বৃহস্পতিবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০১১

৩২। আল্লাহর রসুল (দঃ) এর ক্রোধ

উৎস: Islam and Dajjal
আল্লাহর(Allah)সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি, মানব জাতির মুকুটমনি মোহাম্মাদ বিন আবদুল্লাহর (দঃ) জীবনী ও হাদীস পর্যালোচনা কোরলে দেখা যায় কখনও কখনও তিনি ক্রুদ্ধ হোয়েছেন। জীবনী লেখক ও মোহাদ্দেসরা বর্ণনা কোরেছেন যে তিনি যখন খুশী হোতেন বা তার সঙ্গী সাথীদের কোন সুসংবাদ দিতেন, তখন তার মুখের চেহারা উজ্জ্বল ও দীপ্ত হোয়ে যেতো। তারা একাধিকবার তার ঐ অবস্থার সাথে পূর্ণ চন্দ্রের তুলনা কোরেছেন। আসহাবদের মধ্যে যারা তার ঐ অবস্থা দেখেছেন তাদের অনেকে বোলেছেন যে পূর্ণচন্দ্রের দীপ্তি ও সে দীপ্তির কাছে ম্লান মনে হোয়েছে। যখন কোন কারণে রেগে গেছেন তখন তার পবিত্র মুখ লাল হোয়ে গেছে। প্রশ্ন হোচ্ছে রাগ, ক্রোধ, মানুষের আত্মার শত্রু। লোভ, হিংসা ইত্যাদি ষড়রিপুর এক রিপু হোচ্ছে ক্রোধ। তবে কি আল্লাহর(Allah)রসুল (দঃ) সব রিপু জয় কোরতে পারেননি (নাউজুবিল্লাহ)? যেখানে ওলি, দরবেশ, সাধু পুরুষেরাও কেউ কেউ ষড়রিপু জয় কোরতে পারেন সেখানে নবীদেরও নেতা মোহাম্মদ (দঃ) তা পারেননি তা অসম্ভব। আসল কথা এই যে তিনি কখনও ব্যক্তিগত কারণে রাগ করেননি। মক্কার মোশরেকরা তাকে যখন নিষ্ঠুর নির্যাতন কোরেছে, অপমান কোরছে, তার পবিত্র মাথার ওপর উটের নাড়িভুঁড়ি চাপিয়ে দিয়ে শ্বাসরুদ্ধ কোরে অট্টহাসি হেসেছে, তখন তিনি রাগেননি, হিমাদ্রির মত অটল থেকে তার ওপর স্রষ্টার দেয়া দায়িত্ব পালন কোরে গেছেন। যদি মনে করা হয় যে তার তখনকার অসহায় অবস্থার জন্য তিনি রাগ প্রকাশ করেননি তবে তা হবে ভুল। কারণ, পরে যখন তিনি বিজয়ীর বেশে মক্কায় ফিরলেন তখন ঐসব মোশরেক কোরায়েশরা তার সামনে অসহায় অপরাধী হোয়ে দাঁড়িয়ে; তার একটি ইঙ্গিতে তাদের প্রত্যেকের মাথা তখন মরুভূমির বালিতে গড়াগড়ি যেতো। তিনি যদি রিপু জয়ী না হোতেন, তবে তিনি সেদিন প্রতিশোধ গ্রহণ কোরতেন। কিন্তু ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় সেদিন তিনি প্রত্যেক অত্যাচারীকে মাফ কোরে দিয়েছিলেন, তাকে ব্যক্তিগতভাবে নির্যাতন, অপমান করার সামান্যতম প্রতিশোধ তিনি শুধু সেদিন নয় কোনদিনই নেননি। তাহোলে সেই মহামানবই কি কারণে রেগে লাল হোয়ে গেছেন? কারণ আছে এবং অত্যন্ত যুক্তিসঙ্গত কারণ আছে।

আল্লাহ(Allah) তার রসুলকে (দঃ) যে দ্বীন অর্থাৎ মানুষ কিভাবে এই পৃথিবীতে থাকলে অন্যায়-অবিচার-অত্যাচার ও রক্তপাত না করে শান্তিতে থাকতে পারবে সেই ব্যবস্থা দিয়ে পাঠালেন, সেটা হলো ইসলাম(Islam)। এই নিয়ম-কানুন-ব্যবস্থা হলো কোরান অর্থাৎ কোরান হলো এই ব্যবস্থার সংবিধান এবং এই সংবিধানের ব্যাখ্যা হলো হাদীস। এখন কথা হলো শুধু সংবিধান দিয়েই কি সব হোয়ে গেলো? মানুষ যদি সে সংবিধান গ্রহণ না করে, সে জীবন-বিধান মতে তাদের পূর্ণ জীবন অর্থাৎ রাষ্ট্রীয়, অর্থনৈতিক, আইন-দণ্ডবিধি মোতাবেক জীবন-ধারা পরিচালনা না করে তবে অবশ্যই সংবিধান এবং ব্যবস্থা উভয়ই অর্থহীন। একটি দেশের নেতা, সেটা বাদশাই হউন বা প্রেসিডেন্ট-প্রধানমন্ত্রীই হউন না বা সে দেশের আইন সভাই (Parliament) হউক, যদি অতি সুন্দর একটি সংবিধান ও আইন-কানুন তৈরী করেন, কিন্তু যদি কোন কারণে সেটা গ্রহণ, প্রয়োগ এবং কার্যকরি না কোরতে পারেন তবে ঐ সংবিধানের, আইন-কানুনের আর কোন দাম, অর্থ থাকে কি? অবশ্যই থাকে না, যদি সে সংবিধান ও আইন-কানুন নিখুঁতও (Perfect) হয় তবুও থাকে না। কাজেই আল্লাহ(Allah) মানুষের জন্য জীবন-বিধান দিয়েই ক্ষান্ত হোলেন না, যার মাধ্যমে তিনি এই জীবন-ব্যবস্থা পাঠালেন, তার ওপরই এই দায়িত্বও দিলেন যে- তিনি যেন পৃথিবীর অন্য সমস্ত ব্যবস্থা-বিধান বাতিল এবং উচ্ছেদ কোরে এই সংবিধান ও ব্যবস্থা বলবৎ ও কার্যকর করেন। শুধু জীবন-ব্যবস্থা, দ্বীন দেওয়াটাই যে যথেষ্ট নয়, একে প্রতিষ্ঠা করাও যে আরও বেশী গুরুত্বপূর্ণ এই কথাকে জোর দেবার জন্য আল্লাহ(Allah) তার রসুলকে এই নির্দেশ দেয়ার সাথে সাথে নিজে তার সাক্ষী রইলেন (কোরান- সূরা আল-ফাতাহ ২৮)। তাহোলে দেখা যাচ্ছে যে দু'টো বিষয় দাঁড়াচ্ছে- একটা হলো সংবিধান (কোরান ও হাদীস); দ্বিতীয়টা হলো এ সংবিধান, আইন-কানুন কে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা। এটা অতি সাধারণ জ্ঞান যে ঐ বিরাট-বিশাল কাজ এক জীবনে করা অসম্ভব। কাজেই আল্লাহর(Allah)রসুলের (দঃ) পৃথিবী থেকে চোলে যাবার পর সেই মহান দায়িত্ব অর্পিত হলো তার গড়া জাতিটির ওপর, একথা পেছনে বোলে এসেছি এবং একথাও বোলে এসেছি যে এই কাজ করার মাধ্যম, প্রক্রিয়া আল্লাহ(Allah) স্থির ও মনোনীত কোরলেন সামরিক। তা না কোরে যদি তিনি যুক্তি দিয়ে বুঝিয়ে এ কাজ করার সিদ্ধান্ত নিতেন, তবে সর্বশ্রেষ্ঠ পুরস্কর এ দ্বীনে রাখা হতো তর্কবাগীশদের জন্য, যদি এই দ্বীনের মাহাত্ম্য বর্ণনা কোরে হতো, তবে রাখা হতো শিক্ষিত লোকদের জন্য, যদি বক্তৃতা কোরে হতো তবে রাখা হতো বাগ্মীদের জন্য, যদি পরোপকার, দরিদ্রসেবা, সমাজসেবা কোরে হতো, তবে রাখা হতো লোক-হিতৈষী সমাজ-সেবকদের জন্য, যদি আধ্যাত্মিক শক্তি বলে মানুষের হৃদয় জয় কোরে কেরামত দেখিয়ে হতো, তবে রাখা হতো সুফী-দরবেশদের জন্য। কিন্তু এদের কারুর জন্যই আল্লাহ(Allah) সেই সর্বশ্রেষ্ঠ পুরস্কর ও সম্মান, রাখেননি যে পুরস্কার ও সম্মান মরতবার জন্য নবীদের নেতা সর্বশ্রেষ্ঠ মানব বোলেছেন- "আমার ওপর নবুয়তের দায়িত্ব না থাকলে আমি জেহাদে নেমে শহীদ হোতাম।" আল্লাহ(Allah) অন্তত দু'টো কারণে উপরে উল্লেখিত প্রক্রিয়া গুলির কোনটাই মনোনীত না কোরে সামরিক প্রক্রিয়া মনোনীত কোরেছেন। একটা হোচ্ছে এই যে ঐ প্রক্রিয়ায় হাজার হাজার বছরেও সমস্ত পৃথিবীর মানুষকে এই দ্বীনের ভেতরে আনা যাবে না। এর প্রমাণ এই যে সামরিক প্রক্রিয়ার ৬০/৭০ বছরের মধ্যে প্রায় অর্দ্ধেক পৃথিবী আল্লাহর(Allah)আইনের শাসনের আওতায় এসেছিলো এবং ঐ প্রক্রিয়া ছেড়ে দেবার পর সাড়ে তেরশ বছরেও পৃথিবীর বিরাট অংশ আজও তার বাইরেই আছে। এই সাড়ে তেরশ বছরে যেটুকু অগ্রগতি হোয়েছে সেটুকুও হোয়েছে ছোট ছোট সংঘবদ্ধ যোদ্ধাদের সামরিক অভিযানের ফলে। দ্বিতীয় হোচ্ছে আল্লাহর(Allah)উদ্দেশ্য হোচ্ছে সামরিক প্রক্রিয়ায় রাষ্ট্রশক্তি অধিকার কোরে তার আইন কানুন প্রয়োগ ও কার্যকরী করা। ব্যক্তিকে বাধ্য করা নয়, ব্যক্তিকে সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দেয়া, কারণ, অন্যায়-অবিচার (সামাজিক, অর্থনৈতিক, আইন-কানুন, দণ্ডবিধি ইত্যাদি সর্ব প্রকার অবিচার) ও রক্তপাত বন্ধ কোরে মানব জীবনে প্রকৃত শান্তি আনতে গেলে শাস্তি ও পুরস্কারের শক্তি অর্থাৎ রাষ্ট্রশক্তি হাতে না থাকলে তা অসম্ভব।

ভৌগোলিক, ভাষাগত, বর্ণগত ইত্যাদি বিভেদমূলক যত বাধা আছে সব চুরমার কোরে সমগ্র পৃথিবীর মানুষকে এক মানবজাতিভূক্ত কোরে এক সংবিধানের অধীনে আনার মত বিরাট-বিশাল দায়িত্ব দিয়ে আল্লাহ(Allah) তার শ্রেষ্ঠ রসুলকে (দঃ) পৃথিবীতে পাঠালেন। অতবড় একটি কাজ করার যোগ্য একটি জাতিও তার রসুল (দঃ) সৃষ্টি কোরলেন। মনে রাখতে হবে তিনি শুধু একটি সামরিক বাহিনী সৃষ্টি কোরলেন না, তিনি একটি মৃত্যুভয়হীন দুর্দ্ধর্ষ অপরাজেয় জাতি সৃষ্টি কোরলেন। কিন্তু অমন একটি জাতি সৃষ্টি করাই এ বিশাল কাজের জন্য যথেষ্ট নয়, কারণ ঐ কাজকে নষ্ট কোরে দেয়ার জন্য ইবলিস তার সাঙ্গপাঙ্গদের নিয়ে আপ্রাণ, অবিরত কাজ কোরে যাচ্ছে। বিশ্বনবী (দঃ) সে সম্বন্ধে সর্বদা শংকিত ও সতর্ক থাকতেন। যখনই কোন মানুষকে এমন কোন কাজ কোরতে দেখতেন যে কাজ ঐ বিশাল উদ্দেশ্যকে ক্ষতিগ্রস্থ কোরতে পারে তখনই তিনি রেগে যেতেন। এ রাগ, এ ক্রোধ তার ব্যক্তিগত কারণে নয় তার ওপর আল্লাহর(Allah)দেয়া বিরাট দায়িত্ব পূরণ করার বাধার জন্য। কিছু ব্যাখ্যার প্রয়োজন আছে। সংঘবদ্ধভাবে কোন কাজ কোরতে গেলে সফলতার কয়েকটি শর্ত আছে। (ক) কী অর্জন কোরতে হবে, লক্ষ্য কি, সে সম্বন্ধে পরিষ্কার ধারনা অর্থাৎ আকীদা এবং এ ধারণা এবং লক্ষ্য কী সে সম্বন্ধে সকলের ঐক্যমত অর্থাৎ লক্ষ্য সম্বন্ধে কারুর দ্বিমত নেই। এতে ঐক্যমত না হোলে সংগঠন যত শক্তিশালীই হোক সফলতা আসবে না। (খ) ইস্পাতের মত ঐক্য। এটাকে ব্যাখ্যার প্রয়োজন নেই। একটি সংগঠনই হোক, জাতিই হোক আর রাষ্ট্রই হোক, যদি তার মধ্যে ঐক্য না থাকে তবে উদ্দেশ্য অর্জন দূরে থাক, সেটার অস্তিত্বই বিপন্ন হবে। (গ) শৃংখলা। নিয়মানুবর্তিতা, শৃংখলা ও আনুগত্য ছাড়া কোন উদ্দেশ্য অর্জন সম্ভব নয়। নেতার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যদি সংগঠন একযোগে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজে ঝাঁপিয়ে না পড়ে, নেতার আদেশ নির্দেশের সঠিকতা সম্বন্ধে প্রশ্ন তোলে তবে সাফল্য আসবে না। (ঘ) সংগঠনের আদেশ নিষেধগুলি নিয়ে বাড়াবাড়ি করা। পেছনে বোলে এসেছি দুটো ভাগ, একটি হোচ্ছে দ্বীন নিজেই, অন্যটি হোচ্ছে ঐ দ্বীনকে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা। যদি দ্বীনের মধ্যে কি আছে, দ্বীনের ব্যবস্থার মধ্যে কী সূক্ষ্ম তারতম্য আছে, বা দ্বীনের বিধান সমূহকে অতিরিক্ত ভাবে পালন কোরতে যাওয়ার চেষ্টা করা হয় তবে অবশ্যম্ভাবীরূপে ঐগুলি নিয়েই জাতি ব্যস্ত হোয়ে পড়বে, মাতামাতি কোরবে এবং দ্বীনকে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম ব্যাহত হবে, বা পরিত্যাক্ত হবে, ফলে দ্বীনই অর্থহীন হোয়ে যাবে। এই কঠিন সত্যের পটভূমিতে বিশ্বনবীর (দঃ) ক্রোধ পর্যালোচনা কোরলে দেখা যায়, উপরোক্ত বিষয়গুলি সম্বন্ধে যখনই কাউকে তিনি লংঘন কোরতে দেখেছেন তখনই তিনি রেগে লাল হোয়ে গেছেন। পক্ষান্তরে আজকের বিকৃত, বিপরীত আকীদায় আমরা যেসব ব্যাপারকে ভীষণ গুরুত্ব দেই সে সব ব্যাপারে তিনি বিন্দুমাত্র রাগ করেননি। একটা একটা কোরে উদাহরণ দিচ্ছি।

(ক) জাতির লক্ষ্য, আকীদা। একজন সাহাবা (রাঃ) একবার একটি সুন্দর নির্জন উপত্যকা দিয়ে যাচ্ছিলেন, যেখানে একটি মিষ্টি পানির ঝরণা প্রবাহিত হোচ্ছিল। জায়গাটা তার খুব পছন্দ হলো এবং তিনি বোললেন ‘আমার ইচ্ছে হোচ্ছে, লোকালয় ত্যাগ কোরে এইখানে পাহাড়ের গুহায় বাস করি'। এই কথা মহানবীর (দঃ) কাছে বলা হলে তিনি বোললেন, "না। তা কোরবেনা। কারণ, যারা আল্লাহর(Allah)রাস্তায় (জেহাদে) আছে তাদের প্রত্যেকের স্থান ঘরে বসে সত্তর বছর এবাদতের চেয়েও বহু উর্দ্ধে। তুমি কি চাও না যে আল্লাহ(Allah) তোমাকে মাফ কোরে জান্নাতে প্রবেশ করান? আল্লাহর(Allah)রাস্তায় সশস্ত্র সংগ্রাম কর। দুইবার উটের দুধ দোহনের মধ্যে যেটুকু সময়, এইটুকু সময়ও যে সশস্ত্র যুদ্ধ কোরবে তার জন্য জান্নাত সুনিশ্চিত (হাদীস- আবু হোরায়ারা (রাঃ) থেকে তিরমিযী)। আরেক দিন রসুলুল্লাহ (দঃ) বাহিনীসহ যুদ্ধে যাচ্ছিলেন। রাস্থায় একটা পাহাড়ে গুহা দেখা গেলো, যেটা গাছ গাছড়ায় সবুজ এবং পানি আছে। একজন সাহাবার (রাঃ) মনে আকাংখা উদয় হলো সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হোয়ে ওখানে থেকে যাবার জন্য (এবাদতের জন্য)। তিনি রসুলুল্লাহর (দঃ) কাছে এজন্য অনুমতি চাইলেন। রসুলুল্লাহ (দঃ) জবাব দিলেন নিশ্চয়ই আমাকে ইহুদী বা খ্রীস্টান ধর্ম দিয়ে পাঠানো হয়নি। আমাকে পাঠানো হয়েছে দ্বীনে হানিফা হানাফিয়াহ দিয়ে। যার হাতে মোহাম্মদের (দঃ) জীবন তার কসম, সকালে বা বিকেলে আল্লাহর(Allah)রাস্তায় মার্চ (চলা) সমস্ত পৃথিবী এবং এর মধ্যে যা কিছু আছে তার চেয়ে উত্তম এবং এই বাহিনীর তোমাদের যে কারুর স্থান (মরতবা) ষাট বছরের নামাযের চেয়ে উর্দ্ধে [হাদীস- আবু ওমামা(রাঃ) থেকে আহমদ মেশকাত]।

উভয় রাবীর বর্ণনা ও ভাষা প্রকাশ করে যে, জেহাদ ত্যাগ কোরে এবাদত রসুলাল্লাহ (দঃ) সমর্থন তো করেন নাই, জোর ভাষায় তা প্রত্যাখ্যান কোরেছেন। যদিও হাদীস দু'টিতে ঠিক মুখ লাল হোয়ে যাওয়া উল্লেখ নেই কিন্তু নিশ্চিতরূপে প্রত্যাখ্যান পরিষ্কার এবং "যার হাতে মোহাম্মদের প্রাণ তার কসম"এই বাক্য কোন বিষয়ের ওপর অত্যন্ত জোর দেয়া (Stress,Imphasis) এবং রাগ প্রকাশ ও উত্তেজনা বোঝায়। যেখানে মন বিক্ষিপ্ত হবে না নিবিষ্ট-চিত্তে বোসে এবাদত করা যাবে আল্লাহর(Allah)যিকর করা যাবে এমন জায়গায় থাকবার কথায় বিশ্বনবী (দঃ) এমন বাধা দেবেন কেন? এবং এমন জোরালো ভাষায় নিষেধ কোরবেন কেন? এই জন্য যে এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আল্লাহ(Allah) ও তার রসুল (দঃ) জাতির জন্য যে দিক-নির্দেশনা স্থির কোরেছেন ওটা তার ঠিক বিপরীত এবং তাদের প্রদর্শিত দিক নির্দেশনার বিপরীত দিকে চলার অর্থ যে এই পৃথিবীতেই অপমান, পরাজয় ও ধ্বংস এবং পরজগতে দুঃসহ শাস্তি একথা বলার অপেক্ষা রাখে না। ঐদিক নির্দেশনা পৃথিবীতে ইসলাম(Islam) প্রতিষ্ঠার সশস্ত্র সংগ্রামের এবং সে জন্যই মহানবী (দঃ) জানিয়ে দিলেন যে ঐ দিক-নির্দেশনা অর্থাৎ সশস্ত্র সংগ্রামের পথে এক বেলা পথ চলা সমস্ত পৃথিবী এবং তার মধ্যে যা কিছু আছে তার চেয়ে উত্তম এবং দু'বার উটের দুধ দোহনের সময়টুকুর জন্যও যে জেহাদ কোরবে তার জন্য সমস্ত গোনাহ মাফ এবং জান্নাত সুনিশ্চিত। কোথায় সত্তর বছরের নামায-এবাদত, আর কোথায় দুবার দুধ দোহনের সময় অর্থাৎ ঘন্টা চারেক।

(খ) জাতির ঐক্য। একটি জাতি একটি সংগঠন যত শক্তিশালীই হোক যত প্রচণ্ড শক্তিশালী অস্ত্র-শস্ত্র, ধন-সম্পদের অধিকারীই হোক যদি তাদের মধ্যে ঐক্য না থাকে তবে তারা কখনই জয়ী হোতে পারবে না। অতি দূর্বল শত্রুর কাছেও তারা পরাজিত হবে। তাই আল্লাহ(Allah) কোরানে বহুবার এই ঐক্য অটুট রাখার জন্য তাগিদ দিয়েছেন। এই ঐক্য যাতে না ভাঙ্গে সে জন্য তার রসুল (দঃ) সদা শংকিত ও জাগ্রত থেকেছেন এবং এমন কোন কাজ যখন কাউকে কোরতে দেখেছেন যাতে ঐক্য নষ্ট হবার সম্ভাবনা আছে তখন রেগে গেছেন। একদিন দুপুরে আব্দুল্লাহ বিন আমর (রাঃ) রসুলাল্লাহর গৃহে যেয়ে দেখেন তার মুখ মোবারক ক্রোধে লাল হোয়ে আছে। কারণ তিনি দু'জন আসহাবকে কোরানের একটি আয়াত নিয়ে মতবিরোধ কোরতে দেখতে পেয়েছিলেন। তিনি (দঃ) বোললেন- কোরানের আয়াতের অর্থ নিয়ে যে কোন রকম মতভেদ কুফর। নিশ্চয়ই তোমাদের পূর্ববর্তী জাতিসমূহ (উম্মাহ) তাদের (ওপর অবতীর্ণ) কিতাব গুলির (আয়াতের) অর্থ নিয়ে মত বিরোধের জন্য ধ্বংস হোয়ে গেছে। তারপর তিনি আরও বোললেন (কোরানের) যে অংশ (পরিষ্কার) বোঝা যায় এবং ঐক্যমত আছে তা বল, যে গুলো বোঝা মুশকিল সেগুলোর অর্থ আল্লাহর(Allah)কাছে ছেড়ে দাও (মতবিরোধ কোরোনা) [হাদীস-আব্দুল্লাহ বিন আমর (রাঃ) থেকে- মুশলিম, মেশকাত]। বিশ্বনবী (দঃ) রেগে লাল হোয়েছিলেন কেন? কারণ যদিও তিনি পরিষ্কার বোলেই দিলেন অর্থাৎ আয়াতের অর্থ নিয়ে মতবিরোধ হোয়ে জাতির ঐক্য নষ্ট ও পরিণামে যে জন্য জাতির সৃষ্টি সেই সংগ্রামে শত্রুর কাছে পরাজয় ও পৃথিবীতে এই দ্বীনকে প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থতা। তবুও ইতিহাস এই যে, যে কাজকে রসুলাল্লাহ (দঃ) কুফর বোলে আখ্যায়িত কোরেছেন সেই কাজকে মহা সওয়াবের কাজ মনে কোরে করা হোয়েছে এবং হোচ্ছে অতি উৎসাহের সাথে এবং ফলে বিভিন্ন মযহাব ও ফেরকা সৃষ্টি হোয়ে জাতির ঐক্য নষ্ট হোয়ে গেছে এবং জাতির শত্রুর কাছে শুধু পরাজিতই হয়নি তাদের ক্রীতদাসে পরিণত হোয়েছে।

(গ) শৃংখলা

এটা সাধারণ জ্ঞান যে বিশৃংখল কোন জাতি বা কোন সংগঠন দিয়ে কোন কাজে সফলতা সম্ভব নয়। সমস্ত মানব জাতির ওপর আল্লাহর(Allah)আইন প্রতিষ্ঠার মত বিরাট কাজে তো নয়ই। এই জাতির চরিত্রের মধ্যে সেই শৃংখলা, আনুগত্য এবং নিয়মানুর্বতিতা শিক্ষার ব্যবস্থা আল্লাহ(Allah) ও তার রসুল (দঃ) কোরেছেন নামাযের মধ্য দিয়ে। তাই নামায সামরিক ড্রিল এবং কুচকাওয়াজের মত। শৃংখলার সাথে সকলে একতাবদ্ধ হোয়ে কাজ করার শিক্ষার প্রথম পদক্ষেপ হলো লাইন কোরে দাঁড়ানো এবং সেই লাইন যেন একটুকুও বাঁকা না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখা। এ ব্যাপারে পেছনে বোলে এসেছি। বোলে এসেছি বিশ্বনবী (দঃ) কি পরিমাণ জোর দিয়েছেন নামাযের লাইন নিখুঁতভাবে সোজা করার জন্য। যখনই লাইন সোজা করার কথা বোলেছেন তখনই জোর দেবার জন্য একাধিকবার বোলেছেন। অর্থাৎ সোজা কর, সোজা হও। অন্য সব হাদীস বাদ দিয়ে শুধু মেশকাতেই দেখি তিনি নামাযের লাইন নিখুঁত ভাবে সোজা হওয়ার কথা নয়টি বিভিন্ন হাদীসে বোলেছেন। এবং অত্যন্ত জোর দেবার জন্য বোলেছেন 'যার হাতে আমার জীবন তার কসম' [হাদীস -আনাস (রাঃ) থেকে আবু দাউদ মেশকাত]। নামাযের এই লাইন নিখুঁতভাবে সোজা করার গুরুত্ব থেকেই বোঝা যায় যে নামাযের বাকি কাজগুলি অর্থাৎ ইমামের হুকুমের (তকবির) সঙ্গে সঙ্গে বিনা দ্বিধায় কাজ করার শৃংখলা ও নিয়মানুবর্তিতার শিক্ষাও কতখানি গুরুত্বপূর্ণ। এই শৃংখলা ও নিয়মানুবর্তিতা ও আনুগত্যের শিক্ষার জন্যই মহানবী (দঃ) নির্দেশ দিয়েছেন যে একজন কানকাটা নিগ্রো ক্রীতদাসও যদি তোমাদের নেতা হয়, তবে বিনা প্রশ্নে বিনা দ্বিধায় তার আদেশ-নির্দেশ, নিষেধ পালন করবে [হাদীস- ইরবাদ বিন সারিয়াহ (রাঃ) থেকে আহমদ, আবু দাউদ ইবনে মাজাহ, তিরমিযি]।

(ঘ) দ্বীন নিয়ে বাড়াবাড়ি করা। আল্লাহ(Allah) যেমন তার কোরানে দ্বীন নিয়ে বাড়াবাড়ি করা নিষেধ কোরে দিয়েছেন, তার নবীও (দঃ) নিষেধ তো-কোরেছেনই, তার ওপর যখনই কোন বাড়াবাড়ি দেখেছেন তার আসহাবদের মধ্যে তখনই রেগে গেছেন। একদিন আল্লাহর(Allah)রসুলকে (দঃ) জানানো হলো যে কিছু আরব রোযা রাখা অবস্থায় স্ত্রীদের চুমা দেন না এবং রমযান মাসে সফরে বের হোলেও রোযা রাখেন। শুনে ক্রোধে বিশ্বনবীর (দঃ) মুখ-চোখ লাল হোয়ে গেলো এবং তিনি মসজিদে যেয়ে মিম্বরে দাঁড়িয়ে আল্লাহর(Allah)হামদ বলার পর বোললেন-সেই সব লোকদের কী দশা হবে যারা আমি নিজে যা করি তা থেকে তাদের বিরত রেখেছে? আল্লাহর(Allah)কসম তাদের চেয়ে আমি আল্লাহ(Allah)কে বেশী জানি এবং বেশী ভয় করি [হাদীস-আয়েশা (রাঃ) থেকে বোখারী, মুশলিম, মেশকাত]। একদিন একজন লোক এসে আল্লাহর(Allah)রসুলের (দঃ) কাছে অভিযোগ করলেন যে ওমুক লোক নামায লম্বা কোরে পড়ান কাজেই তার (পড়ানো) জামাতে আমি যোগ দিতে পারিনা। শুনে তিনি(দঃ) এত রাগান্বিত হোয়ে গেলেন যে -বর্ণনাকারী আবু মাসউদ (রাঃ) বোলছেন যে- আমরা তাকে এত রাগতে আর কখনও দেখিনি [হাদীস- আবু মসউদ (রাঃ) থেকে বোখারী]। অত্যন্ত প্রয়োজনীয় কোন বিষয়ে মাসলাহ জানতে চাইলে বিশ্বনবী (দঃ) প্রথমে তা বোলে দিতেন। কিন্তু কেউ যদি আরও একটু খুঁটিয়ে জানতে চাইতো তাহোলেই তিনি রেগে যেতেন। কারণ তিনি জানতেন ঐ কাজ কোরেই অর্থাৎ ফতওয়াবাজী কোরেই তার আগের নবীদের জাতিগুলো ধ্বংস হোয়ে গেছে নিজেদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি কোরে। কিন্তু তার অত ক্রোধেও অত নিষেধেও কোন কাজ হয়নি। তার জাতিটিও ঠিক পূর্ববর্তী নবীদের (আঃ) জাতিগুলির মত দ্বীন নিয়ে অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি কোরে অতি মুসলিম(Muslim) হোয়ে মসলা-মাসায়েলের তর্ক তুলে বিভেদ সৃষ্টি কোরে হতবল, শক্তিহীন হোয়ে শত্রুর কাছে পরাজিত হোয়ে তাদের গোলামে পরিনত হোয়েছে।

একদিন একজন পথে পড়ে থাকা জিনিসপত্র কি করা হবে এ ব্যাপারে রসুলুল্লাহর (দঃ) কাছে মাসলাহ জিজ্ঞাসা করায় তিনি তার জবাব দিয়ে দিলেন। ঐ লোকটি যেই জিজ্ঞাসা করলেন যে যদি হারানো উট পাওয়া যায় তবে তার কি মাসলাহ? অমনি সেই জিতেন্দ্রিয় মহামানব এমন রেগে গেলেন যে তার পবিত্র মুখ লাল টকটকে হোয়ে গেলো [হাদীস-যায়েদ এবনে খালেদ জুহানী (রাঃ) থেকে বোখারী]। আরেকদিন একজন সাহাবা মহানবীকে (দঃ) কোন এক বিষয়ে প্রশ্ন কোরলেন এবং তিনি যথাযথ জবাব দিলেন। সাহাবা ঐ ব্যাপারে আরও একটু জানতে চাইলেন। এবারও বিশ্বনবী (দঃ) বুঝিয়ে দিলেন। এরপর ঐ সাহাবা যখন আরও একটু বিস্তৃতভাবে জানার জন্য প্রশ্ন কোরলেন ওমনি তিনি রাগে ফেটে পড়লেন, তার পবিত্র মুখমণ্ডল ক্রোধে লাল হোয়ে গেলো। বোললেন শোন! আমার পূর্ববর্তী নবীদের তাদের অনুসারীরা ঠিক এমনি কোরেই প্রশ্ন করতো এবং যে সব উত্তর পেতো তা নিয়ে গবেষণা-বিশ্লেষণ করতো যার ফলে তাদের মধ্যে মতভেদ হতো এবং পরিণামে তারা ধ্বংস হোয়ে যেতো। আমি তোমাদের যা কোরতে বলেছি ঐটুকুই কোরতে চেষ্টা করো, ওর বেশী কোরতে যেওনা, তাহোলে তাদের মতই ধ্বংস হোয়ে যাবে (হাদীস)।

কি ধরনের বিষয়ে আল্লাহর(Allah)রসুল (দঃ) রেগে যেতেন তা দেখা গেলো। এবার দেখা যাক কী ধরনের বিষয়ে তিনি রাগেননি ক্রোধান্বিতও হননি। (ক) ব্যাভিচার। এক যুবক একদিন রসুলুল্লাহর কাছে এসে বলল "আমি ইসলাম(Islam) গ্রহণ কোরতে চাই, কিন্তু আমি ব্যাভিচার (যেনা) থেকে নিজেকে বিরত রাখতে পারব না"। হাদীস বর্ণনাকরী বর্ণনা কোরছেন যে সেই মহামানব (দঃ) (রাগ তো কোরলেন নাই বরং) ঐ যুবককে স্নেহভরে নিকটে ডেকে বসিয়ে বোললেন তোমার মা, বোন, মেয়ের সাথে কেউ ব্যাভিচার কোরলে তুমি কি তা পছন্দ কোরবে? সেই যুবক রক্তাক্ত চোখে জবাব দিলো কেউ তা করার আগেই আমি তাকে দু'টুকরো কোরে কেটে ফেলবো।" মহানবী (দঃ) বোললেন "তাই যদি হয় তবে তুমি ভুলে যাচ্ছো কেন যে তুমি যার সাথে ব্যাভিচার কোরবে সেও তো কারো মা বা বোন বা মেয়ে (হাদীস- বোখারী)।" (খ) সহিহ হাদীসে বেশ কয়েকটি ঘটনার উল্লেখ আছে যেখানে কোন লোক নিজেকে সংযত রাখতে না পেরে ব্যাভিচার কোরে ফেলেছেন। পরে শুধু অনুতপ্ত হোয়েই তারা ক্ষান্ত হননি, তারা আল্লাহর(Allah)দেয়া শাস্তি গ্রহণ কোরে পবিত্র হোতে চেয়েছে, তারা আল্লাহর(Allah)রসুলের (দঃ) কাছে এসে তাদের ব্যাভিচারের কথা প্রকাশ কোরে দিয়ে শাস্তি চেয়েছেন। ঐসব ঘটনায় বিশ্বনবী (দঃ) কী কোরেছেন তা লক্ষ্য করার বিষয়। কোন সামান্যতম রাগ করেননি বরং সমস্ত ব্যাপারটাকে এড়িয়ে যেতে চেষ্টা কোরেছেন। ভাবটা এই রকম যে তুমি অপরাধ কোরে ফেলেছো তো ফেলেছোই সেটা আবার প্রকাশ কোরতে এসেছো কেন? তুমি না বোললে তো কেউ জানবেই না যে তুমি কী কোরেছো। কাজেই ও গোপন ঘটনা গোপনই রাখো। শাস্তি পেতে কৃতসংকল্প সেই লোককে যখন তিনি কিছুতেই বিরত কোরতে পারেননি তখন তিনি তাকে উকিলের মত জেরা কোরেছেন, এই উদ্দেশ্যে যে যদি ঐ লোকের বর্ণনায় কোন খুঁত বের কোরতে পারেন তবে হয় শাস্তি দেবেন না বা লঘু শাস্তি দেবেন। উদাহরণ দিচ্ছি- একজন লোক মসজিদে (নববী) এসে বিশ্বনবীকে (দঃ) বোললেন ইয়া রসুলুল্লাহ! আমি ব্যাভিচার কোরেছি। কোন জবাব না দিয়ে মহানবী (দঃ) ঘুরে অন্যদিকে হোয়ে বোসলেন। ঐ লোকটি ঘুরে রসুলুল্লাহর (দঃ) সামনে যেয়ে আবার ঐ কথা বোললেন এবং তিনি কোন জবাব না দিয়ে আবার ঘুরে অন্যদিকে হোয়ে বোসলেন। চারবার ওমনি করার পর অর্থাৎ প্রকাশ্যে চারবার ব্যাভিচারের ঘোষণা দেবার পর আল্লাহর(Allah)রসুল (দঃ) তাকে বিধিবদ্ধ শাস্তির আদেশ দিলেন [হাদীস আবু হোরায়রা (রাঃ) থেকে বোখারী, মুসলীম, মেশকাত]। প্রকাশ্যে জনসমক্ষে চারবার ব্যাভিচারের স্বীকৃতি ঘোষণা না কোরলে মহানবী (দঃ) শাস্তির আদেশ দিতেন না। অনেক সময় প্রথম ঘোষণার পর অপরাধীকে ফেরৎ পাঠিয়ে দিতেন অনুতপ্ত হোয়ে আল্লাহর(Allah)কাছে মাফ চাইবার জন্য। চারবার ফেরৎ এসে স্বীকৃতি ঘোষণার পরও তাকে জেরা কোরতেন বর্ণনায় খুঁত ধরার জন্য [হাদীস- ইয়াযীদ বিন নুয়াইম (রাঃ) এবং আবু হোরায়রা (রাঃ)]। যখন কোন মানুষ মহানবীর (দঃ) দরবারে এসে অর্থাৎ প্রকাশ্য জনসমক্ষে সবাইকে শুনিয়ে রসুলু্লাহকে বলতেন যে তিনি ব্যাভিচার কোরেছেন শুধু তখনই আল্লাহর(Allah)নবী (দঃ) বুঝে যেতেন যে ঐ লোকটির লক্ষ্য অত্যন্ত উচ্চ। তিনি চাচ্ছেন যে তার অপরাধে, পদস্খলের শাস্তি এই দুনিয়াতেই হোয়ে যাক, যাতে তিনি পবিত্র হোয়ে পরজগতে প্রবেশ কোরতে পারেন, যেখানে ঐ অপরাধের জন্য আবার শাস্তি হবে না। কিন্তু তা জেনেও তিনি তার শাস্তি এড়িয়ে যাবার চেষ্টা কোরতেন। যখন দেখতেন যে ঐ লোক এই দুনিয়াতেই পবিত্র হবার জন্য এমন কৃতসংকল্প যে তিনি চার চারবার প্রকাশ্যে তার অপরাধের কথা ঘোষাণা কোরছেন শুধু তখন তিনি তাকে আল্লাহর(Allah)শরিয়াহ অর্থাৎ এই দণ্ডবিধি (Penal Code) মোতাবেক শাস্তির আদেশ দিতেন। একজন লোককে মদ খেয়ে মাতলামির জন্য শরাহ মোতাবেক শাস্তি দেয়া হলো, দিলেন বিশ্বনবীই (দঃ)। কিছুদিন পর তাকে আবার নবীর (দঃ) পবিত্র দরবারে ধরে নিয়ে আসা হলো ঐ একই অপরাধে অর্থাৎ মদ পান করার জন্য। এবারও তিনি যথাযথ শরাহ মোতাবেক তার শাস্তির আদেশ দিলেন। কিন্তু হাদীস বর্ণনাকারী [স্বয়ং ওমর (রাঃ)] কোনও উল্লেখ কোরলেন না যে রসুলুল্লাহ (দঃ) কোন রকম রাগ প্রকাশ কোরলেন বা কোন কসমও কোরলেন। উপস্থিত লোকজনের মধ্য থেকে একজন বোলে উঠলেন- এর ওপর আল্লাহর(Allah)লা'নত হোক, একই অপরাধের জন্য একে কতবার হাযির করা হোচ্ছে। ঐ সাহাবার কথা শুনে মহানবী (দঃ) বোললেন"একে লানত কোরো না, আল্লাহর(Allah)নামে আমি কসম কোরে বলছি এ আল্লাহ(Allah) ও তার রসুলকে ভালবাসে [হাদীস- ওমর বিন খাত্তাব (রাঃ) থেকে বোখারী]।" লক্ষ্য করুন, বিশ্বনবী (দঃ) ঐ মদখোরের পুনঃ পুনঃ মাতলামীর জন্য কসম খেলেন না, কসম খেলেন লোকটির সমর্থনে। আরেক দিন একজন লোক মদ খেয়ে মাতাল হোয়ে রাস্থায় গড়াগড়ি দিচ্ছিলো। লোকজন তাকে ধোরে মহানবীর (দঃ) দরবারে নিয়ে যাবার জন্য রওয়ানা হলো। (পথে ইবনে আব্বাসের (রাঃ) বাড়ী পড়ে) লোকজন ইবনে আব্বাসের বাড়ীর কাছে আসতেই লোকটি হঠাৎ সবার হাত ছাড়িয়ে দৌঁড়ে ইবনে আব্বাসের (রাঃ) বাড়ীতে ঢুকে তাকে জড়িয়ে ধরলো। লোকজন (তাকে তার কাছে থেকে ছাড়াতে না পেরে) আল্লাহর(Allah)রসুলের (দঃ) কাছে যেয়ে ঘটনা বললো। রসুলুল্লাহ (দঃ) ঘটনা শুনে হেসে ফেললেন এবং বোললেন "সে তাই কোরেছে নাকি?" বিশ্বনবী (দঃ) কোন শাস্তির কথা বোললেন না। (গ) নামায। একদিন কিছু আসহাব বিশ্বনবীর (দঃ) কাছে অভিযোগ কোরলেন যে অমুক গোত্রের সমুদয় লোকই ফযরের নামায সময় মত পড়ে না। শুনে আল্লাহর(Allah)রসুল (দঃ) বোললেন "তাই নাকি?" অতঃপর ঐ গোত্রের লোক সকলকে ডেকে আনা হলো। মহানবীর (দঃ) প্রশ্নের উত্তরে তারা স্বীকার কোরলেন যে তারা ফযরের নামায ফযরের সময় পড়েন না, ঘুমিয়ে থাকেন এবং অনেক পরে ঘুম থেকে ওঠার পর পড়েন। কারণ হিসেবে আরজ কোরলেন যে তারা সবাই কৃষি কাজ করেন। দিনের প্রচণ্ড রৌদ্রে মাঠে কাজ করা সম্ভব নয় বোলে রাত্রে কাজ করেন এবং শ্রান্ত ক্লান্ত হোয়ে শেষ রাত্রের দিকে ঘুমিয়ে পড়েন এবং ফযরের নামায সময়মত পড়া হয়না। শুনে আল্লাহর(Allah)রসুল (দঃ) তাদের অনুমতি দিয়ে দিলেন তারা যেমনভাবে নামায পড়ছে তেমনি পড়ার জন্য (হাদীস)।

একটি পুরো গোত্র সময় মত নামায পড়ে না জেনেও বিশ্বনবী (দঃ) কোন রকম রাগ কোরেছেন বোলে হাদীসের বর্ণনায় উল্লেখ নেই। একবার মহানবীকে (দঃ) জানানো হলো যে ওমুক লোক চুরি করে। তিনি রাগও কোরলেন না, উত্তেজিতও হলেন না, এমনকি ঐ লোকটিকে ধোরে আনতেও বোললেন না। সহজভাবে জিজ্ঞেস কোরলেন লোকটি কি নামায পড়ে? তাকে জানানো হলো যে, হ্যা, সে নামায অবশ্য পড়ে। শুনে মহানবী (দঃ) বললেন নামাযই ওকে চুরি থেকে একদিন বিরত কোরবে (হাদীস)। একদিন আল্লাহর(Allah)রসুল(দঃ) তার আসহাবসহ মসজিদে নববীতে বসা আছেন এমন সময় একজন গ্রাম্য আরব যে নিজেও ওখানে সবার সঙ্গে বসা ছিলো উঠে মসজিদের ভেতরেই পেশাব কোরতে শুরু করলো। সাহাবারা সবাই চেচিয়ে উঠলেন- এই থামো থামো (স্বভাবতই) । কিন্তু আল্লাহর(Allah)রসুল (দঃ) তার সাহাবাদের বোললেন ওকে বাধা দিও না, কোরতে দাও। তার আদেশে আসহাব বিরত হোলেন এবং লোকটি পেশাব করা শেষ করলো। তারপর বিশ্বনবী (দঃ) ঐ লোকটিকে কাছে ডেকে বুঝিয়ে বোললেন যে এই জায়গা আল্লাহর(Allah)এবাদতের জায়গা, আল্লাহ(Allah)কে স্মরণ ও কোরান পাঠের জায়গা। কাজেই এখানে কারো পেশাব পায়খানা করা উচিৎ নয়। তারপর তার আদেশে পানি এনে মসজিদ ধুয়ে ফেলা হলো [হাদীস- আবু হোরায়রা (রাঃ) এবং আনাস (রাঃ) থেকে বোখারী ও মুসলিম(Muslim)]। হাদীসের বর্ণনা এবং ভাষা থেকে একথা পরিষ্কার যে এমন একটা ঘটনায় তিনি বিন্দুমাত্র রাগ করেননি, একটুকুও উত্তেজিত হননি, লোকটাকে পেশাব শেষ কোরতে দিয়েছেন ও তারপর তাকে কাছে ডেকে শান্তভাবে তাকে বুঝিয়ে দিয়েছেন।

পাঠক পাঠিকাগণ! আপনাদের কাছে আমার বিশেষ অনুরোধ এই যে বর্তমান "আল্লাহর(Allah)রসুলের (দঃ) ক্রোধ" অধ্যায়টি মনোযোগ দিয়ে আরেকবার পড়ূন। আমি যে বারবার বোলছি যে মোহাম্মদের (দঃ) মাধ্যমে আল্লাহ(Allah) যে দ্বীন মানব জাতির জন্য পাঠিয়েছিলেন সেই দ্বীন এবং বর্তমানে আমরা ইসলাম(Islam) বোলে সে দ্বীনটাকে নিষ্ঠা ভরে পালন করি এই দুই দ্বীন পরস্পর বিরোধী-বিপরীতমুখী, এই কথার সত্যতা খুঁজে পাবেন। যে হাদীসগুলি উল্লেখ কোরেছি সেগুলো একটা একটা কোরে দেখুন আর চিন্তা করুন। দেখতে পাবেন যে সব ঘটনায় আল্লাহর(Allah)রসুল (দঃ) বিন্দুমাত্র বিচলিত হননি, সেইসব ঘটনায় বর্তমানের ধর্মীয় নেতারা কী কোরবেন। মসজিদে পেশাব করলে তো মেরেও ফেলতে পারেন। অন্যদিকে যে কাজে যে ব্যাপারগুলোয় সেই সর্বরিপুজয়ী সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব রেগে লাল হোয়ে গেছেন, উত্তেজনা ভরে কসম খেয়েছেন সেই হাদীসগুলি একটু দেখুন। দেখবেন সেই ব্যাপারগুলো শুধু যে মহা উৎসাহ ভরে করা হোচ্ছে তাই নয়, মহা পুণ্যের মহা সওয়াবের কাজ মনে কোরে করা হোচ্ছে। যে কাজগুলোকে বিশ্বনবী (দঃ) কুফর বোলে ঘোষণা দিয়েছেন, সেই কাজ যে যত বেশী কোরছে আজকের এই "দ্বীন ইসলামের" দৃষ্টিতে সে তত পাক্কা মুসলিম(Muslim)। লক্ষ্য কোরলে আরও একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় দেখতে পাবেন। সেটা হোচ্ছে এই যে, ব্যক্তিগত মহাপাপ গুনাহে কবিরার ব্যাপারেও তিনি কিছুমাত্র রাগেননি। কিন্তু আজ আমাদের কাছে যে সব বিষয়ের কোন গুরুত্ব নেই- যেমন জাতীয় ঐক্য, লক্ষ্য (আকীদা, শৃংখলা, গুরুত্ববোধ ইত্যাদি এককথায় যেসব বিষয়গুলি পৃথিবীতে আল্লাহর(Allah)সংবিধান ও শাসন-প্রতিষ্ঠাকে ব্যাহত কোরতে পারে সেগুলির প্রত্যেকটায় তিনি ক্রোধান্বিত হোয়েছেন। কারণ হলো এই যে, আল্লাহর(Allah)সংবিধান কোরান এবং রসুলের (দঃ) হাদীস অনুযায়ী মানুষের জীবন শাসন ও পরিচালন করা হোলে, আল্লাহর(Allah)দেয়া আইন অনুযায়ী আদালতে বিচার করা হোলে, আল্লাহর(Allah)দেয়া দণ্ডবিধি অনুযায়ী অপরাধের শাস্তি দেয়া হোলে সমাজ থেকে ব্যক্তিগত অপরাধ নিজে থেকেই প্রায় বিলুপ্ত হয়ে যাবে। প্রমাণ ইসলামের প্রথম ৬০/৭০ বছরের ইতিহাস। অন্যদিকে ঐ কাজ না কোরে ব্যক্তিগতভাবে যত পুণ্যের-সওয়াবের কাজই করা হোক যত তাকওয়াহ করা হোক সমাজের সর্বপ্রকার অপরাধ বেড়েই চলবে, ফাসাদ-অন্যায়-অবিচার বেড়েই চলবে, সাফাকু-দ্দিমা, যুদ্ধ, রক্তপাত, হানাহানি বেড়েই চলবে, ইবলিস সফল ও কৃতকার্য হবে। প্রমাণ বর্তমান পৃথিবী। এক কথায় বিশ্বনবীর (দঃ) ও তার সাহাবাদের ইসলাম(Islam) সম্বন্ধে আকীদা আর আজকের আমাদের আকীদা বিপরীতমুখী। তাই বিশ্বনবীর (দঃ) আসহাব অর্দ্ধেক পৃথিবীতে বশ্যতা স্বীকার করিয়েছিলেন আর আজ আমরা পৃথিবীর সব জাতির লাথি খাচ্ছি, আখেরাতেও আমাদের জন্য জাহান্নাম অপেক্ষা কোরছে।

কোন মন্তব্য নেই: