বৃহস্পতিবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০১১

৩০। তাকওয়া ও হেদায়াহ

উৎস: Islam and Dajjal
এই বইয়ে আমি দেখাতে চেষ্টা কোরেছি যে চৌদ্দশ’ বছর আগে মহানবী (দঃ) পৃথিবীর মানুষের জন্য যে দ্বীন, জীবন-ব্যবস্থা নিয়ে এসে সমস্ত জীবনের সাধনায় আরবে প্রতিষ্ঠা কোরেছিলেন এবং তার নিজের হাতে গড়া জাতির ওপর সেটাকে সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে পৃথিবীময় প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব অর্পণ কোরে আল্লাহ(Allah)র কাছে চলে গিয়েছিলেন, সেই দ্বীনটি আর আজ আমরা যে দ্বীন অনুসরণ করি এই দু’টি দ্বীন শুধু যে একই দ্বীন নয় তাই না, এ দুটি পরস্পর বিরোধী, বিপরীতমুখী দুটো দ্বীন। এই দুইটি দ্বীনের মধ্যে মিল শুধু দৃশ্যঃত বাইরের;ভেতরে এ দু’টি বিপরীতধর্মী। কারা এই সত্য গ্রহণ কোরে সেই প্রকৃত দ্বীন তাদের জীবনে আবার প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা ‘জেহাদ’ কোরবেন, কারা এ সত্য প্রত্যাখ্যান কোরবেন তা আমি জানি না। আমার হাতে হেদায়াতের শক্তি নেই, হেদায়াতের ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহ(Allah)র কাছে। তিনি অনুগ্রহ কোরে যাদের হেদায়াত কোরবেন, শুধু তারাই হেদায়াত হবেন আর তিনি যাদের হেদায়াত কোরবেন না, আমার মত লক্ষ মানুষও তাদের সত্য দেখাতে পারবে না। যাই হোক আমার বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে এই বর্তমান পরিচ্ছেদ অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।

আমাদের বর্তমান বিকৃত আকীদায় আমরা ইসলাম(Islam)কে যে দৃষ্টিতে দেখি তাতে ‘ধর্মকর্ম’ করে না এমন একটি লোককে যদি উপদেশ দিয়ে নামায রোযা করানো যায়, যাকাত দেয়ানো যায়, মিথ্যা পরিহার করানো যায়, সত্য কথা বলানো যায়, এক কথায় সব রকম অন্যায়-মিথ্যাচার থেকে তাকে বাঁচিয়ে পবিত্র জীবন-যাপন করানো যায়, তবে বলা হয় লোকটি হেদায়েত হোয়েছে। ভুল বলা হয়, সে হেদায়াত হয়নি, সে তাকওয়া অবলম্বন কোরেছে অর্থাৎ মুত্তাকী হোয়েছে। হেদায়াতও তাকওয়া দুইটি সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয়। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত মানুষ বিরামহীনভাবে চোলতে থাকে। এর এক মুহুর্তও ছেদ নেই, এর ছেদ মানেই মৃত্যু। আর চলা মানেই পথ চোলছে মানেই কোন না কোন পথে চোলছে। সঠিক পথেও চোলতে পারে, ভুল পথেও চোলতে পারে। হেদায়াত অর্থ সঠিক পথে চলা। আল্লাহ(Allah) ও রসুল (দঃ) যে দিক-নির্দেশনা দিয়েছেন, যে গন্তব্য স্থান নির্দিষ্ট কোরে দিয়েছেন সেই পথে চলা। সেটা কোন পথ? সেটা হলো ‘সেরাতুল মুস্তাকীম' সহজ সরল পথ। ‘সেরাতুল মুস্তাকীম' কী তা পেছনে কিছুটা ব্যাখ্যা কোরেছি। তাকওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে আরও একটু পরিষ্কার করা দরকার। ইবলিস আল্লাহ(Allah)কে চ্যালেঞ্জ করলো যে মাটি দিয়ে তৈরী তোমার খলিফা আদমকে (মানুষ জাতিকে) তোমার দেখানো পথ থেকে বিচ্যুত কোরে তাকে তার নিজের তৈরী করা পথে নিয়ে যাবো যে পথে চলার অবশ্যম্ভাবী পরিণতি হবে মানুষের জীবনের প্রতি ক্ষেত্রে অশান্তি, অবিচার এবং যুদ্ধ ও রক্তপাত (ফাসাদ ও সাফাকু-দ্দিমা)। আল্লাহ(Allah) ইবলিসের ঐ চ্যালেঞ্জ গ্রহণ কোরলেন এবং তাকে বোললেন, আমি মানুষ জাতির মধ্যে আমার নবী-রসুল পাঠিয়ে এমন পথ দেখাবো- যে পথে চোললে তারা তোমার ঐ অশান্তি-অবিচার, অত্যাচার ও রক্তপাতের মধ্যে যেয়ে পড়বে না। আমার নবী-রসুলদের দেখানো পথে চোললে তারা সুবিচার ও শান্তির মধ্যে বাস কোরবে। এই পথের নাম দিলেন তিনি সেরাতুল মুস্তাকীম; সহজ সরল পথ। এই সহজ সরল পথ কী? এটা হলো ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’, আল্লাহ(Allah) ছাড়া আর কোন ইলাহ, বিধানদাতা নেই; উপাস্য নেই, প্রভু নেই, কাজেই আর কারো আদেশ নিষেধ না মানা; জীবনের কোন ক্ষেত্রে আর কারো আইন-কানুন না মানা অর্থাৎ প্রকৃত তওহীদ। আল্লাহ(Allah) তার প্রদর্শিত পথ এত সহজ কেন কোরলেন? এই জন্য কোরলেন যে মানুষ যদি তার আইন, আদেশ নিষেধ ছাড়া অন্য কোন আইন, জীবন-বিধান না মানে তবেই ইবলিস পরাজিত হবে। সে আর মানুষকে অন্য কোন পথে পরিচালিত কোরতে পারবে না এবং মানুষও অশান্তি, অবিচার আর রক্তপাতের মধ্যে পতিত হবে না। কাজেই মানুষ জাতির মধ্যে যারা এই সেরাতুল মুস্তাকীমে চলবে তারা আল্লাহ(Allah)র দলে, অর্থাৎ হেযবুল্লায়, আর যারা আল্লাহ(Allah) ছাড়া অন্য যে কোন জীবন-বিধানকে স্বীকার কোরবে সেটা সম্পূর্ণই হোক বা আংশিকই হোক, তারা ইবলিসের দলে অর্থাৎ হেজবে ইবলিসে। বিকৃত আকীদায় তারা ব্যক্তি জীবনে সারারাত নামায পড়লেও সারা বছর রোযা থাকলেও সেই ইবলিসের দলে। এই সহজ সরলতাকে বোঝাবার জন্য রসুলুল্লাহ (দঃ) বোলেছেন- মানুষের সাথে আল্লাহ(Allah)র চুক্তি (Contract) হোচ্ছে এই যে, মানুষ আল্লাহ(Allah) ছাড়া আর কাউকে ইলাহ বোলে স্বীকার কোরবে না, আল্লাহ(Allah)র পক্ষ থেকে চুক্তি (Contract) হচ্ছে এই যে আল্লাহ(Allah) তাকে জান্নাত দেবেন। এখানে নামায, রোযা, হ্জ্জ ইত্যাদির কোন শর্ত আল্লাহ(Allah) রাখেননি। এই হলো সহজ সরল পথ, সেরাতুল মুস্তাকীম। এই পথে চলা হলো হেদায়েতের পথে চলা, এই হলো আল্লাহ(Allah)র দেয়া দিক-নির্দেশনা।

এখন তাকওয়া। তাকওয়ার অর্থ সাবধানে জীবনের পথ চলা। কোথায় পা ফেলছেন তা দেখে পথ চলা। অর্থাৎ জীবনের পথ চলায় ন্যায়-অন্যায়, ঠিক-অঠিক দেখে চলা, অসৎ কাজ পরিহার কোরে সৎ কাজ কোরে চলা। কোরানের অনুবাদ গুলিতে তাকওয়া শব্দের অনুবাদ করা হোয়েছে, ‘খোদাভীতি' দিয়ে, ইংরেজীতে Fear of God দিয়ে। তাতে প্রকৃত অর্থ প্রকাশ পায় না। কোনটা ন্যায়, কোনটা অন্যায় এর মাপকাঠি আসবে কোথা থেকে? এ মাপকাঠি অবশ্যই আল্লাহ(Allah) ন্যায়-অন্যায়ের যে মাপকাঠি দিয়েছেন সেইটা, অন্য কোন মাপকাঠি নয়। কাজেই সে হিসাবে খোদাভীতি এবং Fear of God শব্দগুলো চলে এবং সেই হিসাবেই তাকওয়া শব্দের অনুবাদ হিসাবে ওগুলো ব্যবহার করা হোয়েছে। ইংরাজী অনুবাদে আল্লামা ইউসুফ আলী অনুবাদ কোরেছেন Fear of God বোলে এবং মোহাম্মদ মারমাডিউক পিকথল কোরেছেন Mindful of duty to Allah অর্থাৎ আল্লাহ(Allah)র প্রতি কর্তব্য সম্বন্ধে চেতনা বোলে। প্রকৃত পক্ষে তাকওয়া শব্দের মর্ম হলো আল্লাহ(Allah) ন্যায়-অন্যায়ের যে মাপকাঠি নির্দিষ্ট কোরে দিয়েছেন, সেই মাপকাঠি মোতাবেক জীবনের পথে চলা। যারা অমন সাবধানতার সঙ্গে পথ চলেন তাদের বলা হয় মুত্তাকী। তাহোলে দেখা যাচ্ছে তাকওয়া ও হেদায়াত দু'টো আলাদা বিষয়। তাকওয়া হোচ্ছে সাবধানে পথ চলা আর হেদায়াত হোচ্ছে সঠিক পথে চলা। আরও পরিষ্কার করার চেষ্টা কোরছি। আপনি আপনার গন্তব্য স্থানের দিকে যেতে দু’ভাবে যেতে পারেন। অতি সাবধানে পথের কাদা, নোংরা জিনিষ এড়িয়ে, গর্ত থাকলে গর্তে পা না দিয়ে, কাঁটার ওপর পা না ফেলে চোলতে পারেন। ওভাবে চোললে আপনার গায়ে ময়লা লাগবে না, আছড়ে পড়ে কাপড়ে কাদামাটি লাগবে না। আবার পথের ময়লা, গর্ত, কাঁটা ইত্যাদির কোন পরওয়া না কোরে সোজা চোলে যেতে পারেন। ওভাবে গেলে আপনি আছাড় খাবেন, গায়ে-কাপড়ে ময়লা কাদামাটি লাগবে। আর হেদায়াত হোচ্ছে আপনি এ উভয়ভাবের যে কোনও ভাবে যেপথে চোলছেন যে পথ সঠিকপথ হওয়া, অর্থাৎ সে পথ আপনাকে আপনার প্রকৃত গন্তব্য স্থানের দিকে নিয়ে যাচ্ছে কিনা। পথ যদি সঠিক না হোয়ে থাকে অর্থাৎ হেদায়াত না থাকে তবে আপনার শত সাবধানে পথ চলা অর্থাৎ শত তাকওয়া সম্পূর্ণ বিফল, কারণ আপনি আপনার গন্তব্যস্থানে পৌঁছবেন না। আর যদি সঠিক পথে অর্থাৎ হেদায়াতে থাকেন ও চলেন তবে তাকওয়া না কোরেও গায়ের কাপড়ে মাদামাটি লাগিয়ে আপনি আপনার গন্তব্যস্থানে পৌঁছে যাবেন আপনি সফলকাম হবেন। অর্থাৎ তাকওয়া অর্থহীন যদি হেদায়াহ না থাকে এবং সেই হেদায়াত সঠিক পথটি হলো সেরাতুল মুস্তাকীম, সহজ সরল পথ, জীবনের কোন ক্ষেত্রে এক আল্লাহ(Allah) ছাড়া কারো বিধান না মানা, তওহীদ। এ জন্যই রসুলাল্লাহ (দঃ) মোয়ায (রাঃ) কে বোললেন, “মোয়ায! কোন লোক যদি মৃত্যু পর্য্যন্ত এক আল্লাহ(Allah)কে ছাড়া আর কাউকে প্রভু বোলে স্থান না দেয়, তবে জাহান্নামের আগুন তাকে স্পর্শ কোরতে পারবে না”। তারপর আবু যর (রাঃ)-কে বোললেন, ‘যে আল্লাহ(Allah) ছাড়া আর কোন প্রভু স্বীকার না করে তবে সে ব্যাভিচার কোরলেও, চুরি কোরলেও, জান্নাতে প্রবেশ কোরবে। অর্থাৎ ঐ লোক সঠিক পথে সেরাতুল মুস্তাকীমে আছে, হেদায়াতে আছে, কিন্তু তাকওয়ায় নেই, সে মুত্তাকী নয়। কিছুই আসে যায় না, কারণ সে সঠিক পথে আছে বোলে সে গায়ে কাদামাটি ময়লা নিয়েও তার গন্তব্য স্থানে, ‘জান্নাতে’ পৌঁছবে আর যারা অতি সাবধানে পথ চোলছেন অতি মুত্তাকি কিন্তু সেরাতুল মুস্তাকীমে ‘হেদায়াতে’ নেই তাদের সম্বন্ধেও আল্লাহ(Allah)র রসুল (দঃ) বোলে গেলেন। বোলেছেন, “ভবিষ্যতে এমন সময় আসছে, যখন মানুষ রোযা রাখবে কিন্তু তা উপবাস অর্থাৎ না খেয়ে থাকা হবে (রোযা হবে না), রাত্রে ওঠে তাহাজ্জুদ নামায পড়বে কিন্তু শুধু তাদের ঘুম নষ্ট করা হবে (নামায হবে না)”। রসুলুল্লাহ যে সময়টার কথা বোলে গেছেন এখন সেই সময়। বর্তমান মুসলিম(Muslim) দুনিয়ার যে উল্লেখযোগ্য অংশটা অতি মুত্তাকি সেটার শুধু ব্যক্তিগত জীবন ছাড়া আর সবটাই অর্থাৎ রাষ্ট্রীয়, সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, আইন, দণ্ডবিধি ইত্যাদি সব ক্ষেত্রেই আল্লাহ(Allah)কে বাদ দিয়ে মানুষের তৈরী ব্যবস্থা গ্রহণ ও প্রয়োগ করা হোয়েছে, অর্থাৎ তাওহীদে সেরাতুল মুস্তাকীমে দ্বীনুল কাইয়্যেমাতে ‘হেদায়াতে’ নেই। আদম (আঃ) থেকে শেষনবী (দঃ) পর্য্যন্ত ইসলামের ভিত্তিই হলো তওহীদ, সেরাতুল মুস্তাকীম, দ্বীনুল কাইয়্যেমা। সেখানেই যদি না থাকে তবে আর ইসলামে রইলো কেমন কোরে? কাজেই গোনাহ সওয়াব দেখে দেখে অতি সাবধানে তাকওয়ার সাথে পথ চোললেও সেই পথ তাদের জান্নাতে নিয়ে যাচ্ছে না, নিয়ে যাচ্ছে জাহান্নামে।

এই যে হেদায়াত এবং তাকওয়া দু'টো একেবারে ভিন্ন বিষয়, এটা যদি কেউ মনে করেন আমার ব্যক্তিগত মত তাহোলে তিনি ভুল কোরবেন। এটা আমার কথা নয় সূরা ফাতেহার পর সূরা বাকারা দিয়ে কোরান আরম্ভ কোরেই আল্লাহ(Allah) বোলছেন, "এই বই সন্দেহাতীত। (এটা) মুত্তাকীদের (সাবধানে পথ চলার মানুষদের) জন্য হেদায়াহ (সঠিক পথ প্রদর্শনকারী)"(কোরান- সূরা আল-বাকারা ১)। পরিষ্কার দু'টো আলাদা জিনিস হোয়ে গেলো। একটি তাকওয়া অন্যটি হেদায়াহ। কাজেই আল্লাহ(Allah) বোলছেন, যারা মুত্তাকী, কিন্তু হেদায়াতে নেই- সঠিক পথে নেই, তাদের পথ দেখাবার জন্যই এই কোরান। অন্যান্য, ধর্মে এমন কি আল্লাহ(Allah)কে অবিশ্বাসকারী নাস্তিক কমিউনিষ্টদের মধ্যেও বহু মানুষ আছেন যারা ন্যায়-অন্যায়, ঠিক-অঠিক দেখে জীবনের পথ চোলতে চেষ্টা করেন। তারা মিথ্যা বলেন না, মানুষকে ঠকান না অন্যের ক্ষতি করেন না, যতটুকু পারেন অন্যের ভালো করেন, গরীবকে সাহায্য করেন ইত্যাদি। তারা মুত্তাকী, কিন্তু তারা হেদায়াতে নেই। তাদের হেদায়াতে অর্থাৎ তওহীদে আনার জন্য কোরান। সুরা বাকারা ছাড়াও অন্যত্রও তাকওয়া ও হেদায়াত যে দু'টো ভিন্ন বিষয় তা আল্লাহ(Allah) পরিষ্কার কোরে দিয়েছেন। তিনি বোলছেন- যারা সঠিক পথে (হেদায়াতে) চলে (আল্লাহ(Allah)) তাদের হেদায়াত বৃদ্ধি করেন ও তাদের তাকওয়া প্রদান করেন (কোরান-সূরা মোহাম্মদ- ১৭)। এই আয়াতেও তাকওয়া ও হেদায়াহ যে এক নয়, আলাদা তা দেখা গেলো এবং হেদায়াত তাকওয়ার পূর্বশর্ত (Pre-condition) তাও পরিষ্কার হোয়ে গেলো। তাকওয়া ও হেদায়াহ যে এক নয় তার প্রকৃষ্ট প্রমাণ হোচ্ছে এই যে, কোরানে বহু জায়াগায় আল্লাহ(Allah) তার রসুলকে বোলছেন, ‘আমি তোমাকে হেদায়াত কোরেছি’। আমি শুধু দু'টি এখানে উল্লেখ কোরছি। সূরা আল ফাতাহ-র দ্বিতীয় আয়াতে আল্লাহ(Allah) তার রসুলকে বোলেছেন, ‘আমি তোমাকে সেরাতুল মুস্তাকীমে হেদায়াত কোরেছি’। তারপর সূরা দুহার সপ্তম আয়াতে তাকে বোলছেন, ‘তোমাকে হেদায়াত কোরেছি’। বর্তমানে প্রচলিত ভুল আকীদায় মুত্তাকী হওয়া মানেই যদি হেদায়াত হওয়া হয় তবে বিশ্বনবীর (দঃ) চেয়ে বড় মুত্তাকী কে ছিলেন, আছেন বা হবেন? আল্লাহ(Allah) নবুয়াত দেবার আগেও যার গোনাহ, পাপ ছিলোনা তাকে আবার হেদায়াত করার দরকার কি? বর্তমান পৃথিবীর মুসলিম(Muslim) জাতির একটা অংশ প্রচণ্ড তাকওয়ায় আপ্রাণ চেষ্টা কোরছেন আল্লাহ(Allah)কে খুশী করার জন্য, তার সান্নিধ্য লাভ করার জন্য, জান্নাতে স্থান পাওয়ার জন্য, কিন্তু চোলছেন আল্লাহ(Allah) ও রসুল (দঃ) যে হেদায়াহ পথ-প্রদর্শন দিক-নির্দেশনা দিয়েছেন তার ঠিক বিপরীত দিকে। আল্লাহ(Allah)র রসুলের প্রদর্শিত পথের বিপরীত পথ অবশ্যই জাহান্নামের পথ, এ সহজ সত্য তাদের মনমগজে আসছেনা। তারা ওয়াজ কোরছেন- অমুক কাজ কোরলে এত হাজার সওয়াব লেখা হয়; অমুক কাজ কোরলে এত লাখ সওয়াব লেখা হয়। তারা হাওলা দিচ্ছেন যে এসব কথা হাদীসে আছে। হাদীসে ঠিকই আছে। কিন্তু আকীদার বিকৃতিতে তারা বুঝছেননা না যে ওগুলো তাদের উদ্দেশ্যে বলা হোয়েছে যারা সেরাতুল মুস্তাকীমে আছেন, সঠিক পথে আছেন, যাদের আকীদা সঠিক তাদের জন্য। যারা উল্টোপথে আছেন বিপরীত দিকে চোলছেন তাদের জন্য নয়। এই দ্বীনের কঠিনতম দু'টি এবাদত রোযা ও তাহাজ্জুদই যদি তাদের জন্য অর্থহীন হয় তবে ও সব ছোটখাট ব্যাপারগুলো তো প্রশ্নের অতীত। আল্লাহ(Allah)র রসুল (দঃ) জানতেন যে আকীদা ভ্রষ্ট হোয়ে তার উম্মাহ একদিন আল্লাহ(Allah) ও তার প্রদর্শিত দিক-নির্দেশনা থেকে বিচ্যুত হোয়ে উল্টো দিকে চোলতে থাকবে। সেদিন অনেক আগেই এসে গেছে। তিনি ভবিষ্যতবাণী কোরে গেছেন "এমন সময় আসবে যখন মসজিদগুলি মুসল্লী দিয়ে পূর্ণ হবে" এমন কি একটি হাদীসে আছে যে, "এমন পূর্ণ হবে যে সেগুলিতে জায়গা পাওয়া যাবে না, (আজকাল তাই হোয়েছে) কিন্তু সেখানে হেদায়াত থাকবে না।" লক্ষ্য করুন মহানবী (দঃ) কোন শব্দটা ব্যবহার কোরলেন। তিনি তাকওয়া শব্দ ব্যবহার কোরলেন না, ব্যবহার কোরলেন হেদায়াত। অর্থাৎ তাকওয়া থাকবে, খুবই থাকবে, কারণ তাকওয়া না থাকলে তো আর তারা মসজিদ পূর্ণ করতোনা, কিন্তু হেদায়াত থাকবে না। মহানবীর (দঃ) ভবিষ্যতবাণী বহু আগেই পূর্ণতা লাভ করেছে।

নুবয়াত শেষ হোয়ে গেছে। এই উল্টো পথে চলা জাতিকে আবার উল্টিয়ে সঠিক পথে কে আনবে? শেষনবী (দঃ) বোলে গেছেন একজন মাহদী আসবেন ঐ কাজ করার জন্য। মাহদী তার নাম নয়, ওটা তার বিশেষণ বা উপাধি, তার নিজের অন্য নাম থাকবে। লক্ষ্য করুন তার বিশেষণটি কী? মাহদী। শব্দটি এসেছে হেদায়াত থেকে- যিনি হেদায়াত প্রাপ্ত এবং হেদায়াতকারী; সত্যপথপ্রাপ্ত এবং সত্যপথ প্রদর্শনকারী। শেষনবী (দঃ) ভবিষ্যতের সেই মানুষটির উপাধি ও বিশেষণে বোললেন ‘মাহদী', তিনি বোললেন না যে মুত্তাকী আসবেন। কারণ মুত্তাকী আমরা যথেষ্ট, একেবারে চুলচেরা ব্যাপারেও আমরা প্রচণ্ড মুত্তাকী। আমাদের নামায, রোযা, হজ্জ্ব, যাকাত, দাড়ি, মোচ, পাগড়ী, পাজামা, খাওয়া-দাওয়া, তসবিহ যিকরে ভুল ধরে কার সাধ্য? কিন্তু চোলছি সেরাতুল মুস্তাকীমের, দ্বীনুল কাইয়্যেমার ঠিক বিপরীত দিকে, সংগ্রামের বিপরীত দিকে, গর্তের দিকে, পলায়নের দিকে, জাহান্নামের ভয়াবহ আযাবের দিকে। যিনি আমাদের এই জাহান্নামের দিকে গতি উল্টিয়ে আবার জান্নাতের দিকে কোরবেন অর্থাৎ হেদায়াত কোরবেন তার উপাধি, বিশেষণ হোচ্ছে মাহদী (আঃ)।

কোন মন্তব্য নেই: