বৃহস্পতিবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০১১

১৭। কল্পনায় উম্মতে মোহাম্মদীকে বর্তমানে নিয়ে আসা

উৎস: Islam and Dajjal
কল্পনা করা যাক যে ছোট্ট জাতিটি, যার মোট জনসংখ্যা চার পাঁচ লাখের বেশী হবে না, বিশ্বনবীর (দঃ) সঙ্গে থেকে তাকে আল্লাহর(Allah) দেয়া দায়িত্ব পালন কোরতে জানমাল দিয়ে সাহায্য করলো তার সঙ্গে থেকে তার কাছ থেকে সরাসরি এই দ্বীন শিক্ষা করলো, ঐ দ্বীনের প্রাণ কোথায়, দেহ কোথায় উদ্দেশ্য কী, সেই উদ্দেশ্য অর্জন করার প্রক্রিয়া কী এসব বুঝলো এবং হৃদয়ঙ্গম করলো এবং তার (দঃ) পৃথিবী থেকে চলে যাবার পর তাদের নেতার আনা জীবন ব্যবস্থা পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠার জন্য তাদের সব কিছু ছেড়ে বের হোয়ে পড়লো ও তদানিন্তন দুনিয়ার দুইটি মহাশক্তিকে এক এক কোরে নয় একই সঙ্গে পরাজিত কোরে আটলান্টিকের উপকূল থেকে চীন সীমান্ত পর্য্যন্ত এই দ্বীন প্রতিষ্ঠা কোরে মানুষের জীবনে নিরাপত্তা, ন্যায় ও সুবিচার প্রতিষ্ঠা করলো, এক মহা সভ্যতার জন্ম দিলো- এই জাতিটাকে যদি কোন মন্ত্র বলে আজকের পৃথিবীকে কিছুক্ষণের জন্য ফিরিয়ে আনা যায় তবে কি হবে? ঠিক কি হবে তা সম্পূর্ণ কোরে কেউ বোলতে পারবে না, তবে কয়েকটি জিনিষ যে হবে তা অনুমান করা যায়।

প্রথমতঃ তারা বিস্ময় বিস্ফারিত চোখে বর্তমান পৃথিবীটাকে দেখবেন এবং আমাদের যখন তাদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়া হবে তাদের উত্তরসুরী বোলে তখন আমরা বর্তমান দুনিয়াটা তাদের ঘুরিয়ে দেখাবো। আমাদের কোটি কোটি টাকার জাকজমকপূর্ণ মসজিদগুলো দেখে তারা চোখ বড়ো বড়ো কোরে বোলবেন, সুবহান আল্লাহ(Allah), আমাদের খেজুর পাতার ছাদ আর মাটির মেঝের মসজিদগুলোর চেয়ে তোমাদের মসজিদগুলি কত সুন্দর, কত শান-শওকতওয়ালা। তারা প্রশ্ন কোরবেন, তোমরা এখন পৃথিবীতে সংখ্যায় কত? আমরা বুক ফুলিয়ে জবাব দেবো তা প্রায় একশ ত্রিশ কোটির মত। তারা বিস্মিত হোয়ে বোলবেন, মাশাআল্লাহ(Allah), কিন্তু আমরা চার পাঁচ লাখ হোয়ে ৬০/৭০ বছরের মধ্যে অর্দ্ধেক পৃথিবীতে আল্লাহর(Allah) দেয়া দ্বীন প্রতিষ্ঠা কোরেছিলাম আর চৌদ্দশ বছর হোয়ে গেলো তোমরা একশ ত্রিশ কোটি হোয়েও তার চেয়ে বেশী এগুতে পারোনি দেখছি। আমরা তাদের সামনে গত বারশো বছরে যে সব জ্ঞানগর্ভ ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের বই কেতাব লিখেছি তা রাখতে আরম্ভ করবো। ক্রমে ক্রমে তা পর্বতের চেয়ে উচুঁ হোয়ে যাবে। শেষে ঐ চার পাঁচ লাখ মানুষ ঢাকা পড়ার উপক্রম হোলে তারা ভয়ে চেচিয়ে উঠবেন, থামো থামো। এগুলো কিসের বই? আমরা আবারও বুক ফুলিয়ে জবাব দেবো, এক কথায় এর জবাব দেয়া সম্ভব নয়। একটা পাহাড় সমান কেতাবের স্তুপ দেখিয়ে বলবো- এগুলো হোচ্ছে ফিকাহ। তারা বিস্মিত হোয়ে বোলবেন ফিকাহ? এ এত বিরাট হলো কি কোরে? ফিকাহকে আমরা কেমন কোরে কত পরিশ্রম কোরে এত বিরাট কোরেছি তা তাদের ভাল কোরে বুঝিয়ে দেবার পর তারা প্রশ্ন কোরবেন, ঐ স্তুপগুলো কি? আমরা বুঝিয়ে দেব ওগুলো হাদীসের কেতাব। তারা আবার বিস্মিত হোয়ে বোলবেন, মাশাআল্লাহ(Allah)! এতো হাদীস তোমরা সংগ্রহ করেছো। আমাদের তো হাদীসের কোন বইই ছিলো না। ঐগুলি কি? আমরা তাদের অজ্ঞতা দেখে করুণা কোরে তাদের বুঝিয়ে দেবো, ঐ বইয়ের পর্বত হোচ্ছে কোরানের তফসীরের, ঐ পর্বত হোচ্ছে দীনিয়াতের, ঐ পাহাড় উসুলে ফিকাহর, ঐ পাহাড় উসুলে হাদীসের, ঐ পর্বত মাসলা মাসায়েলের, ঐ পর্বত তাসাওয়াফের, ঐ পাহাড় কিয়াসের, ঐ পর্বত ইজমার, এই পাহাড়... এই পর্য্যন্ত বোলতেই তারা ভয় পেয়ে বোলবেন, ব্যস! আর দরকার নেই। আমরা এগুলোর কোনটা সম্বন্ধে জীবনেও শুনি নাই। আমাদের মাত্র একটা বইই ছিলো কোরান, তাও মাত্র কয়েকটি কপি। আর আমাদের মধ্যে পড়তে পারতেন মাত্র কয়েকজন, তারা পড়তেন আমরা শুনতাম আর তা কাজে পরিণত কোরতাম। যাই হোক, তোমরা আমাদের বেশ ভালো কোরে বুঝিয়ে দিলে যে, ফিকাহ কী জিনিস, কোরানের আইনের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ। এতো ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ আমরা করিনি। কারণ এতো ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করা আল্লাহ(Allah) আর রসুল (দঃ) নিষেধ কোরে দিয়েছেন, বোলেছেন এ কোরান মুবিন, পরিষ্কার, সকলের সহজবোধ্য। রসুলাল্লাহও (দঃ) কোরানের ব্যাখ্যা নিয়ে মতান্তরকে একেবারে কুফর বোলে সতর্ক কোরে দিয়েছেন। যাই হোক, এত বিশ্লেষণ, ব্যাখ্যা আর পাণ্ডিত্যের পর তোমাদের জীবনে তাহলে কোরানের আইনের আমাদের জীবনের চেয়ে আরও ভালো প্রভাব প্রতিফলন নিশ্চয়ই হোয়েছে? তোমরা আমাদের চেয়ে আরও ভালো মুসলিম(Muslim) হোতে পেরেছো। কিন্তু তাহলে এ দেড় হাজার বছর পরেও কেন তোমরা সমস্ত পৃথিবীতে আল্লাহর(Allah) দ্বীন প্রতিষ্ঠা কোরতে পারনি? ও ভালো কথা! এ পৃথিবীর দিকে চেয়ে দেখছি তোমরা নিকৃষ্টতম জাতি, অন্যান্য জাতির ঘৃণা ও অবজ্ঞার পাত্র। ওদের ধার, ঋণ, আর খয়রাতের ওপর তোমরা বেঁচে আছো। আল্লাহ(Allah) বোলেছেন আমরা যদি তাকে একমাত্র প্রভু স্বীকার কোরে তার আদেশ নিষেধকে, তার দ্বীনকে পৃথিবীর মানুষের জীবনে প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম করি তবে তিনি আমাদের পৃথিবীর সবার ওপর আধিপত্য দেবেন, আমাদের শ্রেষ্ঠ জাতি কোরে রাখবেন (কোরান সূরা আন-নূর-৫৫)। আমরা সরাসরি তাই কোরেছিলাম, কোন ব্যাখ্যায় যাইনি। কারণ তার দেখানো পথ সেরাতুল মুস্তাকীম- সহজ, সরল। তার প্রতিশ্রুতি যে সত্য তাতো আমরা দেখলামই। আমাদের তিনি শ্রেষ্ঠ জাতিতেই পরিণত কোরেছিলেন। কিন্তু আমরা একটা বথা বুঝতে পারছিনা তোমরা এত উন্নতি কোরে এত ভালো মুসলিম(Muslim) হোলে কিন্তু পৃথিবীতে তোমাদের এ অবস্থা কেন?

এইবার আমাদের ফুলানো বুকগুলি চুপসে যাবে। মুখগুলি কাচুমাচু হোয়ে যাবে। আমতা আমতা কোরে বলবো, যদিও কোরানের হাদীসের আইন শরীয়াহ নিয়েই আমরা এতো সব ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ কোরেছি, এ বিশ্লেষণের ওপর ভিত্তি কোরে বিরাট শাস্ত্র গড়ে তুলেছি, ওটা কোরে আমাদের মধ্যে বহু মাযহাব ও ফেরকা সৃষ্টি হোয়েছে এবং তাদের মধ্যে মারামারিও হোচ্ছে। কিন্তু সত্যি বোলতে কি, ও আইন, শরীয়াহ আমরা জাতীয় জীবন থেকে বাদ দিয়েছি, জাতীয় জীবনে আমরা এখন পাশ্চাত্যের আইন, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ব্যবস্থা, বিচার ও দণ্ডবিধি গ্রহণ ও প্রতিষ্ঠা কোরেছি। আপনারা কিছু মনে কোরবেন না, জাতীয় জীবনে আল্লাহর(Allah) আইন ইত্যাদি চালু কোরলে পাশ্চাত্যের সভ্য জাতিরা হাসবে, আমাদের অসভ্য ভাববে। কিন্তু তাই বোলে আমাদের খারাপ মুসলিম(Muslim) ভাববেন না, আমরা খুব নামাযী, আমাদের মসজিদে জায়গা পাওয়া যায় না, আমাদের মধ্যে বহুলোক নিয়মিত তাহাজ্জুদ পড়েন, আমরা রমযানের রোযা রাখি, হজ্জ্ব করি এবং অনেকেই যাকাত দেই। শুধু তাই নয়, আমাদের মধ্যে বড় বড় পীর ফকীর আছেন, তারা তাসাওয়াফের কঠিন রেযায়াত করেন এবং আমাদের কোটি কোটি লোক তাদের মুরীদ আছেন। শুধু তাই নয়, আমরা লক্ষ লক্ষ লোকের বিশ্ব এজতেমা করি। জাতীয় জীবন থেকে আল্লাহ(Allah) রসুলের আইন কানুন বাদ দিলেও ব্যক্তি জীবনে আমরা তা পুংখানুপুংখভাবে পালন করি। আমাদের বক্তব্য শোনার পর তারা বোলবেন, এইবার আসল কথা বুঝলাম। আমরা তো তোমাদের অসংখ্য বই পত্তর, আলীশান মসজিদ, তোমাদের বিরাট বিরাট মাহফিল এজতেমা দেখে ভেবেছিলাম মুসলিম(Muslim) জাতি আমাদের সময়ের চেয়ে কতো প্রগতি কোরেছে, আমাদের তো তোমাদের সামনে নিজেদের মুসলিম(Muslim) বোলতে লজ্জাই করছিলো। কিন্তু এখন বুঝলাম তোমরা আর আমরা এক জাতি, এক উম্মাহই নই। যে আল্লাহর(Allah) আইন, জীবন ব্যবস্থা পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা কোরে পৃথিবীতে অন্যায়, অশান্তি, অবিচার, রক্তপাত বন্ধ কোরতে ইবলিসের চ্যালেঞ্জে আল্লাহ(Allah)কে জয়ী কোরতে আল্লাহর(Allah) রসুল (দঃ) ও আমরা স্বর্বস্ব ত্যাগ কোরে সংগ্রাম কোরেছিলাম, আল্লাহর(Allah) সেই আইনকেই, সেই জাতীয় জীবন ব্যবস্থাকেই তোমরা বর্জন কোরে ইহুদী খ্রীস্টানদের তৈরী আইন ও জীবন ব্যবস্থা তসলিম কোরে নিয়েছো। তোমরা তো মোশরেক- আল্লাহর(Allah) অংশীবাদী। জানিনা, কোন্ মন্ত্রবলে আমাদের তোমরা ক্ষণকালের জন্য তোমাদের এই যুগে নিয়ে এসেছো। কিন্তু নিঃসন্দেহে একথা বোলতে পারি যে, আমাদের সঙ্গে যদি আমাদের প্রাণপ্রিয় নেতা বিশ্বনবীকে (দঃ) আনতে পারতে তবে তিনি এখনই আমাদের আদেশ দিতেন তোমাদের বিরুদ্ধে জেহাদ কোরতে। ব্যক্তিগতভাবে আল্লাহ(Allah) বিশ্বাসীতো আরবের মোশরেকরাও ছিলো, খ্রীস্টান আর ইহুদীরাও ছিলো তোমাদের মত। জেহাদ কোরেছিলাম তো জাতীয় জীবনে আল্লাহর(Allah) দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্য। চল্লাম, আল্লাহ(Allah) তোমাদের মাফ করুন একথাও বোলতে পারছিনা। কারণ আল্লাহ(Allah) প্রতিজ্ঞাবদ্ধ যে, তিনি ইচ্ছা হোলে সমস্ত রকম গুনাহ মাফ কোরবেন কিন্তু শেরক ক্ষমা কোরবেন না (কোরান সূরা আন-নিসা-৪৮)। তোমরা বজ্র আটুনি ফস্কা গেরো দিচ্ছো আল্লাহ(Allah) তোমাদের পথ প্রদর্শন করুন, হেদায়েত করুন।

কোন মন্তব্য নেই: