বৃহস্পতিবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০১১

২০। হজ্জের উদ্দেশ্য

উৎস: Islam and Dajjal
নামাজের মত আজ হজ্জ সম্বন্ধেও এই জাতির আকীদা বিকৃত হোয়ে গেছে। এই বিকৃত আকীদায় হজ্জ আজ সম্পূর্ণরূপে একটি আধ্যাত্মিক ব্যাপার, আল্লাহর(Allah) সান্নিধ্য অর্জন করার পথ। প্রথম প্রশ্ন হোচ্ছে- আল্লাহ(Allah) সর্বত্র আছেন, সৃষ্টির প্রতি অনু-পরমাণুতে আছেন, তবে তাকে ডাকতে, তার সান্নিধ্যের জন্য এত কষ্ট কোরে দূরে যেতে হবে কেন? তার নিজের আত্মা তিনি মানুষের দেহের মধ্যে ফুঁকে দিয়েছেন (কোরান- সূরা আল-হিজর- ২৯)। অর্থাৎ প্রতিটি মানুষের মধ্যে তিনি রোয়েছেন। শুধু তাই নয়, তিনি বোলেছেন-নিশ্চয়ই আমি তোমাদের অতি সন্নিকটে (কোরান- সূরা আল-বাকারা- ১৮৬, সূরা সাবা- ৫০, সূরা আল-ওয়াকেয়াহ- ৮৫), তারপর আরও এগিয়ে গিয়ে বোলছেন- আমি (মানুষের) গলার রগের (রক্তবাহী ধমনীর) চেয়েও সন্নিকটে (কোরান- সূরা কাফ- ১৬)। যিনি শুধু অতি সন্নিকটেই নয়, একবারে গলার রগের চেয়েও নিকটে তাকে ডাকতে, তার সান্নিধ্যের আশায় এত দূরে এত কষ্ট কোরে যেতে হবে কেন? যদি তর্ক করেন যে আল্লাহ(Allah) চান যে আমরা তার ঘরে যাই, তবে জবাব হোচ্ছে প্রথমতঃ ঘরের মালিকই যখন সঙ্গে আছেন তখন বহু দূরে তার পাথরের ঘরে যাবার কি প্রয়োজন আছে, দ্বিতীয়তঃ আসল হজ্জ হয় আরাফাতের ময়দানে, আল্লাহর(Allah) ঘর কাবায় নয়। তার ঘর দেখানই যদি উদ্দেশ্য হোয়ে থাকে তবে কাবাকে হজ্জের আসল কেন্দ্র না কোরে কাবা থেকে অনেক দূরে এক খোলা মাঠকে কেন্দ্র কোরলেন কেন? দ্বিতীয় প্রশ্ন হোচ্ছে- ধোরে নিলাম আল্লাহ(Allah) আরাফাতের ময়দানেই বোসে আছেন। সেখানে যেয়ে তার সামনে আমাদের উপস্থিত হবার জন্য তিনি বছরের একটা নির্দিষ্ট সময় নির্দ্ধারিত কোরে দিয়েছেন কেন? আমাদের সঙ্গে না থেকে তিনি যদি আরাফাতের মাঠেই থেকে থাকেন তবে যে যখন পারে তখন সেখানে যেয়ে তো তার সামনে লাব্বায়েক বোলে হাজিরা দিতে পারে। তা না কোরে তিনি আদেশ দিয়েছেন বছরের একটা বিশেষ মাসে, একটা বিশেষ তারিখে তার সামনে হাযির হবার। একা একা যেয়ে তাকে ভালো ভাবে ডাকা যায়, নাকি সম্পূর্ণ অপরিচিত জায়াগায়, অপরিচিত পরিবেশে, লক্ষ লক্ষ মানুষের প্রচণ্ড ভিড়ের ধাক্কাধাক্কির মধ্যে দাঁড়িয়ে তাকে ভালো ভাবে, মন নিবিষ্ট কোরে ডাকা যায়? কিন্তু অবশ্য কর্তব্য ফরদ কোরে দিয়েছেন একা একান্তে তাকে ডাকা নয়, ঐ বিশেষ তারিখে লক্ষ লোকের ঠেলাঠেলির মধ্যে।

শেষ নবীর (দঃ) মাধ্যমে ইসলামের(Islam) যে শেষ সংস্করণটি আল্লাহ(Allah) পৃথিবীতে পাঠালেন সেটার উদ্দেশ্য, উদ্দেশ্য অর্জনের প্রক্রিয়া অর্থাৎ সামগ্রিক রূপ যাদের মস্তিষ্ক থেকে বিদায় নিয়েছে, এক কথায় যাদের আকীদা বিকৃত হোয়ে গেছে, তাদের কাছে এ সব প্রশ্নের জবাব নেই। দ্বীন শব্দের অর্থ জীবন-ব্যবস্থা, জীবন-বিধান। যে আইন-কানুন, নিয়ম দণ্ডবিধি মানুষের সমষ্টিগত, পারিবারিক, সামাজিক রাষ্ট্রীয় ও ব্যক্তিগত জীবনকে নিয়ন্ত্রন কোরবে সেটারই একত্রিত, সামগ্রিক রূপ হোচ্ছে দ্বীন। এ দ্বীন আল্লাহর(Allah) সৃষ্টও হোতে পারে মানুষের মস্তিষ্ক প্রসূতও হোতে পারে, দু'টোই দ্বীন। মানুষের মস্তিষ্ক প্রসূত যে দ্বীন তা স্বভাবতঃই ভারসাম্যহীন, কারণ তা অতি সীমিত জ্ঞান থেকে তৈরী। আর আল্লাহ(Allah) যে দ্বীন সৃষ্টি কোরেছেন তা ভারসাম্যযুক্ত (কোরান- সূরা আল বাকারা ১৪৩)। মানুষের রাজনৈতিক , অর্থনৈতিক, সামাজিক, আইন দণ্ডবিধি ইত্যাদি মানুষের জীবনের সমষ্টিগত ও তার আত্মার যত রকমের প্রয়োজন তার সব কিছুরই একটা ভারসাম্যপূর্ণ মূল-নীতি নির্দেশনা। সুতরাং এই শেষ দ্বীনের অন্যান্য সব বিষয়ের মত হজ্জও ভারসাম্যপূর্ণ। এতে রাজনৈতিক অর্থনৈতিক ইত্যাদির যেমন অংশ আছে তেমনি আত্মার উন্নতির, পরিচ্ছন্নতারও অংশ আছে, দু'টোই আছে, এর যে কোন একটির গুরুত্ব কমিয়ে দিলেই আর সেই ভারসাম্য থাকবেনা, তা আর দ্বীনে ওয়াসাতা থাকবেনা তা আজকের এই বিকৃত ইসলাম(Islam) হোয়ে যাবে। যে কারণে আল্লাহর(Allah) প্রতি মন-সংযোগ জামাতের নামাযের চেয়ে নির্জনে অনেক বেশী হওয়া সত্ত্বেও ফরদ হোচ্ছে ঐ জামাতে যোগ দেওয়া, ঠিক সেই কারণে নির্জনে বোসে আল্লাহ(Allah)কে ডাকায় বেশী মন-সংযোগ, নিবিষ্টতা (Concentration) হওয়া সত্ত্বেও আদেশ হোচ্ছে লক্ষ লক্ষ মানুষের কোলাহলে, জনতার সাথে একত্র হোয়ে তার সামনে হাযির হওয়া। কারণ অন্যান্য বিকৃত ধর্মগুলির মত শেষ ইসলামের(Islam) আকীদা শুধু একতরফা অর্থাৎ আত্মার ধোয়ামোছা, পরিষ্কার পবিত্রতা নয়। শেষ ইসলামের(Islam) প্রথম ও মুখ্য দিকটা হোচ্ছে জাতীয়, রাষ্ট্রীয়, ব্যক্তিগত দিকটা গৌন যদিও ভারসাম্যযুক্ত। তাই ফরদ অর্থাৎ অবশ্যই করণীয়, যেটা না কোরলে চলবেনা, সেই ফরদ নামায পড়ার আদেশ জামাতে, সবার সঙ্গে, হজ্জ করার আদেশ হোচ্ছে বিশাল জন সমাবেশে। আর নফল নামায অর্থাৎ ব্যক্তিগত নামায যা অবশ্য করার নয়, ব্যক্তির ইচ্ছার ওপর ছেড়ে দেয়া হোয়েছে। এ থেকেই তো পরিষ্কার হোয়ে যায় যে ইসলামে জাতীয় বিষয়ই প্রধান ও মুখ্য। ফরদ অর্থাৎ জাতীয় বিষয়গুলিকে বাদ দিয়ে নফল অর্থাৎ ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে থাকলে তা জায়েজ হবে না, যেমন জায়েজ হবেনা ফরদ নামায বাদ দিয়ে রাত ভর নফল নামায পড়লে। নামায যেমন জাতীয় ও ব্যক্তিগত জীবনের ভারসাম্যযুক্ত হজ্জও তেমনি। বলা যায় জামাতে নামাযেরই বৃহত্তম সংস্করণ হজ্জ। এই দ্বীনের সমস্ত জাতীয় কর্ম-কাণ্ডর কেন্দ্র হোচ্ছে এবাদতের স্থানগুলি অর্থাৎ মসজিদ, কারণ মুসলিমের(Muslim) জীবনের, জাতীয় ও ব্যক্তিগত উভয় জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য ইবলিশের চ্যালেঞ্জে আল্লাহ(Allah)কে জয়ী করানো ও পৃথিবীতে ন্যায় বিচার ও শান্তি প্রতিষ্ঠা। সুতরাং মুসলিমের(Muslim) জীবনে ইহজীবন ও পরজীবনের, দেহের ও আত্মার কোন বিভক্তি থাকতে পারে না কারণ দেহ থেকে আত্মার পৃথকীকরণ বা আত্মা থেকে দেহ পৃথকীকরণের একটাই মাত্র পরিণতি-মৃত্যু। তাই এই জাতির সমস্ত কর্মকাণ্ড এক অবিচ্ছিন্ন এবাদত। জামাতে নামাযের উদ্দেশ্য হলো মুসলিম(Muslim) পাঁচবার তাদের স্থানীয় কর্ম-কাণ্ডের কেন্দ্র মসজিদে একত্র হবে, তাদের স্থানীয় সমস্যা ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা পরামর্শ কোরবে, সিদ্ধান্ত নেবে, তারপর স্থানীয় ইমামের নেতৃত্বে তার সমাধান কোরবে। তারপর সপ্তাহে একদিন বৃহত্তর এলাকায় জামে মসজিদে জুমা'র নামাযে একত্র হোয়ে ঐ একই কাজ কোরবে। তারপর বছরে একবার আরাফাতের মাঠে পৃথিবীর সমস্ত মুসলিম(Muslim)দের নেতৃস্থানীয়রা একত্র হোয়ে জাতির সর্বরকম সমস্যা, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামরিক ইত্যাদি সর্বরকম সমস্যা, বিষয় নিয়ে আলোচনা কোরবে, পরামর্শ কোরবে, সিদ্ধান্ত নেবে। অর্থাৎ স্থানীয় পর্য্যায় থেকে ক্রমশঃ বৃহত্তর পর্য্যায়ে বিকাশ কোরতে কোরতে জাতির পৃথিবীর কেন্দ্রবিন্দু মক্কায় একত্রিত হবে। একটি মহাজাতিকে ঐক্যের সুদৃঢ় বন্ধনে বেঁধে রাখার কী সুন্দর প্রক্রিয়া।

আল্লাহ(Allah) ও তাঁর রসুল (দঃ) এ অপূর্ব সুন্দর প্রক্রিয়া নির্দিষ্ট কোরে দিলেও তা এই জাতির ঐক্যকে ধোরে রাখতে পারলোনা আকীদার বিকৃতির কারণে। এই দ্বীনের অতি বিশ্লেষণ কোরে, সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম মসলা-মাসায়েল উদ্ভাবন কোরে জাতিটাকে ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন কোরে একে এক মৃতপ্রায় জাতিতে পরিণত কোরে দেওয়ার পরও এর সব রকম, অর্থাৎ জাতীয় কর্মকাণ্ডর কেন্দ্র মসজিদ ও কাবাই ছিলো, কারণ তখনও এই দ্বীনকে জাতীয় ও ব্যক্তিতে বিভক্ত করা হয়নি। তারপর যখন ঐ ঐক্যহীন, ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন জাতিটাকে আক্রমণ কোরে ইউরোপীয় জাতিগুলি দাসে পরিণত কোরে খণ্ড খণ্ড কোরে এক এক জাতি এক এক খণ্ড শাসন ও শোষণ কোরতে শুরু করলো তখন ঐ শাসনের সময় জাতির জীবনকে জাতীয় ও ব্যক্তিগত জীবনে ভাগ করা হলো অর্থাৎ দেহ থেকে আত্মাকে বিচ্ছিন্ন করা হলো এবং অবশ্যম্ভাবীরূপে জাতি একটি মৃত জন-সংখ্যায় পরিণত হলো। নামায ও হজ্জ হোয়ে গেলো ‘এবাদত', ব্যক্তিগত উপাসনা, যেখানে রাজনৈতিক, আর্থ-সামাজিক কোন কিছুর স্থান নেই। আল্লাহর(Allah) আইন ও দণ্ডবিধির তো কোন প্রশ্নই উঠে না, কারণ সেগুলোতো ছুড়ে ফেলে দিয়ে সেখানে ইউরোপীয় খ্রীস্টান ইহুদীদের তৈরী আইন, অর্থনীতি, দণ্ডবিধি, শিক্ষা ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হলো। ঐ সময় থেকেই দুই এলাহ গ্রহণ করার ফলে এই জাতি কার্যতঃ মোশরেক ও কাফের হোয়ে আছে। যদিও আকীদার বিকৃতির কারণে তা উপলব্ধি করার মত বোধশক্তিও অবশিষ্ট নেই।

এটা ইতিহাস যে বিশ্ব নবী (দঃ) ও খোলাফায়ে রাশেদুনের (রাঃ) সময় মসজিদই ছিলো তাদের কর্মস্থল। জাতীয় সমস্ত কাজ সম্পাদিত হতো মসজিদ থেকে। মসজিদে বোসেই আল্লাহর(Allah) রসুল (দঃ) বহিরাগতদের অভ্যর্থনা কোরতেন, সাহাবাদের সঙ্গে জাতীয় সামাজিক, ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে আলোচনা, পরামর্শ কোরতেন, সিদ্ধান্ত নিতেন। বিশ্বনবীর (দঃ) পর খোলাফায়ে রাশেদুনও তাদের নেতার সুন্নাহ পালন কোরে গেছেন, ঐ মসজিদে বোসেই তারা মুসলিম(Muslim) দুনিয়া শাসন কোরেছেন, গভর্ণর ও অন্যান্য কর্মচারীদের নিয়োগ, বদলি বরখাস্থ কোরেছেন, এক কথায় একটি সরকার পরিচালনায় যা কিছু করার সবই কোরেছেন। যে দুর্দ্ধর্ষ সেনাবাহিনী তদানিন্তন পৃথিবীর দু'টি মহাশক্তিকে চুরমার কোরে দিলো সে বাহিনীর সেনাপতিদের নিয়োগ, বদলি করা, পরিকল্পনা, সরবরাহ সমস্তই করা হোয়েছে ঐ মসজিদ থেকে, কারণ ঐ সাহাবাদের (রাঃ) কাছে এবাদতের অর্থ আর আজকের ‘ধার্মিক'দের কাছে এবাদতের অর্থ শুধু ভিন্ন নয়, বিপরীতমুখী। সাহাবারা (রাঃ) জানতেন ঐ কাজগুলি কোরে তারা সর্বশ্রেষ্ঠ এবাদত কোরছেন। আর আজকের অতি ‘ধার্মিক'দের কাছে ওগুলো দুনিয়াদারী, রাজনীতি। একথা ইতিহাস যে খোলাফায়ে রাশেদুন হজ্জের সময় বিভিন্ন স্থান থেকে আগত হাজীদের কাছ থেকে তাদের অবস্থা, সমস্যা ইত্যাদি নিয়ে আলাপ আলোচনা কোরতেন, সে সম্বন্ধে সিদ্ধান্ত নিতেন, তাদের নিজ নিজ এলাকায় শাসন কর্তারা, গভর্নররা কে কেমন ভাবে শাসন কোরছেন সে সম্বন্ধে তাদের অভিমত ও পরামর্শ গ্রহণ কোরতেন। হাজীদের মাধ্যমে প্রাপ্ত সংবাদ ও তাদের সাথে পরামর্শ কোরে গভর্নর বদলি ও প্রশাসকদের মদীনায় তলব কোরে কৈফিয়ৎ চাওয়ার ঘটনাও এই জাতির ইতিহাসে রোয়েছে। কিন্তু বর্তমানের মহা-মুসলিম(Muslim), মহা-আবেদদের, আল্লাহর(Allah) দিদার প্রার্থী ‘ধার্মিক'দের মরতাবা অতি উচ্চে। মহানবী (দঃ) ও তার সাহাবারা (রাঃ) ও তার উত্তরাধিকারী খলিফারা (রাঃ) যে ঐ সব "দুনিয়াদারী" কোরে গেলেন এরা কি আর তা কোরতে পারেন? তাই এরা দোয়া পড়তে পড়তে ডান পা প্রথমে ফেলে মসজিদে ঢুকেন, চুপচাপ নামায পড়ে দোয়া পড়তে পড়তে বা পা বের কোরে মসজিদ থেকে বের হোয়ে আসেন, কোন দুনিয়াদারীর মধ্যে যান না। হজ্জেও তারা রসুল (দঃ), সাহাবা (রাঃ) ও খলিফাদের মত রাজনীতি, অর্থনীতি, বিচার, দণ্ড ও এ সব দুনিয়াদারী কাজের কাছ দিয়ে যান না, মসজিদে যাওয়ার মতই চুপচাপ যান, চুপচাপ হজ্জ কোরে চুপচাপ বাড়ী ফিরে আসেন। সমস্ত পৃথিবী থেকে মুসলিম(Muslim)রা এক কেন্দ্রে এসে একত্র হোলেও সেখানে তারা নিজেদের অর্থাৎ এই মহাজাতির জাতীয় কোন সমস্যা নিয়ে পরামর্শ করার মত দুনিয়াদারীর রাজনীতি করেন না। যে জন্য পৃথিবীর দূর-দূরান্ত থেকে এত কষ্ট কোরে এত লোককে আল্লাহ(Allah) একটি মাঠে সমবেত কোরলেন সেই জাতীয় উদ্দেশ্যই আজ হজ্জে সম্পূর্ণ অনুপস্থিত। শুধু আত্মিক উন্নতির জন্য যে এ সমাবেশ হোতে পারে না এ কথা বুঝতে সাধারণ জ্ঞানের বেশী প্রয়োজন পড়ে না। কারণ আল্লাহ(Allah) সর্বত্র আছেন, প্রতিটি মানুষের আত্মার মধ্যে আছেন, তাকে খুঁজতে আরাফাতের ময়দানে যাবার দরকার নেই। বর্তমানের বিকৃত আকীদার মুসলিম(Muslim)রা, মহা আবেদরা আত্মার উন্নতির জন্য হজ্জ কোরতে যান। চুপচাপ যান, চুপচাপ ফিরে আসেন। অন্যের সমস্যা, অন্যের বিপদে তাদের কী আসে যায়? আফগানিস্তানে, ইথিওপিয়ায় কমিউনিষ্টদের হাতে মুসলিম(Muslim)রা মরছে মরুক, ফিলিপাইনে যারা খ্রীস্টানদের হাতে মরছে মরুক, ভারতে যারা হিন্দুদের হাতে মরছে মরুক, কাশ্মীরে ও বসনিয়ায় হাজার হাজার মুসলিম(Muslim) মেয়েরা ধর্ষিতা হোয়ে গর্ভবতী হোচ্ছে, হোক, তাতে হাজীদের কী আসে যায়? তাদের আত্মার ধোয়ামোছা হোলেই হলো। অথচ বিশ্বনবী (দঃ) বোলেছেন- এই জাতিটি একটি শরীরের মত, এর কোথাও ব্যাথা হোলে তা সমস্ত শরীরকে অসুস্থ করে (হাদীস- নু'মান বিন বশীর (রাঃ) থেকে- বোখারী, মুসলীম, মেশকাত )। অর্থাৎ পৃথিবীময় ছড়িয়ে থাকা এই উম্মাহর যে কোন স্থানে আঘাত লাগলে তা সমস্ত শরীরে অনুভূত হয়। এই জাতির পিতা এই জাতির যে সংজ্ঞা দিলেন সেই সংজ্ঞা অনুযায়ী আজকের হাজীরা কি তার উম্মতের হাজী?

কোন লোক যদি একটি মহান, বিরাট উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য সারাজীবন আপ্রাণ চেষ্টা, অবিশ্বাস্য ত্যাগ ও নিরবিচ্ছিন্ন সংগ্রামের মাধ্যমে একটি নতুন জাতি সৃষ্টি করেন, তবে তিনি এ পৃথিবী ছেড়ে যাবার সময় তার সৃষ্ট জাতিটাকে কী উপদেশ দিয়ে যাবেন? নিঃসন্দেহে বলা যায় যে তিনি তার শেষ উপদেশে সেই সব বিষয় উল্লেখ কোরবেন যে সব বিষয়ের ওপর তার জাতির ভবিষ্যত নির্ভর করবে এবং তার অবর্তমানে যে সব বিষয়ে জাতির ভুল ও পথভ্রান্তি হবার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশী। তাই নয় কী? এবার দেখা যাক শেষ নবী (দঃ) তার বিদায় হজ্জে, যে হজ্জ তিনি জানতেন তার শেষ হজ্জ, তিনি তার জাতিকে কি কি বিষয়ে (Point) বোলছেন। বিদায় হজ্জ ছিলো বিশ্বনবীর (দঃ) জীবনের সবচেয়ে বড় জনসমাবেশ। এতে তার ভাষণকে তিনি কতখানি গুরুত্ব দিয়েছিলেন তা বোঝা যায় এই থেকে যে অতবড় সম্মেলনেও খুশী না হোয়ে তিনি নির্দেশ দিচ্ছেন যে, যারা উপস্থিত আছেন তারা তার নির্দেশগুলি যেন যারা উপস্থিত নেই তাদের সবার কাছে পৌঁছে দেন- অর্থাৎ আরও বৃহত্তর জনগোষ্ঠী, তার সমস্ত উম্মাহ তা শুনুক, জানুক। এখন দেখা যাক কী কী ছিলো তার বক্তব্যে। আমরা পাই! (১) এই উম্মাহর লোকদের পরস্পরের সম্পত্তি ও রক্ত নিষিদ্ধ, হারাম করা। (২) আমানত রক্ষা ও প্রত্যার্পন করা। (৩) সুদ নিষিদ্ধ ও হারাম করা। (৪) রক্তের দাবী নিষিদ্ধ করা। (৫) পঞ্জিকা অর্থাৎ দিন, মাস, বছরের হিসাব স্থায়ী করা। (৬) স্বামী-স্ত্রী, নর-নারীর অধিকার নির্দিষ্ট কোরে দেওয়া। (৭) কোরান ও হাদীস জাতির পথ-প্রদর্শক হিসাবে রেখে যাওয়া। (৮) একের অপরাধে অন্যকে শাস্তি দেয়া নিষিদ্ধ করা। (৯) কোরান ও রসুলের সুন্নাহ অনুযায়ী শাসনকারী নেতার আনুগত্য বাধ্যতামুলক কোরে দেয়া। (১০) জীবন-ব্যবস্থা, দ্বীন নিয়ে বাড়াবাড়ি নিষিদ্ধ করা। (১১) এই জাতির মধ্যকার শ্রেণীগত, ভৌগলিক, বর্ণ, ভাষা ইত্যাদি সর্বপ্রকার ভেদাভেদ নিষিদ্ধ করা। (১২) সম্পত্তির ওসিয়ত নিষিদ্ধ করা, অর্থাৎ আল্লাহ(Allah) যে উত্তরাধিকার আইন দিয়েছেন তা লংঘন না করা। (১৩) স্বামীর বিনানুমতিতে স্ত্রীর দান নিষিদ্ধ করা। বিদায় হজ্জের নির্দেশগুলির প্রতি লক্ষ্য কোরলে আমরা পাই ক) ধোরতে গেলে নতুন কিছুই নাই, সব আদেশ নিষেধগুলিই কোরানে এবং হাদীসে আগে থেকেই আছে। তবু আল্লাহর(Allah) রসুল (দঃ) তার শেষ ভাষণে ঐ বিশেষ তেরটা বিষয় বেছে নিলেন কেন? অবশ্যই এই জন্য যে তার অবর্তমানে কোন্ কোন্ বিষয়ে জাতির বিপথগামী হবার সম্ভবনা বেশী। তাই ঐ বিষয়গুলি সম্বন্ধে জাতিকে বিশেষ সাবধানে থাকতে হবে। খ) ঐ তেরটা বিষয়ের প্রত্যেকটি জাতীয়, সামাজিক, আইনগত, অর্থনৈতিক, একটিও পুরোপুরি ব্যক্তিগত নয়। গ) বিদায় হজ্জে বিশ্বনবীর (দঃ) ভাষণ মনযোগ দিয়ে পড়লে যে বিষয়টা সবচেয়ে লক্ষণীয় হোয়ে ওঠে সেটা তার জাতির ঐক্য সম্বন্ধে তার ভয় ও চিন্তা। স্বভাবতঃই কারণ জীবনের সবকিছু কোরবান করে অসহনীয় অত্যাচার সহ্য কোরে সারা জীবনের সাধনায় একটি জাতি সৃষ্টি কোরলে এবং সেই জাতির ওপর তার আরদ্ধ কাজের ভার ছেড়ে পৃথিবী থেকে চলে যাওয়ার সময় একটা মানুষের মনে ঐ ভয়, ঐ শংকাই সবচেয়ে বড় হোয়ে দাঁড়াবে। কারণ ঐক্য ভেঙ্গে গেলেই সবশেষ, জাতি আর তার আরদ্ধ কাজ করতে পারবেনা, শত্রুর কাছে পরাজিত হবে। তাই তাকে বিদায় হজ্জের ভাষনে বোলতে শুনি- হে মানুষ সকল! আজকের এই দিন (১০ই জিলহজ্জ), এই মাস (জিলহজ্জ) এই স্থান (মক্কা ও আরাফাত) যেমন পবিত্র, তোমাদের একের জন্য অন্যের প্রাণ, সম্পদ ও ইয্‌যত তেমনি পবিত্র (হারাম)। শুধু তাই নয় এই দিন, এই মাস ও এই স্থানের পবিত্রতা একত্র কোরলে যতখানি পবিত্রতা হয়, তোমাদের একের জন্য অন্যের জান-মাল-ইয্‌যত ততখানি পবিত্র (হারাম)। খবরদার! খবারদার! আমার (ওফাতের) পর তোমরা একে অন্যকে হত্যা কোরে কুফরী কোরো না। শেষ নবী (দঃ) এই সাবধান বাণী একবার নয়- পুনঃ পুনঃ উচ্চারণ কোরলেন এবং শেষে আসমানের দিকে মুখ তুলে বোললেন - হে আল্লাহ(Allah)! তুমি সাক্ষী থাক- আমি আমার দায়িত্ব পৌঁছে দিলাম। হে আল্লাহ(Allah) তুমি সাক্ষী থাক- আমি আমার দায়িত্ব পৌঁছে দিলাম [ইবনে আব্বাস (রাঃ) এবং ইবনে ওমর (রাঃ) থেকে- বোখারী]। এখানে লক্ষ্য করুন নিজেদের মধ্যে মারামারি কাটাকাটিকে, অর্থাৎ জাতির ঐক্যকে নষ্ট বা ক্ষতি করাকে শেষ নবী (দঃ) কোন্ শ্রেণীর গোনাহের পর্যায়ে ফেলছেন। একেবারে কুফরের পর্যায়ে। ইবনে আব্বাস (রাঃ) ও ইবনে ওমর (রাঃ) উভয়েই কুফর শব্দ উল্লেখ কোরেছেন, (রসুলুল্লাহ (দঃ) ব্যবহার কোরেছেন) এবং বোখারী এই হাদীস সঠিক বোলে গ্রহণ কোরেছেন। আজ বিশ্ব নবীর (দঃ) সেই জাতি, ‘উম্মাহ' চল্লিশটির বেশী ভৌগলিক রাষ্ট্রে, (Nation-Capital State) শিয়া-সুন্নীতে, মযহাবে-মযহাবে, ফেরকায়-ফেরকায় বিভক্ত হোয়ে নিজেদের মধ্যে রক্তপাত কোরে রসুলাল্লাহ (দঃ) বর্ণিত কুফরের মধ্যে বাস কোরেও প্রতি বছর হজ্জ কোরতে যাচ্ছে কোথায়? সেই খানে, সেই মাসে এবং সেই দিনে যাদের একত্রিভূত পবিত্রতা ও সম্মান তারা অবিশ্রান্ত ভাবে অপবিত্র কোরছে। এবং তা কোরেও হজ্জের সামান্যতম খুঁটিনাটিও অতি দক্ষতার সাথে পালন কোরে আত্মপ্রীতি লাভ কোরছে যে তাদের হজ্জ কবুল হোয়েছে। তাদের ঐ আশা যে কতখানি হাস্যকর তা বোঝার শক্তিও অবশিষ্ট নেই। আবার সেই ইরাকীর কথা মনে এসে যাচ্ছে যে হজ্জের সময় পোকা-মাকড়-মাছি হঠাৎ মেরে ফেললে কি কাফ্ফারা দিতে হয় সে ফতোয়া জানতে আবদুল্লাহ এবনে ওমরের (রাঃ) কাছে গিয়েছিলো এবং আব্দুল্লাহ (রাঃ) বোলেছিলেন- কী হাস্যকর। যে ইরাকীরা রসুলাল্লাহর (দঃ) নয়নের মনি হোসায়েনকে (রাঃ) হত্যা কোরেছে তারা পোকা-মাকড়-মাছি মারার কাফ্ফারার ফতোয়া জানতে চায়। আজ এই জাতির দিকে চেয়ে দেখুন- তাঁর (দঃ) অবর্তমানে যে সব বিষয়ে তিনি আশংকা পোষণ কোরেছিলেন, আজ এই উম্মাহ ঐ বিষয়গুলোর কতখানি দাম দিয়েছে। শুধুমাত্র সম্পত্তির উত্তরাধিকার আইন ছাড়া বিদায় হজ্জে বিশ্বনবীর (দঃ) দেওয়া আর একটিও সাবধানবাণী, আদেশ এই উম্মাহ পালন করে কিনা, সম্মান করে কিনা। উত্তরাধিকার আইনটা বদলেনি কারণ ইউরোপিয়ান প্রভুরা তাদের ক্রীতদাসদের ঐ আইনটাকে তাদের শাসনের জন্য কোন বিঘ্ন, হুমকি মনে করে নাই বোলে। এমনকি এই জাতির পঞ্জিকাটাও আর জাতীয় ও ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার হয় না, শুধু ‘ধর্ম-কর্মের' ব্যাপারে ওটা কোনমতে টিকে আছে, সব কাজে খ্রীস্টানদের পঞ্জিকা অনুসরণ করা হয়। অন্যদিকে বিদায় হজ্জের ভাষণে যে সব বিষয়ে মহানবী (দঃ) ইঙ্গিত মাত্র করেন নি, সেই সব গুলি অর্থাৎ দাঁড়ি, টুপি, মোজা, পাজামা, টখনু, তসবিহ, তাহাজ্জুদ, কুলুখ, যিকর, ছোট খাট সহজ অপ্রয়োজনীয় ব্যক্তিগত সুন্নাহ, ডান পা প্রথমে ফেলে মসজিদে ঢোকা, ডান পাশে শোওয়া, নফল নামায, নফল রোযা, মেসওয়াক ইত্যাদি নিয়ে এই জাতি মহাব্যস্ত, ঐগুলি কোরেই তারা ভেবে রেখেছেন জান্নাত এর দরজা তাদের জন্য খুলে রাখা হোয়েছে। হজ্জও তাদের প্রায়ান্ধ দৃষ্টিতে তাই ব্যক্তিগত ‘এবাদত'। আল্লাহ(Allah) ও রসুল (দঃ) ব্যবস্থা কোরে দিয়েছেন পৃথিবীময় ছড়িয়ে থাকা মুসলিম(Muslim) জাতির প্রতিনিধিরা বছরে একবার মক্কায় এবং আরাফাতের ময়দানে একত্র হোয়ে তাদের জাতীয় সমস্যা পর্য্যালোচনা কোরবে, পরামর্শ কোরবে, সিদ্ধান্ত নেবে, উম্মতে মোহম্মদীর ওপর আল্লাহ(Allah) ও তার রসুলের (দঃ) যে মহাদায়িত্ব অর্পিত আছে তা কতদূর অগ্রসর হলো, এখন কি কি বাধা আসছে এবং কেমন কোরে সে সব অতিক্রম কোরতে হবে সে সম্বন্ধে পরামর্শ কোরে ভবিষ্যত কর্মপন্থা স্থির কোরবে। আজ হজ্জে কি হয়? ওসব কিছুই হয় না- ওসব ‘দুনিয়াদারীর' কাজ মহানবীর (দঃ) সময় হতো, খোলাফায়ে রাশেদুনের (রাঃ) সময় হতো, সে অনেক আগের কথা, এখনকার মহা মুসলিম(Muslim)রা হজ্জে যান ‘এবাদত' কোরতে। কাজেই তারা চুপচাপ যান, পুংখানুপুংখ ভাবে হজ্জের সমস্ত আনুষ্ঠানিকতাগুলো কোরে চুপচাপ যার যার বাড়ীতে ফিরে যান। ওখানে হঠাৎ কেউ এ জাতির রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামরিক সমস্যার কথা তুললে এই মহা আবেদরা মহাখাপ্পা হোয়ে তাকে থামিয়ে দেন, দরকার হোলে পিটিয়েও থামান।

শেষ ইসলাম(Islam) প্রতিষ্ঠার আগেও প্রতি বছর মক্কায় হজ্জ হতো। কাবায় হতো, আরাফাতে নয়। কাবা তওয়াফ হতো, কোরবানী হতো, বহু যুগ থেকে হতো, এবং তা মোশরেকরা করতো। শেষ নবী (দঃ) হজ্জকে নিয়ে গেলেন আরাফাতের ময়দানে, কিন্তু হজ্জের অংগ হিসাবে কাবা তওয়াফ ঠিক রোইল। তফাৎ শুধু এই হলো যে আগে মোশরেকরা সম্পূর্ণ উলংগ হোয়েও তওয়াফ করতো তা একধাপ তফাৎ কোরে সেলাই বিহীন দু'টুকরো কাপড় জড়িয়ে করা হয়। প্রাক-ইসলামের(Islam) হজ্জের সঙ্গে ইসলামের(Islam) ‘হজ্জের' আনুষ্ঠানিকতায় খুব বেশী তফাৎ ছিলো না, এখনও নেই। আসমান জমীনের তফাৎ এসে গেলো দু'টো বিষয়ে, দু'টো আকীদায়। একটা হলো- কাবার ভেতরের মূর্তিগুলি অদৃশ্য হোয়ে গোলো, দ্বিতীয় হলো মোশরেকদের ‘এবাদতের' বদলে একে করা হলো বিশ্ব-মুসলিমের(Muslim) বার্ষিক মহা সম্মেলন। যেহেতু মুসলিমের(Muslim) দ্বীন ও দুনিয়া এক, কাজেই স্বভাবতঃই এ মহাসম্মেলনের রাজনৈতিক, সামাজিক আইনগত অর্থাৎ জাতীয় দিকটার সঙ্গে মুসলিমের(Muslim) ব্যক্তিগত আত্মার দিক অবিচ্ছিন্নভাবে জড়িত। তাই মুসলিম(Muslim) হজ্জে যেয়ে যেমন উম্মাহর জাতীয় সমস্ত সমস্যার সমাধানে অংশ নেবে, তেমনি আরাফাতের ময়দানকে হাশরের ময়দান মনে কোরে নিজেকে আল্লাহর(Allah) সামনে উপস্থিত বোলে মনে কোরবে। মনে কোরবে মুসলিম(Muslim) হিসাবে, উম্মতে মোহাম্মদী হিসাবে তার ওপর যে দায়িত্ব অর্পিত ছিলো তার কতটুকু সে পূরণ কোরতে পেরেছে সে হিসাব তাকে আজ দিতে হবে। প্রাক-ইসলামী অজ্ঞানতার যুগে (আইয়ামে জাহেলিইয়াত) মোশরেকরা উলংগ হোয়ে হজ্জ করতো কারণ হাশরের ময়দানে সমস্ত নারী-পুরুষ উলংগ থাকবে। ইসলাম(Islam) শুধু দু'টুকরো সেলাইহীন কাপড় দিয়ে সেটাকে শালীন কোরেছে। জাতীয় জীবনের সবকিছু বাদ দিয়ে আজ হজ্জ আবার উল্টে সেই মোশরেকদের হজ্জের মত শুধু ব্যক্তিগত এবাদতে ফিরে গেছে।

পেছনে আমি দেখিয়ে এসেছি নামাযের উদ্দেশ্য হোচ্ছে সংগ্রাম ও সশস্ত্র সংগ্রামের প্রশিক্ষণ। ঐ সংগ্রাম করার মত চরিত্র সৃষ্টি হোচ্ছে নামাযের উদ্দেশ্য এবং সংগ্রাম না থাকলে আর নামাযের অর্থ নেই, অর্থাৎ যে উদ্দেশ্যে প্রশিক্ষণ, ট্রেনিং তাই যদি না থাকে তবে ট্রেনিং অর্থহীন। এ কথা আমার নয়, এ কথা আল্লাহর(Allah) রসুলের (দঃ) কথা তা পেছনে সহি হাদীস থেকে দেখিয়ে এসেছি। এবার হজ্জের ব্যাপারেও যে ইসলামের(Islam) সেই একই নীতি তা দেখাবো। পারসিক বাহিনীর সাথে যুদ্ধের সময় আল্লাহর(Allah) তলোয়ার খালেদ (রাঃ) মুসলিম(Muslim) বাহিনীকে ফিরাদ থেকে হিরায় স্থানান্তরিত করার সময় হজ্জের সময় এসে গেলো। হজ্জ করার লোভ সামলাতে না পেরে খালেদ (রাঃ) অন্য একজন সেনাপতির হাতে কর্তৃত্ব দিয়ে বাহিনী রওয়ানা কোরে দিয়ে চুপে চুপে হজ্জে চলে গেলেন। হজ্জও তিনি কোরলেন এমন গুপ্তভাবে- যেন কেউ তাকে চিনতে না পারে। হজ্জ কোরেই খালেদ (রাঃ) এমন দ্রুত ফিরে এসে তার বাহিনীতে যোগ দিলেন, যে সেনাপতির ওপর তিনি ভার দিয়ে গিয়েছিলেন তিনি ছাড়া আর কেউ টেরই পেলোনা যে খালেদ (রাঃ) কয়েকদিনের জন্য তাদের সঙ্গেই ছিলেন না এবং মুসলিম(Muslim) বাহিনী তার গন্তব্যস্থান হিরায় পৌঁছবার আগেই খালেদ (রাঃ) তার বাহিনীর সাথে যোগ দিলেন। হিরায় পৌঁছবার কয়েক দিনের মধ্যেই খলিফা আবু বকরের (রাঃ) কাছ থেকে সেনাপতি খালেদ বিন ওলিদের (রাঃ) কাছে চিঠি এসে পৌঁছলো। তাতে খলিফা তার প্রিয় সেনাপতিকে জানালেন যে তিনি যে গোপনে হজ্জ কোরতে মক্কায় গিয়েছিলেন তা তিনি জানতে পেরেছেন এবং অত্যন্ত অসন্তুষ্ট হোয়েছেন এবং তাকে সাবধান কোরে দিচ্ছেন যে খালেদ (রাঃ) যেন ভবিষ্যতে এমন কাজ আর না করেন [তাবারি, হাবিবুর রহমান খান শেরওয়ানীর সীরতুস সিদ্দিক, লেঃ জেনারেল এ, আই আকরাম-এর The Sword of Allah (২৯৫পৃঃ) ইত্যাদি]। এই ঐতিহাসিক ঘটনাটির প্রতি লক্ষ্য করুন। এতে দু'টি বিষয় ফুটে উঠেছে। প্রথমটি হোচ্ছে বেসামরিক, গোয়েন্দা বিভাগের (Civil Intelligence) কর্ম-কুশলতা। সামরিক গোয়েন্দা বিভাগের (Military Intelligence) তো কথাই নেই। সেটা অপূর্ব দক্ষ না হোলে তো মুসলিম(Muslim) বাহিনীর অতুলনীয় বিজয়ই সম্ভব হতোনা, এই ঘটনায় বেসামরিক দিকটার কথা বোলছি। কেউ যেন না জানতে পারে যে খালেদ (রাঃ) ইরাক থেকে মক্কা গেছেন এ জন্য খালেদের এত সতর্কতা, যে সতর্কতার জন্য নিজের সৈন্যরা পর্য্যন্ত জানতে পারলোনা যে খালেদ (রাঃ) তাদের মধ্যে নেই, তা সত্ত্বেও আবু বকরের (রাঃ) বেসামরিক গোয়েন্দা বিভাগের সতর্ক চক্ষুকে তিনি ফাঁকি দিতে পারলেন না এবং মক্কায় হজ্জে খালেদের উপস্থিতির সঙ্গে সঙ্গে মদীনায় খলিফা আবু বকরের (রাঃ) কাছে রিপোর্ট হোয়ে গেলো। দ্বিতীয় বিষয়টি এই যে যখন আল্লাহর(Allah) তলোয়ার খালেদ (রাঃ) এই গোপন হজ্জটি কোরেছিলেন তখন কোন যুদ্ধ চলছিলোনা, তিনি শুধু তার বাহিনীকে ফিরাদ থেকে হিরায় স্থানান্তর (Move) কোরছিলেন। এর আগেই উপর্যুপরি কয়েকটি তীব্র যুদ্ধে (হুসেইদ, মুযাইয়াহ, সানীহ, যুমেইল ইত্যাদি) মুসলিম(Muslim) বাহিনী পারসিক বাহিনীর মেরুদণ্ড ভেংগে দিয়েছিলো। ঠিক তখন তাদের দিক থেকে নতুন কোন আক্রমনের সম্ভাবনা ছিলোনা। আর মুসলিম(Muslim) বাহিনীকে রওয়ানা কোরে দিয়ে তাদের গন্তব্যস্থানে হিরায় পৌঁছবার আগেই খালেদ (রাঃ) হজ্জ শেষ কোরে আবার বাহিনীর সঙ্গে মিলিত হয়েছিলেন। কিন্তু এত সব কারণ থাকা সত্ত্বেও আবু বকর (রাঃ) খালেদকে (রাঃ) ছেড়ে দেন নি। তাকে ভৎর্সনা (Consor) কোরলেন এবং ভবিষ্যতে যেন কখনও এরকম কাজ না করেন সেজন্য তাকে সাবধান কোরে দিলেন। খলিফার এই কাজের একটি মাত্র অর্থ হয় আর সেটা হলো -সংগ্রাম, জেহাদ, শুধু জেহাদ নয় জেহাদের কোন কিছুর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট, জড়িত থাকাও হজ্জের চেয়ে বড় কর্তব্য। নিজের অসুস্থতার সময় উম্মতে মোহাম্মদীর নামাযের এমামতি, নেতৃত্ব দেবার জন্য রসুলুল্লাহ (দঃ) যাকে মনোনীত কোরেছিলেন সেই আবু বকর (রাঃ) ইসলাম(Islam) কী, তার উদ্দেশ্য কি, তার প্রক্রিয়া কি তা কি শেখেন নি? হজ্জ ও সংগ্রামের মধ্যে কোনটার প্রাধান্য, গুরুত্ব (Priority) তা শেখেন নি? আজ এই জাতির অতি ধার্মিকদের মধ্যে শুধু নামায, রোযা, হজ্জ নয়, বহু নফল, ছোট-খাট অপ্রয়োজনীয় ধর্মকর্ম আছে- নেই শুধু জেহাদ, সংগ্রাম যেটা এই জাতির মূল লক্ষ্য মূল আদর্শ। তা থেকে এই জাতি লক্ষ মাইল দূরে। আবু বকরের (রাঃ) ইসলাম(Islam), সাহাবাদের ইসলাম(Islam) আর বর্তমানের অতি মুসলিম(Muslim)দের ইসলাম(Islam) দুইটি বিপরীতমুখী ইসলাম(Islam), দু'টি বিপরীতমুখী আকীদা। একটি মূল উদ্দেশ্যমুখী, অন্যটি মূল উদ্দেশ্যের বিপরীতমুখী, আর তাই একটি সহায় সম্বলহীন পাঁচলাখের জাতি অর্দ্ধেক পৃথিবীতে আল্লাহর(Allah) দ্বীন কায়েম কোরেছিলো, অন্যটি একশ'ত্রিশ কোটি হোয়েও, পৃথিবীর প্রাকৃতিক সম্পদের একটা বিরাট অংশের মালিক হোয়েও আল্লাহ(Allah)দ্রোহীদের দয়ার ওপর, কৃপার ওপর বেঁচে আছে, অজ্ঞানতার, কুশিক্ষার অন্ধকারে ঘৃণিত জীবন যাপন কোরছে। আকীদা এতখানি বিকৃত হোয়েছে যে আসল লক্ষ্যকে সম্পূর্ণভাবে ছেড়ে দিয়ে, লক্ষ্য অর্জনের প্রক্রিয়াকেই লক্ষ্য মনে কোরে, তাই নিয়ে মহা ব্যস্ত হোয়ে থেকে এই জাতি পরকালে আল্লাহর(Allah) কাছে থেকে পুরষ্কারের আশা কোরছে।

আজ যে ব্যক্তিগত ‘এবাদতের' আকীদায় হজ্জ করা হয় তা যে আল্লাহর(Allah) ও তার রসুলের উদ্দেশ্য নয় তার আর এক প্রমাণ হলো মক্কা ও আরাফাতের চারদিক দিয়ে বহু কিলোমিটার জুড়ে একটি এলাকাকে অমুসলিম(Muslim)দের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা। এই নিষিদ্ধ করণের উদ্দেশ্য কি? মুসলিম(Muslim)দের হজ্জ করার দৃশ্য অমুসলিম(Muslim)দের দেখাতে মুসলিম(Muslim)দের ক্ষতি কি? মুসলিম(Muslim)দের জামাতের নামাযের দৃশ্য সাম্যের, মানুষে মানুষের ভ্রাতৃত্বের, ঐক্য ও শৃংখলার এক অপূর্ব দৃশ্য। শুধু নামাযের দৃশ্য দেখেই বহু অমুসলিম(Muslim) মুগ্ধ হোয়ে ইসলাম(Islam) সম্বন্ধে খোঁজ খবর নিয়ে পড়াশোনা কোরে মুসলিম(Muslim) হোয়ে গেছে। তা হোলে এই নিষিদ্ধ করণের কি অর্থ? এক কথায় এর অর্থ রাষ্ট্রীয় গোপনতা (State Secret)। যে জাতিটি দুনিয়ার অন্য সবরকম জীবন-ব্যবস্থা ভেঙ্গে আল্লাহর(Allah) দেয়া জীবন-ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় সংগ্রামরত সে জাতির বার্ষিক মহা সম্মেলনে অবশ্যই বহু বিষয়ে আলোচনা, পরামর্শ হবে, সিদ্ধান্ত নেয়া হবে যেগুলো অতি গোপনীয়। এই গোপনীয়তাকে অমুসলিম(Muslim)দের কাছ থেকে রক্ষা করার জন্য এই সতর্কতা। নইলে যে জীবন-ব্যবস্থা, দ্বীনকে সমস্ত পৃথিবীময় ছড়িয়ে দেবার কথা সেটার কেন্দ্রস্থলকে আড়াল কোরে রাখার কোন মানে হয় না। হজ্জ যদি জাতীয়, রাজনৈতিক সামরিক ইত্যাদি গোপনীয় সিদ্ধান্তের ব্যাপার না হতো, শুধু আধ্যাত্মিক, ব্যক্তিগত ব্যাপার হতো তবে ঐ নিষিদ্ধকরণ উদ্দেশ্যহীন, অর্থহীন।

অবশ্য স্বীকার কোরতে হবে যে একদিক দিয়ে বর্তমানের হজ্জ ও নামায বাহ্যিকভাবে ঠিকই আছে। সেটা হলো এই ভাবে:- বিশ্বনবী (দঃ) ওফাতের ৬০/৭০ বছর পর থেকে এই উম্মাহর সমস্ত দুনিয়াতে এই দ্বীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম, জেহাদ নেই, যুদ্ধও (কিতাল) নেই। কাজেই বার্ষিক সম্মেলনে (হজ্জে) পরামর্শ আলোচনা, সিদ্ধান্তেরও কোন প্রয়োজন নেই, প্রশিক্ষণ ট্রেনিং (নামায) এরও কোন প্রয়োজন নেই। মহানবীর (দঃ) সময় খোলাফায়ে রাশেদুনের (রাঃ) সময় ও তার পরও কিছু সময় পর্য্যন্ত আরাফাতের হজ্জ কোরতে যারা যেতেন, তারা যদিও বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন ভাষার, বিভিন্ন রংয়ের মানুষ ছিলেন, কিন্তু তারা এক জাতিভূক্ত লোক ছিলেন, একই আকীদার মানুষ ছিলেন, তারা ছিলেন তওহীদবাদী মুসলিম(Muslim), এক আল্লাহর(Allah) ও তার দেয়া জীবন-বিধান (দ্বীন) ছাড়া তারা আর কোন কিছুই মানতেন না। শুধু মানতেন না তাই নয় তারা জানতেন ঐ অন্যগুলি ধ্বংস কোরে সেখানে আল্লাহর(Allah) দ্বীন প্রতিষ্ঠাই হোচ্ছে প্রকৃত এবাদত এবং রসুলুল্লাহর প্রকৃত সুন্নাহ। তারা তাদের কর্ত্তব্য সম্পাদনের পর দুনিয়া থেকে চলে যাবার পর থেকে, জেহাদ ছেড়ে দেবার পর থেকে যারা হজ্জ করেন তারা তওহীদবাদী আল্লাহর(Allah) সার্বভৌমত্বে বিশ্বাসী শুধু ব্যক্তিগত ভাবে, জাতিগত ভাবে নয়। জাতিগত ভাবে তারা কেউ গণতন্ত্রী (জনগণের সার্বভৌমত্বে বিশ্বাসী) কেউ সমাজতন্ত্রী, কমিউনিষ্ট (মানুষের একটি বিশেষ শ্রেণীর সার্বভৌমত্বে বিশ্বাসী) কেউ একনায়কত্বে, কেউ রাজতন্ত্রে বিশ্বাসী ইত্যাদি। তারা তো একে অপরের শত্রু! কাজেই তাদের তো একত্রে বোসে আলোচনার, পরামর্শের প্রশ্নই ওঠে না। এই ‘হাজী'দের কে বোলে দেবে যে তাদের ঐ আংশিক তওহীদ অর্থাৎ শেরক হজ্জ আল্লাহ(Allah) জাল্লে জালালুহু শুধু যে ঘৃণা ভরে প্রত্যাখ্যান কোরবেন তাই নয়, তিনি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ যে, তিনি কোন অবস্থাতেই শেরক মাফ কোরবেন না। কোরানে আল্লাহ(Allah) বোলেছেন- আমি আমার রসুলকে (মোহাম্মাদ দঃ) দুনিয়াতে পাঠিয়েছি এই জন্য যে তিনি যেন দুনিয়ার অন্যান্য সব দ্বীন গুলিকে (জীবন-ব্যবস্থা) বাতিল, বিলুপ্ত কোরে দিয়ে এই শেষ দ্বীন ইসলাম(Islam)কে সমস্ত পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা করেন এবং এই কথার সত্যতার সাক্ষী হিসাবে আমিই যথেষ্ট (কোরান- সূরা আল-ফাতাহ-২৮)। ঐ যে বিরাট কাজের ভার দিয়ে আল্লাহ(Allah) তার শেষ রসুলকে (দঃ) পাঠালেন ঐ কাজ পূর্ণ কোরতে গেলে যে নিরবচ্ছিন্ন সশস্ত্র সংগ্রাম কোরতে হবে, তা বর্ত্তমানের মহা ধার্মিক মুসলিম(Muslim)রা না বুঝলেও আল্লাহ(Allah) ও তার রসুল (দঃ) বুঝতেন বোলেই বিশ্বনবী (দঃ) তার অনুসারীদের বোললেন- আমি আদিষ্ট হোয়েছি (আল্লাহ কর্ত্তৃক) সশস্ত্র সংগ্রাম, যুদ্ধ চালিয়ে যেতে যে পর্য্যন্ত না সমস্ত দুনিয়ার মানুষ স্বীকার কোরে নেয় যে আল্লাহ(Allah) ছাড়া বিধানদাতা, বিধাতা (এলাহ) আর কেউ নেই, মোহাম্মদ (দঃ) তার রসুল, নামায কায়েম করে এবং যাকাত দেয় [হাদীস- আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) থেকে, বোখারী]। (সেই দ্বীনুল কাইয়্যেমা, সনাতন ধর্ম)। ঐ কাজ সশস্ত্র সংগ্রাম ছাড়া সম্ভব নয় বুঝেই এবং আল্লাহর(Allah) নির্দেশ অনুযায়ী মহানবী (দঃ) এক দুর্দ্ধর্ষ, অপরাজেয় যোদ্ধা জাতি গড়ে তুললেন, যে জাতি উত্তাল মহা তরঙ্গের মত আরব থেকে বাইরে বেড়িয়ে পৃথিবীর বুকের ওপর গড়িয়ে পড়ে সব কিছু ভাসিয়ে নিয়ে গেলো। আর আজকের অন্তর্মুখী, অতি-মুসলিম(Muslim) এই ঘৃণিত জাতির আকীদায় বিশ্বনবীকে (দঃ) আল্লাহ(Allah) দুনিয়ায় পাঠিয়েছিলেন টখ্‌নুর ওপর পাজামা পড়া শেখাতে, ডান পাশে শুয়ে ঘুমাতে, মাথায় টুপি দিতে, খানকায় বোসে তসবিহ টপকাতে, গোল হোয়ে বোসে চিৎকার কোরে যিকর কোরতে, কুলখ নিতে, মেসওয়াক কোরতে আর গোঁফ কেটে ফেলার মত সামান্য কাজ কোরতে। শ্রেষ্ঠ নবীর (দঃ) প্রকৃত সুন্নাহ জেহাদ ত্যাগ কোরে তার উম্মাহ হোতে বহিষ্কৃত হবার শাস্তি স্বরূপ আল্লাহ(Allah) এই জাতির মগজ থেকে সাধারণ জ্ঞান (Common Sense) টুকুও বের কোরে দিয়ে চূড়ান্ত আহাম্মকে পরিণত কোরে দিয়েছেন, নইলে কি কোরে এই আকীদা সম্ভব? আর আসল কাজ বাদ দিয়ে নিজেরা শেরকের মধ্যে ডুবে থেকে ঐ সব তুচ্ছ, খুঁটিনাটি কাজ নিয়ে ব্যস্ত হোয়ে থেকে নিজেদের শুধু মহা মুসলিম(Muslim) নয়, একেবারে উম্মতে মোহাম্মদী বোলে মনে কোরে আল্লাহর(Allah) ক্ষমা ও জান্নাতের আশা করা কতখানি নির্বুদ্ধিতা তা উপলব্ধি করার শক্তিও এই মহা পরহেজগার অতি মুসলিম(Muslim) জাতির নেই। কিন্তু পেছনে আমি বর্তমানে হজ্জকে প্রাক-ইসলামী যুগের মোশরেকদের হজ্জের সঙ্গে তুলনা কোরেছি। আমি জানি এ কথায় বর্তমানের মুসলিম(Muslim) জাতি, বিশেষ কোরে যারা হজ্জ কোরেছেন, তারা কেমন উত্তেজিত হোয়ে উঠবেন। তাদের কাছে আমার অনুরোধ- একটু শান্ত হোয়ে দু'একটা কথা শুনুন। এটা ইতিহাস যে আল্লাহর(Allah) রসুলের (দঃ) আসার আগেও বহু শতাব্দী ধোরে মক্কায় প্রতি বৎসর হজ্জ হতো- ঐ একই সময়েই- জিলহজ্জ মাসেই, এবং কোরবানী, কাবা তওয়াফ ইত্যাদি বহু কিছুই বর্তমানে এই হজ্জের মতই ছিলো। তখন আরবের গোত্রে গোত্রে যুদ্ধ, মারামারি সংঘর্ষ লেগেই থাকতো। এই গোত্রগুলি হজ্জের সময় মক্কায় একে অন্যের মুখোমুখি হোলো তাদের মধ্যে সংঘর্ষ হোয়ে হজ্জ যাতে পণ্ড না হয় সেজন্য সমাজপতিরা নিয়ম কোরে দিয়েছিলেন যে হজ্জের মাসে সমস্ত রকম বিবাদ, ঝগড়া হারাম হবে। সমস্ত আরবের মোশরেকরা ঐ নিয়ম মেনে নিয়েছিলো। হজ্জের সময় চরম শত্রুরাও একে অন্যের প্রতি হাত উঠাতোনা, কিন্তু হজ্জ শেষে, হজ্জের মাস শেষ হোয়ে গেলেই তারা আবার যুদ্ধ, সংঘর্ষ শুরু কোরে দিতো। হজ্জকে আল্লাহ(Allah) ও তার রসুল (দঃ) জারি রাখলেন মুসলিম(Muslim) উম্মাহর ঐক্য ও শৃংখলার বন্ধন ও কেন্দ্রবিন্দু হিসাবে। তাই বিশ্বনবী (দঃ) তার হজ্জের ভাষণে উম্মাহর নিজেদের মধ্যে মারামারি অর্থাৎ অনৈক্যকে পরিষ্কার ভাষায় কুফর বোলে ঘোষণা দিলেন।

বর্তমানের হজ্জকে মোশরেকদের হজ্জের সঙ্গে একবার তুলনা করুন। মোশরেকরা যেমন গোত্রে গোত্রে বিভক্ত ছিলো আজ এই উম্মাহ তেমনি বহু ভৌগলিক রাষ্ট্রে (Nation States) বিভক্ত। ঐ গোত্রগুলি যেমন নিজেদের মধ্যে মারামারি ও যুদ্ধ করতো এই ভৌগলিক রাষ্ট্রগুলির ‘মুসলিমেরা' ঠিক তেমনি মারামারি করে। মোশরেকরা যেমন হজ্জের মাসে মক্কায় মহা শত্রুকেও কিছু বলতো না বর্তমানেও ভৌগলিক রাষ্ট্রে বিশ্বাসী মুসলিম(Muslim)রাও হজ্জের সময় ‘শত্রুর' মুখোমুখি হোলে একে অপরকে আক্রমণ করে না। কিন্তু হজ্জ থেকে যার যার দেশে ফিরে যেয়েই তারা আগের মত নিজেদের মধ্যে মারামারি শুরু করে দেয়। তাহোলে আল্লাহর(Allah) রসুলের (দঃ) আগমনের পূর্বের হজ্জের সঙ্গে বর্তমানের হজ্জের তফাৎ কোথায়? হ্যা, একটা তফাৎ অবশ্যই আছে। হজ্জের মাসে পূর্ণ যুদ্ধ বিরতি মোশরেকরা অলংঘনীয় ভাবে মেনে চলতো, হজ্জে যেয়ে মোশরেকরা যুদ্ধ বাধিয়ে দিয়েছে এমন ঘটনা আমি কোথাও পাইনি। কিন্তু বর্তমানের ‘মুসলিম(Muslim)রা' হজ্জের অতুটুকু সম্মানও রাখেনি। কয়েক বছর আগে কয়েকশ' হাজীকে হত্যা করে হজ্জকে মোশরেকদের হজ্জের চেয়েও নিচে নামিয়ে দিয়েছে।

কোন মন্তব্য নেই: