকি খেলায় স্বর্ণ পদক জয় হয় তবে সেই প্রতিষ্ঠানটিকে হকি খেলার প্রতিষ্ঠান ছাড়া আর কি বলা যুক্তি সঙ্গত হবে?

আল্লাহ(Allah)র রসুলের (দঃ) জীবনীর দিকে এক নজর দিলেও এ সত্য প্রকট হোয়ে ওঠে যে তার জাতিটিকে উম্মাহকে একটি ধণ-প্রাণ উৎসর্গকারী মৃত্যুভয়হীন দুর্দ্ধর্ষ যোদ্ধা জাতি রূপে গঠন করাই ছিলো তার সবচেয়ে বড় প্রচেষ্টা। মাত্র তিনশ' তের জন যোদ্ধা নিয়ে তার প্রথম যুদ্ধ থেকে শুরু কোরে পরবর্তী যুদ্ধ গুলোতে যোদ্ধার সংখ্যা বাড়তে বাড়তে তার জীবনের শেষ অভিযান তাবুকে তার বাহিনীতে যোদ্ধার সংখ্যা দাঁড়ালো ত্রিশ হাজার। তদানিন্তন আরবের জনসংখ্যার দিকে লক্ষ্য কোরলে দেখা যায় এটা একটা বিরাট সংখ্যা। অর্থাৎ ঐ অনুপাতে এই বাংলাদেশে একটি বাহিনী দাঁড় করালে তার সংখ্যা হবে ষাট (৬০) লক্ষ যোদ্ধার। এই প্রথম ও শেষ যুদ্ধের মাঝখানে আল্লাহ(Allah)র রসুল(দঃ) ও ঐ সামরিক জাতির নেতা সাতাশটি যুদ্ধে নিজে নেতৃত্ব দিলেন, নিজে অস্ত্র হাতে যুদ্ধ কোরলেন নয়টিতে, দারুণভাবে যখম হোলেন। কিন্তু তিনি জানতেন এইই যথেষ্ট নয়, কারণ তিনি জানতেন যে আল্লাহ(Allah) তার ওপর সমস্ত পৃথিবীতে এই দ্বীন প্রতিষ্ঠার যে মহাদায়িত্ব দিয়ে তাকে পাঠিয়েছেন তা তার এক জীবনে অর্জন করা সম্ভব নয়। তাই তার অবর্তমানে যে জাতির ওপর অর্থাৎ তার উম্মাহর ওপর সেই দায়িত্ব অর্পিত হবে সে জাতিকেও সেই সংগ্রামের জন্য তৈরী কোরতে হবে। তাই তার জীবনীতে দেখি তিনি প্রথম দিকের যুদ্ধগুলিতে নিজে নেতৃত্ব দেবার পর অভিযান পাঠাবার সময় অন্য মানুষদের হাতে বাহিনীর নেতৃত্ব দিয়ে দিয়েছেন। উদ্দেশ্য নতুন নেতৃত্ব নতুন সেনাপতি সৃষ্টি করা, যারা তার পৃথিবী থেকে চলে যাবার পর এই সশস্ত্র সংগ্রাম চালিয়ে যাবার উপযুক্ত হবে। সারা জীবন ধোরে অক্লান্ত পরিশ্রম ও সাধনা কোরে এক অজেয় দুর্দ্ধর্ষ যোদ্ধা জাতি সৃষ্টি করার পর বিশ্বনবীর (দঃ) ইচ্ছা হলো পরীক্ষা কোরে দেখা যে তার হাতে গড়া এই জাতিটি সত্যিই কি উপযুক্ত হোয়েছে তার পৃথিবী থেকে চলে যাবার পর তার সুন্নাহ অনুসরন করার? এই জাতির চরিত্রে কি তিনি সেই দুঃসাহস- আল্লাহ(Allah) ছাড়া পৃথিবীতে আর কোন শক্তিকে ভয় না করার নির্ভিকতা; নেতার (দঃ) সুন্নাহ পালনের জন্য বিষয় সম্পত্তি ব্যবসা-বাণিজ্য স্ত্রী-পুত্র সমস্ত কিছু কোরবান করার মন; দুঃসহ কষ্ট সহ্য করার সবর এবং সর্বোপরি শাহাদাতের জন্য আকুল পিপাসা সৃষ্টি কোরতে পেরেছেন? অর্থাৎ এক কথায় তিনি দেখতে চাইলেন যে তার জীবনের সাধনা সফল হোয়েছে কি হয় নাই। তাই তিনি ডাক দিলেন তাবুক অভিযানের। এই অভিযানে যে অন্যান্য অভিযানের মত ছিলো না তার বেশ কয়েকটা প্রমাণ আছে।। কিন্তু তার আগে আমি একথা পরিষ্কার কোরতে চাই যে তাবুক আত্মরক্ষামূলক অভিযান ছিলোনা। যখন তাবুকে অভিযানের উদ্দেশ্য আমার কাছে প্রকাশ হলো তখন মনে পড়লো যে এই উম্মাহর অন্যান্য যুদ্ধের মত তাবুকের অভিযানকেও ইতিহাসে আত্মরক্ষামূলক বোলে বর্ণনা করা হোয়েছে। বলা হোয়েছে যে বণিকদের মারফৎ খবর পাওয়া গিয়েছিলো যে রোমানরা মুসলিম(Muslim)দের আক্রমণ করার জন্য সমবেত হোচ্ছে। যারা ইতিহাসে এই কথা লিখেছেন তারা ঐ বণিকদের কোন নাম পরিচয় দেননি। আল্লাহ(Allah)র রসুল (দঃ) এত কাঁচা লোক ছিলেন না যে অমন একটি উড়ো খবর শুনেই তিনি অস্বাভাবিক গরম, ফসল কাটার সময় ইত্যাদি উপেক্ষা কোরে বিরাট বাহিনী নিয়ে বের হোয়ে পড়বেন। মনে রাখতে হবে বিশ্বনবী (দঃ) জীবনের সবচেয়ে বড় সামরিক অভিযান ছিলো তাবুক। এই অভিযানে যোগ দেয়ার জন্য এবং যার যা সামর্থ আছে তা এই অভিযানের আয়োজনের জন্য দান কোরতে তিনি সবাইকে আহ্বান কোরেছিলেন। এ সবই দু'একটা বণিকের মুখের কথায়? যে বণিকদের নাম বা গোত্রের বা কোথাকার কাফেলা তা পর্য্যন্ত এরা উল্লেখ কোরতে পারেননি? যাই হোক, আসল ব্যাপার যাচাই করার জন্য মহানবীর (দঃ) প্রথম প্রামান্য জীবনী বের করলাম মোহাম্মাদ ইবনে ইসহাকের সিরাত রসুলাল্লাহ। বিরাট বই, যাতে তার পূর্ণ জীবনের প্রায় প্রতিটি খুটিনাটি বর্ণনা করা আছে এবং প্রধানত যে বইয়ের ওপর ভিত্তি কোরে পরবর্তীতে রসুলাল্লাহর (দঃ) বিভিন্ন জীবনী লেখা হোয়েছে। যা ভেবেছিলাম তাই- ইবনে ইসহাকের সিরাতে রসুলাল্লাহর (দঃ) রোমান আক্রমণ প্রস্তুতির সম্বন্ধে কোন কথাই নেই, বণিকদের সম্বন্ধে ব অক্ষরও নেই। ইবনে ইসহাক লিখেছেন-"রসুলাল্লাহ(দঃ) জিলহজ্ব থেকে রজব পর্য্যন্ত মদীনায় অবস্থান কোরলেন এবং তারপর বাইযানটাইনদের (রোমান) বিরুদ্ধে অভিযানের জন্য প্রস্তুতির আদেশ দিলেন [সিরাত রসুলাল্লাহ(দঃ)-মোহাম্মদ বিন ইসহাক, অনুবাদ A. Guillaume, ৬০২ পৃঃ]।" অর্থাৎ সমস্ত পৃথিবীতে এই দ্বীনুল ইসলাম(Islam)কে সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা করার জেহাদ ছেড়ে দেবার পর অর্থাৎ আল্লাহ(Allah)র রসুলের (দঃ) প্রকৃত সুন্নাহ ত্যাগ কোরে প্রকৃত উম্মতে মোহাম্মদী হোতে বহিষ্কৃত হবার পর জেহাদকে আত্মরক্ষামূলক বোলে আখ্যায়িত করার যে মেরুদণ্ডহীন কাপুরুষোচিত চেষ্টা আরম্ভ করা হোয়েছিল তারই ফলে বণিকদের খবরের মিথ্যা বাহানা বহু পরে যোগ করা হোয়েছিলো এবং ঐ মিথ্যা ইতিহাসে স্থান কোরে নিয়েছে। পাশ্চাত্যের কাছে কর জোড়ে কৈফিয়ৎ দানকারী এই পণ্ডিতরা কিন্তু ওফাতের ঠিক আগে ওসামার (রাঃ) নেতৃত্বে সিরিয়ার যে অভিযানে প্রস্তুতি বিশ্বনবী (দঃ) নিয়েছিলেন এবং তার ওফাতের পর যে অভিযান আবু বকর (রাঃ) পাঠিয়েছিলেন সেটা সম্বন্ধে কোন আত্মরক্ষামূলক কারণ দেখাতে পারেননি। পারেননি কারণ কোন কারণ তারা উদ্ভাবন কোরতে পারেনি। অন্যান্য অভিযানগুলি থেকে তাবুকের অভিযান যে সব বিষয়ে ভিন্ন ছিলো সেগুলো হলো-(ক) কোন অভিযানের প্রস্ততির সময় বা অভিযানের আদেশ দেবার সময় আল্লাহ(Allah)র রসুল (দঃ) প্রকাশ কোরতেন না সে অভিযানের গন্তব্য কোথায় বা কাদের বিরুদ্ধে। বরং এমন হাবভাব প্রকাশ কোরতেন, এমন পরোক্ষভাবে অভিযানের গন্তব্য স্থানের কথা উল্লেখ কোরতেন যে যারা শুনতো তারা প্রকৃত গন্তব্য স্থানের বিপরীত ধারণাই করতো। এটা শত্রুর গোয়েন্দাদের (Intelligence) ধোঁকা দেয়ার জন্য তিনি কোরতেন। শত্রুকে ধোঁকা দেয়া তাদের মধ্যে ভূল ধারণা সৃষ্টি করা প্রতি যুদ্ধের অবশ্য করণীয় কৌশল। কিন্তু তাবুকের অভিযানের লক্ষ্য ও গন্তব্য স্থানের কথা তিনি এই প্রথম বারের মত প্রকাশ্যে ঘোষণা কোরে দিলেন এবং সেটা হলো বাইযানটাইন অর্থাৎ পূর্ব রোমান সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে। ঐ সময় পৃথিবীতে ছিলো দু'টি মহাশক্তি, বিশ্বশক্তি। একটি ঐ রোমান শক্তি এবং অপরটি পারস্য সাম্রাজ্য শক্তি। কিছুদিন আগে পর্য্যন্ত যেমন পৃথিবীতে দুইটি বিশ্বশক্তি ছিলো- যুক্তরাষ্ট্র এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন, তেমনি। ঐ রোমান ও পারস্য শক্তি দু'টোর মধ্যে সব সময় প্রতিদ্বন্দ্বিতা লেগেই থাকতো পৃথিবীর আধিপত্য নিয়ে, এবং সময়ে সময়ে সশস্ত্র সংঘর্ষও লেগে যেতো। কোন সময় রোমান শক্তি জিততো কোন সময় পারস্য। কিন্তু অন্য কোন শক্তি চিন্তাও কোরতে পারতোনা এদের যে কোন একটির সাথে যুদ্ধ করার, সংঘর্ষে যাওয়ার।

ঐ বিশ্বশক্তির একটির বিরুদ্ধে যুদ্ধের ঘোষণা কোরে মহানবী (দঃ) দেখতে চাইলেন তার জাতির মধ্যে কী প্রতিক্রিয়া হয়। তার ঐ অতি দরিদ্র ক্ষুদ্র জাতি যার সমগ্র লোকসংখ্যা বিরাট, পূর্ব রোমান সাম্রাজ্যের একটি ছোট প্রদেশের লোকসংখ্যার চেয়েও কম তারা ভয় পায় কি না। তার (দঃ) ঐ ক্ষুদ্র জাতি এতদিন আরবের ভেতরে আরবদের বিরুদ্ধেই লড়েছে কিন্তু এবার তিনি যাদের সঙ্গে যুদ্ধের কথা ঘোষণা কোরলেন তারা আরব নয়, তারা রোমান- যাদের আরবরা চিরদিন ভয় কোরে এসেছে। এ ভীতির ব্যপারে যে আরবরা তখনও সচেতন তার প্রমাণ হলো যারা দুর্বলচেতা এবং মোনাফেক ছিলো তারা অভিযানে যাওয়া থেকে পলায়ন করার চেষ্টা তো কোরলোই তার ওপর যারা যাবার মনস্থ কোরেছিলেন তাদের কী বোলে ভয় দেখাবার চেষ্টা কোরেছিলো তা দেখুন। ওয়াদিয়া বিন সাবেত প্রমুখ মোনাফেকরা মো'মেনদের এই বোলে ভয় দেখালো যে, "তোমরা কি ভেবেছো যে বাইযানটাইনদের সঙ্গে যুদ্ধ করা আরবদের সঙ্গে যুদ্ধ করার মত? আল্লাহ(Allah)র কসম, আমরা দেখতে পাচ্ছি অতি শীঘ্রই তারা তোমাদের দড়ি দিয়ে বেঁধে ফেলবে [সিরাত রসুলাল্লাহ (দঃ) -মোহাম্মদ বিন ইসহাক, অনুবাদ Guillaume, ৬০৬ পৃঃ]।" বিশ্বনবী (দঃ) জানতেন যে অতি শীঘ্রই তার জাতিকে শুধু ঐ রোমান নয় অন্য বিশ্বশক্তি পারস্যের বিরুদ্ধেও সশস্ত্র সংগ্রাম কোরতে হবে এবং পরবর্তীতে পৃথিবীর অন্যান্য জাতিসমূহের বিরুদ্ধেও লড়তে হবে যখন তার নিজের ওপর আল্লাহ(Allah)র দেয়া দায়িত্ব তার ওফাতের পর তার উম্মাহর ওপর অর্পিত হবে। জাতি মানসিকভাবে সেজন্য প্রস্তুত হোয়েছে কিনা, সেই দুঃসাহস অর্জন কোরেছে কিনা তা পরীক্ষা কোরে দেখার জন্যই তিনি এই প্রথম বারের মত তার অভিযানের উদ্দেশ্য প্রকাশ্যে ঘোষণা কোরে দিলেন।

(খ) বিশ্বনবী (দঃ) যখন তাবুকের অভিযানের আদেশ কোরলেন তখন অন্যান্য বছরের চেয়ে অনেক বেশী গরম পড়েছিলো। আমার ব্যক্তিগত অভিমত এই যে ঐ গরম আল্লাহ(Allah)র সঙ্গে পরামর্শ ও পরিকল্পনা কোরেই করা হোয়েছিলো উম্মাহকে পরীক্ষা করার জন্য। এত গরম ও খরা পড়েছিলো যে মানুষ অস্থির হোয়ে একটু ছায়ার জন্য ব্যাকুল হোয়ে পড়েছিলো। ঐ রকম অসহ্য গরমে জাতি তার কর্তব্য অবহেলা করে কিনা তা পরীক্ষা করাই ছিলো আল্লাহ(Allah)র রসুলের (দঃ) উদ্দেশ্য। (গ) বিশ্বনবী (দঃ) অভিযানের জন্য এমন সময় বেছে নিলেন যখন মদীনার সমস্ত খেজুর বাগানের খেজুর পেকেছে আর কয়েকদিন পরই ফসল কাটা আরম্ভ হবে। মনে রাখতে হবে অন্যান্য দেশের ধান বা গমের মত মদীনার প্রধান ফসল হলো খেজুর। অনেক কষ্টে চাষ কোরে অনেক যত্ন কোরে ফসল পাকলে ঠিক কাটার সময় তিনি ডাক দিলেন অভিযানে বের হওয়ার । উদ্দেশ্য- পরীক্ষা করা যে জেহাদের ডাকে এই জাতি পাকা ফসল রেখে আল্লাহ(Allah)র রাস্তায় প্রাণ দেবার জন্য প্রস্তুত হোয়েছে কিনা। (ঘ) এবারের গন্তব্য স্থান হলো বহুদূর। এতদিন এই জাতি আরবের মধ্যেই যুদ্ধ কোরেছে, বাইরে যায়নি। এবার বিশ্বনবী (দঃ) ডাক দিলেন আরবের গণ্ডী ছাড়িয়ে বাইরে যাবার। উদ্দেশ্য হলো ভবিষ্যতে যে কাজের জন্য তিনি এই জাতিকে তৈরী কোরেছেন সেই কাজ অর্থাৎ আল্লাহ(Allah)র দ্বীনকে সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা করার জন্য স্বদেশ থেকে বের হোয়ে যাবার প্রথম স্বাদ জাতিকে দেয়া। এই শিক্ষা যে কেমন সাফল্য লাভ কোরেছিলো ইতিহাস তার সাক্ষী। প্রায় সম্পূর্ণ জাতিটিই অস্ত্র হাতে আরব থেকে বের হোয়ে গিয়েছিলো এবং শতকরা আশী জন আর স্বদেশে ফেরেননি- তাদের নেতার (দঃ) প্রকৃত সুন্নাহ পালন কোরতে যেয়ে। যে সব দুর্বলচেতা লোক এই দূরত্বের ভয়ে তাবুক অভিযানে যোগ দেয়নি তাদের সম্বন্ধে আল্লাহ(Allah) কোরানে বলছেন "এটা যদি কাছাকাছি কোন অভিযান হতো এবং পথ সংক্ষিপ্ত হতো তবে তারা তোমার (নবীর) অনুসরণ কোরতো কিন্তু ঐ দূরযাত্রা তাদের ওপর ভারী হোয়ে গিয়েছিলো (কোরান- সূরা আত-তওবা- ৪২)। (ঙ) বিশ্বনবী (দঃ) সবাইকে যার যা সামর্থ আছে সেই মোতাবেক ঐ অভিযানে সাহায্য কোরতে আহ্বান কোরলেন। তার এই কাজটাও ঐ অভিযানের গন্তব্যস্থানের কথা প্রকাশ করার মতো প্রথম বারে মত হলো। অর্থাৎ এর আগে কোন অভিযানে এমন কোরে যার যা সামর্থ আছে তা দিয়ে সাহায্য করার জন্য আহ্বান করেননি। এর উদ্দেশ্য ছিলো পরীক্ষা কোরে দেখা যে আল্লাহ(Allah)র রাস্তায় জেহাদে তার জাতি পার্থিব সব কিছু কোরবান করার জন্য কতখানি প্রস্তুত হোয়েছে। (চ) অন্যান্য অভিযানগুলি থেকে আরও একটা বৈশিষ্ট্য হলো এইযে, এবার মহানবী (দঃ) সমস্ত জাতিটাকে অভিযানে বের হবার ডাক দিলেন। উদ্দেশ্য পরীক্ষা (Test) কোরে দেখা যে তিনি যে একটি সামরিক জাতি সৃষ্টি কোরতে সাধনা কোরেছেন তা সাফল্য মণ্ডিত হোয়েছে কিনা। কারণ তিনি জানতেন যে ভবিষ্যতে তা ঐ যোদ্ধা জাতিকে অস্ত্র হাতে দেশ ত্যাগ কোরতে হবে আল্লাহ(Allah)র দ্বীনকে পৃথিবীময় প্রবর্তন কোরে মানব জাতির মধ্যে ন্যায়-বিচার, শান্তি প্রতিষ্ঠা কোরে, ইবলিসের চ্যালেঞ্জে আল্লাহ(Allah)কে জয়ী কোরতে। এই দায়িত্ব থেকে যে কেউ মুক্তি পাবে না তার প্রমাণ এই যে, যে তিনজন প্রকৃত মো'মেন ঐ প্রচণ্ড গরমের জন্য নিজেদের গাফলতির জন্য যাব-যাচ্ছি কোরে তাবুক অভিযানে যোগ দেন নাই এবং যেজন্য আল্লাহ(Allah) তাদের পঞ্চাশ দিন একঘরে অর্থাৎ মুসলিম(Muslim) সমাজ থেকে বহিষ্কার কোরে মর্মান্তিক শাস্তি দিলেন সেই তিনজনের মধ্যে একজন হেলাল বিন উমাইয়া (রাঃ) ছিলেন বৃদ্ধ, এবং এতখানি বৃদ্ধ যে তাকে খেদমতের জন্য একজন কেউ না থাকলে চলেনা এবং এজন্য তার স্ত্রীকে আল্লাহ(Allah)র রসুলের (দঃ) কাছ থেকে ঐ খেদমতের বিশেষ (Special) অনুমতি নিতে হোয়েছিলো। যদি হেলালের (রাঃ) মত বৃদ্ধ সশস্ত্র সংগ্রাম না করার ঐ শাস্তি পেয়ে থাকেন তবে আর কে আছে যে এই জাতির উম্মাহর একজন বোলে দাবীদার হোয়েও সশস্ত্র সংগ্রাম না কোরেও জান্নাতের আশা করে? জীবনের সাধনা সফল হোয়েছে কি-না তা পরীক্ষায় বিশ্বনবী (দঃ) ডাক দিলেন সমস্ত জাতিটাকে। তার প্রমাণ এই যে অভিযান থেকে ফিরে এসে তিনি বোসলেন হিসাব নিতে, কে কে অভিযানে অংশ নেয়নি তার। যারা অংশ নেয়নি তাদের সম্বন্ধে আল্লাহ(Allah) বোললেন- যখন তুমি (অভিযান থেকে) ফিরবে তখন তারা আল্লাহ(Allah)র হলফ কোরে (অযুহাত দিয়ে) বোলবে তাদের যেন কিছু করা না হয়। তাদের ছেড়ে দাও, কারণ তারা অপবিত্র এবং তাদের স্থান হোচ্ছে জাহান্নাম। তাদের কাজের প্রতিফল হিসাবে তারা তাদের অযুহাত (কৈফিয়ৎ) হলফ কোরে বোলবে যাতে তুমি তা গ্রহণ কর। তুমি গ্রহণ কোরলেও আল্লাহ(Allah) ফাসেক লোকদের (কৈফিয়ৎ) গ্রহণ করেন না (কোরান-সূরা আত-তওবা- ৯৫, ৯৬)। আল্লাহ(Allah)র নির্দেশ মোতাবেক তাবুক অভিযানে যারা না যেয়ে বিভিন্ন অযুহাত-কৈফিয়ৎ দিয়েছিলো তাদের মহানবী (দঃ) ছেড়ে দিলেন, কিছু বোললেন না, কারণ আল্লাহ(Allah) তো বোলেই দিলেন যে তারা অপবিত্র, তাদের স্থান জাহান্নামে। যে তিনজন গড়িমসি কোরে যাননি কিন্তু রাসুলাল্লাহ (দঃ) মদীনায় ফেরার পর যখন বুঝেছেন কী সাংঘাতিক অপরাধ কোরে ফেলেছেন তখন কোন অযুহাত, কোন কৈফিয়ৎ দাঁড় না কোরে অকপটে অপরাধ স্বীকার কোরলেন, তাদের আল্লাহ(Allah) মুসলিম(Muslim) সমাজ থেকে বহিষ্কার কোরে দিলেন। যদিও বহুদিন মর্মান্তিক শাস্তির পর আল্লাহ(Allah) তাদের অকপটতার জন্য মাফ কোরে দিয়েছিলেন।

মনে রাখতে হবে বিশ্বনবী (দঃ) তাবুক অভিযানের ডাক দিয়েছিলেন নবম হিজরীতে, অর্থাৎ তার কর্মজীবনের শেষ দিকে। এই যে তিনি পরীক্ষা কোরে দেখতে চাইলেন যে তার সারা জীবনের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফল কী হোয়েছে তাতে কী দেখা গেলো? দেখা গেলো (ক) বিশ্বনবীর (দঃ) কর্মবহুল জীবনের মুখ্য উদ্দেশ্য ছিলো একটি অপরাজেয় দুর্দ্ধর্ষ যোদ্ধা জাতি সৃষ্টি করা। কারণ শেষ জীবনে তিনি সফল কি সফল নন তা পরীক্ষা কোরতে যেয়ে তিনি এ পরীক্ষা কোরলেন না যে, তার সৃষ্ট জাতিটি কেমন ধার্মিক হোয়েছে বা কেমন রিপুজয়ী সাধু হোয়েছে বা কেমন পণ্ডিত হোয়েছে বা কেমন কোরানের মোফাসসির হোয়েছে বা কেমন মুফতি হোয়েছে বা কেমন মোবালি্লগ হোয়েছে বা কেমন মোহাদ্দিস হোয়েছে বা কেমন মুত্তাকী হোয়েছে। তিনি এসব কিছুরই পরীক্ষা নিলেন না। তিনি নিলেন জাতি একটি বিশ্বশক্তির সম্মুখীন হবার মত নির্ভীক ও দুঃসাহসী হোয়েছে কিনা; দুঃসহ গরম ও সুদূর পথ তাদের বিচলিত কোরতে পারে কিনা; কঠোর পরিশ্রমের ফসলকে আল্লাহ(Allah)র রাস্তায় হেলায় পরিত্যাগ কোরতে পারে কিনা; আল্লাহ(Allah)র রাস্তায় সশস্ত্র সংগ্রামে তাদের পার্থিব সম্পদ দান কোরতে পারে কিনা এবং সর্বোপরি আল্লাহ(Allah)র রাস্তায় সশস্ত্র সংগ্রামে শাহাদাত লাভের জন্য আগ্রহী হোয়েছে কিনা। তাবুকের পরীক্ষায় দেখা গেলো আল্লাহ(Allah)র রসুলের (দঃ) জীবনের সাধনা সফল হোয়েছে। কারণ সমস্ত জাতি থেকে মাত্র আশী জনের মত দুর্বলচেতা ও মোনফেক তাবুক অভিযানে যোগ দেয়নি, ঐ তিনজন প্রকৃত মোমেন ছাড়া। অর্থাৎ শতকরা মাত্র ০.২৬ জন মানুষ অভিযানে যোগ দেয়নি। ধোরতে গেলে শতকরা একশ জন, সম্পূর্ণ জাতিটাই বিশ্বনবীর ডাকে শত্রু বিশ্বশক্তি ও নিজেরা কত দুর্বল জেনেও নিজেদের পার্থিব সম্পদ অভিযানের প্রস্তুতির জন্য দান কোরে পাকা ফসল পরিত্যাগ কোরে অসহ্য গরমের মধ্যে মরভুমির বুকের উপর দিয়ে বহু দূরের যাত্রায় নিজেদের প্রাণ কোরবান করার জন্য রওয়ানা হোয়ে গেলো। মানব জাতির ইতিহাসে এমন নেতা আর কখনও জন্মাননি যিনি মাত্র তেইশ বছরে, প্রকৃত পক্ষে দশ বছরে একটি উপেক্ষিত, অবহেলিত চরম দারিদ্র, বিচ্ছিন্ন জনগোষ্ঠীকে এমন রূপান্তর কোরতে পেরেছেন।

আজ যারা নিজেদের উম্মতে মোহাম্মদী মনে কোরে নানা রকম সওয়াব উপার্জনে ব্যস্ত আছেন তারা মেহেরবানী কোরে নিজেদের ঐ উম্মাহ, জাতির সঙ্গে একটু তুলনা কোরে দেখুন যে বিশ্বনবীর (দঃ) হাতে গড়া যে জাতিটি তাবুক অভিযানে গেলো এবং আজকের যে আমরা একই জাতি, একই উম্মাহ কিনা। তারা দেখতে পাবেন এক তো নয়ই বরং সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী দু'টো জাতি। রসুলুল্লাহ (দঃ) যে সর্বত্যাগী দুর্দ্ধর্ষ যোদ্ধা জাতি সৃষ্টি কোরেছিলেন যার প্রমাণ তাবুক, তার ঠিক উল্টো যদি কিছু থেকে থাকে তবে সেটা বর্তমানের আমরা। আমরা যে “সওয়াব” কামাইয়ের কাজে অত্যন্ত ব্যস্ত আছি তা এবং প্রকৃত সওয়াব কি তা বিশ্বনবীর (দঃ) একটি কাজ থেকে সুস্পষ্ট হোয়ে উঠে। যিনি ঐ যোদ্ধা জাতি সৃষ্টি কোরেছিলেন তার কাছে সওয়াব কি আর আমাদের কাছে সওয়াব কি তার তফাৎ দেখা যায় এই হাদীসটি থেকে। আল্লাহ(Allah)র রসুল (দঃ) একদিন একজন লোকের জানাযা পড়তে আসলেন। যখন মৃত ব্যক্তিকে রাখা হলো তখন ওমর বিন খাত্তাব (রাঃ) বোললেন, "ইয়া রসুলাল্লাহ! এর জানাযা পড়বেন না, এ লোকটি একজন ফাজের।" তখন মহানবী (দঃ) সমবেত জনতার দিকে চেয়ে জিজ্ঞাসা কোরলেন, "তোমাদের মধ্যে কেউ এই লোককে ইসলামের কোন কাজ কোরতে দেখেছো?" একজন লোক বোললেন, " হ্যাঁ রসুলুল্লাহ! ইনি কোন অভিযানে অর্দ্ধেক রাত্রি প্রহরা দিয়েছেন।" এই শুনে রসুলুল্লাহ (দঃ) ঐ লোকের জানাযায় নামায পড়ালেন এবং দাফন করার পর তার কবরের ওপর মাটি ছিটালেন। তারপর (মৃত ব্যক্তিকে লক্ষ্য কোরে) বোললেন, "তোমার সঙ্গী-সাথীরা ভাবছে তুমি আগুনের সঙ্গী (জাহান্নামী)। আর আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি তুমি জান্নাতের অধিবাসী। হে ওমর! নিশ্চয়ই তোমাকে মানুষের কাজ সম্বদ্ধে প্রশ্ন করা হবে না। কিন্তু প্রশ্ন করা হবে অন্তর্নিহিত চরিত্র সম্বন্ধে [হাদীস- ইবনে আ'য়েয (রাঃ) থেকে- বায়হাকি, মেশকাত]"। এখানে লক্ষ্য করার বিষয় হোচ্ছে, ওমর মৃত লোকটি সম্বন্ধে যে শব্দটা ব্যবহার কোরলেন সেটা হলো ফাজের; যার আভিধানিক অর্থ হলো যার চলাফেরা-কাজকর্ম খারাপ, গুনাহগার, এক কথায় দুষ্কৃতকারী। যেহেতু ওমরের (রাঃ) ঐ অভিমত কেউ আপত্তি কোরলেন না এবং তারপর বিশ্বনবী (দঃ) যখন জিজ্ঞাসা কোরলেন যে ঐ লোকটিকে কেউ কোন দিন ইসলামের কোন কাজ কোরতে দেখেছে কিনা, তখন ঐ এক রাত্রি সামরিক ছাউনী পাহারা দেয়ার কাজ ছাড়া আর কেউ কিছু বোলতে পারলেন না সেহেতু ঐ মৃত ব্যক্তি নিঃসন্দেহে অতি খারাপ, অতি গোনাহগার লোক ছিলেন। কিন্তু ঐ একটি কাজের জন্য আল্লাহ(Allah)র নবী (দঃ) তার জানাযার নামায তো পড়ালেনই, তার ওপর সকলের সামনে প্রকাশ্যে ঘোষণা কোরলেন যে ঐ দুষ্কৃতকারী পাপী জান্নাতবাসী। আজ আমরা গোনাহ ও সওয়াবের যে হিসেব করি সে হিসাবে রসুলাল্লাহর (দঃ) কাজ অবশ্যই বিপরীত। আসলেই বিপরীত। পেছনে বহুবার বোলে এসেছি বিশ্বনবীর (দঃ) ও তার আসহাবের (রাঃ) ইসলাম(Islam) আর আজকের আমাদের ইসলাম(Islam) এ দু'টো বিপরীতমুখী দ্বীন। কারণ এই দুটোর আকীদা বিপরীত। একটি বর্হিমুখী, সংঘাত-সংঘর্ষমুখী; অন্যটি অন্তর্মুখী, সংঘর্ষ থেকে পলায়নমুখী। গোনাহগার দুশ্চরিত্র হওয়া সত্বেও ঐ মৃত লোকটির একটি কাজ থেকে বোঝা গেল যে শেষ নবী (দঃ) যে যোদ্ধা জাতি সৃষ্টি কোরেছিলেন সে তাতে বিশ্বাসী ছিলো, তাতে অংশ নিয়েছিলো এবং প্রহরা দেওয়ার মত সামান্য কাজ হোলেও তা কোরেছিলে। এই দ্বীনের যে প্রকৃত , আসল কাজ তাতে সে যোগ দিয়েছিলো। কাজেই সে কত সওয়াব কামিয়েছে তার কোন হিসাব দরকার নেই সে কত গোনাহ করেছে সে হিসাবেরও দরকার নেই, আল্লাহ(Allah) তাকে জান্নাতে দেবেন। আল্লাহ(Allah)র রসুলের (দঃ) ঐ কাজের পরও যারা জেহাদ ও কিতাল-সশস্ত্র সংগ্রামকে-ঈমানের পর জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ কর্তব্য হিসাবে না নিয়ে এবং সেই মোতাবেক কাজ না কোরে সওয়াব কামাবার চেষ্টায় আছেন, তারা কামাতে থাকুন। কেয়ামতের হিসাবের দিনে তারা দেখবেন তাদের স্থান কোথায় হয়- জান্নাতে না জাহান্নামে। বিশ্বনবীর (দঃ) ও তার উম্মাহার ওপর আল্লাহ(Allah) যে কর্তব্য ও দায়িত্ব অর্পণ কোরলেন সেই দায়িত্ব অর্থাৎ পৃথিবীর প্রচলিত সমস্ত জীবন-ব্যবস্থা মিটিয়ে দিয়ে শেষ দ্বীন প্রতিষ্ঠা এই দায়িত্ব পালন কোরতে গেলে যে চরিত্রের মানুষ প্রয়োজন বিশ্বনবীকে (দঃ) অবশ্যই সেই চরিত্রের মানুষ ও জাতি গঠন করার চেষ্টা কোরতে হয়েছে তাই নয় কি। এবং ইতিহাস সাক্ষী তিনি এমন সফল হোয়েছিলেন যেমন সফল মানব জাতির মধ্যে কেউ হোতে পারেনি। তিনি যে চরিত্র সৃষ্টি কোরেছিলেন সেটা কী চরিত্র? সাধু সন্ন্যাসী? ফকির-দরবেশ? কবি সাহিত্যিক? ফকীহ মোফাসসীর? এর জবাব আমরা পাই তার মেয়ের বিয়ের ব্যাপারে। তার (দঃ) অতি আদরের অতি মোহাব্বতের মেয়ে ফাতেমা (রাঃ) বিয়ে দিলেন তার সাহাবা আলীর (রাঃ) সঙ্গে। একথা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে মহানবী (দঃ) তার উম্মাহর যে চরিত্র সৃষ্টি কোরতে চেয়েছিলেন আলীর(রাঃ) মধ্যে সে চরিত্র পরিপূর্ণ ভাবে বিকাশ হোয়েছিলো, তা না হোলে আল্লাহ(Allah)র রসুল (দঃ) জান্নাতের রাণীকে তার হাতে তুলে দিতেন না। এখন দেখা যাক কী ছিলো সেই চরিত্র। বিয়ে ঠিক হবার পর বিশ্বনবী (দঃ) আলীকে (রাঃ) জিজ্ঞাসা কোরলেন তার কাছে কি আছে? বিয়েতে কিছু খরচ হবে তো। আলী (রাঃ) জবাব দিলেন টাকা পয়সা কিছুই নেই। থাকার মধ্যে তার কাছে আছে শুধু একটি ঘোড়া, একটি তলোয়ার আর একটি লোহার বর্ম। লক্ষ্য করুণ একটি মানুষের পার্থিব সম্পদ বোলতে আছে একটি ঘোড়া, একটি তরবারি আর বর্ম। তিনটিই যুদ্ধের উপকরণ এবং ও ছাড়া তার আর কিছুই নেই। অর্থাৎ এক কথায় আলীর (রাঃ) জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ ও বোধহয় একমাত্র লক্ষ্য হলো, যুদ্ধ, জেহাদ, তাই আর কিছু থাকুক না, থাকুক যুদ্ধের উপকরণ থাকবেই থাকবে, না খেয়ে থাকলেও অস্ত্র থাকবে। এই মনোভাব, আকীদা শুধু আলীর (রাঃ) ছিল না, প্রকৃত উম্মতে মোহাম্মদীর প্রত্যেকেরই তাই ছিলো। আলীর (রাঃ) বিয়ের বহু পরে এই প্রকৃত উম্মতে মোহম্মদী যখন তাদের ওপর আল্লাহ(Allah)র ও রাসুলের(দঃ) অর্পিত দায়িত্ব পালন কোরতে কোরতে সুদূর মিসরে যেয়ে পৌঁছেছিলো তখনও তাদের একজন উবায়দা (রাঃ) খ্রীস্টান শাসনকর্তাকে বোলেছিলেন- আমরা (উম্মতে মোহাম্মদী) বেঁচেই আছি শুধু জেহাদ করার জন্য। এ দুনিয়াতে শুধু বেঁচে থাকার জন্য খাওয়া আর গায়ে পড়ার কাপড় ছাড়া আমরা আর কিছুই চাই না। আমাদের জন্য ঐ দুনিয়া (পরকাল)। এই হলো প্রকৃত মোমেন, মুসলিম(Muslim) আর উম্মতে মোহাম্মদীর সঠিক আকীদা।

তারপর দেখুন মহানবী (দঃ) কি কোরলেন। তিনি আলীকে (রাঃ) বোললেন আর যখন কিছুই নেই তখন ঐ বর্মটি বন্ধক দিয়ে কিছু টাকা নিয়ে আসো। তাই করা হলো এবং ঐ বর্ম বন্ধক দিয়ে বিয়ের খরচ চালানো হলো। ঘোড়া তলোয়ার আর বর্মের মধ্যে আদেশ হলো বর্ম বন্ধক দিতে। কেন? তলোয়ার ছাড়া যুদ্ধ সম্ভবই নয়, ঘোড়া ছাড়া খুবই অসুবিধা, একজন অশ্বারোহীকে পদাতিক হোয়ে যেতে হয়। কিন্তু বর্ম ছাড়া যুদ্ধ সম্ভব যদিও তাতে বিপদের আশংকা বেড়ে যায়। অর্থাৎ যুদ্ধ যেন কোন অবস্থাতেই বন্ধ না হয়। আলীর (রাঃ), নিজের জামাতার জীবনের আশংকা বেড়ে গেলেও নয়। পৃথিবীখ্যাত প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর মেরিটাস বিখ্যাত ইতিহাসবিদ মিঃ ফিলিপ হিট্টি তার বই The Arabs এ মুসলিম(Muslim) জাতির, উম্মতে মোহাম্মদীর অবিশ্বাস্য সামরিক বিজয়ের যে কারণগুলি উল্লেখ কোরেছে তার মধ্যে অন্যতম প্রধান কারণ হিসাবে তিনি লিখেছেন মুসলিম(Muslim)দের মৃতুভয়হীনতা। ইংরাজিতে তিনি শব্দ ব্যবহার কোরেছেন Utter contempt of death আক্ষরিক শব্দার্থে মৃত্যুর প্রতি চরম অবজ্ঞা। উম্মতে মোহাম্মদীর মৃত্যুর প্রতি এই অবজ্ঞার কথা হিট্টি তার ঐ বইয়ে দুইবার উল্লেখ কোরেছেন (The Arabs-P.K. Hitti,Gateaway Edition.Chicago,p-35,58,)। এবং তিনি একথাও ঐ সঙ্গে লিখেছেন যে ঐ মৃত্যুভয়হীনতা মৃত্যুর প্রতি ঐ চরম অবজ্ঞা ঐ জাতির মধ্যে সৃষ্টি কোরেছিলো তাদের বিশ্বাস অর্থাৎ ইসলাম(Islam)।

আমি পেছনে লিখে এসেছি যে বিশ্বনবী (দঃ) যে ইসলাম(Islam) মানব জাতির জন্য রেখে গেছেন সেই ইসলাম(Islam) আর বর্তমানে যে ইসলাম(Islam) পৃথিবীতে চালু আছে তা দু'টি সম্পূর্ণ ভিন্ন, বিপরীতমুখী দ্বীন, ধর্ম। আমার কথার প্রমাণ এখানে হোয়ে যাচ্ছে। রসুলাল্লাহর (দঃ) ইসলাম(Islam) তার উম্মতের মধ্যে সৃষ্টি কোরেছিলো মৃত্যুর প্রতি চরমতম অবজ্ঞা, শাহাদাতের জন্য উদগ্র পিপাসা। আর আজকের ওলামা ও মাশায়েখদের ইসলাম(Islam) এই জাতির মধ্যে সৃষ্টি কোরে মৃত্যুভয়, জঘন্য কাপুরুষতা, সমস্ত সংগ্রাম-সমস্ত সংঘর্ষ থেকে পলায়নের চরিত্র। রসুলাল্লাহর (দঃ) শেখানো ইসলামের বিপরীতমুখী, বর্তমানের ইসলামের তৈরী মুসলিম(Muslim)দের সম্বন্ধে আল্লাহ(Allah) ও তার রসুলের (দঃ) মনোভাব কি তা পেশ কোরছি। প্রথমে আল্লাহ(Allah) কি বোলছেন। তিনি বোলছেন যখন কোন সূরায় (কোরানের) যুদ্ধ উল্লেখ করা হয় তখন যাদের হৃদয়ের মধ্যে রোগ আছে তাদের অবস্থা এমন হয় যে তারা যেন তখনই অজ্ঞান হোয়ে মৃত্যুমুখে পতিত হোয়ে যাবে (কোরান- সূরা মোহাম্মদ- ২০)। সমস্ত মুফাসসিররা " যাদের হৃদয়ের মধ্যে রোগ আছে" এর অর্থ কোরেছেন মোনাফেকরা। সহজ কথায় মুসলিম(Muslim) হোতে হোলে যুদ্ধ কোরতে হবে ঐ কথায় যারা ভয়ে অর্দ্ধ-মৃত হোয়ে যায় তারা মোনাফেক। এদের আল্লাহ(Allah) লানত, অভিশাপ দিয়েছেন কোরানে, একবার নয় বহুবার। বর্তমানের এই মুসলিম(Muslim) জাতিকে যুদ্ধের ডাক দিলে তাদের কোরানে বর্ণিত অবস্থার মত হয়, এবং সেটা হয় মৃত্যুভয়ে। এখন মহানবী (দঃ) কি বোলছেন তা দেখা যাক। তার উম্মাহর ভবিষ্যত সম্বন্ধে বোলতে যেয়ে তিনি যখন বোললেন তার উম্মাহ শত্রুদের দ্বারা পরাজিত, লাঞ্ছিত-অপমানিত হবে, তাদের গোলামে পরিণত হবে, তখন সাহাবারা প্রশ্ন কোরলেন, কি কারণে? বিশ্বনবী (দঃ) জবাব দিয়েছিলেন তারা তখন মৃত্যুভয়ে ভীত হবে [হাদীস-সাওবান (রাঃ) থেকে- আবু দাউদ, মেশকাত]। অন্য কথায় তার (দঃ) ইসলাম(Islam) মৃত্যুর (শাহাদাতের) জন্য পাগল-ভয়ংকর যোদ্ধা সৃষ্টি করতো আর বর্তমানের ইসলাম(Islam) মৃত্যুর ভয়ে ভীত কাপুরুষ সৃষ্টি করে। দু'টি বিপরীত ধর্মী দ্বীন।

1 টি মন্তব্য:

Unknown বলেছেন...

আল্লাহ ছাড়া কোনো হুকুম দাতা নেই


মোহাম্মদ(স)আল্লাহর রাসূল