বৃহস্পতিবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০১১

২৯। জাতি কার্যতঃ মোশরেক ও কাফের

উৎস: Islam and Dajjal
যারা এ বই এই পর্য্যন্ত পড়েছেন, তারা অবশ্যই দেখতে পেয়েছেন, আমি বোলতে চেষ্টা কোরেছি যে আল্লাহ(Allah) যে উদ্দেশ্যে তার শ্রেষ্ঠ নবীর মাধ্যমে দ্বীনুল ইসলাম(Islam)কে মানব জাতির জন্য পাঠিয়েছিলেন এবং যে উদ্দেশ্যে সেই নবী (দঃ) এই উম্মতে মোহাম্মদী সৃষ্টি কোরেছিলেন সেই মহান উদ্দেশ্য বহু পূর্বে হারিয়ে গেছে। আল্লাহ(Allah) ও তার রসুল (দঃ) এই উম্মাহকে যে দিক- নির্দেশনা (Orientation) দিয়ে দিয়েছিলেন তা থেকে এই উম্মাহ বিচ্যুত হোয়ে ঠিক বিপরীত দিকে চোলছে। সুতরাং এই উম্মাহ আর কার্যতঃ মোমেনও নেই, মুসলিম(Muslim)ও নেই, উম্মতে মোহাম্মদীও নেই। এটা এখন একটি পথভ্রষ্ট জনসংখ্যা, যার গত কয়েক শতাব্দীর ইতিহাস হোচ্ছে অপমান, দারিদ্র্য, অশিক্ষা, কুশিক্ষা, শত্রুর হাতে পরাজয় ও খ্রীস্টান পাশ্চাত্য শক্তিগুলির ঘৃণিত গোলামী। এগুলো হোচ্ছে এই দুনিয়ায় আর ঐ দুনিয়ায় অপেক্ষা কোরছে কঠিন আযাব। আমি চেষ্টা কোরেছি হাজার বছরের ফেকাহ, তফসির আর ফতোয়ার পাহাড়ের নিচে যে সহজ-সরল (সেরাতুল মুস্তাকীম) ইসলাম(Islam) চাপা পড়ে রোয়েছে সেই ইসলাম(Islam)কে, সেই দ্বীনুল কাইয়্যেমাকে তার মৌলিক, অনাবিল রূপে উদ্ধার কোরে মানুষের সামনে উপস্থিত কোরতে। জানিনা, পেরেছি কিনা। এক শ্রেণীর মানুষ পৃথিবীতে সব সময় ছিলো, আছে এবং থাকবে যারা সত্য বুঝেও বুঝবে না। এই শ্রেণী বোলবে মুসলিম(Muslim) বোলে পরিচিত এই জনসংখ্যাটির অধিকাংশই কার্যতঃ মোশরেক ও কাফের হয়ে গেছে এ কথা মানি না। তারা হাদীস দেখাবেন- মহানবী (দঃ) বোলেছেন- আমার উম্মাহ সামগ্রিকভাবে পথভ্রষ্টতায় একত্রিত হবে না। এই একটি মাত্র হাদীস ছাড়া তাদের পক্ষে আর কিছুই দেখাতে পারবেন না। এর জবাবে প্রথম কথা হলো এই যে, সমস্ত মোহাদ্দিস ও আলেমগণ একমত যে, শব্দগত ও সূত্রগত (সনদ) উভয় দিক দিয়ে এই হাদীসটি বিশুদ্ধ নয়, অর্থাৎ অত্যন্ত দুর্বল (দয়ীফ), দ্বিতীয়তঃ "সামগ্রীকভাবে" অর্থ যদি এই হয় যে ঐ পথভ্রষ্টতার বাইরে, হেদায়াতে কেউ থাকবে না, সম্পূর্ণ উম্মাহই গোমরাহ হবার কথা বোঝায় তবে ঐ হাদীসটি দূর্বল হোলেও ওটাকে সঠিক বোলে মেনে নিতে রাজী আছি। কারণ, আমি সম্পূর্ণ জাতীটিকেই মোশরেক ও কাফের কখনই বোলছি না, বোলছি বৃহত্তর সংখ্যাগরিষ্ঠের কথা। কারণ সর্ব অবস্থায়, কেয়ামত পর্য্যন্ত একটা জামায়াত বা ফেরকা সত্যের ওপর অটল থাকবে এ কথা বিশ্বনবীই (দঃ) বোলে গেছেন। ঐ ফেরকা হবে ছোট, সংখ্যালঘিষ্ট। এই ছোট জামায়াত বা ফেরকার কথা পেছনে বোলে এসেছি। প্রশ্ন তো বৃহত্তর অংশ অর্থাৎ সংখ্যাগরিষ্ঠের কথা। কিছু সংখ্যক মানুষ সর্ব অবস্থায় গোমরাহীতে, পথভ্রষ্টতায় থাকবে, আল্লাহ(Allah)র রসুলের (দঃ) জীবিত কালেও ছিলো, তাই বোলে সেই জাতিকে পথভ্রষ্ট বলা ভুল হবে অবশ্যই। তার সমস্ত জীবনের সাধনা সাফল্য লাভ কোরেছে কিনা সেই পরীক্ষা করার জন্য যখন তিনি তাবুকের অভিযানের আদেশ দিলেন- তখন আশী জনের মত লোক তাতে যোগ দিলো না। ঐ আশি জন হেদায়াতপ্রাপ্ত হয়নি, কিন্তু ঐ আশি জনের জন্য রসুলুল্লাহকে (দঃ) ব্যর্থ বলা যাবে না। কারণ ত্রিশ হাজার মানুষ তাঁর ডাকে সাড়া দিয়ে পাকা ফসল ত্যাগ কোরে, আগুনের মত মরুভূমির ওপর দিয়ে বহু দুরবর্তী এক পরাশক্তিকে আক্রমণ করার জন্য রওয়ানা হোয়ে গেলো। কিন্তু যদি এমন হতো যে আশিজন লোক তার ডাকে সাড়া দিলো আর কেউ দিলোনা, তবে অবশ্যই বলা যেতো যে মহানবীর (দঃ) জীবনের সাধনা ব্যর্থ। কাজেই প্রশ্ন হোচ্ছে সংখ্যাগরিষ্ঠতার, সংখ্যালঘিষ্ঠতার। যে একটি মাত্র দুর্বল হাদীস দিয়ে এরা নিজেরা যে পথভ্রষ্ট হোয়ে মোশরেক ও কাফেরের পর্য্যায়ে চলে গেছেন তা অস্বীকার করার চেষ্টা করেন সে হাদীসটি সংকলন কোরেছেন আবু মোহাম্মদ আলী ইবনে হাজম এবং কোরেছেন রসুলুল্লাহর (দঃ) সাড়ে চারশ' বছর পর, অর্থাৎ বোখারী, মুসলিম(Muslim) (রঃ) ইত্যাদি মুহাদ্দীসদের বহু পরে, দু'শ বছরেরও পর। আরও লক্ষ্য করার বিষয় হলো এই যে এই ইবনে হাজম স্পেনের অধিবাসী ছিলেন এবং মুসলিম(Muslim) জাহানে স্পেন একমাত্র জায়গা, যেখান থেকে মুসলিম(Muslim) জাতি সমূলে উৎখাত হোয়েছে। আল্লাহ(Allah) এই জাতিকে বোলেছিলেন- তোমরা যদি (পৃথিবীতে আল্লাহ(Allah)র দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্য) সামরিক অভিযানে বাহির না হও তবে তিনি তোমাদের মর্মন্তুদ শাস্তি দেবেন এবং অপর জাতিকে তোমাদের স্থলাভিষিক্ত কোরবেন (কোরান- সূরা আত-তওবা- ৩৯)। আরও বোলেছিলেন-"তোমাদের রণ-সম্ভার (অস্ত্রশস্ত্র, রশদ ইত্যাদি) সামান্যই হোক আর বেশীই হোক বাহির হোয়ে পড় এবং তোমাদের প্রাণ ও সম্পদ দিয়ে আল্লাহ(Allah)র পথে জিহাদ কর (কোরান- সূরা আত-তওবা- ৪১)।" আল্লাহ(Allah)র এই সব সরাসরি, দ্ব্যর্থহীন আদেশগুলি (যেগুলি তার নবীর প্রকৃত সুন্নাহ এবং যা ত্যাগ কোরলে তার উম্মাহ হোতে তিনি বহিষ্কার কোরে দিয়েছেন) পরিত্যাগ ও অমান্য করার ফলে আল্লাহ(Allah) তার প্রতিশ্রুতি মোতাবেক এই মুসলিম(Muslim) জাতির হাত থেকে শাসন-শক্তি ছিনিয়ে নিয়ে ইউরোপের খ্রীস্টান জাতিগুলির হাতে সোপর্দ কোরলেন। আল্লাহ(Allah)র এই কাজের দ্বারাই প্রমাণিত হোয়ে গেলো যে তওহীদের ও উম্মতে মোহাম্মদীর দাবীদার এই জাতি তখন আর না মোমেন, না উম্মতে মোহাম্মদী। কারণ আল্লাহ(Allah) কোরানে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে- যারা বিশ্বাস করে ও সৎ কাজ করে (অর্থাৎ মোমেন) তাদের তিনি পৃথিবীর উত্তরাধিকারীত্ব অর্থাৎ শাসন ক্ষমতা দান কোরবেন (কোরান সূরা আন-নূর- ৫৫)। পৃথিবীর উত্তরাধিকারত্ব কি? পৃথিবীর মালিকানা, প্রভূত্ব, শ্রেষ্ঠত্ব। তার প্রতিশ্রুতি মোতাবেক মাত্র কয়েক লাখ মো'মেন, উম্মতে মোহম্মদীর হাতে তিনি তদানিন্তন পৃথিবীর অর্দ্ধেক উঠিয়ে দিয়েছিলেন। আকীদা বিকৃত হয়ো পথভ্রষ্ট হোয়ে জেহাদ ত্যাগ না কোরলে বাকি পৃথিবীও তাদের হাতে সমর্পণ কোরতেন, সন্দেহ নেই। আর আজ ঐ একই জাতি হবার দাবীদার একশ’ত্রিশ কোটি জনসংখ্যাটি পৃথিবীর সব জাতি কর্তৃক অপমানিত, পরাজিত, নিগৃহীত, লাঞ্ছিত। পৃথিবীর অন্যান্য সব জাতি মো'মেন হবার দাবীদার এই জনসংখ্যাকে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে গুলি কোরে হত্যা কোরছে, তাদের বাড়ীঘর জ্বালিয়ে দিচ্ছে, তাদের ধন-সম্পত্তি কেড়ে নিচ্ছে, তাদের মেয়েদের ধর্ষণ কোরছে। তার উম্মতের দাবীদার এই জনসংখ্যার অবস্থার কথা আল্লাহ(Allah)র রসুল (দঃ) ভবিষ্যৎবাণী কোরে গেছেন। বোলেছেন, খাবার পরিবেশন কোরে মানুষকে যেমন খেতে ডাকা হয় তেমনি কোরে পৃথিবীর অন্যান্য জাতি পরস্পরকে ডাকবে মোমেন হবার উম্মতী মোহাম্মদী (দঃ) হবার দাবীদার এই জাতির বিরুদ্ধে (একে পরাজিত, ধ্বংংস করার জন্য) এ কথাও বোললেন যে তখন এই জাতি হবে সংখ্যায় অগণিত এবং সংখ্যায় অগণিত হওয়া সত্ত্বেও পরাজিত অপমানিত নিগৃহিত হবার কারণ বোললেন, তারা স্রোতে ভেসে যাওয়া আবর্জনা হবে [হাদীস- সাওবান (রাঃ) থেকে- আবু দাউদ, মেশকাত]। স্রোতে ভেসে যাওয়া আবর্জনা আর মো'মেন, উম্মতে মোহাম্মদী(দঃ) যদি একই বস্তু হয় তবে বর্তমানের এই জনসংখ্যা যেটা ‘মুসলিম(Muslim)’ বোলে পরিচিত সেটা মোমেন ও উম্মতী মোহাম্মদী।

আল্লাহ(Allah)র তার কোরানে বোলেছেন- হে নবী! সশস্ত্র সংগ্রামে মোমেনদের উদ্বুদ্ধ কর। তোমাদের মধ্যে যদি বিশজন সাবের (দৃঢ়, অটল, অদম্য, সংশপ্তক- ‘সবরের অর্থ' পরিচ্ছেদ দেখুন) থাকে তবে তারা (শত্রুর) দুইশত জনকে পরাজিত কোরবে, এবং তোমাদের যদি একশত জন সাবের থাকে তবে (শত্রুর) এক হাজার জনকে পরাস্থ কোরবে। পরের আয়াতেই আল্লাহ(Allah) এ অনুপাতকে ১:২-তে কমিয়ে দিয়েছেন, মো'মেনদের মানবিক দুর্বলতা লক্ষ্য কোরে। ১:১০ এবং ১:২ এই অনেকখানি তফাতের কারণ হলো ঈমান ও সবরের গভীরতার তফাৎ। সর্বোচ্চ ঈমানের ও সবরের অধিকারীরা এক একজন দশজন শত্রুকে ও সর্বনিম্ন ঈমান ও সবরের অধিকারীরা এক এক জন দুইজন শত্রুকে পরাজিত কোরবে। এর নীচে আর ঈমানের ও সবরের পরিচয় ও অস্তিত্ব নেই। আল্লাহ(Allah)র দেয়া ঐ হিসাব অনুযায়ী বর্তমান ‘মুসলিম(Muslim)’ জাতি সামগ্রিকভাবে মো'মেনের সংজ্ঞায় পড়ে কি? অবশ্যই পড়ে না। যারা ঐ দুর্বল হাদিসটি দেখিয়ে বোলবেন- এই জাতি পথভ্রষ্ট হয়নি, মোমেনই আছে, মুসলিম(Muslim)ই আছে, উম্মতে মোহাম্মদীই আছে তাদের আমি বিশ্বনবীর (দঃ) ঐ হাদীসটি স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যেটায় তিনি ভবিষ্যৎ বাণী কোরেছেন যে তার উম্মাহ তেহাত্তর ভাগে ভাগ হবে যার একটিমাত্র ভাগ হবে জান্নাতী, অর্থাৎ হেদায়াতে, সেরাতুল মুস্তাকীমে থাকবে, আর বাকি বাহাত্তর ভাগই হবে না'রি অর্থাৎ জাহান্নামী, হেদায়াত থেকে পথভ্রষ্ট। সেই সংখ্যাগরিষ্ঠতার, সংখ্যালগিষ্ঠতার কথাই আবার এসে যাচ্ছে। তেহাত্তর ভাগের বাহাত্তর ভাগ কত? শতকরা ৯৮.৬৩%। অর্থাৎ জাতির শতকরা ৯৮.৬৩ জন পথভ্রষ্ট, (প্রকৃতপক্ষে একেবারে বিপরীতগামী) জাহান্নামী এবং এর মাত্র ১.৩৭ জন জান্নাতী। শতকরা ১.৩৭ জন হেদায়াতে আছে বোলে যারা সমগ্র জাতি ‘পথভ্রষ্টতায় একত্রিত’ হয়নি বোলে আত্মপ্রবঞ্চনা কোরবেন তাদের আর আমার বলার কিছু নেই। আসল কথা হলো এই দ্বীনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলিকে ত্যাগ কোরে অনেক কম প্রয়োজনীয় ও অপ্রয়োজনীয় ব্যাপারগুলিকে আঁকড়িয়ে ধরার পর, অর্থাৎ অগ্রাধিকার (Priority) সম্বন্ধে আকীদা বিকৃত হোয়ে যাবার পর নিজেদের সঠিক পথে থাকার প্রমাণের চেষ্টায় যে সব হাদীস তৈরী কোরে নেয়া হোয়েছে সেগুলিকে খুব চালু কোরে দেয়া হোয়েছে। নিজেদের পথভ্রষ্টতা সঠিক প্রমাণের জন্য এরা খুঁজে খুঁজে ঘোর সন্দেহযুক্ত দুর্বল (দয়ীফ) হাদীস খুঁজে বের কোরেছেন (যেগুলো প্রকৃত পক্ষেই সঠিক হাদীস নয়), জেহাদ, সশস্ত্র সংগ্রাম থেকে পালাবার জন্য জেহাদে আকবরের হাদীস খুঁজে বের কোরছেন, নবীর (দঃ) প্রকৃত সুন্নাহ, পৃথিবীতে এই দ্বীনকে প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম থেকে পালাবার জন্য তার দাড়ি-মোচের, খাওয়া-দাওয়ার, কাপড়-চোপড়ের সুন্নাহ খুঁজে বের কোরেছেন। নিজেদের প্রবঞ্চনায় তারা সাফল্য লাভ কোরলেও অবশ্যম্ভাবী পরিণতি থেকে তারা বাঁচতে পারেননি। এই পৃথিবীতে অন্য জাতিগুলির হাতে পিটানি, অপমান, লাঞ্ছনা, ও গোলামী থেকে তারা বাঁচতে পারেন নি, পারছেন না। বিধর্মীরা ভিক্ষা না দিলে না খেয়ে থাকতে হোচ্ছে। তারা এই জাতির মেয়েদের হাজারে হাজারে ধর্ষণ কোরে গর্ভবতী কোরলেও শুধু চিৎকার করা ছাড়া আর কিছুই করার সাধ্য নেই। যদি এই জনসংখ্যা, যেটা নিজেদের মুসলিম(Muslim) বোলে মনে কোরে আহাম্মকের স্বর্গে বাস কোরছে, এখনও এটার চলার পথের দিক পরিবর্তন কোরে আল্লাহ(Allah)-রসুলের (দঃ) দিক-নির্দেশনায় (Orientation), অর্থাৎ সেরাতুল মুস্তাকীমে, প্রকৃত তওহীদ ও জেহাদের পথে ফিরে না আসে তবে অদূর ভবিষ্যতে অপেক্ষা কোরছে বর্তমানের চেয়েও ভয়াবহ অবস্থা এবং আখেরাতে ভয়ংকর শাস্তি। মুসলিম(Muslim), মো'মেন ও উম্মতে মোহম্মদী বোলে পরিচিত বর্তমানের এই জনসংখ্যাকে আমি এই বইয়ে কার্যতঃ মোশরেক ও কাফের বোলে আখ্যায়িত কোরেছি। কোন সন্দেহ নেই যে এই জনসংখ্যার একটি বিশেষ অংশ, যে অংশটি আল্লাহ(Allah) ও তাঁর রসুল (দঃ) বারবার সতর্কীকরণ সত্ত্বেও দ্বীন নিয়ে বাড়াবাড়ি কোরে সেটাকে ধ্বংস কোরে দিয়েছেন, নিজেরা অতি মুত্তাকী হোয়েছেন, কিন্তু চোলছেন আল্লাহ(Allah)-রসুলের দিক নির্দেশনার ঠিক বিপরীত দিকে, সেই অংশটি অত্যন্ত চটে যাবেন আমার ওপর। তাদের কাছে আমি সবিনয়ে কয়েকটি কথা নিবেদন কোরতে চাই। (ক) মো'মেন জাতির কাছে আল্লাহ(Allah) প্রতিশ্রুতিবদ্ধ তাদের সর্বাবস্থায় সাহায্য করার জন্য (কোরান- সূরা আর-রুম- ৪৭)। শুধু সাহায্য করার নয় তাদের হাতে পৃথিবীর কর্তৃত্ব উঠিয়ে দেবার (কোরান সূরা আন-নূর- ৫৫)। যদি দেখা যায় যে মো'মেন হবার দাবিদার জাতিটির হাতে পৃথিবীর কর্তৃত্ব তো নেইই বরং সে জাতি অন্যান্য জাতির দাসত্ব কোরেছে এবং কোরছে, অন্যান্য জাতিগুলি পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে এই জাতির মানুষগুলোকে অপমান কোরছে, লাঞ্ছিত কোরছে, তাদের গুলি কোরে, আগুনে পুড়িয়ে, বেয়নেট কোরে, ট্যাংকের তলায় পিষে হত্যা কোরছে, তাদের মেয়েদের নিয়ে যাচ্ছে, তাদের ধর্ষণ কোরে হাজারে হাজারে গর্ভবতী কোরছে, তবে দু’টি সিদ্ধান্তের একটি সিদ্ধান্ত অবশ্যই নিতে হবে। হয় আল্লাহ(Allah) তার প্রতিশ্রুতিপালন কোরছেন না, বা কোরতে অক্ষম, আর না হয় মো'মেন হবার দাবীদার এই জনসংখ্যা মো'মেন নয়। যেহেতু আল্লাহ(Allah) তার প্রতিশ্রুতিপালন কোরতে ব্যর্থ, এটা অসম্ভব-কাজেই মো'মেন দাবীদার এই জনসংখ্যা মো'মেন নয় এবং মো'মেন নয় মানে অবশ্যই মোশরেক ও কাফের। অন্য সিদ্ধান্ত অসম্ভব। (খ) মহানবী (দঃ) কোরানের আয়াতগুলির কোনটার অর্থ, ব্যাখ্যা নিয়ে মতভেদ, তর্কাতর্কিকে কুফর বোলে ঘোষণা দিয়েছেন। তার জীবিতকালে তার সাহাবাদের মধ্যে কোরানের আয়াতের অর্থ নিয়ে কোন মতভেদ, তর্ক হয়নি, ফেকাহ নিয়ে আলাদা আলাদা দল (মযহাব) গঠন তো চিন্তার বাইরে। কোন সন্দেহ নেই যে কেউ ও রকম কোন চেষ্টা কোরলে তিনি তাকে হত্যা করার হুকুম দিতেন। তার ওফাতের বহু পরে যখন ঠিক ঐ কাজটাই করা শুরু হলো, তখন ওটা শুধু যে কুফর হলো তাই নয়, ওটা বেদাত অর্থাৎ শেরকও হলো, কারণ মহানবীর (দঃ) সময় ওটা ছিলো না। সেই তখন থেকে ঐ কুফর, বেদা’ত ও শেরক কাজ আজ পর্য্যন্ত নিরবচ্ছিন্নভাবে চোলে আসছে। শুধু চোলে আসছে না বিকৃত ও বিপরীত আকীদার ফলে ঐ শেরক ও কুফর মহা সওয়াবের, পূণ্যের কাজ মনে কোরে করা হোচ্ছে। যে জাতি বা জনসংখ্যা হাজার বছরেরও বেশী সময় ধোরে শেরক ও কুফর কোরে আসছে সেটাকে কার্যতঃ কাফের ও মোশরেক বলায় ভুল কোথায়? (গ) পৃথিবী থেকে বিদায় নেবার সময় হোলে বিশ্বনবী (দঃ) বিদায় হজ্জে তার উম্মাহকে সেই সব ব্যাপারে সাবধান কোরে দিয়েছিলেন যে সব ব্যাপারে তার অবর্তমানে উম্মাহর ভুল করার সম্ভাবনা ছিলো। সেই সব ব্যাপারগুলির মধ্যে একটি ছিলো নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব, সংঘর্ষ অর্থাৎ অনৈক্য। বোলেছিলেন- এই দিন (হজ্জের দিন), এই মাস(জিল হজ্জ) ও এই স্থানের (মক্কা ও আরাফাতের ময়দান) পবিত্রতা একত্র কোরলে যতখানি পবিত্রতা জমা হয়, তোমাদের একের জন্য অন্যের জীবন, সম্পদ ও সম্মান ততখানি পবিত্র (হারাম)। সাবধান! সাবধান! আমার (ওফাতের) পর তোমরা একে অন্যকে হত্যা কোরে কুফরী কোরো না। আল্লাহ(Allah)র রসুল (দঃ) তার জাতির উদ্দেশ্যে এই সাবধান বাণী একবার নয়, বারবার উচ্চারণ কোরেছিলেন। লক্ষ্য করুন, অনৈক্য, নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব সংঘর্ষকে মহানবী (দঃ) কী বোলেছেন! একে তিনি বোলছেন কুফর। এ ইতিহাস কি কেউ অস্বীকার কোরতে পারবে যে বিশ্বনবীর (দঃ) ওফাতের কিছু পর থেকেই এই জাতি নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে লিপ্ত হোয়ে পড়েছিলো এবং পরবর্তীতে বহু মযহাবে ও ফেরকায় বিভক্ত হোয়ে গিয়েছে এবং তারপর ঐ মহাপাপের শাস্তি হিসাবে আল্লাহ(Allah) যখন এটাকে ইউরোপের খ্রীস্টান শক্তিগুলির গোলাম, দাস বানিয়ে দিলেন তখন এই জনসংখ্যা তাদের প্রভুদের রাষ্ট্রনীতি নকল কোরে চল্লিশটিরও বেশী ভৌগলিক রাষ্ট্রে বিভক্ত হোয়ে কুফরীর যা কিছু বাকি ছিলো সেটুকুও পূরণ করলো। কাজেই মুসলিম(Muslim) বোলে পরিচিত এবং অজ্ঞানতার (জাহেলিয়াতের) অন্ধকারে বোসে প্রচুর এবাদতকারী এই জনসংখ্যাকে কার্যতঃ কাফের আমি বোলছিনা, আল্লাহ(Allah)র রসুল (দঃ) বোলে গেছেন, আমি শুধু উল্লেখ কোরছি। (ঘ) এতো গেলো যুক্তির কথা। এবার প্রমাণ। আল্লাহ(Allah) তার কোরানে বোলছেন- কাফেরদের দোয়া নিস্ফল, ব্যর্থ (কোরান- সূরা আর-রা’দ- ১৪, সূরা আল-মো'মেন- ৫০)। অর্থাৎ আল্লাহ(Allah) বোলছেন কাফেররা যা দোয়া করে, যা চায় আল্লাহ(Allah) তা মঞ্জুর করেন না। গত শত শত বছর ধোরে এই জাতি কি কি দোয়া কোরে আসছে? একটা হলো- হে আমাদের রব! আমাদের এই দুনিয়াকে সুন্দর কোরে দাও এবং আমাদের পরজীবনকে সুন্দর করে দাও (কোরান-সূরা আল-বাকারাহ- ২০১)। এই দোয়ার ফল কি বোলে দিতে হবে? কয়েক শতাব্দীভর খ্রীস্টানদের দাসত্ব এবং তারপর এখন আরও ঘৃণ্য অবস্থা। পৃথিবীর সর্বত্র পরাজয়, অপমান, নিগ্রহ, তো আছেই তার ওপর অন্যান্য প্রতিটি জাতি এই জাতি বা জনসংখ্যার মানুষদের হত্যা কোরছে, তাদের বাসস্থান জ্বালিয়ে পুড়িয়ে সেখান থেকে বের কোরে দিচ্ছে, তাদের মেয়েদের ধোরে ধোরে ধর্ষণ কোরে হাজারে হাজারে গর্ভবতী কোরছে, ট্যাংকের তলায় পিষে মারছে। একশ’ ত্রিশ কোটি সংখ্যার জাতিটিকে পৃথিবীর অন্য কোন জাতিই এতটুকুও পরওয়া কোরছে না, অবজ্ঞা, বিদ্রুপ কোরছে। এই দুনিয়াকে সুন্দর করার দোয়ার ঠিক বিপরীত ফল। আর যাদের এই দুনিয়া এই রকম তাদের ঐ দুনিয়া অর্থাৎ আখেরাতেও তাই, কঠিন আযাব। এই জাতি দোয়া করছে, মসজিদে-মসজিদে, মজলিসে, এজতেমায়, মিটিংয়ে, দোয়া করছে- আল্লাহ(Allah) আমাদের প্রথম কেবলা বায়তুল মোকাদ্দেস ইহুদীদের হাত থেকে উদ্ধার কোরে দাও। ফল কি হোচ্ছে? ইসরাইল রাষ্ট্র আয়তনে আরও বড় হোচ্ছে, ত্রুমশঃ আরও শক্তিশালী হোচ্ছে। এই জাতির ঐক্যের জন্য দোয়া করা হোচ্ছে এবং যতই করা হোচ্ছে ঐক্য ততই ভাঙ্গছে। এই জাতির শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য, শত্রুর বিরুদ্ধে জয়ের জন্য (আলা কওমেল কাফেরিন), এক কথায় এই জাতি আল্লাহ(Allah)র কাছে যা কিছুর জন্য দোয়া কোরে যাচ্ছে, হিসাব কোরে দেখুন তার প্রত্যেকটার উল্টো ফল হোচ্ছে। ইরাক এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে যুদ্ধের সময় খ্রীস্টান পাশ্চাত্যের তাবেদার পশ্চিম এশিয়ার আরব রাজতন্ত্র ও আমীরতন্ত্রের রাষ্ট্রগুলি ছাড়া বাকি মুসলিম(Muslim) দুনিয়া ইরাকের জয়ের জন্য আল্লাহ(Allah)র কাছে প্রাণপণে দোয়া কোরেছে, লক্ষ লক্ষ লোক নামায, রোযা মানত কোরেছে। ফল কি হোয়েছে? সেই বিপরীত ফল হোয়েছে, আল্লাহ(Allah) ইরাককে লজ্জাকর পরাজয় দিয়েছেন। কারণ যারা দোয়া কোরেছিলো এবং যাদের জন্য দোয়া করা হোচ্ছিলো দু'টোর কোনটাই মো'মেন নয়, এবং মো'মেন নয় অর্থই মোশরেক এবং কাফের। জাতি মো'মেন হোলে, কার্যতঃ মোশরেক ও কাফের না হোলে উপসাগরীয় যুদ্ধের অবস্থাই সৃষ্টি হতো না।

আল্লাহ(Allah) কোরানে বোলছেন- কাফেরদের দোয়া নিস্ফল ও ব্যর্থ। অর্থাৎ তাদের দোয়া আল্লাহ(Allah) শুনবেন না, কোন ফল হবে না। তা হোলে যে জাতি বা জনসংখ্যার দোয়া, মানত তিনি যে শুধু শুনছেন না তাই না, যা যা দোয়া করা হোচ্ছে সেগুলোর ঠিক বিপরীত ফল দিচ্ছেন সে জাতি বা জনসংখ্যা কি?

কোন মন্তব্য নেই: