বৃহস্পতিবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০১১

২৮। জেহাদে আকবর

উৎস: Islam and Dajjal
সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে সমস্ত পৃথিবীতে আল্লাহর(Allah) সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা কোরে ইবলিসের চ্যালেঞ্জে আল্লাহকে(Allah) জয়ী করা ও মানব জাতির মধ্যকার সমস্ত অন্যায়-অবিচার দূর কোরে শান্তি (ইসলাম) প্রতিষ্ঠার বর্হিমুখী প্রচেষ্টা অর্থাৎ বিশ্বনবীর (দঃ) প্রকৃত সুন্নাহ ত্যাগ কোরে এই জাতি যখন উম্মতে মোহাম্মদী থেকে বহিষ্কৃত হলো অর্থাৎ আত্মহত্যা করলো, তখন আত্ম-প্রবঞ্চনার জন্য প্রকৃত সুন্নাহর বিকল্প হিসেবে নেয়া হলো তার ব্যক্তিগত অভ্যাসের পছন্দ-অপছন্দের বিষয়গুলি যার সঙ্গে তার জীবনের মূখ্য উদ্দেশ্যের কোন সম্বন্ধ ছিলো না। তিনি অনুসরণের আদেশ দিয়েছেন তার সংগ্রামী চরিত্রের, তার অসমাপ্ত কাজকে সমাপন করার। সশস্ত্র সংগ্রাম, জেহাদ ছেড়ে দিয়ে বিকল্প হিসাবে বের করা হলো জেহাদে আকবরকে, নফসের সাথে জেহাদকে। প্রচার করা হলো মহানবী (দঃ) বোলেছেন নফসের সঙ্গে, আত্মার কু-প্রবৃত্তির সঙ্গে যুদ্ধ হোচ্ছে জেহাদে আকবর। উদ্দেশ্য হলো তোমরা সশস্ত্র সংগ্রাম ছেড়ে দিয়ে ঘরে, হুজরায়, খানকায় বোসে নফসের সঙ্গে সংগ্রাম করো, বিশ্বনবী (দঃ) আল্লাহর(Allah) আদেশে সমগ্র পৃথিবীতে এই দ্বীনুল কাইয়্যেমাকে প্রতিষ্ঠার জন্য যে সশস্ত্র সংগ্রাম শুরু কোরে এবং পরে তা তার উম্মাহর ওপর অর্পণ কোরেছিলেন, তা ছেড়ে দিয়ে ঘরে ফিরে যাও, তিনি তার উম্মাহর হাতে যে অস্ত্র ধরিয়ে দিয়েছিলেন, ওটা ফেলে তসবিহ হাতে নাও। জাতির, উম্মাহর আকীদা আগেই বিকৃত হোয়ে গিয়েছিলো, প্রকৃত জ্ঞান লুপ্ত হোয়ে গিয়েছিলো, তাই উম্মাহ ঐ ডাকে সাড়া দিলো এবং হাতের অস্ত্র ফেলে তসবীহ উঠিয়ে খানকায় ঢুকলো। আল্লাহর(Allah) রসুলের (দঃ) ওফাতের পর তার উম্মাহ যখন অস্ত্র হাতে আরব থেকে উত্তাল মহা-তরঙ্গের মত বের হোয়ে বিশাল পৃথিবীর বুকে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলো তখন এই দ্বীনের শত্রুরা যদি ঐ জেহাদে আকবরের দোহাই দিয়ে এই উম্মাহকে অস্ত্র ফেলে আরবে ফিরিয়ে দিতে পারতো, তবে কী হতো? তবে আজ যারা জেহাদে আকবর নিয়ে খুব ব্যস্ত আছেন তারা গলায় ক্রশ ঝুলিয়ে গীর্জায় যেতেন, কিম্বা নামাবলি গায়ে দিয়ে কপালে চন্দন লাগিয়ে মূর্তিপূজা কোরতেন, না হয় গেরুয়া বসন পরে প্যাগোডায় বোসে ‘বুদ্ধং শরণং গচ্ছামী- সংঘং শরণং গচ্ছামী’ জপতেন। সৌভাগ্যক্রমে রোমান এবং পারসীয়রা ঐ ‘হাদীস’ গুলো জানতোনা। অবশ্য জানলেও কোন লাভ হোতো না, কারণ ঐ উম্মতে মোহাম্মদীর আকীদায় তখন কোন বিকৃতি আসেনি, তারা তখনও প্রকৃত উম্মতে মোহাম্মদী। তারা জানতেন তারা কী কোরছেন এবং কেন কোরছেন, কোন ছেঁদো কথায় ভুলবার পাত্র তারা ছিলেন না। কিন্তু পরবর্তী সময়ে আকীদায় যখন ফাটল ধরলো- বিকৃতি এলো, তখন সশস্ত্র সংগ্রাম ত্যাগ করা হলো, জাতি প্রকৃত উম্মতে মোহাম্মদী থেকে বহিস্কৃত হলো এবং সশস্ত্র সংগ্রামের বিকল্প হিসাবে জেহাদে আকবরকে আবিষ্কার করা হলো।

এখন দেখা যাক এই আবিষ্কারের ভিত্তি কতটুকু শক্ত। জেহাদে আকবরের আবিষ্কারকরা মাত্র তিনটি হাদীসের উল্লেখ কোরতে পেরেছেন যেগুলোতে নাফসের সাথে সংগ্রামকে রসুলুল্লাহ (দঃ) নাকি জেহাদে আকবর বোলে অভিহিত কোরেছেন। এগুলির একটি বর্ণনা কোরেছেন ইবনে নাজ্জার, একটি দায়লামি ও তৃতীয়টি খতিব। সমস্ত মুহাদ্দিসগণ এক বাক্যে ঐ তিনটি হাদীসকে দুর্বল অর্থাৎ দয়ীফ বোলে রায় দিয়েছেন। হাফেয ইবনে হাজারের মত বিখ্যাত মুহাদ্দীস ঐ হাদীসগুলোক হাদীস বোলেই স্বীকার করেন নি। বোলেছেন নফসের সঙ্গে যুদ্ধ জেহাদে আকবর, এটা হাদীসই নয়। এটি একটি আরবী প্রবাদ বাক্য মাত্র (তাশদীদ উল কাভেস- হাফেয ইবনে হাজার)। এতো গেলো একটি দিক, অন্য দিকটি হোচ্ছে এই যে-হাদীস সত্য কি মিথ্যা তা যাচাই করার অন্যতম প্রধান সূত্র হোচ্ছে কোরান। কোন হাদীস যদি কোরানের অভিমতের সঙ্গে সামঞ্জস্য না থাকে বা বিরোধী হয় তবে সে হাদীস বাতিল বোলে পরিত্যাগ করা হয়। রসুলুল্লাহ (দঃ) মাপকাঠি নির্দিষ্ট কোরে দিয়েছেন এই বোলে যে, আল্লাহর(Allah) বাণী আমার বানীকে বাতিল ‘রদ' কোরবে, কিন্তু আমার বাণী আল্লাহর(Allah) বাণীকে বাতিল কোরবে না। এই আলোকে দেখা যাক এই ব্যাপারে আল্লাহ(Allah) স্বয়ং কী বোলছেন। তিনি বোলছেন কাফেরদের কথা শুনোনা, মেনোনা, এবং তাদের বিরুদ্ধে কঠোর, চূড়ান্ত সংগ্রাম চালিয়ে যাও (কোরান- সূরা আল- ফোরকান- ৫২)। এখানে আল্লাহ(Allah) যে শব্দ ব্যবহার কোরছেন তা হলো "জেহাদান কবীরা"। কবীর এবং আকবর দু'টো শব্দ একই মূল থেকে এসেছে এবং একই অর্থ বহন করে। অর্থাৎ আল্লাহ(Allah) বোলছেন জেহাদে কবীর বা আকবর হোচ্ছে কাফেরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা, আর এরা বোলছেন না তা নয়, জেহাদে আকবর হোচ্ছে নফসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা। অর্থাৎ আল্লাহর(Allah) বাণীকেই একেবারে উল্টিয়ে দিচ্ছেন। এ গেলো কোরানে আল্লাহর(Allah) কথা। এবার তার রসুল(দঃ) এ ব্যাপারে কী বোলছেন দেখা যাক। তাকে প্রশ্ন করা হলো- কোন জেহাদ সর্বোত্তম, সর্বশ্রেষ্ঠ (ফদল)? তিনি জবাব দিলেন- প্রাণ এবং সম্পদ দিয়ে মোশরেকদের বিরুদ্ধে জেহাদ করা [হাদীস-আব্দুল্লাহ বিন হাবশী (রাঃ) থেকে আবু দাউদ, নেসায়ী, মেশকাত]। কোরানে আল্লাহর(Allah) বাণীরই প্রতিধ্বনি। আল্লাহর(Allah) ও তার রসুলের (দঃ) কথাকে উল্টিয়ে দিয়ে সশস্ত্র সংগ্রামের মরতবা ও পুরস্কারের হাজার হাজার সহি হাদীসের বিরুদ্ধে দুই তিনটি দুর্বল হাদীস বা প্রবাদকে দাঁড় কোরিয়ে এই যে নাফসের বিরুদ্ধে সংগ্রামকে প্রাধান্য দেয়া এর আসল কারণ কী?

এর প্রকৃত কারণ বোলতে গেলে আবার ইতিহাসের খানিকটা পুনরাবৃত্তি কোরতে হোচ্ছে। আল্লাহ(Allah) ইবলিসের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ কোরলেন, ইবসিলের প্রার্থনা মোতাবেক তাকে ও তার সহযোগীদের আদমের অর্থাৎ মানুষের দেহ-মনের মধ্যে ঢুকে তাকে কু-পরামর্শ দেবার শক্তি দিলেন, অন্যদিকে তিনি তার নবী-রসুল পাঠিয়ে মানুষকে পথ-প্রদর্শন বা দিক-নির্দেশনা কোরলেন। এই পথ-প্রদর্শন অর্থাৎ দিক-নির্দেশনা হলো হেদায়াহ। এই হেদায়াহ কী? এই হেদায়াত হোচ্ছে আল্লাহর(Allah) ওয়াহদানীয়াত, তওহীদ, এক আল্লাহ(Allah) ছাড়া আর কাউকে বিধানদাতা বোলে স্বীকার না করা, জীবনের কোন স্তরে বা ভাগে তার দেয়া আইন-কানুন ছাড়া আর করো আইন-কানুন স্বীকার না করা। শুধু তাই নয়, ঐ সঙ্গে দিলেন এমন একটি জীবন-ব্যবস্থা যেটা পূর্ণাঙ্গ অর্থাৎ মানুষের জীবনের প্রতিটি অঙ্গনে যত সমস্যা হোতে পারে তার ভারসাম্যযুক্ত সমাধান, নিখুঁত সমাধান। কিন্তু যত নিখুঁতই হোক ঐ জীবন-ব্যবস্থা যদি মানুষ গ্রহণ না করে, নিজেরাই নিজেদের জন্য আইন-কানুন-জীবন-ব্যবস্থা- তৈরী কোরে নেয় বা ওটাকে ব্যক্তিজীবনের ছোট্ট পরিধির মধ্যে সীমিত কোরে রাখে তাহোলে অত নিখুঁত জীবন ব্যবস্থা অর্থহীন হোয়ে থাকবে, মানুষের তৈরী জীবন-ব্যবস্থা অনুসরনের অবশ্যম্ভাবী পরিণতি হিসাবে মানব জাতির মধ্যে অন্যায়-অবিচার-রক্তপাত হোতে থাকবে, শয়তান জয়ী হবে। তাই আল্লাহ(Allah) শেষ নবীকে (দঃ) পাঠালেন এই দায়িত্ব দিয়ে যে তিনি যেন সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে এই জীবন-ব্যবস্থা, এই সংবিধান অর্থাৎ দ্বীন সমস্ত মানব জাতির ওপর কার্যকরী করেন। এক জীবনে এত বিরাট-বিশাল কাজ সম্ভব নয় বোলে বিশ্বনবী (দঃ) একটি জাতি গঠন কোরলেন। প্রেরণা-প্রেষণা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ঐ জাতিকে একটি দুর্দ্ধর্ষ যোদ্ধা জাতিতে পরিণত কোরলেন। তিনি এমন জাতি সৃষ্টি কোরলেন যে জাতির সর্বপ্রধান চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যই হলো শুধু মৃত্যুভয়হীনতা নয়, যুদ্ধক্ষেত্রে মৃত্যুর জন্য ব্যাগ্র আকুলতা। তার (দঃ) নিজের ওপর আল্লাহর(Allah) দেয়া দায়িত্ব এই নতুন যোদ্ধা জাতির ওপর অর্পণ কোরে বিশ্বনবী (দঃ) তার প্রভুর কাছে চলে গেলেন। বোলে গেলেন সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে এই দ্বীন সমস্ত পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম অর্থাৎ তার সুন্নাহ যে বা যারা ত্যাগ কোরবে, তারা তার কেউ নয়, অর্থাৎ তার জাতি উম্মাহ থেকে বহিষ্কৃত। অর্পিত দায়িত্ব সম্পর্কে সজাগ জাতি তাদের নেতার ওফাতের পর সমস্ত পার্থিব সম্পদ কোরবান কোরে উত্তাল মহাতরঙ্গের মত পৃথিবীর বুকে গড়িয়ে পড়ে অর্দ্ধেক পৃথিবীতে দ্বীন প্রতিষ্ঠা কোরেছিল, এটা ইতিহাস। কিন্তু তারপরই ঐ মহাজাতি করলো সর্বনাশা কাজ। হঠাৎ তারা ভুলে গেলো তাদের ওপর আল্লাহ(Allah) ও তার রসুলের (দঃ) অর্পিত দায়িত্ব। আকীদা নষ্ট বা ভুল হোলে যে ঈমান অর্থহীন হোয়ে যায় এবং ঈমান অর্থহীন হোলে যে ঈমান ভিত্তিক নামায, রোযা, হজ্ব, যাকাত সব কিছুই অর্থহীন হোয়ে যায় এ উপলব্ধিও আর রোইলনা। তারা সেই সশস্ত্র সংগ্রাম ত্যাগ করলো, তাদের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য হারিয়ে গেল, তাদের আকীদা নষ্ট হোয়ে গেলো।

তখন একটা সমস্যা দেখা দিলো। সেটা হলো এই যে জেহাদ সর্ব অবস্থায় ওয়াজেব এবং বিশেষ অবস্থায় ফরদে আইন, নামায, রোযা, হজ্ব, যাকাতের মতই ফরদে আইন, এ কথায় কোন মযহাবের কোন ইমামের মতভেদ নেই। জেহাদ ছেড়ে দেয়া হোয়েছে, জাতিগত ভাবে ছেড়ে দেয়া হোয়েছে, অথচ ওটা ওয়াজিব এবং ফরদ। যেটা ওয়াযেব এবং ফরদে আইন সেটা ছেড়ে দিয়ে মুসলিম থাকা যায় কেমন কোরে? এই বিপদ থেকে উদ্ধার পাবার জন্য আবিষ্কার করা হলো জেহাদে আকবরকে; নফসের সঙ্গে যুদ্ধ করাকে। একটা প্রবাদ বাক্যকে হাদীসের মর্যাদা দেবার চেষ্টা করা হলো পলায়নপর মনোবৃত্তিকে সমর্থন করার জন্য। শুধু তাই নয় আল্লাহর(Allah) রসুল (দঃ) যে বোলেছিলেন যে "যারা আমার সুন্নাহ ত্যাগ কোরবে তারা আমাদের কেউ নয়" এই হাদীস থেকে বাঁচবার চেষ্টায় তারা ঘোষণা কোরলেন, এ সুন্নাহ মহানবীর (দঃ) সশস্ত্র সংগ্রাম নয়, ঐ সুন্নাহ হোচ্ছে তার ব্যক্তি জীবনের অভ্যাস, কাপড়-চোপড়, খাওয়া-দাওয়ার তার পছন্দ-অপছন্দ, তার চুল, দাড়ি, মোচ তার দাঁত মাজা, তার খাওয়ার আগে একটু লবণ মুখে দেয়া, খাওয়ার পর একটু মিষ্টি খাওয়া ইত্যাদি ইত্যাদি। মানব জাতির সর্বশ্রেষ্ঠ বিপ্লবীর জীবন থেকে তারা শিক্ষা বেছে নিলেন ঐগুলি। দু'টো কাজেরই মুল উদ্দেশ্য হলো পলায়ন- কাপুরুষতা, মৃত্যু-শাহাদাত থেকে পলায়ন। যে শাহাদাতের কথা বোলতে যেয়ে এরা যার সুন্নাহ পালন করেন বোলে দাবী করেন, সেই বিশ্বনবী (দঃ) বোলেছেন আমার ওপর নবুয়াতের দায়িত্ব না থাকলে আমি জেহাদের ময়দানে শহীদ হোয়ে যেতাম, বোলেছেন আমি কেমন আকুলভাবে চাই যে কত ভালো হোত, যদি আমি শহীদ হতাম, আমাকে জীবিত করা হোত, আমি আবার শহীদ হতাম, আমাকে আবার জীবিত করা হোত, আবার শহীদ হতাম, আবার জীবিত করা হোত এবং আবার শহীদ হতাম [হাদীস- আবু হোরাইরা(রাঃ) থেকে বোখারী মুসলিম মেশকাত]। তার উম্মাহর ভবিষ্যত সম্বন্ধে বোলতে যেয়ে রসুলুল্লাহ (দঃ) একদিন বোললেন-"শীঘ্রই এমন দিন আসছে যে অন্যান্য জাতিসমূহ এই উম্মাহর বিরুদ্ধে একে অপরকে ডাকবে যেমন কোরে (খানা পরিবেশন করার পর) একে অন্য সবাইকে খেতে ডাকে।" তাকে প্রশ্ন করা হলো "আমরা কি তখন সংখ্যায় এত নগণ্য থাকবো?" তিনি বোললেন, "না, তখন তোমরা সংখ্যায় অগণ্য হবে, কিন্তু হবে স্রোতে ভেসে যাওয়া আবর্জনার মত। আল্লাহ(Allah) তোমাদের শত্রুর মন থেকে তোমাদের সম্পর্কে ভয়-ভীতি উঠিয়ে নেবেন এবং তোমাদের হৃদয়ের মধ্যে দুর্বলতা নিক্ষেপ কোরবেন।" কেউ প্রশ্ন কোরলেন, "ইয়া রসুলুল্লাহ! এই দুর্বলতার কারণ কি হবে? " তিনি জবাব দিলেন, "দুনিয়ার প্রতি ভালবাসা ও মৃত্যুর প্রতি অনীহা [হাদীস- সাওবান (রাঃ) থেকে আবু দাউদ, মেশকাত। ইরাকের বিরুদ্ধে পৃথিবীর জাতিগুলিকে কেমন কোরে ডাকা হোয়েছিল স্মরণ করুন। অবশ্য এ কথার মানে এ নয় যে ইরাক প্রকৃত উম্মতে মোহাম্মদী। ইরাক যেমন প্রকৃত উম্মতে মোহাম্মদী নয় তেমনি যে সব ‘মুসলিম' জাতি খ্রীস্টান ও ইহুদীদের পক্ষ হোয়ে ইরাককে আক্রমণ কোরে ধ্বংস কোরেছিল সেগুলোও নয়]।" যে জাতির স্রষ্টা যুদ্ধক্ষেত্রে মৃত্যুর জন্য বারবার আকুল আগ্রহ প্রকাশ কোরেছেন, যে জাতির অবিশ্বাস্য সামরিক বিজয়ের কারণ হিসেবে পাশ্চাত্য ইতিহাসবেত্তারা লিখেছেন Utter contempt for death মৃত্যুর প্রতি চরম অবজ্ঞা, সেই জাতি মৃত্যুভয়ে ভীত হোয়ে যাবার কারণই হলো সশস্ত্র সংগ্রামকে ছেড়ে বিকল্প হিসাবে নফসের বিরুদ্ধে সংগ্রামকে গ্রহণ করা এবং নেতার প্রকৃত সুন্নাহ-সশস্ত্র সংগ্রামকে ছেড়ে তার জীবনের লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্যের সঙ্গে সম্পর্কহীন ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দ, অভ্যাস ইত্যাদির অনুকরন করা। আদম (আঃ) থেকে আজ পর্য্যন্ত মানব জাতির মধ্যে ছোট বড় যত নেতা জন্মেছেন, কোন নেতাকেই তার জাতি এমন অপমানকর অবমূল্যায়ন কোরেছে বোলে আমার মনে হয় না, যেমন কোরে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বিপ্লবী নেতাকে, তার বিপ্লবী চরিত্রকে সম্পূর্ণ বাদ দিয়ে তার ব্যক্তিগত অভ্যাসগুলিকে আমরা নকল কোরে চোলেছি। সশস্ত্র সংগ্রাম ছেড়ে নফসের সঙ্গে সংগ্রামের আশ্রয় গ্রহণ করার ও তার প্রিয় নবীর অমন চরম অবমূল্যায়ণের জন্য আল্লাহ(Allah) এই জাতিকে চরম শাস্তি দিতেও ছাড়ননি। ঐ দুইটি কাজ করার পর তিনি ঐ জাতির শত্রুরা, যারা এই উম্মাহর নাম শুনলেও ভয়ে কাঁপতো, সেই শত্রুর মন থেকে এদের সম্বন্ধে ভয় তুলে নিলেন, এবং সে ভয় এই জাতির হৃদয়ে ঢুকিয়ে দিলেন। তারপর প্রায় সমস্ত জাতিটাকেই শত্রুর ক্রীতদাসে পরিণত কোরে দিলেন। এই শাস্তি শুধু যে এই দুনিয়াতেই নয়, আখেরাতেও, তাও বোলে দিলেন।

কোন মন্তব্য নেই: