বুধবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০১১

৪। কোরান-মো'জেজা

এ পর্য্যন্ত আমরা মানুষ জাতির একটা মৌলিক অতীত পেলাম। এই মৌলিক অতীতকে আমি আজ থেকে মোটামুটি চৌদ্দশ' বছর আগে দাড়ি টানবো। কারণ চৌদ্দশ' বছর আগে মানুষ জাতির জীবনে ও ইতিহাসে এমন এক মহাবিপ্লব ঘটে গেলো যা তদানিন্তন পৃথিবীকে তো বদলিয়ে দিয়েছিলোই- শুধু তাই নয়, যা মানুষ জাতির বাকি সম্পূর্ণ ভবিষ্যতকেও নিয়ন্ত্রণ কোরবে। এক দিক দিয়ে এ ঘটনা নতুন কিছু নয়। কারণ যুগে যুগে, একের পর এক প্রেরিতদেরই আরেকজন এলেন স্রষ্টার বাণী আর জীবন-বিধান নিয়ে। কিন্তু আরেক দিক দিয়ে এবারের এই আগমনে রোইলো কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যতিক্রম। প্রধান প্রধান ব্যতিক্রমগুলি হচ্ছেঃ-

(ক) এর আগের জীবন-বিধান, দ্বীনগুলি এসেছে নির্দিষ্ট সীমিত মানব সমাজের জন্য। সনাতন ধর্ম, দ্বীনুল কাইয়্যেমা অর্থাৎ একেশ্বরবাদ ভিত্তি হিসাবে থেকে অন্যান্য আইন নিয়ম ইত্যাদি এসেছে স্থান, কাল ও পাত্রের সমস্যা ও চাহিদা অনুযায়ী। এবারেরটা এলো সমস্ত মানব জাতির জন্য। স্রষ্টা লক্ষ্য রাখলেন এতে যেন এমন কোন আইন, কানুন, নির্দেশ না থাকে যা স্থান, কাল বা পাত্রের প্রভাবাধীন হয়। অর্থাৎ এবারের বিধান এলো সম্পূর্ণভাবে সার্বজনীন (Universal)।

(খ) এটা এলো মানুষের জন্য শেষ জীবন-বিধান হিসাবে, অর্থাৎ এরপর আল্লাহ(Allah)র কাছ থেকে আর কোন জীবন-ব্যবস্থা আসবে না। এখানেও স্রষ্টা লক্ষ্য রাখলেন যে, এতে এমন কোন আইন, নির্দেশ না থাকে যা সময়ের পরিবর্তনের ফলে অকেজো হোয়ে যায়- অর্থাৎ শুধু যা শাশ্বত (Eternal)।

(গ) এর আগের প্রতিটি জীবন-বিধানের বই (ধর্মগ্রন্থ) মানুষ তাদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য বিকৃত কোরে ফেলেছিলো। স্রষ্টা জানতেন তার এই শেষ বইও মানুষ বিকৃত কোরে ফেলবে। তাই এবার একে বিকৃতি থেকে রক্ষা করার ভার নিলেন নিজে (কোরান-সূরা আল হিজর ৯)।

ঘ) যার মাধ্যমে আল্লাহ(Allah) তার এই শেষ জীবন-ব্যবস্থা পাঠালেন তাকে তিনি তৈরী কোরলেন সমস্ত মানব জাতির আদর্শ কোরে (সূরা আল আহযাব ২১)। এবং যেহেতু তাকে মানুষ জাতির আদর্শ কোরে তৈরী কোরলেন কাজেই তাকে কোরতে হলো একেবারে নিখুঁত কোরে, যেমন নিখুঁত কোরে স্রষ্টা আর কাউকে তৈরী করেননি। কোন মানুষকে তো নয়ই, এমন কি তার অন্য কোন নবী রসুলকেও নয়।

সব নবীর বেলা যা হোয়েছে এর (দঃ) বেলায়ও তার ব্যতিক্রম হলো না। প্রচণ্ড প্রতিরোধ গড়ে উঠলো প্রচলিত ধর্মের হর্তাকর্তাদের দিয়ে। প্রশ্ন উঠলো, ইনি যে সত্যই নবী, আল্লাহ(Allah)র প্রেরিত তার প্রমাণ কি, চিহ্ন কি? আল্লাহ(Allah) জানেন এ প্রশ্ন উঠবে, তার প্রতিটি নবীর সময় উঠেছে, এবং তিনিও প্রতিটি নবীকেই চিহ্ন অর্থাৎ মো'জেজা দিয়ে শক্তিশালী কোরেছেন। এখানে একটা কথা বোলে নেই। কোরানে কোথাও মো'জেজা শব্দটি নেই। মো'জেজা অর্থাৎ অলৌকিক শব্দের জায়গায় আল্লাহ(Allah) ব্যবহার কোরেছেন আয়াত শব্দটি অর্থাৎ চিহ্ন। অর্থ ঐ একই, অর্থাৎ একটি বিশেষ ব্যাপার বা জিনিষ যে সত্য তার চিহ্ন। এই অর্থে আল্লাহ(Allah) তার কোরানের শ্লোক বা Verse গুলিকে আয়াত বোলে বর্ণনা কোরেছেন। অর্থাৎ এই শ্লোক, Verse গুলি স্রষ্টার, তার প্রেরিতের সত্যতার চিহ্ন, প্রমাণ। তিনি না থাকলে এবং যার মুখ দিয়ে ঐ আয়াতগুরি উচ্চারিত হোচ্ছে তিনি প্রেরিত না হোলে ঐ শ্লোকগুলি কোথা থেকে এলো? এই অর্থে আরো বহু জিনিষকে আল্লাহ(Allah) তার অস্তিত্বের, একত্বের সত্যতার চিহ্ন হিসাবে বর্ণনা কোরেছেন। যেমন প্রাকৃতিক নিয়ম, গ্রহ-নক্ষত্রের, দিন-রাত্রির বিবর্তন (কোরান- সূরা বনি ইসরাইল ১২, সূরা ইয়াসিন ৩৭-৪০), ইত্যাদিও সবই স্রষ্টার অসীম ক্ষমতার চিহ্ন, যেমন চিহ্ন অর্থাৎ আয়াত হলো নবীদের অলৌকিক, মো'জেজার শক্তি, ঈসার (আঃ) মরাকে প্রাণ দেয়ার (কোরান- সূরা আল মায়েদা ১১৩) মুসার (আঃ) সমুদ্রকে দু'ভাগ কোরে দেয়ার(কোরান সূরা আশ্ শুয়ারা ৬৪) শক্তি ও অন্যান্য নবীদের মো'জেজা। এই যে শেষ প্রেরিতকে (দঃ) আল্লাহ(Allah) পাঠালেন একে যে আয়াত অর্থাৎ মো'জেজা দেয়া হলো তা তার পূর্ববর্তী নবীদের জন্য দেয়া মো'জেজা থেকে অন্য রকম হোতে হোল । কারণ পূর্ববর্তী নবীদের দায়িত্ব ছিলো যার যার জাতির মধ্যে সীমিত, আর এর (দঃ) দায়িত্ব হলো সমগ্র মানব জাতির নয় শুধু- মানব জাতির বাকি আয়ুষ্কালেরও।

স্রষ্টা তার জীবন-ব্যবস্থা দিয়ে যত প্রেরিত (নবী রসুল) এই পৃথিবীতে প্রেরণ কোরেছেন তার প্রত্যেককে মো'জেজা বা অসাধারণ, আপাতঃ অসম্ভব অর্থাৎ অলৌকিক কাজ (Miracle) করার শক্তি দিয়েছেন (কোরান- সূরা আলে ইমরান ১৮৩-৮৪)। যেহেতু তিনি তার প্রত্যেক প্রেরিতকে এই শক্তি দিয়েছেন তাতে বোঝা যায় এটার একটা বিশেষ গুরুত্ব আছে। এই মো'জেজাগুলি বিভিন্ন প্রেরিত, রসুলদের বিভিন্ন ধরনের হোয়েছে। যে সমাজে যে ধরনের মানুষ, পারিপার্শ্বিকতা, যে ধরনের অভিযোগ কোন নবীর ওপর দেয়া হোয়েছে, মো'জেজার শক্তিগুলির ধরন সেইগুলির ওপর নির্ভর কোরেছে। এ ছাড়াও যে বিশেষ সমাজে বা জাতিতে একজন রসুল প্রেরিত হোয়েছেন সে জাতির বা সমাজের কতখানি বিবর্তন ভিত্তিক অগ্রগতি হোয়েছে তার ওপর নির্ভর কোরছে সেই নবীকে কোন ধরনের মো'জেজার শক্তি দেয়া হবে তা। বহু পুরোনো রসুলদের কাকে কী ধরনের মো'জেজার শক্তি দেয়া হোয়েছিলো তার কোন নির্ভরযোগ্য তথ্য আমরা পাই না। কিন্তু তুলনামূলকভাবে আধুনিক নবীদের মো'জেজার যে নির্ভূল তথ্য পাই তাতে দেখা যায় মুসাকে (আঃ) মুখোমুখি হোতে হয়েছিলো মিশরের যাদুকরদের। এর কারণ আছে। তখন মিশর পৃথিবীর প্রচণ্ড শক্তিধর রাজত্বগুলির একটি। শাসনকর্তা ফেরাও সর্বময় কর্তা। দেবতা ‘রা' এবং সময়ান্তরে ‘আমন' দেবের পুরোহিতরাই স্থির করতেন ধর্মীয় এবং জাতীয় সব কাজকর্ম। এই পুরোহিতরা পূর্ববর্তী ব্যাবিলনীয় যাদুবিদ্যা, যে সম্বন্ধে স্বয়ং আল্লাহ(Allah) কোরানে উল্লেখ কোরেছেন (কোরান- সূরা আল বাকারা ১০২)। তা ভালো ভাবে রপ্ত কোরে নিয়েছিলেন এবং সেই যাদুবিদ্যার জোরে জনসাধারণকে অভিভূত কোরে রেখেছিলেন। কাজেই মুসা (আঃ) আল্লাহ(Allah)র আদেশে ফেরাও এর দরবারে যেয়ে যখন বোললেন- আমাকে পাঠানো হোয়েছে আপনার কাছে এই কথা বোলতে যে আমি পৃথিবীর সমস্ত জাতিসমূহের প্রভুর প্রেরিত। প্রভুর ব্যাপারে আমার সত্য ছাড়া আর কিছু বলা সম্ভব নয়। সেই প্রভুর কাছ থেকে আমি পরিষ্কার নির্দশন নিয়ে এসেছি, আপনাকে এই বোলতে যে আপনি বনি-ইসরাইলীদের আমার সঙ্গে (মিশর থেকে) চলে যেতে দিন, তখন ফেরাও তাকে সেই পুরানো কথাই বোললেন- অর্থাৎ (হে মুসা) আপনার কথার সত্যতার প্রমান কি? যদি কোন নিদর্শন (আয়াত) এনে থাকেন তবে তা দেখান (কোরান- সূরা আল আ' রাফ ১০৪)। নিজেকে নবী প্রমাণ কোরতে মুসাকে (আঃ) মুখোমুখী হোতে মিশরের পুরোহিত শ্রেণীর শ্রেষ্ঠ যাদুকরদের। তার হাতের লাঠি সাপ হোয়ে যাদুকরদের সব সাপ খেয়ে ফেলা ছাড়াও পরে বন্যা, ফড়িং, পোকা, ব্যাং ও নদীর পানি রক্তে পরিণত করার মো'জেজা (কোরান- সূরা আল আ'রাফ ১৩৩) দেখাতে হোয়েছিলো তা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম যাদুকরের পক্ষেও অসম্ভব।

তারপর মো'জেজা নিয়ে এলেন ঈসা (আঃ)। তিনি এলেন ফেরাও এর মত কোন শক্তিশালী রাজার মুখোমুখি হোতে নয়। বনী ইসরাইল জাতি যদিও তখন মুসার (আঃ) মাধ্যমে দেয়া জীবন পথই অনুসরণ কোরে চলছিলো, কিন্তু পূর্বতন জীবন বিধানগুলির মত ওটাও আত্মা বা উদ্দেশ্য হারিয়ে ফেলে, ছোটখাট বিষয়ের অতি বিশ্লেষণ নিয়ে বর্তমানে আমাদের মত বিরামহীন তর্ক-বিতর্ক ইত্যাদিতে ব্যস্ত ছিলো। তাদের পুরোহিত অর্থাৎ রাব্বাই, সাদ্দুসাই এবং ধর্ম সম্বন্ধে পণ্ডিতগণ ধর্মের অবিশ্রান্ত চুলচেরা বিচার করতে করতে এমন অবস্থায় এসে পড়ছিলেন যে সেই জীবন পথের আসল উদ্দেশ্যই হারিয়ে গিয়েছিলো, আজকের ইসলাম(Islam) নামের ধর্মের মত। শাস্তি হিসাবে আল্লাহ(Allah) ইতিমধ্যেই মুসার (আঃ) অনুসারীদের ইউরোপের রোমানদের পদানত দাসে পরিণত কোরে দিয়েছিলেন, যেমন এই মুসলিম(Muslim) বোলে পরিচিত জাতিটাকেও আল্লাহ(Allah) একই কারণে ইউরোপের বিভিন্ন জাতির ক্রীতদাসে পর্যবসিত কোরে দিয়েছিলেন। যাই হোক, ঈসাকে (আঃ) পাঠানো হলো ঐ পথভ্রষ্ট বনি ইসরাইলীদের পথে আনতে। নিজেকে আল্লাহ(Allah)র নবী বোলে প্রমাণ কোরতে তাকে যে সব মো'জেজা দেখাতে হোয়েছিলো তাতে কিন্তু যাদুকরদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা কোরতে হয়নি। তার মো'জেজা হলো শিশু অবস্থায় দোলনা থেকে কথা বলা (কোরান- সূরা আল মা'য়েদা ১১০, সূরা আলে ইমরান ৪৬)। জন্মান্ধকে দৃষ্টি ফিরিয়ে দেয়া, মরাকে জীবন দান, শুধু পাঁচটি রুটি ও দু'টি মাত্র মাছ দিয়ে পাঁচ হাজার লোককে পেট ভরে খাওয়ানো ইত্যাদি [বাইবেল- মার্ক ৮(১-৯) ম্যাথু ১৪ (১৬-২১)]। এসব কিছুই ছিলো ইহুদীদের কাছে প্রমাণ কোরতে যে তিনি সাধারণ লোক নন, তিনি স্রষ্টার প্রেরিত। কিন্তু এসব চোখের সামনে দেখেও তার নিজের জাতি ইহুদীরা বিশেষ কোরে তাদের পুরোহিত রাব্বাই, সাদ্দুসাইরা তাদের প্রভু ও শাসনকর্তা রোমানদের কাছে নালিশ কোরে তাকে প্রাণদণ্ড দেওয়ালো। যদিও সে প্রানদণ্ড কার্যকরী করার আগেই আল্লাহ(Allah) তাকে সশরীরে অন্য জগতে উঠিয়ে নিলেন (কোরান- সূরা আন নিসা ১৫৭-৫৮) এবং তার যে শিষ্য বিশ্বাসঘাতকতা কোরে ঈসাকে (আঃ) ধরিয়ে দিয়েছিলো তার চেহারা ঠিক ঈসার (আঃ) মত কোরে দিলেন এবং রোমান এবং ইহুদী পুরোহিতরা ঈসা (আঃ) মনে কোরে তাকে ক্রুশে উঠিয়ে হত্যা করলো।

তারপর এলেন আদম সন্তানের মুকুটমণি, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ, আল্লাহ(Allah)র শেষ প্রেরিত মোহাম্মদ (সঃ)। এবার কিন্তু স্থান, কাল, পাত্র সব অন্য রকম। প্রথম প্রভেদ হলো এই যে, এর আগে আল্লাহ(Allah)র যত বার্তাবাহী এসেছেন তারা জীবনপথ ‘দ্বীন' নিয়ে এসেছেন তাদের যার যার জাতি বা গোষ্ঠীর জন্য, তাদের সমস্যা ও প্রয়োজন মোতাবেক। ইনি (দঃ) নিয়ে এলেন আইন-কানুন-দণ্ডবিধিসহ পূর্ণ জীবন বিধান সমগ্র মানব জাতির জন্য। দ্বিতীয় প্রভেদ হলো- স্রষ্টার বার্ত্তাবাহীদের লাইনে ইনি (দঃ) হোলেন শেষ। এরপর পৃথিবীর ও মানব জাতির আয়ুকালের মধ্যে আর কেউ বার্ত্তা-জীবন ব্যবস্থা নিয়ে আসবেন না। এর আগের নবীদের যে মো'জেজা যা তারা দেখিয়েছেন সেগুলি তাদের যার যার জাতিগুলিকেই দেখিয়েছেন, তাদের ওপর বিশ্বাস, ঈমান আনার জন্য। সেই মো'জেজা- অসম্ভব কাজ সম্ভব কোরে দেখানো- তাদের যার যার জাতি গোষ্ঠীগুলিই দেখেছে। বাকি পৃথিবীর মানুষ দেখেনি, তাদের দেখাবার জন্যও সে নবীদের উদ্দেশ্য ছিলোনা, কারণ তারা গোটা পৃথিবীর জন্য প্রেরিত হননি। তারা পৃথিবী থেকে চলে যাবার পর আর কেউ সেই সব মো'জেজা দেখতে পায়নি। দেখার প্রয়োজনও থাকেনি এজন্য যে কিছুদিন পরই আবার অন্য প্রেরিত এসেছেন এবং আবার মানুষ অন্য মো'জেজা দেখতে পেয়েছে। মুসার (আঃ) লাঠির আঘাতে লোহিত সাগর দু'ভাগ হোয়ে পথ কোরে দিয়েছে ইসরাইলীদের পার হবার জন্য। কিন্তু সারা জীবন লোহিত সাগরের কুলে বোসে থাকলেও আর তাকে দু'ভাগ হোয়ে পথ কোরে দিতে দেখতে পাব না। ঈসা (আঃ) দু'তিন দিন আগে মরে যাওয়া মৃতদেহকে আদেশ কোরলেন- ল্যাযারাস ওঠ! ল্যাযারাস প্রাণ ফিরে পেয়ে জীবিত মানুষ হোয়ে গেলো [বাইবেল- জন ২(১৭-৪৬)] বিশ্বাস করি। কিন্তু দেখেনি। দেখতেও পাব না। কারণ ল্যাযারাস আবার মরে গেছেন আর উঠবেন না। কারুরই মো'জেজা স্থায়ী নয়, অস্থায়ী যার যার সময়ের যার যার স্থানের।

কিন্তু এবার যিনি এলেন তাকে তার (দঃ) পূর্বসুরীদের মত হোলে চোলবেনা। তার মো'জেজাও তার পূর্বসুরীদের মো'জেজার মত অস্থায়ী হোলে চলবে না- কারণ তিনি শেষ প্রেরিত। প্রথমতঃ তিনি যে প্রেরিত সে নিদর্শন, প্রমাণ হোতে হবে চিরস্থায়ী। তার সময়ের থেকে হাজার দশ হাজার বছর পরে নয়, পৃথিবী এবং মানব জাতির আয়ু যতদিন আছে ততদিন পর্য্যন্ত তার মো'জেজা স্থায়ী হোতে হবে।

দ্বিতীয়তঃ পূর্বসুরীদের মো'জেজা তাদের নিজেদের জাতি, গোষ্ঠীরা দেখতে পেয়েছে। কারণ শুধু তাদের জন্যই তারা প্রেরিত হোয়েছিলেন, অর্থাৎ স্থানীয়। এর (দঃ) বেলায় তাও হোলে চলবেনা- এর (দঃ) মো'জেজা' দেখতে পেতে হবে পৃথিবীর সবার। কারণ তিনি বিশ্বের সমগ্র মানব জাতির জন্য প্রেরিত। এক কথায় এই শেষ এবং শ্রেষ্ঠতম রসুলের (দঃ) মো'জেজা হোতে হবে এমন যে, পৃথিবীর সমস্ত মানুষ তা দেখতে পায় এবং শুধু তাই নয়, পৃথিবী ও মানব জাতি যত দিন আছে ততদিনই দেখতে পায়। এমন মো'জেজা কি সম্ভব? এমন মো'জেজা কি মানব জাতির আদর্শ সেই তুলনাহীন মানুষটি দেখিয়েছেন? হ্যাঁ দেখিয়েছেন।

শেষ প্রেরিত বিশ্বনবীকে (দঃ) যখন জিজ্ঞাসা করা হতো- আল্লাহ(Allah)র অন্যান্য নবীদের (আঃ) মো'জেজা ছিলো, আপনার মো'জেজা কি? তখন তিনি জবাব দিতেন- আমার মো'জেজা কোরান (হাদীস )। যদিও কোরান তার (দঃ) একমাত্র মো'জেজা নয়। কিন্তু সত্যই তার সর্ব প্রধান মো'জেজা কোরান। কেমন কোরে তার কিছুটা ব্যাখ্যা দরকার।

ব্যাখ্যার প্রথম অংশঃ মুসলিম(Muslim) অসমুলিম কোন ইতিহাসবেত্তারই দ্বিমত নেই যে রসুলুল্লাহর (দঃ) চল্লিশ বছর বয়স থেকে তেষট্টি বছর বয়সে ওফাত পর্য্যন্ত- এই তেইশ বছরে কিছু কিছু কোরে, কোন সময়ে সামান্য, কোন সময়ে বেশ কিছু কোরে, সমস্ত বইটি অবতীর্ণ হোয়েছে। প্রেরিত বোলেছেন- এর একটি অক্ষরও আমার নয়। এর প্রতিটি অক্ষর প্রতিটি শব্দ স্রষ্টার মুখের বাণী, তার দেয়া জীবন-ব্যবস্থা, আইন-কানুন, দণ্ডবিধি, আদেশ-নিষেধ, সমস্ত মানব জাতির জন্য। আমি বাহক মাত্র। এই বাণীগুলি যখনই এসেছে তখনই লিখে রাখা হোয়েছে এবং প্রেরিত (দঃ) স্বয়ং এবং অন্যান্য অনেকেই তা সঙ্গে সঙ্গে মুখস্থ কোরে ফেলেছেন। অন্য কিছুর সাথে এমন কি তার নিজের কোন কথার সাথে আল্লাহ(Allah)র এই বাণী মিশে না যায় সেদিকে রসুল (দঃ)এবং তার অনুসারীরা তীক্ষ্ম দৃষ্টি রাখতেন। এত সতর্কতা নেয়া হোয়েছে যে অনুসারীদের মধ্যে কেউ কেউ যখন রসুলের (দঃ) উপদেশ ইত্যাদি লিখে রাখতে চেষ্টা কোরলেন তখন তিনি (দঃ) নিষেধ কোরেছিলেন, যাতে হঠাৎ অসাবধানে তা কোরানের বাণীর সঙ্গে মিশে না যায়। পরে সবার যথেষ্ট সতর্ক থাকার ফলে যখন সে সম্ভাবনা একেবারেই রোইলোনা শুধু তখন মহানবী (দঃ) অনুমতি দিলেন তার কাজ, কথা, উপদেশ ইত্যাদি আলাদা কোরে লিখতে, যা আজ হাদীস। স্রষ্টা স্বয়ং তার নিজের মুখের এই বাণীর বাক্যগুলির নাম দিলেন আয়াত অর্থাৎ প্রকাশ্য নিদর্শন। অর্থাৎ আল্লাহ(Allah) মানুষকে বোলছেন- এই বাক্যগুলি মোহাম্মদের (দঃ) কথা নয়, আমার নিদর্শন। পুর্ববর্তী ধর্মগ্রন্থগুলির সাথে এইখানে কোরানের তফাৎ, বৈশিষ্ট্য এসে গেলো। ঐ সমস্ত ধর্মগ্রন্থে আল্লাহ(Allah)র নিজের মুখের যে বাণী শ্লোক (একই অর্থে আয়াত) তা এবং যার মাধ্যমে তা এসেছে, সেই প্রেরিতের কথা, কাজ ইত্যাদি তালগোল পাকিয়ে গেছে। উদাহরণরূপে বাইবেল- উভয় বাইবেল। পুরানো বাইবেলে (Old Testament) আদম (আঃ) থেকে শুরু কোরে বহু প্রেরিত তাদের জীবনী, কাজকর্ম, ভ্রমণ, কথাবার্তা ইত্যাদির সঙ্গে আল্লাহ(Allah)র বাণী এমনভাবে মিশে গেছে যে, তা থেকে শুধু আল্লাহ(Allah)র মুখের সরাসরি কথা ছেকে বের কোরে নেয়া আজ অসম্ভব। নতুন বাইবেলে (New Testament) ঈসার (আঃ) জীবনী লিখেছেন চারজন, যার কেউই ঈসাকে (আঃ) চোখেই দেখেননি। স্বভাবতঃই মিল নেই। এবং ঈসার (আঃ) মুখ দিয়ে স্রষ্টার যে বাণী বের হোয়েছে তা এবং ঈসার (আঃ) নিজের কথা বা অভিমতের মধ্যে কোন পার্থক্য টানা অসম্ভব হোয়ে গেছে। এই ক্রটি সংশোধন করার আপ্রাণ চেষ্টা খ্রীস্টান ধর্মের পণ্ডিতরা কোরেছেন। কোরতে যেয়ে তারা দেখেছেন যে ঠিক শুধু আল্লাহ(Allah)র মুখের বাণীগুলো ছেকে আলাদা কোরে লেখা অসম্ভব। এ অসম্ভব চেষ্টা ছেড়ে দিয়ে তারা চেষ্টা কোরলেন যে একটি বইয়ে শুধু ঈসার (আঃ) মুখ নিসৃত কথাগুলো আলাদা করা যায় কিনা এবং এই চেষ্টায় উদ্ভাবন কোরলেন রেড লেটার বাইবেল (Red Letter Bible). তারা বাইবেল ছাপালেন কালো কালিতে এবং ঈসা (আঃ) যে কথাগুলো নিজের মুখে বোলেছেন বোলে তারা মনে করেন কিন্তু কোন প্রমাণ নেই, সেগুলো ছাপালেন লাল কালিতে। লক্ষ্য করুন- লাল কালিতে ছাপানো কথাগুলো কিন্তু আল্লাহ(Allah)র নয়, খ্রীস্টান পণ্ডিতরা তা দাবীও কোরছেন না- তারা দাবী কোরছেন লাল কালিতে ছাপানো শব্দ ও কথাগুলো যিশুর অর্থাৎ ঈসার (আঃ)। আসলে কিন্তু তাও নয়। কারণ যে চারজন ঈসার (আঃ) জীবনী লিখেছেন তারা ঈসার (আঃ) মুখ দিয়ে চার রকমের কথাও বোলিয়েছেন, চার রকমের কাজও কোরিয়েছেন এবং ঐ চার রকমের মধ্যে অনেক পার্থক্যও রোয়েছে। কোরানের আয়াত (শুধুমাত্র আল্লাহ(Allah)র মুখের বাণী, বাক্য) এবং হাদীস। (বিশ্বনবীর কাজ, কথা, ভ্রমণ যুদ্ধ ইত্যাদি) যদি একই বইয়ে ঢুকিয়ে দেয়া হয় এবং গুলিয়ে ফেলা হয় তাহোলে কোরানের অবস্থা যা দাঁড়াবে- অন্যান্য ধর্মগ্রন্থগুলির সেই অবস্থা। বরং তার চেয়েও খারাপ অবস্থা হোয়ে দাঁড়িয়েছে আরও কয়েকটি কারণের জন্য। রসুলুল্লাহর (দঃ) তীক্ষ্মদৃষ্টি এবং প্রখর সতর্কতার জন্য আল্লাহ(Allah)র মুখের বাণী (আয়াত) সম্পূর্ণ আলাদা হোয়ে রোইলো। পুত পবিত্র হোয়ে তার প্রতিটি শব্দ সংরক্ষিত হলো চির দিনের জন্য। এই হলো কোরানের মো'জেজার প্রথম অংশ।

দ্বিতীয় অংশ- দেশী, বিদেশী কোন ইতিহাসবেত্তার সন্দেহ নেই যে মোহাম্মদ (দঃ) নিরক্ষর ছিলেন। এই নিরক্ষর লোকটি তেইশ বছর ধোরে খণ্ডে খণ্ডে একটি বিরাট বই রচনা কোরলেন যা চৌদ্দশ’ বছর ধোরে বিশ্বাসী-অবিশ্বাসী, দেশী-বিদেশী মহাপণ্ডিতদের গবেষণার বস্তু হোয়ে রোয়েছে, যার ওপর হাজার হাজার বই লেখা হোয়েছে। যে বইয়ের ওপর গবেষণা কোরতে যেয়ে বহু মহাপণ্ডিত একে মানুষের সৃষ্ট হোতে পারে না বিশ্বাস কোরে শেষে ইসলাম(Islam)কে মেনে নিয়েছেন। এই চলতি বছরের দু'জন নামকরা বিজ্ঞানী- একজন ফরাসি এবং একজন ইংরাজ শেষ নবী মোহাম্মদের (দঃ) নবুয়তের ওপর বিশ্বাস এনে মুসলিম(Muslim) জাতিতে যোগ দিয়েছেন। কারণ জিজ্ঞাসা করায় তারা দু'জনেই বলেছেন, (তাদের কারও সঙ্গে কারও পরিচয় বা যোগাযোগ ছিলোনা) যে তারা বিজ্ঞানী হিসাবে আজকের বিজ্ঞানের আলোকে কোরানের ওপর বহুদিন গবেষণা কোরে এই স্থির সিদ্ধান্তে উপনীত হোয়েছেন যে, এই মহাগ্রন্থ মানুষের রচনা হওয়া সম্ভব নয়। এই বইয়ে যে সমস্ত বৈজ্ঞানিক সত্য তারা পেয়েছেন তার কতকগুলি অতি সাম্প্রতিককালে আবিষ্কার এবং প্রমাণিত হোয়েছে। চৌদ্দশ বছর আগে একজন নিরক্ষর মানুষের পক্ষে, তিনি যতবড় চালাক লোকই হোননা কেন, এসব বৈজ্ঞানিক তথ্য প্রকাশ কোরে যাওয়ার কথাই ওঠে না। এমন কি তিনি যদি নিরক্ষর না হোয়ে তদানিন্তন কালের পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানীও হোতেন তবুও তা তার পক্ষে সম্ভব হতোনা, কারণ এসব তথ্য তখন আবিষ্কারই হয়নি। কাজেই এ কোরানের রচয়িতা একমাত্র সর্বজ্ঞানী স্রষ্টা ছাড়া কেউ হোতে পারে না।

তৃতীয় অংশঃ এই কোরানে স্রষ্টা আল্লাহ(Allah) মানুষ জাতিকে লক্ষ্য কোরে বোলছেন- তোমরা যদি মনে কর এই কোরান আমার কথা, বাক্য নয় মোহাম্মদ (দঃ) এটা রচনা কোরেছেন তবে তোমরা এই বইয়ের যেকোন একটা অধ্যায়ের (সূরা) মত একটি মাত্র অধ্যায় রচনা কোরে দেখাও যে তোমরাও এমন অধ্যায় কোরতে পার, কাজেই এটা মোহাম্মদের (দঃ) রচনা হওয়া অসম্ভব। এবং তা কোরতে তোমরা সকলে অর্থাৎ সমগ্র মানব জাতি একত্র হোয়ে তোমাদের জ্ঞান, সাহিত্য, কবিত্বের সর্বশক্তি প্রয়োগ কোরে হলেও তা কোরে দেখাও। কোরানের স্রষ্টা অবিশ্বাসীদের, সন্দেহবাদীদের এই চ্যালেঞ্জ কোরে তারপর নিজেই বোলে দিচ্ছেন- তোমরা কখনোই তা পারবেনা (কোরান সূরা আল বাকারা ২৩, ২৪)। এখানে মনে রাখা দরকার যে, কোরানে এমন ছোট অধ্যায়ও আছে যা মাত্র ষোলটি শব্দ দিয়ে তৈরী হোয়েছে। আজ চৌদ্দশ' বছর পার হোয়ে গেছে আজ পর্য্যন্ত কোন মানুষ ষোলটি শব্দ এমন কোরে লিখতে পারলোনা- যা জ্ঞানের গভীরতা, সাহিত্যে, রচনা শৈলীতে কোরানের সমকক্ষ হয়। কোরানকে মোহাম্মদের (দঃ) রচনা প্রতিপন্ন কোরতে চেষ্টার লোকের অভাব আছে একথা আশা করি কেউ বোলবেন না। কোরানের স্রষ্টার এ চ্যালেঞ্জ চৌদ্দশ বছর আগের দেয়া। এবং এ চ্যালেঞ্জ দাঁড়িয়ে থাকবে যতদিন এই পৃথিবী ও মানুষ আছে। এ চ্যালেঞ্জের সময়সীমা নেই, অন্য কোন শর্তও নেই। যদি ধোরে নেই কোরান আল্লাহ(Allah)র বানী নয়- মোহাম্মদ (দঃ) নিজেই এর রচয়িতা তাহোলে প্রশ্ন আসে, তিনি এমন একটা চ্যালেঞ্জ কী কোরে দিলেন? তিনি চিন্তা কোরলেন না যে, অনাগত ভবিষ্যতে কেউ বা কারও সম্মিলিত প্রচেষ্টায় যদি হঠাৎ এমন কোন রচনা সৃষ্টি হোয়ে যায়- যা তার (দঃ) রচিত সূরার সমান সাহিত্য হোয়ে যায়, বিশেষ কোরে যখন মাত্র ষোলটি শব্দের ছোট্ট অধ্যায়ও তিনি রচনা কোরেছেন, তাহোলে তো ঐ একটি মাত্র কারণেই তিনি মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত হবেন। তাহোলে শুধু কোরানকেই যে তার (দঃ) নিজের রচনা বোলে বলা হবে তাই নয়, তার সমস্ত কাজকেই মিথ্যা ও ধোকাবাজি বলার সুযোগ হোয়ে যাবে। এতবড় ঝুকি তিনি নিতে গেলেন কেন? ইতিহাসে আছে গত চৌদ্দশ' বছরে ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগতভাবে বহু প্রয়াস প্রচেষ্টা হোয়েছে কোরানের ক্ষুদ্রতম সূরার সমকক্ষ একটি সূরা প্রনয়ন কোরতে। হয়নি, হবেনা। যারা চেষ্টা কোরেছেন তারাই শেষে হাল ছেড়ে দিয়ে বোলেছেন- হয় না, দাবীও করেন নি হোয়েছে বোলে। ভবিষ্যতেও হবে না।

চতুর্থ অংশঃ- তার কোরানে স্রষ্টা বোলছেন-এই কোরানকে আমি (সমস্ত কিছু থেকে) রক্ষা করবো (কোরান- সূরা আল হিজর ৯)। অর্থাৎ কেউ এর কোন কথা বদলাতে, কোন অংশ বাদ দিতে, কোন কিছু যোগ কোরতে পারবেনা। এক কথায় অবতীর্ণ হবার সময় এ যা ছিলো তা থেকে এক একবিন্দু বদলাতে দেব না। এ ভার আমি নিজে গ্রহণ কোরলাম এবং এ দায়িত্ব আমি চিরদিন পালন কোরবো। মুসলিম(Muslim) অমুসলিম(Muslim) গবেষকদের কারুরই দ্বিমত নেই যে, আজ পৃথিবীময় মানুষ যে কোরান পড়ে তার সাথে শেষ প্রেরিত মোহাম্মদের (দঃ) সময় যে কোরান পড়া হতো তার সাথে একটি চন্দ্রবিন্দুও তফাৎ নেই। সম্প্রতি রাশিয়ায় একটি কোরান পাওয়া গেছে যেটি প্রমাণিত হোয়েছে আমীরুল মো'মনীন আলীর (রাঃ) নিজের হাতের লেখা বোলে। ঐ কোরানের সঙ্গে আমরা এখন যে কোরান পড়ি তার সাথে একটি অক্ষরের অমিল নেই। শুধু উচ্চারণের সুবিধার জন্য যে নুখতাগুলো (Vowel point) পরে যোগ করা হোয়েছে সেগুলো ছাড়া। যেখানে পৃথিবীর কোন ধর্মগ্রন্থই অবিকৃত নেই, বহু গ্রন্থের অস্তিত্বই নেই, সেখানে চৌদ্দশ' বছরে সম্পূর্ণ অবিকৃত থাকা কোরানের এক মো'জেজা।

এখানে মো'জেজার প্রসঙ্গ ছেড়ে দু'টো কথা বোলে নেই। প্রশ্ন হোচ্ছে এর আগেও তো আল্লাহ(Allah)র কাছ থেকে বই, কেতাব, জীবন বিধান বহন কোরে ধর্মগ্রন্থ এসেছে। বাইবেল, তোরাহ, এসবগুলোকে তো স্রষ্টা নিজেই স্বীকার কোরেছেন তারই পাঠানো বই বোলে (কোরান- সূরা আলে ইমরান-৩)। কিন্তু ও গুলোকে রক্ষা করার ভার তিনি নেননি কেন? যার ফলে ওগুলো বিকৃত হোয়ে গেছে, অনেকগুলো ধ্বংস হোয়ে গেছে? শুধু কোরানের বেলায় তিনি রক্ষাকর্তা হোলেন কেন? এর উত্তর হলো- এই কোরান, এই জীবন বিধান তার শেষ বই বোলে। এর আগের বইগুলো সম্বন্ধে তিনি জানতেন মানুষ ওগুলো বিকৃত কোরে ফেলবে, অনেক অংশ বাদ দিয়ে অনেক কিছু ইচ্ছামত যোগ কোরবে, অনেক বই, যুদ্ধ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ইত্যাদিতে ধ্বংস হোয়ে যাবে। তিনি নিজে ওগুলোর রক্ষার দায়িত্ব নেননি এই জন্য যে, তিনি জানতেন তাকে পরে আবার তার প্রেরিত নবী পাঠাতে হবে, তার মাধ্যমে তার বাণী নতুন কোরে আবার মানুষকে জানাতে হবে। কিন্তু কোরান তার শেষ বাণী, পৃথিবীর মানুষের বাকি আয়ুকালের জন্য তার শেষ এবং পূর্ণ জীবন বিধান। এ যদি বিকৃত হয় তবে তাকে আবার রসুল পাঠাতে হবে, আবার তার বাণী পাঠাতে হবে মানুষের অনাগত বংশধরদের জন্য। তাহোলে শেষ নবী (দঃ) আর শেষ নবী থাকবেন না।

কথাটা বোধহয় আরও একটু পরিষ্কার করা দরকার। আজ যদি কোন চিন্তাশীল হিন্দু (যদিও হিন্দু বোলে কোন ধর্ম নেই, আসলে ওটা সনাতন ধর্ম) তার ধর্মের বর্তমান অবস্থায় অসন্তুষ্ট হোয়ে, সেটার প্রকৃত অবস্থা অর্থাৎ সেটা যখন অবতীর্ণ হোয়েছিলো সেই অবিকৃত খাঁটি অবস্থার অনুশীলন কোরতে চান তবে তিনি তা পারবেন না। কারণ তার বেদ আর সে বেদ নেই অবতীর্ণ হবার সময় সেটা যা ছিলো। একথা তার ধর্মের পণ্ডিতরাই বোলবেন। ভগবত গীতা সহ অন্যান্য গ্রন্থেরও সেই একই কথা। গীতার বিশেষজ্ঞরাও তা স্বীকার করেন। গীতার অতি প্রসিদ্ধ অনুবাদক, ব্যাখ্যাকার ও টিকাকার শ্রী জগদীস চন্দ্র ঘোষ লিখছেন- "প্রাচীন ধর্মসূত্রগুলি অধিকাংশ পরিবর্ত্তিত ও পরিবর্দ্ধিত হইয়া ধর্মসংহিতা নাম ধারণ করিয়াছে।" সংহিতাগুলির মধ্যে মনুসংহিতাই সর্বাপেক্ষা প্রাচীন ও প্রামাণ্য, অন্যান্যগুলি প্রাচীন নাম সংযুক্ত থাকলেও অপেক্ষাকৃত আধুনিককালে সঙ্কলিত হইয়াছে, সন্দেহ নাই।" "প্রাচীন বিধি সমূহ কতক পরিবর্দ্ধিত হইয়াছে; কতক সংশোধিত হইয়াছে এবং ভক্তিমার্গের অনুকূল অনেক নতুন ব্যবস্থা ও বিধিবদ্ধ হইয়াছে।" "আবার মনুর অষ্টপ্রকার বিবাহ, দ্বাদশ প্রকার পুত্র ইত্যাদি বিষয়ক ব্যবস্থা পরবর্তীকালে সম্পূর্ণ পরিবর্ত্তিত হইয়াছে। "[শ্রীমদ্ভাগবদগীতা- শ্রী জগদীসচন্দ্র ঘোষ সম্পাদিত (সপ্তম সংস্করণ হইতে পুনমুদ্রন) পৃঃ ১৩-১৪] ত্রয়োদশোহধ্যায়ের প্রথম শ্লোক ব্যাখ্যায় জগদীস বাবু লিখেছেন-"অনেকেই এই শ্লোকটি প্রক্ষিপ্ত বলিয়া মনে [শ্রীমদ্ভাগবদগীতা- শ্রী জগদীসচন্দ্র ঘোষ সম্পাদিক (সপ্তম সংস্করণ হইতে পুনমুদ্রন) পৃঃ ৪৭৪] করেন।" "এই শ্লোকটি কেহ পরে বসাইয়া দিয়াছেন।" অর্থাৎ নিঃসন্দেহে আজ যদি কেউ অমলিন, অবিকৃত সনাতন ধর্ম মতে নিজ জীবন চালনা কোরতে চান তবে তা তার পক্ষে অসম্ভব। অনুরূপভাবে যদি একজন খ্রীস্টান খ্রীস্টধর্মের বর্তমান হাজার হাজার ভাগের (ফেরকা) কোনটি সঠিক তা জেনে সেইটা পালন কোরতে চান, তাও তার পক্ষে সম্ভব হবে না। কারণ ঈসা (আঃ) যে আরামাইক ভাষায় কথা বোলতেন সে ভাষায় আজ কোন বাইবেল নেই, আজকের সব বাইবেল একটি মানুষ রচিত বইয়ের অনুবাদ মাত্র। সুতরাং- ঈসা (আঃ) যা শিক্ষা দিয়েছিলেন তা আজ পৃথিবীতে নেই। বাইবেল নিয়ে বহু গবেষণা কোরেছেন এমন পণ্ডিতদের মধ্যে অনেকেরই অভিমত তাই। ঠিক এমন অবস্থা কোন মুসলিমের না হয় সেই জন্য স্রষ্টা তার শেষ বইয়ের রক্ষার ভার নিজে নিয়েছেন। যেসব বিকৃতি আসার ফলে পূর্ববর্তি অন্যান্য ধর্ম বাতিল কোরে আল্লাহ(Allah) নতুন নবী পাঠিয়েছেন সেই সব বিকৃতি এই শেষ দ্বীনেও এসে গেছে। কিন্তু আজ যদি কেউ এর এই বিকৃত আকীদা ছুড়ে ফেলে এর প্রকৃত অনুসারী হোতে চায় তবে তার জন্য অবিকৃত কোরান রোয়েছে। যা অনুসরণ কোরে সে বা তারা মহানবী (দঃ) যে দ্বীন আমাদের জন্য রেখে গেছেন সেই দ্বীন জীবনে প্রতিষ্ঠা কোরতে পারে। আল্লাহ(Allah) যদি তার এই শেষ বই সমস্ত রকম বিকৃতি থেকে রক্ষা না কোরতেন তবে নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, অন্যান্য ধর্মের পুরোহিতদের মত এ ধর্মের পুরোহিত পণ্ডিতরাও বহু আগেই আগের ধর্মগ্রন্থগুলির মত এই কোরানকেও বিকৃত কোরে ফেলতেন এবং সুতরাং কয়েকশ বছর আগেই স্রষ্টাকে আবার রসুল পাঠাতে হতো। কোরান মানব জাতির জন্য শেষ জীবন বিধান বোলেই আল্লাহ(Allah)কে এর রক্ষক হোতে হোয়েছে।

পঞ্চম অংশঃ আল্লাহ(Allah) তার মুখের বাণী কোরান সম্বন্ধে বোলছেন- নিশ্চয়ই আমরা কোরানকে স্মৃতিবদ্ধ, মুখস্থ করার জন্য সহজ কোরে দিয়েছি (কোরান- সূরা আল কমর ১৭)। অর্থাৎ কোরানের এক মো'জেজা চিহ্ন বৈশিষ্ট্য হলো এই, যে কেউ চেষ্টা করলে একে মুখস্থ কোরতে পারবে। এটা ঐতিহাসিক সত্য যে বিশ্বনবীর (দঃ) সময়েই অর্থাৎ যখন কোরান অবতীর্ণ হোচ্ছিলো তখন থেকেই মানুষ এই মহাগ্রন্থ মুখস্থ কোরতে শুরু কোরেছিলো। অবতীর্ণ শেষ হওয়ার অর্থাৎ মহানবীর (দঃ) ইন্তিকালের মাত্র কয়েকমাসের মধ্যেই ইয়ামামার যে যুদ্ধ হলো তাতে আটশ' হাফেজ অর্থাৎ যারা প্রথম থেকে শেষ পর্য্যন্ত সমস্ত কোরান স্মৃতি থেকে আবৃত্তি কোরতে পারেন- শহীদ হোয়ে ছিলেন। একটি মাত্র যুদ্ধে যদি অতগুলি হাফেজ শহীদ হোয়ে থাকেন তবে তখনই মোট হাফেজের সংখ্যা কত ছিলো? তারপর যখন উম্মতে মোহাম্মদী শেষ জীবন ব্যবস্থা সশস্ত্র যুদ্ধের মাধ্যমে পৃথিবীর চারিদিকে সম্প্রসারিত করলো তখন আরবের বাইরের দেশগুলির মধ্যে যারা এ জীবন পথ গ্রহণ কোরলেন তাদের মধ্যে হাজার হাজার নয়, লক্ষ লক্ষ হাফেজ সৃষ্টি হোতে লাগলো।

চৌদ্দশ' বছর পার হোয়ে গেছে। আজ তথাকথিত মুসলিম(Muslim) জাতি মহানবীর (দঃ) মাধ্যমে প্রেরিত প্রকৃত ইসলাম(Islam) থেকে বহু লক্ষ মাইল দূরে সরে গেছে, শুধু এর খোলসটা কোনমতে ধোরে আছে, এবং বর্তমান পৃথিবীর নিকৃষ্টতম জাতি বোলে চিহ্নিত। কিন্তু কোরানের ঐ বৈশিষ্ট্য ঐ মো'জেজা তার জায়গায় ঠিক তেমনি দাঁড়িয়ে আছে। আজও পশ্চিমে আটলান্টিকের কুল থেকে পূর্বে প্রশান্ত মহাসাগরের কুল পর্য্যন্ত এই ভুখণ্ডে লক্ষ লক্ষ মানুষ আছেন যারা সাড়ে ছিয়াশী হাজার শব্দের এই বিরাট বইটাকে স্মৃতি থেকে নির্ভুল ভাবে আবৃত্তি কোরতে পারেন। এর বাইরেও পৃথিবীর অন্যান্য স্থানেও এমন বহু মানুষ আছেন এদের মধ্যে যুবক প্রৌঢ়, বৃদ্ধ, এমন কি সাত আট বছরের ছেলেমেয়েও আছে। বাইবেল কেউ মুখস্থ কোরতে পেরেছেন? বেদ, গীতা মুখস্থ কোরতে পেরেছেন? আমার জানা নেই। যদি কেউ কোরেও থাকেন তবে তা ব্যতিক্রম, কোরানের মত লক্ষ লক্ষ লোক নয়। আরও অদ্ভুত ও আশ্চর্য ব্যাপার হলো এই যে, আরবের বাইরে যে লক্ষ লক্ষ হাফেজ আছেন, তাদের মাতৃভাষা আরবী নয়, এবং এদের মধ্যে বহু আরবী ভাষাও জানেন না। আরবীতে এক লাইন কথা বোলতে পারেন না। বহু আছেন যারা লেখাপড়াই জানেন না। শুধু অন্যের পড়া বা আবৃত্তি কানে শুনে শুনে এই বিরাট বই স্মৃতিবদ্ধ ও মুখস্থ কোরেছেন। এ যদি মো'জেজা না হয় তবে মো'জেজা কি? অলৌকিক কি?

ষষ্ঠ অংশঃ মুসার (আঃ) ইতিহাস বোলতে যেয়ে আল্লাহ(Allah) তার বইয়ে বোলছেন- যখন ফেরাও মুসার পেছনে ধাওয়া কোরে সৈন্য সামন্ত নিয়ে লোহিত সাগরের কুলে এলো আল্লাহ(Allah)র আদেশে মুসা (আঃ) তার লাঠি দিয়ে সমুদ্রকে আঘাত কোরলেন, সমুদ্র দু'ভাগ হোয়ে ইসরালীদের পথ কোরে দিল। মুসা (আঃ) সেখান দিয়ে পার হবার পর ফেরাউন তার সৈন্য সামন্ত নিয়ে সমুদ্রে নেমে পড়লো তখন আল্লাহ(Allah)র হুকুমে সমুদ্র দু'দিক থেকে তাদের ওপর গড়িয়ে পড়ে সবাইকে ডুবিয়ে মারলো। ফেরাউন যখন দেখলো তার বাহিনী তার সামনে ধ্বংস হোয়ে গেলো এবং তারও বাঁচার সম্ভাবনা নেই তখন সে বললো- ইসরাইলীদের আল্লাহ(Allah) ছাড়া আর কোন প্রভু নেই এবং আমি তার কাছে আত্মসমর্পন কোরলাম। তখন আল্লাহ(Allah) বোললেন- কী! এত অবাধ্যতা, এত অন্যায় করার পর? তারপর দয়াময় বোললেন- আচ্ছা, আজ আমি এই দয়া করবো যে, তোমার শরীর আমি রক্ষা করবো এবং তা তোমার পর অনাগত সময়ের মানুষের জন্য একটা নিদর্শন হোয়ে রোইবে। এই সম্বন্ধে আল্লাহ(Allah) এও বোললেন যে- অধিকাংশ মানুষ আমাদের নিদর্শন দেখেও তা পরোয়া করে না (কোরান- সূরা ইউনুস ৯১-৯৩)। মিশরে পুরানো কবর খুড়ে খুড়ে অনেক মমী বের কোরেছেন প্রত্নতাত্তিকেরা। ওর মধ্যে বেশ কয়েকজন ফারাওয়ের মমীও বের হোয়েছে। কতকগুলিকে সনাক্ত করা গেছে, কতকগুলিকে যায়নি। গত ১৮৯৮ খ্রীস্টাব্দে একজন ফেরাওয়ের মমী করা দেহ পাওয়া গেছে, যেটিকে প্রত্নতাত্তিক পণ্ডিতেরা সনাক্ত কোরেছেন সেই ফেরাও বোলে, যে মুসা (আঃ) কে অনুসরন কোরে লোহিত সাগরে ডুবে মারা গিয়েছিলো। এ পণ্ডিতরা কিন্তু কেউই মুসলিম(Muslim) নন, সবাই খ্রীস্টান এবং ঐ সনাক্তিকরণ অন্যান্য পণ্ডিতরা স্বীকার কোরে নিয়েছেন। চৌদ্দশ' বছর আগে একটি বইয়ে লেখা হলো তখন থেকে তিন হাজার বছর আগের একটি ঘটনার কথা এবং লেখার তেরশ' বছর পর অর্থাৎ ঘটনার সাড়ে চার হাজার বছর পরে সেই ঘটনার সত্যতা প্রমাণিত হলো। ঐ বইটি কে লিখেছেন? চৌদ্দশ' বছর আগে আরবের মরুভূমির এক নিরক্ষর মানুষ- না সর্বজ্ঞানী স্রষ্টা যিনি স্বয়ং ফেরাওকে ডুবিয়ে মেরেছিলেন? এর জবাবও দিতে হবে? আল্লাহ(Allah)র দেয়া জ্ঞান, বিচারবুদ্ধির অপব্যবহার কোরে যারা বলে মোহাম্মদ (দঃ) বাইবেল থেকে বিষয় বস্তু নিয়ে কোরান রচনা কোরেছেন, তাদের প্রশ্ন কোরছি যে, বাইবেলে ফেরাওয়ের দেহ রক্ষা করার কথা আছে কি? তার দেহ অনাগত ভবিষ্যতের মানুষের জন্য স্রষ্টার অস্তিত্ব ও কোরানের সত্যতার প্রমান হিসাবে রক্ষা করার কথা আছে কি? কোন জবাব দেয়া তাদের জন্য সম্ভব নয়, কারণ বাইবেলে তো নেই-ই, কোরান ছাড়া আর কোথাও নেই। ফেরাওয়ের দেহ রক্ষা করার কথা ঘোষণা কোরে আল্লাহ(Allah) সঙ্গে সঙ্গে বোলছেন- অধিকাংশ মানুষ আমাদের নিদর্শন, প্রমাণ দেখেও তা দেখে না, পরোয়া করে না । চিন্তা কোরে দেখুন, তার এ কথাও সত্য কিনা! কোরানের এমন সব অলৌকিক প্রমাণ দেখেও কোটি কোটি মানুষ এ যে স্রষ্টার মুখের বাণী ছাড়া আর কিছুই হোতে পারে না তা বিশ্বাস কোরছেনা।

সমস্ত বিশ্বের মানুষের জীবন-বিধান এই কোরান এবং যতদিন এই পৃথিবী ও মানুষ আছে ততদিনের জন্য। এ হোচ্ছে মানুষের জন্য চিরস্থায়ী সংবিধান, সনাতন ধর্ম। এই সংবিধানে মানুষের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক এবং সামগ্রিকভাবে মানুষ জাতির জন্য জীবনবিধান নির্দিষ্ট কোরে দেয়া হোয়েছে। ওরই মধ্যে মানুষের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, শিক্ষা, দণ্ডবিধি ইত্যাদি এক কথায় মানুষের যত রকম প্রয়োজন হোতে পারে তার মৌলিক নীতি, পথ নির্দেশ রোয়েছে। প্রশ্ন হোতে পারে, এ নীতিমালা সর্বকালের জন্য কি কোরে হোতে পারে? যেখানে মানুষ জ্ঞানে, বিজ্ঞানে, প্রযুক্তিতে সমৃদ্ধ হোচ্ছে, তার সমস্ত পারিপার্শ্বিকতা বদলে যাচ্ছে, বিবর্ত্তন হোয়ে চলেছে, সেখানে চৌদ্দশ’ বছর আগে দেয়া আইন কানুন, জীবন ব্যবস্থা কি কোরে বর্তমান ও ভবিষ্যতের জন্য প্রযোজ্য হোতে পারে? এ প্রশ্ন হোয়েছেও। শুধু হোয়েছে তাই নয়, এবং তা সম্ভব নয় মনে কোরে প্রায় সম্পূর্ণ ‘মুসলিম(Muslim)' জাতি এবং এর ‘মুসলিম(Muslim)' রাষ্ট্রগুলি কোরানের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক আইন-কানুন ও দণ্ডবিধি পরিত্যাগ কোরে খ্রীস্টানদের মত শুধু ব্যক্তিগত নির্দেশ, নামায, রোযা, হজ্ব, যাকাত ইত্যাদির মধ্যে সীমাবদ্ধ কোরে রেখেছে। এরা যদি সত্যান্বেষী মন নিয়ে কোরান পড়তেন তবে দেখতে পেতেন যে, যিনি এই মহা সংবিধান রচনা কোরেছেন তিনি তার আদেশ নির্দেশ দেবার সময় সর্বক্ষণ মনে রেখেছেন যে, তার এই আদেশ নির্দেশ, আইন-কানুন, দণ্ডবিধি মানুষের অস্তিত্বের শেষ পর্য্যন্ত কার্যকর থাকতে হবে। সুতরাং এতে এমন কোন আইন আদেশ নিষেধ থাকতে পারবে না যা স্থান বা কালের কারণে অচল হোয়ে যেতে পারে। তাহোলে তাকে আবার নতুন প্রেরিত এবং নতুন আইন পাঠাতে হবে। এরা দেখতে পেতেন যে, কোরানের সমস্ত আদেশ বুনিয়াদী, ভিত্তিমূলক (Basic truths), অর্থাৎ যে সব সত্য স্থান, কাল, পাত্রভেদে তফাৎ হয় না, যা সর্বকালে সর্ব অবস্থায় সত্য, প্রযোজ্য। খুব স্থূল উদাহরণ দিচ্ছি- স্রষ্টা বোলেছেন- তোমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হোয়ে আমার দেয়া রজ্জুকে (দ্বীন, জীবন-ব্যবস্থা) ধোরে রাখ এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হোয়ো না (কোরান- সূরা আলে ইমরান- ১০৩)। অর্থাৎ বোলছেন ঐক্যবদ্ধ হোয়ে থাকো। ঐক্য বিচ্ছিন্নতার চেয়ে শক্তিশালী। বিচ্ছিন্ন দশজনের চেয়ে ঐক্যবদ্ধ দশজন অনেক শক্তিশালী এ কথা যেমন সত্য, তেমনি সত্য একথাও যে আজ থেকে লক্ষ বছর আগেও তা সত্য ছিলো এবং আজ থেকে লক্ষ বছর পরেও তা তেমনিই সত্য থাকবে। অর্থাৎ বিচ্ছিন্নতার চেয়ে ঐক্য শক্তিশালী একথা চিরন্তন সত্য, শাশ্বত সত্য, এর কোন পরিবর্তন নেই, হোতে পারে না। আগুনে হাতে দিলে হাত পুড়বে একথা কি কোনদিন অসত্য ছিলো বা ভবিষ্যতে হবে? কোরান শুধু এমনি চিরন্তন সত্যে পূর্ণ। এতে এমন একটি আদেশ নির্দেশ নেই যা স্থান, কাল, পাত্রভেদে অচল বা অকার্যকর।

আরও একভাবে কোরান অন্য ধর্মগ্রন্থগুলি থেকে ভিন্ন। সেটা হলো, যেহেতু এটা শুধু বর্তমানের জন্য নয়, মানুষের ভবিষ্যতের জন্যও, সেহেতু তার মধ্যে অবশ্যই অনেক কিছুই থাকবে যা আমরা বর্তমানে বুঝতে পারবোনা। কথাটার ব্যাখ্যা দরকার। মানুষের জ্ঞান বিজ্ঞান কখনও একস্থানে দাঁড়িয়ে নেই, তা বিবর্তনের মধ্য দিয়ে ক্রমাগত এগিয়ে চলেছে। যে বই বর্তমান ও ভবিষ্যতের সব কিছু আবৃত কোরবে তার মধ্যে এমন সব বিষয় থাকতে বাধ্য যা সময়ের বিশেষ কোন বিন্দুতে দাঁড়িয়ে সবটা বোঝা যাবে না। আজ যদি কেউ বলে যে একটা মাত্র বোমা মেরে পঞ্চাশ লক্ষ লোকের বসতিপূর্ণ একটি শহর পৃথিবীর বুক থেকে নিশ্চিহ্ন কোরে দেয়া যায় তবে কি কেউ প্রতিবাদ কোরবে? কেউ না, কারণ দু'টি বোমা মেরে হিরোসীমা আর নাগাসাকী শহর দু'টো নিশ্চিহ্ন কোরে দেয়া হোয়ে গেছে। শুধু তাই নয়, আজ মানুষের হাতে যে উদজান বোমা আছে তা দিয়ে এই পৃথিবীটাই ধ্বংশ কোরে দেয়া যায়। কিন্তু মাত্র পঞ্চাশ বছর আগে কেউ একথা বোললে বা লিখলে লোকে তাকে পাগল ভাবতো। কিম্বা ভাবুন- মাত্র ত্রিশ বছর আগে কেউ যদি দাবী করতো যে সে চাঁদে গিয়েছিলো, ঘুরে এসেছে তবে আপনি তার সম্বন্ধে কি ভাবতেন? এখন শুধু নীল আর্মষ্ট্রং, (Neil Armstrong) নয় আরো বেশ কয়েকজন তা বোলছেন এবং পৃথিবীর কেউ আপত্তি কোরছেন না, তাদের পাগলাগারদেও পাঠাবার কথা বোলছেন না বরং তাদের নানাভাবে সম্মানিত কোরছেন। তাদের ভুড়িভোজ করাচ্ছেন। কারণ তাদের দাবী সত্য।

কোরানে আল্লাহ(Allah) মোশরেক ও কাফেরদের তুলনা দিয়েছেন মাকড়শার বাসার সঙ্গে। বোলেছেন তাদের অবস্থা হলো মাকড়সার বাসার মত। এ শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকে একজন জার্মান বিজ্ঞানী (নাম মনে নেই) কোরান পড়াশোনা কোরতে যেয়ে এই আয়াতের দিকে তার দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়। তার মনে আসে মুসলিম(Muslim)দের আল্লাহ(Allah) ভঙ্গুরত্বের তুলনা দিতে বেছে বেছে মাকড়শার বাসার কথা বোলছেন কেন? মাকড়শার বাসাই পৃথিবীর সব রকম বাসার মধ্যে ভঙ্গুরতম কিনা। এই একটি মাত্র আয়াত নিয়ে বৈজ্ঞানিক গবেষণার পর তিনি মুসলিম(Muslim) হোয়ে গেলেন এবং কারণ হিসাবে লিখলেন- কয়েক বছর গবেষণা কোরে তিনি দেখলেন পৃথিবীতে ছোট বড় পশু পাখিরা এবং পোকা ইত্যাদি যত রকম আবাসস্থল তৈরী করে কোনটাই মাকড়শার বাসার মত ভঙ্গুর (Frail) নয়। তার মনে এলো এই সত্য আরবের মরুভূমির একজন নিরক্ষর মানুষ মাকড়শার বাসা যে পৃথিবীতে যত রকম বাসা আছে তার মধ্যে সবচেয়ে দুর্বল, নরম আর ভঙ্গুর (কোরান- সূরা আল আনকাবুত- ৪১)। জানলেন কি কোরে? তারপর তার মনে এ বিশ্বাস জন্মালো যে তা সম্ভব নয়। একমাত্র যিনি সৃষ্টি কোরেছেন তিনিই জানেন পৃথিবীতে তিনি সবচেয়ে ভঙ্গুর কি সৃষ্টি কোরেছেন এবং কোরান নিশ্চয়ই তারই বাণী এবং কোরান মোহাম্মদের (দঃ) রচনা হোতে পারে না। এমনিভাবে কোরানে অনেক কিছুই আছে যা অবতীর্ণ হবার সময় বোঝা যায়নি কারণ জ্ঞান, বিশেষ কোরে বিজ্ঞান তখন অতি প্রাথমিক পর্য্যায়ে ছিলো। আজ জ্ঞান বিজ্ঞানে মানুষ জাতি আরও সম্মুখে এগিয়েছে এবং নতুন বৈজ্ঞানিক তথ্য আবিষ্কার কোরে দেখছে যে স্রষ্টা চৌদ্দশ' বছর আগেই তা কোরানে বোলে রেখেছেন যেগুলো বর্তমান তথ্য আবিষ্কার হবার আগে বোঝা সম্ভব ছিলো না। শুধু একটা উদাহরণ দিচ্ছি। আল্লাহ(Allah) বোলছেন- আমি পৃথিবীর সমস্ত প্রাণী পানি থেকে সৃষ্টি কোরেছি (কোরান- সূরা আন নূর- ৪৫)। আজ বিজ্ঞান দেখছে যে তার এই বাণী দুভাবে সত্য। এক. চিকিৎসা বিজ্ঞান জানতে পেরেছে যে, সমস্ত প্রাণীর দেহের ৭৫ থেকে ৯৬ ভাগই পানি। এমন কি উদ্ভিদ জাতীয় সব কিছুরই প্রধান ভাগ পানি। দুই. পৃথিবীতে প্রথম প্রাণ সৃষ্ট হয় সমুদ্রে, অর্থাৎ পানিতে।

কোরানে আগামী সমস্ত সময়ের জন্য মানুষের যা কিছু প্রয়োজন হবে সবই দেয়া আছে। মানুষের জ্ঞান ধীরে ধীরে যতই বাড়তে থাকবে ততই কোরানের আয়াতগুলির অর্থ বোঝা যেতে থাকবে। সম্পূর্ণ কোরান যে আজ বোঝা যেতে পারে না, কারণ অনাগত ভবিষ্যতের মানুষের জন্য অনেক তথ্য আল্লাহ(Allah) এর মধ্যে দিয়ে দিয়েছেন, এই সত্যটি আমাদের পণ্ডিতরা, মুফাস্‌সিররা উপলব্ধি কোরতে পারেননি। ফলে তারা এর প্রতিটি আয়াতের তফসীর অর্থাৎ ব্যাখ্যা করার চেষ্টা কোরেছেন। বিভিন্ন মুফাস্‌সির বিভিন্ন অর্থ, ব্যাখ্যা কোরেছেন, ফলে নানা মত অভিমত সৃষ্টি হোয়ে জাতির ঐক্য নষ্ট হোয়ে গেছে এবং কোন কোন ব্যাখ্যা অদ্ভুত ও অগ্রহণযোগ্য হোয়ে গেছে। কোরানের মো'জেজার সপ্তম অংশ তারই এক উদাহরণ।

সপ্তম অংশ- স্রষ্টা আল্লাহ(Allah) তার বাণী, আয়াতগুলি যখন তার সর্বশেষ, সর্বশ্রেষ্ঠ দূতের (দঃ) ওপর অবতীর্ণ কোরতে আরম্ভ কোরলেন তখন প্রথম দিকেই মুদাস্‌সার অধ্যায়ে (সুরা) মানব জাতিকে সাবধান কোরে দিলেন যে, তারা যেন একে মানুষের রচনা বোলে মনে না করে। বোললেন- "যারা এই আয়াত সমষ্টি অর্থাৎ কোরানকে অবজ্ঞাভরে প্রত্যাখ্যান কোরবে, এর প্রতি ভ্রুকুঞ্চিত কোরে মুখ ঘুরিয়ে চলে যাবে এবং বোলবে এসব পুরনো যাদু এবং মানুষের তৈরী রচনা- তাদের আমি এমন আগুনে নিক্ষেপ করবো যে, আগুন তাদের না ছাড়বে না এতটুকু রেহাই দেবে (কোরান- সূরা আল মুদাস্‌সির-২১-২৯)।

এটুকু বুঝলাম, না বোঝার কিছু নেই। যখন কোরান অবতীর্ণ হোয়েছিলো তখন যারা ছিলেন তারাও বুঝেছেন। কিন্তু ঠিক তার পরে আয়াতটিতে বোলছেন- "এর ওপর উন্নিশ" (কোরান- সূরা আল মুদাস্‌সির ৩০)। একি কথা? আগের কথার সাথে, আগের আয়াতগুলির অর্থের সাথে মিল, সামঞ্জস্য কিচ্ছু নেই, হঠাৎ বোলছেন, "এর ওপর উন্নিশ"। কিসের উন্নিশ, কার ওপর উন্নিশ? গত চৌদ্দশ’ বছর যারা কোরান পড়েছেন তারা এই আয়াতে এসে থমকে দাঁড়িয়েছেন। এ আবার কি? আপাতদৃষ্টিতে বেখাপ্পা এই আয়াতকে কোরান থেকে বাদও দেয়া যায়নি। কারণ স্বয়ং আল্লাহ(Allah) এর রক্ষক, হেফাযতকারী। অন্য সব আয়াতের মত মুফাস্‌সিররা এরও ব্যাখ্যা কোরতে চেষ্টা কোরেছেন, কারণ তারা এটা উপলব্ধি করেন নি যে ঐ আয়াত চৌদ্দশ' বছর পরের মানুষের জন্য আল্লাহ(Allah) দিয়েছেন যখন মানুষ কম্পিউটার নামে এক যন্ত্র তৈরী কোরবে। তার আগে ঐ আয়াতের অর্থ বোঝা কারো জন্য সম্ভব নয়। এই সত্য না বোঝার ফলে মুফাস্‌সিররা এর ব্যাখ্যার চেষ্টা কোরেছেন এবং স্বভাবতই এক একজন এক এক রকম ভুল ব্যাখ্যা কোরেছেন। যেমন দোযখের উন্নিশ জন ফেরেশতা আছে ইত্যাদি। জাহান্নামে মাত্র উন্নিশ জন ফেরেশতা? ওখানে কোটি কোটিরও বেশী ফেরেশতা। মহানবীকে (দঃ) ঐ আয়াতের অর্থ জিজ্ঞেস করা হোয়ছিলো কিনা জানিনা, হাদীসে পাইনি। জিজ্ঞেস করা হোলেও তিনি তার জবাব দিতেন না বোধহয়, কারণ ঐ আয়াত তদানিন্তন মানুষের জন্য ছিলোনা, ছিলো কম্পিউটারের (Computer) যুগের মানুষের জন্য, যেমন আরও বহু আয়াত আছে যেগুলো আজ থেকেও ভবিষ্যতের মানুষের জন্য এবং যেগুলোর অর্থ আমরা আমাদের বর্ত্তমানের জ্ঞান নিয়ে হাজার চেষ্টা কোরলেও বুঝবোনা। কিছুদিন আগে আরেক গবেষক মহাপণ্ডিত ডঃ রাশাদ খলিফা এই আয়াতের ওপর গবেষণা আরম্ভ কোরলেন আমেরিকায়। আগের মুফাস্‌সিরদের গবেষণার সঙ্গে এর গবেষণার একটা বড় তফাৎ রোইলো। সেটা হলো ডঃ খলিফা বিজ্ঞানের নতুন আবিষ্কার কম্পিউটারকে কাজে লাগালেন। কম্পিউটারের মাধ্যমে নানা রকম হিসাব করে ডঃ খলিফা এক আশ্চর্য আবিষ্কার কোরলেন। তিনি যা আবিষ্কার কোরলেন তা অতি সংক্ষেপে হলো এই- সমস্ত কোরান এই উন্নিশ সংখ্যার একটা আশ্চর্য হিসাবে বাধা। কোরানের প্রধান প্রধান তো বটোই এমনকি অনেক ছোট খাট বিষয়গুলি পর্য্যন্ত এই উন্নিশ সংখ্যার হিসাবে বাধা। ওগুলো সব উন্নিশ সংখ্যা দিয়ে বিভাজ্য। প্রথমে ধরুন কোরান যে বাক্যটি দিয়ে আরম্ভ হোয়েছে অর্থাৎ ‘বিসমিল্লাহির রহমানির রাহীম' এতে উন্নিশটি অক্ষর আছে। এই বিসমিল্লাহির রহমানির রাহীম বাক্যটি কোরানে ১১৪ বার আছে, প্রত্যেক সূরার আরম্ভে এবং সুরা নামলের মধ্যে। এই ১১৪ সংখ্যা উন্নিশ দিয়ে বিভাজ্য। (১৯ x ৬)= ১১৪। সম্পূর্ণ কোরান কেমন কোরে এই উন্নিশ সংখ্যার হিসাবে বাধা, এমন কি এর কতকগুলি অধ্যায়ের (সূরার) আরম্ভে যে মুকাত্তায়াত অর্থাৎ অক্ষরগুলি আছে সে গুলির হিসাবও এই উন্নিশ সংখ্যার হিসাবে বাধা তা সবিস্তারে এখানে লেখা সম্ভব নয়। এজন্য ডঃ রাশেদ খলিফার The Perpetual Miracle of Muhammad বইটি পড়লে হিসাবটির পূর্ণ বিবরণ পাওয়া যাবে।

প্রশ্ন হোচ্ছে প্রায় সাড়ে ছিয়াশী হাজার শব্দের একটি বই তেইশ বছর ধোরে যদি কোন মানুষ রচনা করেন তবে তার মধ্যে নিজের বক্তব্য, ভাষার সৌন্দর্য্য ইত্যাদি ঠিক রেখে সমস্ত বক্তব্যের মধ্যে কোথাও অমিল বিরোধীতা না থাকে সেদিকে লক্ষ্য রেখে সেই সঙ্গে এই বিরাট বইটিতে উন্নিশ সংখ্যার একটা আশ্চর্য বাধনে বেধে দেয়া কোন মানুষের পক্ষে কি সম্ভব? বিশেষ কোরে ঐ মানুষটি যদি ইতিহাসের ব্যস্ততম মানুষ হন যিনি নিরবিচ্ছিন্ন প্রবল প্রতিরোধের মুখে একটি সমাজ ব্যবস্থা ভেঙ্গে ফেলে নতুন সমাজ, নতুন জীবন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত কোরেছিলেন, মানব জাতির ইতিহাসের গতিপথ পরিবর্তন কোরেছিলেন, দশ বছরে আটাত্তরটি যুদ্ধ পরিচালনা কোরেছিলেন, ২৭ টিতে নিজে অংশ গ্রহণ কোরেছিলেন, বিশেষ কোরে ঐ মানুষটি যদি নিরক্ষর হন? যদি সম্ভব না হয় তবে দু'টি মাত্র সম্ভাবনা থাকে। সেই বিশ্ব সৃষ্টির প্রশ্নের মত অর্থাৎ এই হিসাবটা আকস্মিকভাবে (Accidentally) হোয়ে গেছে, আর যদি তা না হোয়ে থাকে তবে অবশ্যই এই কোরানের রচয়িতা হোলেন স্বয়ং আল্লাহ(Allah)। এই প্রশ্ন সমাধানের জন্য ডঃ রাশেদ খলিফা এ যুগের বিস্ময় কম্পিউটারের সাহায্য নিয়েছেন, যে যন্ত্রের হিসাবের ওপর নির্ভর কোরে আজকের যান্ত্রিক সভ্যতা(Civilization) চলছে, যে যন্ত্রের হিসাবের ওপর নির্ভর কোরে মানুষ চাঁদে গেছে, মঙ্গল গ্রহে, শনি গ্রহে এবং মহাকাশে রকেট পাঠিয়েছে। তিনি এই সমস্ত তথ্য কম্পিউটারে প্রবিষ্ট কোরিয়ে প্রশ্ন রাখলেন সমস্ত বইটাতে ওমুক ওমুক ভাবে উন্নিশ সংখ্যার হিসাবে বেধে যাওয়াটা আকস্মিকভাবে (Accidentally) হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু? কম্পিউটার হিসাব কোরে জবাব দিলো ৬২৬০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০ এর মধ্যে ১, অর্থাৎ ৬২৬ লিখে তারপর চব্বিশটা শূণ্য যোগ করলে যে সংখ্যা হয় ততবারের মধ্যে মাত্র এক। এক কথায় অমনটি আকস্মিকভাবে হওয়াটা অসম্ভব। বাকি রইলো এই হিসাবে সমস্ত কোরানকে বেধে দেয়ার কাজটা কোরেছেন হয় রসুলুল্লাহ (দঃ) আর না হয় আল্লাহ(Allah)। পেছনে দেখিয়ে এসেছি এটা কোন মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়, কাজেই একমাত্র সিদ্ধান্ত হলো এটা কোরেছেন স্বয়ং স্রষ্টা। এবং তাই এত বড় প্রমাণ সত্বেও যারা একে আল্লাহ(Allah)র মুখের কথা বোলে বিশ্বাস কোরবে না তাদের জন্য বোলেছেন- তাদের আমি এমন আগুনে নিক্ষেপ করবো যে আগুন তাদেরকে না ছাড়বে, না এতটুকু রেহাই দেবে (কোরান- সূরা আল মুদাস্‌সির- ২৮)।

কোন মন্তব্য নেই: