বৃহস্পতিবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০১১

৩৪। জান্নাতী ফেরকার দায়িত্ব

উৎস: Islam and Dajjal
রাহমানুর রহীম সর্বশ্রেষ্ট দয়ালু আল্লাহ(Allah) পৃথিবীর মানুষের জন্য, সম্পূর্ণ মানব জাতির জন্য যে জীবন-ব্যবস্থা তার সর্বশেষ রসুল মোহাম্মদের (দঃ) মাধ্যমে দিলেন তা তিনি কোরলেন অতি সহজ, অতি সরল, এ কথা পেছনে অনেক বার বোলে এসেছি। একমাত্র তাকেই জীবন বিধাতা বোলে বিশ্বাস ও গ্রহণ করা এবং মোহাম্মদের (দঃ) মাধ্যমে যে জীবন-ব্যবস্থা, দ্বীন পাঠানো হয়েছে তা সমগ্র জীবনে প্রতিষ্ঠা করা বিশেষ কোরে জাতীয় জীবনে, ব্যস। এইটুকুই তিনি চান, এইটুকুই কোরলে তিনি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন অন্যান্য ব্যক্তিগত গোনাহের মাফ এবং জান্নাতের। একেই তিনি বোলছেন সেরাতুল মুস্তাকীম, এইটুকুই তিনি আদম (আঃ) থেকে মোহাম্মদ (দঃ) পর্যন্ত চেয়ে আসছেন। তাই একে তিনি বোলছেন দ্বীনুল কাইয়্যেমা। যার সরাসরি অর্থ হোচ্ছে যে দ্বীন, জীবন-ব্যবস্থা কায়েম, চিরস্থায়ী, সনাতন। আল্লাহ(Allah)র এই একমাত্র দাবী এই উপমহাদেশেও তার পূর্ববর্তী নবীদের (আঃ) মাধ্যমে এসেছে। কারণ তিনি পৃথিবীর কোন মানব গোষ্ঠীকে শান্তির পথ, ব্যবস্থা দিতে ভুল করেননি(কোরান- সূরা আল-ফাতির ২৪)। কারণ ভুল-ত্রুটি তার জন্য অসম্ভব। এই উপ-মহাদেশের বিভিন্ন ধর্মের মানুষদের তারা কোন ধর্মের অনুসারী প্রশ্ন কোরলে তারা জবাব দেন-সনাতন ধর্ম। এই সনাতন ধর্ম কি তা আল্লাহ(Allah) কোরানে আমাদের জানিয়ে দিচ্ছেন। বোলছেন- অকপট, অকৃত্রিম হৃদয়ে, একাগ্র লক্ষ্যে (হানিফ) তার এবাদত করা, সালাত কায়েম করা ও যাকাত দেয়া হোচ্ছে দ্বীনুল কাইয়্যেমা, চিরন্তন, সনাতন দ্বীন। এবং বোলছেন এর বেশী তো আমি আদেশ করিনি (কোরান-সূরা আল বাইয়েনাহ ৫)। তারপর এই দ্বীনুল কাইয়্যেমা সম্বন্ধে অন্যত্র উল্লেখ কোরতে যেয়ে তিনি একাগ্র লক্ষ্য ও (হানিফ) শব্দটা আবার ব্যবহার কোরেছেন। বোলেছেন, "তোমাদের মুখ একাগ্র লক্ষ্যে দ্বীনের প্রতি নিবন্ধ রাখ, ঐ হোচ্ছে দ্বীনুল কাইয়্যেমা (কোরান সূরা আর-রুম ৩০)।" তারপর আবার বোলছেন, "তোমাদের মুখ একাগ্র লক্ষ্যে দ্বীনুল কাইয়্যেমার প্রতি নিবন্ধ রাখ (কোরান সূরা আর রুম ৪৩)”। দেখা যাচ্ছে দ্বীনুল কাইয়্যেমাকে বোলতে যেয়ে আল্লাহ(Allah) দু'টি শব্দ বারবার ব্যবহার কোরেছেন। একটি মুখ, অন্যটি হানিফ। হানিফ শব্দের অর্থ হলো মনকে অন্য কোন দিকে বিক্ষিপ্ত হোতে না দিয়ে একাগ্র লক্ষ্যে কোন কিছু করা। এগুলিকে একত্র করলে পাওয়া যাচ্ছে- আল্লাহ(Allah) বোলছেন তোমরা মনকে অন্য কোন দিকে বিক্ষিপ্ত হোতে না দিয়ে একাগ্র লক্ষ্যে দ্বীনুল কাইয়্যেমার দিকে তোমাদের মুখ নিবন্ধ রাখ, এবং দ্বীনুল কাইয়্যেমা হোচ্ছে (ক) একমাত্র আল্লাহ(Allah) ও তার দেয়া দ্বীন, (তওহীদ), (খ) সালাত (নামায) কায়েম করা ও (গ) যাকাত দেয়া। কত সংক্ষিপ্ত, কত সহজ কত সরল। আর এই সহজ-সরল পথই হলো সেরাতুল মুস্তাকীম। এই সরল, সহজ সংক্ষিপ্ত দ্বীনের দিকেই আল্লাহ(Allah) আমাদের মুখ ও মন একাগ্রলক্ষ্যে স্থির রাখতে বোলছেন এই জন্য যে, তা হোলে জাতির মধ্যে অতিরিক্ততা আসবে না, মতভেদ হোয়ে ফতোয়াবাজী হোয়ে জাতি ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হোয়ে যাবে না, ধ্বংস হোয়ে যাবে না, ঐক্য অটুট থাকবে।

দ্বীনুল কাইয়্যেমা এবং সেরাতুল মুস্তাকীম মাত্র তিনটি ব্যপারের সমষ্টি-তাওহীদ, সালাত আর যাকাত। এ কথা কোরান এবং হাদীস থেকে দেখিয়ে এলাম। কত সহজ। কিন্তু এই সহজ কথাই বোঝাতে পারলাম কিনা, জানি না। কারণ মানুষের মন যখন সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম, ক্ষুদ্রতম ব্যাপারে, জটিল ব্যাপারে জড়িয়ে যায়, যেমন আমাদের ‘ধর্মীয়' নেতাদের গেছে, তখন সে আর বিরাট সহজ-সরল সত্য দেখতে পায় না। যেমন একটি পিঁপড়া একটা পাহাড় বা পর্বত সমগ্রভাবে দেখতে পায় না। এই জন্যই বোধহয় সর্বজ্ঞানী স্বয়ং, আল্লাহ(Allah) এই দ্বীনুল কাইয়্যেমার মত, সেরাতুল মুস্তাকীমের মত সহজ-সরল ব্যাপার সম্বন্ধে বোলছেন- এই হোচ্ছে দ্বীনুল কাইয়্যেমা, কিন্তু অধিকাংশ মানুষই তা বোঝে না (কোরান- সূরা আর রুম ৩০)। কোরানে দ্বীনুল কাইয়্যেমাকে তিনটি ব্যাপারের সমষ্টি হিসাবে পেলেও হাদীসে পাচ্ছি, আল্লাহ(Allah)র রসুল (দঃ) একে আরও সহজ কোরে একেবারে একটিমাত্র ব্যাপারে সীমাবদ্ধ কোরে ফেলেছেন- সেটা হোচ্ছে তওহীদ। অবশ্য আজকের দুনিয়ায় যে ব্যক্তিগত তওহীদ চালু আছে, অবশ্যই সে তওহীদ নয়। আল্লাহ(Allah) যে তওহীদ আমাদের কাছে চান, সেই তওহীদ, জীবনের সর্বস্তরে বিশেষ কোরে জাতীয় জীবনের তওহীদ। এ ব্যাপারে পেছনে বোলে এসেছি। তবে কি আল্লাহ(Allah)র রসুল (দঃ) কোরানের সীমা অতিক্রম কোরে দ্বীনুল কাইয়্যেমাকে তিনটির বদলে একটা ব্যাপারে সীমাবদ্ধ কোরেছেন? অসম্ভব! কারণ কোন নবীই তা পারেন না। তার ওপর মহানবী (দঃ) ছিলেন জীবন্ত কোরান। এর অর্থ হোচ্ছে রহমানুর রহীম আল্লাহ(Allah)র কাছ থেকে অনুমতি (Authority) পেয়েই তিনি ঐ ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বোলেছেন- নিশ্চয়ই আল্লাহ(Allah)র হক তার বান্দার ওপর এই যে সে শেরক কোরবে না; এবং আল্লাহ(Allah)র ওপর বান্দার এই হক যে- যে শেরক কোরবে না তাকে তিনি কোন শাস্তি দেবেন না [মু'য়াজ (রাঃ) থেকে- বোখারী, মুসলিম(Muslim), মেশকাত]। এই সহজ-সরল পথ সেরাতুল মুস্তাকীম, দ্বীনুল কাইয়্যেমা থেকে দ্বীনকে কোথায় টেনে নিয়ে আসা হোয়েছে। ফলে জাতি আর আজ মুসলিম(Muslim) নেই, অতি মুসলিম(Muslim) হোয়ে গেছে। এই জাতি আজ আর রসুলাল্লাহর (দঃ) সৃষ্ট শুধু মুসলিম(Muslim) হোয়ে খুশী নয় সে অতি মুসলিমে(Muslim) পরিণত হোয়েছে। এই বাড়াবাড়ি, সীমা লংঘণ আল্লাহ(Allah) ও রসুল (দঃ) বহুবার নিষেধ করা সত্ত্বেও তা করা হোয়েছে খুব সওয়াবের কাজ মনে কোরে। এই ধ্বংসকারী প্রবণতা আজকের নয়, স্বয়ং নবী করিমের (দঃ) সময়ও ছিলো। রমযান মাসে স্ত্রীদের চুমু দেওয়া ও সফরে রোযা না রাখার অনুমতি এই জীবন-ব্যবস্থায় আছে বোলেই স্বয়ং বিশ্বনবী (দঃ) তাই কোরতেন। রমযানের রোযা রেখেও আমাদের আম্মাদের উম্মুল মো'মেনিনদের চুমু দিতেন এবং সফরে বের হোলে রোযা রাখতেন না। কিন্তু তা সত্ত্বেও কিছু লোক গজালেন যারা তাকওয়ায় স্বয়ং আল্লাহ(Allah)র রসুলের (দঃ) চেয়েও ওপরে যেতে চাইলেন। তারা রমযান মাসে তাদের স্ত্রীদের চুমু দেয়া থেকে বিরত হলেন এবং সফরে বের হলেও রোযা রাখতে লাগলেন। এই খবর শুনে মহানবী (দঃ) রাগান্বিত হোয়ে মসজিদে যেয়ে মিম্বরে উঠে বোললেন-"তাদের কি অবস্থা হবে যারা আমি নিজে যা করি তা থেকে বিরত হোয়েছে? আল্লাহ(Allah)র কসম! তাদের চেয়ে আমি আল্লাহ(Allah) সম্বন্ধে বেশী জানি, তাদের চেয়ে আমি আল্লাহ(Allah)কে বেশী ভয় করি [হাদীস -আয়েশা (রাঃ) থেকে, বোখারী, মুসলিম(Muslim), মেশকাত]।" বিশ্বনবীর (দঃ) সময়ের ঐ অতি মুসলিম(Muslim)দের সঙ্গে আজকের দুনিয়ার অতি মুসলিম(Muslim)দের তফাৎ এই যে ঐ সময়ের ঐ অতি মুসলিম(Muslim)রা শুধুমাত্র স্ত্রীদের চুমা আর সফরের রোযার ব্যাপারে অতি মুসলিম(Muslim) হবার চেষ্টা কোরেছিলেন, কিন্তু নিজেরা, প্রকৃত তওহীদে বিশ্বাসী অর্থাৎ মোমেন ছিলেন, দুর্দ্ধর্ষ যোদ্ধা ছিলেন এবং বিশ্বনবীর (দঃ) তাড়া খেয়ে নিশ্চয়ই বাড়াবাড়ি ত্যাগ কোরে তওবা কোরে আবার সীমার মধ্যে ফিরে গিয়েছিলেন। অর্থাৎ রোযা রেখে স্ত্রীদের চুমু দিতে শুরু কোরলেন এবং সফরে বের হোলে রোযা ত্যাগ কোরলেন। আর আজকের অতি মুসলিম(Muslim)রা যোদ্ধা তো ননই এবং ঐ দুই ব্যাপার ছাড়াও আরও হাজারো খুঁটিনাটিতে অতি মুসলিম(Muslim), কিন্তু ডুবে আছেন খাঁটি শেরকের মধ্যে এবং তাদের তাড়া দিয়ে সীমার মধ্যে ফিরিয়ে নেবার কেউ নেই। তাদের একথা বুঝিয়ে দেয়ার কেউ নেই যে, যে তওহীদে বিশ্বাস আনলে অর্থাৎ জাতীয় ও ব্যক্তিগত জীবনে একমাত্র আল্লাহ(Allah)র দেয়া জীবন-বিধান, দ্বীনকে প্রতিষ্ঠা করলে ছোটখাট ব্যাপার বাদ দেন, চুরি ও ব্যাভিচারের মত কবীরা গোনাহ কোরেও মানুষ জাহান্নামের আগুন থেকে বেঁচে যাবে, জান্নাতে প্রবেশ কোরবে, সেই তওহীদকে বাদ দিয়ে হাজারো তুচ্ছ অপ্রয়োজনীয় ব্যাপার নিয়ে অতি মুসলিম(Muslim) হোয়ে কোন লাভ হবে না। শুধু অতিরিক্ততার, আল্লাহ(Allah) রসুলের (দঃ) দেয়া সীমা লংঘণের গোনাহ করা হবে। কে এদের বোলে দেবে যে যাদের মধ্যে তওহীদই নেই (কারণ শুধু ব্যক্তিগত তওহীদ আল্লাহ(Allah)র কাছে গ্রহণীয় তওহীদ নয়) যাদের পায়ের তলে মাটিই নেই, তাদের অত কষ্ট কোরে নিজেদের একমাস না খাইয়ে রেখে, গভীর রাত্রে ঘুম নষ্ট কোরে কোন লাভ নেই, মহানবীর (দঃ) হাদীস মোতাবেকই নেই। স্মরণ করুন আল্লাহ(Allah)র রসুলের (দঃ) সেই হাদীসটির কথা আরেকবার। যেটায় তিনি একটি সরল-সোজা লাইন থেকে ডান দিকে কতকগুলি এবং বাম দিকে কতকগুলি লাইন টানলেন এবং বোললেন-শয়তান এই রাস্তাগুলিতে ডাকতে থাকবে। এই বোলে তিনি কোরান থেকে এই আয়াত পড়লেন- নিশ্চয়ই এই হোচ্ছে আমার (আল্লাহ(Allah)র) সহজ-সরল পথ সেরাতুল মুস্তাকীম। সুতরাং এই পথেই চলো, অন্য পথে চলো না, (অন্যপথে) চললে তা তোমাদের তার (আল্লাহ(Allah)র) পথ থেকে (চতুর্দিকে) বিচ্ছিন্ন কোরে দেবে। এইভাবে তিনি (আল্লাহ(Allah)) নির্দেশ দিচ্ছেন, যেন তোমরা সাবধানে পথ চলতে পার [কোরান- সূরা আল-আনাম ১৫৪ এবং হাদীস- আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ (রাঃ) থেকে- আহমদ, নিসায়ী, মেশকাত]। আল্লাহ(Allah) ও তার রসুলের (দঃ) সরাসরি আদেশকে অমান্য কোরে সেরাতুল মুস্তাকীমকে ত্যাগ কোরে এই জাতি আজ অতি মুসলিম(Muslim) হোয়ে শতধা বিচ্ছিন্ন হোয়ে গেছে।

আজ দুনিয়াময় মুসলিম(Muslim) বোলে যে জাতিটি পরিচিত সেটা বহু ভাগে বিভক্ত। এর প্রত্যেক ভাগ অর্থাৎ ফেরকা, মযহাব, বিশ্বাস করে যে সেই ভাগটাই শুধু প্রকৃত ইসলামে(Islam) আছে, বাকি সব মযহাব, ফেরকা পথভ্রষ্ট, ঠিক যেমন অন্যান্য ধর্মের লোকেরা নিশ্চিত যে তাদের ধর্মই সঠিক, অন্য সব ধর্মের মানুষ নরকে যাবে। কিন্তু আসলে অন্যান্য সব ধর্ম যেমন তাদের নবীদের (আঃ) দেখানো পথ থেকে বিচ্যুত হোয়ে পথভ্রষ্ট হোয়ে গেছে, মুসলিম(Muslim) নামধারী এই জাতিও তার নবীর (দঃ) প্রতিষ্ঠিত পথ থেকে তেমনি ভ্রষ্ট হোয়ে গেছে, যতখানি পথভ্রষ্টতা, বিকৃতি আসলে, পূর্বে আল্লাহ(Allah) নতুন নবী পাঠিয়েছেন, এই জাতিতে ততখানি বিকৃতি বহু পূর্বেই এসে গেছে। নতুন নবী আসেননি, কারণ, নবুওয়াত শেষ হোয়ে গেছে এবং শেষ রসুলের (দঃ) প্রতিষ্ঠিত পথে, প্রকৃত ইসলামে(Islam) আবার ফিরে যাওয়ার জন্য অবিকৃত কোরান ও রসুলের হাদীস আছে যা অন্যান্য ধর্মে নেই। শেষ ইসলামে(Islam)র বিভক্তিগুলির মধ্যে দ্বিতীয় বৃহত্তম ভাগ হোচ্ছে শিয়া মযহাব। এই মযহাবের পণ্ডিতরাও কোরান-হাদীসের চুলচেরা বিশ্লেষণে সুন্নী পণ্ডিতদের চেয়ে পেছনে পড়ে নেই এবং তাদের পাণ্ডিত্যের ফলে শিয়া মযহাবও অগুনিত ফেরকায় বিভক্ত হোয়ে গেছে সুন্নীদের মত। ফলে প্রকৃত ইসলামে(Islam)র উদ্দেশ্য থেকে শিয়া-সুন্নী উভয় মযহাবই বহু দূরে। কে বেশী দূরে কে কম দূরে এ পরিমাপ করা আমার উদ্দেশ্যও নয়, আমার সাধ্যও নয়, আমি শুধু এইটুকুই জানি যে মহানবীর (দঃ) কথিত একটিমাত্র ফেরকা বাদে শিয়া-সুন্নীসহ আর সমস্ত ফেরকা, মাযহাব আগুনে নিক্ষিপ্ত হবে, অর্থাৎ মহানবীর (দঃ) ইসলামে(Islam) নেই। সেই একমাত্র ফেরকা কোন্ ফেরকা তা পেছনে দেখিয়ে এসেছি। সুন্নীরা যেমন বিশ্বনবীর (দঃ) প্রকৃত সুন্নাত ত্যাগ কোরে আল্লাহ(Allah)-রসুলের নিষিদ্ধ চুলচেরা বিশ্লেষণ কোরে উম্মাহটাকে টুকরো টুকরো কোরে ভেংগে দিলেন এবং হাত থেকে তলোয়ার ফেলে দিয়ে তসবিহ নিয়ে খানকায়, হুজরায় ঢুকে উম্মাহর বর্হিমুখী (Extrovert) গতিকে অন্তর্মুুখী কোরে একে স্থবির কোরে দিলেন (Introvert), তেমনি শিয়ারাও তাদের মযহাবকে চুলচেরা বিশ্লেষণ কোরে বহু ভাগে ভাগ কোরে দিলেন এবং নবীর (দঃ) প্রকৃত সুন্নাহ অর্থাৎ দ্বীনকে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠার সংগ্রামকে বাদ দিয়ে বহু পূর্বের এক দুর্ভাগ্যজনক ঘটনাকে নিয়ে মাতম করাটাকেই সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্ম-কর্ম হিসাবে গ্রহণ কোরলেন। মাতম করা কোন জীবন্ত জাতির মুখ্য কাজ হোতে পারে না, মৃত জাতির হোতে পারে। উম্মতে মোহাম্মদীর দাবীদার কিন্তু কার্যতঃ শেরক ও কুফরীর মধ্যে নিমজ্জিত এই জাতির এখন উপায় কি? এর একমাত্র আশা আজ তেহাত্তর ফেরকার সেই একমাত্র জান্নাতী ফেরকা। এই ফেরকার লোক কোথায়? তাদের খুঁজে পাওয়া কঠিন, কারণ তারা একত্রে এক জায়গায় নেই, তারা এই বিরাট জাতির মধ্যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছেন এবং সংখ্যায় অতি সামান্য। কিন্তু যেহেতু রসুলুল্লাহ (দঃ) সেই একমাত্র জান্নাতী ফেরকার কথা বোলে গেছেন কাজেই তারা অবশ্যই আছেন। আজ তাদের ওপর বিরাট, বিশাল দায়িত্ব। একশ' ত্রিশ কোটির এই জাতির বৃহত্তর অংশ আল্লাহ(Allah)-রসুল ও ইসলামে(Islam) বিশ্বাসী, শুধু বিশ্বাসী নয়, দৃঢ় বিশ্বাসী। কিন্তু এর প্রকৃত উদ্দেশ্য, সেই উদ্দেশ্য অর্জনের প্রক্রিয়া, শেষ নবীকে (দঃ) কেন পাঠান হোয়েছিলো, আল্লাহ(Allah) মানুষের কাছে কি চান, কতটুকু চান, এসব সম্বন্ধে ভুল ধারণা অর্থাৎ সমগ্র রূপটির, আকীদার বিকৃতির কারণে দৃঢ় বিশ্বাসী হোয়েও শেরক ও কুফরীর মধ্যে ডুবে আছে। সেই যে ফকীহরা বোলে গেছেন যে মোকাম্মল ঈমান থাকা সত্ত্বেও আকীদার ভুলে মানুষ মোশরেক ও কাফের হোতে পারে। কাজেই আল্লাহ(Allah)র কোন রহমত এখন এ জাতির ওপর নেই বোলেই যে জাতিকে আল্লাহ(Allah) মানব জাতির মধ্যে শ্রেষ্ঠ বোলে সম্বোধন কোরেছেন(কোরান- সূরা আলে-ইমরান ১১০) সে জাতি আজ সর্ব দিক দিয়ে সর্ব নিকৃষ্ট। ঐ জান্নাতী ফেরকার ওপর আজ দায়িত্ব হলো এই পথভ্রষ্ট জাতিকে আবার বিশ্বনবীর (দঃ) ইসলামে(Islam) ফিরিয়ে আনার। এই জান্নাতী ফেরকার কাজ হবে কঠিন, অতি কঠিন। মুখোমুখী হোতে হবে ঠিক তেমনি বাধার- যে সব বাধার-প্রতিরোধের সম্মুখীন হোয়েছিলেন প্রত্যেক নবী। প্রতিরোধ আসবে চারিদিক থেকে, আসবে পাশ্চাত্য পদ্ধতিতে শিক্ষায় যাদের মগজ ধোলাই হোয়েছে তাদের কাছ থেকে, আসবে তাদের কাছ থেকে আল্লাহ(Allah)-রসুল বা ইসলামে(Islam)র নাম শুনলে যাদের পা থেকে মাথা পর্যন্ত জ্বলে যায়, আসবে অন্যান্য ধর্মের মানুষের কাছ থেকে, আর সবচেয়ে কঠিন প্রতিরোধ আসবে এই শেষ ইসলামে(Islam)র ধ্বজ্বাধারীদের কাছ থেকে ধর্ম যাদের কাছে জীবিকা, উপার্জনের পথ। মনে রাখতে হবে আল্লাহ(Allah)র রসুলকে(দঃ) সবচেয়ে কঠিন বাধা দিয়েছিলো আরবের তদানিন্তন ধর্মের পুরোধা, কাবার রক্ষণাবেক্ষণকারী কোরায়েশরা, সাধারণ লোকজন নয়, দূর মদীনার মোশরেকরাও নয়। মদীনার মানুষ তাকে সাহায্য কোরেছিলেন, তাঁকে আশ্রয় দিয়েছিলেন। আরও মনে রাখতে হবে ঈসার (আঃ) বিরুদ্ধে কঠিনতম প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলো তারই ধর্মের আলেম, ধার্মিকরা, রাব্বাই-সাদ্দুসাইরা অর্থাৎ ধর্মের ধারক-বাহকরা। প্রকৃত দ্বীনের দিকে বিশ্বনবীর (দঃ) প্রবর্তিত ইসলামে(Islam)র দিকে মানুষকে ডাক দিলে তারা অত প্রাণপনে প্রতিরোধ করবে প্রথমতঃ এই জন্য যে তাদের অহংকারে আঘাত লাগবে। কী! আমরা মাদ্রাসায় পড়াশোনা কোরে এতদিন কোরান-হাদীস ঘেটে ইসলাম(Islam) বুঝি নাই, আর এরা দাবী কোরছে ইসলাম(Islam) বোঝার। দ্বিতীয় কারণ, তাদের কায়েমী স্বার্থের, উপার্জনের পথের সর্বনাশ! মিলাদ পড়িয়ে, মুর্দা দাফন কোরে, ওয়াজ-মাহফিল-এজতেমা কোরে, মুর্দার কুলখানি কোরে- এক কথায় অন্যান্য ধর্মের মত পৌরহিত্য কোরে এবং ভারসাম্যহীন, বিকৃত তাসাওয়াফের পীরি-মুরিদী কোরে যে সহজ উপজীবিকার পথ আছে তা বিপর্যস্থ হোয়ে যাওয়া। প্রধানতঃ এই দুই কারণেই এরা ভবিষ্যতে মাহদীকেও(আঃ) প্রাণপণে প্রতিরোধ কোরবে।

যুক্তি-তর্ক দিয়ে বুঝিয়ে একজন খ্রীস্টান বা হিন্দু বা বৌদ্ধকে ধর্মান্তরিত করা যতখানি প্রায় অসম্ভব বা কঠিন, একজন শিয়াকে সুন্নী বানানো বা একজন সুন্নীকে শিয়া বানানো, বা কাউকে এক ফেরকা থেকে অন্য ফেরকায় বদলানো ততখানি কঠিন, ততখানিই প্রায় অসম্ভব। তা হোলে এই জাতির এই উম্মাহর ঐক্যের উপায় কি? উপায় আছে। জান্নাতী ফেরকাকে মাঠে নামতে হবে। তারপর বাহাত্তর ফেরকাকে বোলতে হবে- ভাই! তোমাদের মধ্যে মাসলা-মাসায়েল নিয়ে যত মতভেদই থাক, তোমরা তো অন্ততঃ এক আল্লাহ(Allah)য়, এক রসুলে আর এক কোরানে বিশ্বাস কর। মেহেরবানী কোরে শুধু এর উপর তোমরা ঐক্যবদ্ধ হও। বাকি যত মতভেদ আছে সেগুলি তোমাদের ব্যক্তিগত জীবনে ওমনি থাক, আপত্তি নেই, ওগুলি নিয়ে মতান্তর সৃষ্টি করোনা। যেখানে আল্লাহ(Allah)র নবী (দঃ) বহুবার বোলেছেন যে আল্লাহ(Allah)কে একমাত্র এলাহ (জাতীয় ও ব্যক্তিগত জীবনে) বোলে গ্রহণ কোরে নিলেই জাহান্নামের আগুন আর স্পর্শ কোরতে পারবে না, জান্নাতে প্রবেশ কোরবে, সেখানে অনাব্যশ্যক খুটিনাটি নিয়ে মতান্তর কোরে ধ্বংস হোয়ে যাওয়া কতখানি বোকামী কতখানি নির্বুদ্ধিতা। যে জাতিকে আল্লাহ(Allah) আদেশ কোরেছেন সমস্ত মতভেদ ত্যাগ কোরে সকলে ইস্পাতের মত কঠিন ঐক্যবদ্ধ হোয়ে আল্লাহ(Allah)র দেয়া রজ্জু অর্থাৎ তার দেয়া জীবন-বিধানকে আঁকড়ে ধোরে রাখতে, কোন বিচ্ছিন্নতাকে প্রশ্রয় না দিতে (কোরান-সূরা আল-ইমরান ১০৩)। সে জাতি তুচ্ছ খুঁটিনাটি মসলা-মাসায়েলের তর্ক নিয়ে শতধা বিচ্ছিন্ন, আল্লাহ(Allah)র পরিষ্কার সরাসরি আদেশ লংঘনকারী। যে মসলা-মাসায়েলের মাকড়শার জালে এই জাতি নিজেকে জড়িয়ে ফেলে স্থবির হোয়ে গেছে, অথর্ব হোয়ে গেছে, সেই মসলা-মাসায়েল থেকে নিজেদের মুক্ত কোরতে বললে এই হতভাগ্য জাতি তা শুনবে না, মানবে না, কারণ আজ মহা নবীর (দঃ) প্রকৃত সুন্নাহ জেহাদের চেয়ে, পৃথিবীতে এই দ্বীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের চেয়ে, দাড়ি, মোচ কতখানি লম্বা হবে তা তাদের কাছে অনেক বেশী দরকারী, অনেক বেশী প্রয়োজনীয়। কাজেই তাদের বোলতে হবে, যার যতটুকু খুশী দাড়ি, মোচ রাখো, যার যে পাশে ইচ্ছা শোও, যার যতটুকু ইচ্ছা টাখনুর ওপর পাজামা পর, কিন্তু ওগুলো নিয়ে কোন মতান্তর সৃষ্টি না কোরে শুধু আল্লাহ(Allah)র ওয়াহদানীয়াতে আর মোহাম্মদের (দঃ) নবুয়তের ওপর একত্র হও, অন্য কোন কথা উত্থাপন কোরো না। আল্লাহ(Allah) ও রসুলের(দঃ) ওপর দৃঢ় বিশ্বাস ঈমান থাকা সত্ত্বেও আকীদার বিকৃতির ফলে কার্যতঃ শেরক ও কুফরের মধ্যে নিমজ্জিত জাতিকে মনে করিয়ে দিতে হবে বা দাড়ি, মোচ, পাজামা, নফল এবাদতের কথা বাদ দিন, একেবারে, খোদ কোরানেরও কোন আয়াতের অর্থ ও উদ্দেশ্য নিয়ে কোন মতভেদ মতান্তর কুফর। বোলেছেন স্বয়ং রসুলুল্লাহ (দঃ) এবং বোলেছেন রাগান্বিত হোয়ে [হাদীস আব্দুল্লাহ বিন ওমর (রাঃ) থেকে-মুসলিম(Muslim), মেশকাত]। রাগান্বিতের কারণ এই মতভেদই হোলো কোন জাতির অনৈক্য ও পরিণামে ধ্বংসের কারণ। শুধু জাতি কেন, যে কোন প্রতিষ্ঠান, সমিতি বা দলকে এমন কি একটা পরিবারকেও ধ্বংস কোরে দেবার জন্য মতভেদ অনৈক্য যথেষ্ট।

মহানবীর(দঃ) সময়ে শিয়া ছিলো না, সুন্নী ছিলো না, কোন মযহাব কোন ফেরকা ছিলো না এ কথা ইতিহাস। তার (দঃ) সময়ে ইসলামে(Islam) যা ছিলো না তেমন কিছু যোগ করা হোচ্ছে বেদা'ত এবং বেদা'তের এই সংজ্ঞা সর্ববাদিসম্মত। তা হোলে সমস্ত মযহাব, সমস্ত ফেরকা বেদা'ত শেরকের সম পর্যায়ের গুনাহ, অমার্জনীয় অপরাধ, যে অপরাধ ক্ষমা না করার জন্য আল্লাহ(Allah) প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কাজেই জান্নাতী ফেরকার অন্যতম কর্তব্য হবে এই জাতিকে বলা যে আকীদার বিকৃতির ফলে তুমি তওহীদেই নেই। গায়রুল্লাহর আইন-কানুনের মধ্যে বাস কোরে তার রিরুদ্ধে প্রতিবাদ, প্রতিরোধ না কোরে শেরকে নিমজ্জিত অবস্থায় আছ, তোমার আবার মযহাব কি? ফেরকা কি? একই সংজ্ঞায় প্রচলিত ভারসাম্যহীন বিকৃত সুফীবাদের তরিকাগুলিও বেদা'ত। কারণ, বিশ্বনবীর (দঃ) সময় কোন তরিকা ছিলো না, এ কথা সর্ববাদিসম্মত ইতিহাস। তার সময়ে যেমন একটি মাত্র জাতি ছিলো, "উম্মতে মোহাম্মদী" তেমনি তরিকাও মাত্র একটিই ছিলো, "তরিকায়ে মোহাম্মদী"। ঐ তরিকা ছিলো বিপ্লবী, সংগ্রামী, জীবন উৎসর্গকারী, বহির্মুখী, বিস্ফোরণমুখী। আর এখন প্রচলিত বিভিন্ন তরিকাগুলি ঠিক বিপরীতমুখী, অন্তর্মুখী। তরিকায়ে মোহাম্মদীর হাতে ছিলো অস্ত্র, কর্মক্ষেত্র ছিলো উন্মুক্ত পৃথিবী। বর্তমানের তরিকাগুলির হাতে তসবিহ, কর্মক্ষেত্র খানকায়, হুজরায় চার দেয়ালের ভেতরে। তরিকায়ে মোহাম্মদী তাদের প্রাণ জেহাদে উৎসর্গ কোরে ঐ তরিকার সর্বশ্রেষ্ঠ পুরস্কার, সর্বশ্রেষ্ঠ সম্মান শাহাদাত ও আল্লাহ(Allah)র ভালবাসা লাভ করার জন্য দেশ ছেড়ে দেশান্তর বছরের পর বছর যুদ্ধ কোরে কাটিয়ে দিতেন। বর্তমানের তরিকা প্রাণ উৎসর্গ দূরে থাক, সামান্যতম সংঘর্ষ, সামান্যতম বিপদের সম্ভাবনা যেখানে আছে, তা অতি সন্তর্পণে এড়িয়ে চলেন এক কথায় ঐ তরিকা আর এই তরিকা ঠিক বিপরীত মুখী। একটি পুর্বমূখী অন্যটা পশ্চিম মুখী; একটা উত্তর মুখী অন্যটা দক্ষিণ মুখী।

সুতরাং জান্নাতী ফেরকার কোন মানুষকে যদি বাহাত্তর ফেরকার কেউ প্রশ্ন করে আপনি শিয়া না সুন্নী, না আহলে সুন্নাত আল জামাত, না আহলে হাদীস, হানাফী না শাফেয়ী, না মালেকী, না হাম্বলী, না অন্য কিছু? তবে তার জবাব হবে- ভাই! আমি ওসবের কোনটাই নই। আমি তো শুধু প্রাণপণে চেষ্টা কোরছি মো'মেন ও উম্মতে মোহাম্মদী হোতে। একটা বিল্ডিং, ইমারতের মধ্যে প্রবেশ কোরলে তবে তো প্রশ্ন আসতে পারে আমি কোন কামরায় আছি? আমরা ইসলামে(Islam)র ইমারতের মধ্যেই নেই, কোন কামরায় থাকি সে প্রশ্ন তো অবান্তর!

জান্নাতী ফেরকার অন্যতম কর্তব্য হবে মুসলিম(Muslim) বোলে পরিচিত এই জনসংখ্যাকে প্রশ্ন করা, যে আল্লাহ(Allah)র রসুলের (দঃ) সঙ্গে সর্বদা থেকে, তার সঙ্গে প্রতিটি সংগ্রামে সঙ্গী হয়ে সরাসরি তার কাছে থেকে যারা ইসলাম(Islam) কি, তা শিখেছিলেন, তারাই ঠিক ইসলাম(Islam) শিখেছিলেন, না আজকের মওলানা, মওলবী, পীর-মশায়েকরা যে ইসলাম(Islam) এই জাতিকে শেখান এই ইসলাম(Islam) ঠিক? আল্লাহ(Allah)র রসুলের (দঃ) শেখানো ইসলামে(Islam)র বিপরীতমুখী বর্তমানের বিকৃত ইসলামে(Islam)র ধারক-বাহকরাও অস্বীকার করতে পারবে না যে এই দ্বীনে সর্বশ্রেষ্ঠ পুরস্কার ও সর্বশ্রেষ্ঠ সম্মান রাখা আছে শহীদদের জন্য। আল্লাহ(Allah)র দেয়া সহজ-সরল পথ, সেরাতুল মুস্তাকীমকে দ্বীনুল কাইয়্যেমাকে যারা এক কঠিন দুর্বোধ্য দ্বীনে পরিণত কোরে বাহাত্তর ফেরকায় বিভক্ত কোরে এর শক্তি নিঃশেষ কোরে দিয়েছেন, আর যারা বিশ্বনবী (দঃ) যে উম্মাহর হাতে তলোয়ার ধোরিয়ে দিয়ে তাকে ঘর থেকে বের কোরে পৃথিবীতে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন, সেই উম্মাহর হাত থেকে তলোয়ার ছিনিয়ে নিয়ে, তার হাতে তসবিহ ধোরিয়ে দিয়ে তাকে পেছনে টেনে খানকায়, হুজরায় বসিয়ে দিয়ে তার গতি রুদ্ধ কোরে স্থবির, অনঢ় কোরে দিয়েছেন, তাদের কাজের সম্মিলিত ফল এই হোয়েছে যে এই উম্মাহর চরিত্রের যে প্রধান বৈশিষ্ট্য, অপরাজেয়, দুর্দ্ধর্ষ যোদ্ধা তা লুপ্ত হোয়ে সর্বপ্রধান বৈশিষ্ট্য হোয়েছে পলায়নপর কাপুরুষতা। প্রতি অন্যায়, প্রতি অবিচারের বিরুদ্ধে যে যুদ্ধংদেহী মনোভাব এই উম্মাহর চরিত্রে মহানবী (দঃ) সৃষ্টি কোরেছিলেন তা পর্যবসিত হয়েছে সমস্ত অন্যায়, সমস্ত অবিচার থেকে অতি সযত্নে এড়িয়ে গা বাঁচিয়ে চলায়, অন্যায়কে গ্রহণ করায়, ঘৃণ্য কাপুরুষতায়। জান্নাতী ফেরকার প্রধান কর্তব্য হবে এই উম্মাহর হারিয়ে যাওয়া সেই জেহাদী যোদ্ধা চরিত্রকে আবার জাতির জীবনে ফিরিয়ে আনা। এটা করতে গেলে জান্নাতী ফেরকাকে একটি জিনিষ ভালো কোরে বুঝে নিতে হবে। শুধু বুঝে নিতে নয়, হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি কোরতে হবে। উপলব্ধি কোরতে হবে এই দ্বীনে জেহাদ (সংগ্রাম) ও কিতালের (সশস্ত্র যুদ্ধ) গুরুত্ব কতখানি। যে কোন সংগঠনের (হোক সেটা জাতি, গোষ্ঠী, পরিবার, সমিতি, যাই হোক) শ্রেষ্ঠ পুরস্কার, শ্রেষ্ঠ সম্মান কার জন্য নির্দিষ্ট করা হয় তা থেকে অবশ্যই সেই সংগঠনের প্রধান উদ্দেশ্য পরিষ্কার বোঝা যায়- তাই নয় কি? শেষ ইসলামে(Islam), উম্মতে মোহাম্মদীতে সর্বশ্রেষ্ঠ পুরস্কার, সর্বশ্রেষ্ঠ সম্মান রাখা হোয়েছে শহীদদের জন্য, এ ব্যাপারে কারো দ্বিমত নেই। শহীদ কারা? কোন সন্দেহ নেই যে পৃথিবীতে চালু বিভিন্ন জীবন-ব্যবস্থা (দ্বীন) গুলিকে বিলুপ্ত কোরে দিয়ে এই শেষ ইসলাম(Islam)কে প্রতিষ্ঠা কোরে ইবলিসের চ্যালেঞ্জে আল্লাহ(Allah) ও রসুলকে (দঃ) জয়ী কোরে মানব জাতির মধ্যে থেকে অন্যায়, অবিচার, অশান্তি (ফাসাদ), যুদ্ধ ও রক্তপাত (সাফাকু দ্দিমা) বন্ধ কোরে ন্যায়, সুবিচার ও শান্তি (ইসলাম(Islam)) প্রতিষ্ঠা করার জন্য সশস্ত্র যুদ্ধে প্রাণ বিসর্জনকারী যোদ্ধারা হলেন শহীদ। অর্থাৎ এক কথায় এই দ্বীনের সর্বপ্রধান চরিত্র হোচ্ছে- সংঘাতমুখী, সংঘর্ষমুখী, অন্যায় ও অবিচারের সাথে সংঘাত, সংঘর্ষ। যে দ্বীনে, যে সংগঠনে এই সংঘাত এই সংঘর্ষ নেই, শুধু নেই নয়, সর্বপ্রধান লক্ষ্য নয়; সেই দ্বীন বিশ্বনবী মোহাম্মদের (দঃ) দ্বীন নয়, সে দ্বীনের- সে সংগঠনের অনুসারীরা উম্মতে মোহাম্মদীও নয়। তারা সারা রাত নামায পড়লেও নয়, সারা বৎসর রোযা রাখলেও নয়। কারণ শেষ ইসলামে(Islam)র সর্বপ্রধান চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যই তাদের মধ্যে নেই। আল্লাহ(Allah)র রসুলের (দঃ) বাণী মোতাবেক এদের রোযা উপবাস, তাহাজ্জুদ ঘুম নষ্ট করা।

পেছনে বোলে এসেছি আল্লাহ(Allah) তার সর্বশ্রেষ্ঠ পুরস্কার ও সম্মান রেখে দিয়েছেন এই বহির্মুখী, সংঘাতমুখী, সংঘর্ষমুখী যোদ্ধাদের জন্য। তারা যুদ্ধে প্রাণ বিসর্জন কোরে মরে গেলেও তাদের সম্মানে আমাদের এ কথা বলার অধিকার দেয়া হয়নি যে তারা মরে গেছেন। আমাদের বোলতে হবে তারা জীবিত, আমাদের মতই জীবিত। এই সম্মান এ উম্মাহর আর কাউকেও দেয়া হয়নি। কোন আলেম, ফকিহ, মুফাসসিরকে- কোন ফকির, দরবেশকে দেয়া হয়নি। শুধু তাই নয়, মানব জাতির মধ্যে যারা সর্বশ্রেষ্ঠ, সেই নবী রসুলদের চেয়েও কতকগুলি ব্যাপারে আল্লাহ(Allah) শহীদদের বেশী বৈশিষ্ট্য দিয়েছেন। বিশ্বনবী (দঃ) বোলেছেন- আল্লাহ(Allah) শহীদগণকে পাঁচটি নেয়ামত দান কোরেছেন, যা নবীদেরও দেননি। (১) সকল নবীর এবং আমারও রূহ কবয কোরবেন মালেক-উল-মওত। কিন্তু শহীদদের রূহ কবয কোরবেন স্বয়ং আল্লাহ(Allah)তায়ালা। (২) মওতের পর সকল নবীগণকে এবং আমাকেও গোসল দেয়া হবে। কিন্তু শহীদদের গোসল দেয়া হবে না। (৩) সকল নবীগণকে এবং আমাকেও কাফন দেয়া হবে, কিন্তু শহীদদের কাফন দেয়া হবে না। (৪) সকল নবীগণকে এবং আমাকেও মৃত বলা হবে, কিন্তু শহীদদের মৃত বলা হবে না, তারা জীবিত। (৫) নবীরা যার যার উম্মতের লোকজনের জন্য শাফায়াত কোরতে পারবেন এবং আমিও (আমার উম্মতের জন্য শাফায়াত কোরতে পারবো) কিন্তু শহীদরা কিয়ামতের দিনে সমস্ত উম্মতের লোকজনের জন্য শাফায়াত কোরতে পারবেন (মৃত্যুর আগে ও পরে-মওলানা আবদুল মতীন-শর্ষিনা আলীয়া লাইব্রেরী পৃ ৯১)।

এ কথা কি আরও পরিষ্কার কোরে বলার দরকার আছে যে, এই দ্বীনে যদি যোদ্ধা অর্থাৎ সংঘর্ষকারী, সংঘাতকারীদের জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ পুরস্কার ও সম্মান আল্লাহ(Allah) রেখে থাকেন এবং পাঁচটি বিষয়ে সে সম্মান নবীদেরও ছাড়িয়ে যায়, তবে এই দ্বীনের প্রতিটি মানুষের চরিত্র কী হোতে হবে? নিঃসন্দেহে বলা যায় যে সে চরিত্র হোতে হবে অপরাজেয় দুর্দ্ধর্ষ যোদ্ধার চরিত্র, সংঘাতমুখী চরিত্র। এই জাতির ইতিহাসে আমরা ঠিক তাই পাই। রসুলুল্লাহর (দঃ) সময়েও তাই, তার ওফাতের পরও ৬০/৭০ বছর পর্য্যন্ত তাই পাই। আর কী প্রচণ্ড সে সংঘাত, কী দুর্বার সে সংঘর্ষের গতি যে, মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে দু'টি বিশ্ব-শক্তি সে গতির সামনে চুরমার হোয়ে গেলো, অর্দ্ধেক পৃথিবী নতজানু হোয়ে গেলো। প্রাণ উৎসর্গকারী যোদ্ধাদের জন্য ঐ সর্বশ্রেষ্ঠ পুরস্কার ও সম্মান আল্লাহ(Allah)তায়ালা রেখেছেন এই জন্যই যেন এই উম্মাহর প্রতিটি মানুষ যেন শেরক ও কুফরের বিরুদ্ধে-অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে ভয়ঙ্কর যোদ্ধায় পরিণত হয়। কারণ, মানুষ নামের এই জীবের যিনি স্রষ্টা তিনি ভালো কোরেই জানেন যে শুধু উপদেশ বিতরণ কোরলেই তারা অতি শান্ত, ন্যায়পরায়ন, সুবিচারক জীবে পরিণত হবে না। সংগ্রাম, সশস্ত্র সংগ্রাম কোরে বিদ্রোহী মানুষকে আল্লাহ(Allah)র আইনের অধীনে আনতে হবে, তারপর আল্লাহ(Allah)র দেয়া দণ্ডবিধি মোতাবেক শাস্তি ও পুরস্কার দিয়ে মানুষকে নিয়ন্ত্রণ কোরতে হবে। তা না হোলে ইবলিস আল্লাহ(Allah)কে যে চ্যালঞ্জ দিয়েছে তাতে ইবলিসই জয়ী থাকবে। এই জাতিকে, এই উম্মাহকে সৃষ্টিই করা হোয়েছে ঐ উদ্দেশ্যে, কাজেই ঐ সংগ্রামমুখী, সংঘর্ষমুখী চরিত্রই যদি এর না থাকে তবে এর অস্তিত্বই অর্থহীন। এর নামায, রোযা ইত্যাদি সর্বরকম এবাদত তো বটেই, এমন কি যে দু'টি এবাদত প্রকৃত, খালেস, মোকাম্মল ঈমান ছাড়া সম্ভব নয়, রোযা ও নিয়মিত তাহাজ্জুদ, তাও না খেয়ে থাকা ও ঘুম নষ্ট করার পর্য্যায়ে পর্যবসিত হোয়ে যাবে।

রাসুলাল্লাহ (দঃ) বর্ণিত জান্নাতী ফেরকার কর্তব্য হবে এই জাতিকে বুঝিয়ে দেয়া যে, বাহ্যিক দৃষ্টিতে যা দেখা যায় তা প্রয়োজনীয় নয়, আসল বিষয় হোচ্ছে চরিত্র এবং আকীদা। একজন পবিত্র চরিত্রের উচ্চ স্তরের মানুষ আর একজন জঘণ্য চরিত্রের খুনী অপরাধীর বাইরের দৃশ্য প্রায় একই রকম। দু'জনেরই হাত, পা, মাথা, মুখ সবই আছে। এমন কি ঐ দুশ্চরিত্র খুনীর বাহ্যিক দৃশ্য, চেহারা ঐ সৎচরিত্র মানুষের চেয়ে সুন্দরও হোতে পারে। শুধু ভেতরের চরিত্রের জন্যই একজন জান্নাতী, অন্যজন জাহান্নামী, এমন কি পৃথিবীর বিচারেও একজন সম্মানিত, অন্যজন জেল ফাঁসির উপযুক্ত। বর্তমানে আমরা ইসলাম(Islam) মনে কোরে যে দ্বীনটাকে আঁকড়ে আছি এটার বাইরের চেহারা মোটামুটি আল্লাহ(Allah)র রসুলের মাধ্যমে প্রেরিত দ্বীনের মত। বাইরে থেকে যেগুলি দেখা যায় যেমন- যেকের আসকার, সালাত (নামায), রোযা, হজ্জ, যাকাত, দাড়ি, টুপি, কাপড় চোপড় ইত্যাদি নানাবিধ কার্যকলাপ। কিন্তু ভেতরের প্রকৃত চরিত্র নবীর (দঃ) ইসলামে(Islam)র চরিত্রের একেবারে সরাসরি বিপরীত। সেটা সিংহের চরিত্র, এটা শিয়ালের চরিত্র, সেটা মৃত্যুভয়হীন শাহাদাত পাগল দুর্দ্ধর্ষ যোদ্ধা, এটা মৃত্যুভয়ে ভীত খরগোশ। চরিত্র বিপরীত হওয়ার দরুন বাইরের ঐ দৃশ্যতঃ সাদৃশ্যের কোন দাম নেই। উম্মতে মোহাম্মদীর ভেতরের চরিত্র বর্হিমুখী, বিস্ফোরণমুখী ও সংঘাতমুখী হওয়া যে কতখানি প্রয়োজনীয়, কতখানি গুরুত্বপূর্ণ- যা বোঝাতে অগুনতি হাদীসের মধ্য থেকে মাত্র দু'টি পেশ কোরছি। একবার মহানবী (দঃ) বোললেন- আমার ওপর যদি নবুয়তের দায়িত্ব না থাকতো তবে আমি জেহাদের ময়দানে শহীদ হোয়ে যেতাম। অন্য সময় বোললেন- যার হাতে আমার জীবন (আল্লাহ(Allah)) তার শপথ। আমি কেমন আকুল কামনা করি যে, আমি যেন শহীদ হই, তারপর আমাকে জীবিত করা হয়, আমি আবার শহীদ হই, আমাকে আবার জীবিত করা হয়, আবার শহীদ হই, আবার জীবিত করা হয় এবং আমি আবার শহীদ হই [হাদীস- বোখারী, মুসলিম(Muslim), মেশকাত]। প্রশ্ন হোচ্ছে-সমস্ত নবীদের নেতা, আল্লাহ(Allah)র শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি, সমস্ত মানব জাতির মধ্যে যে একটি মাত্র মানুষ যিনি মাকামে-মাহমুদায় আসন পাবেন, এক কথায় আল্লাহ(Allah)র পরই যার স্থান তিনি কী পেলেন যুদ্ধ ক্ষেত্রে, সংঘর্ষে প্রাণ বিসর্জন দেবার মধ্যে যে একবার নয়, দুবার নয়, চার চার বার তিনি আকুল কামনা কোরছেন? কারণ, নবী হোয়ে তিনি জানেন যে ইবলিসের বিরুদ্ধে আল্লাহ(Allah)র পক্ষ হোয়ে আল্লাহ(Allah)কে জয়ী করার যুদ্ধে যে বা যারা চরম ত্যাগ কোরবে, আল্লাহ(Allah) তাদের ওপর কত খুশী, তিনি তাদের কতখানি ভালবাসেন। তাই বিশ্বনবী (দঃ), বিশ্বনবী হোয়েও, সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হোয়েও খুশী নন, তিনি (দঃ) চার চার বার যুদ্ধক্ষেত্রে প্রাণ বিসর্জন দেবার জন্য আকুল কামনা কোরছেন। কিন্তু পারছেন না, কারণ তার ওপর নবুয়তের বিশাল, বিরাট দায়িত্ব দেয়া আছে যে জাতি সশস্ত্র সংগ্রাম কোরে আল্লাহ(Allah)কে ইবলিসের বিরুদ্ধে জয়ী কোরে পৃথিবীতে শান্তি ও সুবিচার প্রতিষ্ঠা কোরবে সেই জাতি সৃষ্টি করার বিশাল দায়িত্ব। সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হোয়েও যে জেহাদে প্রাণ বিসর্জন করার জন্য আল্লাহ(Allah)র রসুল (দঃ) আকুল কামনা কোরছেন, সেই জেহাদকে জীবন থেকে সম্পূর্ণ বিসর্জন দিয়ে সেই নবীর (দঃ) উম্মতের দাবীদাররা মহা উৎসাহে নানা ছোটখাট অপ্রয়োজনীয় ব্যাপার আকড়ে ধোরে ‌‌‌‌‌‘ধর্ম-কর্ম' কোরছেন। যে মহানবী (দঃ) বোলছেন তওহীদে প্রকৃত বিশ্বাসীকে ব্যাভিচার ও চুরির মত গুনাহে কবীরাও জান্নাত থেকে ফেরাতে পারবে না, জাহান্নামের আগুন তাকে স্পর্শ কোরতে পারবে না, বোলেছেন তওহীদ জান্নাতের দরজার চাবি, সেই মহানবীর (দঃ) উম্মতের দাবীদাররা তাদের জাতীয় জীবন থেকে আল্লাহ(Allah)র দেয়া আইন-কানুন, দণ্ডবিধি প্রভৃতি প্রত্যাখ্যান, বাতিল কোরে সেখানে খ্রীস্টান-ইহুদীদের আইন-কানুন, দণ্ডবিধি গ্রহণ ও প্রয়োগ কোরে; অর্থাৎ দুই এলাহ, দুই উপাস্যকে গ্রহণ কোরে মোশরেক হোয়েও নিখুঁতভাবে নামায, রোযা, হজ্জ ও নানা রকমের নফল এবাদত কোরে অহংকারে স্ফীত হোয়ে ভাবছেন জান্নাতের দরজায় তাদের জন্য লাল কার্পেট বিছানো আছে। এখনও যদি উদ্দেশ্য ও উদ্দেশ্য অর্জনের প্রক্রিয়ার তফাৎ তারা না বোঝেন, উদ্দেশ্য বিসর্জন দিয়ে প্রক্রিয়াকেই উদ্দেশ্য মনে কোরে তাই নিয়ে মহা ব্যস্ত হোয়ে থাকেন, মহা প্রয়োজনীয় ও সামান্য প্রয়োজনীয়র তফাৎ (Priority) না বুঝেন তবে অপেক্ষা করুন বর্তমানে এই জাতির দুর্দশার চেয়েও আরও ঘৃণ্য দুর্দশার, আরও চরম অপমানের আরও ভয়াবহ শাস্তির। এই দুনিয়াতেই, এবং তারপর ঐ দুনিয়ায় ভয়ঙ্কর আযাবের। এদের বর্তমান নামায রোযা হজ্জ যাকাত ও চুলচেরা নিখুঁত নফল এবাদত যেমন পৃথিবীর নিকৃষ্ট জাতির অবস্থান থেকে ওপরে ওঠাতে পারেনি, তেমনি ঐ দুনিয়াতেও আল্লাহ(Allah)র কঠিন আযাব থেকে বাঁচাতে পারবেন না।

জান্নাতী ফেরকার অন্যতম কর্তব্য হবে এই জাতির ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন বাহাত্তুর ফেরকাকে ডেকে বলা যে- আপনারা যত ফেরকা মযহাবেই বিভক্ত হোয়ে থাকুন, আপনারা এক আল্লাহ(Allah)র, এক নবীতে এবং এক কোরানে বিশ্বাসী তো? তাহলে জাতির এই দুঃসময়ে, যখন ঐক্য এতো প্রয়োজনীয়, এখন শুধু এর ওপর সবাই একত্র হোয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ান। মযহাবের ফেরকার যে অনৈক্য আছে তা যদি বিলুপ্ত কোরতে না পারেন, তবে ঐক্যের খাতিরে তা ব্যক্তিগত পর্য্যায়ে রেখে দিন, বাইরে আনবেন না। শিয়া শিয়াই থাকুন, ব্যক্তিগত, পারিবারিক এমন কি সামাজিক পর্য্যায়ে আপনারা আপনাদের মযহাব ফেরকা মেনে চলুন যত ইচ্ছা মাতম করুন, কিন্তু জাতীয়ভাবে সমস্ত মুসলীম জাতির সঙ্গে আল্লাহ(Allah)র একত্বের, তওহীদের এবং মোহাম্মদের (দঃ) খতমে নবুয়াতের ব্যাপারে এক হোয়ে সবার সঙ্গে একই মঞ্চে এসে দাঁড়ান। সুন্নী সুন্নীই থাকুন ব্যক্তিগত, পারিবারিক সামাজিক ব্যাপারে, কিন্তু জাতীয়ভাবে শিয়ার পাশে এসে দাঁড়ান। এমনি ভাবে হানাফী, শাফেয়ী, হামবেলি, মালেকী, ইত্যাদি যত রকমের দুর্ভাগ্যজনক ধ্বংসকারী বিভক্তি আছে সব ব্যাক্তিগত ও পারিবারিক পর্যায়ে রেখে, জাতীয় পর্যায়ে এক আল্লাহ(Allah)র এক নবীতে বিশ্বাসী হিসাবে, এক জাতি হিসাবে এক মঞ্চে এসে দাঁড়ান ও আল্লাহ(Allah)র রাস্তায় সংগ্রাম জেহাদ আরম্ভ করুন। এক আল্লাহ(Allah)য়, এক রসুলে এক কোরানে বিশ্বাসের দাবীদার এই জাতি যদি এ ডাকে সাড়া না দেয়, তবে জান্নাতী ফেরকার কিছু করার নেই। তারা আল্লাহ(Allah)র আর তার রসুলের (দঃ) কাছে সাফ থাকবেন। তবে ডাকের মত ডাক দিতে হবে। যেমন কোরে নবী রসুলরা (আঃ) চিরকাল মানুষকে ডাক দিয়ে এসেছেন। তাদের প্রচণ্ড বিরোধিতা করা হোয়েছে, অপমান করা হোয়েছে, নিপীড়ন করা হোয়েছে, এমন কি হত্যা করা হোয়েছে, কিন্তু তাদের ডাক বন্ধ করা যায় নি। শত অত্যাচার সহস্র বিরোধিতা তাদের নিবৃত্ত কোরতে পারেনি। তেমনি ডাক দিতে হবে। জান্নাতী ফেরকার নিরাশ হবার কারণ নেই। এই ফেরকা জান্নাতী কেন? রসুলাল্লাহর (দঃ) প্রকৃত সুন্নাহ পালনকারী বোলেই তো? তাহোলে তিনি কত অত্যাচার কত বিরোধিতা কত অপমান ও নিগ্রহ সহ্য কোরেছেন সে সুন্নাহ সে উদাহরণ তো তাদের সামনেই আছে। তবে ভয় কিসের? জান্নাতী ফেরকা তো আল্লাহ(Allah) ছাড়া আর কাউকে ভয় করে না।

জান্নাতী ফেরকাকে সর্বক্ষণ মনে রাখতে হবে তারা জান্নাতী কেন, কেমন কোরে। এজন্য তাদের মনে কোরিয়ে দিতে চাই বিশ্বনবীর (দঃ) সেই হাদীসটা যেটাতে তিনি ব্যাখ্যা এবং নির্দিষ্ট কোরে দিয়েছেন তেহাত্তুর ফেরকার মধ্যে জান্নাতী ফেরকা কোনটা। বোলেছেন শুধু সেই ফেরকা যে ফেরকা আমি ও আমার আসহাব যার ওপর আছি তার ওপর আছে ও থাকবে। বাকি বাহাত্তুর ফেরকা না'রি, অর্থাৎ আগুনে নিক্ষিপ্ত হবে, জাহান্নামী। এ কথার অন্যতম অর্থ হোচ্ছে উম্মতে মোহম্মদীর আদর্শ শুধুমাত্র বিশ্বনবী মোহাম্মদ (দঃ) এবং তার সঠিক অনুসারী সাহাবীরা (রাঃ) আর কেউ নয়। বিশ্বনবী (দঃ) ও তার আসহাব কিসের ওপর ছিলেন তা পেছনে দেখিয়ে এসেছি, যদিও দেখাবার দরকার করেনা। কারণ এটা অবিসংবাদিত ইতিহাস যে তাদের প্রত্যেকের জীবন পৃথিবীতে দ্বীন-ই-ইসলাম(Islam)কে প্রতিষ্ঠার জন্য অস্ত্র হাতে সংগ্রামে, যুদ্ধে, অন্যায়, অবিচারের সঙ্গে সংঘাতে ব্যয় হোয়েছে। একথাও ইতিহাস যে মহানবীর (দঃ) সাক্ষাৎ সাহাবাগণের মধ্যে অতি নগন্য সংখ্যক মানুষ ছাড়া প্রায় সবার কবর তাদের স্বদেশ আরবের বাইরে হোয়েছে। অর্থাৎ তারা আল্লাহ(Allah)র দ্বীন পৃথিবীর বুকে প্রতিষ্ঠা কোরে সমস্ত অবিচার, অন্যায় অত্যাচার বন্ধ কোরে পৃথিবীময় শান্তি, ইসলাম(Islam), স্থাপন করার সংগ্রামে ইসলামে(Islam)র সন্ন্যাস গ্রহণ কোরে সেই যে দেশ থেকে বের হোয়েছিলেন, আর ঘরে ফেরেন নি। ঐটি হোচ্ছে সেই ইসলাম(Islam) যে ইসলাম(Islam) বিশ্বনবী মোহাম্মদ (দঃ) তার আসহাবদের (রাঃ) শিখিয়েছিলেন এবং বোলেছেন ঐ ইসলামে(Islam)র ওপর তিনি (দঃ) ও তার আসহাব আছেন। যারা ঐ ইসলামে(Islam)র ওপর আছেন, শুধু তারা হোচ্ছেন এবং হবেন সেই জান্নাতী ফেরকা। আজ যে ইসলাম(Islam) মানুষকে শিক্ষা দেয়া হয় সেটা ঐ ইসলামে(Islam)র ঠিক বিপরীতমুখী "ইসলাম(Islam)"। মহানবী (দঃ) ও তার আসহাবের (রাঃ) ইসলাম(Islam) ছিলো গয়রুল্লাহর সৃষ্ট সমস্ত জীবন ব্যবস্থা পর্যুদস্ত, ধ্বংস কোরে পৃথিবীময় আল্লাহ(Allah)র সৃষ্ট জীবন ব্যবস্থা, দ্বীন প্রতিষ্ঠা করা, সেখানে গয়রুল্লাহর সঙ্গে সামান্যতম আপোষের স্থান ছিলোনা। আর আজ 'ধর্মীয়' নেতারা যে ইসলাম(Islam) শিক্ষা দেন সেই ইসলাম(Islam) গয়রুল্লাহর সমস্ত ব্যবস্থাকে সর্বান্তঃকরণে স্বীকার কোরে নেয়, সমস্ত অন্যায়ের কাছে মাথা নত কোরে দেয়, সমস্ত অত্যাচার থেকে কাপুরুষের মত পলায়ন কোর গর্তে ঢুকে প্রাণ বাঁচায়। মহানবীর (দঃ) ও তার আসহাবের (রাঃ) ইসলামে(Islam)র সঙ্গে এই ইসলামে(Islam)র মিল শুধু বাহ্যিক দৃশ্যে, নামায, রোযা, হজ, যাকাত ইত্যাদিতে, একটা শক্তিশালী রাইফেলের সাথে যাত্রাদলের কাঠের বন্দুকের যতখানি মিল ততখানি, তার বেশী নয়। মানব জাতির শ্রেষ্ঠ বিপ্লবী বিশ্বনবী মোহাম্মদকে (দঃ) কাঠের বন্দুক তৈরী করার জন্য আল্লাহ(Allah) পৃথিবীতে পাঠান নি।

জানিনা, বোঝাতে পেরেছি কিনা যে ইসলামে(Islam)র প্রকৃত আকীদা (Concept) কি। যে আকীদা সঠিক না হোলে আল্লাহ(Allah), রসুল, কোরানে দৃঢ় ও মোকাম্মল ঈমান থাকা সত্ত্বেও মানুষ মোশরেক ও কাফের হোয়ে যেতে পারে। যেতে পারে নয়, বর্তমানের এই 'মুসলিম(Muslim)' জাতি তাই গেছে। যদি আংশিকভাবেও পেরে থাকি তবে অন্ততঃ কিছু লোকের কাছে পরিষ্কার হোয়েছে যে প্রকৃত ইসলাম(Islam), যে ইসলাম(Islam) মহানবী মোহাম্মদ (দঃ) পৃথিবীতে এনেছেন এর সর্বপ্রধান চরিত্র হোচ্ছে গয়রুল্লাহর সঙ্গে সংঘাতমুখী, শুধু বহির্মুখী (Extrovert) নয়, একেবারে বিস্ফোরণমুখী (Explosive)। এর প্রাথমিক ইতিহাসই এ কথার অকাট্ট প্রমাণ, কোন যুক্তি-তর্কের প্রয়োজন করেনা। অন্য যে কোন আকীদা, মতবাদ এর ঘোর বিরোধী এবং এর প্রাণঘাতী শত্রু। বাইরের লক্ষ কোটি শত্রুও এই দ্বীনের সে ক্ষতি করতে পারবেনা যে ক্ষতি ঐ বিস্ফোরণমুখী চরিত্রের বিপরীত কোন আকীদা, মতবাদ কোরতে পারবে এবং কোরছে। উম্মাহর ভবিষ্যত সম্বন্ধে আল্লাহ(Allah) মহানবীকে (দঃ) যে জ্ঞান দিয়েছিলেন সেই জ্ঞানের আলোকে তিনি তার জাতির সম্বন্ধে অনেক ভবিষ্যত বাণী কোরে গেছেন যেগুলি হাদীস হোয়ে আমাদের কাছে পৌঁছেছে। এই প্রসঙ্গে একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ হাদীস পেশ কোরছি। বিশ্বনবী (দঃ) বোলেছেন- আমার উম্মাহর মধ্যে নানারকম মতবাদ সৃষ্টি হোয়ে অনেক ফেরকা সৃষ্টি হবে। তার মধ্যে এমন ফেরকা সৃষ্টি হবে যারা অতি উৎকৃষ্ট কথা বলবে কিন্তু তাদের কাজ হবে ঘৃণিত। তারা কোরান পড়বে কিন্তু তা তাদের গলার ভিতর দিয়ে নিচে যাবে না। (অর্থাৎ কোরানের প্রকৃত উদ্দেশ্য, মর্মবাণী তাদের হৃদয়ে প্রবেশ কোরবেনা)। তারা সৃষ্টির জঘন্যতম জীব হবে। সুখী সেই যে তাদের হত্যা করবে এবং সুখী সেই যে তাদের দ্বারা নিহত হবে। তারা(ঐ ফেরকার লোক সকল) আল্লাহ(Allah)র বই (কোরান) এর দিকে মানুষকে ডাকবে, কিন্তু আমাদের কোন কিছুই তারা কার্যকর কোরবেনা। যারা তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কোরবে তারা আল্লাহ(Allah)র কাছে তাদের নিজেদের চেয়েও প্রিয় হবে, (অর্থাৎ আল্লাহ(Allah)র অতি, অতি প্রিয় হবে)। তারা (সাহাবাগণ) জিজ্ঞাসা কোরলেন- ইয়া রসুলাল্লাহ! তাদের চিহ্ন কি হবে? (অর্থাৎ আমরা তাদের চিনব কি থেকে?) তিনি [মহানবী (দঃ)] জবাব দিলেন- তারা দল বেঁধে গোল গোল হোয়ে বসবে (হাদীস- আবু সায়ীদ আল-খুদরী (রাঃ) ও আনাস বিন মালেক (রাঃ) থেকে-আবু দাউদ, মিশকাত]। এই হাদীসটি ভালো কোরে বুঝে নেবার প্রয়োজন আজ খুব বেশী, বিশেষ কোরে যারা আল্লাহ(Allah) ও তার রসুলের (দঃ) কাছে নিজেদের উম্মতে মোহাম্মদী, অন্ততঃ মুসলিম(Muslim) বোলে গৃহিত হোতে চান। প্রথম কথা হলো রসুলাল্লাহ (দঃ) তার এই হাদীসে যাদের কথা বোঝাচ্ছেন তারা মোনাফেক নয়, মোশরেক নয়, কাফেরও নয়, কারণ এর কোন শব্দই তিনি ব্যবহার করেন নি। বরং বোলছেন তারা তার উম্মতের মধ্যেই বহু ফেরকার এক ফেরকা। ঐ ফেরকা যদি জেনে শুনে মানুষকে বিপথগামী করার জন্য কোরানের ভুল ব্যাখ্যা কোরে কোরানের দিকে ডাকতো তবে তাদের মোনাফেক বা মোশরেক বা কাফের বলা যেতো এবং মহানবীও (দঃ) তাই বোলতেন। কিন্তু তিনি তা বলেন নি। এর অর্থ হলো ঐ ফেরকা অকৃত্রিম, আন্তরিক ভাবেই কোরানে বিশ্বাসী, কিন্তু আকীদার বিকৃতির দরুন কোরানের প্রকৃত অর্থ, মর্ম তারা বুঝবে না, (তারা কোরান পড়বে কিন্তু তা তাদের গলার ভিতর দিয়ে নিচে অন্তরে যাবে না)। আমাদের কোন কিছুই তারা কার্যকর কোরবেনা অর্থ বিশ্বনবী (দঃ) ও তার সাহাবারা (রাঃ) যে সারা জীবন বিরতিহীন জেহাদ ও কিতাল (সশস্ত্র যুদ্ধ) কোরছেন তা তারা কার্যকর কোরবেনা। কাফের নয়, মোশরেক নয়, মোনাফেক নয়, নিজের উম্মাহর এক অংশের বিরুদ্ধে তিনি (দঃ) যুদ্ধের আদেশ দিচ্ছেন, এত রাগান্বিত তিনি কেন হোয়েছেন? এই জন্য হোয়েছেন যে তিনি আল্লাহ(Allah)র নির্দেশে তার উম্মাহর জন্য যে বহির্মূখী (Extrovert) দিক নির্দেশনা দিয়েছেন, ঐ গোল গোল হোয়ে বসা ফেরকা সেই দিক নির্দেশনার ঠিক উল্টো দিক নির্দেশনা শিক্ষা দিয়ে তার উম্মাহকে অন্তর্মূখী কোরে দেবে। তিনি সারা জীবন অবিশ্বাস্য পরিশ্রম কোরে, নির্মম অত্যাচার সহ্য কোরে কঠিনতম সাধনায় যে অপরাজেয় দুর্দ্ধর্ষ যোদ্ধা জাতি সৃষ্টি কোরেছিলেন, এই ফেরকা "আজ আর অস্ত্রের জেহাদ অর্থাৎ কিতাল নেই" শিক্ষা দিয়ে তার (দঃ) উম্মাহকে পলায়নপর কাপুরুষে পরিণত কোরবে। এক কথায় তার (দঃ) নবী জীবনের সমস্ত সাফল্য ধূলিস্যাৎ কোরে দেবে, অর্থহীন কোরে দেবে। এই ফেরকার পরিচিতির জন্য মহানবী (দঃ) যে চিহ্ন তার আসহাবকে এবং হাদীসের মধ্য দিয়ে আমাদের জানিয়ে দিচ্ছেন তা বুঝে নেয়ার দায়িত্ব আমি পাঠক-পাঠিকাদের ওপর ছেড়ে দিচ্ছি। কারা মসজিদে মসজিদে মানুষকে ডেকে গোল হোয়ে বসে? কারা মানুষকে সর্বরকম অপরাধের সঙ্গে সংঘাত, সংঘর্ষ থেকে পলায়ন কোরে গর্তে ঢুকতে শিক্ষা দেয়? কারা গায়রুল্লাহ, আল্লাহ(Allah)র শত্রুদের কাছে মাঠ ছেড়ে দিয়ে ব্যক্তিগতভাবে রসুলুল্লাহর (দঃ) কতকগুলি নিতান্ত ব্যক্তিগত, কম প্রয়োজনীয় অভ্যাসের নকল করা শেখায়, যে অভ্যাসগুলি তার নবী জীবনের মুখ্য, প্রধান ও বিপ্লবী উদ্দেশ্যের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক রাখে না? কারা অস্ত্রের জেহাদ কিতাল বাদ দিয়ে শুধু জেহাদে আকবর, নফসের জেহাদের কথা বলে যেখানে রসুলাল্লাহ (দঃ) ও তার আসহাব সারা জীবন অস্ত্র হাতে যুদ্ধ কোরে সমষ্টি ও ব্যক্তিগতভাবে অপরাজেয় যোদ্ধায় পরিণত হোয়েছিলেন? বিশ্বনবী (দঃ) তার আপন হাতে গড়া জাতির সম্মুখে একটি আদর্শ প্রতিষ্ঠার যে বিশ্বজয়ী উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য স্থাপন কোরেছিলেন এবং সেই লক্ষ্য অর্জনের জন্য যে লক্ষ লক্ষ প্রাণ কোরবান করা হোয়েছিলো, সেই লক্ষ্য থেকে জাতিকে বিচ্যুত কোরে, জাতির আকীদাকে বিপরীতমুখী কোরে দিয়ে তাদের মাথায় বিছানা আর বদনা চাপিয়ে দিয়ে মসজিদে মসজিদে কারা ঘোরায়?

এই ঘৃণ্য ফেরকা, আল্লাহ(Allah)র রসুলের (দঃ) শিক্ষার বিপরীত শিক্ষায় মানুষকে অন্তর্মুখীতার কোন অবিশ্বাস্য পর্য্যায়ে নিতে যাচ্ছে তার একটা সাম্প্রতিক উদাহরণ পেলাম। আমাদের গ্রাম থেকে কয়েক মাইল দূরে একটি গ্রামের মসজিদে এই জামাতের লোকজন বসে তাদের 'ইসলাম(Islam)' তবলীগ করছিলো। এমন সময় ঐ সমজিদ থেকে মাত্র শ'খানেক গজ দূরেই একটি বাড়ীতে আগুন লেগে যায়। পাড়া-প্রতিবেশী ও গ্রামবাসীরা দৌঁড়ে এসে চেষ্টা কোরে আগুন নিভায়। কিন্তু মসজিদে বসা ঐ জামাতের লোকজন কোন পরওয়া না কোরে আল্লাহ(Allah)-রসুলের এবং "ইসলামে(Islam)র" আলোচনায় ব্যস্ত রইলো কারণ তাদের আকীদায় তারা অত্যন্ত সওয়াবের কাজ করছিলো। সওয়াবের ঐ কাজ ছেড়ে কি আর তারা মানুষের বাড়ীর আগুন নেভানোর মত দুনিয়াদারীর কাজ কোরতে যেতে পারে? কার্ল মার্কস ধর্মকে আফিম বোলেছেন- স্বয়ং মার্কসও বোধহয় ভাবতে পারেননি যে ঐ আফিম মানুষকে অমানুষিকতার কোন পর্য্যায়ে নিয়ে যেতে পারে। ঐ গ্রামের সাধারণ মানুষগুলি কার্ল মার্কসের মতবাদ না জানলেও সেদিন মসজিদের ঐ অত্যন্ত পরহেজগার 'ইসলাম(Islam)' প্রচারকারীদের বেশ কিছু উত্তম-মধ্যম দিয়ে দিয়েছিলেন।

জান্নাতী ফেরকাকে মনে রাখতে হবে যে- আজ তারা পৃথিবীতে ইসলাম(Islam) নামে প্রচলিত যে ধর্মটি দেখছেন সেটা বিশ্বনবী মোহাম্মদের (দঃ) প্রবর্তিত জীবন-বিধান ইসলামে(Islam)র বুনিয়াদ থেকে যে সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন শুধু তাই নয়, এর আকীদা ওটার ঠিক বিপরীতমুখী। কাজেই বিশ্বনবীর (দঃ) ইসলাম(Islam) যে চরিত্রের মানুষ ও জাতি সৃষ্টি কোরতো এটা তার ঠিক বিপরীত চরিত্রের মানুষ ও জাতি সৃষ্টি কোরছে। এই জন্যই পৃথিবীময় যে কিছু কিছু চেষ্টা চোলছে রাষ্ট্রীয় পর্য্যায়ে আল্লাহ(Allah)র আইন প্রতিষ্ঠার, তা কোথাও সফল হোচ্ছে না, হবে না।

আরও একটি অত্যন্ত জরুরী কথা জান্নাতী ফেরকাকে মনে রাখতে হবে এবং মনে রাখতে হবে সর্বক্ষণ। সেটা হলো এই যে, এই দ্বীনের এক নাম হোচ্ছে দ্বীনুল ফিতরাহ। ফিতরাহ শব্দের অর্থ হোচ্ছে স্বাভাবিক, প্রাকৃতিক। আল্লাহ(Allah) এই যে বিরাট, বিশাল সৃষ্টি কোরেছেন একে তিনি অসংখ্য নিয়ম-কানুন দিয়ে বেঁধে দিয়েছেন যার বাইরে যাবার কোন উপায় কারো নেই। এই নিয়মগুলির কতকগুলি বাহ্যিক, দৃশ্যমান অর্থাৎ চোখে দেখা যায়, কতকগুলি চোখে দেখা যায় না। উদাহরণস্বরূপ আগুনে হাত দিলে হাত পুড়ে যায়, এটা চোখে দেখা যায়। মাধ্যাকর্ষণ (Gravitation) পৃথিবীর সব কিছুকে সর্বক্ষণ টেনে ধোরে রাখছে এটা চোখে দেখা যায় না। মানুষের জন্য যে জীবন-বিধান, দ্বীন তিনি দিলেন এটাকেও তিনি ঐ অসংখ্য নিয়মের অধীন ও ওর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কোরে দিলেন। অর্থাৎ এই দ্বীনকে গ্রহণ ও প্রয়োগ করার না করার ফল ঐ স্বাভাবিক, প্রাকৃতিক নিয়ম মোতাবেকই হবে। আমরা মুসলিম(Muslim) আর ওরা অমুসলিম(Muslim) এই কারণে প্রাকৃতিক নিয়ম বদলাবে না। উদাহরণ দিচ্ছি-আল্লাহ(Allah) বোলছেন "তোমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে শত্রুর মোকাবেলা কর"। ঐক্যবদ্ধ হোতে তিনি আদেশ কোরছেন এই জন্য যে, তিনি প্রাকৃতিক নিয়ম এই কোরছেন যে ঐক্য বিচ্ছিন্নতার চেয়ে শক্তিশালী এবং এটা সবার জন্য এবং সর্ব সময়ে, সর্ব অবস্থায়। যদি একদল মুসলিম(Muslim) আরেক দল অমুসলিমে(Muslim)র সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়, সে সংঘর্ষ যে ধরনেরই হোক না কেন, এবং মুসলিম(Muslim)রা যদি ঐক্যবদ্ধ না হয় এবং অমুসলিম(Muslim)রা যদি ঐক্যবদ্ধ হয়, তবে তারা মুসলিম(Muslim) হওয়া সত্ত্বেও পরাজিত হবে ঐ প্রাকৃতিক নিয়মে। এই রকম অসংখ্য নিয়ম আল্লাহ(Allah) তৈরী কোরেছেন এবং ঐগুলিই তিনি কোরানে আমাদের জানিয়ে দিয়েছেন। ঐ নিয়মগুলি মুসলিম(Muslim), অমুসলিম(Muslim) নির্বিশেষে প্রযোজ্য, ঐ নিয়মগুলি অন্ধ, ওগুলো মুসলিম(Muslim) অমুসলিম(Muslim) তফাৎ দেখবে না। উম্মতে মোহাম্মদী ইস্পাতের মত ঐক্যবদ্ধ হোয়ে গিয়েছিলো। তাই সর্বক্ষেত্রে তাদের শত্রু পরাজিত হোয়েছিলো। অবশ্য আরও কারণ ছিলো এবং সেগুলোও ঐ প্রাকৃতিক স্বাভাবিক নিয়ম। যেমন দ্বন্দ্বযুদ্ধে (Single Combat) শত্রুদের বিখ্যাত যোদ্ধাদের পরাজিত করা। দ্বন্দ্বযুদ্ধে ঐক্যের প্রশ্ন আসে না, আসে ব্যক্তিগতভাবে কে বড় যোদ্ধা সেই প্রশ্ন। উম্মতে মোহাম্মদী দ্বীনুল ফিতরাহর অর্থ বুঝেছিলেন তাই এ-ও বুঝেছিলেন যে শুধু ঈমানের জোরে শত্রুর বিখ্যাত যোদ্ধাদের দ্বন্দ্বযুদ্ধে পরাজিত করা যাবে না। তাই তারা নামাযে যে ঐক্য, শৃংখলা ও নিয়মানুবর্তিতার শিক্ষা দেয় সেটা ছাড়াও অস্ত্র চালনা, দ্বন্দ্ব যুদ্ধের কৌশল ইত্যাদি শিক্ষার সাধনা কোরতেন। মনে হয় তাদের অবসর সময় প্রায় সম্পূর্ণভাবে ঐ প্রশিক্ষণেই ব্যয় হোত, কারণ তা না হোলে যারা এক সময় পারশ্যের ও রোমানদের ঐ যোদ্ধাদের সম্মুখীন হওয়ার চিন্তাও কোরতে পারতেন না, তারা কেমন কোরে প্রায় প্রতি দ্বন্দ্বযুদ্ধে তাদের শোচনীয়ভাবে পরাভূত কোরতে পেরেছিলেন যার ফলে শত্রুদের বাহিনীর মধ্যে ত্রাসের সঞ্চার হোয়েছিলো। উম্মতে মোহাম্মদীর সঙ্গে দ্বন্দ্ব যুদ্ধে যেতে তাদের বিখ্যাত যোদ্ধাদের অন্তরেও ভীতির উদ্রেক হতো।

আল্লাহ(Allah)র শেষনবীর (দঃ) উম্মাহর ইতিহাসকে বর্তমান পর্য্যন্ত গভীরভাবে লক্ষ্য করলে একে চারটি প্রধান পর্বে (Phase) ভাগ করা যায়। প্রথম পর্ব- প্রচণ্ড গতিশীল (Dynamic)। এই পর্ব রসুলাল্লাহ (দঃ) থেকে শুরু কোরে পরবর্তী ৬০/৭০ বছর পর পর্য্যন্ত। এই সময়ে এই উম্মাহ প্রকৃত মোমেন, মুসলিম(Muslim) এবং প্রকৃত উম্মতে মোহাম্মদী। এই সময়ের উম্মাহর আকীদা ছিল সঠিক, কাজেই তারা তাদের উদ্দেশ্য, উদ্দেশ্য অর্জনের প্রক্রিয়া, জীবন বিধানের গুরুত্বের পরিমাপ (Priority) ইত্যাদি সম্বন্ধে তাদের ধারণা ছিলো পরিষ্কার। তা ছিলো বোলেই ঐ অল্প সময়ের মধ্যে ঐ ছোট্ট জাতিটি তদানিন্তন পৃথিবীর দুইটি বিশ্বশক্তিকে পরাজিত কোরে অর্দ্ধেক পৃথিবীতে আল্লাহ(Allah)র দেয়া জীবন-ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা কোরতে পেরেছিলেন। দ্বিতীয় পর্ব- স্থবির বা স্থিতাবস্থা (Static)। এই পর্বে উম্মাহ তার লক্ষ্য ভুলে গেলো জাতি হিসাবে জেহাদ ও কিতাল ছেড়ে দিলো এবং পৃথিবীর অন্যান্য রাজা-বাদশাহদের মত শান-শওকতের সঙ্গে রাজত্ব কোরতে লাগলো। আদর্শ বিস্তারের ভার নিলেন ছোট ছোট দল বা ব্যক্তি। এই পর্বে এই উম্মাহ জাতি হিসেবে প্রকৃত উম্মতে মোহাম্মদী থেকে বিচ্যুত হোয়ে শুধু মুসলিম(Muslim) হোয়ে গেলো। এই স্থবির পর্বেই আবির্ভুত হোলেন বহু ফকিহ, মুফাস্সির, মোহাদ্দিস ইত্যাদিরা এবং ভারসাম্যহীন সুফীরা। এই পর্ব স্থায়ী রইলো কয়েক শতাব্দী, ইউরোপিয়ান খ্রীস্টান শক্তির কাছে সামরিকভাবে পরাজিত হোয়ে তাদের ঘৃণিত গোলামে পরিণত হওয়া পর্য্যন্ত। তৃতীয় পর্ব- পতন ও দাসত্ব (Fall & Slavery)। এই পর্বে এই জাতি দাস এবং যেহেতু আল্লাহ(Allah)র আইন-কানুন তাদের জাতীয় জীবন থেকে নির্বাসন দেয়া হলো, কাজেই এরা মোশরেক, অন্ততঃ কার্যত মোশরেক ও কাফের। এই পর্ব চলছে গত চল্লিশ বছর আগে পর্য্যন্ত। চতুর্থ পর্ব- বর্তমানে চলছে। বছর চল্লিশ আগে কতকগুলি কারণে ঐ ইউরোপিয়ান শক্তিগুলি এই উম্মাহকে বাহ্যতঃ রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক দাসত্ব থেকে মুক্তি দিলেও অর্থনৈতিকভাবে এর প্রধান ভাগ তাদের বিগত প্রভুদের করুণার ওপর বেঁচে আছে। আর তার চেয়ে বড় কথা হলো আপাতঃ মুক্তি পেলেও এই উম্মাহ তাদের বিগত প্রভূদের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক দণ্ডবিধি শিক্ষানীতি আইন-কানুন ইত্যাদি তৃতীয় পর্বের দাসত্বের সময়ের মতই চালু রেখেছে। কাজেই এই জাতি এখনও কার্যতঃ সেই মোশরেক ও কাফেরই আছে।

আজ পৃথিবীতে ইবলিসই জিতে আছে। যে অন্যায়, অবিচার, অশান্তি ও রক্তপাতের কথা মালায়েকরা আদম তৈরীর বিরুদ্ধে কারণ হিসাবে পেশ কোরেছিলেন আজ সত্যই তাই দিয়ে পৃথিবীপূর্ণ হোয়ে আছে। মোহাম্মদ (দঃ)কে দিয়ে আল্লাহ(Allah) যে জাতি সৃষ্টি করিয়েছিলেন ইবলিসকে পরাজিত কোরে পৃথিবীতে শান্তি ও বিচার প্রতিষ্ঠা কোরতে, সে জাতি এখন ইবলিসের পক্ষ হোয়ে লড়ছে। তবে কি ইবলিসের সঙ্গে আল্লাহ(Allah)র চ্যালেঞ্জে আল্লাহ(Allah) হেরে যাবেন? না- যাবেন না। এ সম্বন্ধে আল্লাহ(Allah)র সেনাপতি (দঃ) আগেই আমাদের বোলে দিয়েছেন। তিনি বোলছেন- নবুয়াতের পর আসবে নবুয়াতের আদর্শেই খেলাফত। তারপর আসবে অন্যায়কারী রাজতন্ত্র, তারপর আসবে শান-শওকত বিশিষ্ট শক্তিশালী রাজতন্ত্র এবং তারপর আবার আসবে নবুয়াতের আদর্শের খেলাফত [হাদীস-হুযায়ফা (রাঃ) থেকে- নু'মান বিন বশীর, আহমদ, মেশকাত]। ইতিহাসবিদদের বোলে দিতে হবে না যে শেষটি ছাড়া বিশ্বনবীর (দঃ) প্রত্যেকটি ভবিষ্যতবানী অক্ষরে অক্ষরে সত্য হোয়েছে। শেষটি এখনও ভবিষ্যত এবং নিঃসন্দেহে ওটাও সত্য হবে, নবুওতের আদর্শে শেষ বারের মতো আবার সারা বিশ্বে খেলাফত প্রতিষ্ঠিত হবে মানে উম্মতে মোহাম্মদী আবার তার উদ্দেশ্য ও দায়িত্ব বুঝতে পারবে এবং অতীতে যে কাজ আরম্ভ কোরেও আকীদার বিকৃতিতে অসমাপ্ত রেখেছিলো তা আবার শুরু কোরবে এবং সমাপ্ত কোরবে, সমস্ত মানব জাতিকে আল্লাহ(Allah)র দেয়া জীবন-ব্যবস্থার অধীনে এনে পৃথিবীতে শান্তি ও ন্যায় বিচার অর্থাৎ ইসলাম(Islam) প্রতিষ্ঠা কোরে জান্নাতের সুখ-শান্তি স্থাপন কোরবে। বিশ্বনবী (দঃ) আরও বোললেন- "আমার এই উম্মত বৃষ্টির মত; বৃষ্টির আরম্ভ সবচেয়ে ভালো, না শেষ ভালো বলা মুশকিল [হাদীস- আনাস (রাঃ) থেকে তিরমিযি, মেশকাত]।" অন্য একটি রেওয়াতে জাফর (রাঃ) বলছেন- রসুলুল্লাহ (দঃ) একদিন বোললেন- "সুসংবাদ! সুসংবাদ! আমার এই উম্মতের তুলনা একটি বৃষ্টির মত; এর প্রথমই ভালো না শেষ ভালো বলা যায় না। (তারপর বোললেন) এই উম্মাহ কেমন কোরে ধ্বংস হবে যার আরম্ভে আমি, মধ্যে মাহদী এবং শেষে ঈসা? কিন্তু মধ্যবর্তী সময়ের সব বিপথগামী, পথভ্রষ্ট; তারা আমার নয়, আমিও তাদের নই [হাদীস- জাফর (রাঃ) থেকে রাযীন, মেশকাত]।" হাদীস দু'টি একে অপরের সম্পূরক। তুলনাটা একদম এক-‘বৃষ্টি'। আনাস (রাঃ) প্রথমটুকু বোলে আর বলেননি, হয়ত মনে ছিলো না, কিম্বা মহানবী (দঃ) পরে ঠিক কি বোলেছিলেন সে সম্বন্ধে মনে সন্দেহ থাকায় বাকিটুকু আর বলেননি। আর জাফর (রাঃ) তার পরেরটুকু মনে রেখেছিলেন বোলেই পুরোটা বর্ণনা কোরেছেন। দেখা যাচ্ছে বিশ্বনবী (দঃ) বোলছেন তার উম্মাহ শেষ যামানায় আবার ফিরে তার নিজের হাতে গড়া জাতির মতই মহান হবে, এবং এতখানি এক রকম হবে যে তার (দঃ) নিজের পক্ষেই বলা মুষ্কিল যে কোনটা ভলো। এই সঙ্গে দেখুন মহানবী (দঃ) আর কি বোলছেন। তিনি বোলছেন এই যে প্রথম ও শেষ, এর মাঝখানে যারা থাকবে তারা তাঁর (দঃ) নয়, তিনিও তাদের নন। এরা কারা? এরা ঐ প্রথম ও শেষের মাঝখানে যারা, অর্থাৎ আমরা। তিনি (দঃ) যাদের নন, তারা যার নয় তারা কি উম্মতে মোহাম্মদী? অবশ্যই নয়। পেছনে বোলে এসেছি বর্তমানের এই বিরাট ‘মুসলিম(Muslim)' জাতি আল্লাহ(Allah), রসুল, কোরানে দৃঢ় ঈমান থাকা সত্ত্বেও ভূল ও বিকৃত আকীদার (Concept) জন্য মহানবীর (দঃ) প্রদর্শিত পথের ঠিক বিপরীতমুখী হোয়ে কার্যতঃ মোশরেক হোয়ে গেছে। এই কথা শুনে এই জাতির ধার্মিকরা কতখানি তেলে-বেগুনে চটে গেছেন তা আমাকে বোলতে হবে না। কিন্তু ওটাতো আমার কথা নয়, রসুলুল্লাহর (দঃ) কথা।

চৌদ্দশ' বছর আগে যখন শেষনবীর (দঃ) ওপর নবুয়াত অর্পিত হলো তখন থেকে পৃথিবীর আয়ুর শেষ দিনটি পর্য্যন্ত, শেষ মানুষটি পর্য্যন্ত পথ প্রদর্শক হলেন একমাত্র মোহাম্মদ (দঃ)। ঠিক যখন কোরানের প্রথম আয়াত অবতীর্ণ হলো তার আগের মুহূর্ত পর্য্যন্ত নবী ও পথ প্রদর্শক ছিলেন ঈশা (আঃ) ও সমসাময়িক অন্যান্য নবীরা (আঃ) (হযরত ঈসার (আঃ) সময়েও যে পৃথিবীর অন্যত্র আরও নবীরা ছিলেন না তা বলা যাবে না, কারণ তিনি (আঃ) ছিলেন শুধু মাত্র বনী ইসরাইলীদের জন্য নবী)। বিশ্বনবী মোহাম্মাদের (দঃ) ওপর নবুয়াত অর্পিত হবার মুহূর্ত থেকে মানব জাতির শেষ মানুষটি পর্য্যন্ত শাফায়াতকারী একমাত্র তিনি, তিনি ছাড়া আর পথ নেই মুক্তি পাবার। অন্য কোন নবী আসবেন না আমাদের জন্য শাফায়াত করার জন্য, তাদের অধিকারও থাকবে না, তাদের নিজেদের উম্মত নিয়েই তারা ব্যস্ত থাকবেন হাশরের দিন। সেই একটি মাত্র মানুষ যার শাফায়াত, সুপারিশ ছাড়া শুধু কৃত-কর্মের হিসাব দিয়ে যখন পার হবার কোন উপায় থাকবে না- সেই একমাত্র মানুষটি যদি বলেন-"তারা আমার নয়, আমি তাদের নই" তা হোলে জাহান্নাম ছাড়া আমাদের আর কোন জায়গা আছে? তারপর অন্য হাদীসে পাই-আবু ওবায়দা (রাঃ) একদিন বিশ্বনবীকে(দঃ) প্রশ্ন কোরলেন- "ইয়া রসুলুল্লাহ! আমরা যারা ইসলাম(Islam) গ্রহণ কোরলাম এবং আপনার সঙ্গে থেকে কঠিন জেহাদ কোরলাম, আমাদের চেয়েও ভাল কোন কেউ আছে?” জবাবে মহানবী (দঃ) বোললেন-"হ্যাঁ আছে। আমার পর (ভবিষ্যতে) মানুষ আসবে যারা আমাকে না দেখেও আমাকে বিশ্বাস কোরবে [হাদীস- আবু ওবায়দা (রাঃ) থেকে- আহমদ মেশকাত]”। হাদীসটি লক্ষ্য করুন। প্রশ্ন কোরছেন আর কেউ নয় বিশিষ্ট সাহাবা আবু ওবায়দা (রাঃ), যিনি নবুয়াতের প্রথম দিকেই ইসলাম(Islam) গ্রহণের পর থেকে প্রতিটি প্রত্যক্ষ ও সশস্ত্র সংগ্রামে বিশ্বনবীর (দঃ) সঙ্গে থেকে যুদ্ধ কোরেছেন, ওহোদের যুদ্ধে আল্লাহ(Allah)র নবী (দঃ) আহত হোলে তাকে রক্ষার জন্য ছুটে যান, শিরস্ত্রাণের লোহার আংটা তার (দঃ) পবিত্র মাথায় ঢুকে গেলে যিনি দাঁত দিয়ে কামড়ে সে আংটা বের কোরতে যেয়ে নিজের একাধিক দাঁত ভেঙ্গে ফেলেন, আল্লাহ(Allah)র রসুল (দঃ) চরম বিশ্বস্ততার প্রমাণ হিসাবে যাকে "আল-আমিন" উপাধিতে ভুষিত করেন (যে উপাধি তার (দঃ) নিজের উপাধি ছিলো), যিনি পরবর্তীকালে সিরিয়ায় প্রেরিত মুসলিম(Muslim) বাহিনীর সেনাপতি রূপে এন্টিয়ক, হিমস, এলেপ্পো, দামেশ্ক ইত্যাদি এই দ্বীনের অধীনে নিয়ে আসেন, এবং যেটা সবচেয়ে বড়-আশারাতুল মোবাশশারার একজন বোলে যাকে রসুলুল্লাহ (দঃ) সুসংবাদ দেন। আরও লক্ষ্য করুন- আবু ওবায়দা (রাঃ) প্রশ্নের মধ্যে নির্দিষ্ট বক্তব্যটি (Point) কি? "আমরা যারা আপনার সঙ্গে থেকে কঠিন সংগ্রাম (জেহাদ) কোরলাম"। এই প্রশ্নের মধ্যেই পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে নবীর সঙ্গে থেকে কোন কাজটাকে তার আসহাবরা সর্বশ্রেষ্ঠ কাজ মনে কোরতেন। আবু ওবায়দার (রাঃ) মত অন্যতম শ্রেষ্ঠ সাহাবা এ কথা বোললেন না যে আমরা যারা আপনার সঙ্গে থেকে নামায পড়লাম, রোযা রাখলাম, হজ্ব কোরলাম, যিকর কোরলাম, মেসওয়াক কোরলাম, কুলুখ নিলাম, জোব্বা পরলাম, দাড়ী রাখলাম, মোচ কাটলাম। কারণ তারা জানতেন আসল কাজ কোনটা, কারণ তারা ইসলাম(Islam) শিখেছিলেন স্বয়ং আল্লাহ(Allah)র রসুলের (দঃ) কাছ থেকে। কাজেই তাদের আকীদা ছিলো সঠিক এবং আকীদা সঠিক ছিলো বোলেই তাদের গুরুত্বের অগ্রাধিকার (Priority) জ্ঞানও সঠিক ছিলো। তারা এও জানতেন ঐ সশস্ত্র সংগ্রাম বাদ দিয়ে বাকি আর সব কিছুই নিখুঁতভাবে করা হলোও তাদের (রাঃ) জীবন সম্পূর্ণ ব্যর্থ হতো। যাই হোক আবু ওবায়দার প্রশ্নের জবাবে শেষ নবী (দঃ) বোলছেন "হ্যাঁ, তোমাদের চেয়েও উত্তম মুসলিম(Muslim) ভবিষ্যতে আসবে যারা আমাকে না দেখেও তোমরা যেমন আমাকে বিশ্বাস করছো এমনি কোরেই বিশ্বাস কোরবে।" প্রশ্ন হোচ্ছে বর্তমান বিশ্বের মুসলিম(Muslim)রা, আমরা কি রসুলল্লাহকে (দঃ) না দেখেও তাকে আল্লাহ(Allah)র রসুল বোলে পরিপূর্ণভাবে বিশ্বাস করি না? অবশ্যই করি, নিঃসন্দেহে করি। তা হোলে আমরা কি নবীর সাহাবাদের চেয়ে আরো উত্তম মুসলিম(Muslim)? বিশেষ কোরে আশারাতুল মোবাশশারার অন্যতম, ‘আল আমীন' ওবায়দা বিন জাররাহর (রাঃ) চেয়েও উত্তম মুসলিম(Muslim)? নিশ্চয়ই নয়। কারণ আবু ওবায়দার (রাঃ) সঙ্গে আমাদের মিল শুধু রাসুলাল্লাহকে (দঃ) বিশ্বাসের মধ্যে সীমাবদ্ধ, আর কোন মিল নেই। ভবিষ্যতে যারা আসছেন তারা আবু ওবায়দা (রাঃ) এবং অন্যান্য আসহাবদের চেয়েও উত্তম মুসলিম(Muslim) (নবীর হাদিস মোতাবেক) কারণ তাদের আকীদা সঠিক হবে, তারা ঠিক আসহাবদের মতই সংগ্রাম, সশস্ত্র সংগ্রাম কোরবেন দ্বীনকে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠার জন্য। তফাৎ শুধু এই হবে যে তাদের সঙ্গে বিশ্বনবীর (দঃ) আকাশচুম্বী ব্যক্তিত্ব থাকবে না, সেই পবিত্র উপস্থিতি থাকবে না, সেই বিরাট প্রেরণা দানকারী নেতৃত্ব থাকবে না। ঐ তফাৎটুকুর জন্যই তারা আসহাবদের চেয়েও উত্তম মুসলিম(Muslim), উত্তম উম্মতে মোহাম্মদী।

এ ছাড়াও মহানবীর (দঃ) বিভিন্ন ভবিষ্যতবাণী থেকে দেখা যায় তার উম্মাহ আবার তার আকীদা ফিরে পাবে, আবার সে ভুলে যাওয়া উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য ফিরে পাবে, আবার সে উদ্দেশ্য ও উদ্দেশ্য অর্জনের প্রক্রিয়া- প্রশিক্ষণের তফাৎ পরিষ্কার বুঝতে পারবে এবং আবার সে মহানবীর (দঃ) আসহাবদের মত ইস্পাতের মত ঐক্য নিয়ে সশস্ত্র সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে সমস্ত পৃথিবীতে আল্লাহ(Allah)র দেয়া শেষ জীবন-ব্যবস্থার অধীনে নিয়ে এসে পৃথিবীময় ন্যায় বিচার, সম্পদের ন্যায় বন্টন চালু কোরে, সমস্ত যুদ্ধ-বিগ্রহ রক্তপাত বন্ধ কোরে শান্তি, ইসলাম(Islam) প্রতিষ্ঠা কোরবে। বিশ্বনবীর (দঃ) দেয়া বৃষ্টির উপমার মাঝখানে আমরা জাহান্নামের আস্তাকুঁড়ে পড়ে থাকবো।

বর্তমানের এই বিপরীতমুখী উম্মাহ যে একদিন আবার তার প্রকৃত আকীদা ফিরে পাবে এবং তার বর্তমান গতি উল্টিয়ে আল্লাহ(Allah) ও বিশ্বনবী (দঃ) যে দিক-নির্দেশনা দিয়েছিলেন সেই দিকে চলতে শুরু কোরবে সে সম্বন্ধে কোন সন্দেহ নেই, কারণ সে কথা বিশ্বনবী (দঃ) নিজেই বোলে গেছেন। তিনি বোলছেন- পৃথিবীতে এমন কোন গৃহ বা তাঁবু থাকবে না যেখানে এই ইসলাম(Islam) প্রবেশ না কোরবে [হাদীস-মিকদাদ (রাঃ) থেকে আহমদ, মেশকাত]। অর্থাৎ সমস্ত মানবজাতি একদিন এই শেষ জীবন-ব্যবস্থা গ্রহণ কোরবে। এটা হোতেই হবে-কারণ এটা যদি না হয় তবে আল্লাহ(Allah)র সর্বশ্রেষ্ঠ রসুল (দঃ) তার ওপর আল্লাহ(Allah)র দেয়া দায়িত্ব পূর্ণ কোরতে ব্যর্থ হবেন। তা হোতেই পারে না। আল্লাহ(Allah) তাকে উপাধি দিয়েছেন রহমতুল্লিল আলামীন, মানব জাতির ওপর (আল্লাহ(Allah)র) রহমত, সে উপাধি অর্থবহ হবে না, তা হোতেই পারে না। কাজেই এমন দিন আসতেই হবে যেদিন সমগ্র মানবজাতি তার (দঃ) মাধ্যমে প্রেরিত শেষ জীবন-বিধান গ্রহণ কোরে তা তাদের সামগ্রিক জীবনে প্রয়োগ ও প্রতিষ্ঠা কোরবে এবং তার ফল হিসাবে মানুষের জীবন থেকে সমস্ত ফাসাদ (অন্যায়-অবিচার) ও সাফাকুদ্দিমা (হত্যা, রক্তপাত, যুদ্ধ) নিঃশেষ হোয়ে পরিপূর্ণ শান্তিতে (ইসলাম(Islam)) বাস কোরবে। সেটা হবে জান্নাতি ফেরকার জেহাদের ফলে, তাদের নিরবচ্ছিন্ন চেষ্টার ও শাহাদাতের ফলে। সেদিন কবে আসবে জানিনা। তবে অতি নিশ্চিত সত্য এই যে সে দিন আসবেই আসবে। প্রকৃত উম্মতে মোহাম্মদী ইবলিসের চ্যালেঞ্জে আল্লাহ(Allah)কে জয়ী করাবে এবং জয়ী করাবে নিজেদের জান-মাল কোরবান কোরে সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে, বিশ্বনবীর (দঃ) প্রকৃত সুন্নাহ পালন কোরে, তার ব্যক্তিগত কতকগুলি নিরাপদ সুন্নাহ নকল কোরে নয়। এইখানে একটি কথা আছে। বিশ্বনবীর (দঃ) হাদীস মোতাবেক সমস্ত পৃথিবীতে এই দ্বীনুল হক প্রতিষ্ঠা হবার অর্থ কি এই যে পৃথিবীতে মুসলিম(Muslim) ছাড়া আর কোন ধর্মের মানুষ থাকবে না? না, অবশ্যই তা নয়। ইনশাআল্লাহ(Allah), যখন সমস্ত পৃথিবীতে এই জীবন-বিধান প্রতিষ্ঠিত হবে, তখনও খ্রীস্টান, ইহুদী, হিন্দু, বৌদ্ধ ইত্যাদি সব ধর্মের মানুষই থাকবে। কিন্তু তারা থাকবে ব্যক্তিগতভাবে তাদের ধর্ম নিয়ে, মানব জাতির রাষ্ট্র, অর্থনীতি, দণ্ডবিধি, রাজনীতি ইত্যাদি সমস্ত পরিচালিত হবে মানব জাতির জন্য আল্লাহ(Allah)র দেয়া সংবিধানগুলির শেষ সংস্করণ কোরান ও হাদীসের ওপর ভিত্তি কোরে। এর উদাহরণ (Precedence) নজীর উম্মতে মোহাম্মদী রেখে গেছেন। অর্দ্ধেক পৃথিবীতে কোরান ও হাদীসের শাসন রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিষ্ঠা কোরলেও কারো ব্যক্তি-জীবনে তারা হস্তক্ষেপ করেননি। তাই তাদের শাসনের অধীনে হাজার হাজার খ্রীস্টান, ইহুদী, অগ্নি উপাসক ইত্যাদি বিনা বাধায় তাদের ধর্মকর্ম কোরে গেছে। শুধু তাই নয়, ঐ সব ধর্মের উপাসনালয়গুলির নিরাপত্তার ভার ছিলো ঐ উম্মতে মোহাম্মদীর ওপর যারা তা যথাযথ পালন কোরেছেন। এই ইতিহাস নিঃশংসয়ে প্রমাণ করে যে এই দ্বীনে রাষ্ট্রীয়, রাজনৈতিক, আর্থ-সামাজিক, আইন ইত্যাদি শুধু মুখ্যই নয়, ব্যক্তিগত দিকটার মূল্য অতি সামান্য। যেমন প্রমাণ করে সমষ্টিগত তৌহীদ, ব্যাভিচার, চুরির মত ব্যক্তিগত গোনাহকে মুছে দেয়, যেমন শাহাদাত সমস্ত জীবনের ব্যক্তিগত গোনাহ ভাসিয়ে দেয়।

৫টি মন্তব্য:

সত্য সবার উপর বলেছেন...

তিনি [মহানবী (দঃ)] জবাব দিলেন- তারা দল বেঁধে গোল গোল হোয়ে বসবে (হাদীস- আবু সায়ীদ আল-খুদরী (রাঃ) ও আনাস বিন মালেক (রাঃ) থেকে-আবু দাউদ, মিশকাত]।
---------
জনাব আপনার নিকট আমি এই হাদিসের রেফারেন্স নম্বর কত সেটা জানতে চাইছি কারন এটা জানা একান্ত প্রয়োজন। আশা করি আপনি সেটা জানাতে দেরি করবেন না।

সুজন বলেছেন...

(বুখারী, আরবী দিল্লীঃ ২য় খন্ড, পৃঃ ১০২৪, ১১২৮, মুয়াত্তা ইমামা মালেক, আরবী ১ম খন্ড, পৃঃ ১৩৮, আবূ দাউদ, আরবী দিল্লী, ২য় খন্ড, পৃঃ ৬৫৬, তিরমিযী, মিশকাত, আরবী, ২য় খন্ড, পৃঃ ৪৫৫, মুসলিম,মিশকাত, আরবী, ২য় খন্ড, পৃঃ ৪৬২)



হাদীস সমূহের বর্ণনাকারী হলেন আবূ সাঈদ খুদরী, আলী, আবূ হুরায়রা, আব্দুল্লাহ বিন উমার (রাঃ)। (দেখুন সহীহ আল বুখারী ৬ষ্ঠ খন্ড, হাঃ ৬৪৪৯, ৬৪৫০, ৬৪৫২, ৭০৪১ (আ.প্র.), বাংলা অনুবাদ মুয়াত্তা মালেকঃ ই.ফা. ১ম খন্ড, হাঃ নং- ৫৭৮)এবং ভিজিট করুনঃ http://www.facebook.com/notes/abdullah-al-asem/isalama-o-tabaliga-jamata/489261896541 এই লিঙ্কে

সুজন বলেছেন...

jobab pele janaben, plse

Unknown বলেছেন...

তিনি [মহানবী (দঃ)] জবাব দিলেন- তারা দল বেঁধে গোল গোল হোয়ে বসবে (হাদীস- আবু সায়ীদ আল-খুদরী (রাঃ) ও আনাস বিন মালেক (রাঃ) থেকে-আবু দাউদ, মিশকাত]।
ভাই আপনার নিকট আমি এই হাদিসের রেফারেন্স নম্বর কত সেটা জানতে চাইছি কারন এটা জানা একান্ত প্রয়োজন। আশা করি আপনি সেটা জানাতে দেরি করবেন না। ভাই হাদীস বই এর ওয়েবসাইটও সম্ভব হলে দিয়েন

Unknown বলেছেন...

জান্নাতি ফেরকা একটি।যে বললো লা এলাহা এল্লাল্লাহ সেই জান্নাতি। এর মানে হোলো মুখে বলো, অন্তরে বিশ্বাস করা এবং কাজে পরিনত করা।একমাত্র আল্লাহর খেলাফত করা।