বৃহস্পতিবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০১১

১৫। বেদা'ত

উৎস: Islam and Dajjal
পেছনে কয়েকবার বেদা'ত শব্দটা ব্যবহার কোরে এসেছি। এটাকে ভালো কোরে বুঝে নেওয়ার প্রয়োজন আছে, কারণ বেদা'ত এমন সাংঘাতিক গোনাহ, পাপ, যে একে মহানবী (দঃ) শেরকের সমপর্য্যায়ের গোনাহ বোলে বর্ণনা কোরেছেন, এবং সর্বদা মনে রাখতে হবে যে আল্লাহ(Allah) সর্ব রকম গোনাহ, এমন কি গোনাহে কবিরা সহ সব রকম গোনাহ তার কাছে অনুতপ্ত চিত্তে মাফ চাইলে মাফ করার আশ্বাস দিয়েছেন, কিন্তু শেরক ও কুফর কখনও মাফ না করার প্রতিজ্ঞা কোরেছেন। অর্থাৎ শেরেকের সঙ্গে বেদা'তও ক্ষমার অযোগ্য গোনাহ হোয়ে গেলো। সাধারণভাবে বেদা'ত কি তা যে কোন মুফতি সাহেবকে জিজ্ঞাসা কোরলেই জানতে পারবেন। জানতে পারবেন যে মহানবীর (দঃ) সময় এই দ্বীন, ইসলাম(Islam) যা ছিলো, এবং এই জীবন ব্যবস্থাকে তিনি যে অবস্থায় ছেড়ে গেছেন তাতে কোন কিছু যোগ, সংযোজন করা হলো বেদা'ত। আপাতঃদৃষ্টিতে এই সাধারণ ব্যাপারটিকে অমার্জনীয় শেরকের সঙ্গে সমপর্য্যায়ভুক্ত করার কারণ কি? অত্যন্ত যুক্তিসঙ্গত কারণ আছে। আদম (আঃ) থেকে শুরু কোরে আল্লাহ(Allah) শেষ নবী (দঃ) পর্য্যন্ত যদিও ঐ একই ইসলাম(Islam) নিয়ে আসছেন তবুও আগের ইসলাম(Islam) ছিলো সীমিত। কারণ তা কোন বিশেষ জাতি, বিশেষ জনগোষ্ঠী, বিশেষ গোত্র, এমন কি একটা বিশেষ পরিবারের জন্যও নির্দিষ্ট করা ছিলো। এই জন্যই যাদের মাধ্যমে আল্লাহ(Allah) ইসলাম(Islam)কে পাঠিয়েছেন, অর্থাৎ নবী-রসুলরা (আঃ), তাদের সংখ্যা- এক লাখ চব্বিশ হাজার, মতান্তরে দু'লাখ চব্বিশ হাজার- বিরাট সংখ্যা। মূলনীতি সব সময়ই একই থেকেছে, সেই দ্বীনুল কাইয়্যেমা এবং সেরাতুল মুস্তাকীম, তওহীদ অর্থাৎ এক আল্লাহ(Allah) ছাড়া কারু আদেশ, আইন, বিধান না মানা, সালাত প্রতিষ্ঠা করা ও যাকাত দেয়া ব্যস, এই তিনটি মাত্র। অন্যান্য সমস্ত আইন-কানুন, স্থান-কাল-পাত্র ভেদে বিভিন্ন রকমের এসেছে। যেমন শেষ ইসলামে(Islam) সালাতের যে প্রক্রিয়া- নিয়ম এসেছে, পূর্ববতী ইসলামে(Islam)র এ প্রক্রিয়া ছিলোনা- অন্য রকমের ছিলো, সালাতের জন্য মানুষকে ডাকার জন্যও ঘন্টা বাজিয়ে সিংগা ফুঁকে ইত্যাদি বিভিন্ন পদ্ধতি ছিলো। অন্যান্য বিধানও নানা রূপ ছিলো। তারপর বিবর্তনের মধ্য দিয়ে মানব জাতি যখন এমন একটা পর্য্যায়ে এসে পৌঁছলো যখন সেটা সব দিকে দিয়ে, অর্থাৎ বোধশক্তি, বুদ্ধিমত্তা, বিভিন্ন স্থানের জনপদের সাথে যোগযোগ ব্যবস্থায় উন্নতি ইত্যাদি, তখন আল্লাহ(Allah) পূর্ববর্তী ইসলাম(Islam)গুলো বিলুপ্ত কোরে দিয়ে সমগ্র মানব জাতির জন্য পাঠালেন শেষ নবীকে (দঃ) ইসলামের(Islam) শেষ সংস্করণ দিয়ে। আদম (আঃ) থেকে নিয়ে হাজার হাজার বছর ধোরে- হোতে পারে লক্ষ লক্ষ বছরে ধোরে- পৃথিবীর বিভিন্ন জাতিতে, বিভিন্ন স্থানে তার দ্বীন, জীবন-বিধান পাঠাবার শেষ লক্ষ্য ছিলো এইটা- সমস্ত মানব জাতির জন্য এক জীবন-ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা কোরে মানুষে মানুষে দ্বন্দ্ব সংঘর্ষকে নাশ কোরে সমস্ত মানব জাতিকে এক জাতি কোরে দেয়া। এক আদম-হাওয়া থেকে সৃষ্ট মানব জাতি স্রষ্টার চোখে এক জাতি (কোরান- সূরা আল বাকারা ২১৩, সূরা আন নিসা ১, সূরা আল ইউনুস ১৯)। সে পৃথিবীতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে নানা রকম চেহারা ধোরলেও আসলে মাত্র এক জোড়া মানুষের বংশধর, একই রক্ত। পৃথিবীময় ছড়িয়ে যাওয়া মানব জাতিকে আবার এক জাতিতে পরিণত কোরে তাদের পরিপূর্ণ শান্তিতে (ইসলামে) বাস করার যে সংবিধান আল্লাহ(Allah) শেষ নবী, বিশ্বনবীর (দঃ) মাধ্যমে পাঠালেন তা অবশ্যই পরিপূর্ণ। মানব জাতির বাকি আয়ুষ্কালের মধ্যে তার জীবনের যত রকম প্রয়োজন, যত রকম সমস্যা হোতে পারে তার সব সমাধান এই জীবন-ব্যবস্থায় সংবিধানে অর্থাৎ কোরানে দেওয়া আছে, এটা পরিপূর্ণ (কোরান- সূরা আল মায়েদা ৪)। সুতরাং এ কথা পরিষ্কার যে এতে কোন সংযোজন, নতুন কোন আইন-কানুন, কোন ব্যবস্থা যোগ করার অর্থ হোচ্ছে- ক) ইসলাম(Islam) পূর্ণ নয়, অর্থাৎ আল্লাহ(Allah) যে বোলেছেন যে 'ইসলাম(Islam)কে তিনি পরিপূর্ণ কোরেছেন' তা মিথ্যা (নাউজুবিল্লাহ)। খ) এই শেষ জীবন-ব্যবস্থায় সমস্ত বিধান, আইন-কানুন, দণ্ডবিধি ইত্যাদির প্রণেতা স্বয়ং আল্লাহ(Allah), এমন কি মহানবীও (দঃ) নন। এই ব্যবস্থায় কোন নতুন সংযোজন করা মানে যে এই নতুন সংযোজনের যিনি বা যারা উদ্ভাবক, প্রণেতা তাকে বা তাদেরকে আল্লাহ(Allah)র সমপর্য্যায়ের বোলে স্বীকার কোরে নেয়া। দুটোই আল্লাহ(Allah)কে সোবহান এবং এলাহ বোলে অস্বীকার করা অর্থাৎ শেরকের প্রকারান্তর, তাই বিশ্বনবী (দঃ) বেদা'তকে শেরকের সমপর্য্যায়ের অপরাধ বোলে বর্ণনা কোরেছেন, যে শেরকের ক্ষমা নেই।

রসুলুল্লাহ (দঃ) বোলেছেন, ভবিষ্যতে ইসলামের(Islam) ওপর যে সব বিপদ আসবে তার মধ্যে অন্যতম ভয়ঙ্কর বিপদ হবে বেদা'ত। আজ চৌদ্দশ' বছর পর উপলব্ধি কোরছি বিশ্বনবীর (দঃ) কথা কতখানি সত্য। তবে ভয়ঙ্কর বিপদ বোলতে তিনি (দঃ) বর্তমানের প্রায়ান্ধ 'আলেম' অর্থাৎ পুরোহিত শ্রেণী যে বেদা'ত তাদের ওয়াযে বর্ণনা করেন তা বোঝাননি। তিনি বুঝিয়েছিলেন এই জীবন-ব্যবস্থার, দ্বীনের জাতীয় বিধানগুলির মধ্যে অন্যের, গায়রুল্লাহর তৈরী বিধান-আইন ইত্যাদি সংযোজন। যে দ্বীন তিনি পৃথিবীতে রেখে গেলেন সেই দ্বীনের সবচেয়ে প্রয়োজনীয়, গুরুত্বপূর্ণ দিক অর্থাৎ জাতীয় দিকটার কোন কিছু বদলিয়ে মানুষের তৈরী কোন কিছু যদি তাতে যোগ করা হয় তবে দ্বীনের পক্ষে তার চেয়ে বড় বিপদ আর কী হোতে পারে? দ্বীনের তো তাতে পূর্ণ বিকৃত হবে, কারণ এর যে ভিত্তি, অর্থাৎ তওহীদ, সেই তওহীদইতো নষ্ট হোয়ে গেলো। কাজেই আল্লাহ(Allah)র রসুল (দঃ) বেদা'তকে অন্যতম ভয়ঙ্কর বিপদ এবং শেরক বোলে বর্ণনা কোরেছেন। বর্তমানের বিকৃত ইসলামের(Islam) পুরোহিত শ্রেণী বেদা'তের বিরুদ্ধে বহু বই কেতাব লিখেছেন, গত কয়েক শতাব্দী ধোরে জোরে-শোরে গরম গরম ওয়ায কোরেছেন ও আজও কোরছেন কিন্তু বিশ্বনবী (দঃ) কোন বেদা'তকে শেরক ও দ্বীনের ওপর ভয়ঙ্কর বিপদ বুঝিয়েছেন তা বোঝেনওনি, বোঝাতেও পারেননি। পারেননি কারণ আকীদার বিকৃতি ও দ্বীনের বিধানগুলির অতি বিশ্লেষণ ফলে তাদের মধ্যে যে দৃষ্টির সংকীর্ণতা এসেছে তাতে রসুলাল্লাহ (দঃ) বর্ণিত বিরাট বেদা'ত ধরা পড়েনা- যেমন একটা পোকার দৃষ্টিতে পর্বত ধরা পড়ে না। দ্বীনের অন্যান্য প্রধান, মূল ব্যাপারগুলিও যেমন তাদের প্রায়ান্ধ দৃষ্টিতে ধরা পড়ে না সত্যিকার বেদা'তও তেমনি ধরা পড়ে না। তাদের চোখে বেদা'ত হোয়ে ধরা দেয় কারো কবরে মোমবাতি জ্বালানো, কবরে সম্মান জানানো, মিলাদ পড়া ইত্যাদি শত-তুচ্ছ ব্যাপারগুলি। প্রথম কথা হলো- এই পুরোহিত শ্রেণী, বর্তমানে যেটিকে ওলামায়ে দ্বীন বলা হয় এরা বুঝেন না যে এরা নিজেরাই মুর্তিমান বেদা'ত। কারণ মহানবীর (দঃ) সময় এবং তারপর খোলাফায়ে রাশেদুন পর্য্যন্ত এই দ্বীনে এই পুরোহিত শ্রেণী সৃষ্টি হয়নি অতি বিশ্লেষণ কোরে সহজ-সরল সেরাতুল মুস্তাকীমকে জটিল ও দুর্বোধ্য কোরে ফেলার পর স্বভাবতঃই প্রয়োজন হোয়ে পড়লো এই পুরোহিত শ্রেণীর, সাধারণ মানুষকে ফতোয়া দেবার জন্য। ঠিক এমনি কোরে পূর্ববর্তী দ্বীনগুলিতেও এই শ্রেণীর জন্ম হোয়েছিলো এবং এর ফলে জাতি গোমরাহ ও বিকৃত হোয়ে গিয়েছিলো। অতি বিশ্লেষণের অবশ্যম্ভাবী ফল হিসাবে এদের দৃষ্টি সংকুচিত হোতে হোতে এখন এরা প্রায়ান্ধ। কাজেই এরা কারো কবরে বাতি জ্বালানো, মিলাদ পড়া ইত্যাদির চেয়ে বড় কোন বেদা'ত দেখতে পান না। আমার প্রশ্ন-শুধু নতুন কোন কিছু এই দ্বীনে সংযোজনই যদি বেদা'ত অর্থাৎ শেরক হোয়ে থাকে তবে- শুধু নতুন সংযোজন নয়, আল্লাহ(Allah)র তৈরী রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, আইন, দণ্ডবিধি এসব কিছু অবজ্ঞায় ছুঁড়ে ফেলে সেখানে মানুষের তৈরী রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, আইন, দণ্ডবিধি সংযোজন করাকে কি বোলবেন? তফাৎটা নিশ্চয়ই লক্ষ্য কোরেছেন? একটা হোচ্ছে যা আছে তা ঠিক রেখে শুধু নতুন কোন কিছু যোগ করা। অন্যটা হোচ্ছে জিনিষটির একেবারে মহা গুরুত্বপূর্ণ, আসল জিনিসগুলিই অর্থাৎ রাজনীতি, অর্থনীতি, আইন, দণ্ডবিধি ইত্যাদি ফেলে দিয়ে সেখানে সম্পূর্ণ অন্যরকম জিনিষ সংযোজন করা। প্রথমটাই, অর্থাৎ কিছু সংযোজনই যদি বেদা'ত, শেরক হোয়ে থাকে তবে দ্বিতীয়টা কি? সন্দেহের কোন অবকাশ নেই যে দ্বিতীয়টা একেবারে কুফর, নাস্তিকতা, আল্লাহ(Allah)কে অস্বীকার করা। মা-বাপের বা যাদের গভীরভাবে শ্রদ্ধা করা হয় তেমন লোকদের কবরে ভালবেসে শ্রদ্ধা কোরে চুমু দেওয়া বা দু'চারটি মোমবাতি জ্বালানো যদি বেদা'ত হয়, তবে জাতীয় জীবন থেকে আল্লাহর (Allah) দেওয়া সর্বরকম ব্যবস্থাকে কেটে ফেলে সেখানে মানুষের তৈরী ব্যবস্থা গ্রহণ ও প্রতিষ্ঠা শুধু শেরক্ নয় সরাসরি কুফর। কিন্তু এই 'মুসলিম(Muslim)' জাতির 'ধর্মীয়' নেতারা, ওয়ায়েযরা, মওলানারা তাদের ওয়াযে ঘন্টার পর ঘন্টা কবরকে সম্মান, বাতি জ্বালানো, কবর বাঁধাই, মিলাদ পড়া, ইত্যাদির ওপর কক্তৃতা দেন কিন্তু আসল বেদা'ত সম্বন্ধে বলেন না। কারণ, ক) ইসলাম(Islam) কি, এর ভিত্তি কি, এর উদ্দেশ্য কি এসব সম্বন্ধে তাদের আকীদা বিকৃত। খ) রসুলুল্লাহ (দঃ) কোন্ বেদা'তকে শেরক বোলেছেন তা তাদের প্রায়ান্ধদের জন্য দেখতে পান না । গ) এই 'মুসলিম(Muslim)' জাতি যে গত কয়েক শতাব্দী ধোরে পাশ্চাত্যের পায়ে সাজদায় পড়ে আছে, তা তারা বোঝেনও না, বলেনও না। দাসত্বের সময়টাতে বোলতেন না সাদা বিদেশী প্রভুদের বুটের লাথির ভয়ে, আজ বলেন না কালো, বাদামী দেশী প্রভুদের ভয়ে। কিন্তু ওদিকে নিজেদের মনে করেন 'নায়েবে নবী' বোলে। অর্থাৎ বিশ্বনবীর (দঃ) প্রতিনিধি- যে নবী (দঃ) এক আল্লাহ(Allah) ছাড়া কাউকে ভয় কোরতেন না, যে নবী (দঃ) সমস্ত পৃথিবীর বিরোধিতার সামনে দাঁড়িয়ে শেরককে শেরক, কুফরকে কুফর বোলতে ভয় করেননি। কি হাস্যকর আত্মপ্রবঞ্চনা।

আল্লাহ(Allah) ও রসুলের (দঃ) নিষেধ অমান্য কোরে দ্বীনের অতি বিশ্লেষণের ফলে যে অন্ধত্ব ও আকীদার বিকৃতি এসেছে তার আরও একটি উদাহরণ দেয়া দরকার। বিশ্বনবী (দঃ) বোলেছেন- যে বা যারা অন্য কোন জাতির অনুকরণ কোরবে তারা সেই জাতির মধ্যে গণ্য হবে [হাদীস- ওমর (রাঃ) থেকে আহমদ, আবু দাউদ, মেশকাত]। অন্যত্র আছে এবং ব্যাখ্যা হোচ্ছে, মুসলিম(Muslim) জাতির মধ্য থেকে যে বা যারা অন্য কোন জাতিকে অনুকরণ করে তবে সে বা তারা আর মুসলীম বোলে গণ্য হবে না, যে জাতিকে অনুকরণ কোরবে সেই জাতির মধ্যে গণ্য হবে। এবং শুধু তাই নয় সে বা যারা যে এই জাতি, উম্মাহ থেকে বহিস্কৃত হোয়ে যাবে তার প্রমাণ এই যে কেয়ামতের দিন তারা মুসলিম(Muslim)দের দলে দাঁড়াতে পারবে না, তাদের দাঁড়াতে হবে যে জাতিকে তারা অনুকরণ কোরেছিলো সেই জাতির সঙ্গে। কি সাংঘাতিক! অনুকরণের জন্য উম্মতি মোহাম্মদী থেকে বহিস্কার, মহা নবীর শাফায়াত থেকে বঞ্চিত! প্রশ্ন হোচ্ছে-ঐ অনুকরণ, কিসের অনুকরণ? ধর্মের ধ্বজাধারীদের মতে ঐ অনুকরণ হোচ্ছে কাপড় চোপড়, ভাষায়, খাওয়া-দাওয়ায় ইত্যাদিতে অর্থাৎ স্যুট-কোট-টাই পরায়, টেবিল-চেয়ারে খানা-পিনায়। আবার সেই অন্ধত্ব, সেই আকীদায় বিকৃতি, সেই পূর্ণ ইসলাম(Islam)কে সমগ্রভাবে দেখার অসামর্থ। প্রায়ান্ধত্বের জন্য বেদা'তের মত ভীষণ গোনাহকে যেমন কবরে বাতি জ্বালানোর মধ্যে এসে সীমাবদ্ধ করা হোয়েছে, নবীর (দঃ) মহান সংগ্রামী, বিপ্লবী সুন্নাহকে যেমন দাঁড়ি রাখা, মোচ কাটা, দাঁতন করা, মিঠাই খাওয়া, ডান পাশে শোয়ার মধ্যে সীমিত করা হোয়েছে, তেমনিভাবে এই অনুকরণকেও ধরা হোয়েছে কাপড়-চোপড়, খাওয়া-দাওয়ার মত সামান্য ব্যাপার বোলে। ইসলাম(Islam)কে বোঝার কতখানি অসামর্থ এবং দৃষ্টি ও মনের কতখানি ক্ষুদ্রতা হোলে এ সিদ্ধান্ত ও ফতোয়া দেয়া যায় যে অত সামান্য ব্যাপারে 'একেবারে ইসলাম(Islam) এবং উম্মতে মোহম্মদী থেকে তার বহিস্কৃত'- যেখানে তওহীদে বিশ্বাস থাকলে ব্যভিচার ও চুরিও মাফ করার আশ্বাস আল্লাহ(Allah) দিয়েছেন। শেষ ইসলাম(Islam) এসেছে সমস্ত পৃথিবীর জন্য। পৃথিবীতে বহু রকম পোষাক, পরিচ্ছদ, বহু ভাষা, বহু রীতি-নীতি। ইসলাম(Islam) গ্রহণ কোরে নিতে ওগুলো কোন বাধা নয়, ওগুলো বদলাতেও কোন আদেশ নেই, প্রয়োজনও নেই। আল্লাহ(Allah) বোলেছেন- আমি তোমাদের পোষাক দেখিনা, দেখি অন্তর (কোরান)। শেষ ইসলাম(Islam) এসেছে সমস্ত পৃথিবীর জন্য এবং সমস্ত পৃথিবীর মানুষের জন্য এক রকম পোষাক অসম্ভব সুতরাং ঐ হাদীসের অনুকরণের অর্থ পোষাক-পরিচ্ছদ ইত্যাদি হওয়া অসম্ভব। আসলে বিশ্বনবী (দঃ) অনুকরণ বোলতে বোঝাচ্ছেন অন্য জাতির রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ব্যবস্থা, আইন-কানুনের অনুকরণ, অন্য জাতির আদর্শের অনুকরণ। তা না হোলে উম্মাহ থেকেই বহিস্কারের মত এত বড় শাস্তি হোতে পারে না। কাপড়-চোপড় ইত্যাদির চেয়ে জীবন-ব্যবস্থার বুনিয়াদী ব্যাপারগুলি যে বহু বেশী গুরুত্বপূর্ণ এ সাধারণ জ্ঞান পর্য্যন্ত এদের লুপ্ত হোয়ে গেছে। গত কয়েক শতাব্দী থেকে এই 'মুসলিম(Muslim)' জাতি জাতীয় জীবনে মূল বিষয়গুলির প্রত্যেকটিতে পাশ্চাত্য জাতিগুলির অনুকরণ কোরছে। মহানবীর (দঃ) হাদীস মোতাবেক এই উম্মাহকে কেয়ামতের দিন খ্রীস্টান, ইহুদী, মোশরেক ও কাফেরদের দলভুক্ত হোয়ে দাঁড়াতে হবে। দাঁড়াতে হবে গত কয়েক শতাব্দীর এবং বর্তমানের সমস্ত 'মুসলিম(Muslim)' রাজনৈতিক-সামাজিক নেতৃবৃন্দকে, দাঁড়াতে হবে জোব্বা-পাগড়ীধারী ধর্মীয় নেতাদের যারা ঐ অনুকরণ ও বেদা'তে বাধা দেননি, এমন কি দাঁড়াতে হবে জনসাধারণকেও, কারণ সংখ্যাগরিষ্ঠ হোয়েও যারা তাদের নেতৃত্বকে বাধ্য করেননি গায়রুল্লাহকে বাদ দিয়ে আল্লাহ(Allah)র বিধান প্রতিষ্ঠা কোরতে।

নিজেরা মুর্ত্তিমান বেদা'ত হোয়েও যারা আকীদার বিকৃতিতে এবং প্রায়ান্ধত্বের জন্য যে সব কাজকে বেদা'ত বোলে চিৎকার করেন তার মধ্যে প্রধান হোচ্ছে দুটো- ক) মিলাদ, খ) কবর বাঁধাই। কবরে সম্মান দেখানো, কবরে বাতি-সুগন্ধি জ্বালানো। প্রথমটা ধরা যাক-মিলাদ কি? মিলাদের আসল উদ্দেশ্য হলো, সকলে একত্রে বোসে মানব জাতির মুকুটমণির জীবনী আলোচনা করা। আল্লাহ(Allah) তাঁকে (দঃ) পৃথিবীতে পাঠিয়ে ছিলেন, কী তার উদ্দেশ্য ছিলো, তিনি মানুষ জাতিকে কী শিক্ষা দিয়ে গেছেন, তিনি ও আল্লাহ(Allah) আমাদের কাছ থেকে কী আশা করেন, তার চরিত্র কেমন ছিলো, কার্যপ্রণালী কেমন ছিলো ইত্যাদি আলোচনা করা। আল্লাহ(Allah) বোলেছেন- তার রসুলকে (দঃ) তিনি সর্বোত্তম চরিত্রের মানুষ কোরে সৃষ্টি কোরেছেন আমাদের আদর্শ কোরে (কোরান- সূরা আল কালাম ৪) এবং আমাদের আদেশ কোরেছেন তাঁর অনুসরণ করার। সেই আদর্শকে আমরা আলোচনা কোরবো না? এ কেমন কথা? আল্লাহ(Allah) সর্বশ্রেষ্ঠ চরিত্র দিয়ে সৃষ্টি কোরলেন তার প্রেরিতকে (দঃ)। নিশ্চয়ই উদ্দেশ্য হলো এই যে আমরা যেন সেই শ্রেষ্ঠতম- অনুপম চরিত্রের আদর্শে আমাদের নিজেদের চরিত্র গড়ার চেষ্টা করি। যদি সবাই বোসে সেই চরিত্র আলোচনাই না করি তবে কেমন কোরে সে চেষ্টা কোরবো? সে বসাকে মিলাদই বলুন, মিটিং-ই বলুন আর আলোচনা সভাই (Discussion Meeting) বলুন-একই কথা। ঐ মিলাদে বা আলোচনা সভায় দরুদ ও সালামের কথা বোলবেন? আল্লাহ(Allah) বোলেছেন- তিনি তার মালায়েক অর্থাৎ ফেরেশতাদের নিয়ে বিশ্বনবীর (দঃ) ওপর সালাত ও সালাম পাঠান (কোরান- সূরা আল আহযাব ৫৬)। জীবনী, চরিত্র ও কার্যপ্রনালীর ওপর আলোচনার পর যদি সবাই স্বয়ং আল্লাহ(Allah) ও তার মালায়েকরা যা করেন করি অর্থাৎ সালাত ও সালাম পাঠাই তবে কি আল্লাহ(Allah) ও মালায়েকরাও বেদা'ত কোরছেন- নাউযুবিল্লাহ। এ কথা ঠিক যে মহানবীর (দঃ) সময় মিলাদ ছিলো না। কেন থাকবে? তখন তিনি জীবিত, মানুষ তাকে চোখের সামনে দেখতে পারছে, এবং তার কাছ থেকে সরাসরি শিক্ষা নিচ্ছে, কাজেই তখন মিলাদের দরকার কি? দরকার এখন- কারণ এখন তিনি আমাদের মধ্যে নেই।

তবে এ কথা ঠিক যে আজ এই মরা জাতির মধ্যে যে মিলাদ হয় তা এই জাতির অন্যান্য সব কাজের মতই প্রাণহীন, অর্থহীন, উদ্দেশ্যহীন- মিঠাই খাওয়ার অনুষ্ঠান। একটা মানুষ যদি একটা মিলাদে, অর্থাৎ রসুলাল্লাহর (দঃ) জীবনী আলোচনা সভায় যোগ দেয়, তারপর মিলাদ শেষে যখন সে বের হোয়ে আসে তখন সে যদি অন্ততঃ কিছুটা অন্য মানুষ না হোয়ে থাকে তবে সে মিলাদ মিলাদই নয়। খ) কবর সম্মান ইত্যাদি। যারা দ্বীনের তুচ্ছতম ব্যাপারগুলিকে অতি বিশ্লেষণ কোরে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে বিরাট আকারে পরিণত কোরেছেন তন্ন তন্ন কোরে কোরান-হাদীস পড়েছেন তাদের তো বোলতে হবে না যে আল্লাহ(Allah) তার কোরানে বাপ-মাকে কতখানি সম্মানের অধিকারী কোরে দিয়েছেন। তারপর তার রসুল (দঃ) বোলেছেন- আল্লাহ(Allah) ছাড়া পৃথিবীতে আর কাউকে যদি সাজদা করার অনুমতি দেওয়া হতো তবে সন্তানকে মা-বাপকে কোরতে দেওয়া হতো (হাদীস)। অর্থাৎ মা-বাপের স্থান সাজদার স্থানের চেয়ে মাত্র একধাপ নিচু। যাদের সম্মানের স্থান এত উঁচু তাদের কবরে সসস্মানে একটি চুমু দেওয়া, দুটো মোমবাতি জ্বালানো কতখানি অন্যায়, কতখানি গোনাহ? সব অন্যায়, সব গোনাহ, সব ভালো কাজ, সব সওয়াব সমান কি? নিশ্চয়ই নয়। সব গোনাহের শাস্তিও যেমন এক নয়, সব সওয়াবের পুরস্কারও তেমনি এক নয়। এ শুধু আল্লাহ(Allah)র বিধানই নয়, মানুষের তৈরী আইনেও তাই। যদি স্বীকার কোরে নেই কবরে সম্মান দেখানো, চুমু দেয়া, বাতি জ্বালানো বেদা'ত-শিরক, তবে এই দ্বীনের মুখ্য প্রধান ভাগ অর্থাৎ জাতীয় জীবন থেকে আল্লাহ(Allah)র সরাসরি আদেশ, ব্যবস্থাগুলি বাদ দিয়ে মানুষের তৈরী ব্যবস্থাকে প্রতিষ্ঠা করা কি? সরাসরি কুফর। তাই যদি হয় তবে 'ওলামায়ে দ্বীন' এই কুফরের বিরুদ্ধে কয় লাইন লিখেছেন, কয় মিনিট ওয়াজ কোরেছেন? আর মিলাদ ও কবরের ওপর কত হাজার বই কেতাব লিখেছেন, কত লক্ষ ঘন্টা ওয়ায, বক্তৃতা কোরেছেন? দ্বীনের ধ্বজাধারী এই আলেম, ফকীহ, মোফাসসির, মুফতী, মোহাদ্দীসরা তাদের এলেমের, জ্ঞানের অভাবে, মনের সংকীর্ণতায়, দৃষ্টির অন্ধত্বে, আকীদার বিকৃতিতে এ কথা বুঝতে অক্ষম যে মিলাদ পড়া, কবরে চুমা দেওয়া, বাতি জ্বালানোর বেদা'ত ডোবা নালা, কুয়ো, আর গায়রুল্লাহর তৈরী যে জীবন ব্যবস্থাকে ধ্বংস কোরে দ্বীন-ইসলাম(Islam)কে প্রতিষ্ঠার জন্য বিশ্বনবীকে (দঃ) পাঠানো সেই গায়রুল্লাহর জীবন-ব্যবস্থাকে গ্রহণ করা শুধু বেদা'ত অর্থাৎ শেরক নয়, তা শেরক ও কুফরের মহাসমুদ্র, যে মহাসমুদ্রের মধ্যে তারা সম্পূর্ণভাবে নিমজ্জিত হোয়ে আছেন, এবং সে শেরকের, কুফরের বিরুদ্ধে কথা বলেন না। অন্ধত্ব ছাড়াও অন্য কারণটি হোচ্ছে এই যে ঐ প্রকৃত শেরক ও কুফরের কথা বোলতে গেলে বাধার ভয় আছে, জেলের ভয় আছে, আর মিলাদ এবং কবরের বাতির কথা বোললে কেউ জেলে দেবে না, বরং দাওয়াত কোরে পোলাও-কোরমা খাওয়াবে। এরাই হোচ্ছেন সেই মহাবিপ্লবীর (দঃ) নায়েব, অর্থাৎ প্রতিনিধি হবার দাবীদার যিনি সমস্ত পৃথিবীর শেরক ও কুফরীর সম্মুখে দাঁড়িয়ে বজ্রকণ্ঠে আল্লাহ(Allah)র একত্ব ঘোষণা করতে ভয় পাননি।

বেদা'ত

পেছনে কয়েকবার বেদা'ত শব্দটা ব্যবহার কোরে এসেছি। এটাকে ভালো কোরে বুঝে নেওয়ার প্রয়োজন আছে, কারণ বেদা'ত এমন সাংঘাতিক গোনাহ, পাপ, যে একে মহানবী (দঃ) শেরকের সমপর্য্যায়ের গোনাহ বোলে বর্ণনা কোরেছেন, এবং সর্বদা মনে রাখতে হবে যে আল্লাহ(Allah) সর্ব রকম গোনাহ, এমন কি গোনাহে কবিরা সহ সব রকম গোনাহ তার কাছে অনুতপ্ত চিত্তে মাফ চাইলে মাফ করার আশ্বাস দিয়েছেন, কিন্তু শেরক ও কুফর কখনও মাফ না করার প্রতিজ্ঞা কোরেছেন। অর্থাৎ শেরেকের সঙ্গে বেদা'তও ক্ষমার অযোগ্য গোনাহ হোয়ে গেলো। সাধারণভাবে বেদা'ত কি তা যে কোন মুফতি সাহেবকে জিজ্ঞাসা কোরলেই জানতে পারবেন। জানতে পারবেন যে মহানবীর (দঃ) সময় এই দ্বীন, ইসলাম(Islam) যা ছিলো, এবং এই জীবন ব্যবস্থাকে তিনি যে অবস্থায় ছেড়ে গেছেন তাতে কোন কিছু যোগ, সংযোজন করা হলো বেদা'ত। আপাতঃদৃষ্টিতে এই সাধারণ ব্যাপারটিকে অমার্জনীয় শেরকের সঙ্গে সমপর্য্যায়ভুক্ত করার কারণ কি? অত্যন্ত যুক্তিসঙ্গত কারণ আছে। আদম (আঃ) থেকে শুরু কোরে আল্লাহ(Allah) শেষ নবী (দঃ) পর্য্যন্ত যদিও ঐ একই ইসলাম(Islam) নিয়ে আসছেন তবুও আগের ইসলাম(Islam) ছিলো সীমিত। কারণ তা কোন বিশেষ জাতি, বিশেষ জনগোষ্ঠী, বিশেষ গোত্র, এমন কি একটা বিশেষ পরিবারের জন্যও নির্দিষ্ট করা ছিলো। এই জন্যই যাদের মাধ্যমে আল্লাহ(Allah) ইসলাম(Islam)কে পাঠিয়েছেন, অর্থাৎ নবী-রসুলরা (আঃ), তাদের সংখ্যা- এক লাখ চব্বিশ হাজার, মতান্তরে দু'লাখ চব্বিশ হাজার- বিরাট সংখ্যা। মূলনীতি সব সময়ই একই থেকেছে, সেই দ্বীনুল কাইয়্যেমা এবং সেরাতুল মুস্তাকীম, তওহীদ অর্থাৎ এক আল্লাহ(Allah) ছাড়া কারু আদেশ, আইন, বিধান না মানা, সালাত প্রতিষ্ঠা করা ও যাকাত দেয়া ব্যস, এই তিনটি মাত্র। অন্যান্য সমস্ত আইন-কানুন, স্থান-কাল-পাত্র ভেদে বিভিন্ন রকমের এসেছে। যেমন শেষ ইসলামে(Islam) সালাতের যে প্রক্রিয়া- নিয়ম এসেছে, পূর্ববতী ইসলামে(Islam)র এ প্রক্রিয়া ছিলোনা- অন্য রকমের ছিলো, সালাতের জন্য মানুষকে ডাকার জন্যও ঘন্টা বাজিয়ে সিংগা ফুঁকে ইত্যাদি বিভিন্ন পদ্ধতি ছিলো। অন্যান্য বিধানও নানা রূপ ছিলো। তারপর বিবর্তনের মধ্য দিয়ে মানব জাতি যখন এমন একটা পর্য্যায়ে এসে পৌঁছলো যখন সেটা সব দিকে দিয়ে, অর্থাৎ বোধশক্তি, বুদ্ধিমত্তা, বিভিন্ন স্থানের জনপদের সাথে যোগযোগ ব্যবস্থায় উন্নতি ইত্যাদি, তখন আল্লাহ(Allah) পূর্ববর্তী ইসলাম(Islam)গুলো বিলুপ্ত কোরে দিয়ে সমগ্র মানব জাতির জন্য পাঠালেন শেষ নবীকে (দঃ) ইসলামের(Islam) শেষ সংস্করণ দিয়ে। আদম (আঃ) থেকে নিয়ে হাজার হাজার বছর ধোরে- হোতে পারে লক্ষ লক্ষ বছরে ধোরে- পৃথিবীর বিভিন্ন জাতিতে, বিভিন্ন স্থানে তার দ্বীন, জীবন-বিধান পাঠাবার শেষ লক্ষ্য ছিলো এইটা- সমস্ত মানব জাতির জন্য এক জীবন-ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা কোরে মানুষে মানুষে দ্বন্দ্ব সংঘর্ষকে নাশ কোরে সমস্ত মানব জাতিকে এক জাতি কোরে দেয়া। এক আদম-হাওয়া থেকে সৃষ্ট মানব জাতি স্রষ্টার চোখে এক জাতি (কোরান- সূরা আল বাকারা ২১৩, সূরা আন নিসা ১, সূরা আল ইউনুস ১৯)। সে পৃথিবীতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে নানা রকম চেহারা ধোরলেও আসলে মাত্র এক জোড়া মানুষের বংশধর, একই রক্ত। পৃথিবীময় ছড়িয়ে যাওয়া মানব জাতিকে আবার এক জাতিতে পরিণত কোরে তাদের পরিপূর্ণ শান্তিতে (ইসলামে) বাস করার যে সংবিধান আল্লাহ(Allah) শেষ নবী, বিশ্বনবীর (দঃ) মাধ্যমে পাঠালেন তা অবশ্যই পরিপূর্ণ। মানব জাতির বাকি আয়ুষ্কালের মধ্যে তার জীবনের যত রকম প্রয়োজন, যত রকম সমস্যা হোতে পারে তার সব সমাধান এই জীবন-ব্যবস্থায় সংবিধানে অর্থাৎ কোরানে দেওয়া আছে, এটা পরিপূর্ণ (কোরান- সূরা আল মায়েদা ৪)। সুতরাং এ কথা পরিষ্কার যে এতে কোন সংযোজন, নতুন কোন আইন-কানুন, কোন ব্যবস্থা যোগ করার অর্থ হোচ্ছে- ক) ইসলাম(Islam) পূর্ণ নয়, অর্থাৎ আল্লাহ(Allah) যে বোলেছেন যে 'ইসলাম(Islam)কে তিনি পরিপূর্ণ কোরেছেন' তা মিথ্যা (নাউজুবিল্লাহ)। খ) এই শেষ জীবন-ব্যবস্থায় সমস্ত বিধান, আইন-কানুন, দণ্ডবিধি ইত্যাদির প্রণেতা স্বয়ং আল্লাহ(Allah), এমন কি মহানবীও (দঃ) নন। এই ব্যবস্থায় কোন নতুন সংযোজন করা মানে যে এই নতুন সংযোজনের যিনি বা যারা উদ্ভাবক, প্রণেতা তাকে বা তাদেরকে আল্লাহ(Allah)র সমপর্য্যায়ের বোলে স্বীকার কোরে নেয়া। দুটোই আল্লাহ(Allah)কে সোবহান এবং এলাহ বোলে অস্বীকার করা অর্থাৎ শেরকের প্রকারান্তর, তাই বিশ্বনবী (দঃ) বেদা'তকে শেরকের সমপর্য্যায়ের অপরাধ বোলে বর্ণনা কোরেছেন, যে শেরকের ক্ষমা নেই।

রসুলুল্লাহ (দঃ) বোলেছেন, ভবিষ্যতে ইসলামের(Islam) ওপর যে সব বিপদ আসবে তার মধ্যে অন্যতম ভয়ঙ্কর বিপদ হবে বেদা'ত। আজ চৌদ্দশ' বছর পর উপলব্ধি কোরছি বিশ্বনবীর (দঃ) কথা কতখানি সত্য। তবে ভয়ঙ্কর বিপদ বোলতে তিনি (দঃ) বর্তমানের প্রায়ান্ধ 'আলেম' অর্থাৎ পুরোহিত শ্রেণী যে বেদা'ত তাদের ওয়াযে বর্ণনা করেন তা বোঝাননি। তিনি বুঝিয়েছিলেন এই জীবন-ব্যবস্থার, দ্বীনের জাতীয় বিধানগুলির মধ্যে অন্যের, গায়রুল্লাহর তৈরী বিধান-আইন ইত্যাদি সংযোজন। যে দ্বীন তিনি পৃথিবীতে রেখে গেলেন সেই দ্বীনের সবচেয়ে প্রয়োজনীয়, গুরুত্বপূর্ণ দিক অর্থাৎ জাতীয় দিকটার কোন কিছু বদলিয়ে মানুষের তৈরী কোন কিছু যদি তাতে যোগ করা হয় তবে দ্বীনের পক্ষে তার চেয়ে বড় বিপদ আর কী হোতে পারে? দ্বীনের তো তাতে পূর্ণ বিকৃত হবে, কারণ এর যে ভিত্তি, অর্থাৎ তওহীদ, সেই তওহীদইতো নষ্ট হোয়ে গেলো। কাজেই আল্লাহ(Allah)র রসুল (দঃ) বেদা'তকে অন্যতম ভয়ঙ্কর বিপদ এবং শেরক বোলে বর্ণনা কোরেছেন। বর্তমানের বিকৃত ইসলামের(Islam) পুরোহিত শ্রেণী বেদা'তের বিরুদ্ধে বহু বই কেতাব লিখেছেন, গত কয়েক শতাব্দী ধোরে জোরে-শোরে গরম গরম ওয়ায কোরেছেন ও আজও কোরছেন কিন্তু বিশ্বনবী (দঃ) কোন বেদা'তকে শেরক ও দ্বীনের ওপর ভয়ঙ্কর বিপদ বুঝিয়েছেন তা বোঝেনওনি, বোঝাতেও পারেননি। পারেননি কারণ আকীদার বিকৃতি ও দ্বীনের বিধানগুলির অতি বিশ্লেষণ ফলে তাদের মধ্যে যে দৃষ্টির সংকীর্ণতা এসেছে তাতে রসুলাল্লাহ (দঃ) বর্ণিত বিরাট বেদা'ত ধরা পড়েনা- যেমন একটা পোকার দৃষ্টিতে পর্বত ধরা পড়ে না। দ্বীনের অন্যান্য প্রধান, মূল ব্যাপারগুলিও যেমন তাদের প্রায়ান্ধ দৃষ্টিতে ধরা পড়ে না সত্যিকার বেদা'তও তেমনি ধরা পড়ে না। তাদের চোখে বেদা'ত হোয়ে ধরা দেয় কারো কবরে মোমবাতি জ্বালানো, কবরে সম্মান জানানো, মিলাদ পড়া ইত্যাদি শত-তুচ্ছ ব্যাপারগুলি। প্রথম কথা হলো- এই পুরোহিত শ্রেণী, বর্তমানে যেটিকে ওলামায়ে দ্বীন বলা হয় এরা বুঝেন না যে এরা নিজেরাই মুর্তিমান বেদা'ত। কারণ মহানবীর (দঃ) সময় এবং তারপর খোলাফায়ে রাশেদুন পর্য্যন্ত এই দ্বীনে এই পুরোহিত শ্রেণী সৃষ্টি হয়নি অতি বিশ্লেষণ কোরে সহজ-সরল সেরাতুল মুস্তাকীমকে জটিল ও দুর্বোধ্য কোরে ফেলার পর স্বভাবতঃই প্রয়োজন হোয়ে পড়লো এই পুরোহিত শ্রেণীর, সাধারণ মানুষকে ফতোয়া দেবার জন্য। ঠিক এমনি কোরে পূর্ববর্তী দ্বীনগুলিতেও এই শ্রেণীর জন্ম হোয়েছিলো এবং এর ফলে জাতি গোমরাহ ও বিকৃত হোয়ে গিয়েছিলো। অতি বিশ্লেষণের অবশ্যম্ভাবী ফল হিসাবে এদের দৃষ্টি সংকুচিত হোতে হোতে এখন এরা প্রায়ান্ধ। কাজেই এরা কারো কবরে বাতি জ্বালানো, মিলাদ পড়া ইত্যাদির চেয়ে বড় কোন বেদা'ত দেখতে পান না। আমার প্রশ্ন-শুধু নতুন কোন কিছু এই দ্বীনে সংযোজনই যদি বেদা'ত অর্থাৎ শেরক হোয়ে থাকে তবে- শুধু নতুন সংযোজন নয়, আল্লাহ(Allah)র তৈরী রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, আইন, দণ্ডবিধি এসব কিছু অবজ্ঞায় ছুঁড়ে ফেলে সেখানে মানুষের তৈরী রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, আইন, দণ্ডবিধি সংযোজন করাকে কি বোলবেন? তফাৎটা নিশ্চয়ই লক্ষ্য কোরেছেন? একটা হোচ্ছে যা আছে তা ঠিক রেখে শুধু নতুন কোন কিছু যোগ করা। অন্যটা হোচ্ছে জিনিষটির একেবারে মহা গুরুত্বপূর্ণ, আসল জিনিসগুলিই অর্থাৎ রাজনীতি, অর্থনীতি, আইন, দণ্ডবিধি ইত্যাদি ফেলে দিয়ে সেখানে সম্পূর্ণ অন্যরকম জিনিষ সংযোজন করা। প্রথমটাই, অর্থাৎ কিছু সংযোজনই যদি বেদা'ত, শেরক হোয়ে থাকে তবে দ্বিতীয়টা কি? সন্দেহের কোন অবকাশ নেই যে দ্বিতীয়টা একেবারে কুফর, নাস্তিকতা, আল্লাহ(Allah)কে অস্বীকার করা। মা-বাপের বা যাদের গভীরভাবে শ্রদ্ধা করা হয় তেমন লোকদের কবরে ভালবেসে শ্রদ্ধা কোরে চুমু দেওয়া বা দু'চারটি মোমবাতি জ্বালানো যদি বেদা'ত হয়, তবে জাতীয় জীবন থেকে আল্লাহর (Allah) দেওয়া সর্বরকম ব্যবস্থাকে কেটে ফেলে সেখানে মানুষের তৈরী ব্যবস্থা গ্রহণ ও প্রতিষ্ঠা শুধু শেরক্ নয় সরাসরি কুফর। কিন্তু এই 'মুসলিম(Muslim)' জাতির 'ধর্মীয়' নেতারা, ওয়ায়েযরা, মওলানারা তাদের ওয়াযে ঘন্টার পর ঘন্টা কবরকে সম্মান, বাতি জ্বালানো, কবর বাঁধাই, মিলাদ পড়া, ইত্যাদির ওপর কক্তৃতা দেন কিন্তু আসল বেদা'ত সম্বন্ধে বলেন না। কারণ, ক) ইসলাম(Islam) কি, এর ভিত্তি কি, এর উদ্দেশ্য কি এসব সম্বন্ধে তাদের আকীদা বিকৃত। খ) রসুলুল্লাহ (দঃ) কোন্ বেদা'তকে শেরক বোলেছেন তা তাদের প্রায়ান্ধদের জন্য দেখতে পান না । গ) এই 'মুসলিম(Muslim)' জাতি যে গত কয়েক শতাব্দী ধোরে পাশ্চাত্যের পায়ে সাজদায় পড়ে আছে, তা তারা বোঝেনও না, বলেনও না। দাসত্বের সময়টাতে বোলতেন না সাদা বিদেশী প্রভুদের বুটের লাথির ভয়ে, আজ বলেন না কালো, বাদামী দেশী প্রভুদের ভয়ে। কিন্তু ওদিকে নিজেদের মনে করেন 'নায়েবে নবী' বোলে। অর্থাৎ বিশ্বনবীর (দঃ) প্রতিনিধি- যে নবী (দঃ) এক আল্লাহ(Allah) ছাড়া কাউকে ভয় কোরতেন না, যে নবী (দঃ) সমস্ত পৃথিবীর বিরোধিতার সামনে দাঁড়িয়ে শেরককে শেরক, কুফরকে কুফর বোলতে ভয় করেননি। কি হাস্যকর আত্মপ্রবঞ্চনা।

আল্লাহ(Allah) ও রসুলের (দঃ) নিষেধ অমান্য কোরে দ্বীনের অতি বিশ্লেষণের ফলে যে অন্ধত্ব ও আকীদার বিকৃতি এসেছে তার আরও একটি উদাহরণ দেয়া দরকার। বিশ্বনবী (দঃ) বোলেছেন- যে বা যারা অন্য কোন জাতির অনুকরণ কোরবে তারা সেই জাতির মধ্যে গণ্য হবে [হাদীস- ওমর (রাঃ) থেকে আহমদ, আবু দাউদ, মেশকাত]। অন্যত্র আছে এবং ব্যাখ্যা হোচ্ছে, মুসলিম(Muslim) জাতির মধ্য থেকে যে বা যারা অন্য কোন জাতিকে অনুকরণ করে তবে সে বা তারা আর মুসলীম বোলে গণ্য হবে না, যে জাতিকে অনুকরণ কোরবে সেই জাতির মধ্যে গণ্য হবে। এবং শুধু তাই নয় সে বা যারা যে এই জাতি, উম্মাহ থেকে বহিস্কৃত হোয়ে যাবে তার প্রমাণ এই যে কেয়ামতের দিন তারা মুসলিম(Muslim)দের দলে দাঁড়াতে পারবে না, তাদের দাঁড়াতে হবে যে জাতিকে তারা অনুকরণ কোরেছিলো সেই জাতির সঙ্গে। কি সাংঘাতিক! অনুকরণের জন্য উম্মতি মোহাম্মদী থেকে বহিস্কার, মহা নবীর শাফায়াত থেকে বঞ্চিত! প্রশ্ন হোচ্ছে-ঐ অনুকরণ, কিসের অনুকরণ? ধর্মের ধ্বজাধারীদের মতে ঐ অনুকরণ হোচ্ছে কাপড় চোপড়, ভাষায়, খাওয়া-দাওয়ায় ইত্যাদিতে অর্থাৎ স্যুট-কোট-টাই পরায়, টেবিল-চেয়ারে খানা-পিনায়। আবার সেই অন্ধত্ব, সেই আকীদায় বিকৃতি, সেই পূর্ণ ইসলাম(Islam)কে সমগ্রভাবে দেখার অসামর্থ। প্রায়ান্ধত্বের জন্য বেদা'তের মত ভীষণ গোনাহকে যেমন কবরে বাতি জ্বালানোর মধ্যে এসে সীমাবদ্ধ করা হোয়েছে, নবীর (দঃ) মহান সংগ্রামী, বিপ্লবী সুন্নাহকে যেমন দাঁড়ি রাখা, মোচ কাটা, দাঁতন করা, মিঠাই খাওয়া, ডান পাশে শোয়ার মধ্যে সীমিত করা হোয়েছে, তেমনিভাবে এই অনুকরণকেও ধরা হোয়েছে কাপড়-চোপড়, খাওয়া-দাওয়ার মত সামান্য ব্যাপার বোলে। ইসলাম(Islam)কে বোঝার কতখানি অসামর্থ এবং দৃষ্টি ও মনের কতখানি ক্ষুদ্রতা হোলে এ সিদ্ধান্ত ও ফতোয়া দেয়া যায় যে অত সামান্য ব্যাপারে 'একেবারে ইসলাম(Islam) এবং উম্মতে মোহম্মদী থেকে তার বহিস্কৃত'- যেখানে তওহীদে বিশ্বাস থাকলে ব্যভিচার ও চুরিও মাফ করার আশ্বাস আল্লাহ(Allah) দিয়েছেন। শেষ ইসলাম(Islam) এসেছে সমস্ত পৃথিবীর জন্য। পৃথিবীতে বহু রকম পোষাক, পরিচ্ছদ, বহু ভাষা, বহু রীতি-নীতি। ইসলাম(Islam) গ্রহণ কোরে নিতে ওগুলো কোন বাধা নয়, ওগুলো বদলাতেও কোন আদেশ নেই, প্রয়োজনও নেই। আল্লাহ(Allah) বোলেছেন- আমি তোমাদের পোষাক দেখিনা, দেখি অন্তর (কোরান)। শেষ ইসলাম(Islam) এসেছে সমস্ত পৃথিবীর জন্য এবং সমস্ত পৃথিবীর মানুষের জন্য এক রকম পোষাক অসম্ভব সুতরাং ঐ হাদীসের অনুকরণের অর্থ পোষাক-পরিচ্ছদ ইত্যাদি হওয়া অসম্ভব। আসলে বিশ্বনবী (দঃ) অনুকরণ বোলতে বোঝাচ্ছেন অন্য জাতির রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ব্যবস্থা, আইন-কানুনের অনুকরণ, অন্য জাতির আদর্শের অনুকরণ। তা না হোলে উম্মাহ থেকেই বহিস্কারের মত এত বড় শাস্তি হোতে পারে না। কাপড়-চোপড় ইত্যাদির চেয়ে জীবন-ব্যবস্থার বুনিয়াদী ব্যাপারগুলি যে বহু বেশী গুরুত্বপূর্ণ এ সাধারণ জ্ঞান পর্য্যন্ত এদের লুপ্ত হোয়ে গেছে। গত কয়েক শতাব্দী থেকে এই 'মুসলিম(Muslim)' জাতি জাতীয় জীবনে মূল বিষয়গুলির প্রত্যেকটিতে পাশ্চাত্য জাতিগুলির অনুকরণ কোরছে। মহানবীর (দঃ) হাদীস মোতাবেক এই উম্মাহকে কেয়ামতের দিন খ্রীস্টান, ইহুদী, মোশরেক ও কাফেরদের দলভুক্ত হোয়ে দাঁড়াতে হবে। দাঁড়াতে হবে গত কয়েক শতাব্দীর এবং বর্তমানের সমস্ত 'মুসলিম(Muslim)' রাজনৈতিক-সামাজিক নেতৃবৃন্দকে, দাঁড়াতে হবে জোব্বা-পাগড়ীধারী ধর্মীয় নেতাদের যারা ঐ অনুকরণ ও বেদা'তে বাধা দেননি, এমন কি দাঁড়াতে হবে জনসাধারণকেও, কারণ সংখ্যাগরিষ্ঠ হোয়েও যারা তাদের নেতৃত্বকে বাধ্য করেননি গায়রুল্লাহকে বাদ দিয়ে আল্লাহ(Allah)র বিধান প্রতিষ্ঠা কোরতে।

নিজেরা মুর্ত্তিমান বেদা'ত হোয়েও যারা আকীদার বিকৃতিতে এবং প্রায়ান্ধত্বের জন্য যে সব কাজকে বেদা'ত বোলে চিৎকার করেন তার মধ্যে প্রধান হোচ্ছে দুটো- ক) মিলাদ, খ) কবর বাঁধাই। কবরে সম্মান দেখানো, কবরে বাতি-সুগন্ধি জ্বালানো। প্রথমটা ধরা যাক-মিলাদ কি? মিলাদের আসল উদ্দেশ্য হলো, সকলে একত্রে বোসে মানব জাতির মুকুটমণির জীবনী আলোচনা করা। আল্লাহ(Allah) তাঁকে (দঃ) পৃথিবীতে পাঠিয়ে ছিলেন, কী তার উদ্দেশ্য ছিলো, তিনি মানুষ জাতিকে কী শিক্ষা দিয়ে গেছেন, তিনি ও আল্লাহ(Allah) আমাদের কাছ থেকে কী আশা করেন, তার চরিত্র কেমন ছিলো, কার্যপ্রণালী কেমন ছিলো ইত্যাদি আলোচনা করা। আল্লাহ(Allah) বোলেছেন- তার রসুলকে (দঃ) তিনি সর্বোত্তম চরিত্রের মানুষ কোরে সৃষ্টি কোরেছেন আমাদের আদর্শ কোরে (কোরান- সূরা আল কালাম ৪) এবং আমাদের আদেশ কোরেছেন তাঁর অনুসরণ করার। সেই আদর্শকে আমরা আলোচনা কোরবো না? এ কেমন কথা? আল্লাহ(Allah) সর্বশ্রেষ্ঠ চরিত্র দিয়ে সৃষ্টি কোরলেন তার প্রেরিতকে (দঃ)। নিশ্চয়ই উদ্দেশ্য হলো এই যে আমরা যেন সেই শ্রেষ্ঠতম- অনুপম চরিত্রের আদর্শে আমাদের নিজেদের চরিত্র গড়ার চেষ্টা করি। যদি সবাই বোসে সেই চরিত্র আলোচনাই না করি তবে কেমন কোরে সে চেষ্টা কোরবো? সে বসাকে মিলাদই বলুন, মিটিং-ই বলুন আর আলোচনা সভাই (Discussion Meeting) বলুন-একই কথা। ঐ মিলাদে বা আলোচনা সভায় দরুদ ও সালামের কথা বোলবেন? আল্লাহ(Allah) বোলেছেন- তিনি তার মালায়েক অর্থাৎ ফেরেশতাদের নিয়ে বিশ্বনবীর (দঃ) ওপর সালাত ও সালাম পাঠান (কোরান- সূরা আল আহযাব ৫৬)। জীবনী, চরিত্র ও কার্যপ্রনালীর ওপর আলোচনার পর যদি সবাই স্বয়ং আল্লাহ(Allah) ও তার মালায়েকরা যা করেন করি অর্থাৎ সালাত ও সালাম পাঠাই তবে কি আল্লাহ(Allah) ও মালায়েকরাও বেদা'ত কোরছেন- নাউযুবিল্লাহ। এ কথা ঠিক যে মহানবীর (দঃ) সময় মিলাদ ছিলো না। কেন থাকবে? তখন তিনি জীবিত, মানুষ তাকে চোখের সামনে দেখতে পারছে, এবং তার কাছ থেকে সরাসরি শিক্ষা নিচ্ছে, কাজেই তখন মিলাদের দরকার কি? দরকার এখন- কারণ এখন তিনি আমাদের মধ্যে নেই।

তবে এ কথা ঠিক যে আজ এই মরা জাতির মধ্যে যে মিলাদ হয় তা এই জাতির অন্যান্য সব কাজের মতই প্রাণহীন, অর্থহীন, উদ্দেশ্যহীন- মিঠাই খাওয়ার অনুষ্ঠান। একটা মানুষ যদি একটা মিলাদে, অর্থাৎ রসুলাল্লাহর (দঃ) জীবনী আলোচনা সভায় যোগ দেয়, তারপর মিলাদ শেষে যখন সে বের হোয়ে আসে তখন সে যদি অন্ততঃ কিছুটা অন্য মানুষ না হোয়ে থাকে তবে সে মিলাদ মিলাদই নয়। খ) কবর সম্মান ইত্যাদি। যারা দ্বীনের তুচ্ছতম ব্যাপারগুলিকে অতি বিশ্লেষণ কোরে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে বিরাট আকারে পরিণত কোরেছেন তন্ন তন্ন কোরে কোরান-হাদীস পড়েছেন তাদের তো বোলতে হবে না যে আল্লাহ(Allah) তার কোরানে বাপ-মাকে কতখানি সম্মানের অধিকারী কোরে দিয়েছেন। তারপর তার রসুল (দঃ) বোলেছেন- আল্লাহ(Allah) ছাড়া পৃথিবীতে আর কাউকে যদি সাজদা করার অনুমতি দেওয়া হতো তবে সন্তানকে মা-বাপকে কোরতে দেওয়া হতো (হাদীস)। অর্থাৎ মা-বাপের স্থান সাজদার স্থানের চেয়ে মাত্র একধাপ নিচু। যাদের সম্মানের স্থান এত উঁচু তাদের কবরে সসস্মানে একটি চুমু দেওয়া, দুটো মোমবাতি জ্বালানো কতখানি অন্যায়, কতখানি গোনাহ? সব অন্যায়, সব গোনাহ, সব ভালো কাজ, সব সওয়াব সমান কি? নিশ্চয়ই নয়। সব গোনাহের শাস্তিও যেমন এক নয়, সব সওয়াবের পুরস্কারও তেমনি এক নয়। এ শুধু আল্লাহ(Allah)র বিধানই নয়, মানুষের তৈরী আইনেও তাই। যদি স্বীকার কোরে নেই কবরে সম্মান দেখানো, চুমু দেয়া, বাতি জ্বালানো বেদা'ত-শিরক, তবে এই দ্বীনের মুখ্য প্রধান ভাগ অর্থাৎ জাতীয় জীবন থেকে আল্লাহ(Allah)র সরাসরি আদেশ, ব্যবস্থাগুলি বাদ দিয়ে মানুষের তৈরী ব্যবস্থাকে প্রতিষ্ঠা করা কি? সরাসরি কুফর। তাই যদি হয় তবে 'ওলামায়ে দ্বীন' এই কুফরের বিরুদ্ধে কয় লাইন লিখেছেন, কয় মিনিট ওয়াজ কোরেছেন? আর মিলাদ ও কবরের ওপর কত হাজার বই কেতাব লিখেছেন, কত লক্ষ ঘন্টা ওয়ায, বক্তৃতা কোরেছেন? দ্বীনের ধ্বজাধারী এই আলেম, ফকীহ, মোফাসসির, মুফতী, মোহাদ্দীসরা তাদের এলেমের, জ্ঞানের অভাবে, মনের সংকীর্ণতায়, দৃষ্টির অন্ধত্বে, আকীদার বিকৃতিতে এ কথা বুঝতে অক্ষম যে মিলাদ পড়া, কবরে চুমা দেওয়া, বাতি জ্বালানোর বেদা'ত ডোবা নালা, কুয়ো, আর গায়রুল্লাহর তৈরী যে জীবন ব্যবস্থাকে ধ্বংস কোরে দ্বীন-ইসলাম(Islam)কে প্রতিষ্ঠার জন্য বিশ্বনবীকে (দঃ) পাঠানো সেই গায়রুল্লাহর জীবন-ব্যবস্থাকে গ্রহণ করা শুধু বেদা'ত অর্থাৎ শেরক নয়, তা শেরক ও কুফরের মহাসমুদ্র, যে মহাসমুদ্রের মধ্যে তারা সম্পূর্ণভাবে নিমজ্জিত হোয়ে আছেন, এবং সে শেরকের, কুফরের বিরুদ্ধে কথা বলেন না। অন্ধত্ব ছাড়াও অন্য কারণটি হোচ্ছে এই যে ঐ প্রকৃত শেরক ও কুফরের কথা বোলতে গেলে বাধার ভয় আছে, জেলের ভয় আছে, আর মিলাদ এবং কবরের বাতির কথা বোললে কেউ জেলে দেবে না, বরং দাওয়াত কোরে পোলাও-কোরমা খাওয়াবে। এরাই হোচ্ছেন সেই মহাবিপ্লবীর (দঃ) নায়েব, অর্থাৎ প্রতিনিধি হবার দাবীদার যিনি সমস্ত পৃথিবীর শেরক ও কুফরীর সম্মুখে দাঁড়িয়ে বজ্রকণ্ঠে আল্লাহ(Allah)র একত্ব ঘোষণা করতে ভয় পাননি।

কোন মন্তব্য নেই: