বৃহস্পতিবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০১১

৩৬। আমার কথা

উৎস: Islam and Dajjal
আমার কথা শেষ হোয়ে এসেছে। লেখা আমার পেশা নয়। সব কথা গুছিয়ে বোঝাবার মত কোরে লিখতে পারিনি, জানি, তবু অকপটে লিখেছি। জায়গায় জায়গায় হয়তো শক্ত হোয়ে গেছে। নরম হবার চেষ্টা বিশেষ কোরিনি। কারণ এই জাতিটি, যেটাকে আল্লাহ(Allah) সর্বশ্রেষ্ঠ জাতি বোলেছেন, আজ তা সর্বনিকৃষ্ট জাতিতে পরিণত হোয়েছে। ঈমান অর্থাৎ আল্লাহ(Allah)-রসুলে (দঃ) বিশ্বাস মোটামুটি ঠিক থাকা সত্ত্বেও আকীদা (concept) বিকৃত হোয়ে যাওয়ার ফলে, অর্থাৎ শেষ ইসলামের উদ্দেশ্য ও উদ্দেশ্য অর্জনের প্রক্রিয়া-প্রশিক্ষণ সম্বন্ধে অন্ধ হোয়ে যাওয়ার ফলে। একে ঘুম থেকে উঠাবার জন্য শক্ত আঘাত ছাড়া উপায় নেই-তাই দিয়েছি। জানিনা, কয়জনের ঘুম ভাঙ্গবে, কয়জনের অন্ধত্ব ঘুচবে। হেদায়াত, পথ-প্রদর্শন নিশ্চয়ই আমার হাতে নয়, আল্লাহ(Allah) বোলেছেন- তা তার হাতে। কাকে তিনি হেদায়াত কোরবেন, অন্ধত্ব ঘুচাবেন, কাকে নয়, আমি জানিনা। আমি শুধু জানি- আল্লাহ(Allah)র শেষ প্রেরিত, শেষ রসুল মোহাম্মদ (দঃ) বিন আবদুল্লাহ যে জীবন-ব্যবস্থা, যে দ্বীন আল্লাহ(Allah)র কাছ থেকে এনে মানব জাতিকে উপহার দিয়েছিলেন, আজকের ইসলাম(Islam) সেই দ্বীন নয়, যে জাতি তিনি সৃষ্টি কোরে গিয়েছিলেন, আজকের মুসলিম(Muslim) নামধারী উম্মতে মোহাম্মদীর দাবীদার এই বিরাট জাতিটি সেই জাতিও নয়। সংস্কৃতিতে একটা কথা আছে- ফলেন পরিচয়তে! গাছের ফল থেকেই তার পরিচয়, শত যুক্তি তর্কে তা বদলানো যাবে না। কাজেই চার পাঁচ লাখ মানুষের সেই ছোট্ট জাতিটির কাজের ফল, আর গত কয়েক শতাব্দী ধোরে যে বিরাট জাতিটি শত্রুর গোলামী-দাসত্ব করলো, এবং দাসত্ব থেকে আংশিক মুক্তি পাওয়ার পরও যে জাতি স্বেচ্ছায় দাসত্ব কোরছে, গয়রুল্লাহর এবাদত করছে, এই দু'টোকেই সেই একই জাতি বোলে বিশ্বাস করা, একটি সুমিষ্ট আম গাছ আর একটি তিক্ত মাকাল ফলের গাছ, দু'টোকেই একই গাছ বোলে বিশ্বাস করা বা যুক্তি-তর্ক দিয়ে তা প্রমাণ করার চেষ্টার মতই নির্বুদ্ধিতা ও নিস্ফল।

বুদ্ধি হবার পর থেকেই আমার মনে প্রশ্ন নাড়া দিচ্ছিলো। তখন আমরা একটি পাশ্চাত্য খ্রীস্টান শক্তির দাস। শুধু আমরা নই, প্রায় সমস্ত মুসলিম(Muslim) জগত কোন ও না কোন পাশ্চাত্যের গোলাম। এই বিশাল জাতিটাকে ইউরোপের ছোট ছোট রাষ্ট্রগুলি টুকরো টুকরো কোরে ভাগ কোরে এক এক রাষ্ট্র এক এক টুকরো চুষে খাচ্ছিলো। সবার কাছে, শুনতাম, বিশেষ কোরে ওয়াজে মওলানা-মৌলভীদের কাছ থেকে যে এই একমাত্র ধর্ম, জাতিই আল্লাহ(Allah)র কাছে গৃহীত, আর সব দোযখে যাবে। আমরাই, বিশেষ কোরে তারা, আল্লাহ(Allah)র অতি প্রিয়, আমাদের জন্য আল্লাহ(Allah) জান্নাত সাজিয়ে গুছিয়ে রেখেছেন। কিন্তু মনে খটকা লাগতো, তাই যদি হবে, শুধু আমরাই যদি সত্য পথের পথিক হই, তবে আমাদের এই ঘৃণার দাসত্ব কেন? তাদের কাছে প্রশ্ন কোরলে তারা বুঝিয়ে দিতেন- আল্লাহ(Allah) অন্যদের অর্থাৎ আমাদের খ্রীস্টান প্রভুদের এই দুনিয়া ভোগ কোরতে দিয়েছেন এ জন্য যে তাদের পরকালে জাহান্নামে দেবেন আর আমাদের দারিদ্র, অশিক্ষা, আর গোলামীর মধ্যে রেখেছেন এই জন্য যে আমাদের আখেরাত অর্থাৎ পরকালে সুখ দেয়া হবে। কোরান-হাদীস উল্লেখ কোরে বুঝিয়ে দিতেন- এই দুনিয়াটা কত খারাপ জায়গা। এর কোন কাজে লিপ্ত না হোয়ে, চোখ-কান বুঁজে নামায, রোযা, ইত্যাদি করতে করতে জীবনটা কাটিয়ে দিতে পারলেই পরকালে একেবারে জান্নাতুল ফেরদৌসে জায়গা পাওয়া যাবে। ঐ বয়সে তাই বুঝলাম। কিন্তু পরে যখন ইতিহাস পড়লাম তখন দেখলাম যে মহানবীর (দঃ) পর তার সৃষ্ট জাতি পৃথিবীতে ঠিক সেই স্থান দখল কোরে ছিলো যে স্থানে আজ আমাদের প্রভু ঐ ইউরোপীয় জাতিগুলি দখল কোরে আছে। অর্থাৎ অর্থনৈতিক, সামরিক, রাজনৈতিক, পার্থিব, সম্পদ, শিক্ষায়, বিজ্ঞানে, নতুন বিষয় অনুসন্ধানে, বিজ্ঞানের নতুন নতুন শাখার গবেষণায়, পৃথিবীর অজানা জায়গায় দুঃসাহসিক অভিযানে তারা যা ছিলেন আজ পাশ্চাত্য জগত তাই হোয়েছে। মওলানা- মৌলভী সাহেবেরা যে জবাব দিয়েছিলেন তার মানে এই হয় যে- ইসলামের প্রাথমিক যুগের ঐ মুসলিম(Muslim)দের আল্লাহ(Allah) ইহজগত দিয়ে দিয়েছিলেন আখেরাতে জাহান্নাম দেবেন বোলে এবং তখনকার ইউরোপীয়ানদের এবং বর্তমানের আমাদের জান্নাত দেবেন বোলে।

মন সায় দেয়নি। কোথায় যেন কী একটা ভয়ংকর গোলমাল আছে, কোথাও এক বিরাট শুভংকরের ফাঁকি আছে। অবচেতন মন থেকে বোধহয় স্রষ্টার কাছে প্রার্থনা পৌঁছে গিয়েছিলো- আমাকে বুঝিয়ে দাও! আমাকে বুঝিয়ে দাও! তোমার সর্বশ্রেষ্ঠ রসুল, তোমার শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি, সমস্ত মানব জাতির আদর্শ কোরে যাকে তুমি তৈরী কোরেছো (কোরান- সূরা আল-আহযাব ২১)। যার নামে স্বয়ং তুমি আল্লাহ(Allah) তোমার মালায়েকদের নিয়ে দরুদ ও সালাম পাঠাও (কোরান- সূরা আল-আহযাব ৫৬), তার জাতি আজ ঘৃণিত দাস কেন? দেখতে পাচ্ছি এরা তোমায় বিশ্বাস করে। তা না কোরলে তো আর নামায পড়তো না, রোযা রাখতো না, যাকাত দিতো না, হজ্জ্ব করতো না, দাড়ী রাখতো না, মোছ কাটতো না, এত নফল এবাদত করতো না। এরা তো এ সবই করে, শুধু তাই নয় এদের মধ্যে অনেকে তো খানকায় বোসে কঠিন আধ্যাত্বিক সাধনাও করে। তবু কেন আমরা বিধর্মীদেীর পদদলিত দাস? কোথায় গলদ, কোথায় ফাঁকি?

এই মহাবিশ্বের সর্বশক্তিমান স্রষ্টা বোধহয় তার এক অতি নগণ্য পাপী সৃষ্টের মনের আকুল জিজ্ঞাসা শুনলেন। ধীরে ধীরে একটু একটু কোরে আমার মনের প্রশ্নের উত্তর আসতে লাগলো- সারা জীবন ধোরে। এখানে একটু, ওখানে একটু, বইয়ের পাতায়, ছোটখাট ঘটনায়, নিজের চিন্তার মধ্যে দিয়ে এমন কি চিন্তা না কোরেও হঠাৎ নিজে নিজেই জবাব মনের মধ্যে এসে যাওয়া, এমনি কোরে পেঁয়াজের খোসা ছাড়াবার মত একটি একটি কোরে সমস্ত আবরণ ঝোরে পড়ে গেছে। গিয়ে আমার সেই 'কেন'র জবাব আমাকে দেয়া হোয়েছে- এই পরিণত বয়সে। আজ আমি জানি কোথায় গলদ, কোথায় সেই শুভংকরের ফাঁকি, যে ফাঁকিতে পড়ে আজ যার পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জাতি হবার কথা- সে পৃথিবীর নিকৃষ্টতম জাতিতে পরিণত হোয়েছে। আজ আমি জানি, যে একত্ববাদের, তওহীদের ওপর ভিত্তি কোরে পৃথিবীর সমস্ত জীবন-ব্যবস্থা, দ্বীন অবতীর্ণ হোয়েছিলো, সেই একত্ববাদ, তওহীদ যেমন পৃথিবীর কোন জাতির মধ্যে নেই, তেমনি এই তথাকথিত 'মুসলিম(Muslim)' জাতির মধ্যেও নেই। অন্য সব ধর্ম ও জাতি যেমন এবং যতখানি বহুত্ববাদের (শিরক) ও নাস্তিক্যে ডুবে আছে এই জাতিও ততখানিই ডুবে আছে। অন্য ধর্মের মানুষগুলোর মত এই ধর্মের মানুষগুলোও বুঝছেনা, কেমন কোরে আজ আর তারা মুসলিম(Muslim) নেই। আকীদার (Concept) বিকৃতিতে তওহীদ এদের কাছে শুধু মাটির, পাথরের তৈরী মূর্তিকে সাজদা না করার মধ্যে সীমাবদ্ধ। আল্লাহ(Allah)র শেষ রসুলের (দঃ) মাধ্যমে প্রেরিত ইসলামের শেষ সংস্করণ আর বর্তমানের "ইসলাম(Islam) ধর্ম" যে দু'টি সম্পূর্ণ ভিন্ন ও বিপরীতমুখী জিনিষ তা পরম করুণাময় আল্লাহ(Allah)র রহমে আজ আমার কাছে দিনের আলোর মত পরিষ্কার।

প্রভুর কাছে চেয়েছিলাম বুঝতে কোন অপরাধে, কোন গলদে তার শ্রেষ্ঠ রসুলের জাতি দারিদ্র্যে, অশিক্ষায়, কুশিক্ষায়, প্রায় পশু পর্যায়ের জীবে পরিণত হোয়ে মোশরেক ও কাফেরদের গোলামে পরিণত হলো। রহমানুর রহীমের অনুগ্রহে তা বুঝে মহা বিপদে পড়ে গেলাম। ঘাড়ে এসে পড়লো ভয়াবহ দায়িত্ব। জানতে পারলাম মহানবীর (দঃ) বাণী- যে লোক জ্ঞান পেয়েও তা মানুষকে জানায় না, দেয় না, কেয়ামতে তার পেটে আগুন পুরে দেওয়া হবে। আরো জানলাম তিনি (দঃ) এও বোলেছেন- যে হাশরের দিনে তার মুখে আগুনের লাগাম পড়ানো হবে। এর অর্থ এ দায়িত্ব যেমন কোরেই হোক ঘাড় থেকে নামাতেই হবে। ভেবে দেখলাম আমার সামনে দু'টো পথ। প্রথমটা, যে সত্য আমাকে বোঝানো হোয়েছে তা প্রকাশ্যে প্রচার করা। দ্বিতীয়টা-লিখে মানুষকে জানানো। প্রথমটার কথা চিন্তা কোরতেই বিশ্বনবীর (দঃ) আরেকটা হাদীস মনে এলো। তা হোচ্ছে এই যে-দ্বীন যখন বিকৃত হোয়ে যাবে তখন যে ব্যাক্তি প্রকৃত দ্বীনকে মানুষের মধ্যে প্রচার কোরবে, তার দরজা, স্থান নবীদের দরজা থেকে মাত্র এক দরজা (step) নীচু হবে। এ হাদীসের মর্ম বড় ভয়াবহ। প্রত্যেক প্রেরিত, নবী যখন তার পূর্ববর্তী নবীর মাধ্যমে দেয়া দ্বীনের বিকৃতি শোধরাতে চেষ্টা কোরেছেন, মানুষকে বিপথ থেকে সঠিক পথে আনতে চেষ্টা কোরেছেন তখন তার ভাগ্যে জুটেছে অপমান, বিদ্রুপ, বিরোধিতা ও সর্বপ্রকার অত্যাচার। আর ঐ অপমান, অত্যাচারের পুরোভাগে সবসময় থেকেছে ঐ বিকৃতি ধর্মের পুরোহিত, যাজক শ্রেণী। নবী-রসুলদের কোন পথ ছিলো না ঐ অপমান অত্যাচার সহ্য করা ছাড়া, কারণ তাদের পাঠানোই হোয়েছিলো ঐ কাজ দিয়ে। কিন্তু নবী-রসুল না হোয়েও যদি কোন সাধারণ মানুষ ঐ কাজ কোরতে যায়, তবে তারও ভাগ্যে তাই জুটবে যা প্রত্যেক নবী-রসুলের ভাগ্যে জুটেছে। তাই মহানবী (দঃ) বোলেছেন সেই সাধারণ মানুষেরও সম্মান হবে নবীদের চেয়ে মাত্র এক ধাপ কম। এমন কি শেষনবী (দঃ) এ কথাও বোলে দিয়েছেন যে দ্বীন ইসলামে যে মাহদী (আঃ) আসবেন তাকে প্রবল বিরোধিতা কোরবে এই বর্তমান ইসলামের হর্তা-কর্তারা। যাইহোক, আমার মত অতি সাধারণ এবং অতি গোনাহগার মানুষ, নবী-রসুলেরা যে পথে হেঁটে গেছেন সে পথের ধুলি স্পর্শ করার যোগ্যতাও যার নেই, সেই চরিত্রও নেই, আমার পক্ষে ঐ কাজ করা সম্ভব নয়। স্বভাবতঃই আমাকে দ্বিতীয় পথ বেছে নিতে হোয়েছে- যার ফল এই বই। এই পথ বেছে নিতেও দ্বিধা এসেছে, কারণ আমি লেখক নই, গুছিয়ে বোলতে পারব না, হয়ত বোঝাতেও পারব না। কিন্তু তৃতীয় পথ নেই। আরও একটা কারণ আছে এই কাজে হাত দেবার। নবীদের (আঃ) মাধ্যমে আল্লাহ(Allah) মানুষকে যুগে যুগে পথ দেখিয়ে এসেছেন অন্যায়, অত্যাচার, রক্তপাত না কোরে শান্তিতে মানুষকে পৃথিবীতে বাস করার। মানুষ কয়েক শতাব্দী আগে পর্য্যন্ত শুধু তাই অনুসরণ কোরে এসেছে, কখনো অবিকৃতরূপে, কখনও বিকৃতরূপে। এ সম্বন্ধে পেছনে বোলে এসেছি। এটা শেষ হলো আজ থেকে কয়েক শতাব্দী আগে, কেন শেষ হলো তাও পেছনে বোলে এসেছি। যাইহোক, এর নেট ফল হোয়েছে একটা 'সভ্যতা(Civilization)র' সৃষ্টি যেটা মানুষের জীবনের একটি দিকই শুধু দেখতে পায়-দেহের দিক, বস্তুর দিক, এবং শুধু এই দিকটার ওপর ভিত্তি কোরেই তাদের ঐ 'সভ্যতা(Civilization)', তাদের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক সমস্ত ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। যেটাকে বলা হয় ইহুদী-খ্রীস্টান সভ্যতা (Judio-Christian-Civilization) অর্থাৎ বর্তমান পাশ্চাত্য বস্তুতান্ত্রিক ভারসাম্যহীন 'সভ্যতা(Civilization)'। এই সভ্য সমাজের একটা অতি ছোট অংশ মানুষের আত্মার দিকটার খানিকটা দেখাশোনা করে, নানা রকম সেবামুলক কাজ করে যার কোন শক্তিশালী প্রভাব নেই সমাজের বৃহত্তর জীবনে। ঐ বস্তুতান্ত্রিক 'সভ্যতা(Civilization)র' সঙ্গে যোগ হোয়েছে যান্ত্রিক ও পদ্ধতিগত উন্নতি। যেহেতু ঐ সভ্যতা(Civilization) এক মানব জাতিকে ভৌগলিক, ভাষা, গায়ের রং ইত্যাদি নানাভাবে বিভক্ত কোরে দিয়েছে এবং ঐ বিভক্ত ভাগগুলি ঐ ভারসাম্যহীন বস্তুতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গীতে বিশ্বাসী, তাই বিজ্ঞানের ও তার প্রয়োগগত উন্নতির (Technological advancement) প্রধান অংশই কাজে লাগানো হচ্ছে যার যার পার্থিব স্বার্থ সংরক্ষণে এবং অন্যকে বঞ্চিত কোরে নিজে লাভবান হওয়ার চেষ্টায়। অন্যদিকে স্রষ্টার দেয়া পদ্ধতিতে মানব জাতিকে এক জাতি বলা হোয়েছে এবং একে কোনভাবেই ভাগ-বিভক্ত করার অনুমতি দেয়া হয়নি এবং যেহেতু এতে মানুষের দেহ ও আত্মার সব প্রয়োজনের ভারসাম্যযুক্ত ব্যবস্থা রয়েছে তাই এই দুইয়ের সম্মিলনের অবশ্যম্ভাবী ফল শান্তি ও প্রগতি। স্রষ্টার দেয়া জীবন-বিধানকে অস্বীকার কোরে, নাস্তিক্যের ওপর ভিত্তি কোরে পাশ্চাত্য 'সভ্যতা(Civilization)' মানব জাতিকে আজ এমন পর্য্যায়ে নিয়ে এসেছে যে আজ সমগ্র মানব জাতিটাই পারমাণবিক আত্মহত্যার দোড়গোড়ায় এসে দাঁড়িয়েছে। এ আত্মহত্যাটা শুধু তাদের হবে না, আমরা যারা ঘৃণিত হীনমন্যতায় আল্লাহ(Allah)র দেয়া জীবন-ব্যবস্থাকে তাদের মত ব্যক্তি জীবনে সীমাবদ্ধ কোরে রেখে, সমষ্ঠি জীবনে তাদের নকল কোরছি-আমাদেরও হবে। যদিও সময় বেশী নেই, তবু এখনও যদি পাশ্চাত্য তাদের নিজেদের গড়া জীবন-ব্যবস্থা পরিত্যাগ কোরে স্রষ্টার শেষ বিধান, শেষ ইসলাম(Islam)কে গ্রহণ করে তবে এ বিভৎস আত্মহত্যার হাত থেকে বেঁচে যেতে পারে। আর তারা যদি তা নাও করে তবে এই বিরাট জাতি, যেটা তার অন্তহীন অজ্ঞতায়, আকীদায় অন্ধত্বে নিজেকে মুসলিম(Muslim) ও উম্মতে মোহম্মদী বোলে মনে কোরে আত্মতৃপ্তিতে ডুবে আছে, তাকে ধাক্কা দিয়ে বলা যে- জাগো, দেখো তুমি কোথায় আছো, সমষ্টিগত জীবনে আল্লাহ(Allah)কে বাদ দিয়ে পাশ্চাত্যের, গায়রুল্লাহর এবাদত কোরতে কোরতে কোথায় এসেছো। আখেরাত তো বহু আগেই গেছে, আল্লাহ(Allah) রসুলের চোখে তো জাতি হিসাবে কার্যতঃ মোশরেক ও কাফের হোয়েছো কয়েক শতাব্দী আগেই, এখন ওদের সাথে সাথে এই পার্থিব আত্মহত্যারও সম্মুখীন হোয়েছো। এখনও সময় আছে তওবা কোরে শেরক ও কুফরী ত্যাগ কোরে মুসলিম(Muslim) হবার, উম্মতে মোহম্মদী হওয়াতো অনেক পরের কথা। শুধু মুসলিম(Muslim) হিসাবে নয়, মানুষ হিসাবেও এ দায়িত্ব পালনও এই লেখার এক উদ্দেশ্য।

এই বই লিখে টাকা উপার্জন আমার উদ্দেশ্য নয় এ কথা বলা দরকার করে না। একটা দাম রাখা হোয়েছে নীতিগতভাবে-ইনশাল্লাহ পুনঃমুদ্রনের আশায়। এই বইয়ের কোন স্বত্ব নেই। যে কেউ এই বই পুনঃমুদ্রণ কোরে প্রকাশ কোরতে পারবেন। শুধু দুই শর্ত। (ক) ঐ পুনঃমুদ্রণ এই বইয়ের নির্ভুল (Exact) নকল হোতে হবে, কোথাও সামান্য ভুলও থাকতে পারবে না, অন্ততঃ বক্তব্যের অর্থ বা উদ্দেশ্য বদলে যায় এমন ভুল থাকতে পারবে না। (খ) যদি কেউ কোন বিষয় (point) আরও ভালো কোরে প্রকাশ কোরতে চান, বা বইয়ের বক্তব্যের সমর্থনে আরও সুন্দর যুক্তি, প্রমান বা তথ্য যোগ কোরতে চান- এক কথায় এই বইকে আরও সুন্দর, আরও যুক্তিবহ করতে চান, তবে এই বইয়ের কোন্ কোন্ লাইনে কি পরিবর্তন, পরিবর্দ্ধন কোরতে চান তা উল্লেখ কোরে এই বইয়ের প্রকাশকের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে। ভাষান্তর (Translation) কোরলেও তা প্রকাশককে দেখিয়ে অনুমতি নিতে হবে।

এই বইয়ের বক্তব্যের প্রচণ্ড বিরোধিতা হবে- সে সম্বন্ধে আমি নিশ্চিত। তা যদি না হবে তবে বুঝবো আমি সত্য লিখতে পারিনি, শেষ ইসলাম(Islam) তার প্রকৃত আলোকে মানুষের সামনে পেশ কোরতে ব্যর্থ হোয়েছি। এ বিরোধিতা আসবে ইহুদী-খ্রীস্টান (Judio-Christian) 'সভ্যতা(Civilization)র পদ্ধতিতে 'শিক্ষিত' বর্তমান নেতৃত্বের ও তাদের অনুসারীদের (Agent) কাছ থেকে, বর্তমানের বিকৃত দ্বীনের পুরোহিত, যাজকদের কাছ থেকে, ধর্ম যাদের রুজী-রোজগারের পথ, তাদের কাছ থেকে, ইউরোপীয়ান খ্রীস্টানরা মুসলিম(Muslim) জগত অধিকার কোরে মাদ্রাসা স্থাপন কোরে ইসলাম(Islam) শিক্ষার ছদ্মবেশে যে ধ্বংসকারি ফতোয়াবাজী শিক্ষা দিয়েছিলো সেই শিক্ষায় 'শিক্ষিত'দের কাছ থেকে, অন্যায়, অবিচার, অত্যাচার, রক্তপাত নির্মূল কোরে পৃথিবীতে আল্লাহ(Allah)র দ্বীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের জন্য নবী করিম (দঃ) তার উম্মতের হাতে যে তলোয়ার ধোরিয়ে দিয়েছিলেন সেই তলোয়ার ফেলে দিয়ে তসবিহ হাতে নিয়ে যারা খানকায় ঢুকেছেন তাদের কাছ থেকে। এক কথায় সর্বদিক থেকে। আগেই বোলছি- লেখক নই, তাই যা বোলতে চেয়েছি তা গুছিয়ে লিখতে পারিনি। আগের কথা পরে হোয়ে গেছে, পরের কথা আগে। যেখানে যে কথা হবার, সেখানে না হোয়ে অন্যখানে হোয়ে গেছে। এক কথা অনেকবার বলা হোয়েছে যাকে বলে পুনরাবৃত্তি (Repeatation)। একে ঠিক কোরতে চেষ্টা করিনি, কারণ এ অভিযোগ আল্লাহ(Allah)র কোরান সম্বন্ধেও আছে- অর্থাৎ এক কথা আল্লাহ(Allah)ও অনেকবার বোলেছেন। সেই ত্রুটিহীন সোবহানের বই কোরানেও যদি তাই থাকে তবে আমি কোন ছার? এই সব ত্রুটি সত্ত্বেও যাদের সত্য গ্রহণের মন আছে, যারা বুঝতে চাইবেন, তারা ইনশাল্লাহ বুঝতে পারবেন আমি কী বোলতে চেয়েছি। তাদের মধ্যে যাদের আর্থিক সামর্থ আছে, আল্লাহ(Allah) যাদের রেযেক অন্যের চেয়ে বেশী দিয়েছেন তাদের কাছে অনুরোধ, তারা যেন এই বই পুনঃ মুদ্রণ করেন, যত বেশী সংখ্যায় সম্ভব হয়। আজকের 'মুসলিম(Muslim)' জাতি বহু নফল এবাদত করতে রাজী কিন্তু আল্লাহ(Allah)র রাস্তায় দুই পয়সা খরচ করতে রাজী নয়। অথচ আল্লাহ(Allah) বোলেছেন- আমি মোমেনের সম্পদ ও প্রাণ জান্নাতের বদলে কিনে নিয়েছি (কোরান- সূরা আত-তওবা ১১১)। আমরা ঈমানের দাবীদার কিন্তু জানমাল আল্লাহ(Allah)র রাস্তায় কোরবাণী কোরতে রাজী নই। আমার অক্ষম কলম দিয়ে যা এই বইয়ে লিখেছি তা আমার কথা নয়- আল্লাহ(Allah) আর তার রসুল (দঃ) যা বোলেছেন তাই বোলছি এবং কোথায় বোলেছেন তার উদ্ধৃতিও দিয়েছি। মাত্র একটি কি দু'টি বিষয়ে আমি আমার নিজের অভিমত পেশ কোরেছি এবং ঐ অভিমত গ্রহণ কোরতে কাউকে জোর কোরছি না, ঐগুলি সম্বন্ধে কেউ আমার সঙ্গে একমত না হোলে আমার কোন আপত্তি নেই।

1 টি মন্তব্য:

সম্রাট শফিউল বাসার (বাদল) বলেছেন...
এই মন্তব্যটি লেখক দ্বারা সরানো হয়েছে।