বৃহস্পতিবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০১১

১৩। মুসলিম দুনিয়ার মোশরেক নেতৃত্ব

উৎস: Islam and Dajjal
বর্ত্তমানে এই উম্মাহ, এই জাতিটি কত ভাগে বিভক্ত তার একটা মোটামুটি বিবরণ দিলাম। এর আরও বহু উপবিভাগ আছে তাতে আর গেলাম না। বহু লম্বা হোয়ে যাবে। যিনি এই উম্মাহ সৃষ্টি কোরেছিলেন তিনি (দঃ) বলে গেছেন আমার এই উম্মাহ তেহাত্তর ভাগে (ফেরকায়) বিভক্ত হোয়ে যাবে, আর ঐ তেহাত্তর ভাগের একটি মাত্র ভাগ জান্নাতী, বাকি বাহাত্তর ভাগ আগুনে নিক্ষিপ্ত হবে [হাদীস- আব্দুল্লাহ বিন আমর (রাঃ) থেকে তিরমিযি, মেশকাত]। সব ধর্মের লোক যেমন বিশ্বাস করে যে আমার ধর্মই একমাত্র সঠিক ধর্ম বাকি আর সব নরকে যাবে, তেমনি ঐ তেহাত্তর ফেরকার প্রতিটি ফেরকাই বিশ্বাস করে যে আমার ফেরকাই সেই একমাত্র জান্নাতী ফেরকা। আসলে সেই একমাত্র জান্নাতী ফেরকা কোনটা তা সামনে দেখাবো। এখন সার্বভৌমত্বের ব্যাপারে কয়েকটা কথা দরকার। পেছনে বোলে এসেছি যে উম্মতে মোহাম্মদীকে সৃষ্টি করা হোয়েছিলো একটি মাত্র উদ্দেশ্যে এবং তা হলো সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে এই শেষ দ্বীন, জীবন-ব্যবস্থা এই পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা করা। কারণ এইটাই হলো আল্লাহ(Allah)র প্রতি ইবলিসের, শয়তানের চ্যালেঞ্জ। ঐ উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য সংগ্রাম শুরু কোরেও অর্দ্ধেক রাস্থায় দুর্ভাগ্যক্রমে হঠাৎ ঐ উদ্দেশ্য ভুলে যেয়ে যখন ঐ সংগ্রাম ত্যাগ করলো তখনই এই জাতির অস্থিত্বের আর অর্থ রোইলোনা। কারণ যে জিনিষের উদ্দেশ্য নেই সেটা অর্থহীন। সেই উদ্দেশ্য অর্জনের সংগ্রাম ত্যাগ করার ফলে এটা আর প্রকৃত উম্মতে মোহাম্মদী রোইলো না। সম্মুখে উদ্দেশ্য না থাকলে যা হবার এরপর তাই হলো অর্থাৎ নানামতের সৃষ্টি, বিভেদ এবং একদা পরাজিত শত্রুর কাছে পরাজয় ও তাদের ক্রীতদাসে পরিণত হওয়া। ঐ দাসত্বই যথেষ্ট প্রমাণ যে এই জাতি আর তখন মোমেনও নয় মুসলীমও নয়, উম্মতে মোহাম্মদী তো নয়ই। কারণ এর যে কোনটা হোলেই অন্য জাতির দাসত্ব অসম্ভব, কারণ আল্লাহ(Allah) বহুবার বোলেছেন তিনি মো'মেনের সঙ্গে আছেন, বোলেছেন যে মো'মেনদের সাহায্য করা অবশ্য কর্তব্য, দায়িত্ব (কোরান- সূরা আর রুম ৪৭)। আল্লাহ(Allah) যাকে বা যাদের সঙ্গে আছেন, যাদের সাহায্য কোরছেন তারা যদি দাসে, গোলামে পরিণত হয় তবে একটাই সিদ্ধান্ত সম্ভব আর তা হলো আল্লাহ(Allah) মিথ্যা আশ্বাস দিয়েছেন (নাউযুবিল্লাহ)। যা হোক, কয়েক শতাব্দী ঐ দাসত্বের পর বিশেষ অবস্থার কারণে এই জাতি গোলামী থেকে দৃশ্যতঃ ও আংশিকভাবে মুক্তি পেলো। আংশিক কেন বোলছি তা পেছনে বোলে এসেছি। পাশ্চাত্য প্রভুরা যাবার সময় ক্ষমতা ছেড়ে গেলো তাদেরই অতি যত্নে তৈরী করা একটা শ্রেণীর হাতে যে শ্রেণীর মন-মগজ তারা বিশেষ পদ্ধতিতে শিক্ষার মাধ্যমে কিনে নিয়েছিলো। ক্ষমতা এদের হাতে ছেড়ে- যাবার পর এরা বিভিন্ন দেশে যে ধরনের সরকারগুলি কায়েম কোরলেন তা থেকেই তাদের হীনমন্যতার গভীরতা আঁচ কারা যায়। ইউরোপের যে রাষ্ট্রের অধীনে যে দেশ ও এলাকা ছিলো সেই সেই দেশের নতুন সরকারগুলি প্রত্যেকটি তাদের যার যার বিগত প্রভুদের দেশের ব্যবস্থা নিজেদের দেশে প্রবর্ত্তন করলো শুধু রাজতন্ত্র ছাড়া। প্রভুরা যে সার্বভৌমত্ব স্রষ্টার কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে মানুষের হাতে নিয়ে এলো এটা যে স্রষ্টাকে অস্বীকার করে কুফর করা হলো এ বোধ এই নতুন শাসকদের ছিলো না কাজেই তারা আল্লাহ(Allah)র সার্বভৌমত্ব অস্বীকারকারী ব্যবস্থাগুলি তাদের নিজেদের দেশে প্রবর্তন কোরেও তারা মুসলিম(Muslim)ই রোইলেন এই আহাম্মদের স্বর্গে বাস কোরতে লাগলেন এবং ব্যক্তিগত জীবনে নামায, রোযা, হজ্ব, যাকাত ইত্যাদি কোরতে থাকলেন। তারা তাদের বিগত খ্রীস্টান এলাহদের কাছে শিখেছিলেন যে আল্লাহ(Allah) এবং তার দ্বীন নেহায়েত ব্যক্তিগত ব্যাপার। ব্যক্তিগতভাবে তাকে মানলেই ভালো ধার্মিক হওয়া যায়। জাতীয় জীবনের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, কূটনৈতিক, সামাজিক, প্রশানসনিক এসব জটিল ব্যাপার বোঝা আল্লাহ(Allah)র বুদ্ধির বাইরে। তাদের ঐ ধর্মনিরপেক্ষতার শিক্ষা ঐ ক্ষমতাধারীদের পক্ষে গ্রহণ ও প্রয়োগ করা কঠিন হলোনা, কারণ এই 'ধর্মের' ধারক-বাহক ধ্বজাধারী যারা ছিলেন ও আছেন তারা বিশেষ কোন বাধা দিলেন না। আল্লাহ(Allah)র সার্বভৌমত্ব অস্বীকারকারী ঐ পাশ্চাত্য রাজনৈতিক ও আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থাগুলি এই বিভিন্ন 'মুসলিম(Muslim)' দেশগুলিতে চালু করার বিরুদ্ধে ঐ 'ধর্মীয়' নেতারা যারা নিজেদের 'ওলামায়ে দ্বীন' বোলে মনে করেন তারা অপ্রতিরোধ্য বাধা হোয়ে দাঁড়াননি তার কারণ- ক) পূর্ববর্তী ফকীহ মুফাস্সিরদের কাজের ফলে অর্থাৎ এই দ্বীনের অতি বিশ্লেষণের ফলে ঐ ওলামায়ে দ্বীন বহু ভাগে বিভক্ত হোয়ে ছিলেন। আর এটা সাধারণ জ্ঞান যে ঐক্যহীন কোন কিছুর কোন শক্তি নেই। খ) ঐ 'ওলামায়ে দ্বীনের' আকীদাও পাশ্চাত্য খ্রীস্টানদের ধর্মনিরপক্ষতার মতই ছিলো, অর্থাৎ ব্যক্তিগতভাবে আল্লাহ(Allah) রাসূলে ঈমান, নামায, রোযা ইত্যাদি করলেই ভালো মুসলিম(Muslim) হওয়া যায়, জাতীয় জীবনে গোলমালে যেয়ে কি হবে? এই দিক দিয়ে মোশরেক ও কাফের পাশ্চাত্য জাতিগুলির আকীদার থেকে এরা বেশী দূরে ছিলেন না এবং এখনও নেই। পেছনে যে অন্তর্ম খীতার কথা বোলে এসেছি এটা তারই ফল। গ) যখন পাশ্চাত্য প্রভুদের হাত থেকে ক্ষমতা ঐ 'শিক্ষিত' শ্রেণীটির কাছে হস্থান্তরিত হলো তখন বৃহত্তর জন সাধারণ শুধু অশিক্ষিত ও নিরক্ষর নয় মুর্খ। কয়েক শতাব্দী আগেই এই জাতিকে গুণ্ডমুর্খে পরিণত করার যে প্রক্রিয়া আরম্ভ হোয়েছিলো তার পূর্ণ ফসল এখন দেখা দিয়েছে। এই অশিক্ষার ও মুর্খতার সর্বপ্রধান কারণ ছিলো এই দ্বীনের 'ওলামাদের' অতিবিশ্লেষণ ও শেষ পর্য্যন্ত এই অভিমত যে ধর্মীয় শিক্ষাই একমাত্র শিক্ষা, ধমর্ীয় জ্ঞানই একামাত্র জ্ঞান, এর বাইরে আর কোন শিক্ষা আর কোন জ্ঞান প্রয়োজন নেই। সুতরাং যখন ক্ষমতা হস্থান্তর হলো তখন ঐ 'শিক্ষিত' শ্রেণীর বাইরে প্রধান মাত্র দু'টি ভাগ ছিলো একটি 'ওলামায়ে দ্বীন' যাদের জাতীয় জীবন সম্বন্ধে আকীদা ইসলামের আকীদা নয়, পাশ্চাত্য খ্রীস্টানদের শেখানো, ধর্মনিরপেক্ষতার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। অন্যটি বিরাট অশিক্ষিত নিরক্ষর জনতা। কাজেই 'শিক্ষিত' ক্ষমতাধর শ্রেণীটি বিনা বাধায় পাশ্চাত্যের কাছে শেখা আল্লাহ(Allah)র সার্বভৌমত্ব তওহীদ অস্বীকারকারী জাতীয় জীবন-ব্যবস্থা সমস্ত 'মুসলিম(Muslim)' দুনিয়াময় প্রতিষ্ঠা কোরতে পারলেন।

এই কালো, বাদামী ও হলদে ইউরোপীয়ানদের শাসন এখনও পর্য্যন্ত চলছে। কিন্তু যেদিন এদের শাসন আরম্ভ হোয়েছিল সেদিন থেকে আজ কিছুটা ব্যতিক্রম এসেছে। এই ব্যতিক্রম দু'মুখী এবং বিপরীতমুখী। ক) বিদেশী প্রভুরা কেরানীকুল সৃষ্টির জন্য যে নৈতিকতাহীন শিক্ষা ব্যবস্থা সৃষ্টি কোরেছিলো সেই ব্যবস্থা মাছিমারা কেরাণীর মত (ঐ কেরাণী সৃষ্টিই উদ্দেশ্য ছিল) অনুকরণ করার ফলে চিন্তা-ভাবনা দৃষ্টিভঙ্গি (আকীদা) সংস্কৃতি, ইত্যাদি ব্যাপারে এই জাতির দেশগুলি আজ অনেক বেশী পাশ্চাত্য নির্ভর। যেদিন পাশ্চাত্য জাতিগুলি প্রাচ্যের এই দেশগুলিকে তথাকথিত স্বাধীনতা দিয়ে চলে গিয়েছিলো সেদিনের চেয়ে এই দেশগুলিতে নিজেদের ঘরে নিজেদের মধ্যে অনেক বেশী ইংরাজীতে, ফ্রেন্চে, জার্মানে, ইটালিয়ানে কথা বলে, যে কয়টি ঘরে পাশ্চাত্য সঙ্গীত বাজতো আজ তার চেয়ে বহু বেশী ঘরে বাজে। অর্থনৈতিক দিকটা পরে আসছে। খ) অন্যদিকে এই দেশগুলিতে মানুষের মধ্যে একটা অংশের চেতনা ফিরে আসছে, কাল ঘুম ভাংছে। মহানবী (দঃ) বোলে গেছেন- আমার উম্মাহর মধ্যে চিরকালই একটা দল থাকবে যারা সর্ব অবস্থায় আল্লাহ(Allah)র আদেশ-নিষেধ বলবৎ কোরেব [হাদীস- মুয়াবিয়া (রাঃ) থেকে বোখারী, মুসলিম(Muslim), মেশকাত]। আল্লাহ(Allah)র আদেশ- নিষেধ অর্থই এই জীবন-ব্যবস্থা, এই দ্বীন-ই ইসলাম(Islam)। এরা আজও প্রকৃত উম্মতে মোহাম্মদী। এদের একটা চাপ কমবেশী চিরকাল আছে, প্রাশ্চাত্য প্রভুরা থাকতেও ছিলো। তারা চলে যাবার পর এই চাপ ক্রমশঃ বাড়ছে। এদেরই চাপে ক্ষমতাধর শাসকরা সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে কিছুটা আপোষের ভাব দেখাচ্ছেন। যদিও আসলে আপোষের চেয়ে ফাঁকি দেয়ার উদ্দেশ্যটাই মুখ্য। সাবভৌমত্ব ছাড়া কোন ব্যবস্থা, বিধান জীবন-ব্যবস্থা অসম্ভব। কারণ যে কোন সমস্যারই একটা শেষ চূড়ান্ত স্থান থাকতে হবে সমাধানের। না থাকলে অবশ্যম্ভাবী পরিণতি বিভেদ-বিভক্তি ও সমস্ত ব্যবস্থাটাই ভেঙ্গে পড়া। খ্রীস্টান ধর্মের জাতীয় জীবনের ব্যর্থতায় যে ধর্মনিরপেক্ষতার জন্ম হলো তাতেও সার্বভৌমত্ব রাখতে হলো। প্রতমতঃ রাজাদের তারপর সেটার ব্যর্থতার পর বিভিন্ন প্রকারের সার্বভৌমত্বের। পরিষ্কার কোরে উপস্থাপন কোরতে গেলে এমনি কোরে কোরেত হয়ঃ

ব্যবস্থা (System) সার্বভৌমত্ব (Sovereignty)

রাজতন্ত্র রাজা, বাদশাহ, সম্রাট

গণতন্ত্র জনসাধারণের সংখ্যাগরিষ্ঠতা

সমাজতন্ত্র ও সাম্যবাদ জনসাধারণের একটি বিশেষ শ্রেণী

ফ্যাসিবাদ এক নায়ক, ডিকটেটর

ইসলাম(Islam) আল্লাহ(Allah)।

এই বিন্যাসই এ কথা পরিষ্কার কোরে দিচ্ছে যে সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে কোন আপোষ সম্ভব নয়। ওপরের যে কোন একটাকে গ্রহণ কোরতে হবে। আল্লাহ(Allah)র সার্বভৌমত্বকে বাদ দিয়ে অন্য যে কোনটি স্বীকার, গ্রহণ কোরে নিলে সে আর মুসলিম(Muslim) বা মোমেন থাকতে পারে না। কোন লোক যদি ব্যক্তিগত জীবনে আল্লাহ(Allah) বিশ্বাসী এবং জাতীয় জীবনের ওপরের যে কোনটায় বিশ্বাসী হয় তবে সে মোশরেক। আর উভয় জীবনের কোন লোক যদি ঐগুলির যে কোনটায় বিশ্বাস করে তবে সে কাফের।

এই রঙ্গীন (Coloured) ইউরোপিয়ানদের শাসন দু'এক দশক পার হবার মধ্যেই আল্লাহ(Allah)র রহমে বিভিন্ন মুসলিম(Muslim) দেশগুলোয় কিছু কিছু মানুষ সচল হোয়ে উঠতে লাগলো। এদের জাগরণের প্রেরণা এলো সেই দলের লোকদের কাছ থেকে যাদের সম্বন্ধে একটু আগেই বোলে এসেছি। যাদের কথা বিশ্বনবী (দঃ) বোলে গেছেন- আমার উম্মতে সব সময়ই একদল লোক থাকবে যারা নিরবচ্ছিন্নভাবে এই দ্বীনকে প্রতিষ্ঠা জন্য কাজ কোরে যাবে। যাই হোক, ক্রমশঃ এই দ্বীনকে জাতীয় জীবনে প্রতিষ্ঠার জন্য, পাশ্চাত্য প্রভুদের শেখানো আত্দাহীন বস্তুতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ত্যাগ করার জন্য চাপ বাড়তে লাগলো এবং এমন একটা পরিস্থিতি এলো যখন মানসিকভাবে প্রাশ্চাত্যের দাস, বিভিন্ন মুসলিম(Muslim) দেশের নেতৃত্ব দেখলো যে একটা কিছু করা দরকার। তারা কোরলেনও। অর্দ্ধশিক্ষিত, অশিক্ষিত জনাসাধারণকে ধোঁকা দেওয়ার জন্য তারা ইসলামিক ধণতন্ত্র, ইসলামিক সমাজতন্ত্র, ইসলামিক রাজতন্ত্র ইত্যাদি অদ্ভুত অসম্ভব ব্যবস্থা সৃষ্টি কোরলেন। উদ্দেশ্য মানুষকে ফাঁকি দেওয়া হোলেও তারা নিজেরাই এ কথা বুঝলেন কিনা জানিনা যে আল্লাহ(Allah)র সার্বভৌমত্বের সঙ্গে ঐ সব ব্যবস্থার সার্বভৌমত্বের গোজামিল হোচ্ছে শেরক ও কুফর। যদি বুঝে থাকেন তবে এ কথা পরিষ্কার যে পাশ্চাত্য প্রভুদের শেখানো আল্লাহ(Allah) বিরোধী ব্যবস্থাগুলিকে টিকিয়ে রাখার জন্য তারা নিজেদের জাতিকে ধোঁকা দিচ্ছেন, তারা শেরক ও কুফরের মধ্যে তো আছেনই, তার ওপর তারা জ্ঞানপাপী। আর যদি না বুঝে থাকেন তবেও এ কথা পরিষ্কার যে তাদের মন-মগজ পাশ্চাত্যের সব কিছু সম্বন্ধে এতো অতল হীনমন্যতায় নিমজ্জিত, পাশ্চাত্য সব কিছুতেই নির্ভুল এই বিশ্বাস এতো দৃঢ় যে গত মহাযুদ্ধে যদি গণতন্ত্রী, সমাজতন্ত্রী ও সাম্যবাদীরা না জিতে ফ্যাসিবাদী অক্ষশক্তি জিতে যেতো এবং পৃথিবীতে তাদের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হতো তবে শেরক ও কুফরের দাস 'মুসলিম(Muslim)' দেশগুলির শিক্ষিত শাসক শ্রেণী ইসলামিক ফ্যাসিবাদ আবিষ্কার কোরে তা তাদের জাতিগুলির ওপর চাপাতেন এবং গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও সাম্যবাদকে তেমনি গালিগালাজ কোরতেন আজ যেমন ফ্যাসিবাদ আর রাজতন্ত্রকে করেন। পাশ্চাত্য সম্বন্ধে ঘৃণ্য হীনমন্যতায় অন্ধ হোয়ে না গেলে এরা দেখতে পেতেন যে ইসলামিক গণতন্ত্র, ইসলামিক সমাজতন্ত্রের চেয়ে বরং ইসলামিক খ্রীস্টান, ইসলামিক হিন্দু, ইসলামিক বৌদ্ধ, ইসলামিক ইহুদী নিকটতর কারণ এরা সবার ওপর স্রষ্টা আছেন বিশ্বাস করে এবং তাকে প্রভু বোলে স্বীকার করে। কিন্তু গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ফ্যাসিবাদ স্রষ্টাকে বিশ্বাসই করে না, ব্যক্তিগতভাবে মুখে কেউ কোরলেও পার্থিব অর্থাৎ রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ইত্যাদি ব্যাপারে আল্লাহ(Allah)র কিছু বলার আছে বোলে স্বীকার করে না।

বর্তমানে 'মুসলিম(Muslim)' দুনিয়ার নেতৃত্ব তাদের সীমাহীন হীনমন্যতায় তাদের যার যার জাতিগুলিকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন তা একবার দেখা দরকার। এরা তাদের প্রকৃত এলাহ অর্থাৎ জাতীয় জীবনের এলাহ পাশ্চাত্যের বস্তুতান্ত্রিক জুডিও খ্রীস্টান সভ্যতার কাছ থেকে শিখেছেন যে পার্থিব, অর্থনৈতিক উন্নতিই হচ্ছে মানব জীবনের একমাত্র লক্ষ্য। একে এরা নাম দিয়েছেন জীবন যাত্রার মান উন্নয়ন। পাশ্চাত্যের মানুষের দর্শন হোচ্ছে কঠিন পরিশ্রম কোরে যতপার উপার্জন কর, ঐ উপার্জ্জনের টাকায় যতখানি পার জীবন উপভোগ কর, তারপর আয়ু ফুরিয়ে গেলে মরে যাও। প্রাচ্যের বর্তমান নেতৃত্ব তাদের শিক্ষকের কাছ থেকে জীবনের ঐ দর্শন খুব ভালো কোরেই শিখেছেন, তাদের দৃষ্টিতে মানব জীবনের উন্নতির একটি মাত্র অর্থ আছে আর তা হোচ্ছে অর্থনৈতিক উন্নতি। এটা শুধু তথাকথিত মুসলিম(Muslim) নেতৃত্বের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। পাশ্চাত্য সামরিক শক্তিতে প্রাচ্যের যত দেশই জয় কোরেছিলো, সর্বত্রই তাদের শিক্ষা ব্যবস্থার বদৌলতে জীবনের ঐ বস্তুতান্ত্রিক দর্শন প্রতিষ্ঠা কোরেছে। মো'মেন জাতির জীবনের উদ্দেশ্য যে জীবন উপভোগের উল্টো, অর্থাৎ মানুষজাতির সমস্ত অন্যায়, রক্তপাত, যুদ্ধ, অশান্তি বন্ধ কোরে শান্তি (ইসলাম(Islam)) স্থাপন কোরে ইসলিসের চ্যালেঞ্জে আল্লাহ(Allah)কে জয়ী করার জন্য নিজেদের কোরাবাণী করা তা ঐ হীনমন্যতায় অন্ধ নেতৃত্বের মগজে প্রবেশ করেনা। কারণ নিজেদের জীবন-ব্যবস্থায়, দ্বীনের শুধু প্রক্রিয়ার ভাগ, তাও শুধু ব্যক্তিগত প্রক্রিয়ার ভাগটা অর্থাৎ নামায, রোযা, ইত্যাদি ছাড়া আর কিছুই তারা জানেন না। এই জাতির উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য কী সে সম্বন্ধে তাদের অজ্ঞতা পরিপূর্ণ। মুখে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বোলে, আল্লাহ(Allah)র সরাসরি হুকুম, আদেশগুলিকে অবজ্ঞাভরে দূরে ফেলে দিয়ে সেখানে পাশ্চাত্য প্রভুদের নির্দেশকে কার্যকারী কোরে তারা তাদের নিজেদের দেশগুলির অর্থনৈতিক উন্নতির, 'জীবন যাত্রার মান উন্নয়নের' জন্য উর্দ্ধশ্বাসে ছুটে চলেছেন।

পারছেন না। শুধু যে পারছেন না তাই নয়। পাশ্চাত্য প্রভুরা তাদের শাসন ও শোষণ করার পর তাদের সৃষ্ট তাদের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় বিশ্বাসী শ্রেণীটির হাতে ক্ষমতা ছেড়ে যাবার সময় এই দেশগুলির যেটুকু অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা ছিলো, আজ ৪০/৫০ বছর পর সেটুকুও অবশিষ্ট নেই। সেদিন যতলোক অর্দ্ধাহারে, অনাহারে থাকতো আজ তার চেয়ে বেশী স্ত্রী-পুরুষ, ছেলে-মেয়ে অর্দ্ধাহারে, অনাহারে থাকে। পাশ্চাত্য প্রভূরা চলে যাবার দিন এই দেশগুলির ওপর কোন ধার কর্জ ছিল না। আজ পাশ্চাত্যের কাছে ঋণ, ধার-কর্জে এদের হাড়গোড় পর্য্যন্ত দায়বদ্ধ হোয়ে গেছে এবং ঐ বিরাট ঋণ শোধ দেবার ক্ষমতা বহু পূর্বেই শেষ হোয়ে গেছে। মাঝখান থেকে আত্মার ও চরিত্রের যেটুকু পরিচ্ছন্নতা ছিলো পাশ্চাত্য সভ্যতার প্রভাবে তাও হারিয়ে গেছে। পাশ্চাত্য প্রভুরা চলে যাবার দিনটির চেয়ে প্রতিটি তথাকথিত মুসলিম(Muslim) দেশে অন্যায়, খুন-জখম, রাহাজানী, ব্যাভিচার, ছিনতাই, চুরি, ডাকাতি ইত্যাদি আজ বহুগুণ বেশী এটা যে কোন পরিসংখ্যান দেখলেই দেখা যাবে। প্রত্যেকটি জাতির নৈতিক চরিত্র আজ অধঃপতিত। তাহোলে নেতৃত্ব এই দেশগুলিকে কি দিলেন? চরিত্র, আত্দা বিক্রী কোরে দিয়ে যদি অর্থনৈতিক উন্নতি, তাদের ভাষায় জীবন যাত্রার মান উন্নয়ন কোরতে পারতেন, তবু না হয় এরা কিছু বোলতে পারতেন, (যদিও মুসলিম(Muslim) জাতি তা পারে না)। কিন্তু তাও তো পারেননি। দু'টোই তো অধঃগামী, নিম্নমুর্খী। এই নেতৃত্ব চোখ-কান বুঁজে তাদের দেশে পাশ্চাত্যের অনুকরণে কল-কারখানা বসাচ্ছেন, ফ্যাক্টরি চালু কোরছেন, কৃষি ব্যবস্থা উন্নত করার জন্য ট্র্যাক্টর আমদানী কোরছেন। কারণ তাদের প্রভুদের কাছে থেকে তারা শিখেছেন যে কল-কারখানা, ফ্যাক্টরীই হোচ্ছে অর্থনৈতিক উন্নতির একমাত্র উপায়। ঐ উপায়ে অর্থনৈতিক উন্নতির চেষ্টায় তারা স্বভাবতঃই প্রভুদের সুদভিত্তিক পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গ্রহণ কোরে যার যার দেশে চালু কোরেছেন। যেহেতু পাশ্চাত্য প্রভুরাই এই নেতৃত্বের আসল অর্থাৎ জাতীয় জীবনের প্রভু, ইলাহ তাই অন্য ইলাহ অর্থাৎ আল্লাহ(Allah)র সরাসরি হুকুম- "তোমরা সুদ খোয়োনা।"(কোরান- সূরা আল বাকারা ২৭৫, সূরা আলে ইমরান ১৩০) অর্থাৎ জাতীয় ও ব্যক্তিগত জীবনে সুদকে হারাম কোরে দেওয়াটা তাদের কাছে কোন চিন্তার বিষয়ই নয়। পাশ্চাত্য প্রভুরা যেটাকে ঠিক বোলেছেন, কবেকার সেই পুরোনো আল্লাহ(Allah) নিষেধ কোরলেই তা বাদ দিবেন এমন অশিক্ষিত বোকা 'মুসলিম(Muslim)' তারা নন।

এই যে তথাকথিত মসুলিম দেশগুলির বর্তমান নেতৃত্বের করুণ ব্যর্থতা, এই যে ঈমান, চরিত্র, আত্দা বিকিয়ে দিয়েও হাড্ডি-গোশত পর্য্যন্ত ঋণে দায়বদ্ধ হোয়েও পার্থিব সম্পদ লাভের ব্যর্থতা, এই হোচ্ছে 'মুসলীম' বিশ্বের মোশরেক ও কাফের নেতৃত্বের নেট ফল। প্রশ্ন হোতে পারে বস্তুতান্ত্রিক পাশ্চাত্য জগত ঐ কল-কারখানা, ফ্যাক্টরী ইত্যাদি দিয়েই অর্থনৈতিক দিক দিয়ে সফল হলো কেন? এর জবাব হোচ্ছেঃ পাশ্চাত্য জাতিগুলি তাদের ভৌগলিক রাষ্ট্রে (Nation State) বিশ্বাসী, এবং ঐ ভৌগলিক রাষ্ট্রের স্বার্থকে তাদের অধিকাংশ মানুষ তাদের ব্যক্তিগত স্বার্থের ওপর স্থান দেয়। আমার লাভ হবে কিন্তু রাষ্ট্রের ক্ষতি হবে এমন কাজ তাদের অধিকাংশ লোকেই কোরবে না। তাদের বিদ্যালয়, স্কুল-কলেজে, ছোট বেলা থেকেই কতকগুলি বুনিয়াদী শিক্ষা এমনভাবে তাদের চরিত্রের মধ্যে গেথে দেওয়া হয় যে, তা থেকে কিছু সংখ্যক অপরাধী চরিত্রের লোক ছাড়া কেউ মুক্ত হোতে পারে না। ফলে দেখা যায় যে ওসব দেশের মদখোর, মাতাল, ব্যভিচারীকে দিয়েও তার দেশের, জাতির ক্ষতি হবে এমন কাজ করানো যায় না, খাওয়ার জিনিষে ভেজাল দেওয়ানো যায় না, মানুষের ক্ষতি হোতে পারে এমন জিনিষ বিক্রি করানো যায় না ইত্যাদি। পক্ষান্তরে প্রাচ্যের এই 'মুসলিম(Muslim)' দেশগুলির নেতৃত্ব এখনও সেই ঔপনিবেশিক শিক্ষা ব্যবস্থা চালু রেখেছেন, যার একমাত্র উদ্দেশ্য ছিলো একটি কেরানী শ্রেণী সৃষ্টি করা, প্রভুদের শাসন যন্ত্রকে চালু রাখার জন্য। সে শিক্ষা ব্যবস্থায় লেখাপড়া, ভাষা, অংক, ভূগোল, কিছু বিজ্ঞান, কিছু বিকৃত ইতিহাস শিক্ষা দেওয়া হতো। কিন্তু চরিত্র গঠনের কোন শিক্ষা তাতে ছিলো না এবং আজও নেই। কাজেই, স্বভাবতঃই পাশ্চাত্যের শিক্ষালয়গুলির ছাত্র-ছাত্রীরা সুশৃংখল, প্রাচ্যের উশৃংখল, সেখানে লেখাপড়া হয়, এখানে রাজনীতি, ছুরি মারামারি, গোলাগুলি হয়, পাশ্চাত্যের শিক্ষালয়গুলি থেকে ছাত্র-ছাত্রীরা একটা চরিত্র নিয়ে বের হয় প্রাচ্যের ছাত্র-ছাত্রীরা চরিত্রহীন হোয়ে বের হয়। এরা যখন সরকারী, বেসরকারী চাকরিতে যোগ দেয়, রাজনৈতিক নেতৃত্ব লাভ করে তখন স্বভাবতঃই প্রাচ্য-পাশ্চাত্য কোন আদর্শ দিয়েই পারিচালিত হয় না। রাষ্ট্রের স্বার্থকে নিজের স্বার্থের ওপরে স্থান দেওয়ার পাশ্চাত্য শিক্ষা পায়নি বোলে রাষ্ট্রের ক্ষতি কোরেও নিজের স্বার্থ উদ্ধার করে। অন্যদিকে ইসলামের শিক্ষা পায়নি বোলে ঘুষ খায়, মিথ্যা বলে, ইসলামের যা কিছু আছে তার বিরুদ্ধাচারণ করে। কাজেই পাশ্চাত্য যা কোরে সফল, প্রাচ্য তাই কোরতে যেয়ে ব্যর্থ। এই নেতৃত্ব মাছিমারা কেরাণীর মত (প্রভুদের কোরণীকুল সৃষ্টির শিক্ষা ব্যবস্থা কতখানি সফল হোয়েছিলো, তার প্রমাণ এই খানেই) পূর্ব প্রভূদের এমন নিখুঁত অনুকরণ করেন যে কোন কোন ক্ষেত্রে তা করুণ হোয়ে দাঁড়ায়। এর মাত্র একটা এখানে আলোচনা কোরছি। ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থা (ভৌগলিক রাষ্ট্র নয়) রাষ্ট্র প্রধান অর্থাৎ খলিফা রাষ্ট্র থেকে ভাতা পাবেন একজন সাধারণ মানুষের প্রয়োজন মোতাবেক, অর্থাৎ জীবনের মৌলিক পায়োজন, খাবার, কাপড়, বাসস্থান ইত্যাদি। কোন বিলাসিতা, আড়ম্বর, কোন জাক-জমকের জন্য রাষ্ট্র খরচ বহন কোরবেন না। প্রকৃত ইসলামের যুগে খলিফারা এর বেশী পাননি। মৌলিক প্রয়োজনের মধ্যে বাসস্থানটাও তারা পাননি। কারণ খলিফা হবার আগে তাদের নিজেদের যে বাড়ী ছিলো তারা তাতেই থাকতেন এবং তা প্রায় কুড়েঘরের পর্য্যায়ের ব্যাপারে ছিলো। তারপর উম্মতে মোহম্মদী যখন তাদের নেতার (দঃ) আরদ্ধ কাজ কোরতে কোরতে আটলান্টিকের সমুদ্রতট থেকে চীনের সীমান্ত পর্য্যন্ত এই জীবন-ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করলো তখন পৃথিবীতে সর্বশ্রেষ্ঠ শক্তি হোয়ে দাঁড়ালো এই উম্মাহ, তখনকার দিনের বিশ্ব শক্তি (Super Power)। সামরিক ও অর্থনৈতিক এই উভয় দিক দিয়ে এই উম্মাহর সামনে দাঁড়াবার মত তখন পৃথিবীতে আর কেউ নেই। তদানিন্তন দুটো বিশ্ব শক্তিকে এই উম্মাহ, ইতিমধ্যেই পরাজিত কোরে দিয়েছে। একটি বিশ্ব শক্তি এই উম্মাহর অন্তভর্ূক্তই হোয়ে গেছে (পারশ্য)। কিন্তু খলিফাদের ভাতা ঐ-ই রোইলো। আলী (রাঃ) পর্য্যন্ত এই মহাশক্তির নেতারা তালি দেওয়া কাপড় পরে, অর্দ্ধাহারে থেকে, কুড়ে ঘরে বাস কোরে এই মহাশক্তির নেতৃত্ব কোরে গেছেন। কিন্তু ইউরোপের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাষ্ট্রগুলির দাসত্বের পর আবার যখন রাজনৈতিক স্বাধীনতা পাওয়া গেলো তখন এই জাতির নেতৃত্ব বাদরের মত প্রভুদের সব কিছু অনুকরণের সঙ্গে সঙ্গে তাদের নেতাদের অর্থাৎ প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী, আইন সভার সদস্যদের মত মহা জাক-জমক, চাকচিক্য ও বিলাসিতাও অনুকরণ কোরতে লাগলো। এই অন্ধ অনুকরণের প্রাণান্তকর প্রয়াসে এরা এটুকু ও বুঝলেন না যে যাদের অনুকরণ কোরতে চেষ্টা কোরছেন তারা বিরাট ধনি, তারা পৃথিবীটাকে কয়েক শতাব্দী ধোরে শোষণ কোরে সম্পদের পাহাড়ে বোসে আছে, তারা মহা শক্তিমান, তাদের ঐ আড়ম্বর, জাক-জমক, বিলাসিতা, সাজে, এদের সাজে না, হাস্যকর। এরা অভুক্ত, অর্দ্ধভুক্ত, আধমরা জাতিগুলির নেতা।

না বুঝলেও তারা ক্ষান্ত হোলেন না। পূর্ব প্রভূদের প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীরা যেমন সুসজ্জিত প্রাসাদে বাস করেন এরাও তাই কোরতে লাগলেন। তাদের আইন পরিষদের সদস্যরা যে মানের জীবন-যাপন করে তাই কোরতে লাগলেন। পাশ্চাত্য দেশগুলির জনসাধারণ এই শোষিত জনগণের চেয়ে অর্থনৈতিক দিক দিয়ে বহু উপরে। তাদের পক্ষে তাদের সরকারের ঐ জাক-জমক জোগান দেয়া কঠিন নয়। কিন্তু প্রাচ্যের গরীব জনসাধারণ, যাদের পরনের কাপড় নেই, পেটে খাবার নেই, তাদের পক্ষে তা অসম্ভব। কিন্তু ঐ অসম্ভবকেই তাদের সম্ভব কোরতে হোচ্ছে আরও না খেয়ে থেকে, আরও উলঙ্গ থেকে। আগে না খেয়ে টাকা যোগাতে বেদেশী প্রভুদের, এখন আরও না খেতে থেকে কর দেয় নিজেদের নির্বাচিত সরকারকে। বিদেশী প্রভুদের যত কর দিতো, আজ নিজেদের নেতাদের জাক-জমক, আড়ম্বর বজায় রাখতে তার চেয়ে অনেক বেশী কর দেয়। দেশী নেতাদের পাশ্চাত্যের ঠাট নকল করাও পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সেই সঙ্গে গরীব জনসাধারণের ওপর করের বোঝাও বাড়ছে। হীনমন্যতায় অন্ধ প্রাচ্যের এই জাতিগুলির নেতৃত্ব এ কথা বুঝতে অসমর্থ যে নিজস্ব সত্ত্বা বিসর্জন দিয়ে অন্যের অন্ধ অনুকরণ যারা কোরতে চায় তাদের এটাও হয় না, ওটাও হয় না, তাদের একূল-ওকূল দু'কুলই যায়। তাই তাদের গেছে। পাশ্চাত্যের মত অর্থনৈতিক উন্নতি, তাদের ভাষায় জীবন যাত্রার মান উন্নতি হয়নি, মাঝখান থেকে বিরাট ঋণে পাশ্চাত্যের কাছে বাধা পড়ে গেছে প্রায় প্রত্যেকটি জাতি, দেশ। অন্যদিকে প্রাচ্যের জাতিগুলির যেটুকু নৈতিক চরিত্র গোলামী, দাসত্ব করার পরও অবশিষ্ট ছিলো তাও শেষ হোয়ে আসছে। একই কারণে প্রশাসনিক ব্যাপারেও একই করুণ ব্যর্থতা। যারা দাসত্বের সময়ের প্রশাসন দেখেছেন তাদের বোলতে হবে না, আর যারা দেখেনি তাদের জ্ঞাতার্থে বলা প্রয়োজন যে, জন জীবনের নিরাপত্তা, শান্তি, শৃংখলায় ঐ দাসত্বের যুগ এমন ছিলো যে অনেকের মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসে যে এ স্বাধীনতার চেয়ে ঐ দাসত্বই ভালো ছিলো। নেতৃত্বের এই নকল করার প্রচেষ্টার ফল এই হোয়েছে যে প্রাচ্যের দেশগুলি জীবনের প্রতি ক্ষেত্রে নিম্নগামী, অধঃগামী। উর্দ্ধগামী শুধু তিনটি ক্ষেত্রে, জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে, অপরাধে, খুন-জখম, ইত্যাদিতে আর পাশ্চাত্যের কাছে ঋণের, ধারের, অংকের পরিমাণে।

প্রাচ্যের বিশেষ করে 'মুসলিম(Muslim)' দেশগুলির নেতৃত্ব এই যে উর্দ্ধশ্বাসে ছুটছেন ইউরোপ, আমেরিকার মত শুধু পার্থিব সম্পদের পেছনে এদের সঙ্গে আছে সেই 'শিক্ষিত' শ্রেণীটি যেটি ঔপনিবেশিক শাসকদের প্রবর্ত্তিত শিক্ষা ব্যবস্থায় শিক্ষিত, অর্থাৎ যারা নিজেদের সম্বন্ধে অজ্ঞ, কাজেই বিগত প্রভুদের রাজনৈতিক, আর্থ- সামাজিক ব্যবস্থায় পূর্ণ বিশ্বাসী। যে বিরাট ভাগটা নিরক্ষর, অশিক্ষিত, প্রায় পশু পর্য্যায়ের সেটার নেতাদের নীতি সম্বন্ধে স্বভাবতঃই কোন বক্তব্য নেই। বাকি রইলো 'ধর্মের' ধ্বজাধারী টুপি, পাগড়ীওয়ালা শ্রেণীটি। বিভিন্ন ভৌগলিক রাষ্ট্রে এই শ্রেণীর লোক খুব কম নয়। যার যার দেশে এরা একত্র হোয়ে চাপ সৃষ্টি কোরলে ঐ অন্ধ নেতৃত্ব বাধ্য হতো তাদের নকল করা ছাড়তে। তা হোচ্ছে না, হয়ত হবেও না। কারণ পেছনে বোলে এসেছি ফকিহ ও মুফাসসিরদের বিশ্লেষণ ও ভারসাম্যহীন বিকৃত সুফীবাদের সম্মিলিত ফলে ধর্মের ঐ ধারক-বাহক শ্রেণীটি প্রথমতঃ তুচ্ছ, অপ্রয়োজনীয় ফতোয়া দিয়ে একে অপরের পেছনে লেগে আছেন, কোন্দল কোরছেন, ঐক্যবদ্ধ হোয়ে কোন কাজ এদের দিয়ে সম্ভব নয়। দ্বিতীয়তঃ আকীদা সম্পূর্ণভাবে বিকৃত হবার ফলে এরা অন্তমর্ুখী, নিজেদের নিয়েই এরা অত্যন্ত ব্যস্থ আছেন। মানসিকভাবে পাশ্চাত্যের দাস নেতৃত্ব তাদের জাতিকে কোন গহ্বরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে তা তাদের কাছে কোন প্রয়োজনীয় ব্যাপারই নয় এবং তা বোঝার শক্তিও নেই। ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা ও জ্ঞানের অভাবে এরা এবং জনসাধারণ একথা বুঝতে অক্ষম যে ঐ নেতৃত্ব জাতিকে যেখানে নিয়ে যাচ্ছে তাদেরও ইচ্ছায় অনিচ্ছায় সেখানেই যেতে হবে, অন্য কোথাও তারা যেতে পারবেন না। উট পাখির মত বালুতে মাথা ঢুকিয়ে দিয়ে তারা বাঁচবেন না। যদি নিজেদের জীবন কোন মতে কাটিয়ে যেতেও পারেন, তাদের পরবর্তী বংশধর, তাদের ছেলেমেয়েরা পারবেনা। তারা শিক্ষা, সমাজ ও জীবন ব্যবস্থার চাপে শুধু যে ইসলাম(Islam) থেকে বাইরে চলে যাবে তাই নয়, তারা ইসলাম(Islam) বিরোধী হোয়ে দাঁড়াবে। তারা যদি সন্দিহান হন তবে তাদের নিজেদের ছেলেমেয়েদের দিকে ভালো করে চেয়ে দেখুন। আল্লাহ(Allah) যদি তাদের চোখের দৃষ্টি ও বোধশক্তি সম্পূর্ণভাবে হরণ না কোরে নিয়ে থাকেন তবে তারা দেখতে পাবেন জাতীয় জীবনে ইসলাম(Islam) না থাকলে তাদের আগামী বংশধররাও মুসলিম(Muslim) থাকবে না। বর্তমান দেখে যদি বুঝতে না পারেন তবে নিজের জাতির ইতিহাসের দিকে একবার তাকান, বুঝতে চেষ্টা করুন এই জাতি, উম্মাহ, যাকে আল্লাহ(Allah) নিজে পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ জাতি বোলে বোলেছেন সেই জাতিটা কেন অন্য জাতির ঘৃণ্য ক্রীতদাসে পরিণত হোয়েছিলো কয়েক শতাব্দীর জন্য। তাজাকিস্থান, আজারবাইজান, তাশখন্দ, বোখারা সমরখন্দ এই সমস্ত মুসলিম(Muslim) অধু্যষিত এলাকায় বহু বড় বড় আলেমে দ্বীন ছিলেন, পৃথিবীর অন্য কোন স্থানের চেয়ে ঐ বিরাট এলাকায় 'ইসলাম(Islam)' কম ছিলোনা। কিন্তু এখনকার মত সেই অন্তমর্ুখী। কমুনিষ্টরা যখন জাতির মধ্যে বিশেষ করে যুব সম্প্রদায়ের মধ্যে অনুপ্রবেশ কোরে তাদের চিন্তাধারায় পরিবর্তন আনছে তখন ইসলামের ঐ ধারক বাহকেরা কোরান হাদীস নিয়ে গবেষণা কোরে জ্ঞানগর্ভ বই কেতাব প্রবন্ধ নিবন্ধ লিখেছেন, মনে কোরছেন ইসলামের বিরাট খেদমত কোরছি, আল্লাহ(Allah), রসুল কত খুশী হোচ্ছেন। তারপর হঠাৎ একদিন ঘুম ভাঙলো। কিন্তু তখন আর সময় নাই। হাজারে হাজারে প্রাণ দিয়েও আর ইসলাম(Islam)কে রক্ষা কোরতে পারলেন না। তখন বেশী দেরী হয়ে গেছে। আজ রাশিয়ার ঐসব বিখ্যাত ওলামায়ে দ্বীনের বংশধররা কট্টর নাস্থিক, কমিউনিষ্ট। সেই পাক্কা, দ্বীনদার সাধারণ মুসলিম(Muslim) ও ওলামায়ে দ্বীনের বংশধররা নাস্থিক শিক্ষা ব্যবস্থার ফলে আল্লাহ(Allah), রসুল আর ইসলামের কথা শুনলে বিদ্র্#১২৮;পের হাসি হাসে। খেলাফতের আসন তুর্কী দেশে কামাল পাশা যখন এই উম্মাহর ঐক্যের শেষ যোগসূত্র খেলাফতটাকে ধ্বংস কোরে দিলো তখন ঐ দেশে লক্ষ লক্ষ ওলামায়ে দ্বীন, মশায়েখ, জনসংখ্যার প্রায় একশ ভাগ 'মুসলিম(Muslim)'। সেই একই কারণ। ফকীহ মুফাস্সিরদের আর ভারসাম্যহীন বিকৃত সুফীবাদের সম্মিলিত ফল আকীদার বিকৃতি ও অন্তর্মুখীতা। আকীদার ঐ বিকৃতি ও অন্তর্মুখীতা সমস্ত মুসলিম(Muslim) দুনিয়ায় আজও ঐ রকমই আছে। রাশিয়ার আর তুর্কীর মুসলিম(Muslim)দের মত বাকি দুনিয়ার মুসলিম(Muslim) ও ওলামায়ে দ্বীন, মাশায়েকরাও পার পাবেন না, বাঁচতে পারবেন না, যদি আজও তারা উট পাখির মত বালুতে মাথা ঢুকিয়ে দিয়ে ভাবেন যে, আমি যখন কাউতে দেখতে পাচ্ছি না কাজেই আমাকেও কেউ দেখতে পাচ্ছে না। এই অন্তর্মুখী দৃষ্টিভঙ্গী অথ্যর্াৎ আকীদা যে আল্লাহ(Allah) ও রসুল (দঃ) কতখানে ঘৃণা করেন তা সম্মুখে ইনশাল্লাহ দেখাবো। এখানে শুধু এইটুকু বোলে যাচ্ছি যে, এই অন্তর্মুখীতা বিশ্বনবীর (দঃ) মাধ্যমে প্রেরিত জীবন ব্যবস্থার, দ্বীনের, আকীদার সরাসরি বিপরীত। কাজেই স্বভাবতঃই অন্তর্মুখী মানুষের সমস্ত এবাদত নিষ্ফল। (এমন সময় আসবে যখন মানুষের সারা মাসের রোযা না খেয়ে, অভুক্ত হয়ে থাকা হবে, গভীর রাত্রে উঠে তাহাজ্জুদ নামায পড়া ঘুম নষ্ট করা হবে, হাদীস)।

বর্তমান মুসলিম(Muslim) দুনিয়ার নেতৃত্ব থেকে একটু সরে এসেছি। পাশ্চাত্য সভ্যতার একনিষ্ঠ অন্ধ অনুকরণকারী এই নেতৃত্ব চোখ কান বুজে পাশ্চাত্যের বস্তুতান্ত্রিক অর্থাৎ ভারসাম্যহীন, একপেশে উন্নতির দিকে দৌড়াচ্ছেন। একপাশটা হলো অর্থনৈতিক উন্নতি। এই নেতৃত্ব একটা সোজা কথা বুঝতে পারছেন না, সেটা হলো এই যে, পাশ্চাত্যের মত বস্তুতান্ত্রিক, অর্থনৈতিক সাফল্য লাভ কোরতে গেলে যে চারিত্রিক গুণগুলি প্রয়োজন তার নিম্নতম মানও তাদের শিক্ষিত সংখ্যালঘু অংশেরও নেই অশিক্ষিত সংখ্যাগরিষ্ট অংশের তো নেই-ই। তার প্রমাণ পাশ্চাত্য প্রভুরা চলে যাবার দিনটির চেয়ে আজ প্রাচ্যের মুসলিম(Muslim) দেশগুলির সংখ্যাগরিষ্ট জনসাধারণের জীবনের মান নীচু, শুধু তেল সমৃদ্ধ দেশগুলি ছাড়া। অবশ্য ঐ শিক্ষিত সংখ্যালঘু শ্রেণীর মান কিছুটা উঠেছে কিন্তু সে ওঠার কারণ সত্যিকার অর্থনেতিক উন্নতি নয়। সেটার কারণ হলো এই যে, দেশগুলির নেতৃত্ব ও সরকার পাশ্চাত্যের কাছ থেকে যে বিরাট বিরাট অংকের টাকা ঋণ কোরে এনেছে তার একটা মোটা ভাগ এই শ্রেণীর পকেটে গেছে দুর্নীতি, ঘুষ ও চুরির মাধ্যমে। কেরানী সৃষ্টির শিক্ষা ব্যবস্থা চালু রাখার ফলে যে শিক্ষিত শ্রেণী সৃষ্টি হোয়েছে, হোচ্ছে তা একটি স্বাধীন জাতির পক্ষে, বিশেষ কোরে অনুন্নত দেশের জন্য কোন কাজে আসবে না। কারণ একটি জাতিকে বা দেশকে শুধুমাত্র অর্থনৈতিক উন্নতি কোরতে গেলেও যে কর্মনিষ্ঠা, যে সাধুতা, যে কর্তব্যপরায়নতা একান্ত প্রয়োজন তা এদের মধ্যে নেই। ব্যক্তিগত, দলীয় স্বার্থকে এরা দেশের স্বার্থের ওপরে স্থান দেয়। অলসতা, কাজে ফাঁকি এদের মজ্জাগত হোয়ে গেছে। বড় বড় ব্যাপার বাদ দিন অতি সাধারণ ও মানবিক দায়িত্ব পালনেও এরা ব্যর্থ। যাদের এরা নকল করেন তাদের দেশে কোন অপরাধ ঘটলে দু'থেকে পাঁচ মিনিটের মধ্যে পুলিশ পেঁৗছায় আর এদের দেশে চবি্বশ ঘন্টায়ও পেঁৗছায় না। ও দেশে কোথাও দুর্ঘটনা হোলে কয়েক মিনিটের মধ্যে এ্যাম্বুলেন্স এসে আহতকে তীর বেগে হাসপাতালে নিয়ে যায় এবং এ্যাম্বুলেন্স পেঁৗছার সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তার, নার্স ক্ষিপ্রতার সঙ্গে চিকিৎসা শুরু করে। আর এদের দেশে দুর্ঘটনা ঘটলে এ্যাম্বুলেন্স আসে অনেক চেষ্টা, ডাকাডাকির পর, যদি সেটা অচল হোয়ে পড়ে না থেকে থাকে এবং হাসপাতালে পেঁৗছার সময় অবধি যদি আহত বেঁচে থাকে তবে দু'এক ঘন্টা হাসপাতালের বারান্দায় চিকিৎসা ও পরিচর্য্যাহীন অবস্থায় পড়ে থাকে। ওদেশে সরকারী অফিসে কোন ফাইল আরম্ভ হোলে যথাসম্ভব কম সময়ে তার যা সিদ্ধান্ত হবার তা হয়। এদের দেশে যদি ফাইলটি হারিয়ে না যায় তবে রোজ যেয়ে চেষ্টা করতে হয় তাকে এক টেবিল থেকে অন্য টেবিলে নিতে এবং তা কোরতে কর্মকর্তাদের শুধু দৃষ্টি আকর্ষণ কোরতেই পকেটের পয়সা খরচ কোরতে হয় এবং তারপরও কর্মকর্তা পান চিবুতে চিবুতে বলেন, আপনার কাজটা এখন হোচ্ছে না, ব্যস্থ আছি, আপনি দু'এক মাস পরে খোঁজ কোরবেন। ওদের দেশে ট্রেনের আসা যাওয়া দেখে ঘড়ি মেলানো যায় এদের দেশে ট্রেন ইত্যাদির সময়ের অমিল মিনিটের নয় অনেক ঘন্টার। না, যাদের নকল করা হোচ্ছে আর যারা নকলের চেষ্টায় ওষ্ঠাগত প্রাণ হোচ্ছেন তাদের তফাৎ বোলতে গেলে শেষ নেই। জীবনের প্রতি স্থরে, প্রতি বিভাগে ঐ একই তফাৎ।

পেছনে দু'একবার পাশ্চাত্য জাতিগুলোর কাছে প্রাচ্যের ঋণের কথা উল্লেখ কোরে এসেছি। এ সম্বন্ধে আরও দু'চারটি কথা বলা প্রয়োজন। সন্দেহের কোন অবকাশ নেই যে, প্রাচ্যের দেশ ও জাতিগুলির তুলনায় পাশ্চাত্যের দেশ ও জাতিগুলি অনেক অনেক ধনী। কারণ অনেক আছে, তবে এখন যে বিষয় নিয়ে আলোচনা করছি সে পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান প্রধান হলো ক) পাশ্চাত্যের ছোট বড় প্রায় প্রত্যেকটি দেশ প্রাচ্যের কোন না কোন দেশ, এলাকা সামরিক শক্তি বলে দখল কোরে তাকে কয়েক শতাব্দী ধোরে শোষণ করে বিরাট ধনী ও শক্তিশালী হোয়েছে। খ) খ্রীস্ট ধর্ম, জাতীয় জীবনে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হবার কারণে ওটাকে ব্যক্তি জীবনে নির্বাসন দেওয়ার ফলে পাশ্চাত্যের মানুষের মন ও আত্দা ক্রমশঃ বস্তুতান্ত্রিক ভাবধারায় পূর্ণ হোয়ে গেছে। ধর্ম নিরপেক্ষতার জন্মের ফলে এটা অবশ্যম্ভাবী ছিলো, যেমন আজ প্রাচ্যের মানুষেরও দৃষ্টিভঙ্গি (আকীদা) ঐ দিকেই মোড় নিয়েছে তাদের জীবন দর্শন নকল করার কারণে। পাশ্চাত্যের মানুষের বস্তুতান্ত্রিক হোয়ে যাবার ফলে তাদের জীবনের মুখ্য উদ্দেশ্য হোয়ে দাঁড়িয়েছে এই পার্থিব জীবনটাকে পূর্ণভাবে ভোগ করা। তা কোরতে গেলে অবশ্যই পরিশ্রম কোরে সম্পদ আহরণ কোরতে হবে, কাজেই তারা ক্রমশঃ অতি পরিশ্রমী হোয়ে উঠতে লাগলো, মানুষের মধ্যে উপার্জনের প্রতিযোগিতা শুরু হোয়ে গেলো। এই একনিষ্ঠ পরিশ্রমের সঙ্গে যোগ হলো তাদের বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তির জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা। এই সম্মিলনের ফল আজ যা দেখছেন পাশ্চাত্য জগতে। পার্থিব উন্নতিতে জগতের শীর্ষে। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে মানব জীবনের অন্য পাশর্্ব, আত্দার পাশর্্ব তাদের জীবনে অনুপস্থিত। তাই সারাটা জীবন তারা ভোর থেকে রাত পর্য্যন্ত অবিশ্রান্ত খেটে যায় উপার্জন, আর উপার্জন, আরও উপার্জন কোরে জীবন উপভোগের জন্য। স্বভাবতঃই এর ফল অর্থনৈতিক উন্নতি। আর কারণ আছে, কিন্তু প্রধান কারণ ঐ দু'টি। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর ইউরোপের বিভিন্ন জাতিগুলি যখন প্রাচ্যের দেশগুলি ছেড়ে চলে গেলো তখন নেতৃত্ব ও ক্ষমতা ছেড়ে গেলো তাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় 'শিক্ষিত' একটি শ্রেণীর কাছে একথা পেছনে বোলে এসেছি। এ কথাও বোলে এসেছি যে, এই শ্রেণীটির মন মগজ তারা কিনে নিয়েছিলো। এদের নিজস্ব সত্ত্বা বোলতে কিছুই নেই। পাশ্চাত্যের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামরিক, প্রশাসনিক, শিক্ষা ইত্যাদি সর্বপ্রকার ব্যবস্থাই হোচ্ছে একমাত্র সঠিক ব্যবস্থা, পৃথিবীতে আর কিছুর কোন অস্থিত্ব নেই। স্রষ্টা, আল্লাহ(Allah) ঐ সব ব্যাপারে যে ব্যবস্থা বিশ্বনবীর (দঃ) মাধ্যমে পাঠিয়েছেন তা তাদের কাছে চৌদ্দশ' বছর আগের এক অশিক্ষিত নিরক্ষর বেদুঈন জাতির জন্য প্রযোজ্য হোলেও বর্তমান আধুনিক যুগে অচল, তাই পরিত্যাজ্য। একথা তাদের বিগত প্রভুরাই শিখিয়েছেন, তারা শিখেছেন, তাই বিশ্বাস করেন। আশ্চর্য কি এদের মধ্যে অনেকেই কিন্তু চৌদ্দশ" বছর আগে ঐ বেদুঈনদের জন্য প্রযোজ্য নামায, রোযা, হজ্জ্ব, যাকাত পালন করেন। এর পেছনে যুক্তি কি? যাই হোক, পাশ্চাত্য প্রভুরা চলে গেলো কিন্তু এই স্বস্থিও নিরাপত্তাবোধ নিয়ে গেলো যে, তাদের পরোক্ষ শাসন ঠিকই থাকবে, কারণ যাদের হাতে ক্ষমতা এলো তারা শুধু চামড়ার রংটুকু ছাড়া সর্বোতভাবে পাশ্চাত্যের প্রধিনিধি। এই বাদামী ইংরেজ, কালো ফরাসী আর হলদে ওলন্দাজ স্ে#১৫৮;নীয়রা যখন তাদের অশিক্ষিত নিরক্ষর জাতিগুলিকে শাসন কোরতে আরম্ভ করলো তখন বিগত প্রভুরা বোঝালো যে, তোমরা অতি গরীব (গরীব কিন্তু তারাই কোরেছে, তারা অধিকার করার আগে প্রাচ্যের এই দেশগুলি ঐসব ইউরোপীয় দেশগুলির চেয়ে বহু ধনী ছিলো, এটা ইতিহাস) এখন তোমাদের অর্থনৈতিক উন্নতি কোরতে হবে। কারণ মানব জীবনের মুখ্য, মুখ্য কেন, একমাত্র উদ্দেশ্যই হোচ্ছে সম্পদ অর্জন কোরে জীবনের উপভোগ। কিন্তু অর্থনৈতিক উন্নতি কোরতে গেলে আমাদের মত কল-কারখানা বসাতে হবে। তোমাদের দেশগুলিকে শিল্পায়ন কোরতে হবে। শিল্পায়ন কোরতে গেলে টাকার দরকার হবে। তোমাদের তো টাকা নেই। (টাকা তো আমরা এই কয়েক শতাব্দী ধোরে শুষে নিয়েছি)। কোন চিন্তা নেই, আমরা অত্যন্ত মহানুভব, টাকা আমরা ধার দেবো, তোমরা কল-কারখানা লাগানো শুরু কোরে দাও। পাশ্চাত্যের বিগত প্রভুদের এই মহানুভবতার আসল উদ্দেশ্য ছিলো অন্য। উদ্দেশ্য ছিলো রাজনৈতিক অধিকার ছেড়ে আসতে বাধ্য হোলেও অর্থনৈতিক আধিপত্য অক্ষুন্ন রাখা। সুদখোর মহাজন যেমন মিষ্টি কথায় ভুলিয়ে ধার কর্জ দিয়ে খাতককে ঋণে জর্জরিত কোরে একদিন তার সর্বস্ব নিয়ে নেয় ঠিক সেই উদ্দেশ্য। মানসিকভাবে পাশ্চাত্যের দাস, প্রাচ্যের নেতৃত্ব পাশ্চাত্যের ঐ প্রস্থাব যে প্রত্যাখ্যান কোরবেনা সে সম্বন্ধে কোন প্রশ্নই ওঠে না। তারা ঐ প্রস্থাব লুফে নিয়েছিল তা ইতিহাস। শুধু লুফে নেননি, ইহুদী প্রবর্তিত সুদভিত্তিক ব্যবস্থায় রাজী হোয়ে ঐ ঋণ গ্রহণ কোরেছেন প্রাচ্যের মুসলিম(Muslim) নেতৃত্ব, যারা নামাযও পড়েন, রোযাও রাখেন, হজ্জও করেন কেউ কেউ পীরের মুরীদ এমনকি অনেকের কপালে সাজদার দাগও হোয়ে গেছে। কিন্তু তাদের আসল ইলাহ্ পাশ্চাত্যের প্রভুদের উপদেশও প্রস্থাব কি তারা ফেলে দিতে পারেন? আল্লাহ(Allah) যে সুদ, সুদভিক্তিক সমস্ত অর্থনৈতিক আদান-প্রদান কঠোরভাবে নিষিদ্ধ অর্থাৎ হারাম কোরে দিয়েছেন তা ঐ সব 'মুসলিম(Muslim)' নেতাদের কাছে কোন অর্থই বহন করে না।

যদিও পাশ্চাত্যের ঋণদাতা ধণী দেশগুলির আসল উদ্দেশ্য ছিলো প্রাচ্যের জাতিগুলির গলায় ঋণের সোনার শেকল পড়িয়ে নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং অর্থনৈতিক দাস বানিয়ে রাখা, কিন্তু প্রাচ্যের জাতিগুলি যদি ঐ ঋণের পূর্ণ সদ্ব্য্বহার কোরে তা ঠিকমতো কাজে লাগাতে পারতো তবে অর্থনৈতিক উন্নতি ও তাদের উদ্দেশ্য- জীবন যাত্রার মান উন্নয়ন কোরতে পারতো। কিন্তু সেটাও করা সম্ভব হয়নি। কারণ কিছু পেছনে বোলে এসেছি। এখানে আবার বোলছি। প্রথম কারণ শিক্ষার অভাব। অন্ধ অনুকরণকারী নেতৃত্ব, স্বাধীনতা পাবার পর কেরানী সৃষ্টিকারী শিক্ষাব্যবস্থা বদলিয়ে চরিত্র সৃষ্টিকারী শিক্ষা ব্যবস্থা প্রবর্তন করেননি। কাজেই সে চরিত্র জাতির মধ্যে সৃষ্টি হয়নি যেটা ছাড়া জাতির যে কোন রকমের উন্নতি তো পারের কথা, জাতি টিকেই থাকতে পারে না। কেরানী সৃষ্টির শিক্ষা ব্যবস্থা না বদলানোর ফল এই হোয়েছে যে, পাশ্চাত্য প্রভুরা চলে যাবার সময়ে প্রাচ্যের দেশগুলিতে, বিদ্যালয়গুলিতে যে শৃংখলা, নিয়মানুবর্তিতা, শিক্ষককের প্রতি সম্মান ইত্যাদি ছিলো আজ তার একশ' ভাগের এক ভাগও নেই। এগুলি যার যার দেশের রাজনৈতিক দলগুলির লেজুড়বৃত্তি কোরে বিদ্যালয়গুলিতে দলাদলি, গোলাগুলি, ছুরি মারামারিতে ব্যস্থ। ওটাতো গেলো চরিত্রের কথা, কেরানীকুল সৃষ্টি কোরে ঔপনিবেশিক শাসন ব্যবস্থা চালু রাখার জন্য যে ভাষা, অংক, ভুগোল, বিজ্ঞান ইত্যাদি শিক্ষা দেওয়া হতো আজ তার মানও গোলামী যুগের চেয়ে অনেক নীচে নেমে গেছে, একথা দৃষ্টিসম্পন্ন মানুষের কাছে সত্য। দ্বিতীয় কারণ পাশ্চাত্যের অনুকরণ কোরে তাদের সব কিছুই গ্রহণ করার সঙ্গে সঙ্গে তাদের রাজনৈতিক ব্যবস্থাও গ্রহণ করা। ঐ ব্যবস্থা মানুষের মস্তিষ্কপ্রসূত এবং ইউরোপের সামাজিক, ধর্মীয়, অর্থনৈতিক, মানসিক ও চারিত্রিক পরিবেশে ধীরে ধীরে গড়ে উঠেছে অর্থাৎ বিবর্তনের মধ্য দিয়ে বর্তমানের রূপ পেয়েছে। ঐ ব্যবস্থা প্রাচ্যের নেতৃত্ব তাদের অন্ধ হীনমন্যতায় অপরিবর্তিত রূপে ইংরেজীতে যাকে বলে, Lock stock and barrel তাদের নিজ নিজ দেশ ও জাতিগুলির ওপর চাপালেন। এদের মানসিক দাসত্ব এতো গভীর যে, অশিক্ষিত নিরক্ষর মানুষেরও যে সাধারণ জ্ঞান আক্কেল থাকে সেটুকু ব্যবহার কোরলেও তারা দেখতে পেতেন যে, সম্পূর্ণ ভিন্ন, প্রধানত বিপরীত পরিবেশে যে ব্যবস্থা (System) ঘাত প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে পাশ্চাত্য জগতে গড়ে উঠেছে তা হঠাৎ কোরে প্রাচ্যের জাতিগুলির ওপর চাপালে তা চলবেনা, অবশ্যম্ভাবী পরিণতি হবে বিশৃংখলা, হতাশা। ঠিক তাই হোয়েছে। স্বাধীনতা পাবার পর প্রাচ্যের অধিকাংশ দেশগুলির রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও শাসন ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে ও সেই সব দেশের সামরিক বাহিনীকে শাসনভার হাতে নিয়ে কঠোরতার সাথে শৃংখলা ফিরিয়ে আনতে হোয়েছে। একদিকে চরিত্রহীনতার জন্য কাজে ফাঁকি, কর্মবিমূখতা, ব্যক্তি ও দলগত স্বার্থকে জাতির স্বার্থের ওপরে স্থান দেওয়া ইত্যাদি, অন্যদিকে রাজনৈতিক অস্থিরতা, ঘন ঘন সরকার বদল, আন্দোলন, কথায় কথায় ধর্মঘট ইত্যাদি এই দুই মিলে কোন অর্থনৈতিক পরিকল্পনা, কোন বড় শিল্পায়নকে সুষ্ঠুভাবে কাজে পরিণত কোরতে দেয়নি। কাজেই বিগত প্রভুদের কাছ থেকে বিরাট অংকের ঋণ এনে প্রাচ্যের নেতৃত্ব তাদের কাংখিত জীবন যাত্রার মান উন্নয়ন কোরতে পারেনি, মান আরও নেমে গেছে। মাঝখান থেকে এই দেশগুলির ওপর সুদে আসলে সে অংকের ঋণ দাঁড়িয়েছে তা দেখলে মাথা ঘুরে যায়। বিশ্ব ব্যাংক হিসেব দিয়েছে "উন্নয়নশীল (অর্থাৎ প্রাচ্যের গরীব দেশগুলি) দেশসমূহ পাশ্চাত্যের সরকারী ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠানগুলির কাছে এক লক্ষ কোটি ডলারের ঋণজালে আবদ্ধ হোয়েছে। এক লক্ষ কোটি ডলার কত তা এই ঋণগ্রস্থ দেশের মানুষরা ধারণা কোরতে পারে? এ দেশের টাকায় চলি্লশ লক্ষ কোটি টাকারও বেশী। বিশ্ব ব্যাংকের এ হিসাবটা আজকের নয় ১৯৮৬ সনের। বর্তমানে আরও কয়েক লক্ষ কোটি বেড়েছে। উন্নয়নের ব্যর্থতার জন্য আসল শোধ করা দূরের কথা শুধু সুদটুকুই এই সব দেশ দিতে পারছে না। কাজেই ঋণের অংক লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়ে চলছে। বিগত প্রাশ্চাত্য প্রভুরা যা চেয়েছিলো তা পূর্ণমাত্রায় অর্জন কোরেছে। প্রাচ্যের জাতিগুলির গলায় ঋণের শেকল লাগিয়ে তারা শুধু অর্থনৈতিক দিক দিয়ে নয়, অন্যান্য বহুদিক দিয়ে কতর্ৃত্ব কোরে চোলেছে। তারচেয়েও বড় কথা হোচ্ছে, ঐ অসম্ভব বিরাট অংকের ঋণের বোঝা ঐ নেতাদের ঘাড়ে নয়, ঐ বোঝা আসলে তাদের দেশগুলির জনসাধারণের ঘাড়ে। ঋনের শুধু সুদের একটা অংশ আদায় করার জন্য এই নেতৃত্ব করের ওপর কর, খাজনার ওপর খাজনা আরোপ কোরে চলেছেন, তা সত্ত্বেও ঋণের বোঝা বেড়ে চলছে। এই সব দেশের প্রতিটি মানুষের ঘাড়ে হাজার হাজার টাকার ঋণের বোঝা কিন্তু তারা জানে না। ঐ যে গরীব কৃষক ক্ষেতে হাল দিচ্ছে, সে জানে না যে, যাদের তারা ইউরোপের নকল করা প্রথায় ভোট দিয়ে নেতা নির্বাচিত কোরেছে তারা তার প্রতিনিধি হোয়ে পাশ্চাত্যের কাছ থেকে হাজার হাজার কোটি ডলার, পাউণ্ড ঋণ নিয়েছে। ঐ যে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর অফিস কর্মচারীরা সকাল-সন্ধ্য অফিস যাচ্ছেন আসছেন, ব্যবসায়ীরা ব্যবসা কোরছেন, সবাই বেখরব যে, তাদের প্রত্যেকের মাথার ওপর বিরাট অংকের ঋণ চেপে আছে এবং তা দিতে হবে, আজ হোক আর কাল হোক। আসল বাদ দিন শুধু সুদের একটা ক্ষুদ্র অংশ পরিশোধ করার জন্য জনসাধারণের ওপর নতুন নতুন করা ধরা হোচ্ছে, পুরানো কর ক্রমাগত বৃদ্ধি করা হোচ্ছে। আজ একথা পাশ্চাত্যের মহাজন জাতিগুলি ও প্রাচ্যের খাতক জাতিগুলি উভয়ের কাছেই পরিস্ফুট হোয়ে উঠেছে যে, এইসব অর্দ্ধাহারী, অনাহারী প্রায় উলঙ্গ জাতিগুলির আর সাধ্য নেই ঐ বিরাট ঋণ শোধ করার। এতে অবশ্য মহাজন জাতিগুলির ক্ষতিবৃদ্ধি নেই, তাদের কোন লোকসান হবে না। কারণ ঋণ দেবার সময়ই তারা যেসব শর্ত আরোপ কোরেছিলো এবং গদগদ চিত্তে প্রাচ্যের নেতৃত্ব যে সব শর্ত মেনে নিয়েছিলো তার বদৌলতে ইতিমধ্যেই তারা সুদে আসলে ঋণের টাকা উঠিয়ে নিয়েছে। আজ আসল টাকা না পেলেও তাদের কোন ক্ষতি নেই। কিন্তু কাগজে পত্রে বিরাট টাকা তাদের পাওনা হোয়ে আছে, যার ফলে প্রাচ্যের নেতৃত্ব করজোড়ে মহাজনদের সামনে দাঁড়িয়ে দয়া প্রার্থণা কোরছেন, আরও ঋণ চাইছেন। আরও ঋণ চাইছেন এই জন্য যে, আরও ঋণ না হোলে তাদের চলবে না। ঋণ নিয়ে এবং সে ঋণ সদ্ব্যবহার কোরে উন্নতির বদলে অবনতি হবার ফলে এখন এইসব দেশ এমন পর্য্যায়ে এসে পেঁৗছেছে যে, বৈদেশিক ঋণ ও সাহায্য অর্থাৎ ভিক্ষা না নিলে এদের বাজেট করাই অসম্ভব, সুদের একটা আংশিক পরিশোধও অসম্ভব। তাই বাহ্যত টিকে থাকার জন্যই আরও ঋণ, আরও খয়রাত দরকার। নতুন নতুন ঋণ নিয়ে ঐ ঋণের টাকা দিয়েই কিছু কিছু সুদ এরা শোধ করছেন। কিন্তু নতুন ঋণ নতুন সুদের পাহাড় গড়ে উঠছে, যে ঋণ আসলে যার যার দেশের জনসাধারণের ওপর চাপছে। আজ পাশ্চাত্যের কাছে প্রাচ্যের প্রায় সব কটি দেশের, বিশেষ কোরে মুসলিম(Muslim) দেশগুলির শুধু হাড্ডি-মজ্জা নয় আত্দা পর্য্যন্ত দেনাবদ্ধ হোয়ে গেছে।

এতো গেল বিদেশের কাছে ঋণের ব্যাপারে মাত্র কয়েকটা কথা। বিস্থৃত লিখতে গেলে আলাদা বই হোয়ে যাবে। এখন পাশ্চাত্যের জুডিও খ্রীস্টান সভ্যতার পদতলে লুণ্ঠিত এই মুসলিম(Muslim) নেতৃত্বের অন্য দিকটা দেখা যাক। পেছনে আল্লাহ(Allah)র নবীর (দঃ) একটা হাদীস উল্লেখ কোরে এসেছি, যেটায় তিনি বোলেছেন যে, তার উম্মাহর মধ্যে সর্বদাই একটা দল থাকবে যেটা মানুষকে আল্লাহ(Allah)র পথে আনার চেষ্টা কোরতে থাকবে। অর্থাৎ ঐ দলটিই প্রকৃত ইসলামের আকীদায় থাকবে। ইসলামের উদ্দেশ্য কি বুঝবে এবং বিপথগামী আকীদা উদ্দেশ্যভ্রষ্ট জাতিকে আবার সত্য পথে আনার জন্য জেহাদ কোরতে থাকবে। সত্যই এরা চিরকাল আছেন এবং প্রকৃত দ্বীন থেকে চু্যত জাতিকে আবার সত্য পথে ফিরিয়ে আনতে তাদের প্রচেষ্টা, চাপ কমবেশী সর্বদাই এ জাতির ইতিহাসে রোয়েছে। এ চাপ সম্বন্ধে বর্তমান মুসলিম(Muslim) দুনিয়ার নেতৃত্ব সজাগ আছে এবং সর্বতোভাবে তার মোকাবিলা কোরছে। এদের এই মোকাবিলার উপায় আলোচনা কোরছি। প্রথম উপায় হলো প্রকৃত ইসলাম(Islam) সম্বন্ধে জ্ঞানহীন অশিক্ষিত জনসাধারণকে ফাঁকি দেওয়ার জন্য বাহ্যিক, অপ্রয়োজনীয় কাজ কোরে দেখানো যে নেতারাও অতি উৎকৃষ্ট মুসলিম(Muslim)। যেমন মসজিদ তৈরী ও মেরামতের জন্য কিছু কিছু টাকা পয়সা বরাদ্দ করা, টাকার নোটে মসজিদ ইত্যাদির ছবি ছাপানো, শুক্রবার ছুটির দিন ঘোষণা করা ইত্যাদি। ইংরাজিতে যাকে বলা হয় Window dressing বাইরে রং লাগিয়ে চকমকে কোরে মানুষকে ধোকা দেওয়া। এই ধোকা দেওয়ার সর্বাধুনিক প্রক্রিয়া হোচ্ছে ইসলাম(Islam)কে রাষ্ট্রধর্ম (State religion) ঘোষণা দেওয়া। এতে বুনিয়াদী কোন পরিবর্তন হয় না, মোশরেকী ও কুফরী রাষ্ট্র ব্যবস্থা পুরোপুরি বহাল থাকে, কিন্তু আকীদাচু্যত অজ্ঞ জনসাধারণ খুব ইসলাম(Islam) হোচ্ছে মনে কোরে মহা খুশী থাকে, তাদের সরকারগুলিকে অতি ধার্মিক সরকার মনে করে এবং সমর্থন দেয়। একটি বৃহৎ মুসলিম(Muslim) রাষ্ট্রের সমাজতান্ত্রিক নেতা একবার প্রচণ্ড গণবিক্ষোভ মোকাবিলা কোরলেন শুক্রবারকে ছুটির দিন ঘোষণা কোরে এবং পবিত্র কাবার এমাম সাহেবকে দেশে নিয়ে এসে শহরে শহরে জুমার নামাযের এমামতি কোরিয়ে। অবশ্য তিনি শেষ রক্ষা কোরতে পারেননি, কারণ তখন অনেক দেরী হোয়ে গিয়েছিলো। দ্বিতীয় উপায় হলো যার যার দেশের রাজনৈতিক দলগুলির, যেগুলির মূলনীতি পাশ্চাত্য থেকে আমদানী করা, অর্থাৎ ধর্মনিরপেক্ষ ও ধর্মবিরোধী তাদের ঐ জেহাদী দলটির বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেওয়া। তাদের মধ্যে সংঘর্ষ লাগিয়ে দেওয়া। সম্ভব হোলে তাদের দিয়েই এদের দমন করা। তাতেও যদি না হয় তবে তারা তৃতীয় উপায় অবলম্বন করেন। সেটা হলো এই প্রকৃত দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রামীদের গ্রেফতার করা, তাদের ওপর লাঠি, গুলি চালানো, তাদের ফাঁসিতে ঝোলানো। বর্তমান মুসলিম(Muslim) দুনিয়ার নেতৃত্ব অজ্ঞ জনসাধারণকে বোকা বানানোর চেষ্টায় জনসভায় বক্তৃতা দেন- ইসলাম(Islam) শুধু সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্মই নয় এটা পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা (পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা হোলে অবশ্যই তাতে রাজনৈতিক, আর্থ-সামাজিক, আইন, দণ্ডবিধি, প্রশাসন ও শিক্ষা ব্যবস্থা থাকতে হবে- এটা সাধারণ জ্ঞান) এবং একমাত্র ইসলাম(Islam)ই দুনিয়াতে শান্তি আনতে পারে। বক্তৃতা শুনে মুর্খ জনতা হাতহালি দেয়, নেতাদের নামে জিন্দাবাদ দেয় আর মনে করে তারা উৎকৃষ্ট মুসলিম(Muslim) নেতৃত্বের অধীনে আছে। নেতারা বক্তৃতা সভা শেষে তাদের সচিবালয়ে ফিরে গিয়ে দেশ পরিচালনা করেন তাদের পূর্ব প্রভুদের শেখানো শেরক ও কুফরী ব্যবস্থা অনুযায়ী। নিদারুণ পরিহাস এই যে, একদা দুনিয়ার শিক্ষক এই জাতি ফকীহ মুফাস্সির আর দ্বীনি আলেমের কার্য ফলে অশিক্ষা আর মুর্খতার এমন স্থরে নেমে গেছে যে, নেতাদের ঐ পরিষ্কার মোনাফেকীটুকু বোঝার মত সাধারণ জ্ঞানটুকুও লোপ পেয়েছে। ছোট ছোট জেহাদী দলগুলি যারা মুসলিম(Muslim) দুনিয়ার সমস্ত ভৌগলিক রাষ্ট্রগুলিতে আছে এবং সেই রাষ্ট্রগুলিকে ইসলামী রাষ্ট্রে পরিনত করার চেষ্টা কোরছে তাদের চেষ্টার ফলে আল্লাহ(Allah)র রহমে আজ আটলান্টিকের তীর থেকে ফিলিপাইন পর্য্যন্ত একটা জীবনের স্#১৫৮;ন্দন অনুভূত হোচ্ছে। কিন্তু এটা যথেষ্ট নয়। প্রশ্ন হোচ্ছে এদের প্রচেষ্টায় আরও দ্র্#১২৮;ত ফল হোচ্ছে না কেন? গংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম(Muslim) দেশে এরা এত বাধা পাচ্ছেন কেন? এর উত্তর হোচ্ছে- ক) এদের বিরুদ্ধ শক্তিগুলি অর্থাৎ ধর্মনিরপেক্ষ, ধর্মবিরোধী মোশরেক ও নাস্থিক শক্তিগুলি নিজেদের মধ্যে যত মতবিরোধই থাক না কেন, যখন ইসলামের বিরোধীতার প্রশ্ন উঠে তখন তারা একতাবদ্ধ হোয়ে দাঁড়ায়। অপরদিকে মুখে তাওহীদ, এক আল্লাহ(Allah)র ওয়াহদানীয়াতে বিশ্বাসী, এক রসুল (দঃ), এক কেতাবে বিশ্বাসী বোলে দাবীদার তথাকথিত মুসলিম(Muslim)রা ঐ গায়রুল্লাহর শক্তির বিরুদ্ধে কখনই একতাবদ্ধ হোয়ে দাঁড়ায়নি। আল্লাহ(Allah)র দেয়া দ্বীনের বিরুদ্ধ শক্তিগুলিও যে ঐক্যবদ্ধ তা নয়, তারাও কেউ গণতন্ত্রে অর্থাৎ সংখ্যাগরিষ্ঠের সার্বভৌমত্বে বিশ্বাসী, কেউ জনগণের কোন বিশেষ কোন শ্রেণীর সার্বভৌমত্বে, কেউ একনায়কত্বে, কেউ রাজতন্ত্রের সার্বভৌমত্বে বিশ্বাসী। কিন্তু ইসলামের বিরোধীতার প্রশ্নে তারা এক। আর এক আল্লাহ(Allah)র সার্বভৌমত্বে বিশ্বাসের দাবীদার মুসলিম(Muslim)রা এক হোয়ে দাঁড়াতে অসমর্থ। এরা অতি ধুমধামে নামায, রোযা, হজ্জ্ব, প্রচুর নফল নামায, দাড়ী, টুপি, যেকের আজকার, সর্বপ্রকার এবাদতে এতো মশগুল যে, তাদের আল্লাহ(Allah) যে বোলেছেন তোমরা সকলে একত্র হোয়ে আমার দেয়া দড়ি (অর্থাৎ দ্বীন) আকড়ে ধর এবং নিজেরা বিচ্ছিন্ন হোয়োনা (কোরান- সূরা আলে ইমরান ১০৩)। ও কথার কোন দাম দেবার সময় নেই। সার্বভৌমত্ব অর্থাৎ একেবারে বুনিয়াদী প্রশ্নেই যারা বিভক্ত তারাও ইসলামের বিরুদ্ধে একতাবদ্ধ হোয়ে দাঁড়ায়, আর যারা তার স্বরে আল্লাহ(Allah)র ওয়াহদানিয়াত ঘোষণা করেন- লা ইলাহ ইল্লাল্লাহর যিকর কোরে পাড়া প্রতিবেশীর ঘুম নষ্ট করেন, তারা সেই এক আল্লাহ(Allah)র নামে একতাবদ্ধ হোতে পারেন না। কী নিদারুণ পরিহাস। আকীদার বিকৃতির কি ঘৃণ্য পরিণতি। এ পরিণতিও সেই কোরান হাদীসের অর্থের অতি বিশ্লেষণের ফলে জাতির বহুধা বিভক্তি ও ভারসাম্যহীন আধ্যাত্দবাদের অন্তর্মুখীতার পরিণতি, আকীদার বিকৃতি।

মুসলিম(Muslim) জাতির নেতৃত্বের বথা বোলছিলাম। আরও বলার দরকার আছে। কারণ ইহুদী খ্রীস্টান সভ্যতার গোলাম হয়ে এই অন্ধ নেতৃত্ব তাদের যার যার দেশের অশিক্ষিত ক্ষুধার্ত জনগণকে কোথায় টেনে নিয়ে যাচ্ছেন তা অবশ্যই অতি গুরুত্বপূর্ণ। তারা অবশ্যই জান্নাতের পানে নিয়ে যাচ্ছেন না, একথা আহম্মকও বোলবে না। কারণ তাদের ঘোষিত উদ্দেশ্যই হোচ্ছে উন্নত দেশগুলির মত জীবন যাত্রার মান উন্নয়ন। সোজা কথায় উন্নত অর্থাৎ পাশ্চাত্য জাতিগুলির জীবন দর্শন অনুসরণ করা, যে দর্শন হোচ্ছে উদয়াস্থ কঠিন পরিশ্র্রম কোরে প্রচুর সম্পদ আহরণ কর ও প্রাণ ভরে জীবন ভোগ কর। এটা যে তারা কখনো পারবেন না তা কারণসহ পেছনে বোলে এসেছি। ঐ চেষ্টা কোরতে যেয়ে বিরাট অংকের টাকা ধার কোরে আজ এমন অবস্থায় এসে পেঁৗছেছেন যে, তারা যদি উন্নয়নের কোন প্রচেষ্টা না কোরতেন, কোন টাকা ধার না কোরতেন তবে এই দেশগুলির অর্থনৈতিক অবস্থা বর্তমানের চেয়ে ভালো থাকতো । অন্ততঃ এখনকার মত প্রতিটি মানুষের মাথার ওপর হাজার হাজার টাকার ঋণের বোঝা থাকতো না। তর্কের খাতিরে যদি ধোরে নেই যে, বর্তমান 'মুসলিম(Muslim)' দুনিয়ার নেতৃত্ব সফলকাম হোলেন অর্থাৎ তাদের দেশগুলিতে পশ্চিমের উন্নত দেশগুলির মত ধনী বানিয়ে দিলেন, তাহোলে কী হবে? ঐ দেশগুলি উন্নত শুধু একটি দিক দিয়ে- বস্তুতান্ত্রিক দিক দিয়ে, ঘর-বাড়ী, গাড়ী, প্লেন, টিভি, ওয়াশিং মেশিন, আরাম আয়েশের দিক দিয়ে, জীবন উপভোগের দিক দিয়ে। মানবজীবনের অপর দিকের প্রতি তারা অন্ধ। আল্লাহ(Allah)র দেয়া জীবন ব্যবস্থা ত্যাগ কোরে তারা নিজেরা জীবন বিধান তৈরী কোরে নিয়েছে। সেই একপেশে ভারসাম্যহীন জীবন বিধান, দ্বীনের অবশ্যম্ভাবী পরিণতিতে বস্তুতান্ত্রিক ও প্রযুক্তি বিজ্ঞানে উন্নতির ফল হিসাবে তারা আজ এমন ভয়াবহ অস্ত্র তৈরী কোরেছে যা দিয়ে সমস্ত মানব জাতিকে কয়েক ঘন্টার মধ্যে পৃথিবীর বুক থেকে মুছে ফেলা যায়। পারিবারিক ও ব্যক্তিগত নৈতিক অবস্থা আরও মর্মান্তিক। জাতীয় জীবন থেকে ধর্মকে নির্বাসন দেবার পর থেকে যে পতন আরম্ভ হোয়েছে তা এমন পর্য্যায়ে এসে পেঁৗছেছে যে, আজ পাশ্চাত্যে পারিবারিক বন্ধন প্রায় অনুপস্থিত, যৌন নৈতিকতা ধরতে গেলে কিছুই নেই। চৌদ্দ পনের বছরের অবিবাহিতা মেয়েদের মধ্যে শতকরা ৬০ থেকে ৭০ জনের সতীত্ব নেই। প্রতি তিনটি সদ্য প্রসূত শিশুর মধ্যে একটা জারজ। এসব হিসাব তাদেরই করা, আমার নয়। খুন, জখম, ছিনতাই ইত্যাদি অপরাধের হার এখনও গরীব দেশগুলির তুলনায় অনেক বেশী। প্রাচ্যের বিশেষ কোরে 'মুসলিম(Muslim)' দেশগুলির বর্তমান নেতৃত্ব উর্দ্ধশ্বাসে ছুটে চলেছেন যার যার দেশের অশিক্ষিত সরল অজ্ঞ জনসাধারণকে নিয়ে ঐ আত্দাহীন নারকীয় সভতার দিকে। আল্লাহ(Allah)র দেওয়া জীবন ব্যবস্থার উদ্দেশ্য হলো শান্তি, তাই এর নাম ইসলাম(Islam) (শান্তি)। শুধু অর্থনৈতিক উন্নতিতে শান্তি আসবে না। তা আসলে আজ সবচেয়ে ধনী ইউরোপ, আমেরিকা, জাপানে মহাশান্তি বিরাজ করতো। তা কোরছে না। প্রতি রকমের জঘণ্য অপরাধে ডুবে আছে তো বটেই তার ওপর যে কোন মুহ র্তে পারমাণবিক বোমায় মৃতু্যর ভয়ে মানুষ ঘুমাতে পারছে না। ওদের কথা না হয় বাদ দিলাম, এই মুসলিম(Muslim) দুনিয়ায়ই একটা অংশ তো তেলের বদৌলতে পাশ্চাত্যের মত ধনী হোয়ে গেছে। তারা তো টাকা রাখবার জায়গা না পেয়ে তাদের মহামূল্যবান গাড়ীগুলিকে পর্য্যন্ত সোনার পাত দিয়ে মুড়ে রেখেছে। তাতে আল্লাহ(Allah)র কী হোয়েছে? রসুলাল্লাহর (দঃ) বা কী হোয়েছে? যে জন্য মুসলিম(Muslim) জাতিরই সৃৃষ্টি হোয়েছে সেই উদ্দেশ্য অর্জন করাতো দূরের কথা, ঐ বিপুল সম্পদ দিয়ে, এলাকায় ও জনসংখ্যায় চলি্লশ গুণ বেশী হোয়েও ছোট্ট ইসরাইলের লাথি খেতে খেতে তাদের নাভিশ্বাস উঠে গেছে। তাহোলে বাকি মুসলিম(Muslim) দুনিয়ার নেতৃত্ব কোন অর্থনৈতিক উন্নয়নের পেছনে পড়ি কি মরি হোয়ে ছুটছেন?

পাশ্চাত্যের ঋণ দেবার প্রস্থাবে এই নেতৃত্ব গদ গদ চিত্তে যে সোনার শেকল নিজেদের গলায় নিলেন এবং যার যার দেশের জনগণের গলায় পড়ালেন সে শেকল শুধু যে সুদের পর্বত তৈরী কোরে অর্থনৈতিক দাসত্ব চাপিয়ে দিয়েছে তাই নয়, জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রেও ঐ শেকল কম প্রভাব বিস্থার করেনি। ঋনাবদ্ধ খাতকের জীবনে মহাজনের প্রভাব কতখানি তা ভুক্তভোগী ছাড়া অন্যে সম্পূর্ণভাবে বুঝবে না। মহাজনকে খুশী রাখতে খাতককে কতদূর যেতে হয় তা যে কোন একজন খাতকতে জিজ্ঞাসা করুন। ঋণগ্রস্থ এমন খাতককে বৃদ্ধ মহাজনের মন রক্ষার জন্য কিশোরী মেয়েকে তার কাছে বিয়ে দিতে হোয়েছে এমন খবর আমার মত অনেকেই খবরের কাগজে পড়েছেন। ঋণ রাষ্ট্রীয় পর্য্যায়েও তাই। খাতক রাষ্ট্রগুলিকেও ইচ্ছায় অনিচ্ছায় মহাজন রাষ্ট্রগুলির বহুবিধ ইচ্ছাকে পূরণ কোরতে হয় তাদের খুশী রাখার জন্য। ঐসব বহুবিধ ইচ্ছার মধ্যে একটা অতি প্রয়োজনীয় হোচ্ছে এইসব গরীব খাতক দেশে খ্রীস্টধর্ম প্রচার। এটা এজন্য নয় যে, তারা অতি উৎকৃষ্ট খ্রীস্টান। উৎকৃষ্ট খ্রীস্টান তারা মোটেই নয়, উদ্দেশ্য হলো রাজনৈতিক। ইতিপূর্বে যখন তারা সামরিক শক্তিতে প্রাচ্য অধিকার কোরে নিয়েছিলো তখন তাদের সামরিক বাহিনীগুলির পেছনে পেছনে এসেছিলো পাদরীর দল। পাশ্চাত্যের ঐ দখলকারী রাষ্ট্রগুলি ঐ পাদরীদের সর্বতোভাবে সাহায্য করেছে খ্রীস্টধর্ম প্রচার কাজে। তাদের প্রচার কাজে সরকারী ভাবে সাহায্য করেছে, তাদের জন্য স্কুল দিয়েছে, ঐসব স্কুলে ভর্তি হতে বাধ্য করার জন্য দেশী বিদ্যালয়, মাদ্রাসা ইত্যাদি বন্ধ কোরে দিয়েছে। তারপর রাষ্ট্রীয় পর্য্যায়ে আর্থিক সাহায্য তো আছেই। উদ্দেশ্য হোচ্ছে এই সব দেশের মানুষকে খ্রীস্টান বানিয়ে ফেলতে পারলে তাদের প্রভুত্ব চিরস্থায়ী হোয়ে যাবে। আর সবাইকে না পারলেও একটা উল্লেখযোগ্য অংশকে ধর্মান্তরিত কোরতে পারলে ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক ভাবে ঐ অংশ তাদের পক্ষে থাকবে। দুই শতাব্দী পর্য্যন্ত তারা যথাসাধ্য চেষ্টা চালিয়েছে, অধিকৃত দেশগুলিতে খ্রীস্টধর্ম প্রচার ও প্রতিষ্ঠার জন্য কিন্তু খুব বেশী কৃতকার্য হয়নি। এর বিস্থৃত বিবরণ এখানে সম্ভব নয়। এখানে যতটুকু প্রয়োজন সেটা হলো এই যে, এই অধিকৃত দেশগুলিতে স্বাধীনতা দিয়ে চলে গেলেও সে সব দেশে তাদের প্রভাব ও প্রতিপত্তি সাংস্কৃতিক অনুপ্রবেশ অক্ষুন্ন রাখা রাজনৈতিকভাবে প্রয়োজন। এইখানে ঐ ঋণের সোনার শেকল অত্যন্ত কাজে এসেছে। সংক্ষেপে ঔপনিবেশিক সময়ের চেয়ে আজ প্রাচ্যের এইসব দেশে খ্রীস্টান ধর্ম প্রচারকারীদের সংগঠন তাদের নিয়ন্ত্রণাধীনে শিক্ষালয়, নতুন নতুন চার্চ প্রতিষ্ঠা ইত্যাদি সব দিকে দিয়ে তাদের কর্মতৎপরতা গোলামী যুগের চেয়ে অনেক বেশী, অনেক সাফল্যমণ্ডিত। জনকল্যাণের নামে, ঝড় বন্যা ইত্যাদি প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে সাহায্যের নামে তারা তাদের আসল কাজ কোরে যাচ্ছে, তাদের পেছনে তাদের রাষ্ট্রের আর্থিক সাহায্যে তো আছেই আরও আছে কূটনৈতিক সাহায্য। অনেক দেশে খ্রীস্টান যাজকদের এবং তথাকথিত জনকল্যাণ সংস্থাগুলির আসল উদ্দেশ্য সম্বন্ধে সচেতন লোকেরা বুঝে তার বিরুদ্ধে কাগজে কলমে অনেক লেখালেখিও কোরেছেন, পরিসংখ্যান দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন যে ওদের আসল মতলব কি। কিন্তু কোথাও কোন ফল হয়নি, হবেও না। কারণ গলায় ঋণের সোনার শেকল নিয়ে মহাজনের বিরুদ্ধে যাওয়া যায় না, গেলে বিপদ আছে। অর্থাৎ প্রাচ্যের এই মন মগজ বিক্রি করা নেতৃত্ব তাদের পূর্ব প্রভুদের পক্ষ হোয়ে তাদের যার যার দেশের মানুষদের খ্রীস্টান করার কাজে সাহায্য কোরছেন। ফলও হোয়েছে। ইউরোপ আমেরিকার রাষ্ট্রগুলি যেদিন প্রাচ্যের রাষ্ট্রগুলি ছেড়ে যায় সেদিন এই দেশগুলিতে খ্রীস্টানদের যে সংখ্যা ছিলো আজ তা থেকে অনেক বেশী। দু'টি বৃহত্তম মুসলিম(Muslim) দেশের নেতা শুধু যে নামাযী তাই নন, দুজনেই পীরের মুরীদ এবং নিয়মিত পীরের দরবারে হাযিরা দেন। এদের একজন জনসংখ্যার দিকে দিয়ে দুনিয়ার বৃহত্তম মুসলিম(Muslim) দেশের প্রধান, প্রেসিডেন্ট। গত ১৯৭০ সনে তার দেশের মুসলিম(Muslim) জনসংখ্যা ছিলো শতকরা পচানব্বই (৯৫) জন। ১৯৮৬ সনে তা এসে দাঁড়িয়েছে শতকরা আশী (৮০) জনে। ঐ শতকরা ১৫ জন খ্রীস্টান হোয়ে গেছে। ঐ অতি উৎকৃষ্ট মুসলিম(Muslim) (বর্তমান ইসলামের বিকৃত আকীদায় তাকে অবশ্যই অতি উৎকৃষ্ট মুসলিম(Muslim) বোলতে হবে, কারণ তিনি শুধু নামাযী ইত্যাদিই নন, তাসাওয়াফ অনুশীলনকারী মুরীদও) প্রেসিডেন্টের দেশে প্রকাশ্যে ইসলাম(Islam) প্রচার করা নিষিদ্ধ, জাতীয় রেডিও ও টেলিভিশনে ইসলাম(Islam)ও খ্রীস্টধর্মের জন্য সমান সময় দেয়া হয় (লণ্ডল থেকে প্রকাশিত মাসিক এরাবিয়া- মে ১৯৮৬)। দ্বীনের পুনর্জাগরণের জন্য যারা চেষ্টা করেন তাদের গ্রেফতার, জেল, বুলেট তো অন্যান্য মুসলিম(Muslim) দেশগুলির মতই। দ্বিতীয় দেশটির সঠিক পরিসংখ্যান আমার জানা নেই, কিন্তু অবস্থা যে প্রায় একই তাতে সন্দেহ নেই। এবং ইনিও পীরের মুরীদ, নিয়মিত দরবারে হাজিরা দেন। প্রতি জুমায় ওয়াজ করেন, ইহুদী দাড়ীওয়ালা টুপি পড়া মুসল্লীরা নিবিষ্ট চিত্তে তা শোনে (ইনি বর্তমানে ক্ষমতায় নেই, কারাগারে আছেন)। এর দেশেও আজ খ্রীস্টান সংখ্যা চলি্লশ বছর আগের চেয়ে অনেক বেশী। এক কথায় ইউরোপীয়ান রাষ্ট্র্রগুলি তাদের দু'শ বছরের সরাসরি শাসনে খ্রীস্টধর্ম প্রচারে যতখানি সাফল্য লাভ কোরতে পেরেছিলো তার চেয়ে বেশী সাফল্য লাভ কোরেছে নামাযী পীরের মুরীদ অতি উৎকৃষ্ট 'মুসলিম(Muslim)' নেতাদের মাধ্যমে।

বর্তমান মুসলিম(Muslim) বিশ্বের নেতৃত্ব যে মোশরেক ও মোনফেক একথার আরো প্রমাণ চাই? আছে। আরো বহু প্রমাণ আছে। কিন্তু বই বহু বড় হোয়ে যাবে। এই নেতৃত্ব সম্বন্ধে আল্লাহ(Allah) কি বোলছেন তা উল্লেখ কোরছি। আল্লাহ(Allah) কোরানে বোলছেন- আল্লাহ(Allah) যা নাযেল অর্থাৎ অবতীর্ণ কোরেছেন যারা তা অনুসারে আদেশ দেয় না তারা কাফের, যালেম এবং ফাসেক (কোরান- সূরা আল মায়েদা- ৪৪, ৪৫, ৪৭)। এই কথাটাকে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ তা বোঝাবার জন্য আল্লাহ(Allah) কথাটা ভেঙ্গে ভেঙ্গে তিনটি আয়াতে বোলেছেন, অর্থাৎ একই আয়াত বোলে শুধু শেষ শব্দটি এক আয়াতে কাফের দ্বিতীয় আয়াতে যালেম ও তৃতীয় আয়াতে ফাসেক শব্দ ব্যবহার কোরেছেন। যদিও আয়াত তিনটি ইহুদী ও খ্রীস্টানদের সম্বন্ধে বলা হোয়েছে কিন্তু উদ্দেশ্য যে বিশ্বজনীন এবং মুসলিম(Muslim)দের জন্যেও বুনিয়াদী নীতি হিসাবে প্রযোজ্য তা মিশরের মোহাম্মদ কুতুবসহ বহু পণ্ডিত আলেম এবং মোফাস্সিররা স্বীকার কোরেছেন। কারণ শেষ নবীর (দঃ) মাধ্যমে শেষ জীবন ব্যবস্থা, দ্বীন প্রেরিত হবার পর পূর্ববর্তীগুলো মনসুখ, বাতিল করা হওয়ায় "আল্লাহ(Allah) যা নাযেল অবতীর্ণ কোরেছেন" বোলতে এখন শুধু কোরানকেই তিনি বোঝাচ্ছেন। এই আয়াত তিনটি জাতীয় নেতৃত্বের উদ্দেশ্যে নাযেল হোয়েছে। কারণ আল্লাহ(Allah) শব্দ ব্যবহার করেছেন হুকুম যে শব্দটি আদেশ ও বিচার উভয়ই বুঝায়। সাধারণ জ্ঞানেই বোঝা যায় যে আদেশ ও বিচার অবশ্যই নেতৃত্বের হাতে, নেতৃত্বের ব্যাপার। অর্থাৎ নেতৃত্ব ও শক্তি ক্ষমতা হাতে পাওয়ার পরও যারা আল্লাহ(Allah) যা নাযেল কোরেছেন অর্থাৎ কোরান হাদীস মোতাবেক আদেশ দেয় না, সেই মোতাবেক আদালতে বিচার করেনা, ও সর্ববিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয় না তারা কাফের, যালেম ও ফাসেক। অর্থাৎ বর্তমান মুসলিম(Muslim) দুনিয়ার নেতৃত্বকে কাফের, যালেম ও ফাসেক (আল্লাদ্রোহী) একথা আমি বোলছিনা, আল্লাহ(Allah) বোলছেন। ঐ হুকুম অর্থাৎ আদেশ ও বিচার যে ইহুদী ও খ্রীস্টানদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় এই উম্মতের জন্যও তা আল্লাহ(Allah) বোলছেন ঐ তিন আয়াতের পরই অর্থাৎ ৫১ নং আয়াতে। ঐ আয়াতে আল্লাহ(Allah) তার রসুলকে (দঃ) আদেশ কোরেছেন এই কেতাব মোতাবেক আদেশ ও বিচার কর (কোরান- সূরা আল মায়েদা ৫১)। এতো গেলো আল্লাহ(Allah)র কথা। তার শেষ নবী (দঃ) বোলছেন যারা (তার তথাকথিত উম্মতের মধ্যে) অন্য যে জাতির অনুকরণ অনুসরণ কোরবে তাদের ঐসব জাতির মধ্যে গণ্য করা হবে এবং তাদের হাশরও তাদের সাথেই হবে [হাদীস- এবনে ওমর (রাঃ) থেকে আহমদ, আবু দাউদ, মেশকাত]। কতকগুলি ব্যক্তিগত নিয়ম কানুন আর কতকগুলি প্রাণহীন অনুষ্ঠান ছাড়া জাতীয় সব কিছুতেই অর্থাৎ রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, আইন, দণ্ডবিধি ইত্যাদি প্রতিটি বিষয়েই আল্লাহ(Allah)র সরাসরি আদেশ নির্দেশ অমান্য কোরে বর্তমান নেতৃত্ব ও জনসাধারণ পাশ্চাত্যের অন্ধ অনুকরণ কোরছে। আল্লাহ(Allah) ও তার রাসুলের (দঃ) কথানুযায়ী এরা কাফের, যালেম ও ফাসেক এবং হাশরের দিন ইহুদী ও খৃৃষ্টানদের দলভুক্ত হোয়ে দাঁড়াবে যাদের তারা প্রাণপনে নকল কোরছে। শুধু তাই নয়। আল্লাহ(Allah)র দেওয়া জীবন ব্যবস্থা দ্বীন প্রতিষ্ঠা না করার ফলে যে অবিচার, অন্যায়, চুরি, খুন, যখম, অনাহার, অশিক্ষা, কুশিক্ষা ইত্যাদি মানুষের মধ্যে সংঘটিত হোয়েছে, হোচ্ছে, হবে এর প্রত্যেকটির জন্য হাশরের দিন দায়ী হবে এই নেতৃত্ব যেটা ক্ষমতা হাতে পেয়েও এই দ্বীন প্রতিষ্ঠা করেনি, যা কোরলে এ সমস্ত লুপ্ত হোয়ে যেয়ে মানুষ শান্তিতে (ইসলামে) বাস কোরতে পারতো।

এই অবস্থায় স্বভাবতই যে প্রশ্নটি মনে আসে তাহলো এই যে, পাশ্চাত্যের হাতে গড়া শ্রেণীটির হাতে শাসন ক্ষমতা দেওয়া হলো এবং তারা তাদের অসীম হীনমন্যতায় আল্লাহ(Allah)র দেওয়া জীবন ব্যবস্থাকে ত্যাগ কোরে তাদের পুর্ব প্রভুদের সমস্ত রকম ব্যবস্থাই অক্ষুন্ন রেখে তাদের পক্ষ হোয়ে শাসন চালিয়ে যেতে লাগলেন আজ ৩০/৪০ বছর ধোরে;এর বিরুদ্ধে দুনিয়ার বিভিন্ন 'মুসলিম(Muslim) দেশগুলিতে অভূত্থান, বিদ্রোহ হলো না কেন? আল্লাহ(Allah)র কথা মোতাবেক কাফের, যালেম ও ফাসেক নেতৃত্ব বহাল তবিয়তে তাদের প্রভুদের কাছ থেকে শেখা কুফর ও শেরক শাসন চালিয়ে যাচ্ছে তাদের ওপর যারা অকপটে শুদ্ধ হৃদয়ে আল্লাহ(Allah) রসুল ও ইসলামে বিশ্বাস করে, বিশ্বাস করে তারা উম্মতে মোহাম্মদী। এ অদ্ভুত অবিশ্বাস্য অবস্থার কারণ আংশিকভাবে পেছনে বোলে এসেছি। আল্লাহ(Allah)র ও রসুলের (দঃ) আদেশ অমান্য কোরে মুফাস্সির, ফকীহ ইত্যাদিরা যখন এই সহজ সরল দ্বীন (সেরাতুল মুস্থাকীম) কে বিশ্লেষণ কোরতে কোরতে এক জটিল দুর্বোধ্য দ্বীনে পরিণত কোরলেন তখন ঐ কাজের ফলে এই জাতি বহু মযহাবে ও ফেরকায় বিভক্ত হোয়ে যেয়ে এক নিবীর্য, অক্ষম, অপদার্থে পরিণত হলো। জাতি হোক, গোষ্ঠী হোক, পরিবার হোক, একটা সামরিক বাহিনী হোক, যাই হোক বিভক্তি ও অনৈক্য আসলেই সেটা অকেজো হোয়ে যায়, এটা চিরন্তন সত্য, এর কোন ব্যতিক্রম নেই। তারপর ভারাসাম্যহীন সুফী মতবাদ ঐ অক্ষম স্থবির জাতির মধ্যে অনুপ্রবেশ কোরে ওর আকীদাই একেবারে বিপরীতমুখী অর্থাৎ অন্তুর্ম খী কোরে দিলো। দু'টো মিলে এই একদা লৌহকঠিন ঐক্যবদ্ধ দুর্দম প্রাণশক্তিতে ভরপুর দুর্দ্ধর্ষ যোদ্ধা জাতি একটি অন্তমর্ূখী, বহুধা বিচ্ছিন্ন স্থবির কাপুরুষ জনসংখ্যায় পরিণত হলো। এর যে অংশটা বিগত পাশ্চাত্য প্রভুদের শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষিত সে অংশ আল্লাহ(Allah)র সার্বভৌমত্বে বিশ্বাসী নয়। সেটা জনগণের, জনগণের এক বিশিষ্ট শ্রেণীর, একনায়কের, রাজা-বাদশাহর সার্বভৌমত্বে বিশ্বাসী, সুতরাং বর্তমান নেতৃত্বের সহযোগী। ঐ অংশটা বাদ দিলে থাকে দুটি অংশ। একটি সংখ্যাগরিষ্ঠ জনসাধারণ অশিক্ষিত, নিরক্ষর, এও জানে না ঔ জানে না, নিদারুণ দারিদ্রের মধ্যে বাস করে কোনমতে খেয়ে পরে বেঁচে থাকার প্রচেষ্টাতেই তাদের সারাজীবন পার হোয়ে যায়। অন্য অংশটি হোচ্ছে অতি মুসলিম(Muslim)। এ অংশটি নামায, রোযা, হজ্জ্ব, যাকাত ইত্যাদি ছাড়াও প্রচুর নফল এবাদত করেন, পাঁচ ওয়াক্ত মসজিদে দেঁৗড়ান, হাতে তসবিহ আছে, দাড়ী টুপির তো কথাই নেই, ছোট খাট খুটিনাটি মাসলা মাসয়েল তারা অতি নিখুঁতভাবে পালন করেন। তাদের আল্লাহ(Allah) ব্যক্তিগত আল্লাহ(Allah)। তারা অতি নিষ্ঠার সাথে সুন্নাহ পালন করেন কিন্তু শুধু ব্যক্তিগত সুন্নাহ। তাদের দ্বীন সম্বন্ধে আকীদা আজ অন্যান্য ধর্মের আকীদার মত অর্থাৎ ধর্ম নেহায়েত ব্যক্তিগত ব্যাপার- আল্লাহ(Allah)র নৈকট্য লাভের পথ। নেতারা কেমন কোরে দেশ শাসন কোরছেন, এ শাসনের ফলে মানুষের ওপর কেমন অন্যায়, অবিচার, যুলুম হোচ্ছে এসব ব্যাপারে তাদের কোন মাথাব্যথা নেই। এক কথায় কার্ল মার্কস যে আফিমের কথা বোলেছেন এরা সেই আফিম খাচ্ছেন। এই অংশটা তাদের বিকৃত আকীদায় একথা বুঝতে অসমর্থ যে, তাদের ঐ অতি এবাদত, নামায, রোযা, হজ্জ্ব, যাকাত এসব কিছুই আল্লাহ(Allah) আর রসুলের কাছে গৃহীত হবে না। এই নিস্ক্রয়তা, এই স্থবিরত্বের জন্যই ঐ বর্তমান নেতৃত্ব নিরুপদ্রবে তাদের কুফরী ও মোশরেকী শাসন চালিয়ে যেতে পারছেন। 'মুসলিম(Muslim)' দুনিয়ার নেতৃত্ব যেমন কুফরী ও শেরক ব্যবস্থা গায়রুল্লাহর জীবন-ব্যবস্থাকে চালু করার জন্য কাফের ও মোশরেক, তেমনি ঐ ব্যবস্থাকে স্বীকার কোরে নেওয়ার জন্য জনসাধারণও কুফর ও শেরকের মধ্যে ডুবে আছে। শেষ ইসলাম(Islam)কে সঠিকভাবে যিনিই বুঝবেন তিনিই পরিষ্কার বুঝতে পারবেন যে, রাষ্ট্রীয় শক্তিবিহীন ইসলাম(Islam) ইসলাম(Islam)ই নয়। কারণ এর প্রথম ও অতি প্রয়োজনীয় অংশটুকু জাতীয় শরিয়াহ অথর্াৎ এর রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক আইন ব্যবস্থা বিচার দণ্ডবিধি ইত্যাদি ফরদগুলি রাষ্ট্রীয় শক্তি ছাড়া প্রয়োগ সম্ভব নয়। যে রাষ্ট্রে আল্লাহ(Allah)র ঐ সরাসরি (Direct) আদেশগুলি প্রয়োগ ও প্রতিষ্ঠিত নয় সে রাষ্ট্র ইসলামী রাষ্ট্রতো নয়ই, মুসলিম(Muslim) রাষ্ট্রও নয়। সে রাষ্ট্রের জনগণ যদি শতকরা একশ' জনই তাহাজ্জুদী হয় তবুও নয়, কারণ তারা সমবেতভাবে তাদের নেতাদের বাধ্য করেননি আল্লাহ(Allah)র আদেশ জাতীয়ভাবে বাস্থাবায়িত কোরতে। অমুসলিম(Muslim) খ্রীস্টান ইউরোপিয়ান শাসকরা যখন শাসন করতো, অর্থাৎ এই তথাকথিত মুসলিম(Muslim) জাতিগুলি যখন তাদের দাস ছিলো তখন তারা যতটুকু ধর্মীয় স্বাধীনতা ভোগ করতো অর্থাৎ শুধু ব্যক্তিগত দিকটা এখন, স্বাধীন হবার পরও ততটুকুই করে, তার চেয়ে একটুকুও বেশী নয়। খ্রীস্টানদের অধীনে দাস অবস্থায় যতটুকু 'ধর্মকর্ম' করার অধিকার ছিলো আজও তাই আছে, বেশী নয়। বিদেশী প্রভুরা দয়া কোরে তাদের ঘৃণিত দাসদের নামায, রোযা, হজ্জ্ব, যাকাত ইত্যাদি ব্যক্তিগত সবরকম 'ধর্মকর্ম'ই কোরতে দিতো, দেশী প্রভূরাও দেয়। সাদা বিদেশী প্রভূরা তাদের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক আইন ব্যবস্থা বিচার দণ্ডবিধি ইত্যাদি ব্যাপারে ধর্মকে আনতে দিতো না, কালো, বাদামী প্রভুরাও দেয় না। তখনকার দাসত্ব আর এখনকার স্বাধীনতা এর মধ্যে ইসলামের ব্যাপারে কোন তফাৎ নেই। দাসত্বের সময়ের আর এখনের মধ্যে তফাৎ শুধু এইটুকু যে, ঐ সময় তাদের শাসনের শুণে যে জানমালের, সম্মানের যে নিরাপত্তা ছিলো আজ তার শতকরা দশভাগও নেই।

কোন মন্তব্য নেই: