বৃহস্পতিবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০১১

৩৫। লা'নত (অভিশাপ)

উৎস: Islam and Dajjal
সর্বশক্তিমান আল্লাহ(Allah) কোরানে বিভিন্ন জাতি, গোষ্ঠী, গোত্র, এমন কি ব্যক্তিকে তার কৃতকর্মের জন্য লা'নত অর্থাৎ অভিশাপ দিয়েছেন। তার অভিশাপ মানেই নির্মম শাস্তি। আল্লাহ(Allah), যার চেয়ে বড় ক্ষমাশীল নেই, যার চেয়ে বড় দয়াশীল নেই, যার কাছে ক্ষমা চাইলে তিনি বার বার ক্ষমার আশ্বাস দিয়েছেন, সেই তিনিই যখন অভিশাপ দেন তখন নিশ্চিতভাবে বলা যায় যে সেই ব্যক্তি বা গোত্র বা গোষ্ঠী বা জাতি ক্ষমার যোগ্যতা ছাড়িয়ে বহুদূর চোলে গেছে, সেই গফুরুর রাহীমেরও ক্ষমার সীমানা ছাড়িয়ে গেছে। কোরানে দেখা যায় তিনি বিভিন্নভাবে, প্রধানতঃ তিন ভাবে লা'নত দিয়েছেন। একঃ তিনি শুধু নিজে দিয়েছেন। দুইঃ অন্যের মুখ দিয়ে দিয়েছেন। তিনঃ তিনি তার মালায়েক অর্থাৎ ফেরেশতা ও মানব জাতি সম্মিলিতভাবে লা'নত দিয়েছেন। উদাহরণঃ শুধু তার একার লা'নত তিনি দিচ্ছেন তাদের, যুদ্ধ কোরতে বোললে যারা ভয়ে মুর্ছিত, মৃতপ্রায় হোয়ে যায় (কোরান সূরা-মোহাম্মদ ২৩, ২৪), কাফেরদের (সূরা-আহাযাব ৬৪), মোনাফেকদের (সূরা আল আহযাব ৬০, ৬১), যালেমদের (অন্যায়কারীদের) (সূরা হুদ ১৮) ইত্যাদি। অন্যের মুখ দিয়ে লা'নত তিনি দিচ্ছেন বনি ইসরাইলের কাফেরদেরঃ একবার দাউদ (আঃ) কে দিয়ে আরেকবার ঈসা (আঃ) কে দিয়ে (সূরা আল মায়েদা ৮১)। আর তিনি, তার মালায়েক ও মানব জাতির সম্মিলিত লা'নত দিচ্ছেন দু'বার। একবার দিচ্ছেন সেই সব কাফেরদের যারা মৃত্যু পর্য্যন্ত আল্লাহ(Allah)র দ্বীনকে অস্বীকার কোরে কাফের অবস্থাই মারা গেলো। তাদের সম্বন্ধে আল্লাহ(Allah) বোলছেন- তারা (জাহান্নামে) চিরদিন থাকবে। তাদের শাস্তি কমানোও হবেন, বিরতিও দেয়া হবেনা (কোরান সূরা আল-বাকারা ১৬১, ১৬২)। আরেকবার দিচ্ছেন তাদের, যারা একবার সত্য গ্রহণ করার পর কুফরে (অবিশ্বাসে) ফিরে গেছে (কোরান সূরা আল-মায়েদা ৮৬, ৮৯)।

আল্লাহ(Allah)র একার দেয়া লা'নত, অন্যের মুখ দিয়ে দেয়া লা'নত আর আল্লাহ(Allah), তার মালায়েক ও মানব জাতির সম্মিলিত লা'নত; এই তিন রকমের লা'নতের মধ্যে সবচেয়ে ভয়ংকর লা'নত হোচ্ছে ঐ সম্মিলিত লা'নত সন্দেহ নেই। অন্যের মুখ দিয়ে তিনি যে দু'বার বনি ইসরাইল অর্থাৎ ইহুদী জাতিকে লা'নত দিলেন তার পরিণাম দেখলেই বোঝা যাবে যে সম্মিলিত লা'নত কত ভয়ংকর হবে। ইহুদী জাতির ওপর প্রথম লা'নত তিনি দিলেন দাউদের (আঃ) মুখ দিয়ে। ফল হলো এই যে, ব্যাবিলোনের রাজা (নবুশ্যাড্ নেযার) ইহুদীদের আক্রমন কোরে পরাজিত করলো। ব্যাবিলোনীয় সৈন্যরা তাদের ঘরে ঘরে প্রবেশ কোরে তাদের হত্যা করলো, বাকি সমস্ত লোকজনকে বন্দী কোরে সমস্ত জাতিটাকে ক্রীতদাসে পরিণত কোরে তাদের স্বদেশ ব্যাবিলোনে নিয়ে গেল, ইহুদীদের ডেভিড মন্দীর (Temple of David) ধ্বংশ কোরে দিলো। এ শাস্তি আল্লাহ(Allah) দিলেন খ্রীস্টপূর্বাব্দ ৫৮৬ সনে। সম্পূর্ণ জাতিটি ব্যাবিলোনে বহু বছর ক্রীতদাসের জীবন যাপনের পর আল্লাহ(Allah)র দয়ার উদ্রেগ হলো। তিনি তাদের আবার সিরিয়ায় ফিরিয়ে এনে তাদের ওপর দয়া কোরলেন। ইহুদীরা আবার ধনে-জনে সমৃদ্ধ হোয়ে উঠলো, তারা তাদের ডেভিড মন্দীর পুনঃনির্মান করলো। তারপর যখন তারা আবার বিপথগামী হলো তখন আল্লাহ(Allah) পাঠালেন তার নবী ঈসাকে (আঃ)। ঈসা (আঃ) এসে বনি ইসরাইলীদের ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি ও সীমালংঘন থেকে বিরত কোরতে চেষ্টা কোরলেন, কিন্তু ব্যর্থ হোলেন। তখন তার মুখ দিয়ে আল্লাহ(Allah) তাদের দ্বিতীয় বার লা'নত দিলেন। এই দ্বিতীয় লা'নতের ফলে ৭০ খ্রীস্টাব্দে রোমান টিটাস ইহুদীদের আক্রমন কোরে তাদের পাইকারীভাবে হত্যা করলো, তাদের মেয়েদের নিয়ে গেলো, ধন-সম্পত্তি সব লুটে নিলো, ইহুদীদের ডেভিড মন্দীর (Temple of David) সহ তাদের রাজধানী যেরুজালেম শহর সম্পূর্ণ ধ্বংস কোরে দিলো এবং তারপর সমস্ত সিরিয়া থেকে সমস্ত জাতিটাকে সমূলে উচ্ছেদ কোরে দিলো। হাজার হাজার বছরের বাসস্থান থেকে উৎখাত হোয়ে ইহুদীরা ইউরোপের বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নিলো। সেই ৭০ খ্রীস্টাব্দ থেকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পর্য্যন্ত অর্থাৎ প্রায় দুই হাজার বছর এই ইহুদী জাতির ইতিহাস কি? তাদের ইতিহাস হোচ্ছে এই যে আল্লাহ(Allah)র লা'নতের ফলে ইউরোপের যে দেশেই তারা আশ্রয় নিয়েছে, বসতি স্থাপন কোরেছে, সেই দেশের সমস্ত মানুষ তাদের অবজ্ঞা কোরছে, ঘৃণা কোরেছে। আমরা শুকর যেমন ঘৃণা করি- তেমনি ঘৃণা কোরেছে। শুধু ঘৃণা কোরেই তারা ক্ষান্ত হয়নি। মাঝে মাঝেই ইউরোপের খ্রীস্টানরা দলবদ্ধ হোয়ে ইহুদীদের বসতি আক্রমন কোরে তাদের পুরুষদের হত্যা কোরে মেয়েদের বেঁধে নিয়ে গেছে, সম্পত্তি লুটপাট কোরে বাড়ি-ঘর আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছে। এই কাজটা ইউরোপীয় খ্রীস্টানরা প্রতিটি ইউরোপীয়ান রাষ্ট্রে এতবার কোরেছে যে ইউরোপীয় ভাষায় একে বোঝাবার জন্য একটি নতুন শব্দেরই সৃষ্টি হোয়েছে। সেটা Pogrom, যার আভিধানিক অর্থ হলো Organised Killing and Plunder of a Community of People, বাংলায় "সুসংগঠিত ভাবে সম্প্রদায় বিশেষকে হত্যা ও লুণ্ঠন।" দু'হাজার বছর ধোরে অভিশপ্ত ইহুদীদের ওপর ঐ Pogrom চালাবার পর শেষ Pogrom আল্লাহ(Allah) করালেন হিটলারকে দিয়ে। তাকে দিয়ে তিনি ইউরোপের ইহুদীদের ওপর চরম অত্যাচার করালেন ও তাদের ছয় মিলিয়ন অর্থাৎ ৬০ লক্ষ ইহুদীদের হত্যা করালেন। এ হিসাবটা অবশ্য ইহুদীদের করা সুতরাং বাড়াবাড়ী হোতে পারে, কিন্তু হিটলারের হাতে যে লক্ষ লক্ষ ইহুদী মারা গেছে তা ঐতিহাসিক সত্য। দাউদের (আঃ) মুখ দিয়ে লা'নত অর্থাৎ অভিশাপ দেয়ার ফল হিসাবে নেবুশ্যাড্নেয়ার কে দিয়ে ডেভিড মন্দীর ধ্বংস কোরে সমস্ত ইহুদী জাতিটাকে বন্দী কোরে ব্যাবিলোনে নিয়ে যেয়ে সেখানে শত শত বছর দাসত্বের জীবন কাটানোর পর যেমন আল্লাহ(Allah) জাতিটার ওপর থেকে লা'নত উঠিয়ে নিয়েছিলেন, তেমনি ঈসার (আঃ) মুখ দিয়ে লা'নত দেবার ফল হিসাবে রোমান টিটাসকে দিয়ে ইহুদীদের পুনঃনির্মিত ডেভিড মন্দীরসহ এবার সম্পূর্ণ যেরুযালেম শহরটাই ধ্বংস কোরে দিয়ে ইহুদী জাতিটাকেই তাদের জন্মভূমি থেকে একেবারে উচ্ছেদ কোরে ইউরোপীয়দের দিয়ে তাদের ওপর দু'হাজার বছর ধোরে অবজ্ঞা, ঘৃণা আর Pogrom কোরিয়ে মনে হয় এখন আল্লাহ(Allah) তাদের ওপর থেকে তার লা'নত উঠিয়ে নিয়েছেন। কারণ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে তাদের ওপর আর Pogrom হোচ্ছেনা এবং তারা বর্তমানে একটি শক্তিশালী ও সম্মানিত জাতি।

এখন মুসলিম(Muslim) বোলে পরিচিত জাতিটির দিকে দৃষ্টি দেয়া যাক। অস্বীকার করার কোন উপায় নেই যে আল্লাহ(Allah) লা'নত দিলে কোন জাতির যে দশা হয়, এই জাতির দশা ঠিক তাই। সিরিয়া থেকে ইহুদীরা যে ভাবে উৎখাত হোয়েছিলো, স্পেন থেকে ঠিক তেমনিভাবে উৎখাত হোয়েছে। সমস্ত ইউরোপে ইহুদী জাতি যেমন ঘৃণিত, লাঞ্ছিত, অত্যাচারিত হোয়েছে, মুসলিম(Muslim) বোলে পরিচিত এই জাতি সমস্ত পৃথিবীময় তেমনি ঘৃণিত, লাঞ্ছিত, অত্যাচারিত, অপমানিত হোচ্ছে। তফাৎ এই যে ইহুদীদের শাস্তি ইউরোপের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিলো আর এই জাতির ওপর শাস্তি সমস্ত পৃথিবীময়। এর কারণ আছে; ইহুদী জাতি একটি ছোট জাতি, এই জাতির মধ্যে আল্লাহ(Allah)র যে নবী প্রেরিত হোয়েছিলেন তার দায়িত্বও ছিলো সীমাবদ্ধ, শুধু ইহুদী জাতির মধ্যে, কাজেই অভিশপ্ত অর্থাৎ মালাউন হবার পর তার শাস্তিও ছিলো ইউরোপের মধ্যে সীমিত। আর মুসলিম(Muslim) বোলে পরিচিত জাতিটি যিনি গঠন করেন সেই বিশ্বনবী (দঃ) প্রেরিত হোয়েছেন সমস্ত পৃথিবীর জন্য, সম্পূর্ণ মানব জাতির জন্য। তাই তার জাতির শাস্তি ও পুরস্কার দু'টোই পৃথিবীময়, কোথাও সীমিত নয়। ইউরোপের যে যে রাষ্ট্রে ইহুদীরা বসতি স্থাপন কোরেছিলো সেই সেই রাষ্ট্রের লোকেরা তাদের ওপর Pogrom কোরেছে। এই মুসলিম(Muslim) জাতি পৃথিবীর যেখানেই আছে সেই দেশের মানুষ দিয়ে অত্যাচারিত, অপমানিত, লাঞ্ছিত হোচ্ছে। খ্রীস্টানদের হাতের কাছে যেখানে মুসলিম(Muslim) আছে সেখানে খ্রীস্টানদের দিয়ে (বসনিয়া-হারজেগোভিনা, সুদান, ফিলিপাইন, ইথিওপিয়া), ইহুদীদের দিয়ে (পশ্চিম এশিয়া প্যালেষ্টাইন), বৌদ্ধদের দিয়ে (চীন, মায়ানমার, থাইল্যাণ্ড, কমপুচিয়া ভিয়েতনাম), হিন্দুদের দিয়ে (সমস্ত ভারত ও কাম্মীর)। অর্থাৎ পাঁচটি প্রধান ধর্মের চারটিকে দিয়েই পৃথিবীর সর্বত্র মুসলিম(Muslim) নামের এই জাতিটাকে পেষা হোচ্ছে। আর সে পেষা কেমন পেষা? তাদের গুলী কোরে, ধারাল অস্ত্র দিয়ে, ট্যাঙ্ক দিয়ে পিষে হত্যা করা হোচ্ছে, তাদের বাড়ি-ঘর জ্বালিয়ে দেয়া, তাদের মেয়েদের ধোরে নিয়ে যেয়ে ধর্ষণ করা হোচ্ছে, ধর্ষনের পর হত্যা করা হোচ্ছে, ইউরোপের ও অন্যান্য স্থানের বেশ্যালয়ে বিক্রি করা হোচ্ছে। বসনিয়ায় খ্রীস্টান সার্বরা যা কোরেছে তার নজীর মানুষের ইতিহাসে নেই। খ্রীস্টান সার্বরা ৭০ হাজার মুসলিম(Muslim) নারীকে ধর্ষণ কোরে গর্ভবতী কোরেছে, তাদের সাত মাস পর্য্যন্ত আটকে রেখেছে যাতে তারা খ্রীস্টানদের ঔরসজাত সন্তানগুলি গর্ভপাত কোরে ফেলে দিতে না পারে। মালাউন ইহুদীদেরও আল্লাহ(Allah) এমন শাস্তি দেন নাই। পৃথিবীর বড় বড় জাতিগুলি দিয়ে শাস্তি দিয়েও খুশী না হোয়ে আল্লাহ(Allah) অপমানের চুড়ান্ত করার জন্য ভারতের আসামের গাছ-পাথর উপাসক একটি পাহাড়ী উপজাতি দিয়ে মুসলিম(Muslim) নামধারী এই জাতিকে গুলি কোরে, তীর দিয়ে, কুপিয়ে হত্যা করাচ্ছেন, বাড়ি-ঘর জ্বালিয়ে দিয়ে উচ্ছেদ করাচ্ছেন। এ যদি আল্লাহ(Allah)র লা'নতের ফল না হয় তবে লা'নত কাকে বলে?

কেন এই লা'নত? যে জাতিকে আল্লাহ(Allah) বোলেছেন তোমরা যদি মো'মেন হও তবে পৃথিবীর প্রভূত্ব, কর্তৃত্ব তোমাদের হাতে দেব এবং সত্যই সেই ছোট্ট জাতির হাতে তাই দিয়েছিলেন। বর্তমান মুসলিম(Muslim) জাতির হাতে পৃথিবীর প্রভূত্ব, তো দূরের কথা, এ জাতি আজ পৃথিবীর অন্য প্রত্যেক জাতি দিয়ে অপমানিত, অত্যাচারিত, লাঞ্ছিত, পরাজিত, এক কথায় নিকৃষ্টতম জাতি। আল্লাহ(Allah)র লা'নতের প্রতিটি ছাপ আজ এই জাতির দেহে চিহ্নিত। অথচ এই জাতি সেই মো'মেন হবার দাবীদার। আমরা মো'মেন অর্থাৎ আল্লাহ(Allah) ও তার রসুলে বিশ্বাসী হোলে আল্লাহ(Allah) মিথ্যা বোলেছেন (নাউজুবিল্লাহ)। কেন এই লা'নত? এর জবাব হোচ্ছে এইঃ আল্লাহ(Allah) বোলেছেন যারা আল্লাহ(Allah) ও রসুলের ওপর ঈমান এনে তারপর কুফরে প্রত্যাবর্তন কোরছে তাদের ওপর আল্লাহ(Allah), আল্লাহ(Allah)র মালায়েকদের ও মানব জাতির সম্মিলিত লা'নত (অভিশাপ) (কোরান-সূরা আলে ইমরান ৮৬-৮৯)। এই বইয়ে আমি দেখিয়েছি যে তওহীদ অর্থ হোচ্ছে ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয়, আইন-কানুন, দণ্ডবিধি, অর্থনীতি ইত্যাদি সর্ব বিষয়ে বিশেষ কোরে সমষ্টিগত জীবনে আল্লাহ(Allah)র সার্বভৌমত্বকে স্বীকার কোরে ও বিশ্বাস কোরে নেয়া এবং আল্লাহ(Allah)র দ্বীনকে সমস্ত পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম, জেহাদ করা। প্রমাণ, আল্লাহ(Allah) বোলছেন- মো'মেন শুধু তারাই যারা আল্লাহ(Allah) ও তার রসুলকে বিশ্বাস করে (অর্থাৎ জীবনের সর্বস্তরে আল্লাহ(Allah)র বিধান ছাড়া আর কাউকে মানে না) তারপর তা থেকে বিচ্যূত হয় না এবং নিজেদের প্রাণ ও সম্পদ দিয়ে (তা প্রতিষ্ঠার জন্য) আল্লাহ(Allah)র রাস্তায় সংগ্রাম, জেহাদ করে (কোরান- সূরা হুজরাত ১৫)। অর্থাৎ মো'মেন হবার জন্য আল্লাহ(Allah) দু'টি শর্ত ও সংজ্ঞা দিচ্ছেন। একটা জীবনের সর্বস্তরে আল্লাহ(Allah)র সাবভৌমত্ব স্বীকার অর্থাৎ তওহীদ এবং দ্বিতীয়টি সেই তওহীদকে সমস্ত পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম। এই দু'টোর যে কোন একটা বাদ গেলেই সে বা তারা আর মো'মেন নয়। সারারাত তাহাজ্জদ পড়লেও নয়, সারা বছর রোযা রাখলেও নয়। মুসলিম(Muslim) হবার দাবীদার এই জাতি বহু শতাব্দী আগেই তওহীদ প্রতিষ্ঠার জেহাদ ছেড়ে দিয়েছে যার ফলে আল্লাহ(Allah) তার প্রতিশ্রুতি মোতাবেক (কোরন- সূরা আত্-তওবা ৩৮, ৩৯) এই জাতিকে খ্রীস্টান জাতিগুলির দাসে পরিণত কোরে দিয়েছেন। এ তওহীদকে (আল্লাহ(Allah)র একত্ব ও সার্বভৌমত্ব) সার্বিক জীবন থেকে প্রত্যাখ্যান কোরে সমষ্টিগত জীবনে খ্রীস্টান, ইহুদীদের সার্বভৌমত্ব গ্রহণ কোরে আল্লাহ(Allah)র সার্বভৌমত্বকে শুধু ব্যক্তি জীবনে সীমাবদ্ধ করায় অর্থাৎ শেরক ও কুফরে ফিরে যাওয়ায় এই জাতিকে লা'নত দিয়েছেন। তাই মালাউন (অভিশপ্ত) ইহুদী জাতির ওপর যে শাস্তি দেওয়া হোয়েছিলো তার চেয়েও বেশী শাস্তি হোচ্ছে এই মুসলিম(Muslim) নামধারী জাতিটির ওপর। কারণ ইহুদী জাতিকে আল্লাহ(Allah) লা'নত দিয়েছিলেন তা দিয়েছিলেন তিনি একা এবং অন্যের মুখ দিয়ে আর আমাদের লা'নত তিনি দিয়েছেন তার অসংখ্য মালায়েক এবং মানব জাতিকে সঙ্গে নিয়ে সম্মিলিতভাবে।

আমি জানি বর্ত্তমানের মুসলিম(Muslim) নামধারী জাতিটাকে যে জাতি হেদায়েতহীন তাকওয়া নিয়ে অতি ব্যস্ত আছে, তাকে আল্লাহ(Allah) তার মালায়েক আর মানব জাতি দ্বারা অভিশপ্ত বোললে সেটা কেমন চটে যাবে। তারা যদি না মানেন তবে আমার অনুরোধ তারা আমাকে বুঝিয়ে দিন যে অভিশপ্ত ইহুদীদের চেয়েও ভয়ংকর শাস্তি আমাদের কেন হোচ্ছে। সে সত্য আল্লাহ(Allah) তার অসীম করুনায় আমাকে ইলহাম ও এল্কার মাধ্যমে দান কোরেছেন তা যদি আমি মানুষের ভয়ে প্রকাশ না করি তবে আমি পূর্ণ (মোকাম্মেল) ঈমান নিয়ে আল্লাহ(Allah)র সামনে দাঁড়াতে পারব না। আল্লাহ(Allah)র লা'নতের নির্মম শাস্তি সত্বেও এই জাতি তওবা কোরে তওহীদে সেরাতুল মুস্তাকীমে, দ্বীনুল কাইয়্যেমায়, জেহাদে ফিরে না এসে নির্বোধের মত নামায, রোযা, হজ, যাকাত ও হাজার রকমের নফল এবাদত ও তাকওয়া কোরে যাচ্ছে আর ভাবছে তাদের জন্য জান্নাতের দরজায় লাল কার্পেট বিছিয়ে রাখা হোয়েছে। লা'নতের অন্যতম শাস্তি বোধশক্তির লোপ, তাই এত সওয়াবের কাজের পরও এত নির্মম শাস্তি কেন তা বুঝে আসেনা। এ ব্যাপারে আমার মনে একটা উদাহরণ ভেসে ওঠে। মনে করুন একটি লোক বহু কষ্টে টাকা-পয়সা খরচ কোরে পৃথিবীর অন্য প্রান্ত থেকে একটি দুস্প্রাপ্য ফুলের গাছ যোগাড় কোরে এনে বাগানে লাগালো ও অতি যত্নের সাথে পরিচর্য্যা কোরতে লাগলো। সে অধির আগ্রহে দিন গুনতে থাকলো- কবে সেই গাছে অপূর্ব সেই ফুলটি ফুটবে। অনেক যত্ন, পরিচর্য্যার পর অনেক দিন পর ফুল গাছে অতি বিচিত্র ফুলটি এলো। অনেক লোক সেই আশ্চর্য ফুল দেখতে এলো। পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে লোকটি দেখলো তার গরু সে ফুলটাকে খেয়ে ফেলেছে। রাগে, দুঃখে পাগল হোয়ে সে গরুটাকে দড়ি দিয়ে বেঁধে লাঠি নিয়ে মারতে লাগলো। মারতে মারতে সে গরুটার মাথা ফাটিয়ে দিলো, পা গুলো ভেংগে ফেললো, গরুর গায়ের চামড়া ফেটে গিয়ে রক্ত ঝরতে লাগলো। কিন্তু গরুটা কি বুঝতে পারবে কেন তাকে অমন শাস্তি দেওয়া হোচ্ছে? পারবে না। বর্তমানের এই মুসলিম(Muslim) জাতিও তার নির্মম শাস্তির কারণ বুঝতে পারছেনা।

২টি মন্তব্য:

Unknown বলেছেন...

অসাধারণ লিখনি,

Unknown বলেছেন...

ভাল লাগছে