বুধবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০১১

৬। উদ্দেশ্যচ্যুতি ও দ্বীন নিয়ে বাড়াবাড়ি

উম্মতে মোহাম্মদী ডাইনে বায়ে না চেয়ে (হানিফ) একাগ্র লক্ষ্যে তাদের কর্তব্য চালিয়ে গেলো প্রায় ৬০/৭০ বছর। এবং এই অল্প সময়ের মধ্যে তদানিন্তন পৃথিবীর এক উল্লেখযোগ্য অংশে এই শেষ ইসলামে(Islam)র প্রতিষ্ঠা কোরলো। তারপর দুর্ভাগ্যক্রমে আরম্ভ উদ্দেশ্যচ্যুতি, আকীদার বিচ্যুতি। যে কোন কিছুরই যখন উদ্দেশ্যচ্যুতি ঘটে তখন তার আর কোন দাম থাকে না, হোক সেটা জাতি, দল, সমিতি, প্রতিষ্ঠান এমন কি ব্যক্তি- যাই হোক। যে মুহূর্ত থেকে উদ্দেশ্য বিলুপ্ত হোয়ে যায় সেই মুহূর্ত থেকে যে কোন জিনিষ অর্থহীন হোয়ে যায়। রসুলাল্লাহকে (দঃ) মে'রাজ নিয়ে আল্লাহ(Allah) তাকে স্থান ও কালের বিস্তৃতি (Dimension of Time and Space) থেকে মুক্ত কোরেছিলেন। তাই অতীত ও ভবিষ্যতের যতটুকু তাকে জানিয়েছিলেন তাতেই তার উম্মাহর ভবিষ্যতের অনেক কিছুই তিনি জানতে পেরেছিলেন। তার ওফাতের ত্রিশ বছর পর খেলাফত পরিত্যক্ত হোয়ে বংশানুক্রমিক রাজতন্ত্রে পরিণত হবে তা তিনি জানতেন, বোলেও গেছেন এবং তা যে সত্য হোয়েছে তা ইতিহাস- ঠিক ত্রিশ বছর পরে একজনের ছেলে বাপের পর খলিফা পদে অধিষ্ঠিত হলো। তিনি এও বোলে গিয়েছিলেন যে, আমার উম্মাহর আয়ু ৬০ থেকে ৭০ বছর(হাদীস- আবু হোরায়রা (রাঃ) থেকে তিরমিজি ইবনে, মাজাহ)। বর্তমানের বিকৃত ইসলামে(Islam)র ধর্মীয় নেতাদের দৃষ্টিতে তাদের অর্থাৎ যেটাকে তারা উম্মতে মোহাম্মদী বোলে আত্মপ্রসাদ লাভ করেন সেটার মানুষের ব্যক্তিগত আয়ুর কথা বোঝেন। তাদের এই ভুল বোঝার কারণ হলো, অতি সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গী ও আকীদার বিকৃতি। রসুলুল্লাহ (দঃ) তার উম্মাহর আয়ু ৬০ থেকে ৭০ বছর বোলতে তিনি যে তার উম্মাহর লোকজনের ব্যক্তিগত আয়ু বোঝাননি তার প্রধান দু'টো কারণ আছে। প্রথমতঃ ৬০ থেকে ৭০ বছর আয়ু হবার মধ্যে এমনকি বিশেষত্ব আছে যা একজন নবী তার উম্মাহ সম্বন্ধে বোলবেন? তার আগের লোকজনের বা পরের লোকজনের আয়ুর থেকে তার কি তফাৎ? আমাদের মধ্যেই যে অন্যান্য ধর্মের লোকজন বাস করে তাদের আয়ুর সঙ্গে আমাদের আয়ুর কি তফাৎ? কিছুই না। তবে ও কথা তার উম্মাহর কোন বৈশিষ্ট্য হিসাবে বলার কোন অর্থ হয় না। তিনি (দঃ) যদি বোলতেন আমার উম্মাহর লোকজনের দু'টো কোরে চোখ থাকবে তবে তার কী অর্থ হোত? কিছুই না। দ্বিতীয়তঃ, আমার উম্মাহর আয়ু ৬০ থেকে ৭০ বছর এ কথা বোলে দেবার অর্থ ৬০ বছর বয়সের আগে মারা যাবে এবং ৭০ বছর বয়সের পর যারা মারা যাবে তারা আর উম্মতে মোহাম্মদী নয়। এ হোতে পারে? অবশ্যই নয়। মনে রাখবেন, একথা সাধারণ মানুষের যা মনে চায় বোলে ফেলা নয়- এ আল্লাহ(Allah)র রাসুলের (দঃ) বাণী- যার প্রতি কথা প্রতি শব্দের ব্যবহার ওজন করা, ভেবে চিন্তে বলা।

এই হাদীসের প্রকৃত অর্থ হলো- উম্মতে মোহাম্মদী হলো সেই জাতি যে জাতি তার নবীর অর্থাৎ মোহাম্মদের (দঃ) ওপর আল্লাহ(Allah)র দেয়া দায়িত্বপূর্ণ কোরতে সংগ্রাম কোরে যায়- যে কথা পেছনে বোলে এসেছি। এখানে ঐ দায়িত্ব হলো সমস্ত পৃথিবীতে এই দ্বীন প্রতিষ্ঠা করা। ঐ সংগ্রাম পরিত্যাগ কোরলেই সে জাতি আর উম্মতে মোহাম্মদী থাকে না। ইতিহাসের দিকে লক্ষ্য করুন, দেখবেন ঐ জাতি মোটামুটি ৬০ থেকে ৭০ বছর পর্য্যন্ত ঐ সংগ্রাম নিরবিচ্ছিন্নভাবে চালিয়ে গেছে। এই সময় পর্য্যন্ত এই জাতি সশস্ত্র সংগ্রাম কোরে গেছে একটিমাত্র উদ্দেশ্য নিয়ে এবং সেটা হলো বিশ্বনবীর (দঃ) সুন্নাহ পালন। যে সুন্নাহর কথা তিনি বোলেছেন- যে আমার সুন্নাহ ত্যাগ কোরবে সে আমাদের কেউ নয়। সেই প্রকৃত সুন্নাহ হলো সমস্ত পৃথিবীতে এই শেষ ইসলামকে(Islam) প্রতিষ্ঠা করার সংগ্রাম। এই দৃষ্টিভঙ্গি অর্থাৎ আকীদা বদলে গেলো ৬০/৭০ বছর পর। এই উম্মাহ তার উদ্দেশ্য ভুলে গেলো। ইসলাম প্রতিষ্ঠার বদলে যুদ্ধের উদ্দেশ্য হোয়ে গেল রাজ্য বিস্তার, সম্পদ আহরণ। জাতির উদ্দেশ্য বদলে গেলো। উদ্দেশ্যের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, প্রয়োজনীয় আর কিছুই হোতে পারে না, বাকী সব কম প্রয়োজনীয়। সেই মহাপ্রয়োজনীয় উদ্দেশ্যই যদি বদলে যায় তবে যে কোন জিনিষেরই আর কিছু থাকে না। যে উদ্দেশ্যে শ্রেষ্ঠ ও শেষনবী (দঃ) প্রেরিত হোয়েছিলেন, যে উদ্দেশ্য সাধনের জন্য তার সৃষ্ট জাতি জীবনের সব কিছু কোরবান কোরে আরব থেকে বের হোয়ে সশস্ত্র সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলো সেই উদ্দেশ্য তাদের সম্মুখ থেকে অদৃশ্য হোয়ে পরিণত হলো রাজ্যজয়ের যুদ্ধে।

দু'টি ঘটনার মধ্যে এই বিরাট তফাৎটা প্রকট হোয়ে ফুটে উঠেছে। একটি খলিফা ওমরের (রাঃ) সময়ে অন্যটা একজন উমাইয়া খলিফার সময়ে। ওমরের (রাঃ) সময়ে মিশরের শাসনকর্তা হাইয়ান ইবনে শারিহ খলিফাকে লিখলেন- আমীরুল মোমেনীন! অমুসলিমরা স্বেচ্ছায় এত সংখ্যায় ইসলাম গ্রহণ কোরছে যে, জিজিয়া আদায় অনেক কমে গেছে। এখন কি করা? ওমর (রাঃ) রাগান্বিত হোয়ে জবাব দিলেন- জিজিয়া আদায় কমে যাচ্ছে বোলে অভিযোগ কোরতে তোমার একজন মুসলিম(Muslim) হিসাবে লজ্জা করলো না? তোমার মনে রাখা উচিৎ যে, রসুলুল্লাহ (দঃ) কর আদায় করার জন্য প্রেরিত হননি (সয়ুতি, ইদ্রীস আহমদ এবং decisive moments in the History of Islam- Inan)। ঠিক এমনি অভিযোগ এসেছিল একজন গভর্নরের কাছ থেকে এক উমাইয়া খলিফার কাছে। অমুসলিমরা মুসলিম(Muslim) হোয়ে যাচ্ছে, জিজিয়া দেয়া বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বোলে রাজকোষে সম্পদ কমে গেছে। ঐ খলিফা আদেশ দিলেন অমুসলিমদের ইসলাম গ্রহণ বন্ধ কোরে দাও। একই অভিযোগের দু'টি বিপরীতমুখী উত্তর। অভিযোগ শুনে ওমর (রাঃ) খুশী হোয়ে ছিলেন, যদি জিজিয়া আদায় একেবারে বন্ধ হোয়ে যেতো তাহলে তিনি সবচেয়ে বেশী খুশী হোতেন, কারণ তার মানে ঐ অঞ্চলের সমস্ত অমুসলিম মুসলিম(Muslim) হোয়ে গেছে, মুসলিম(Muslim) উম্মাহ উদ্দেশ্য পূরণে তাদের প্রিয় নবীর (দঃ) আরদ্ধ কাজে আরও একটু অগ্রসর হোয়েছে। আর ঐ উমাইয়া খলিফার সম্মুখে তখন আর সে উদ্দেশ্য নেই। তার জাতিরও সে উদ্দেশ্য নেই। উদ্দেশ্য বদলে গিয়ে হোয়ে গেছে রাজত্ব ও আনুসঙ্গিক শান-শওকত। কাজেই তখন আর ঐ জাতি উম্মতে মোহাম্মদী নেই। কারণ উম্মতে মোহাম্মদীর উদ্দেশ্য ও তার পরের ঐ জাতির উদ্দেশ্য সম্পূর্ণ ভিন্ন।

ইতিহাস দেখুন, পরিষ্কার দেখতে পাবেন যে, ঐ উদ্দেশ্যচ্যুতি বা পরিবর্তন ঘটেছে ভবিষ্যতদ্রষ্টা বিশ্বনবীর (দঃ) ৬০ থেকে ৭০ বছর পর। লক্ষ্য কোরলে আরও একটি ব্যাপার দেখতে পাবেন। সেটা হলো রসুলাল্লাহর (দঃ) কাছ থেকে যারা সরাসরি ইসলাম শিক্ষা কোরেছিলেন অর্থাৎ আসহাব তারা কখনই ঐ লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হননি। বিচ্যুতি এলো তারা সবাই পৃথিবী থেকে চলে যাবার পর। যেহেতু উদ্দেশ্যের পরিবর্তন বা চ্যুতি হলো কাজেই ঐ জাতি আর উম্মতে মোহাম্মদী রোইলনা এবং আজ পর্য্যন্তও উম্মতে মোহাম্মদী নয়। তবে একথা মনের রাখতে হবে যে, আমি জাতি হিসাবে উম্মতে মোহাম্মদী বোলছি। ৬০/৭০ বছর পর থেকে এই উম্মাহ জাতি হিসাবে উম্মতে মোহাম্মদী রইলো না কিন্তু ব্যক্তি ও দলগতভাবে অনেক লোকই রইলেন যারা ইসলামে(Islam)র সর্বপ্রধান লক্ষ্য ও রসুলাল্লাহর (দঃ) সুন্নাহ ভুলে গেলেন না। সাধারণ মুজাহিদ ও কিছু কিছু সেনাপতির আকীদা ঠিকই ছিলো যারা উর্দ্ধতন নেতৃত্বের আকীদা বিকৃতি সত্ত্বেও নিজেদের আকীদা ঠিক রেখে জেহাদ চালিয়ে গেলেন, যার ফলে ঐ বিকৃত আকীদার খলিফাদের সময়েও ইসলাম আরো বিস্তৃত হোয়েছে।

কিন্তু ঐ উদ্দেশ্য চ্যুতির ফল ক্রমশঃ আরও ভয়াবহ হোতে আরম্ভ করলো। আমি আগেও বোলে এসেছি, উদ্দেশ্যের, আকীদার চেয়ে বড় আর কিছুই নাই, উদ্দেশ্য না থাকলে আর সব কিছুই অর্থহীন। একদল লোক যদি একত্র হোয়ে কোন নির্দিষ্ট স্থানে যাওয়ার জন্য রওনা হয় তবে যতক্ষণ তারা গন্তব্যস্থানের কথা মনে রাখবে ততক্ষণ তারা একত্রই থাকবে। যদি কোন কারণে তারা তাদের নির্দিষ্ট গন্তব্যস্থল কি তা ভুলে যায় তবে কি হবে? নিশ্চিত বলা যায় যে, তারা আর একত্রিত থাকবে না। এক এক জন এক একদিকে চলতে শুরু কোরবে, কেউ চলবেই না, বোসে পড়বে, কেউ একদম অন্য কোন কাজ কোরতে শুরু কোরবে। এই জাতির ঠিক সেই অবস্থা হলো তাদের উদ্দেশ্য ভুলে যাবার ফলে, আকীদা নষ্ট হবার ফলে। এখানে লক্ষ্য করার বিষয় হলো এই যে, এই সময় থেকে এই জাতির মধ্যে যে বিকৃতি আসতে শুরু হলো সেই সব বিকৃতি পূর্বতন প্রত্যেক নবীর (আঃ) জাতির মধ্যে আবির্ভাব হোয়েছে এবং সেই জাতিগুলিকে ধ্বংস কোরে ফেলেছে। আল্লাহ(Allah) তার কোরানে আর রসুল (দঃ) তার হাদীসে বারবার ঐ বিকৃতিগুলি থেকে বাঁচার জন্য সাবধান কোরে দিয়েছেন। কিন্তু তা সত্বেও এই জাতি ঠিক ঐ ভুলগুলিই কোরতে আরম্ভ করলো আর তার ফলে ধ্বংস হোয়ে গেলো।

মহানবীর (দঃ) ৬০/৭০ বছর পর থেকে প্রধানতঃ কি কি বিকৃতি প্রবেশ কোরে এই সর্বশ্রেষ্ঠ জাতিকে নিকৃষ্টতম জাতিতে পরিণত করলো তা একটা একটা কোরে উপস্থিত কোরছি। কিন্তু সর্বক্ষণ মনে রাখতে হবে যে, সমস্ত বিকৃতির আসল মূল হলো উদ্দেশ্যচ্যুতি, লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়া, আকীদা বদলে যাওয়া। যতদিন এই উম্মাহর সামনের উদ্দেশ্য লক্ষ্য ঠিক ছিলো ততদিন তারা একাগ্র লক্ষ্যে (হানিফ) সামনে এগিয়ে গেছে। ছোটখাট কোন কিছুই তাদের দৃষ্টি ঘোরাতে পারেনি। কিন্তু যখন লক্ষ্য হারিয়ে গেলো তখন চলাও থেমে গেলো, চারদিকের নানা কিছু তখন চোখে পড়লো এবং তাই নিয়ে তারা মশগুল হোয়ে গেলেন, মহা কর্তব্য ভুলে গেলেন এবং ফলে বিভিন্ন বিকৃতি ঢুকে তাদের ধ্বংস কোরে দিলো।

প্রথম বিকৃতিঃ অতি বিশ্লেষণ, দ্বীন নিয়ে বাড়াবাড়ি। পূর্ববর্তী প্রত্যেক নবী দুনিয়া থেকে বিদায় নেবার পর তাদের জাতির যার যার দ্বীনকে নিয়ে সেটার ব্যাখ্যা, অতি ব্যাখ্যা, আরও অতি ব্যাখ্যা কোরতে শুরু কোরেছে। যার ফলে ঐ বিভিন্ন ব্যাখ্যার ওপর ভিত্তি কোরে বিভিন্ন মতামত গড়ে উঠেছে। দ্বীনের আসল উদ্দেশ্য, তার মর্মবাণী ভুলে যেয়ে ছোটখান বিভিন্ন ব্যবস্থা, ফতওয়া নিয়ে মতান্তর শুরু হোয়ে গেছে এবং কালে বহুভাগে ভাগ হোয়ে জাতিগুলির ঐক্য নষ্ট হোয়ে জাতি ধ্বংস হোয়ে গেছে। এর যেন পুনঃসংগঠন এই শেষ দ্বীনেরও না হয় সেজন্য আল্লাহ(Allah) সাবধান কোরে দিলেন এই বোলে যে, দ্বীন নিয়ে বাড়াবাড়ি করোনা(কোরান- সূরা আন-নিসা- ১৭১, সূরা আল-মায়েদা- ৭৭)। দ্বীন নিয়ে বাড়াবাড়ি করার এই নিষেধের অর্থ কি? এর মানে কি এই যে, খুব ধার্মিক হয়োনা বা দ্বীনকে ভালোভাবে অনুসরণ কোরোনা, বা বেশী ভাল মুসলিম(Muslim) হবার চেষ্টা করোনা? অবশ্যই তা হোতে পারে না। এই বাড়াবাড়ির অর্থ , ঐ অতি বিশ্লেষণ, জীবন বিধানের আদেশ নিষেধগুলিকে নিয়ে সেগুলোর সুক্ষ্ম থেকে সূক্ষ্মতর বিশ্লেষণ। যদি জাতির সম্মুখ থেকে তাদের লক্ষ্যস্থল, গন্তব্যস্থল, উদ্দেশ্য অদৃশ্য না হোয়ে যেতো তবে তারা আগের মতই এক দেহ এক প্রাণ হোয়ে তাদের লক্ষ্য অর্জন করার জন্য আপ্রাণ সংগ্রাম চালিয়ে যেতেন। দুর্ভাগ্যক্রমে তা হয়নি। লক্ষ্য তারা ভুলে গেলেন এবং লক্ষ্য ভুলে যাওয়ার ফলেই ঐ সংগ্রামের কর্মশক্তি মোড় ঘুরে অন্য কাজে ব্যাপৃত হোয়ে পড়লো। যে জীবন বিধানকে সমস্ত পৃথিবীময় প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব দিয়ে আল্লাহ(Allah) তার শেষ নবীকে (দঃ) পাঠিয়েছিলেন এবং যে দায়িত্ব তিনি তার উম্মাহর ওপর অর্পণ কোরে চলে গিয়েছিলেন, উম্মাহও তা উপলব্ধি কোরে জীবনপণ কোরে এই সেই সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলো, এক মহাশক্তিশালী বোমের মত ফেটে আটলান্টিকের তীর থেকে ৬০/৭০ বছরের মধ্যে চীনের সীমান্ত পর্য্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছিলো, সেই জীবন বিধানকে প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম ছেড়ে দিয়ে ঐ জাতি ঐ বিধানগুলির সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বিশ্লেষণ আরম্ভ কোরে দিলো।

আদম (আঃ) থেকে শুরু কোরে শেষনবী (দঃ) পর্য্যন্ত আল্লাহ(Allah) যে জীবন বিধান মানুষের জন্য পাঠিয়েছেন, স্থান, কাল পাত্র ভেদে সেগুলোর নিয়ম-কানুনের মধ্যে প্রভেদ থাকলেও সর্বক্ষণ ভিত্তি থেকেছে একটি মাত্র। সেটা হোচ্ছে একেশ্বরবাদ (Monothism), তওহীদ, একমাত্র প্রভু, একমাত্র বিধাতা (বিধানদাতা) আল্লাহ(Allah)। যার আদেশ নির্দেশ, আইন-কানুন ছাড়া অন্য কারো আদেশ, নির্দেশ, আইন-কানুন কিছুই না মানা। একেই আল্লাহ(Allah) কোরানে বোলছেন দ্বীনুল কাইয়্যেমা। আল্লাহ(Allah) মানুষের কাছে এইটুকুই মাত্র চান। কারণ তিনি জানেন যে, মানুষ যদি সমষ্টিগতভাবে তিনি ছাড়া অন্য কারো তৈরী আইন কানুন না মানে, শুধু তারই আইন-কানুন মানে তবে শয়তান তার ঘোষিত উদ্দেশ্য অর্থাৎ মানুষকে দিয়ে অশান্তি, অন্যায় আর রক্তপাত অর্জনে ব্যর্থ হবে এবং মানুষ সুবিচারে, শান্তিতে (ইসলামে(Islam)) পৃথিবীতে বসবাস কোরতে পারবে- অর্থাৎ আল্লাহ(Allah) যা চান। কত সহজ। কাইয়্যেমা শব্দটা এসেছে কায়েম থেকে যার অর্থ চিরন্তন, শাশ্বত, সনাতন। আল্লাহ(Allah) এই দ্বীনুল কাইয়্যেমার কথা বোলে বোলছেন- এর বেশী তো আমি আদেশ করিনি (কোরান- সূরা আল-বাইয়েনাহ্- ৫)।'এর বেশী তো আমি আদেশ করিনি' তিনি বোলছেন এই জন্য যে, তিনি জানেন যে, ঐটুকু করলেই অর্থাৎ তার বিধান ছাড়া অন্য কোন বিধান মানুষ না মানলেই মানব জাতির মধ্যে পূর্ণ শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে। এই সামান্য দাবীটুকুই তিনি মানুষের কাছে আদম থেকে আজ পর্য্যন্ত কোরে আসছেন। পূর্ববর্তী বিকৃত জীবন-ব্যবস্থাগুলিতেও আল্লাহ(Allah)র দাবী ছিলো ঐ সহজ সরল দাবী- দ্বীনুল কাইয়্যেমা, তওহীদ। ভারতীয় ধর্মের অনুসারীদের তারা কোন ধর্মে বিশ্বাসী জিজ্ঞাসা কোরলে তার জবাব দেবেন সনাতন ধর্ম। সনাতন এবং কাইয়্যেমা একার্থবোধক- যা চিরদিন প্রবাহমান, চিরন্তন ও শাশ্বত, এবং তা ঐ তওহীদ। এর গুরুত্ব এত বেশী যে একে আল্লাহ(Allah) আমাদের জন্য শুধু প্রতি সালাতে নয় প্রতি রাকাতে অবশ্য কোরে দিয়েছেন সূরা ফাতেহার মধ্যে। "আমাদের সেরাতুল মুস্তাকীমে চালাও" মুস্তাকীম অর্থ সহজ, সরল ও শাশ্বত।

এইখানে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কথা এসে যায়, তাহলো আল্লাহ(Allah) কোরানে আমাদের বোলে দিলেন যে, আমি তোমাদের একটি ভারসাম্যযুক্ত জাতি বানালাম। এই ভারসাম্যের সাথে সেরাতুল মুস্তাকীম ও দ্বীনুল কাইয়্যেমা সংশ্লিষ্ট ও সম্বন্ধ (Related, connected)। সহজ, সরল চিরন্তন ছাড়াও সেরাতুল মুস্তাকীম শব্দের এক অর্থ হলো, মধ্যবর্তী, মাঝামাঝি- ঐ ভারসাম্যেরই অন্য অর্থ। আল্লামা ইউসুফ আলী এর অনুবাদ কোরেছেন ১) Straight (সরল) ২) Standard (মাঝামাঝি, মধ্যপন্থী) ৩) Definite (স্থির, নিশ্চিত) ও permanent (চিরস্থায়ী শাশ্বত) (দেখুন আল্লামা ইউসুফ আলীর কোরানের ইংরেজী অনুবাদ নোট নং- ৬২২৬)।

Standard অর্থটির দিকে লক্ষ্য করুন। এর অর্থ হলো মধ্যবর্তী, মাঝামাঝি, মানে সর্বোৎকৃষ্টও নয়, সর্বনিম্নও নয়, সেই মধ্যপন্থী, ভারসাম্যযুক্ত। অর্থাৎ দ্বীনুল কাইয়্যেমা, সেরাতুল মুস্তাকীম আল্লাহ(Allah) আমাদের দিয়ে আসছেন মানুষ সৃষ্টির প্রথম থেকে যা হোচ্ছে- ১) অত্যন্ত সহজ ও সরল, ২) মধ্যপন্থী ৩) চিরস্থায়ী শাশ্বত। এবং যে জাতি একে গ্রহণ কোরবে সে জাতি হবে ভারসাম্যযুক্ত (উম্মাতাও ওয়াসাতা) (কোরান- সূরা আল-বাকারা- ১৪৩)। একটি জাতির মধ্যে চালাক ও বোকা, সর্ব রকম মানুষই থাকবে, সব নিয়েই একটি জাতি। সুতরাং লক্ষ্য যদি জটিল হয় তবে সবার তা বোধগম্য হবে না। জাতির যে অংশটুকু শিক্ষিত ও মেধাবী, শুধু তাদেরই বোধগম্য হবে- সমগ্র জাতি একতাবদ্ধ হোয়ে ঐ লক্ষ্য অর্জনের সংগ্রাম কোরতে পারবে না। তাই আল্লাহ(Allah) ও তার রসুল (দঃ) যে জাতি সৃষ্টি কোরলেন তার ভিত্তি কোরলেন অতি সহজ ও সরল-তওহীদ, একমাত্র প্রভু হিসাবে তাকেই স্বীকার করে নেওয়া। এর নাম দিলেন দ্বীনুল কাইয়্যেমা ও সেরাতুল মুস্তাকীম, চিরন্তন, সহজ সরল পথ। এইটাই যে সব কিছু তা বোঝাবার জন্য অবশ্য কর্তব্য (ফরজ) কোরে দিলেন প্রতি রাকাতে ঐ সেরাতুল মুস্তাকীমে চালাবার প্রার্থনা করা, যাতে প্রতিটি মুসলিমের সর্বক্ষণ এ সহজ সরল পথের কথা মনে থাকে এবং ঐ সহজ সরলতার ভিত্তি ছেড়ে জটিলতার দিকে সরে না যায়। এবং জাতির লক্ষ্যও স্থির কোরে দিলেন অতি সহজ ও সরল-ঐ দ্বীনুল কাইয়্যেমাকে, সেরাতুল মুস্তাকীমকে সংগ্রামের মাধ্যমে সমস্ত পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা কোরে পৃথিবীতে শান্তি (ইসলাম) প্রতিষ্ঠা করা। দুটোই বুঝতে সহজ। সহজ বোলেই বিশ্বনবীর (দঃ) সৃষ্ট অত্যন্ত অশিক্ষিত জাতিটি, যার মধ্যে লেখাপড়া জানা লোকের সংখ্যা হাতে গোনা যেতো তারাও ভিত্তি ও লক্ষ্য পরিষ্কারভাবে বুঝতে পেরেছিলেন এবং তা থেকে চ্যুত হননি। এবং তারা সফলভাবে আল্লাহ(Allah) রসুলের (দঃ) উদ্দেশ্য সিদ্ধির পথে বহু দূর অগ্রসর হোয়েছিলেন। কিন্তু অতি বিশ্লেষণের বিষময় ফলে ঐ দ্বীনুল কাইয়্যেমা, সেরাতুল মুস্তাকীম হোয়ে গেলো অত্যন্ত জটিল, দুর্বোধ্য এক জীবন-বিধান, যেটা সম্পূর্ণ শিক্ষা করাই মানুষের এক জীবনের মধ্যে সম্ভব নয়- সেটাকে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম তো বহু দূরের কথা। জাতি লক্ষ্যচ্যুত তো আগেই হোয়ে গিয়েছিলো, তারপর ফকিহ ও মুফাস্‌সিরদের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বিশ্লেষণের ফলে জাতির মধ্যে ভয়াবহ বিভেদ সৃষ্টি হোয়ে, বিভিন্ন মাযহাব ও ফেরকা সৃষ্টি হোয়ে যে অনৈক্য সৃষ্টি হলো তার ফলে পুনরায় একতাবদ্ধ হোয়ে সংগ্রাম করার সম্ভাবনাও শেষ হোয়ে গেলো। এই জন্য রসুলুল্লাহ (দঃ) বোলেছিলেন আমার উম্মাহর আয়ু ৬০/৭০ বছর।

অতি বিশ্লেষণ কোরে দ্বীনের প্রাণশক্তি বিনষ্ট কোরে দেওয়ার কাজটা নতুন নয়, আমাদের পণ্ডিতরাই শুধু এ কাজ করেননি। পূর্ববর্তী দ্বীনগুলোতেও অতি-ধার্মিকরা গজিয়েছেন ও পাণ্ডিত্য জাহির কোরে তাদের দ্বীনগুলোকেও ধ্বংস কোরে দিয়েছেন, এ সত্য রসুলাল্লাহর (দঃ) হাদীস থেকে পেছনে দেখিয়ে এসেছি। এ ব্যাপারে আল্লাহ(Allah) কোরানে একটি উদাহরণ দিয়ে আমাদের বুঝিয়ে দিচ্ছেন তার নবী মূসার (আঃ) জীবনী থেকে যেখানে আল্লাহ(Allah) বনী ইসরাইলদের একটি গরু কোরবাণী কোরতে আদেশ দিলেন। মূসা (আঃ) যখন এই কোরবাণীর আদেশ বনী ইসরাইলদের জানিয়ে দিলেন তখন যদি তারা মোটামুটি ভাল একটি গরু এনে কোরবাণী কোরে দিতো তাহলে তাতেই কাজ হোয়ে যেতো। কারণ কোরবাণীর গরুটা কেমন হবে সে সম্বন্ধে আল্লাহ(Allah) কোন শর্ত দেননি। কিন্তু আল্লাহ(Allah) কোরানে বোলছেন- বনী ইসরাইল তা করেনি। তারা মুসার (আঃ) মাধ্যমে আল্লাহ(Allah)কে প্রশ্ন কোরতে লাগলো- গরুটার বয়স কত হবে, গায়ের রং কি হবে, সেটা জমি চাষের জন্য শিক্ষিত কিনা, জমিতে পানি দেয়ার জন্য শিক্ষিত কিনা, ওটার গায়ে কোন খুঁত থাকতে পারবে কিনা, ইত্যাদি ইত্যাদি(কোরান- সূরা আল-বাকারা- ৬৭-৭১)। তারা প্রশ্ন কোরে যেতে লাগলো আর আল্লাহ(Allah) তাদের প্রত্যেক প্রশ্নের জবাব দিতে লাগলেন। তারপর যখন প্রশ্ন করার মত আর কিছুই রইলো না তখন স্বভাবতঃই ঠিক অমন একটি গরু পাওয়া দূরুহ ব্যাপার হোয়ে দাঁড়ালো। একটা সহজ সরল আদেশ- "একটা গরু কোরবাণী কর" এটাকে খুচিয়ে খুচিয়ে এমন কঠিন কোরে ফেলা হলো যে, অমন গরু আর পাওয়া যায় না। এই জাতির মহা পণ্ডিতরাও বিশ্বনবীর (দঃ) ওফাতের ৬০/৭০ বছর পর ঠিক ঐ কাজটাই মহা ধুমধামের সাথে আরম্ভ কোরলেন। দু'টি মাত্র আদেশ- আমাকে ছাড়া কাউকে মানবে না, আমার দেয়া জীবন-বিধান ছাড়া আর কোন বিধান মানবেনা, আর এই জীবন-বিধানকে সংগ্রামের মাধ্যমে সমস্ত পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা কোরবে। সহজ, সরল দু'টি আদেশ। বিশ্বনবীর (দঃ) উম্মাহ ইস্পাাতের মত কঠিন ঐক্য নিয়ে ঐ কাজ কোরতে আরব থেকে বের হোয়ে অবিশ্বাস্য ইতিহাস সৃষ্টি কোরেছিলেন। পূর্ববর্তী দ্বীনের পণ্ডিতদের মত এ উম্মাহর পণ্ডিতরাও একে ধ্বংস কোরে দিলেন।

এখানে একটা কথা পরিষ্কার করা দরকার। আমি ফিকাহ বা ফকিহদের বিরুদ্ধে বোলছি না। কারণ কোরান ও হাদীস থেকে জীবন বিধানের নির্দেশগুলি একত্র ও বিন্যাস কোরলে যা দাঁড়ায় তাই ফিকাহ- অর্থাৎ ফিকাহ ছাড়া কোন মুসলিমের জীবন-ব্যবস্থা অনুসরন অসম্ভব। আমার বক্তব্য ঐ ফিকাহর অতি বিশ্লেষণ, সুক্ষ্মাতিসুক্ষ্ম বিশ্লেষণ যা আল্লাহ(Allah) ও তার রসুল (দঃ) কঠোরভাবে নিষেধ কোরে দিয়েছেন। আমাদের ফকিহরা যদি কোরান-হাদীসের মৌলিক আদেশ নিষেধগুলিকে সুন্দরভাবে শ্রেণী বিন্যাস কোরেই ক্ষান্ত হোতেন এবং লিখতেন যে এই-ই যথেষ্ট- এরপর আর অতিরিক্ত বিশ্লেষণে যেও না, কারণ আল্লাহ(Allah) বোলেছেন দ্বীন নিয়ে বাড়াবাড়ি কোরো না এবং রসুলাল্লাহও (দঃ) নিষেধ কোরেছেন, তাহলে তাদের কাজ হতো অতি সুন্দর। ইসলামকে(Islam) প্রকৃতভাবে সেবা করা হতো, এবং আল্লাহ(Allah)র কাছ থেকে তারা পেতেন প্রচুর পুরষ্কার। কিন্তু দুর্ভাগ্য হোচ্ছে তারা তা করেননি। তারা আজীবন কঠিন পরিশ্রম কোরে আল্লাহ(Allah)র আদেশ নিষেধগুলি ও বিশ্বনবীর (দঃ) কাজ ও কথাগুলিকে সুক্ষ্ম থেকে সুক্ষ্মতম বিশ্লেষণ কোরতে কোরতে এমন পর্য্যায়ে নিয়ে গেছেন যে সাধারণ মানুষের পক্ষে তা পূর্ণভাবে পালন করা প্রায় অসম্ভব এবং কেউ চেষ্টা কোরলে তার জীবনে অন্য আর কোন কাজ করা সম্ভব হবে না, এ দ্বীনকে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের তো প্রশ্নই আসে না। কারণ ফকিহরা তাদের ক্ষুরধার প্রতিভাকে কাজে লাগিয়ে প্রত্যেকে হাজার হাজার মাসলা-মাসয়েল সৃষ্টি কোরেছেন। প্রধান প্রধান গণের এক এক জনের সিদ্ধান্তের সংখ্যা কয়েক লক্ষ। জাতি ঐ মাসলা-মাসায়েলের মাকড়সার জালে জড়িয়ে পক্ষাঘাতগ্রস্থ হোয়ে গেছে, স্থবির হোয়ে গেছে।

এই পঙ্গুত্ব, স্থবিরত্ব থেকে জাতিকে রক্ষা করার জন্য আল্লাহ(Allah) এই দ্বীনকে কোরলেন অতি সহজ ও সরল, সেরাতুল মুস্তাকীম, দ্বীনুল কাইয়্যেমা। কোন বিষয়েই আল্লাহ(Allah) ছাড়া কারু বিধান, কারু নিয়ম-কানুন মানি না, শুধু এইটুকুমাত্র। এ যে কত গুরুত্বপূর্ণ, কত জরুরী তা বোঝাবার জন্য বোললেন, এর বেশী তো আমি তোমাদের কাছে চাইনি(কোরান- সূরা আল বাইয়েনা- ৫)। এতেও সন্তুষ্ট না হোয়ে তিনি সেরাতুল মুস্তাকীমকে প্রতি রাকাতে অবশ্য পাঠ্য কোরে দিলেন, যাতে প্রতিটি মুসলিম(Muslim) মনে রাখে যে, আমার দ্বীন অতি সহজ, অতি সরল, আমি যেন কখনও একে জটিল না কোরে ফেলি, জটিল কোরে ফেললে আমার দ্বীনের সর্বনাশ হোয়ে যাবে। এই সেরাতুল মুস্তাকীমের সহজতার, সরলতার মহা গুরুত্ব উপলব্ধি কোরে রসুলাল্লাহ (দঃ) এক হাদীসে বোললেন- দ্বীন সহজ, সরল (সেরাতুল মুস্তাকীম) একে নিয়ে যারা বাড়াবাড়ি কোরবে তারা পরাজিত হবে। অন্য হাদীসে বোললেন, জাতি ধ্বংস হোয়ে যাবে(হাদীস- আবু হোরায়রা (রাঃ) থেকে মুসলিম(Muslim))। এই সাবধান বাণীতেও আশ্বস্ত না হোতে পেরে বিশ্বনবী (দঃ) আরও ভয়ংকর শাস্তির কথা শোনালেন। বোললেন- কোরানের কোন আয়াতের অর্থ নিয়ে বিতর্ক কুফর। এবং কোন অর্থ নিয়ে মতান্তর উপস্থিত হোলে আমাদেরকে কি কোরতে হবে তারও নির্দেশ তিনি আমাদের দিচ্ছেন। বোলছেন, কোন মতান্তর উপস্থিত হোলে তা আল্লাহ(Allah)র ওপর ছেড়ে দাও(হাদীস- মুসলিম(Muslim), মেশকাত)। অর্থাৎ দ্বীনের ব্যাপারে যখনই মতান্তর উদ্ভব হবে তখনই চুপ হোয়ে যাবে, কোন তর্ক-বিতর্ক কোরবে না। অর্থাৎ বিতর্কে যেয়ে কুফরি কোরবে না, এবং যে বিষয়ে বিতর্কের অবকাশ নেই সেই সেরাতুল মুস্তাকীম, দ্বীনুল কাইয়্যেমাকে আকড়ে ধোরে থাক, এখানে লক্ষ্য করার একটা বিষয় আছে, দ্বীনের ব্যাপার নিয়ে বিতর্ককে আল্লাহ(Allah)র রসুল (দঃ) কোন পর্য্যায়ের গুনাহ, পাপ বোলে আখ্যায়িত কোরছেন। চুরি নয়, হত্যা নয়, ব্যভিচার নয়, বোলছেন- কুফর। যার চেয়ে বড় আর গোনাহ নেই, শুধু তাই নয় যা একজনকে এই দ্বীন থেকেই বহিষ্কৃত কোরে দেয়। এতবড় শাস্তি কেন? শেষ নবীর (দঃ) হাদীস থেকেই এর উত্তর পাওয়া যাবে। তিনি বোলছেন- তোমরা কি জান, ইসলামকে(Islam) কিসে ধ্বংস কোরবে? এই প্রশ্ন কোরে তিনি নিজেই জবাব দিচ্ছেন- শিক্ষিতদের ভুল, মোনাফেকদের বিতর্ক এবং নেতাদের ভুল ফতোয়া (হাদীস- মেশকাত )। যে কাজ ইসলামকে(Islam)ই ধ্বংস কোরে দেয় সে কাজের চেয়ে বড় গোনাহ আর কি হোতে পারে! তাই বিশ্বনবী (দঃ) এই কাজকে কুফ্‌রী বোলে সঠিক কথাই বোলছেন।

এই জাতির মহা দুর্ভাগ্য। আল্লাহ(Allah)র ও তার রসুলের (দঃ) অতসব কঠোর সতর্কবাণী এই উম্মাহর পণ্ডিতদের কিছুই মনে রোইল না। তারা সারা জীবন অক্লান্ত পরিশ্রম কোরে কোরান-হাদীসের সুক্ষ্মাতিসুক্ষ্ম বিশ্লেষণ কোরে এক বিরাট ফিকাহ শাস্ত্র গড়ে তুললেন। এদের মণীষার, প্রতিভার, অধ্যবসায়ের কথা চিন্তা কোরলে শ্রদ্ধায় মাথা নত হোয়ে আসে, কিন্তু তাদের ঐ কাজের ফলে এই উম্মাহ ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হোয়ে ধ্বংস হোয়ে গেলো। শত্রুর কাছে পরাজিত হোয়ে গেলো।

ফিকাহর যে অতি বিশ্লেষণ করা হোয়েছে তার পক্ষে একটি যুক্তি আছে। এবং সে যুক্তি আমি সম্পূর্ণ স্বীকার করি। সেটা হোচ্ছে ইসলামে(Islam)র আইন-কানুনের, বিচারালয়ে ব্যবহার। অর্থাৎ বিচারালয়ে এই আইনের সুক্ষ্ম প্রয়োগ যাতে কোন নিরপরাধ শাস্তি না পায়। অ-ইসলামিক যেসব আইন বর্তমানে পৃথিবীতে চালু আছে, অর্থাৎ মানুষ রচিত আইনগুলি, এগুলিও সুক্ষ্মভাবে বিশ্লেষণ কোরেই বিচরালয়গুলিতে বিচার করা হয়- উদ্দেশ্য সেই একই- সুবিচার। কিন্তু সে জন্য কোন দেশেই জ্ঞানের অন্যান্য সমস্ত শাখাকে অপ্রয়োজনীয় ঘোষণা কোরে সেই দেশের সংবিধানের এবং আইনের সুক্ষ্ম বিশ্লেষণকে সকলের জন্য বাধ্যতামূলক কোরে দেয়া হয়নি। শুধু যারা আইনজ্ঞ হোতে চান, আইনজীবি হোতে চান তারা স্ব-ইচ্ছায় ঐ বিষয় নিয়ে পড়াশুনা করেন, ডিগ্রী নেন এবং তারপর আদালতে যোগ দেন। অর্থাৎ চিকিৎসা, প্রকৌশল, স্থাপত্য, শিক্ষা, সাংবাদিকতা ইত্যাদির মত আইনকেও একটি বিশেষ (Specialised) জ্ঞান হিসাবে শিক্ষা করেন। কিন্তু আমাদের ধর্মীয় পন্তিতরা তা না কোরে জাতির মধ্যে এমন একটা ধারণা সৃষ্টি কোরে দিলেন যে আইনজ্ঞ হওয়াই মানুষের একমাত্র লক্ষ্য হওয়া উচিৎ, জ্ঞানের অন্যান্য শাখা শিক্ষা করার কোন প্রয়োজন এ জাতির নেই। এই কাজের অবশ্যম্ভাবী পরিণতি যা হবার তাই হলো, জাতি জ্ঞানের অন্যান্য শাখাসমূহে যে বিস্ময়কর জ্ঞান চর্চা কোরে পৃথিবীর শিক্ষকের আসন লাভ কোরেছিলো তা ছেড়ে দিয়ে একটি মুর্খ অশিক্ষিত জাতিতে পরিণত হলো। উদাহরণরূপে বলা যায় যে, আজকের কোন রাষ্ট্রে যদি শিক্ষা নীতি এই করা হয় যে, সেই রাষ্ট্রের সংবিধান ও ঐ সংবিধান নিসৃতঃ আইন-কানুন ও তার ব্যাখ্যা-বিশ্লেষনই একমাত্র শিক্ষার বিষয়বস্তু হবে, বর্তমানের মাদ্রাসা শিক্ষার মত, তবে কি হবে? নিশ্চিতভাবে বলা যায় যে, তাহলে বিদ্যালয়গুলিতে নিচু ও প্রাথমিক শ্রেণী থেকেই ঐ বিষয় একমাত্র পাঠ্যবিষয় করা হবে। দু'এক প্রজন্মের মধ্যেই ঐ রাষ্ট্রের লোকজন শুধু তাদের দেশের সংবিধান ও আইন-কানুনের সুক্ষাতিসুক্ষ্ম ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ ছাড়া আর কিছুই জানবে না, অন্যান্য সব বিষয়ে অজ্ঞ হোয়ে যাবে। জাতির যা ভাগ্য হওয়া উচিত তাই হলো- অন্য জাতির কাছে পরাজিত হয়ে যে সংবিধান ও আইন-কানুন নিয়ে এত বিশ্লেষণ করা, সেই আইন-কানুন বাদ দিয়ে বিজয়ী জাতির আইন-কানুন গ্রহণ করা হলো। নিজেদের আইন-কানুন সংবিধান শুধু ব্যক্তিগত পর্য্যায়ে কোন রকমে টিকে রোইলো। যে আইন শিক্ষাকেই একমাত্র শিক্ষণীয় বোলে ঘোষণা করা হলো, মুসলিম(Muslim) দুনিয়াতে আজ সেই আইনে বিচার হয় না, বিচার হয় পাশ্চাত্যের মানুষের তৈরী, গায়রুল্লাহর আইনে, দণ্ড হয় পাশ্চাত্যের দণ্ডবিধি মোতাবেক অর্থনীতি পরিচালিত হয় পাশ্চাত্যের সুদভিত্তিক অর্থনীতি মোতাবেক। অথচ এ সবই ফিকাহ শাস্ত্রের আওতাধীন। তবুও এদের মাদ্রাসগুলিতে অন্ধের মত এগুলো পড়িয়ে যাওয়া হোচ্ছে, শিক্ষা দেয়া হচ্ছে। যে আইনের প্রয়োগই নেই সেই আইনই শিক্ষা দেয়া হোচ্ছে, পরীক্ষা নেয়া হোচ্ছে। কী নিষ্ঠুর পরিহাস। অতি বড় সুন্দরী না পায় বর, অতি বড় ঘরনী না পায় ঘর। তাই আল্লাহ(Allah) ও তার রসুল(দঃ) বারবার সতর্ক কোরে দিয়েছেন দ্বীন নিয়ে বাড়াবাড়ি না করার জন্য। কাউকে বাড়াবাড়ি কোরতে দেখলেই রাগে বিশ্বনবীর (দঃ) পবিত্র মুখ লাল হোয়ে যেতো। কারণ তিনি জানতেন যে, অতি বড় সুন্দরী ও অতি বড় ঘরণীর মত অতি বড় মুসলিম(Muslim) না পায় দুনিয়া না পায় জান্নাত।

আল্লাহ(Allah)র শেষ নবী (দঃ) ইসলামে(Islam)র যে শেষ সংস্করণটি নিয়ে এসেছেন তা যে অত্যন্ত সহজ, সরল এবং ভারসাম্যযুক্ত তা আল্লাহ(Allah) ও তার প্রেরিত (দঃ) কোরানে ও হাদীসে বারবার উল্লেখ কোরেছেন। বারবার উল্লেখ কোরেছেন এই জন্য যে, এই সহজ সরলতা, এই ভারসাম্য ইসলামে(Islam)র প্রাণ, মর্মবাণী। যে বা যারা এ থেকে চ্যুত হবে তারা আর এই ইসলামে(Islam)র গণ্ডীর মধ্যে নেই, কারণ যে উদ্দেশ্যে এই দ্বীন, জীবন-ব্যবস্থা প্রেরিত হোয়েছে সেই উদ্দেশ্যই তখন ব্যর্থ হবে। এই হচ্ছে মহানবী (দঃ) বর্ণিত পুল সেরাত। তলোয়ারের ধারের মত সুক্ষ্ম একটি সেতু, যে সেতু পার না হোয়ে জান্নাতে পৌঁছানো যাবে না। একটি অতি সুক্ষ্ম সেতু পার হোতে গেলে কোন জিনিষটি অবধারিত? অতি নিশ্চিত উত্তর হোচ্ছে ভারাসাম্য (Balance),এর কোন ব্যাখ্যার প্রয়োজন নেই। ঐ ভারাসাম্যের কথাই আল্লাহ(Allah) বহুবার বোলেছেন তার কোরানে, তার রসুল (দঃ) বোলছেন তার বহু হাদীসে। সেই ভারসাম্য যেটা আমি বারবার এই বইয়ে জোর দিচ্ছি, দেহের ও আত্মার, মস্তিষ্কের আর মনের, দুনিয়া ও আখেরাতের ভারসাম্য। যে বা যারা যে কোন দিকে কাত হোয়ে এই ভারসাম্য নষ্ট কোরবেন তিনি মহা পণ্ডিত, মহা আলেম হোতে পারেন, মহা সাধক, মহা সুফী হোতে পারেন কিন্তু মোহাম্মদের (দঃ) মাধ্যমে প্রেরিত শেষ ইসলামে(Islam) নেই। ইহুদীদের রাব্বাই, সাদ্দুসাইরা শেষ ইসলামে(Islam)র আলেমদের চেয়ে পাণ্ডিত্যে কম ছিলেন না, কিন্তু আল্লাহ(Allah)র চোখে তারা তার নবী ঈসার (আঃ) বিরোধী ও শত্রু সুতরাং আল্লাহ(Allah)র শত্রু। আর অন্যান্য ধর্মের মহা সাধকরাও আমাদের মহা সুফীদের চেয়ে আধ্যাত্ম শক্তিতে কোন কম যান না। যারা জানেন না তারা দয়া কোরে পড়াশোনা কোরে দেখুন। কিন্তু ওগুলো এই শেষ ইসলাম নয়। এই সত্য ভাল কোরে মানুষকে বোঝাবার জন্য বিশ্বনবী (দঃ) একটি সোজা লাইন টেনে বোললেন এই হোচ্ছে সহজ, সরল পথ, সেরাতুল মুস্তাকীম। তারপর ঐ লাইন থেকে ডান দিকে কতকগুলি ও বামদিকে কতকগুলি আড়াআড়ি লাইন টেনে বোললেন, এই সেরাতুল মুস্তাকীম ছেড়ে শয়তানের ডাকে ডান দিকে আর বামদিকে কতক লোক চলে যাবে। এই বোলে তিনি কোরানের আয়াত পড়লেন যাতে সেরাতুল মুস্তাকীমের গুরুত্ব উল্লেখ করা হোয়েছে। এই হাদীসটি পেছনে উল্লেখ কোরে এসেছি।

আদম (আঃ) থেকে শুরু কোরে শেষ নবী মোহাম্মদ (দঃ) পর্য্যন্ত ইসলামে(Islam)র অর্থাৎ দ্বীনুল কাইয়্যেমার মর্মবাণী তওহীদ- এক আল্লাহ(Allah) ছাড়া অন্য কারো তৈরী জীবন-বিধান মানি না, স্বীকার করি না। এই সেরাতুল মুস্তাকীম, সহজ-সরল পথ ছেড়ে মহাপণ্ডিতরা দ্বীনের চুলচেরা বিশ্লেষণ কোরে এই কোরলেন যে, সহজ-সরল পথটি হোয়ে গেলো একটি অত্যন্ত দুর্বোধ্য জীবন-ব্যবস্থা, খুঁটিনাটি মাসলা-মাসায়েলের জটিল জাল। এই জটিল জালে আটকা পড়ে সমস্ত জাতিটাই মাকড়সার জালে আটকা পড়া মাছির মত অসহায়, স্থবির হোয়ে গেলো। ঐ স্থবিরতার অবশ্যম্ভাবী ফল হোয়েছে শত্রুর ঘৃণিত গোলামী ও বর্তমান অবস্থা যেখানে অজ্ঞানতায়, অশিক্ষায়, কুশিক্ষায় ইসলামে(Islam)র আগের জাহেলিয়াতের অবস্থাকেও ছাড়িয়ে গেছে। এই জাতির আলেম সমাজ আজ কুয়োর ব্যাঙ। দুনিয়ার খবর যারা রাখেন তাদের চোখে এরা অবজ্ঞার পাত্র, হাসির খোরাক। আসমানের মত বিরাট উদাত্ত দ্বীনকে এরা তাদের লম্বা কোর্তার পকেটে পুরে মিলাদ পড়ে, বাড়ী বাড়ী দাওয়াত খেয়ে আর সুর কোরে ওয়াজ কোরে বেড়ান। তবু যদি তাদের ওয়াজের মধ্যে অন্তত কিছু সার কথা থাকতো! তাও নেই, কারণ দ্বীনের মর্মকথা, এর উদ্দেশ্য, প্রক্রিয়া এ সবের কিছুই তাদের জানা নেই। আসল দিক অর্থাৎ জাতীয় জীবনের দিকটাকে সম্পূর্ণভাবে ছেড়ে দিয়ে ব্যক্তি দিকটার সামান্য যে বাহ্যিক অংশকে এরা আকড়ে ধোরে আছেন তা পর্য্যন্ত ভুল। যে দাড়ি রাখাকে এরা দ্বীনের অতি প্রয়োজনীয় কর্তব্য বোলে মনে করেন, প্রতি ওয়াজে প্রতি উপদেশে যারা দাড়ির প্রয়োজনীয়তার ওপর অনেক সময় নষ্ট করেন সেই দাড়িকেই ধরুন। এদের মধ্যে বেশীর ভাগ লোকই দাড়িকে তার নিজের ইচ্ছার ওপর ছেড়ে দিয়েছেন, যেটা বাড়তে বাড়তে সারা বুক ছেয়ে যায়। এই দাড়ি এই দ্বীনের দাড়ি নয়। এ দাড়ি ইহুদীদের দাড়ি এবং এ রকম দাড়ি রাখা যে মহানবীর (দঃ) নিষেধ তা তারা জনেন না। তার(দঃ) নির্দেশিত দাড়ি নিচের ঠোঁটের নিচ থেকে, অর্থাৎ যেখান থেকে দাড়ি গজায় সেখান থেকে একমুষ্ঠি মাত্র, এর বেশী হোলেই তা ছেটে ফেলার নিয়ম। ফকীহদেরও অধিকাংশের মত হোচ্ছে চার আঙ্গুল লম্বা দাড়ি হোচ্ছে শরাহ অনুযায়ী। ইহুদীদের রাব্বাইরা লম্বা আলখেল্লা পড়েন ও মাথায় লম্বা টুপি লাগান, লম্বা দাড়ি তো প্রত্যেকেরই আছে। কাজেই একদল রাব্বাইদের মধ্যে আমাদের একদল ‘ধর্মীয়' নেতাদের দাঁড় করিয়ে দিলে তাদের আলাদা কোরে চেনা যাবে না। এই উড়ন্ত দাঁড়ির সঙ্গে তারা যোগ করেন ন্যাড়া মাথা। তারা বলেন, আল্লাহ(Allah)র রসুলকে(দঃ) মাথা ন্যাড়া অবস্থায় দেখা গেছে বোলে হাদীসে আছে, কাজেই ন্যাড়া করাও সুন্নাহ। এ সিদ্ধান্তও ভুল। মহানবী (দঃ) সব সময়ই লম্বা চুল অর্থাৎ আমরা যাকে বাবরী বলি তাই রাখতেন এবং তা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন লোকে বিভিন্ন দৈর্ঘে দেখেছেন স্বভাবতঃই। আম্মা আয়েশা (রাঃ) বর্ণনা কোরেছেন, পবিত্র কানের নিচ থেকে কাধ পর্য্যন্ত, অর্থাৎ সময়ে লম্বা হোয়ে পবিত্র কাঁধ পর্য্যন্ত এসেছে এবং তখন ছেটে ফেললে আবার কানের নিচ পর্য্যন্ত ছোট হোয়েছে। যারা তাকে মাথা কামানো অবস্থায় দেখেছেন, তারা দেখেছেন হজ্জের সময়- যখন সবাইকে মাথার চুল কামিয়ে ফেলতে হয় হজ্জের আরকান হিসাবে। যেহেতু হজ্জের সময়ই একত্রে বহু সংখ্যক লোক তাকে মাথা কামানো অবস্থায় দেখেছেন এবং পরে বর্ণনা কোরেছেন যে, "আমি রাসুলাল্লাহকে (দঃ) মাথা কামান অবস্থায় দেখেছি, " তাই তার মাথা কামান অবস্থার কথা হাদীসে এবং সিরাতে স্থান পেয়েছে। কিন্তু এটা তার স্বাভাবিক অবস্থায় সুন্নাহ নয়, হজ্জে তো সবাইকে মাথা কামাতে হবে। কিন্তু ঐ বর্ণনাগুলিকে ভিত্তি কোরে এরা একদিকে মাথা কামিয়ে, অন্যদিকে হাওয়ায় উড়ন্ত বিশাল ইহুদী দাড়ি রেখে এক ভয়াবহ চেহারা সৃষ্টি করেন।

এই দ্বীনের প্রকৃত উদ্দেশ্যকে এরা যেমন উলটো কোরে ফেলেছেন তেমনি এর বাহ্যিক দিকটাও এরা এদের অপরিসীম অজ্ঞতায় উলটে ফেলেছেন। দাড়ি রাখা, বাহ্যিক পোষাক-পরিচ্ছদ ইত্যাদি এই দ্বীনের বুনিয়াদী কোন ব্যাপার নয় এবং বুনিয়াদী নয় বোলেই কোরানে আল্লাহ(Allah) কোথাও দাড়ি বা কাপড়-চোপড় সম্বন্ধে কোন নির্দেশ দেননি। বরং বোলেছেন- আমি মানুষের কাপড়-চোপড়, পোশাক-পরিচ্ছদ দেখি না, আমি দেখি মানুষের অন্তর (কোরান)। আসলে এই শেষ দ্বীনে কোন নির্দিষ্ট পোষাক হোতে পারে না, কারণ এটা এসেছে সমস্ত পৃথিবীর মানুষের জন্য। পৃথিবীর মানুষ প্রচণ্ড গরমের দেশে, প্রচণ্ড শীতের দেশে, নাতিশীতোষ্ণ দেশে, অর্থাৎ সর্বরকম আবহওয়ায় বাস করে, এদের সবার জন্য এক রকম পোষাক নির্দেশ করা অসম্ভব। তা কোরলে এ দ্বীন সমস্ত মানব জাতির জন্য প্রযোজ্য হোতে পারতো না, সীমিত হোয়ে যেতো। তাই আল্লাহ(Allah) ও তার রসুল (দঃ) তা করেনওনি। বিশ্বনবীর (দঃ) সময়ে তার নিজের এবং সাহাবাদের পোষাক-পরিচ্ছদ ও তখনকার আরবের মোশরেক ও কাফেরদের পরিচ্ছদ একই ছিলো। বর্তমানেও আরবে মুসলিম(Muslim) আরব, খ্রীস্টান আরব ও ইহুদী আরবদের একই পোষাক-পরিচ্ছদ। দেখলে বলা যাবে না কে মুসলিম(Muslim), কে খ্রীস্টান আর কে ইহুদী।

কোন সন্দেহ নেই, বিশ্বনবী (দঃ) তার অনুসারীদের একটা নির্দিষ্ট দৈর্ঘের দাড়ি রাখতে বোলেছেন। কেন বোলেছেন? এই জন্য বোলেছেন যে তিনি যে জাতিটি, উম্মাহ সৃষ্টি কোরলেন তা যেমন পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ জাতি তেমনি বাইরে থেকে দেখতেও যেন এই উম্মাহর মানুষগুলি সুন্দর হয়। আদিকাল থেকে দাড়ি মানুষের পৌরুষ ও সৌন্দর্যের প্রতীক হোয়ে আছে। সিংহের যেমন কেশর, ময়ুরের যেমন লেজ, হাতির যেমন দাঁত, হরিণের যেমন শিং, তেমনি দাড়ি মানুষের প্রাকৃতিক পৌরুষ সৌন্দর্য। এই সৌন্দর্য নষ্ট না করার উদ্দেশ্যেই দাড়ি রাখার নির্দেশ। আরও একটা প্রয়োজনীয় উদ্দেশ্য আছে দাড়ি রাখার নির্দেশের। পূর্ববর্তী ধর্ম, দ্বীন, জীবন-বিধানগুলি বিকৃত হোয়ে ভারসাম্য হারিয়ে ফেলার ফলে যখন সেগুলির মধ্যে একপেশে আধ্যাত্মবাদ সন্ন্যাসবাদ ইত্যাদি প্রবল হোয়ে দাঁড়ালো তখন তারা মাথার চুল, দাড়ি মোছ ইত্যাদি কামিয়ে ফেলে কৌপীন পড়ে সংসার ত্যাগ কোরলো। অর্থাৎ দাড়ি-মোছ ইত্যাদি কামিয়ে ফেলা হলো বৈরাগ্যের চিহ্ন, সংসার থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবার চিহ্ন। কিন্তু মহানবী (দঃ) যে উম্মাহ সৃষ্টি কোরলেন তার উদ্দেশ্য হলো সংগ্রামের মাধ্যমে সমস্ত পৃথিবীকে এই দ্বীনের মধ্যে এনে সুবিচার, ন্যায় ও শান্তি প্রতিষ্ঠা। তাহলে স্বভাবতঃই এই উম্মাহর সমস্ত কর্মপ্রবাহ সংগ্রামী, প্রকাশ্য ও বহির্মুখী হোতে বাধ্য এ কথা সাধারণ জ্ঞানেই বোঝা যায়। সুতরাং এই উম্মাহর লোকজনের চেহারাতেও অবশ্যই সংসার বৈরাগী সন্ন্যাসীর ছাপ থাকবে না এবং ছাপ না রাখার জন্য দাড়ি রেখে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন কাপড় পড়ে এই পৃথিবীরই সংসারী লোকজনের মত দেখাবার নির্দেশ। মহানবীর (দঃ) সময়ে খ্রীস্টান সন্ন্যাসীরা (রাহেব) এক দল দাড়ি-মোচ চুলে কাচি লাগাতো না, ওগুলো ইচ্ছামত বাড়তো, আরেক দল সব কামিয়ে ফেলতো, ইহুদীরা বিরাট বিরাট দাড়ি রাখতো আর বৌদ্ধরা সব কামিয়ে ফেলতো। সবগুলোই ছিলো বৈরাগ্য, সংসার ত্যাগের বাহ্যিক প্রকাশ রূপে। এই বৈরাগ্যের মানসিকতার বিরোধিতা কোরে বিশ্বনবী (দঃ) তার নিজের জাতিকে নির্দেশ দিলেন- আমার এই দ্বীনে সন্ন্যাস, বৈরাগ্য নেই (লা রোহবানীয়াতা ফিল ইসলাম)। তোমরা ঐ সব সংসার ত্যাগী সন্ন্যাসীদের বিপরীত কোরবে অর্থাৎ দাড়ি ও মোচ রাখবে এবং ইহুদীদের বিপরীত কোরবে অর্থাৎ দাড়ি ও মোচ ছেটে ছোট কোরে রাখবে। উদ্দেশ্য হলো ঐ কাজ কোরে তারা দেখাবে যে তারা সন্ন্যাসী নয়, সংসার বিমুখ নয় বরং ঘোর সংসারী, এই সংসারে এই পৃথিবীতে মানব জীবনে স্রষ্টার দেয়া রাজনৈতিক, আর্থ-সামাজিক আইন, দণ্ডবিধি চালু কোরে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য প্রাণ উৎসর্গকারী সংগ্রামী জাতি তারা। জাতিকে সুন্দর দেখানো শেখানোর জন্য মহানবী (দঃ) নিজে পরিষ্কার সুন্দর কাপড় পড়তেন, দাড়ি-মোছ সুন্দর কোরে ছেটে রাখতেন। তিনি সফরে গেলেও তার সঙ্গে কাচি, চিরুনী ও আয়না থাকতো। একদিন মসজিদে একজন উস্কো-খুস্কো চুলওয়ালা লোককে দেখে তিনি তখনই তাকে নির্দেশ দিলেন মাথার চুল চিরুনী কোরে সবিন্যস্ত করার জন্য( হাদীস- আতা বিন ইয়াসার (রাঃ) থেকে মালেক, মেশকাত)। বয়স হোলে মাথার চুল যখন পেকে যায় সেটাকে রং করা, অর্থাৎ কম বয়সের দেখানো চেষ্টা করা দুনিয়াদারীর মানসিকতা, না বৈরাগ্যের, ধার্মিকতার মানসিকতা? মক্কা জয়ের পর পরই আবু বকর (রাঃ) তার অতি বৃদ্ধ বাপকে- যিনি তখনও মোশরেক ছিলেন, সুতরাং মক্কাতেই ছিলেন- মহানবীর (দঃ) কাছে নিয়ে এলেন। বাপ তখন এত বৃদ্ধ যে তিনি চোখেও দেখতে পাননা। আবু বকরের (রাঃ) বাপ বিশ্ব নবীর (দঃ) হাতে ইসলাম গ্রহণের পর রসুলুল্লাহ (দঃ) তখনই হুকুম দিলেন তার শুভ্র চুল দাড়ি মেহেন্দী দিয়ে রং কোরে দিতে এবং তখনই তা কোরে দেওয়া হলো (সীরাত রসুলাল্লাহ (দঃ) ইবনে ইসহাক)। একটি অন্ধ, অতি বৃদ্ধের চুল দাড়ি রং করা এবং আজকের ‘ধার্মিক' মুসলিম(Muslim)দের নানাভাবে বৈরাগ্য প্রকাশ করার মধ্যে রোয়েছে সত্যিকার ও পথভ্রষ্ট ইসলামে(Islam)র আকীদার তফাৎ- দু'টি বিপরীতমুখী আকীদা। আজ বিকৃত আকীদার ‘ধার্মিক'রা অনিয়ন্ত্রিত উলোঝুলো দাড়ি উড়িয়ে, মাথা ন্যাড়া কোরে বিশ্রী কাপড় পড়ে দেখাতে চান যে তাদের মন দুনিয়া বিমুখ হোয়ে আল্লাহ(Allah)র দিকে গেছে- ঠিক যেমন কোরে ঐ খ্রীস্টান, হিন্দু, বৌদ্ধ সন্যাসীরা বোঝায়। অর্থাৎ মহানবী (দঃ) যে উদ্দেশ্যে দাড়ি মোচ সুন্দর কোরে ছেটে রাখতে বোলেছেন, অর্থাৎ সুন্দর দেখাতে, তার ঠিক বিপরীত উদ্দেশ্যে।

মানব জাতির সর্বশ্রেষ্ঠ আদর্শ বিশ্বনবীর (দঃ) যে দৈহিক বিবরণ হাদীসে ও ইতিহাসে পাওয়া যায় তা লক্ষ্য কোরলে আমরা পাই একটি মানুষ- অতি পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন কাপড় পড়া, তাতে সুগন্ধ, খোশবু, আতর লাগানো (সুগন্ধি ও ফুল তার অতি প্রিয় ছিলো) যত্ন নেয়া মাথার চুল, ঠিক মাথার মাঝখান থেকে সিঁথির দু'পাশ দিয়ে নেমে এসেছে কানের নিচে, কাঁধের একটু ওপর পর্য্যন্ত, সুন্দর কোরে দাড়ি-মোছ ছাটা, সুন্দর দেখাবার জন্য চোখে সুরমা দেওয়া, মাঝে মাঝে গায়ে ইয়ামেনের প্রসিদ্ধ জোব্বা (Robe)। সব মিলিয়ে যাকে পাচ্ছি, তাকে যারা দেখেছেন তারা প্রভাতে উদিয়মান সূর্যের সাথে, পূর্ণ চন্দ্রের সাথে তুলনা কোরেছেন, তাকে কি কোনভাবেই একটি দুনিয়া বিমুখ, সংসার বিমুখ বৈরাগী বলা চলে? মোটেই না। কিন্তু বর্তমানের ‘ধার্মিক'দের মানসিকতা তাই- একেবার উলটো। এদের বাইরেও উলটো, ভেতরেও উলটো। ভেতরে উলটো এই জন্য যে, ঐ বিশ্ব নবীর (দঃ) মাধ্যমে আল্লাহ(Allah)র দেয়া রাজনৈতিক, আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থা, বিচার ও দণ্ডবিধিকে বাদ দিয়ে অর্থাৎ আল্লাহ(Allah)র সার্বভৌমত্বকে অস্বীকার কোরে মানুষের তৈরী এই সব ব্যবস্থার মধ্যে বাস কোরে কার্যতঃ মোশরেক হোয়ে মাথা ন্যাড়া কোরে, মোছ কামিয়ে, টুপি পাগড়ী মাথায় দিয়ে কাঁধে চেক রুমাল ফেলে, টাখনুর ওপর পাজামা পড়ে আর পাঁচবার মসজিদে দৌড়ে এরা আত্মপ্রসাদ লাভ কোরছেন এই ভেবে যে, তারা শুধু উম্মতে মোহাম্মদী নন, একেবারে নায়েবে নবী। তুচ্ছ মাসলা-মাসায়েল নিয়ে সীমাহীন তর্কাতর্কি বাদানুবাদ কোরে কোরে এরা এই জাতির ঐক্য টুকরো টুকরো কোরে দিয়েছেন, যে ঐক্য ছাড়া একটা জাতি ধ্বংস হোয়ে যায়, এমন কি দুর্বল শত্রুর হাতেও পরাজিত হোয়ে যায়। আর তাই গিয়েছিলোও। কিন্তু তাতেও বোধোদয় হয়নি, অসীম অজ্ঞতায় তারা আজও ঐ খুঁটিনাটি মাসলা নিয়ে নিজেদের মধ্যে মারামারি কোরতে ব্যস্ত। এই ঘৃণিত কাজে এমন পর্য্যায়ে গেছেন যে, সূরা ফাতেহার শেষ শব্দটির উচ্চারণ দোয়াল্লীন হবে, না যোয়াল্লীন হবে এই নিয়ে এরা বহু বছর ধোরে তর্ক-বিতর্ক কোরে আসছেন, বছরের পর বছর বহাস কোরেছেন, বই লিখেছেন, এমন কি মারামারি কোরে প্রাণে মারা গেছেন। অথচ এটা একটা তর্কের বিষয়ই নয়। পৃথিবীর সব জায়গার লোক সব অক্ষর উচ্চারণ কোরতে পারে না, কিন্তু কোরান সবাইকে পড়তে হয়। মিশরের মানুষ 'জ' (জীম) উচ্চারণ কোরতে পারে না, তারা 'জ'কে 'গ' উচ্চারণ কোরতে বাধ্য হয়, জামাল শব্দকে তারা গামাল উচ্চারণ করে। তুরস্কের মানুষ 'খ' (খে) উচ্চারণ কোরতে পারে না, 'খ' কে তারা 'হ' উচ্চারণ করে এবং ঐ উচ্চারণেই কোরান শরীফ পড়ে, খালেদকে, হালেদ খানকে হান উচ্চারণ করে। আরবী ভাষায় 'প' অক্ষর নেই তাই আরবীরা 'প' অক্ষরকে 'ব' বা 'ফ' উচ্চারণ করে পাকিস্তানকে বাকিস্তান আর প্যালেষ্টাইনকে ফিলিস্তিন উচ্চারণ করে। শুধু এখন কেন স্বয়ং বিশ্বনবীর (দঃ) সময়েও আরবের গোত্রগুলির মধ্যে উচ্চারণের বিভিন্নতা ছিলো। আশআরী গোত্রের লোকেরা আরবী লাম অক্ষর উচ্চারণ কোরতে পারেনা বোলে তারা লামের বদলে মিম উচ্চারণ করে। তাদের ঐ উচ্চারণে কোরান পাঠ অবশ্যই রসুলুল্লাহ(দঃ) শুনেছেন। কিন্তু তিনি অশুদ্ধ পড়া হলো বলেননি, বরং বোলেছেন তোমাদের সুবিধামত উচ্চারণ (তেলাওয়াত) কর[বোখারী-৩/২২৭, মুসলিম(Muslim) ১/৫৬১ (কুরআন পরিচিতি, ৫ মোঃ মুস্তাফিজুর রহমান পৃঃ ২১০-২১৯)]।

এই দেশেরই এক এলাকার মানুষ 'প' অক্ষর উচ্চারণ কোরতে পারে না, 'প' কে 'হ' উচ্চারণ করে, পানিকে হানি উচ্চারণ করে। এই নিয়ে মারামারি করাটা কতখানি নির্বুদ্ধিতা ও অজ্ঞতার, জাহেলিয়াতের কাজ ভাবতে অবাক হোতে হয়। অথচ এরাই পাগড়ী মাথায় দিয়ে জোব্বা গায়ে দিয়ে নিজেদের আলেম অর্থাৎ জ্ঞানী ও শিক্ষিত বোলে চালান এবং আমরাও তাই স্বীকার করি। এই পুরোহিত অর্থাৎ ‘আলেম' শ্রেণীর মাসলা-মাসায়েলের চুলচেরা বিশ্লেষণ দ্বীনের প্রকৃত উদ্দেশ্য থেকে জাতিকে কতখানি বঞ্চিত কোরছে তার আরেকটি উদাহরণ দিচ্ছি। লখনু থেকে উর্দু ভাষায় একটি ‘ধর্মীয়' মাসিক পত্রিকা বের হতো। তাতে যথারীতি মাসলা-মাসায়েলের কুট তর্কাতর্কি তো থাকতোই আর থাকতো পাঠকদের প্রশ্নোত্তর। একটা প্রশ্নের উদ্ধৃতি দিচ্ছি:- "একটা তাবুর ভেতরে একদল লোক জামাতে নামায পড়ছে। এমাম পাক-সাফ আছেন, কিন্তু তাবুটার এক কোণে নাজাসাত অর্থাৎ অপবিত্র কিছু লেগে আছে। এমাম সাহেব যখন দাঁড়ান তখন তারা মাথার টুপিটা তাবুর কাপড় স্পর্শ করে। এ অবস্থায় পেছনের সকলের নামায যায়েজ হবে কি হবে না?" অর্থাৎ এমাম সাহেবের টুপি তাবু স্পর্শ কোরলে, তাবুর কোণে লেগে থাকা অপবিত্রতাটা ইলেকট্রিকের মত তাবুর কাপড় বেয়ে এমাম সাহেবের টুপি হোয়ে তাকে অপবিত্র কোরে দেয় কিনা? একবার চিন্তা কোরে দেখুন, বুদ্ধি মস্তিষ্কের কি হাস্যকর অপব্যবহার। আরও করুন কথা হলো, যে সময়ের কথা বোলছি, তখন সমস্ত দেশটি একটি পাশ্চাত্য খ্রীস্টান শক্তির পদানত, যারা এ দ্বীনের জাতীয় শারিয়াহ অর্থাৎ এর রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, দণ্ডবিধি ইত্যাদি সমস্ত ব্যবস্থা অবৈধ কোরে দিয়ে তাদের নিজেদের তৈরী ব্যবস্থা এ জাতির ওপর চাপিয়ে রেখেছে। কোথায় তারা ঐ গায়রুল্লাহর আইন ও শাসনের বিরুদ্ধে জেহাদ কোরবে, আবার মুসলিম(Muslim) হবার চেষ্টা কোরবে, না, তারা তাবুতে টুপি লাগছে বোলে নামায যায়েজ হোচ্ছে কি হোচ্ছে না তাই নিয়ে গবেষণা কোরছে। এদিকে আল্লাহ(Allah)র চোখে তারা সে মুসলিম(Muslim) নয়, মো'মেনই নয়, তাবুতে নাপাকী থাক না থাক, তাদের নামায যে নামাযই নয় সে জ্ঞানও তাদের নাই।

এ গেলো এ জাতির দাসত্বের, গোলামীর সময়ের কথা, যে গোলামী মোমেনের পক্ষে উম্মতে মোহম্মদীর পক্ষে অসম্ভব। এবার আসুন ‘স্বাধীন' হবার পরের, অর্থাৎ বর্তমান অবস্থা। এ দেশেরই একটি সংবাদপত্রে সপ্তাহে একদিন নানা রকমের মাসলা-মাসায়েলের প্রশ্নের জবাব দেয়া হয় লখনুর ঐ ‘ধর্মীয়' মাসিকের মত। কিছুদিন আগে তাতে একটি প্রশ্ন ছাপা হোয়েছিল। প্রশ্নটি ছিলো- 'রেডিও শোনা, টেলিভিশন দেখা জায়েজ কিনা?' শর্তও ছিলো, শুধু খবর শোনা, অন্যান্য অনুষ্ঠান যে জায়েজ নয়, তা প্রশ্নের মধ্যেই স্বীকৃত। প্রশ্নটি এসেছে একটি মাদ্রাসা থেকে, হয় ছাত্র না হয় শিক্ষক। ‘প্রশ্নটির মধ্যে বর্তমান ‘মুসলিম(Muslim)' জাতির আকীদার নিদারুণ অজ্ঞতা ও তার ফলে বিকৃত মানসিকতা ফুটে উঠেছে। আজকের পৃথিবীর দু'টি অপরিসীম গুরুত্বপূর্ণ বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার সম্বন্ধে কী অজ্ঞাতপূর্ণ প্রশ্ন। ঐ আবিষ্কারগুলি করার কথা ছিলো এই মুসলিম(Muslim) জাতিরই- যাদের গড়া ভিত্তির ওপর আজকের বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি সম্ভব হোয়েছে। মুসলিম(Muslim) জাতির গবেষনার, বিষ্ময়কর আবিষ্কারের ফলশ্র্#১২৮;তি আজকের বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তির সাফল্য। তারা জ্ঞান চর্চা কোরেছিলেন কারণ আল্লাহ(Allah) তার কোরানে ও মহানবী (দঃ) তার উপদেশে, নিদর্েেশ এই জাতিকে জ্ঞান-বিজ্ঞানের গবেষণাকে অবশ্য কর্তব্য কোরে দিয়েছিলেন। তারপর তারা যখন ঐ নির্দেশ ভুলে যেয়ে জ্ঞান-বিজ্ঞানের অন্বেষণ ও গবেষণা ছেড়ে দিয়ে আল্লাহ(Allah) ও রসুলের (দঃ) নিষেধ অর্থাৎ দ্বীনের চুলচেরা বিশ্লেষণ শুরু কোরলেন, ফিকাহ শাস্ত্র নামে বিরাট এক শাস্ত্র গড়ে তুললেন তখন তার ফল হলো দু'টো। একটা এই যে, এই জাতি মাসলা-মাসায়েলের মতভেদে ভেংগে টুকরো টুকরো হোয়ে গেলো, এবং অজ্ঞানতার ও সংর্কীর্ণতার অন্ধকারে ডুবে গেলো। দ্বিতীয়টি হলো এই যে, তাদের পরিত্যক্ত, ফেলে আসা জ্ঞানের, আবিষ্কারের ভিত্তিগুলিকে সযত্নে তুলে নিয়ে তার ওপর গবেষণা কোরে ইউরোপ আজ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে পৃথিবীর শীর্ষস্থানে। তারা আবিষ্কার করলো ঐ রেডিও, টেলিভিশন, আর যারা ভিত্তি স্থাপন কোরেছিলো তারা অজ্ঞানতার অন্ধকারে বোসে প্রশ্ন কোরছেন- ওগুলো জায়েজ কিনা। কী নিদারুন পরিহাস। আর নিদারুন এই জন্য যে, প্রশ্নটি এসেছে একটি মাদ্রাসার ছাত্র বা শিক্ষকের কাছ থেকে। তাকে আমার জবাব হোচ্ছে এই যে, মানুষকে আল্লাহ(Allah) যে কথা বলার শক্তি দিয়েছেন (কোরান- সূরা আর রহমান ৪) তা দিয়ে সে মিথ্যা ও অন্যায় কথাও বোলতে পারে কিম্বা সত্য ও ন্যায় কথাও বোলতে পারে- তাই বোলে কথা বলাটাই, বা কথা বলার শক্তিটাই না-জায়েজ হোতে পারে কি? রেডিও, টেলিভিশন যদি ন্যায়, সত্য, আল্লাহ(Allah)-রসুলের (দঃ) কথা বলে তবে নিশ্চয়ই তা জায়েজ এবং যদি অসত্য, অসুন্দর, অন্যায়, আল্লাহ(Allah)-রসুলের (দঃ) বিরুদ্ধে বলে তবে তা না-জায়েজ। কী বোলছে, কী দেখাচ্ছে, কী শেখাচ্ছে সেইটা জায়েজ কিম্বা না-জায়েজের প্রশ্ন হবে, রেডিও, টেলিভিশন নিজেরা না-জায়েজ হোতে পারে না, যেমন হোতে পারে না মানুষের কথা বলার শক্তি যা আল্লাহ(Allah) দিয়েছেন। আপনার মনে ওগুলোর জায়েজ, না-জায়েজের প্রশ্ন এই জন্য এসেছে যে বর্তমানে এগুলো যা বলে, যা দেখায়, যা শেখায় তা ইসলামে(Islam)র সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়- এই জন্য তো? তাহলে শুনুন- আল্লাহ(Allah)র রসুলের (দঃ) সাবধান বাণী ও নিষেধ অগ্রাহ্য কোরে জেহাদ ত্যাগ কোরে এই দ্বীনুল-কাইয়্যেমার, সেরাতুল-মুস্তাকীমের, সহজ-সরল পথকে ত্যাগ কোরে এই দ্বীনটার পুংখানুপুংখ পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ কোরে নানা রকম মাসলা-মাসয়েল আবিষ্কার করা যখন আরম্ভ হলো তখন থেকেই এই জাতির ভাঙ্গন আরম্ভ । অবশ্য তার আগে থেকেই আল্লাহ(Allah)র রহমত এজাতির ওপর থেকে উঠে গিয়েছিলো যখন জাতিটি আল্লাহ(Allah)র নবীর (দঃ) প্রকৃত সুন্নাহ জেহাদ ও কিতাল ত্যাগ কোরে রাজত্ব কোরতে আরম্ভ কোরেছিলো। যাই হোক, ঐ বিশ্লেষণের ফলে বহির্মুখী, সংগ্রামী জাতিটি একটি অন্তমর্ুখী স্থবির জাতিতে রূপান্তরিত হোয়ে গেল। একটি বহু মযহাবে ও ফেরকায় বিভক্ত ও অন্তমর্ুখী জাতির অবশ্যম্ভাবী পরিণতি কি? অবশ্যই শত্রুর কাছে পরাজয় ও দাসত্ব (হাদীস-দীন নিয়ে বাড়াবাড়ির পরিনাম পরাজয়-আবু হোরায়রা (রাঃ) থেকে বোখারী)। ঠিক তাই হলো- সামরিকভাবে শত্রু সহজেই এই জাতিকে পরাজিত করলো, কারণ বিশ্বনবীর (দঃ) ও তার আসহাবদের (রাঃ) হাতে ছিলো অস্ত্র আর এদের হাতে ছিলো ফতোয়ার কলম আর তসবিহ্। রাষ্ট্রশক্তি চলে গেলো শত্রুর হাতে, যে রাষ্ট্রশক্তি ছাড়া ইসলাম ইসলামই নয়। তারপর কয়েকশ' বছর ঘৃণিত গোলামীর পর যখন ছাড়া পেলেন তখন ঐ রাষ্ট্রশক্তি শত্রুর হাত থেকে হস্থান্তরিত হলো এক শ্রেণীর লোকের কাছে যাদের সাথে ঐ শত্রুর তফাৎ শুধু গায়ের চামড়ার রংয়ের। মাদ্রাসায় পড়েন বোলে এবং কিছু ব্যক্তিগত শারিয়াহ মাসলা জানেন বোলে আপনারা যারা নিজেদের উৎকৃষ্ট মুসলিম(Muslim) বোলে মনে করেন তারা যে কুয়োর ব্যাঙ ছিলেন আজও সেই কুয়োর ব্যাঙই আছেন। রাষ্ট্রশক্তি অধিকার করার কোন চেষ্টা আপনাদের মধ্যে নেই, কারণ আপনাদের ইসলাম আর রসুলাল্লাহর (দঃ) ইসলাম দু'টি সম্পূর্ণ ভিন্ন জিনিষ। রসুলাল্লাহর (দঃ) ইসলাম প্রথমেই আরবের রাষ্ট্রশক্তি অধিকার কোরেছিলো এবং তার সংগ্রামী আসহাবদের ইসলাম অর্দ্ধেক পৃথিবীর রাষ্ট্রশক্তি অধিকার কোরেছিলো। আর আপনাদের পুর্বসূরী ফকিহ, মুফাসসিরদের ইসলাম ও বিকৃত সুফীবাদের ইসলাম লাখো শহীদ ও মুজাহিদদের রক্তে অর্জিত সেই রাষ্ট্রশক্তি শত্রুর হাতে তুলে দিয়েছিলো। সমস্ত 'মুসলিম(Muslim)' দুনিয়ার রাষ্ট্রশক্তি আজও তাদের হাতে যারা রেডিও, টেলিভিশনে তাই বোলবে তাই দেখাবে তাই শেখাবে যা আমাদের বিগত পাশ্চাত্য প্রভুরা শিখিয়েছে। আর আপনারা জাহেলিয়াতের অন্ধকারে বোসে প্রশ্ন কোরতে থাকবেন ওগুলো জায়েজ না না-জায়েজ। আপনাদের ইসলাম ব্যক্তিগত জীবনের মধ্যে সীমাবদ্ধ করা হয়েছে, আপনারা টুপি মাথায় দিয়ে মাদ্রাসায় যে ফিকাহ শিখেছেন সে ফিকাহ অর্দ্ধেক ফিকাহ। আপনাদের, আমাদের জাতীয় জীবনে ইসলামে(Islam)র ফিকাহ নেই, খ্রীস্টানদের শেখানো ফিকাহ সেখানে চালু, ইসলামে(Islam)র বিচার ব্যবস্থা, দণ্ডবিধি সেখানে নেই, আছে পাশ্চাত্য মানুষের তৈরী আইন, বিচার ব্যবস্থা ও দণ্ডবিধি। যে রেডিও, টেলিভিশন আবিষ্কার করার কথা আপনার সেটা কোরেছে পাশ্চাত্য। এ জাতি যখন মুসলিম(Muslim) ছিলো তখন তাদের বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার, জ্ঞান ও প্রযুক্তি দেখে অর্দ্ধসভ্য ইউরোপীয়ানরা অবাক বিস্ময়ে চেয়ে থাকতো, ঠিক যেমন কোরে পাশ্চাত্যের বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার দেখে আজ আমরা মাছের মত হা কোরে চেয়ে থাকি। খ্রীস্টান প্রভুরা মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা কোরে তাদের পছন্দ মত যে ইসলাম শিক্ষা দিয়েছিলো এখন সেই প্রাণহীন, ব্যক্তিগত মাসলা-মাসায়েলে সমৃদ্ধ জটিল বিতর্কিত ইসলাম আমরা অাঁকড়ে ধোরে প্রাণপাত কোরছি। এটা আল্লাহ(Allah)র দেয়া সহজ-সরল সেরাতুল মুস্তাকীম নয়, দ্বীনুল-কাইয়্যেমা নয়। দ্বীনের পণ্ডিতরা দ্বীনের উদ্দেশ্য ও মর্মবাণী ভুলে যেয়ে ওটার অতি বিশ্লেষণ কোরে প্রাণহীন স্থবির কোরে দেওয়ার ফলে আল্লাহ(Allah) তাদের হাত থেকে রাষ্ট্রশক্তি ছিনিয়ে নিয়ে অন্যের হাতে দিয়ে দিয়েছেন এবং এরকম ঘটনা এই প্রথম নয়, এর আগেও পূর্ববর্তী দ্বীনগুলির 'আলেম' পণ্ডিতরাও ঐ কাজ কোরেছেন ও শাস্তি হিসাবে তাদের হাত থেকে রাষ্ট্রশক্তি চলে গেছে। শেষ ইসলামে(Islam)র ঠিক আগেরটাই অর্থাৎ খ্রীস্টানদেরটা ধরুন। ঈসার (আঃ) আনা দ্বীনের উদ্দেশ্য ভুলে যখন ওটার মসলা-মাসায়েলের তর্কাতর্কি তুলে নিজেদের মধ্যে বিভেদ ও ফেরকা সৃষ্টি হোয়ে গেলো তখন রাষ্ট্রশক্তি তাদের হাত থেকে মুসলিম(Muslim)দের হাতে চলে এলো। একটা প্রবাদ আছে- হযরত ঈসার (আঃ) পায়খানা-প্রশাব পবিত্র না অপবিত্র এই নিয়ে জেরুযালেমে যখন খ্রীস্টান পাদরী, যাজক, আলেমদের কনফারেন্স ও তাদের মধ্যে বহাস হোচ্ছে তখন মুসলিম(Muslim) বাহিনী জেরুযালেম আক্রমণ কোরে দখল কোরে নিলো। পরে ঐ মুসলিম(Muslim)রাই আবার যখন আসল কাজ বাদ দিয়ে ঐ খ্রীস্টানদের মত চুলচেরা বিশ্লেষণ, ফতোয়াবাজী আর কোরানের আয়াতের গুপ্ত অর্থ বের করার কাজে ব্যস্থ হোয়ে পড়লো, রেবাতগুলি যখন খানকায় রূপান্তরিত হোয়ে পড়লো, তখন খ্রীস্টানরা এসে সমস্ত টাই দখল করলো- ঠিক উলটোটা হল। তারও আগে মুসার (আঃ) দ্বীনকে ইহুদীদের 'আলেম'রা অর্থাৎ রাব্বাই সাদ্দুসাইরা ঠিক আমাদের 'আলেম' অর্থাৎ মওলানা, মুফাসসিরদের মত বিশ্লেষণ কোরতে কোরতে ওটাকে যখন এখনকার ইসলামে(Islam)র মত মাসলা-মাসায়েল সর্বস্ব এক প্রাণহীন পদার্থে পরিণত কোরেছিলেন তখন আল্লাহ(Allah) তাদের রোমানদের পদানত কোরে দিয়েছিলেন তাদের হাত থেকে রাষ্ট্রশক্তি ছিনিয়ে নিয়ে। এটা আল্লাহ(Allah)র আইন, নিয়ম।

আল্লাহ(Allah)র এই আইন এই নিয়মের জ্ঞান প্রদত্ত হয়েছিলেন বোলেই তার রসুল (দঃ) বারবার নিষেধ কোরে গেছেন দ্বীনের বিশ্লেষণ কোরতে। বহু হাদীসে এর উল্লেখ আছে। কিন্তু আমাদের ওলামা, মাশায়েখ, ওয়ায়েজরা তাদের ওয়াজে, উপদেশে ওগুলো উল্লেখ করেন না, কারণ ওগুলো তাদের বিরুদ্ধে চলে যায়। মতভেদের সর্বপ্রধান উৎস স্বভাবতই কোরানের আয়াত সমূহ অর্থাৎ আয়াতের অর্থ। এর আগে হাদীস উল্লেখ কোরে এসেছি যেটায় একদিন বিশ্বনবী (দঃ) দুইজন সাহাবাকে কোরানের একটি আয়াতের অর্থ নিয়ে তর্ক কোরতে দেখে রেগে আগুন হোয়ে গিয়েছিলেন। রিপু জয়ী নাফস বিজয়ী সেই সিদ্ধ পুরুষ, মহাবিপদে যিনি নির্ভয়, প্রশান্ত, মাথায় পাহাড় ভেঙ্গে পড়লেও যিনি অটল, অসহনীয় অত্যাচারে যিনি নিষ্কম্প, চরম শত্রুকে যিনি পরম স্নেহে ক্ষমা করেন তিনি যখন রেগে লাল হন তখন অবশ্যই বুঝতে হবে ব্যাপার সাধারণ নয়। আমরা পাই সেই ইনসানে কামেল আয়াতের অর্থ নিয়ে তর্ক শুনে রেগে শুধু লাল হননি, বোলেছিলেন কোরানের আয়াতের অর্থ নিয়ে বাদানুবাদ কুফর। কী সাংঘাতিক কথা, কুফর, একেবারে ইসলাম থেকে বহিষ্কার, যার মাফ নেই। আর একবার পাই তাকে রাগে লাল অবস্থায় যখন একজন সাহাবা তাকে (দঃ) একটু খুটিয়ে মাসলা-মাসায়েল জিজ্ঞাসা কোরেছিলেন। আমাদের একথা নিশ্চিতভাবে বুঝতে হবে যে, মহানবী (দঃ) সাধারণ ব্যাপারে অত রাগেননি। যে ব্যাপারে তিনি দেখতে পেয়েছেন যে, এটা একেবারে উম্মাহর জীবন-মরণের প্রশ্ন, তার সারা জীবনের সাধনার সাফল্য ব্যর্থতার প্রশ্ন, ভবিষ্যতে তার সৃষ্ট জাতির ভাগ্যের প্রশ্ন, শুধু তখনই অত রাগান্বিত হোয়েছেন। বিশ্বনবী (দঃ) বেশ কয়েকটি হাদীসে দ্বীন ইসলামকে(Islam) একটি ঘর বা বাড়ীর সঙ্গে তুলনা কোরেছেন। অনেক রকম জিনিষ নিয়ে একটি বাড়ী হয়। তাতে অতি প্রয়োজনীয় জিনিস থাকে, তার চেয়ে কম প্রয়োজনীয় থাকে, অল্প প্রয়োজনীয় জিনিসও থাকে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ভিত্তি, ওটা যদি শক্ত না হয় তবে বাড়ী বেশীদিন টিকবে না, কিছুদিন পরই ধ্বসে পড়বে। তারপর আসে বাড়ীর থাম বা দেয়াল, ওটা বানাতেই হবে, কারণ ওটা না থাকলে বাড়ীর আসল যে উদ্দেশ্য অর্থাৎ ছাদ তা থাকবে না। তারপর আসতে থাকে ক্রমেই কম প্রয়োজনীয় জিনিষগুলো, দরজা-জানালা, দেয়ালের আস্থর, মেঝে, সিড়ি। তারপর আসে আরও কম প্রয়োজনীয় জিনিষ রং, চুনকাম, ফুলের বাগান ইত্যাদি। যে লোক এইভাবে বাড়ীটিকে দেখবে বাড়ীটার উদ্দেশ্য, বাড়ীর কোন জিনিস বেশী গুরুত্বপূর্ণ কোন জিনিস কম প্রয়োজনীয় সে ঠিকভাবেই বুঝবে, অর্থাৎ বাড়ী সম্বন্ধে তার ধারণা, আকীদা সঠিক। বাড়ীর কোথাও কোন জিনিস নষ্ট হলে বা ভেঙ্গে গেলে সে সঠিক ভাবেই বুঝবে যে, কতখানি দরকারী কতখানি প্রয়োজনীয় জিনিসটি নষ্ট হলো এবং সেই মোতবেক সেটাকে মেরামত করার চেষ্টা কোরবে। কিন্তু বাড়ীটাকে ঐ দৃষ্টিতে না দেখে একদল লোক যদি বাড়ীটাতে পুংখানুপুংখভাবে পর্যবেক্ষণ করার জন্য প্রথম খুব কাছে যেয়ে দেখেন, তারপর হাটু গেড়ে নিচু হয়ে দেখেন এবং তাতেও সন্তুষ্ট না হোয়ে বিবর্দ্ধক কাঁচ (Magnifying Glass) দিয়ে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে থাকে তবে তারা বাড়িটার অতি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জিনিস, ধুলামাটি ইত্যাদি বড় বড় দেখতে পাবেন, কিন্তু গোটা বাড়ীটাকে আর দেখতে পাবেন না। অর্থাৎ তাদের দৃষ্টি সংকুচিত হোয়ে তারা প্রায়ান্ধ হোয়ে যাবেন। তখন তাদের একদল বিবর্দ্ধক কাঁচ দিয়ে দেখে গবেষণা কোরে বোলবেন এখানে এই রং হওয়া উচিত আরেক দল বোলবেন জানালায় এই কাঠ হওয়া উচিৎ আরেক দল বোলবেন বাগানের এই জায়গায় ফলের গাছ লাগানো উচিৎ ইত্যাদি এবং তাদের মধ্যে ঐ নিয়ে মতভেদ হয়ে বিভক্তি হয়ে যাবে- বাড়ীটার উদ্দেশ্য ও প্রয়োজনীয়তা হারিয়ে যাবে। গত কয়েক শতাব্দী থেকে আমাদের ওলামায়ে দ্বীন বিবর্দ্ধক কাঁচ দিয়ে এই দ্বীনকে ওমনি কোরে দেখেছেন আর বিশ্লেষণ কোরছেন। তাদের প্রায়ান্ধ দৃষ্টি আর সম্পূর্ণ দ্বীনটাকে দেখতে পারে না। দ্বীনের উদ্দেশ্যও বুঝতে পারে না, তার প্রক্রিয়াও অর্থহীন হোয়ে গেছে। ইসলামে(Islam)র বাড়ীটি ধ্বসে গিয়ে মাটিতে পড়ে আছে আর তারা ঐ ধ্বসে পড়া বাড়ীর দরজা জানালায় কি রং হবে, বাগানের কোথায় কি ফুলের গাছ লাগানো উচিৎ তাই নিয়ে গবেষণা কোরছেন, তর্কাতর্কি কোরছেন, মারামারি কোরছেন। সুতরাং কোনটা বেশী গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজনীয় কোনটা কম প্রয়োজনীয় এ বোধ তাদের লোপ পেয়েছে অর্থাৎ জ্ঞান আর নেই। হিমালয় পর্বতকে তারা বিবর্দ্ধক কাঁচ দিয়ে দেখতে যেয়ে পর্বতের পায়ের সুক্ষ্ম ধ লাবালিকে বড় বড় পাথরের টুকরোর মত দেখতে পাচ্ছেন এবং ওগুলোকেই পাহাড় পর্বত মনে কোরছেন। কিন্তু হিমালয়ের চুড়া কতখানি উর্দ্ধাকাশে উঠে গেছে কেমন কোরে সে মেঘ আটকিয়ে বৃষ্টি ঝরায়, তুষার ঝড় সৃষ্টি করে- তা তাদের ধারণার, আকীদার বাইরে। মহানবীর (দঃ) বর্ণিত ইসলামে(Islam)র ঐ বাড়ীটি সম্বন্ধে এই বিকৃত আকীদার অর্থাৎ দৃষ্টির অন্ধত্বের জন্য কয়েক শতাব্দীর ঘৃণিত দাসত্বের সময়েও ওলামায়ে দ্বীন টুপি, পাগড়ী টাখনুর ওপর পাজামা, বিবি তালাকের ফতোয়া, সুর কোরে কোরান পড়া ইত্যাদি খুঁটিনাটি নিয়ে মহা ব্যস্থ থেকেছেন আর ভারসাম্যহীন সুফীরা জাতির দাসত্বের সময়েও অন্তর্মুখী হোয়ে খানকায় বোসে যার যার আত্দার ঘষামাজা কোরছেন গোল হোয়ে বোসে, পাড়া কাঁপিয়ে যিকির কোরছেন, অতি সযত্নে কুফর ও শেরকের সাথে সংঘর্ষ এড়িয়ে চলেছেন। তারপর তথাকথিত স্বাধীনতা পাবার পরও ঐ দুই ভাগ মানুষ ঠিক একই কাজ কোরে চোলেছেন চোখ কান বুজে।

দ্বীনকে, জীবন ব্যবস্থাকে বিবর্দ্ধক কাঁচ দিয়ে তন্ন তন্ন কোরে খুঁটিয়ে দেখতে যেয়ে সমগ্র দ্বীন সম্বন্ধে এই যে অবিশ্বাস্য অন্ধত্ব, এই অন্ধত্বের জন্যই এই বিরাট পাগড়ীধারী ধর্মের ধারক বাহক মাওলানা, ওলামায়ে দ্বীনরা ক্ষমতাসীন শিক্ষিত শ্রেণীকে বাধা দেননি যখন পাশ্চাত্যের মানসিক গোলাম ঐ শ্রেণীটি পাশ্চাত্যের তৈরী জাতীয় জীবন ব্যবস্থা যা সরাসরি কুফর ও শেরক, এই উম্মাহর ওপর বহাল রাখলেন। যে সুদকে আল্লাহ(Allah) অতি কঠোরভাবে নিষিদ্ধ কোরেছেন সেই সুদকে জাতির অর্থনৈতিক জীবনে শাসকশ্রেণী চালু রাখলেও এই মহা ধার্মিকরা তার বিরুদ্ধে সংগ্রাম কোরলেন না, কারণ তাদের প্রায়ান্ধ দৃষ্টিতে যে সুদপ্রথা সমাজের একটি ছোট অংশকে বিলাসীতার মধ্যে এবং বৃহত্তর অংশকে দারিদ্রের মধ্যে নিক্ষেপ করে সেই সুদের চেয়ে বেশী প্রয়োজনীয় হচ্ছে কোন পা প্রথমে ফেলে সমজিদে ঢুকতে হয়। দণ্ডবিধি আল্লাহ(Allah)র আদেশ মোতাবেক কিনা সেটা কোন গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার নয়, বিবি তালাকের ফতোয়া কত রকম হোতে পারে সেটাই গবেষণার বিষয়। আকীদার আগাগোড়া বিকৃতি, গুরুত্বের সম্পূর্ণ ওলটপালটের কী নিদারুণ অবস্থা। আল্লাহ(Allah)র রসুল (দঃ) একটা সোজা রেখা টেনে আসহাবদের বোললেন, এই হোচ্ছে সহজ সরল পথ, সেরাতুল মুস্তাকীম। তারপর সেই সরলরেখা থেকে ডান দিকে কতকগুলি ও বাম দিকে কতকগুলি রেখা টেনে বোললেন এইগুলি সেই সব পথ যে গুলির দিকে শয়তান ডাকতে থাকবে। এই বোলে তিনি কোরান থেকে সেই আয়াত পড়লেন যেটায় আল্লাহ(Allah) বোলছেন- নিশ্চয়ই এই হোচ্ছে আমার সহজ সরল পথ (সেরাতুল মুস্তাকীম যেটার অর্থ পেছনে কোরে এসেছি)। কাজেই এই পথে চল এবং থাক। অন্য কোন পথে যেওনা (মহানবী (দঃ) ডাইনে বায়ে যে লাইনগুলি টানলেন সেগুলি) গেলে তোমরা আমার পথ থেকে বিচ্যুত, বিচ্ছিন্ন হোয়ে যাবে। তিনি (আল্লাহ(Allah)) এই তোমাদের আদেশ কোরছেন যাতে তোমরা অন্যায় থেকে বেঁচে ন্যায়ে থাকতে পারো [হাদীস- আব্দুল্লা বিন মাসুদ (রাঃ) থেকে, আহমদ, নিসায়ী- মেশকাত]। এই হাদীসটি এর আগে উল্লেখ কোরে এসেছি। এছাড়াও আরও বহু হাদীসে এই সেরাতুল মুস্তাকীমকে বিশ্বনবী (দঃ) নানাভাবে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছেন। তারপর আল্লাহ(Allah) তার কোরানে বহুবার এই সেরাতুল মুস্তাকীম উল্লেখ কোরেছেন। এ যে কত গুরুত্বপূর্ণ তা বোঝাবার জন্য একে সুরা ফাতেহার অন্তর্ভুক্ত কোরেছেন ও ঐ সুরা প্রতি রাকাতে অবশ্য পাঠ্য কোরে দিয়েছেন। কেন? এই জন্য যে, সমস্ত কিছুর ভিত্তি হোচ্ছে ঐ সেরাতুল মুস্তাকীম- এই সহজ, অতি পরিষ্কার সত্য যে, এক আল্লাহ(Allah) আমাদের প্রভু মা'বুদ। তিনি ছাড়া প্রভু, মাবুদ নেই। অর্থাৎ তার আদেশ নিষেধ, তার দেয়া জীবন ব্যবস্থা ছাড়া আর কোন কিছু আমরা গ্রহণ করি না, মানিনা। এবং মানা শর্তহীনভাবে, আংশিকভাবে নয়। ওমুক ওমুক ব্যাপারে মানি আর অমুক ব্যাপারে মানি না, অন্যের আদেশ নিষেধ মানি, অন্যের বিধান মানি, অমন মানা সেই সর্বজ্ঞানী স্রষ্টা গ্রহণ করেন না, অমন আংশিক মানা তার কাছে শেরক, অমার্জনীয় অপরাধ এবং তিনি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ যে শেরক তিনি কখনই ক্ষমা কোরবেন না (কোরান- সূরা আন-নিসা ৪৮)। অর্থাৎ এই সহজ সরল সত্যকে গ্রহণ করাই সমস্ত জীবন বিধানের, দ্বীনের ধর্মের ভিত্তি। আল্লাহ(Allah) জানেন যে, এই ভিত্তিকে পূর্ণভাবে গ্রহণ কোরলে বাকি অন্যসব নিজেই স্বতঃস্ফুর্তভাবেই আসবে এবং মানুষের জীবনে সামগ্রিকভাবে শান্তি প্রতিষ্ঠা হবে। কিন্তু ঐ গ্রহণ যদি পরিপূর্ণভাবে না হয়, আংশিক হয়, জাতীয় জীবনে না হোয়ে যদি শুধু ব্যক্তিগত জীবনে হয়, তবে তা মানব জীবনে শান্তি আনতে পারবে না। কারণ আইন-কানুন দণ্ডবিধির প্রভাবেই শান্তি শৃংখলা ও আইনের শাসন সম্ভব, ব্যক্তিগতভাবে অসম্ভব। এই জন্যই হাদীসে পাই রসুলাল্লাহ (দঃ) বোলেছেন- যে মানুষ আল্লাহ(Allah) ছাড়া আর কোন মা'বুদ নেই এই বিশ্বাস নিয়ে যাবে সে জান্নাতবাসী হবে। মহানবীর (দঃ) এই কথা শুনে আবু যার (রাঃ) জিজ্ঞাসা কোরলেন, যদি ঐ লোক ব্যাভিচার করে এবং চুরি করে? আল্লাহ(Allah)র রসুল (দঃ) জবাব দিলেন, সে ব্যভিচার ও চুরি কোরলেও। বিশ্বনবীর (দঃ) এই কথা স্পষ্টতই আবু যারকে (রাঃ) বিস্মিত কোরেছিলো। কারণ তিনি আবার তাকে প্রশ্ন কোরলেন, সে ব্যাভিচার ও চুরি কোরলেও? হাদীসে পাই বিস্মিত আবু যার (রাঃ) তিন তিন বার বিশ্বনবীকে (দঃ) ঐ একই প্রশ্ন কোরেছিলেন এবং শেষ বার একেবারে নিঃসন্দেহ, নিশ্চিত কোরে দেবার জন্য আল্লাহ(Allah)র রসুল (দঃ) "হ্যাঁ ব্যাভিচার ও চুরি কোরলেও" এই কথা বোলে যোগ কোরেছিলেন "আবু যারের নাক কেটে দিলেও" এই হাদীসটি 'মুত্তাফিক আলাইহে' শ্রেণীভুক্ত অর্থাৎ বোখারী ও মুসলিম(Muslim) উভয় শ্রেষ্ঠ হাদীসবেত্তা দ্বারা সমর্থিত ও গৃহীত, অর্থাৎ নিঃসন্দেহে সত্য। বর্তমানের অতি মুসলিম(Muslim)দের কাছে বিশ্বনবীর (দঃ) ঐ কথা অতি আশ্চর্যজনক বোধ হবে, গ্রহণ কোরতে দ্বিধা আসবে, কারণ তাদের আকীদা বিকৃত হোয়ে গেছে। যিনি এই জীবন ব্যবস্থার, দ্বীনের মর্মবাণী বুঝতে পেরেছেন, এর উদ্দেশ্য ও প্রক্রিয়ার জ্ঞান লাভ কোরেছেন অর্থাৎ রসুলের (দঃ) ও তার সাহাবাদের আকীদার সঙ্গে যার আকীদার মিল রয়েছে তিনি আশ্চর্য হবেন না, তিনি সহজভাবেই এই হাদীস নেবেন, কারণ তিনি জানে যে, বিশ্বনবী (দঃ) যে 'আল্লাহ(Allah) ছাড়া আর কোন মাবুদ উপাস্য নেই'। কথাটা বোললেন তার অর্থ অন্য সর্বরকম জীবন বিধানকে অস্বীকার করা। বর্তমানের 'মুসলিম(Muslim)'দের পক্ষে এই হাদীস গ্রহণ করা কষ্টকর, কারণ জাতীয় জীবনে আল্লাহ(Allah)র আইন-কানুন, দণ্ডবিধি, রাজনৈতিক, আর্থ-সামাজিক ইত্যাদি সমস্ত ত্যাগ কোরে মানুষের তৈরী ব্যবস্থার মধ্যে, অর্থাৎ শেরক ও কুফরের মধ্যে নিমজ্জিত হোয়েও মহা নামায রোযা, হজ্জ্ব, যাকাত, তাহাজ্জুদ, নফল, তারাবী, পাজামা, কুর্তা দাড়ি আর ফতোয়ার কুট তর্কে ব্যস্থ এই বিকৃত মানসিকতা। এই হাদীসটি লক্ষ্য করুন। দেখুন আল্লাহ(Allah) ছাড়া এলাহ নেই এর পরে মোহাম্মাদুর রসুলুল্লাহ পর্য্যন্ত নেই। আরও অনেকগুলি হাদীসে ওমনি শুধু লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ কে-ই যথেষ্ট বলা হোয়েছে, যেমন জান্নাতের চাবি হোচ্ছে আল্লাহ(Allah)র ছাড়া উপাস্য প্রভু নেই (মুয়ায বিন জাবাল থেকে আহমদ, মেশকাত)। অবশ্য অন্য অনেকগুলো হাদীসে মোহাম্মাদুর রসুলুল্লাহ যোগ করা আছে- যেমন যে লোক বিশ্বাস কোরবে আল্লাহ(Allah)র ছাড়া উপাস্য (ইলাহ মাবুদ) নেই এবং মোহাম্মদ (দঃ) তার প্রেরিত তার জন্য জাহান্নাম হারাম হোয়ে যাবে (ওবাদাহ বিন সাবেত থেকে মুসলিম(Muslim), মেশকাত)। সর্বত্রই মনে রাখতে হবে যে, ঐ তাওহীদ আজকের এই ব্যক্তিগত আংশিক তাওহীদ নয়, ঐ তাওহীদ হোচ্ছে সেই তাওহীদ যে তাওহীদ বিশ্বনবী (দঃ) তার উম্মাহকে শিখিয়েছিলেন। সেই তাওহীদ আজ বিশ্বের কোথাও নেই সামান্য কিছু লোকের মধ্যে ছাড়া, যাদের আল্লাহ(Allah) তার অসীম রহমতে তাদের দান কোরেছেন এবং যাদের কথা তার রসুল (দঃ) অনেকবার বোলে গেছেন। তিনি বোলেছেন- আমার উম্মতের মধ্যে সব সময়ই একদল লোক থাকবে যারা আল্লাহ(Allah)র হুকুম সমূহকে সুমন্নত রাখবে। এখানে নবী (দঃ) প্রকৃত ইসলামকে(Islam)ই বোঝাচ্ছেন অবশ্যই। এই দলের কথা ও তাওহীদের ভিত্তির গুরুত্বের কথা কোরান ও হাদীসে এতবার এত জায়গায় আছে যে, তা এখানে উল্লেখ কোরতে গেলে আরেকটা বই-ই হোয়ে যাবে। আজকের 'মুসলিম(Muslim)' জাতি দ্বীনের সমস্ত খুঁটিনাটি অতি যত্নের সাথে পালন করে কিন্তু আসল ভিত্তি সেই তাওহীদে নেই। মরা গাছের শুকনো পাতায় তারা অতি সতর্কতার সাথে সারাদিন পানি ঢালছেন ওদিকে গাছের শেকড় আর গুড়ি যে মরে গেছে তা তাদের জানা নেই। আল্লাহ(Allah)র আর তার রসুলের (দঃ) সতর্কবাণী আর নিষেধকে অমান্য কোরে দ্বীনের অতি বিশ্লেষণের বাড়াবাড়ির অবশ্যম্ভাবী পরিণাম এই। আজ এই উম্মাহ পাশ্চাত্যের আকীদাকে তসলিম কোরে নিয়েছে, স্বীকার কোরে নিয়েছে যে, তাদের ব্যক্তিগত জীবনের বিধাতা (অর্থাৎ বিধানদাতা এলাহ) হোচ্ছেন আল্লাহ(Allah) আর জাতীয় অর্থাৎ রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, বিচার, দণ্ডবিধি ইত্যাদির বিধাতা, এলাহ হোচ্ছে পাশ্চাত্যের ইহুদী-জুডিও খ্রীস্টান, সভ্যতা(Civilization)।

আজ এই জাতি যেটা নিজেকে উম্মতে মোহাম্মদী বোলে মনে করে, তার দুই প্রভু, দুই বিধাতা, দুই এলাহ। এটা এক বিধাতার, এলাহের এবাদাত করে প্রচুর নামায, রোযা, হজ্ব, যাকাত, দাড়ী টুপি, কুলুখ, দোয়া, দরুদ তাহাজ্জুদ লম্বা কোর্তা, অপ্রয়োজনীয় ওয়াজ চিৎকার কোরে যিকর কোরে, মেয়েদের বাক্সে ভোরে, আর অন্য ইলাহের এবাদত করে তাদের তৈরী বিচার ব্যবস্থায় বিচার কোরে, তাদের তৈরী দণ্ডবিধি অনুযায়ী শাস্তি ও পুরস্কার দিয়ে, তাদের তৈরী তন্ত্র মন্ত্র অনুযায়ী রাজনৈতিক ও সুদভিত্তিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা চালু কোরে। এর চেয়ে বড় শেরক সম্ভব নয়, এর চেয়ে বড় বেদা'আতও সম্ভব নয়।

একটু আগে বিশ্বনবীর (দঃ) যে হাদীসটি উল্লেখ কোরে এসেছি অর্থাৎ যেটায় তিনি বোলেছেন যে আল্লাহ(Allah)র সার্বভৌমত্বে সত্যিকার বিশ্বাসীকে তার ব্যাভিচার, তার চুরি জান্নাত থেকে ফেরাতে পারবেনা, ঐ হাদীসটিতে আরেকটি জিনিষ পরিষ্কার হোয়ে উঠেছে। সেটা হলো এই দ্বীনে জাতীয় জীবন হোচ্ছে আসল প্রয়োজনীয়। আল্লাহ(Allah)র প্রভুত্ব, সার্বভৌমত্বের প্রকৃত দরকার জাতীয় জীবনে, ব্যক্তিগত জীবনে নয়। ব্যাভিচার ও চুরি ব্যক্তিগত জীবনের অপরাধ, গোনাহ শয়তানের প্ররোচনার কাছে হেরে যেয়েই মানুষ ঐ অপরাধ করে। কিন্তু জাতীয় জীবনে আল্লাহ(Allah)কে বা তার সার্বভৌমত্বকে অস্বীকার করা রিপুর কাছে পরাজয় নয়, চিন্তা ভাবনা কোরেই তা করা হয়। আল্লাহ(Allah) অসীম ক্ষমাশীল, অসীম তার অনুকম্পা তাই রিপুর কাছে পরাস্থ হোয়ে অন্যায়, গোনাহ কোরে ফেলে তারপর অকপটে মাফ চাইলে তিনি মাফ কোরবেন (কোরান আন-নিসা ৪৮)। কিন্তু তার সার্বভৌমত্বকে অস্বীকার কোরে তার দেয়া জাতীয় জীবন ব্যবস্থাকে বাদ দিয়ে অন্যের তৈরী, গায়রুল্লাহর তৈরী ব্যবস্থা গ্রহণ কোরলে তিনি মাফ কোরবেন না, এটা তিনি প্রতিজ্ঞা কোরেছেন। কারণ এটা রিপুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে পরাস্থ হোয়ে করা হয়নি, অন্যের প্রভাবে অন্যের শিক্ষায় ভেবেচিন্তে করা হোয়েছে- প্রকৃত শেরক, প্রকৃত কুফর। বর্তমানের এই দ্বীনের ধারক বাহকদের ধর্মকর্ম দেখলে আমার একটি ঘটনার কথা মনে পড়ে। এক ইরাকী হজ্জ্বে আসবার আগে খলিফা ওমরের (রাঃ) ছেলে আবদুল্লাহ (রাঃ) সঙ্গে দেখা কোরে হজ্জ্বের সময় মাছি ইত্যাদি মারলে কি কোরতে হবে সে সম্বন্ধে ফতোয়া চাইলেন। আবদুল্লাহ এবনে ওমর (রাঃ) বোললেন, কি আশ্চর্য! যে ইরাকীরা আল্লাহ(Allah)র রসুলের (দঃ) নয়নের মনি হোসায়েনকে (রাঃ) হত্যা কোরেছে তারা মাছি মারার কাফফারার ফতোয়া জিজ্ঞাসা কোরছে। বিকৃত আকীদার ফলে আজ মুসলিম(Muslim) জগতের অবস্থা ঐ ইরাকীর মত।

কোন মন্তব্য নেই: