বৃহস্পতিবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০১১

২৫। রাষ্ট্রশক্তি ছাড়া ইসলাম ইসলামই নয়

উৎস: Islam and Dajjal
পেছনে বোলে এসেছি যে আদম (আঃ) থেকে শেষ নবী মোহাম্মদ (দঃ) পর্য্যন্ত বারে বারে আল্লাহ(Allah) মানুষের জন্য যে জীবন-ব্যবস্থা (দ্বীন) দিয়ে এসেছেন তার নাম তিনি নিজেই দিয়েছেন ইসলাম(Islam), যার আক্ষরিক অর্থ শান্তি। তার এই নাম দেয়ার অর্থ আছে। আল্লাহ(Allah)র খলিফা অর্থাৎ প্রতিনিধি মানুষ তৈরী করার বিরুদ্ধে মালায়েক অর্থাৎ ফেরেশতাদের যুক্তি ছিলো এই যে ঐ মানুষ পৃথিবীতে ফাসাদ অর্থাৎ অন্যায়-অবিচার, অশান্তি ও সাফাকু দ্দিমা, যুদ্ধ অর্থাৎ রক্তপাত ইত্যাদি কোরবে। ইবলিসও তখন ফেরেশতাদেরই সামিল ছিলো, অর্থাৎ তারও বক্তব্য তাই ছিলো। তারপর আল্লাহ(Allah) যখন মালায়েকদের আপত্তি উপেক্ষা কোরে আদম অর্থাৎ মানুষ সৃষ্টি কোরে তাকে সাজদা করার আদেশ দিলেন, তখন সব মালায়েক সাজদা কোরলেও ইবলিস কোরলোনা। বরং আল্লাহ(Allah)কে চ্যালেঞ্জ করলো যে, তোমার সৃষ্ট মানুষকে আমি প্ররোচনা দিয়ে তোমাকে অস্বীকার কোরিয়ে ঐ ফাসাদে, অন্যায়ে, যুদ্ধ ও রক্তপাতে জড়িয়ে ফেলবো। আল্লাহ(Allah) তার চ্যালেঞ্জ গ্রহণ কোরে ইবলিসকে বোললেন যে, কি রকম জীবন-ব্যবস্থা, আইন-কানুন, দণ্ডবিধি, রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজনীতি জাতীয় ও ব্যক্তি জীবনে গ্রহণ ও প্রতিষ্ঠা কোরলে মানুষ ঐ ফাসাদে না পড়ে সুবিচার, ন্যায় ও শান্তিতে বাস কোরতে পারে সেই রকম জীবন-বিধান আমি আমার প্রেরিতদের অর্থাৎ নবী-রসুলদের মাধ্যমে মানুষকে জানিয়ে দেব। যারা আমার দেয়া জীবন-বিধান গ্রহণ না কোরে নিজেরাই ইচ্ছামত জীবন-বিধান তৈরী কোরে নেবে তাদের কাজের ফলে তারা পৃথিবীতে অন্যায়, অবিচার, যুদ্ধ, হত্যা ও রক্তপাতের মধ্যে পতিত হবে। আর যারা জীবন-ব্যবস্থা দ্বীন নিজেরা তৈরী না কোরে আমাকেই একমাত্র ইলাহ অর্থাৎ বিধাতা বোলে স্বীকার কোরে নিয়ে আমার নবীদের মাধ্যমে প্রেরিত দ্বীনকে গ্রহণ কোরে তা তাদের জাতীয়, পারিবারিক ও ব্যক্তিজীবনে প্রতিষ্ঠা কোরবে- তারা সর্বদিক দিয়ে জীবনের প্রতি অঙ্গনে পূর্ণ সুখ-শান্তি ও প্রশান্তিতে, প্রগতিতে বাস কোরবে। আমার দেয়া জীবন-ব্যবস্থা মানুষের জীবনে অশান্তির জায়গায় শান্তি আনবে বোলেই এই ব্যবস্থার নাম হলো শান্তি, ইসলাম(Islam)। মানুষই হলো আমার একমাত্র সৃষ্টি, যাকে আমি আমার আমানত দান কোরেছি (কোরান-সূরা আল-আহযাব- ৭২)। ঐ আমানত হলো স্বাধীন ইচ্ছা শক্তিসহ আমার নিজের আত্মা। আমি দেখব কারা এই স্বাধীন ইচ্ছা শক্তিকে অপব্যবহার কোরে নিজেরা বিধান, আইন-কানুন তৈরী কোরে পৃথিবীতে অন্যায়, রক্তপাত, অবিচার, অশান্তি সৃষ্টি করে, আর কারা আমার কাছে আত্মসমর্পন কোরে পৃথিবীতে পূর্ণ শান্তিতে বাস করে। মানুষের মৃত্যুর পর এরই ওপর তাদের বিচার হবে। এরই ওপর শাস্তি ও পুরষ্কার দেয়া হবে।

অতি অল্পের মধ্যে এই হলো মূল সত্য, হাকিকত। লক্ষ্য কোরলে দেখা যায় এর অর্থ হলো এই যে আল্লাহ(Allah)কে একমাত্র বিধাতা, এলাহ স্বীকার কোরে দ্বীন গ্রহণ কোরে নিলেই সফলতা অর্থাৎ যে বা যারা তা করলেন তারা তওহীদে প্রবেশ করলো, সব কিছু পরিত্যাগ কোরে আল্লাহ(Allah)র ওয়াহদানিয়াত গ্রহণ করলো। ঐ তওহীদ মানুষের জাতীয় ও ব্যক্তিগত উভয়ভাবে। কারণ আল্লাহ(Allah)কে বিধাতা বোলে গ্রহণ কোরে জাতীয় জীবনে তার দেয়া আইন কানুনকে অস্বীকার অর্থ তাকে আংশিকভাবে স্বীকার করা অর্থাৎ শেরক। সম্পূর্ণভাবে আল্লাহ(Allah)কে এলাহ, বিধাতা বোলে স্বীকার ও বিশ্বাস করে নিলেই মানুষ তওহীদে প্রবেশ করলো। এর সমর্থন আমরা পাই মহানবীর (দঃ) অনেক হাদীসে। সব হাদীস এখানে উল্লেখের স্থান নেই, শুধু কয়েকটি সংক্ষেপে উল্লেখ কোরছি। উটের পিঠে পেছনে উপবিষ্ট মুয়ায (রাঃ) কে রসুলুল্লাহ (দঃ) বোললেন, "হে মুয়ায! যে সত্য সত্যই সাক্ষ্য দেবে (বিশ্বাস কোরবে) যে, এক আল্লাহ(Allah) ছাড়া আর কোন এলাহ (বিধান দাতা) নেই এবং মোহাম্মদ তার প্রেরিত। আগুন (দোজখের) তাকে স্পর্শ কোরতে পারবে না [আনাস (রাঃ) থেকে বোখারী, মুসলিম(Muslim)]। "যে সাক্ষ্য দেবে আল্লাহ(Allah) ছাড়া এলাই নেই এবং মোহাম্মাদ তার রসুল, আল্লাহ(Allah) দোযখের আগুন তার জন্য হারাম করে দেবেন (ওবাদা বিন সোয়ামেত (রাঃ) থেকে মুসলিম(Muslim))।" "জান্নাতের চাবি হোচ্ছে সাক্ষ্য দেয়া যে আল্লাহ(Allah) ছাড়া এলাহ নেই (মুয়ায বিন জাবাল (রাঃ) থেকে আহমদ)।" (এই হাদীসে মোহাম্মদুর রসুলুল্লাহ পর্য্যন্ত নেই)। "আল্লাহ(Allah) ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই এই বিশ্বাস নিয়ে যে মৃত্যুমুখে পতিত হবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে [ওসমান (রাঃ) থেকে মুসলিম(Muslim)]"। (এ হাদীসটাতেও রসুলুল্লাহর (দঃ) উল্লেখ নেই)। এমনি বহু হাদীস পেশ করা যায়, যা থেকে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ হয় যে, একমাত্র তওহীদই মুসলিমের জন্য জাহান্নাম থেকে বাঁচার এবং জান্নাতে প্রবেশ করার জন্য যথেষ্ট। কিন্তু সে কোন্ তওহীদ? বর্তমানের ব্যক্তিগত তওহীদ নয়, এ তওহীদ আংশিক অর্থাৎ শেরক এবং এ শেরকের ক্ষমা নেই। হাদীসগুলির ঐ তওহীদ সর্বব্যাপী তওহীদ, জীবনের সর্বস্তরে সর্ব অঙ্গনের তওহীদ। ঐ তওহীদ যার বা যাদের আছে তাদের কোন ভয় নেই- জান্নাতের চাবি তাদের হাতে। কোন গুনাহ কোন পাপ তাদের জান্নাত থেকে ফিরিয়ে রাখতে পারবে না। এ আমার কথা নয়, এ বইয়ে আমার কথা লিখতে বসিনি; একথা আল্লাহ(Allah)র রসুলের(দঃ)। তাহোলে শুনুন, রসুলুল্লাহ (দঃ) আবু যারকে (রাঃ) বোললেন, "যে বলে আল্লাহ(Allah) ছাড়া এলাহ নেই এবং সেই বিশ্বাস নিয়ে মারা যায় সে জান্নাতে প্রবেশ কোরবেই। এ কথা শুনে আবু যার (রাঃ) প্রশ্ন কোরলেন- যদি সে লোক ব্যাভিচার ও চুরি করে? আল্লাহ(Allah)র রাসুল (দঃ) জবাব দিলেন, সে ব্যভিচার ও চুরি কোরলেও।" আবু যর (রাঃ) নিশ্চয়ই কিছুটা আশ্চর্য হোয়েছিলেন তার নেতার কথায়, কারণ হাদীসে আমরা পাই তিনি তিন তিন বার তাকে প্রশ্ন কোরেছিলেন সে ব্যভিচার ও চুরি কোরলেও? এবং মহানবী (দঃ) তিন তিনবারই তাকে একই জবাব দিয়েছিলেন, হ্যা সে ব্যভিচার ও চুরি কোরলেও এবং শেষ বার যোগ কোরেছিলেন "আবু যারের নাক কেটে দিলেও [হাদীস আবু যার (রাঃ) থেকে বোখারী ও মুসলীম]।"

সর্বমোট রসুলুল্লাহ চারবার একথা বোলেছিলেন। আর এই হাদীসটির সত্যতা সম্বন্ধে কোন সন্দেহ নেই কারণ এটির বর্ণনাকারী হোচ্ছেন অন্যতম শ্রেষ্ঠ সাহাবী আবু যার (রাঃ) যাকে মহানবী (দঃ) আল্লাহ(Allah)র নবী ঈসার (আঃ) সঙ্গে তুলনা কোরেছেন এবং এর সত্যতা সমর্থন কোরেছেন দুই জন শ্রেষ্ঠ মোহাদ্দেস, বোখারী ও মুসলিম(Muslim)। ঐ হাদীসগুলোতে বিশ্বনবী (দঃ) যে তওহীদের কথা বোলেছেন বর্তমানে ঐ তওহীদ অতি সামান্য সংখ্যক লোক ছাড়া আর কারুর মধ্যে নেই। ঐ তওহীদ হলো সেরাতুল মুস্তাকীম, দ্বীনুল কাইয়্যেমা ও ইসলামের ভিত্তি যার ওপর এই জীবন-ব্যবস্থা দাঁড়িয়ে আছে। ঐ ভিত্তি-বুনিয়াদ- বাদ দিয়ে যত ধুমধামের সাথেই নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত, তসবিহ, যিকর, দাড়ি, টুপি, আলখেল্লা আর কুলুখ নেয়া হোক, কোনই কাজে আসবে না, কিছুই আল্লাহ(Allah)র কাছে গৃহিত হবেনা। বুনিয়াদ ছেড়ে দিলে আনুসঙ্গিক আর সব অর্থহীন। আর ভিত্তি- বুনিয়াদ-ঠিক থাকলে আনুসঙ্গিক সব কিছুই ঠিক হোয়ে যাবে। মহানবী (দঃ) যে তওহীদের কথা বোলেছেন, যে তওহীদের মরতবায় ব্যাভিচার ও চুরির মত গোনাহে কবীরাও বিলীন হোয়ে যায়, সে তওহীদ জাতীয় ও ব্যক্তিগত উভয় জীবনের তওহীদ। জাতীয় জীবনে তওহীদ অর্থই রাজনীতিতে, অর্থনীতিতে, সমাজনীতিতে, আইন-কানুনে, দণ্ডবিধিতে তওহীদ। এবং এই গুলিতে তওহীদ অর্থ অবশ্যই রাষ্ট্রশক্তি; কারণ রাষ্ট্রশক্তি ছাড়া ঐসব গুলিতে তওহীদ প্রতিষ্ঠা অসম্ভব। এই কারণেই আল্লাহ(Allah) কোরানে বোলেছেন "যারা আল্লাহ(Allah) যা অবতীর্ণ কোরেছেন (কোরান) সেই মোতাবেক আদেশ-নিষেধ (শাসন) করে না তারা কাফের, যালেম ও ফাসেক (কোরান- সূরা আল-মায়েদা ৪৪, ৪৫, ৪৭)।" এখানে আল্লাহ(Allah) শব্দ ব্যবহার কোরছেন হুকুম, যার অর্থ হলো শাসন-বিচার, আদেশ-নিষেধ ইত্যাদি সব। রাষ্ট্রশক্তি ছাড়া শাসন বিচার, আদেশ নিষেধ ইত্যাদি অসম্ভব, এটা সাধারণ জ্ঞান। হুকুমের শক্তি ও অধিকার হাতে পেয়েও যে বা যারা আল্লাহ(Allah) যা অবতীর্ণ কোরেছেন অর্থাৎ কোরান ও হাদীস মোতাবেক রাষ্ট্র পরিচালনা করে না তারা আল্লাহ(Allah)র কথা মোতাবেক কাফের, যালেম ও ফাসেক; তারা সারারাত নামায পড়লেও সারা বছর রোযা রাখলেও। কোরান মোতাবেক বর্তমানের সমস্ত মুসলিম(Muslim) দেশের শাসকরা, নেতৃবর্গ ঐ কাফের, যালেম ও ফাসেক, নামায পড়তে পড়তে তাদের কপালে কড়া পড়লেও, রোযা রাখতে রাখতে শুকনো হোয়ে গেলেও এবং উৎকৃষ্ট মুরীদ হোলেও তাই। জাতীয় জীবনে তওহীদ অর্থাৎ আল্লাহ(Allah)র দেয়া বিধান প্রতিষ্ঠাই হোচ্ছে উম্মতে মোহাম্মদীর প্রধান ও মূখ্য উদ্দেশ্য। তাই ইতিহাসে আমরা পাই যে উম্মতে মোহাম্মদী, বিশ্বনবীর (দঃ)আসহাব (রাঃ) যখন পৃথিবীতে এই তওহীদ, সিরাতুল মুস্তাকীম, দ্বীনুল কাইয়্যেমা প্রতিষ্ঠার জন্য সর্বত্যাগী সন্ন্যাসী হোয়ে অস্ত্র হাতে আরব থেকে বের হোয়ে পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছিলেন তখন তারা পৃথিবীর মানুষকে যে প্রস্তাব দিয়েছিলেন তাতে ব্যক্তিগত ভাবে তাদের ধর্ম ত্যাগ কোরে মুসলিম(Muslim) হোয়ে যাওয়া বাধ্যতামূলক ছিলো না, বাধ্যতামূলক ছিলো রাষ্ট্রশক্তি উম্মতে মোহাম্মদীর হাতে ছেড়ে দেওয়া, তাতে রাজী না হোলে বিকল্প মাত্র একটি আর তা হোচ্ছে কিতাল অর্থাৎ যুদ্ধ। তারপর সশস্ত্র যুদ্ধে জয়লাভ করার পরও কাউকে তারা বাধ্য করেননি তার ধর্ম ত্যাগ কোরতে। শুধু তাই নয় তাদের ধর্মে অন্য কেউ হস্তক্ষেপ না করে তাদের ধর্মমন্দির, উপসনালয় গুলির নিরাপত্তার ভারও তারা নিয়েছিলেন এবং তা কোরতে গিয়ে ক্ষতি ও ত্যাগ স্বীকার কোরেছেন তা ইতিহাস, সর্বসম্মত ইতিহাস। এই ইতিহাস প্রমাণ করে যে, ঐ উম্মতে মোহাম্মদীর আকীদা কী ছিলো। ঐ ইতিহাসই প্রমাণ করে যে জাতীয় জীবনে ইসলাম(Islam), তওহীদ, দ্বীনুল কাইয়্যেমাই প্রধান মূখ্য, ব্যক্তিজীবন গৌণ। ব্যাভিচার ও চুরি, ব্যক্তি জীবনের গুনাহ, পাপ, এগুলি মানুষ রিপুর প্ররোচনায় কোরে ফেলে, কিন্তু সে অনুতপ্ত হোয়ে মাফ চাইলে আল্লাহ(Allah) আশ্বাস দিয়েছেন তিনি মাফ কোরবেন, কারন তিনি গফুরুর রহীম, আযীযুল গফুর। কিন্তু জাতীয় জীবনে তার দেয়া দ্বীন প্রত্যাখ্যান কোরে ব্যক্তি জীবনে মহা মুসলিম(Muslim) হলেও তা শেরক, অর্থাৎ আল্লাহ(Allah)কে আংশিক বিধাতা স্বীকার করা। আল্লাহ(Allah) প্রতিজ্ঞাবদ্ধ যে তিনি শেরক মাফ কোরবেন না। গাফুরুর রহীম আযীযুল গফুর আল্লাহ(Allah)র চেয়ে বড় ক্ষমাশীল আর কেউ নেই, তিনি নিজেকে বোলেছেন শ্রেষ্ঠ ক্ষমাশীল। সেই শ্রেষ্ঠ ক্ষমাশীল শেরক ক্ষমা না করার প্রতিজ্ঞা কোরছেন। কেন? এই জন্য যে মানুষ শেরক ত্যাগ কোরে একমাত্র তাকেই বিধানদাতা অর্থাৎ এলাহ বোলে স্বীকার কোরে না নেয়ার অবশ্যম্ভাবী ফল হোচ্ছে অন্যায়, অবিচার, যুদ্ধ-রক্তপাত ও অশান্তি অর্থাৎ শয়তানের জয়, আর অন্যায়, অবিচার, যুদ্ধ ও অশান্তি থেকে বাঁচতে হোলে আল্লাহ(Allah)র দেয়া বিধান জাতীয় জীবনে প্রতিষ্ঠা না কোরলে শুধু ব্যক্তি-জীবনে মেনে চললে কোনই ফল হবে না, যেমন আজ হোচ্ছে না। তাই সেই শ্রেষ্ঠ ক্ষমাশীলও এ ব্যাপারে ক্ষমাহীন, কারণ তার মূখ্য উদ্দেশ্যই ব্যর্থ হোয়ে যায়। তাই তিনি ব্যক্তি জীবনের চুরি ও ব্যাভিচারের মত ব্যক্তিগত গোনাহকেও ক্ষমা করার আশ্বাস দিয়েছেন, যদি মানুষ তাকে একমাত্র এলাহ অর্থাৎ সম্পূর্ণ জীবনের (জাতীয় রাষ্ট্রীয় ও ব্যক্তি জীবনের) একমাত্র বিধাতা বোলে স্বীকার ও গ্রহণ কোরে নেয়। তাই রাষ্ট্রশক্তি ছাড়া ইসলাম(Islam) ইসলাম(Islam)ই নয়, তা শেরক।

ব্যক্তি জীবনের শুধু নয়, রাষ্ট্রশক্তিহীন সামাজিক ইসলাম(Islam)ও যে পৃথিবীতে অশান্তি দূর কোরে শান্তি (ইসলাম(Islam)) আনতে পারবে না তার প্রমাণ বর্তমান মুসলিম(Muslim) দুনিয়া। আজ পৃথিবীর জনসংখ্যার এক পঞ্চমাংশ অর্থাৎ পাঁচ ভাগের এক ভাগ তথাকথিত মুসলিম(Muslim)। অমুসলিম(Muslim) দুনিয়াতে যে অশান্তি, মারামারি, কাটাকাটি, অর্থনৈতিক অবিচার চলছে, মুসলিম(Muslim) দুনিয়াতেও তাই। অর্থাৎ আজ যদি বাকি দুনিয়ার সব মানুষ বর্তমানের এই ব্যক্তিগত ইসলাম(Islam) গ্রহণ কোরে মুসলিম(Muslim) হোয়ে যায় তাহোলেও এই অশান্তি, যুদ্ধ, রক্তপাত যেমন আছে তেমনই থাকবে, পৃথিবীতে শান্তি অর্থাৎ ইসলাম(Islam) আসবে না। এর দু'টি মাত্র অর্থ হোতে পারে। (ক) বর্তমানের ইসলাম(Islam) (ব্যক্তিগত ইসলাম(Islam)) যদি প্রকৃত ইসলাম(Islam) হোয়ে থাকে তবে তা শান্তি প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থ অর্থাৎ আল্লাহ(Allah)র কথা ভুল (নাউজুবিল্লাহ) (খ) বর্তমানের এই চালু ইসলাম(Islam) শেষনবী (দঃ) প্রবর্তিত ইসলাম(Islam) নয়। যেহেতু প্রথমটি সম্ভব নয় কাজেই দ্বিতীয় সিদ্ধান্ত সঠিক। মনে হয় কথাটা আরও পরিষ্কার কোরে বুঝে নেয়ার দরকার আছে। যে কোন ব্যবস্থাকেই সফল ও সার্থক হোতে হোলে তার দু'টো দিক থাকতে হবে এবং ঐ দু'টো দিকের মধ্যে ভারসাম্য থাকতে হবে। ভারসাম্যহীন বা একটির অনুপস্থিতিতে সে ব্যবস্থা অচল হোয়ে পড়তে বাধ্য। মানুষের তৈরী রাষ্ট্র ব্যবস্থাই ধরুন। প্রত্যেকটিই একদিকে যেমন মানুষকে শিক্ষা দেয় কোনটা সেই ব্যবস্থায় ন্যায় এবং কোনটা অন্যায়। তেমনি সেগুলি লংঘন কোরে অন্যায় কোরলে রাখে শাস্তির ব্যবস্থা। এমন কোন ব্যবস্থাই নেই যাতে শুধু একটি দিক আছে। যদি কোন ব্যবস্থায় শুধু প্রথম দিকটি অর্থাৎ কোন রাষ্ট্রে, বিদ্যালয়ে, সভা-সমিতিতে উপদেশ-নসিহতে মানুষকে ন্যায়-অন্যায়, আইন-বেআইন ইত্যাদি শিক্ষা দেয়া হয়, কিন্তু অন্যায় কোরলে আইন ভাংলে যদি কোন শাস্তির ব্যবস্থা (দণ্ডবিধি) না থাকে তবে কোন কাজ হবে না। হোলেও সমাজের একটি ক্ষুদ্র অংশ ঐ আইন-কানুন মেনে চলবে এবং বৃহৎ অংশ অন্যায় ও অপরাধে লিপ্ত হোয়ে পড়বে এবং ঐ ক্ষুদ্র ভাল অংশ বৃহত্তর অন্যায়ের চাপে কালে বিলুপ্ত হোয়ে যাবে। আর যদি কোন ব্যবস্থায় মানুষের ন্যায়-অন্যায়, আইন-বেআইন শিক্ষার কোন ব্যবস্থা না কোরে যদি শুধু দণ্ডবিধি প্রণয়ন কোরে অপরাধ কোরলেই শাস্তি দিতে থাকে, তবে কোন্‌টা অপরাধ কোন্‌টা অপরাধ নয় তা না জেনে মানুষ ক্রমাগত অপরাধ কোরতে থাকবে আর শাস্তি পেতে থাকবে। কাজেই যে কোন ব্যবস্থাকে সফল ও অর্থবহ হোতে হোলে তাকে ঐ দুইয়ের ভারসাম্যযুক্ত, সমন্বিত কোরতে হবে। আইন ও দণ্ডবিধি প্রণয়ন কোরতে হবে এবং মানুষকে সর্বতোভাবে ন্যায়-অন্যায় ও অপরাধ সম্বন্ধে শিক্ষা দিতে হবে, তারপর তাদের বুঝিয়ে দিতে হবে যে কোন্‌টা ন্যায়, কোন্‌টা অন্যায়, কোন্ কাজ অপরাধ এবং ঐ অপরাধের শাস্তি কি এবং কেউ অপরাধ কোরলে তাকে ঐ আইন অনুযায়ী শাস্তি দেয়া হবে। শেষ জীবন-ব্যবস্থা ইসলাম(Islam)ও তাই। শিক্ষা ও শাস্তির একটি সুষ্ঠু ভারসাম্যযুক্ত জীবন-বিধান। অন্য বিধান (দ্বীন) গুলির সঙ্গে তফাৎ এই যে অন্যগুলি মানুষের তৈরী, যা ব্যর্থ হোতে বাধ্য, যেমন আজ হোচ্ছে, আর ইসলাম(Islam) স্রষ্টার তৈরী সুতরাং নিখুঁত। কিন্তু এই নিখুঁত ব্যবস্থাও ব্যর্থ হোতে বাধ্য যদি এর শুধু একটি দিককে প্রয়োগ করা হয়। তখন আর সেটা ভারসাম্যযুক্ত ‘ওয়াসাতা' (কোরান সূরা আল-বাকারা ১৪৩) তো হবেই না তা খাঁটি শেরকে পর্যবসিত হবে। তাই আইন, রাজনীতি, অর্থনীতি, শিক্ষানীতি, দণ্ডবিধিবিহীন ব্যক্তিগত ইসলাম(Islam) শুধু ভারসাম্যহীন নয়, বলা যায় ইসলমাই নয়- কারণ দু'টো ভাগের মধ্যে প্রধান ও বেশী গুরুত্বপূর্ণটাই নেই। সুতরাং কোন জাতি যদি তাকওয়ার পরাকাষ্ঠাও করে, চূড়ান্ত মুত্তাকী হোয়ে যায়, এমন কি যদি সে জাতির প্রতিটি মানুষ তাহাজ্জদী হোয়ে যায়, কিন্তু যদি তাদের জাতীয়, সমষ্টিগত জীবন মানুষের তৈরী আইন-কানুন, অর্থনীতি, দণ্ডবিধি দিয়ে পরিচালিত হয় তবে সে জাতি মুসলিম(Muslim) নয়, সেটা মোশরেক ও কাফের।

আজকের পৃথিবীতে শত শত নয়, হাজারে হাজারে প্রতিষ্ঠান আছে যেগুলো নানাভাবে মানুষকে অন্যায় থেকে, পাপ থেকে বিরত রাখতে, পুণ্য সওয়াবের কাজে উদ্বুদ্ধ করার কাজে ব্যস্ত আছে। এই রকমের প্রতিষ্ঠান ইসলাম(Islam), খ্রীস্ট, হিন্দু, বৌদ্ধ ইত্যাদি পৃথিবীর সব ধর্মেরই আছে। এরা সাধ্যমতো চেষ্টাও কোরে চলেছে মানুষকে অন্যায়-পাপ থেকে ন্যায় ও পূণ্যে ফিরিয়ে আনতে। পারছে কি? না, দশ বিশ বছর আগের পৃথিবীর অন্যায় অপরাধের অবস্থার সঙ্গে একটা পরিসংখ্যান তুলনা কোরলেই পরিষ্কার হোয়ে যাবে যে ঐসব মহৎ প্রচেষ্টা মানব জাতিকে সমষ্টিগতভাবে উন্নত কোরতে পারেনি, তাদের অন্যায়, অপরাধের সংখ্যা কমাতে পারেনি বরং তা বহু বেড়ে গেছে। দশ বিশ বছর আগের তুলনায় শুধু যে পৃথিবীময় অন্যায়, অপরাধ (চুরি, ডাকাতি, রাহাজানি, ধর্ষণ, ছিনতাই, খুন জখম ইত্যাদি) দ্রুতগতিতে বেড়ে চলেছে তাই নয়, ঐসব মহতি প্রতিষ্ঠানগুলির অবিশ্রান্ত প্রচার সত্ত্বেও মানব জাতি আজ পারমাণবিক আত্মহত্যার মুখোমুখি এসে দাঁড়িয়েছে, আর মাত্র একটি পদক্ষেপ বাকি। কেন ঐসব মহতি প্রতিষ্ঠানগুলির চেষ্টার কোন ফল হোচ্ছে না? যদিও ঐ কাজ কোরতে বহু কোটি টাকা প্রতি বছর খরচ হোচ্ছে? তার কারণ শুধু শিক্ষা দিয়ে, উপদেশ দিয়ে মানুষকে শৃংখলায় আনা যাবে না, যদি শিক্ষা উপদেশের পর তা ভঙ্গ কোরে অপরাধ কোরলে কঠিন, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা না থাকে বা না দেয়া যায়। বর্তমান মুসলিম(Muslim) দুনিয়াতেও অনেক প্রতিষ্ঠান আনজুমান, জামাত ইত্যাদি আছে যেগুলো মুসলিম(Muslim)দের আরও ভালো ‘মুসলিম(Muslim)' বানাবার জন্য প্রচার সভা-সমিতি এজতেমা ওয়াজ মাহফিল ইত্যাদি কোরে কোটি কোটি টাকা খরচ করেন, বহু পরিশ্রম করেন। এরা পণ্ডশ্রম করেন। এইসব প্রতিষ্ঠানগুলি বহু বছর থেকেই এই কাজ কোরছে, ত্রিশ-চল্লিশ বছর আগে এই ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলির যে সংখ্যা ছিলো এবং যতলোক এগুলোতে শামিল ছিলো আজ তার চেয়ে অনেক বেশী। কিন্তু একটি পরিসংখ্যান নিয়ে দেখুন ত্রিশ-চল্লিশ বছর আগে জনসংখ্যার অনুপাতে বিভিন্ন দেশে শতকরা যতভাগ চুরি, ডাকাতি, খুন, ব্যভিচার ইত্যাদি হতো আজ তার চেয়ে অনেক বেশী। একটি বিশ্ববিখ্যাত প্রতিষ্ঠান আছে যেটার প্রচারিত উদ্দেশ্য হোচ্ছে ইসলাম(Islam) ধর্ম প্রচার ও শিক্ষা দেয়া। বিভিন্ন দেশের লক্ষ লক্ষ মানুষ ঐ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত থেকে ঐ কাজ করেন। এরা জোর দিয়ে প্রকাশ করেন যে তাদের প্রতিষ্ঠান নিছক ‘ধর্মীয়' সুতরাং অরাজনৈতিক। একটি ‘মুসলিম(Muslim)' প্রধান দেশে এরা বছরে একবার একত্রিত হন। বলা হয় এদের এই সমাবেশে হজ্জের চেয়েও বেশী লোক হয়।যেখানে ঐ বাৎসরিক সম্মেলন হয় ঐ দেশটাকেই ধরুন উদাহরণ স্বরূপ। ত্রিশ-চল্লিশ বছর আগে ঐ দেশটাতে জনসংখ্যার অনুপাতে যে অপরাধ হতো আজ তার চেয়ে বহুগুণ বেশী অপরাধ ঘটছে। শুধু তাই নয় তখন যত রকমের অপরাধ ঘটতো আজ তার চেয়ে অনেক বেশী নতুন নতুন ধরনের অপরাধ যোগ হোয়েছে। তাহলে কোটি কোটি টাকা ব্যয় কোরে হজ্জের পর পৃথিবীর বৃহত্তম ‘মুসলিম(Muslim)' সম্মেলন কোরে, এত পরিশ্রম কোরে লাভটা কী হলো? সত্যিকার ইসলাম(Islam) বাদ দেন, অন্যান্য ধর্মও যেটুকু কোরতে চেষ্টা করে, অর্থাৎ মানুষকে ব্যক্তিগতভাবে অন্যায় অপরাধ থেকে বিরত রাখা, সেটুকুও তো তারা কোরতে ব্যর্থ হোয়েছেন। মসজিদ থেকে জুতা চুরিটুকুও তো তারা বন্ধ কোরতে পারেননি, বরং জুতা চুরি চল্লিশ বছর আগের চেয়ে আজ অনেক বেশী। শুধু তাই নয়, এখন মসজিদের দরজা ভেঙ্গে মাইক, ফ্যান, ঘড়িও চুরি হয়ে যায়।

আগেই বোলেছি পণ্ডশ্রম, কিছুই হবে না। এই জন্য হবে না যে, অপরাধ কোরলে তার শাস্তি দেবার শক্তি না থাকলে শুধু ওয়াজ-নসিহত কোরে মানুষকে অপরাধ থেকে ফেরানো যাবে না। এবং ঐ শাস্তি দেয়ার ক্ষমতা রাষ্ট্রশক্তি ছাড়া সম্ভব নয়। কাজেই রাষ্ট্রশক্তিহীন ইসলাম(Islam) পূর্ণ ইসলাম(Islam)ই নয়, শুধু আংশিক, কাজেই ব্যর্থ এবং আংশিক ইসলাম(Islam) আল্লাহ(Allah) গ্রহণ করেন না, কারণ তা শেরক। সামাজিক জনকল্যাণকর প্রতিষ্ঠানগুলির ব্যাপারেও ইসলামের নীতি বর্তমানের ইসলামের নীতি থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। যেখানে শেষ নবী (দঃ) প্রবর্তিত শেষ ইসলাম(Islam) প্রতিষ্ঠিত হবে সেখানে সামাজিক পর্য্যায়ে ইয়াতীমখানা, আনজুমানে মফিদুল ইসলাম(Islam), পঙ্গু-আবাস, প্রতিবন্ধী-আবাস ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানের কোনই প্রয়োজন হবে না, কারণ, এ সমস্ত দায়িত্ব রাষ্ট্রের। তাই মহানবী (দঃ) ঐ ধরনের কোন প্রতিষ্ঠান সৃষ্টি করেননি। যে ইয়াতীমদের সম্পর্কে স্বয়ং আল্লাহ(Allah) তার কোরানে বহুবার উল্লেখ কোরেছেন; যে ইয়াতীমদের সম্বন্ধে বিশ্বনবী (দঃ) এতবার বোলেছেন; সেই ইয়াতীমদের জন্য একটি ইয়াতীখানা তিনি প্রতিষ্ঠা কোরতে পারতেন না? যে বিস্ময়কর মহাকর্মী পৃথিবীতে একটা মহাশক্তি সৃষ্টি কোরলেন তার সামান্য একটি নির্দেশেই তো শত শত ইয়াতীমখানা প্রতিষ্ঠিত হোয়ে যেতো। তিনি তা করেন নি, তা তার সুন্নাহ নয়, কারণ তিনি জানতেন যে, যে রাষ্ট্র তিনি প্রতিষ্ঠা কোরে গেলেন যে জীবন ব্যবস্থা তিনি চালু কোরে গেলেন তা যদি মানুষ তাদের জীবনে চালু রাখে, বিকৃত না করে তবে ঐ সব জনকল্যাণকর প্রতিষ্ঠানের কোনই প্রয়োজন হবে না, রাষ্ট্রই সে দায়িত্ব নেবে।

আজ ‘মুসলিম(Muslim)দের' আকীদায় রাষ্ট্রের কোন স্থান নেই। ‘ধর্ম' বোলতে তাদের আকীদা ও খ্রীস্টান, ইহুদী, বৌদ্ধ, জৈন, হিন্দু ইত্যাদির আকীদার সঙ্গে কোন প্রভেদ নেই। তাদের মতই এদের ‘ধর্ম' ব্যক্তিগত পর্য্যায়ে সীমাবদ্ধ ইসলাম(Islam), মহানবী (দঃ) প্রবর্তিত ইসলাম(Islam) নয়। তার শেখানো ইসলাম(Islam) প্রথমেই আরবের রাষ্ট্রশক্তি হস্তগত কোরেছিলেন। তারপর তার চলে যাবার পর সে ইসলাম(Islam) দুর্বার সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে অর্দ্ধেক দুনিয়ার রাষ্ট্রশক্তি অধিকার কোরেছিলো, এটা সর্বসম্মত ইতিহাস। ঐ সময়ে ঐ ইসলামে অন্য কোন মযহাব ছিলো না, কোন ফেরকা ছিলো না, মসলা মসায়েল নিয়ে কোন মতভেদ ছিলো না, কোন পীর মুরীদ ছিলো না, খানকাহ, হুজরা, ছিলো না, মসলা মসায়েল বিশ্লেষণকারী পুরোহিত যাজকশ্রেণী ছিলো না। ছিলো শুধুমাত্র দ্বীনুল কাইয়্যেমা, সনাতন ধর্ম সেরাতুল মুস্তাকীম। অর্থাৎ একমাত্র আল্লাহ(Allah)র সার্বভৌমত্ব, সালাত ও যাকাত, এবং ঐ দ্বীনুল কাইয়্যেমা, সেরাতুল মুস্তাকীমকে সমস্ত পৃথিবীতে রাষ্ট্রীয় পর্য্যায়ে প্রতিষ্ঠা কোরে মানব জাতির জীবনের প্রতি স্তরে শান্তি আনয়ন করার নিরবচ্ছিন্ন সংগ্রাম, জেহাদ। আর আজ ঐ দ্বীনুল কাইয়্যেমার সেরাতুল মুস্তাকীমের সংবিধানের চুলচেরা বিচার-বিশ্লেষণ করা আছে, বহু মযহাব বহু ফেরকায় বিভক্তি আছে, মসলা মাসায়েল নিয়ে নিজেদের মধ্যে মারামারি কাটাকাটি আছে, যাজক শ্রেণী আছে, বহু রকম তরিকা আছে, বহু রকম পীর-মুরীদ আছে, খানকাহ আছে, কিন্তু রাষ্ট্রীয় পর্য্যায়ে ইসলাম(Islam) নেই, ওখানে আল্লাহ(Allah)র ওয়াহদানীয়াত নেই এবং তা করার জেহাদও নেই। সুতরাং এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, ঐ দুই ইসলাম(Islam) একেবারে ভিন্ন জিনিষ, একটা অপরটার বিপরীতমুখী। যেহেতু মহানবীর (দঃ) প্রবর্তিত ইসলাম(Islam) এবং বর্তমানের ইসলাম(Islam) ভিন্ন, সুতরাং ঐ ভিন্ন ইসলামের উৎপাদিত জাতিগুলিও সম্পূর্ণ ভিন্ন এবং বিপরীতমুখী। আল্লাহ(Allah)র রসুলের (দঃ) ইসলাম(Islam) সৃষ্টি কোরেছিলো এক অজেয় দুর্দ্ধর্ষ যোদ্ধা জাতি, আজকের ইসলাম(Islam) সৃষ্টি করে কাপুরুষ-ভীতু, যারা যুদ্ধের-সংগ্রামের কাছ দিয়েও যায় না। মহানবীর (দঃ) ইসলাম(Islam) সৃষ্টি কোরেছিলো এক সিংহের জাতি, দ্বীনের সামান্যতম বিপদে হুংকার দিয়ে শত্রুর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়তো, আজকের ইসলাম(Islam) সৃষ্টি করে খরগোস, বিপদের আভাস পাওয়া মাত্র যেগুলি পাগড়ীর লেজ হাওয়ায় উড়িয়ে তীব্রবেগে গর্তের ভেতর লুকায়। বিশ্বনবীর (দঃ) ইসলাম(Islam) যে মুসলিম(Muslim) সৃষ্টি কোরেছিলো তা সুদুর সিন্ধু দেশে একটি মুসলিম(Muslim) মেয়ের অপমানিত হবার খবর পেয়ে সেখানে মুজাহীদ বাহিনী পাঠিয়ে দিয়েছিলো, আজকের ইসলাম(Islam) যে ‘মুসলিম(Muslim)' সৃষ্টি করে তা কয়েক মাইল দূরে তাদের মতই ‘মুসলিম(Muslim)'দের হত্যা করা হোচ্ছে খবর পেয়ে নির্বিকারভাবে ওযু কোরে টাখনুর ওপর পাজামা পড়ে মাথায় টুপি দিয়ে হাতে তসবিহ নিয়ে মসজিদে যায়। আল্লাহ(Allah)র রসুল (দঃ) তার নবীজীবনের সংগ্রামের অতি প্রাথমিক সময়ে বোলেছিলেন "শীগগিরই সময় আসছে, যখন একা একটি মেয়েমানুষ সানা থেকে হাদ্রামাউত পর্য্যন্ত (কয়েকশ'মাইল) নির্ভয়ে চলাফেরা কোরতে পারবে [হাদীস- খাব্বাব (রাঃ) থেকে বোখারী]।" অর্থাৎ ঐ রকম নিরাপত্তা সৃষ্টি করা রাষ্ট্রশক্তি ছাড়া সম্ভব নয়। তাই ইতিহাস এই যে কিছুদিন পরই তার (দঃ) প্রবর্তিত ইসলাম(Islam) আরবের রাষ্ট্রশক্তি দখল কোরে তার ভবিষ্যতবাণীর নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা কোরেছিলো যদিও তখন ঐ ইসলামের মুসলিম(Muslim) সংখ্যায় ছিলো মাত্র দু'তিন লাখ। আর আজকের ইসলাম(Islam) উৎপাদন করে যে ‘মুসলিম(Muslim)' তারা আট দশ লাখ একত্র হোয়ে এজতেমা করে। তাদের চারিদিকে চলে হত্যা, ধর্ষণ, চুরি, ডাকাতি, রাহাজানি, ঘুষ ছিনতাই। আর রাষ্ট্র শাসিত হয় সেই আইন-কানুন দিয়ে যেগুলো ধ্বংস কোরে আল্লাহ(Allah)র আইন প্রতিষ্ঠা কোরতে বিশ্বনবী (দঃ) প্রেরিত হোয়েছিলেন। বিশ্বনবীর (দঃ) প্রবর্তিত ইসলাম(Islam) যে মুসলিম(Muslim) উৎপাদন কোরেছিলো সে মুসলিমের আকীদা এই ছিলো যে তাদের নেতা আল্লাহ(Allah)র রসুলের (দঃ) জীবনের উদ্দেশ্য ছিলো সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে সমস্ত পৃথিবীর রাষ্ট্রশক্তি অধিকার কোরে শেষ ইসলাম(Islam) সমস্ত মানব জাতির ওপর কায়েম কোরে পৃথিবীময় শান্তি প্রতিষ্ঠা, আর আজ যে ইসলাম(Islam) প্রচলিত তা যে মুসলিম(Muslim) উৎপাদন করে তাদের আকীদা হলো এই যে আল্লাহ(Allah) নবী রাসুলদের নেতা, তার সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি যার কোন তুলনা নেই তাকে পাঠানো হোয়েছিলো মানুষকে টাখনুর ওপর পাজামা পড়ার মত, মাথায় টুপি দেবার মত, দাঁত মাজার মত, কুলুখ নেয়ার মত, ডান পাশে শোয়ার মত তুচ্ছ ব্যাপার শেখাতে। মানুষের ইতিহাসে বোধহয় কোন জাতি তার নেতার এমন অপমানকর অবমূল্যায়ন করেনি। কাহ্হার আল্লাহ(Allah)ও তার শ্রেষ্ঠ ও প্রিয়তম রসুলের (দঃ) এই অপমানের প্রতিশোধ নিতে ছাড়েন নি। তিনি ইউরোপীয়ান খ্রীস্টান জাতিগুলি দিয়ে এদের লাইন কোরে দাঁড় কোরিয়ে মেশিনগান করিয়েছেন, বেয়নেট কোরে, জীবন্ত কবর দিয়ে, পুড়িয়ে, ট্যাংকের তলে পিষে মেরেছেন, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, শিশুরাও বাদ যায়নি, এদের মেয়েদের ইউরোপের আফ্রিকার বেশ্যালয়ে বিক্রি করিয়েছেন এবং তারপর মাত্র চারটি ছোট দেশ বাদে মরক্কো, থেকে ফিলিপাইন পর্য্যন্ত এই বিশাল এলাকার সমস্তটুকুর রাষ্ট্রশক্তি এদের হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়ে ইউরোপীয়ান জাতিগুলির হাতে দিয়ে দিয়েছেন এবং তারা এদের সর্বস্ব লুণ্ঠণ ও শোষণ কোরে দারিদ্র্যের চরম সীমায় নামিয়ে দিয়েছে, গৃহপালিত পশুর মত এদের নিজেদের কাজে লাগিয়েছে, তাদের জুতা পরিষ্কার করিয়েছে।

পৃথিবীর রাজনৈতিক পারিপার্শ্বিক অবস্থার কারণে কিছুদিন আগে এই তথাকথিত মুসলিম(Muslim) জাতি ইউরোপের দাসত্ব থেকে মুক্তি পেয়েছে। কিন্তু মুক্তি তারা দিয়ে গেলেও এরা মুক্তি নেয়নি। এখনও স্বেচ্ছায় তাদের পূর্ব প্রভূদের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, শিক্ষা-সংস্কৃতি, কৃষ্টি ও সভ্যতা(Civilization)র দাসত্ব কোরছে। আর যারা মহা মুসলিম(Muslim) তারা সেই আগের মতই ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ বিপ্লবী, যিনি মানব জাতির জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিলেন তাকে টুপি, পাগড়ী, আর দাড়ি-মোচের মধ্যে সীমাবদ্ধ কোরে তার চরম অপমান কোরে চলেছেন। এরা যদি আজও সেই পৃথিবী কাঁপানো ব্যক্তিত্বকে তাদের নিজেদের মতো গর্তের ভেতরে লুকানো মেরুদণ্ডহীন খরগোশ মনে কোরে তার অপমান কোরতে থাকেন তবে এরপর আল্লাহ(Allah)র শাস্তি হবে আরো কঠিন, তার প্রতিশোধ হবে আরও ভয়াবহ।

২টি মন্তব্য:

Unknown বলেছেন...

খবই চমৎকার বক্তব্য

মোঃ মোজাফফর হোসেন বলেছেন...

খবই চমৎকার বক্তব্য