বৃহস্পতিবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০১১

১২। বিকৃত সূফীবাদ ও কার্ল মার্কস্

উৎস: Islam and Dajjal
বর্তমানের তথাকথিত মুসলিম(Muslim) জাতির, জাতি না বোলে বরং একে একটা জনসংখ্যা বলা ঠিক হয়, অবস্থা বর্ণনা কোরেতে যেয়ে একে আমাকে ভাগে ভাগে দেখাতে হোচ্ছে। সবগুলি ভাগ দেখানো সম্ভব হবে না কারণ ছোট বড় সব মাযহাব, উপ-মাযহাব, ফেরকা, উপ-ফেরকা, উপ-উপ-ফেরকা একত্র কোরলে মোট কত ভাগ দাঁড়াবে জানি না। তবে আল্লাহর (Allah) রসুল (দঃ) বোলে গেছেন আমার উম্মাহর তেহাত্তর ফেরকায় বিভক্ত হোয়ে যাবে [হাদীস আবদুল্লাহ বিন আমর (রাঃ) থেকে তিরমিযি, মেশকাত]। কতখানি দুঃখ নিয়ে তিনি তার আজীবন সাধনায় গড়া জাতি ভেঙ্গে তেহাত্তর ভাগে টুকরো টুকরো হোয়ে যাবার ভবিষ্যতবাণী কোরেছিলেন তা ভাবলে বুক ভেঙ্গে যায়। সব মাযহাব ফেরকার বিবরণে না যেয়ে আমি শুধু প্রধান কয়েকটার উল্লেখ কোরবো। এবার যে ভাগটি সম্বন্ধে বোলতে যাচ্ছি সেটা সম্বন্ধে পেছনে কিছুটা বোলে এসেছি, আরও কিছু বলা দরকার। এটা হলো ভারসাম্যহীন বিকৃত সুফীবাদ অনুশীলনকারী ভাগ। এর আগেও বোলে এসেছি, আবার বোলছি আল্লাহর (Allah) দেয়া দ্বীন, জীবন ব্যবস্থা ভারসাম্যযুক্ত। এই দুনিয়া, ঐ দুনিয়ার, দেহ আত্মার ভারসাম্য। এর যে কোন একটাকে কম বা বেশী প্রাধান্য দিলেই ঐ মহা গুরুত্বপূর্ণ ভারসাম্য নষ্ট হোয়ে সমস্ত দ্বীনটা নষ্ট হোয়ে যাবে, এর প্রাণশক্তি নষ্ট হোয়ে যাবে। ঐ ভারসাম্য ছাড়া পুলসেরাত কেউ পার হোতে পারবে না। এই জন্যই এই দ্বীনের নবী (দঃ) বোলেছেন এই দ্বীনে (ইসলামে) বৈরাগ্য নেই। বোলেই সঙ্গে সঙ্গে বোলেছেন ইসলামের সন্ন্যাস শুধু জেহাদে আর হজ্জ্বে (হাদীস)। এ কথার অর্থ হলো এই দ্বীনের মানুষ এই দুনিয়ার কাজ ত্যাগ কোরবে না, পুরোভাবে কোরবে। কিন্তু এই দ্বীনকে, এই জীবন ব্যবস্থাকে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত কোরতে যে সংগ্রাম এবং সশস্ত্র সংগ্রাম তাতে পৃথিবীর যা কিছু আছে সব কোরবান কোরে দেবে। এটাই তার সন্ন্যাস। আবার সেই সংগ্রামের কথা এসে যায়। এর গুরত্ব এতো বেশী, এতো জরুরী যে, এর জন্য দ্বীনের এক প্রধান নীতি বিসর্জন দেয়া হোয়েছে। পূর্বকালে হজ্জ্ব কোরতে যাওয়া এক দীর্ঘকালব্যাপী বিপদ সংকুল কাজ ছিলো। বহুদূর হোতে হজ্জ্ব কোরতে যাওয়ায় ফিরে আসার নিশ্চয়তা ছিলো না, কাজেই এও দুনিয়া ত্যাগ, সন্ন্যাস ছিলো। যদিও আজকাল হজ্জ্বে আর অনিশ্চয়তা প্রায় নেই। ভারসাম্যহীন সুফীরা যে নির্জনতা বেছে নিলেন যে সন্ন্যাস অবলম্বন কোরলেন তা ইসলামের সন্ন্যাস ছিলোনা, সশস্ত্র সংগ্রামের সন্ন্যাস ছিলো না, ছিলো নিজেদের যার যার আত্মার ধোয়া মোছার সন্ন্যাস। যে বহিমুর্খী সংগ্রামের জন্য দুনিয়া ত্যাগের অনুমতি, শুধু অনুমতি নয় আদেশ আল্লাহ (Allah) ও বিশ্বনবী (দঃ) দিয়েছিলেন, সুফীদের সন্ন্যাস হলো তার ঠিক বিপরীত অর্থাৎ অন্তর্মুখী। এই অন্তমুর্খীতা, এই আকীদার বিকৃতির কথা পেছনেও বোলে এসেছি, এখন আবার বোলছি পুনরাবৃত্তির দোষ হোলেও। কারণ এর গুরুত্ব এই দ্বীনে এত বেশী যে, হাজার বার পুনরাবৃত্তি কোরলেও তা যথেষ্ট হবে না। অন্যান্য সমস্ত দ্বীন অর্থাৎ জীবন ব্যবস্থা, সমস্ত তন্ত্র, আইন-কানুন বাতিল কোরে দিয়ে এই শেষ জীবন ব্যবস্থাকে সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে সমস্ত পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা কোরতেই আমি আমার রসুলকে পাঠিয়েছি, এবং এই কথার সাক্ষী আমি স্বয়ং (কোরান- সূরা আল ফাতাহ ২৮), আল্লাহর (Allah) এই দ্ব্যর্থহীন ঘোষণার পর নির্জনতার, অন্তমুর্খীতার আর বিন্দুমাত্র স্থান এই দ্বীনে থাকতে পারে না। আল্লাহর (Allah) ঐ ঘোষণাকে ভিত্তি কোরে তার নবী (দঃ) ঘোষণা কোরলেন আমাকে আদেশ দেওয়া হোয়েছে সশস্ত্র সংগ্রাম কিতাল চালিয়ে যেতে যে পর্য্যন্ত না সমস্ত পৃথিবীর মানুষ আল্লাহ (Allah) কে একমাত্র ইলাহ অর্থাৎ জীবন বিধাতা বোলে স্বীকার কোরে নেয়, আমাকে তার প্রেরিত রসুল বোলে স্বীকার কোরে নেয়, সালাত কায়েম করে ও যাকাত দেয় (হাদীস- আবদুল্লাহ বিন ওমর(রাঃ) থেকে বুখারী, মেশকাত)। এই যে আল্লাহ (Allah) তার রসুলের (দঃ) জন্য জীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নির্দিষ্ট কোরে দিলেন সে কাজটা হলো সম্পূর্ণভাবে বহির্মুখী একথা বুঝতে সাধারণ জ্ঞানের বেশী দরকার করে না। আল্লাহর (Allah) দেয়া ঐ দায়িত্ব এক কথায় নবুয়তের দায়িত্ব পালন কোরতে গেলে সমস্ত পৃথিবীতে এই দ্বীনকে প্রতিষ্ঠা কোরে শান্তি স্থাপন কোরতে গেলে অতি অবশ্যই সংগ্রাম কোরতে হবে। সে সংগ্রাম হোতে হবে প্রচারের সংগ্রাম, রাজনৈতিক, কুটনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সর্বোপরি সশস্ত্র সংগ্রাম। যার ওপর আল্লাহ (Allah) ঐ বিশাল দায়িত্ব অর্পণ কোরলেন তার জীবনের দিকে চাইলে আমরা কি দেখি? ঠিক তাই, সমস্ত জীবন ভর (নবুয়ত পাবার পর অবশ্য) ঐ সংগ্রাম। রাজনৈতিক, কূটনৈতিক, অর্থনৈতিক ও প্রচারের সংগ্রাম তো ছিলোই, তার ওপর মাত্র দশটি বছরে আটাত্তরটি যুদ্ধ, অভিযান ইত্যাদি সংগঠন কোরেছেন, যার মধ্যে আটাশটিতে নিজে সেনাপতিত্ব কোরেছেন, আর স্বয়ং যুদ্ধ কোরেছেন নয়টিতে। একটি মাত্র যুদ্ধের পেছনে কতখানি সংগঠন, প্রশিক্ষণ, ব্যবস্থাপনা ও পরিকল্পনা প্রয়োজন হয় তা সামরিক বাহিনীর কাউকে জিজ্ঞাসা কোরে দেখতে পারেন। অর্থাৎ নিঃসংশয়ে বলা যায় যে, বিশ্বনবীর (দঃ) জীবনের প্রধান ভাগ ব্যয় হোয়েছে সশস্ত্র সংগ্রামে। ভাবলে স্থম্ভিত হোয়ে যেতে হয় যে, ঐ সশস্ত্র সংগ্রামের পরও একটা মানুষ কি কোরে অন্যান্য কাজ কোরেছেন, আর সেই অন্যান্য কাজও কী বিরাট বিপুল কাজ। পাশ্চাত্যের চিন্তাবিদদের মধ্যে যাদের অন্তরের কিছুটা প্রসারতা আছে, সত্যের প্রতি কিছুটা শ্রদ্ধা আছে তাদের মধ্যে অনেকেই তার (দঃ) জীবনী পড়ে মানব জীবনের ওপর তার (দঃ) প্রভাব দেখে বিস্ময়ে অবাক হোয়ে গেছেন। এমনি অবাক বিস্ময়ে ফরাসী ইতিহাসবেত্তা লা মার্টিন লিখেছেন- "দার্শনিক, বাগ্মী, নবী, আইন প্রণেতা, যোদ্ধা, ধারণাকে জয় ও প্রতিষ্ঠাকারী, বিচারবুদ্ধিসহ বিশ্বাসকে পুনর্জীবনদানকারী, মুর্তিহীন ধর্মের পুনঃপ্রবর্তক, বিশটি জাগতিক সাম্রাজ্যের ও একটি আধ্যাত্মিক সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা-এই হোচ্ছেন মোহাম্মদ। মানবীয় মহত্ব ও বিরাটত্ব মাপার যতগুলি মাপকাঠি আছে সেসবগুলি দিয়ে মাপলে আমরা প্রশ্ন কোরতে পারি- তার চেয়ে বড়, মহীয়ান আর কোন মানুষ আছে?" (History of Turks) আমেরিকান জ্যোতির্বেত্তা, ইতিহাসবেত্তা ও গণিতশাস্ত্রবিদ মাইকেল হার্ট তার The 100 বইয়ে আদম (আঃ) থেকে বর্তমান পর্য্যন্ত একশ' জন মানুষের লিষ্ট, তালিকা কোরেছেন যারা মানব জতির ওপর সবচেয়ে বেশী প্রভাব বিস্তার কোরেছেন। তাতে সর্বপ্রথম নাম মোহাম্মদ (দঃ)। ভূমিকায় তিনি লিখেছেন, মোহাম্মদকে (দঃ) এক নম্বর করায় অনেকেই পছন্দ কোরবেন না, কিন্তু সত্যের খাতিরে আমাকে তা কোরতে হোয়েছে।

বিশ্বনবীর (দঃ) জীবনের এই যে প্রচণ্ড বহির্মুখী গতি, এই গতি অনিবার্যভাবে সঞ্চারিত হলো তার অনুসারীদের মধ্যে, তার গড়া জাতিটির মধ্যে, কারণ তার ওপর আল্লাহর (Allah) দায়িত্ব, যা এক জীবনে পূর্ণ করা সম্ভব নয়, অর্পিত হলো তার উম্মাহর ওপর স্বভাবতঃই। মহানবী (দঃ) তার সাহাবাদের যে আকীদা শিক্ষা দিয়ে গিয়েছিলেন, সে আকীদার প্রভাবে তারা পৃথিবীতে এক মহাশক্তিশালী বোমের মত বিস্ফোরিত হয়ে অর্দ্ধেক পৃথিবীতে শেষনবীর (দঃ) দ্বীন প্রতিষ্ঠা কোরেছিলেন। তখন যারা এই জাতিকে বাধা দিতে এসে ভেঙ্গে খান খান হোয়ে গিয়েছিলো তারা যদি কোনভাবে এই জাতির ঐ বহির্মুখী সংঘর্ষমুখী, বিস্ফোরণমুখী চরিত্রকে বদলিয়ে অন্তর্মুখী কোরে দিতে পারতো তবে কি হতো? নিঃসন্দেহে বলা যায়, তা হোলে এই উম্মাহ সংগ্রাম ছেড়ে দিয়ে আরবে তাদের যার যার ঘরে ফিরে যেতো, হাতের তলোয়ার ছুড়ে ফেলে দিয়ে তসবিহ নিয়ে খানকায় ঢুকতো, শত্রুরা স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেলে তাদের পূর্বের অন্যায়, অত্যাচারী জীবন ব্যবস্থায় স্থায়ী থাকতো। শত্রুরা যা বাইরে থেকে কোরতে পারেনি, অর্দ্ধেক পৃথিবীতে দ্বীন প্রতিষ্ঠার পর ভেতর থেকে ভারসাম্যহীন সুফীরা তাই কোরলেন। অবশ্য শুধু সুফীরা নয়, আলেম, ফকীহ, মুফাসসির ইত্যাদি বহু নামের পণ্ডিতরাও তাদের সাহায্য কোরেছেন। সকলের সম্মিলিত কাজের ফল এই হলো যে, জাতিরই আকীদা নষ্ট হোয়ে গেলো, সম্মুখ থেকে বিশ্বনবীর (দঃ) দেখানো উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য অদৃশ্য হোয়ে গেলো, জাতিটাকে, উম্মাটাকে হত্যা করা হলো। যে বহির্মুখী কাজের জন্য এই জাতিটাকে আল্লাহ (Allah) ও তার রসুল (দঃ) সৃষ্টি কোরেছিলেন অন্তর্মুখী কোরে দেওয়ায় সে উল্টো দিকে চলতে শুরু করলো। এই উল্টো দিকে চোলতে শুরু করায় এই জাতির আর কোন প্রয়োজন রইলো না। কারণ ঐ অন্তর্মুখীতা, ঐ আত্মার ঘষামাজা কোরে আধ্যাত্মিক উন্নতির প্রক্রিয়া পূর্ববর্তী ধর্মগুলোতেও ছিলো। ওয়ায়েস করনী (রাঃ) তার প্রমাণ। কোন সন্দেহ নেই যে, ওয়ায়েস করনী (রাঃ) তাসাওয়াফের উচ্চতম স্থানে পৌঁছুতে সক্ষম হোয়েছিলেন, কামেলিয়াত হাসেল কোরেছিলেন। এতে দু'টো বিষয় প্রমাণিত হয়। একটি হলো এই যে- বিশ্বনবীর (দঃ) ওপর যখন নবুয়ত আল্লাহ (Allah) অর্পণ করেন তখনও পুর্ববর্তী দ্বীনগুলির মধ্যে যে তাসাওয়াফের প্রক্রিয়া ছিলো তা যথেষ্ঠ ছিলো। দ্বিতীয়টি হলো এই যে- সুতরাং তাসাওয়াফের প্রক্রিয়ায় আধ্যাত্মিক উন্নতিই যদি দ্বীনের মুখ্য, মুখ্য না হোলেও প্রধান উদ্দেশ্য হতো হবে মোহাম্মদের (দঃ) আর প্রয়োজন ছিলো না।

দ্বীনের আলেমরা, পণ্ডিতরা এই দ্বীনের ছোটখাটো কম প্রয়োজনীয় আদেশ-নিষেধগুলি নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ কোরে বিভিন্ন মতামত, ফতোয়া সৃষ্টি কোরে উম্মাহকে বহুভাগে বিভক্ত কোরে এর ঐক্য ধ্বংস কোরে দিয়েছিলেন। কোন জাতি যত শক্তিশালীই হোক যদি তার মধ্যে ঐক্য না থাকে তবে কখনও টিকতে পারবে না, কখনও শত্রুর বিরুদ্ধে জয়ী হোতে পারবেনা, আত্মরক্ষাও কোরতে পারবে না, এটা প্রাকৃতিক নিয়ম, ফিতরাত। তাই ঐ প্রাকৃতিক আইন মোতাবেকই এই উম্মাহ শত্রুর কাছে পরাজিত হোয়ে কয়েক শতাব্দীর জন্য ঘৃণ্য গোলামে পরিণত হোয়েছিলো। কিন্তু যদি ঐ আলেম, ফকীহ পণ্ডিতরা এই উম্মাহকে ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন নাও কোরে দিতেন, তা হোলেও ভারসাম্যহীন বিকৃতি সুফীদের কাজের ফলে জাতির অন্তর্মুখীতার ফলে জাতি ধ্বংস হোয়ে যেতো, যেমন গেছে। চিন্তাহীন লোক প্রশ্ন কোরতে পারেন- জাতি ধ্বংস হোয়েছে কোথায়? জাতিতো বেঁচে আছে, একশ'ত্রিশ কোটির সংখ্যায় বেঁচে আছে। কোটি কোটি লোক নামায পড়ে, রোযা রাখে, যাকাত দেয়, হজ্জ্ব করে, তাহাজ্জুদ পড়ে। সাতচল্লিশটি ভৌগলিক রাষ্ট্রে এরা সংখ্যাগরিষ্ঠ, তেলসহ পৃথিবীর প্রাকৃতিক সম্পদের একটা প্রধান অংশের এরা মালিক। পৃথিবীময় এই জাতির কোটি কোটি আলীশান মসজিদ আছে, যেখানে কোটি কোটি লোক নামায পড়ে। এই জাতিকে ধ্বংস হোয়ে যাওয়া জাতি কেন বোলছি! বোলছি তার কারণ আছে। প্রত্যেক জিনিষের অস্তিত্বের কারণ থাকে, সেটা হলো সেই জিনিষটার উদ্দেশ্য। প্রত্যেক কাজের উদ্দেশ্য থাকে। উদ্দেশ্যহীন জিনিষের, উদ্দেশ্যহীন কাজের কোন অর্থ নেই, হোতে পারে না। স্থূল উদাহরণ- আপনার একটি মোটর গাড়ি আছে। এই গাড়ির উদ্দেশ্য হলো আপনাকে বহন কোরে আপনার অভিষ্ট স্থানে নিয়ে যাওয়া। এই গাড়ির যন্ত্রপাতিতে যদি এমন গণ্ডগোল হয় যে, সেটা অচল হোয়ে যায়, তবে ঐ গাড়ির আর কোন অর্থ থাকে না। ঐ গাড়িটি যদি মহামূল্যবান গাড়িও হয়, পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ গাড়িও হয়, তবু ওটা কোন কাজের নয়, কারণ যে একমাত্র কারণে ঐ গাড়িটি তৈরী করা হোয়েছে, আপনাকে আপনার প্রয়োজনীয় স্থানে নিয়ে যাওয়া, সেই কাজটাই ঐ গাড়ী দিয়ে হোচ্ছে না। সুতরাং ওটা অর্থহীন, মহা দামী গাড়ি হোলেও মূল্যহীন। আপনি যদি এত আহম্মক হন যে, গাড়ির উদ্দেশ্যই জানেন না, বুঝেন না, তবে আপনি কি কোরবেন? আপনি এই কোরবেন যে, গাড়ির নির্মাতারা গাড়ির সঙ্গে গাড়ির রক্ষণাবেক্ষণের জন্য যে বই দেয় সেই বই দেখে অতি অধ্যবসায়ের সঙ্গে গাড়ির গায়ে পালিশ লাগিয়ে ওটাকে চকচক কোরবেন, গদীগুলোয় ক্রিম লাগিয়ে নরম আরামদায়ক কোরে রাখবেন। বই মোতাবেক নির্দ্দিষ্ট স্থানগুলিতে (point) তেল ও চর্বি (Grease) লাগাবেন। গাড়িটি দেখতে চকচকে, সুন্দর দেখাবে কিন্তু আসলে অচল, কাজেই অর্থহীন। গাড়িটার আসল উদ্দেশ্যই আপনি জানেন না বোলে আপনি মহা সুখী থাকবেন যে গাড়ীটা দেখতে ভারী সুন্দর।

ভবিষ্যতে তার উম্মাহর কি অবস্থা হবে বোলতে যেয়ে একদিন আল্লাহর (Allah) রসুল (দঃ) বোললেন- এমন সময় আসবে যে, এই জাতি পৃথিবীর সব জাতিদের দ্বারা অপমানিত, লাঞ্ছিত, পরাজিত হবে। উপস্থিত সাহাবাদের মধ্য থেকে কেউ কেউ প্রশ্ন কোরলেন- হে আল্লাহর (Allah) রসুল! তখন কি পৃথিবীতে তারা এত অল্প সংখ্যক হবে যে, অন্য জাতিগুলি তাদের পরাজিত ও লাঞ্ছিত কোরবে? মহানবী (দঃ) তার জবাব দিলেন- না, সংখ্যায় তারা অসংখ্য হবে। জবাব শুনে আসহাব নিশ্চয়ই অত্যন্ত বিস্মিত হোয়েছিলেন। বিস্মিত হবার কথাই। কারণ তখন ঐ ছোট্ট উম্মাটার ঈমান ইস্পাতের মত, আকীদা সম্পূর্ণ ও সঠিক, উদ্দেশ্য পরিষ্কার, উদ্দেশ্য অর্জন করার প্রক্রিয়ায় দৃঢ়, ঐক্য লোহার মত, দুর্বলতা শুধু এই জায়গায়- সংখ্যাল্পতায়। তাই এর জবাবে তারা যখন শুনলেন যে, সেই একমাত্র দুর্বলতাই থাকবে না, সংখ্যায় ঐ উম্মাহ হবে অগণিত, তখন পরাজয় কি কোরে সম্ভব? বিশেষ কোরে যখন ঐ ছোট্ট উম্মাহ তাদের চেয়ে সংখ্যায় বহু বেশী, সুসজ্জিত, সুশিক্ষিত শত্রুদের বারবার পরাজিত কোরেছেন। তারা আবার মহানবীকে (দঃ) প্রশ্ন কোরলেন- আমরা সংখ্যায় অসংখ্য হোলে পরাজিত কি কোরে সম্ভব? রসুল (দঃ) জবাব দিলেন, একটা উপমা দিয়ে, বোললেন- মনে করো লক্ষ লক্ষ উট, কিন্তু উটগুলো এমন যে যেটার ওপরই চড়ে বোসতে যাও ওটাই বসে পড়ে বা পড়ে যায়। ঐ অসংখ্যের মধ্যে এখানে ওখানে কিছু উট পাওয়া যাবে যেগুলোর পিঠে চড়া যাবে। বিশ্বনবীর (দঃ) উপমাটা লক্ষ্য করুন- উট। উটের উদ্দেশ্য কি? উট দিয়ে কি কাজ হয়? উট হোচ্ছে বাহন, মানুষকে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নিয়ে যাওয়ার জন্য। সেইটাই যদি উট দিয়ে না হলো তবে ঐ উট অর্থহীন- দেখতে অতি সুন্দর উট হোলেও এবং সংখ্যায় অসংখ্য হোলেও। শেষনবীর (দঃ) সেই ভবিষ্যতবাণী বহু আগেই পূর্ণ হোয়েছে, সংখ্যায় অসংখ্য হওয়া সত্ত্বেও শত্রুর পদানত দাস হোয়েছে, অপমাণিত ও লাঞ্ছিত হোয়েছে এবং হোচ্ছে। মহানবীর (দঃ) বর্ণনা অনুযায়ী এরা দেখতে অতি সুন্দর উট, লম্বা কোর্তা, পাগড়ী, লম্বা দাড়ী, ছেটে ফেলা মোচ, টাখনুর ওপরে ওঠা পাজামা, কাঁধে চেক রুমাল, দিনে পাঁচবার মসজিদে দৌড়াচ্ছেন, গোল হোয়ে বোসে চারিদিক প্রকম্পিত কোরে আল্লাহর (Allah) যিকর কোরছেন, খানকায় বোসে মোরাকেবা, কাশফ কোরছেন- দেখতে একেবারে নিখুঁত উট। কিন্ত আসলে উট নয়, ওদের পিঠে চড়া যায় না, চড়লেই বসে পড়ে।

কারণ কি? কারণ ফতওয়াবাজরা এবং ভারসাম্যহীন সুফীরা জাতির বহির্মুখী আকীদাকে উলটিয়ে অন্তর্মুখী কোরে দিয়েছেন, দুর্বার সংগ্রামের জন্য যে জাতিটিকে আল্লাহ (Allah) আর তার রসুল (দঃ) সৃষ্টি কোরেছিলেন সেটার অন্তরাত্মাকে ফতওয়াবাজরা এবং সুফীরা নির্জনবাসী, উদাসী, বৈরাগীতে পরিণত কোরে দিয়েছেন, কাপুরুষে পরিণত কোরেছেন। যে উদ্দেশ্যে এ জাতি সৃষ্টি করা হোয়েছিলো তাই-ই নাই, কাজেই এই জাতিও এখন অর্থহীন। প্রমাণ চান? শরীর অত্যন্ত পাবন্দ, পাঁচ ওয়াক্ত মসজিদে যেয়ে নামাযী, লম্বা দাড়ি, মোছ মোড়ানো, টুপি-পাগড়ী মাথায়, হাতে সর্বদা তসবিহ অর্থাৎ মুত্তাকী একজনকে যেয়ে বলুন যে- দেশে মানুষের অপরাধ বেড়ে যাচ্ছে, ইসলাম বিরোধীরা, এই দ্বীনের বিরুদ্ধে সোচ্চার ও সক্রিয় হোয়ে উঠেছে, শুধু তাই নয়, তারা এমন কি কাগজে পত্রে আল্লাহ (Allah), রসুল (দঃ) ও দ্বীনের বিরুদ্ধে বিদ্রুপ করে অপমান কোরে লিখে, প্রকাশ কোরছে, চলুন আমরা একতাবদ্ধ হোয়ে এর বিরুদ্ধে দাঁড়াই, এগুলিকে প্রতিহত করি। আপনার এ ডাক শুনে খুব সম্ভব ঐ অতি মুসলিম (Muslim) মোত্তাকী পরহেজগার আপনার মুখের দিকে কয়েক সেকেণ্ড চেয়ে থেকে মুখ ঘুরিয়ে চলে যাবেন। অন্তত শতকরা পঁচানব্বই জনই যাবেন। আপনি কি কোরছিলেন জানেন? আপনি রসুলাল্লাহ (দঃ) বর্ণিত ঐ অসংখ্য উটের একটায় চড়তে গিয়েছিলেন। ঐ উটগুলির নামায, রোযা তসবিহ ডান পা দিয়ে মসজিদে ঢোকা কিছুই গৃহীত হবে না, সমস্ত আস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হবে। এরা এবং যারা মানুষের অর্থাৎ গায়রুল্লাহর তৈরী আইন-কানুন, দণ্ডবিধি অর্থাৎ জীবন ব্যবস্থায় বাস কোরেও তার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে না তাদের সম্বন্ধে বিশ্বনবী (দঃ) বোলেছেন তাদের রোযা হোচ্ছে না খেয়ে থাকা আর তাহাজ্জুদ হোচ্ছে ঘুম নষ্ট করা (হাদীস)।

কার্লমার্কস ধর্মকে আফিম বোলেছেন। তাকে একদিক দিয়ে দোষ দেই না। তিনি 'ধর্ম' বোলতে যা দেখিয়েছেন তা অবশ্যই আফিম। তিনি দেখেছিলেন তার নিজের দেশে খ্রীস্টান ধর্ম যেটার অবস্থা পেছনে বর্ণনা কোরে এসেছি। মানুষের জাতীয় জীবনের ব্যর্থতার কারণে ব্যক্তি জীবনে নির্বাসনের পর ওটা যাজক ও সমাজের একটি বিশেষ শ্রেণীর হাতে শোষণের হাতিয়ার হোয়ে দাঁড়ায়েছিলো। হিন্দু-বৌদ্ধ ইত্যাদি "ধর্মে'কে দেখেছিলেন- ঐ একই অবস্থা প্রায়। তাদের মধ্যে যারা ধার্মিক তারা সংসার ত্যাগ কোরে হয় বনবাসে গেছেন, না হয় মন্দিরে, মঠে, প্যাগোডায় ঢুকেছেন- সমাজকে ছেড়ে গেছেন শোষক অত্যাচারীদের হাতে। ব্যতিক্রম তিনি দেখতে পেতেন এই শেষ 'ধর্মে'র দিকে চাইলে। কিন্তু তা পারলেন না, কারণ মার্কস যখন চিন্তা কোরছেন অর্থাৎ গত ঊনিশ শতাব্দী (খ্রীস্টীয়) ততদিনে সামান্য কিছু লোকের মধ্যে ছাড়া, মোহাম্মদের (দঃ) প্রবর্তিত 'ধর্ম' পৃথিবীতে নেই। মার্কস দেখলেন অন্যান্য আর দশটা 'ধর্মে'র মতই আরেকটি সেই অন্তর্মুখী 'ধর্ম' যার অনুসারীরা ইউরোপীয়ানদের জুতার তলায় গড়াগড়ি দিচ্ছে, 'ধর্মে'র বিধান নিয়ে নিজেদের মধ্যে দলাদলি কোরছে, হাতে তসবিহ নিয়ে মসজিদে দৌঁড়াচ্ছে, খানকায় বোসে পীর- মুরিদী কোরছে- সমাজের হর্তাকর্তারা শোষক, অন্যায়কারী। কাজেই মার্কস পৃথিবীর দিকে চেয়ে যে 'ধর্ম'গুলি তখন দেখলেন সেগুলোকে তিনি যে আফিম আখ্যা দিয়েছিলেন সে জন্য তাকে কিছুমাত্র দোষ দেই না, তিনি একেবারে সত্য কথা বোলেছিলেন। মার্কসের প্রতি আমার অভিযোগ এই যে, তিনি শেষ ইসলামটাকে আর তার ইতিহাসটাকে ভালো কোরে পড়ে দেখলেন না, পড়লে মার্কস যদি অকপট হৃদয়ে মানব সমাজের শুধু অর্থনৈতিক নয় সব রকমের শোষণ, অন্যায়, অত্যাচার নির্মূল কোরতে চেয়ে থাকতেন তবে তাকে সমাজতন্ত্র আবিষ্কার কোরতে হতো না। সমাজতন্ত্র আবিষ্কার কোরে তিনি তো মানব জীবনের একটি মাত্র অঙ্গনে (Facet), অর্থনৈতিক অঙ্গনের, সমাধান বের কোরলেন। কিন্তু মানুষের জীবন কী শুধু অর্থনৈতিক সমস্যাতেই পূর্ণ? নিশ্চয় নয়, অনেক কিছুই নিয়ে মানুষ। মার্কসের সমাধান হলো মানুষের জীবনের শুধু একটি অঙ্গনের ভারসাম্যহীন সমাধান। এ সমাধান পূর্ণ সমাধান নয়, তাই ইতিমধ্যেই সমাজতান্ত্রিক পৃথিবীতে উল্টো স্রোত বোইতে শুরু হোয়ে গেছে। মার্কস শেষ জীবন ব্যবস্থাটাকে খোলা মনে নিয়ে পর্যবেক্ষণ কোরলে দেখতে পেতেন যে, মানুষের জীবনের প্রতি অঙ্গনের সমস্যার সমাধান এতে দেয়া আছে, শুধু অথনৈতিক নয়। আর সেটা মানুষের সীমিত মগজের সমাধান নয়। যিনি মানুষকে সৃষ্টি কোরেছেন, শুধু মানুষকে নয় এই বিশাল সৃষ্টি কোরেছেন, তার দেয়া সমাধান। সমাধান দিয়ে তিনি বোলছেন- যিনি তোমাদের সৃষ্টি কোরেছেন তোমরা কি তার চেয়ে বেশী জানো? তারপর নিজেই এ প্রশ্নে জবাব দিচ্ছেন- তিনি সমস্ত কিছুই জানেন (কোরান- সূরা মুলক ১৪, সূরা আল হজ্জ্ব ৬৩)। মার্কসের কাছে এ যুক্তির খণ্ডন আছে? মার্কস যদি এই জাতির ইতিহাস পড়তেন তবে দেখতেন বিশ্বনবী (দঃ) যে জীবন ব্যবস্থা শিক্ষা দিয়ে গেছেন তা পরামাণু বোমের মত ফেটে অর্দ্ধেক পৃথিবীকে আচ্ছন্ন কোরে ফেলেছিলো। আফিম অমন কোরে ফাটেনা, আফিম নিঃশব্দে বুঁদ কোরে দ্যায়, যেমন কোরে ফতোয়ার বিশ্লেষণ আর বিকৃত তাসাওয়াফের আফিম বিশ্বনবীর (দঃ) তৈরী এই মহাশক্তিশালী বোমাটিকে বুঁদ কোরে নিস্ক্রিয় কোরে দিয়েছে, আর তাই মার্কস অন্যান্য 'ধর্মে'র সাথে সাথে একেও আফিম বোলতে পারছেন, আর দুর্ভাগ্যক্রমে আমরা প্রতিবাদও কোরতে পারছিনা।

এই ভারসাম্যহীন সুফীবাদের প্রভাবে এই জাতির আকীদা, দৃষ্টিভঙ্গী (Concept) এমনভাবে আজ বিকৃত যে, গহ্বরে ঢুকে প্রাণপনে তসবিহ জপা আর খুঁটিনাটি নিয়ম পালন করাকেই আজ সম্পূর্ণ 'ধর্মকর্ম' করা মনে হচ্ছে। এ দ্বীনের প্রকৃত উদ্দেশ্য অর্থাৎ আল্লাহ (Allah) ইবলিসের যে চ্যালেঞ্জ গ্রহণ কোরে তার দ্বীনকে পৃথিবীতে চালু কোরে শান্তি প্রতিষ্ঠা, তা আজ এই মহা দ্বীনদারদের মন-মগজ থেকে বহু দূরে। তাবুকের অভিযানে, যেখান কোন যুদ্ধই হলো না, প্রচণ্ড গরমের ভয়ে কয়েকজন আসহাব (রাঃ) যোগ দেননি বোলে তাদের শাস্তি দেয়া হলো, তাদের কয়েক মাসের জন্য একঘরে (Boycott) কোরে দিয়ে। এবং এ শাস্তি মহানবী (দঃ) দেননি, দিয়েছিলেন স্বয়ং আল্লাহ (Allah)। আর আজ যদি আল্লাহর (Allah) রসুল (দঃ) পৃথিবীতে ফিরে এসে এ জাতিকে ডেকে বলেন- "হে আমার জাতি! আল্লাহ (Allah) আমার ওপর এই দ্বীন এ ইসলামকে সংগ্রামের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠার যে ভার দিয়েছিলেন তা আমি আরম্ভ কোরে তোমাদের হাতে ছেড়ে গিয়েছিলাম পূর্ণ করার জন্য। তোমরা তো সেটা বহু আগেই ছেড়ে দিয়েছো, আমার সুন্নাহ ত্যাগ করেছো। এখন তোমাদের প্রথম কেবলা শত্রুর হাতে। ফিলিপাইনে, ইথিওপিয়ায়, সুদানে, ভারতে বসনিয়ায় এবং পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে শত্রুরা তোমাদের ভাইদের হত্যা কোরতে কোরতে শেষ কোরে আনছে আর তোমরা এখনও ঘরে বোসে তসবিহ পড়ছো? ওঠো! সব ত্যাগ কোরে একতাবদ্ধ হোয়ে আমার উম্মাহর জন্য আল্লাহ (Allah) যে জেহাদ ও সশস্ত্র সংগ্রাম ফরদ কোরে দিয়েছেন, সেটা আরম্ভ কর।" তাহোলে কী হবে? এ জাতির 'ধর্মীয়' নেতারা তখন হুজরা আর খানকা শরীফ থেকে মাথা বের কোরে বোলবেন- "ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা জেহাদে আকবর নিয়ে খুব ব্যস্ত আছি। আপনিই তো বোলেছেন নফসের সাথে জেহাদই হোচ্ছে জেহাদে আকবর (এটা একটা ভূল হাদীস, জেহাদে আকবর অধ্যায় দেখুন)। অস্ত্র হাতে নিয়ে ছোট জেহাদ আমরা করিনা, ও জেহাদ আপনিই জীবনভর কোরে এসেছেন, এখনও আপনিই করেন গিয়ে।" নিঃসন্দেহে বলা যায়- যেরুযালেম বা বায়তুল মোকাদ্দসের মত মক্কা এবং কাবা আজ যদি শত্রুর হাতে চলে যায় তাহোলেও ঐ জেহাদের আকবরের জেহাদীরা ঐ শত্রু অধিকৃত কাবার দিকে মুখ কোরেই ফরদ, নফল নামায পড়তে থাকবেন, তাহাজ্জুদ পড়তে থাকবেন, আর এই 'উম্মতে মোহাম্মদী' তার দৈনন্দিন কাজ-কর্ম, ব্যবসা-বাণিজ্য চাকরী কোরতে থাকবে, আজ বায়তুল মোকাদ্দস হারাবার পরও যেমন কোরছে। একথা বোঝার শক্তিও এ হতভাগ্য জাতি হারিয়ে ফেলেছে যে তাদের ঐ অতি নিষ্ঠার সমস্ত এবাদত আল্লাহ (Allah) ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান কোরছেন। একপেশে, ভারসাম্যহীন তাসাওয়াফ জাতির আকীদা, ইসলামের প্রকৃত আকীদার ঠিক উল্টো আকীদা শিক্ষা দিয়ে একে কোথায় নিয়ে এসেছে।

এখানেই এই বিকৃতির শেষ নয়। পেছনে বোলে এসেছি যে, এই ভারসাম্যহীন তাসাওয়াফ শুধু মাত্র একটি প্রক্রিয়া। আত্মার ধোয়ামোছা, ঘষামাজা কোরে আত্মার শক্তি বৃদ্ধি করা। এ প্রক্রিয়া অত্যন্ত জটিল সুতরাং এর নানা রকম পথ (তরিকা) আছে। আত্মার মার্জনা ও পরিষ্কারের প্রক্রিয়া অন্যান্য সব ধর্মেও আছে এবং ঐ সব ধর্মেও বহু বিভিন্ন প্রক্রিয়া (তরিকা) আছে। উদ্দেশ্য একই অর্থাৎ আত্মার শক্তি বৃদ্ধি সুতরাং সবার প্রক্রিয়ার মধ্যে মিলও আছে। এ কারণেই 'মুসলিম (Muslim)' সুফীদের ও অন্যান্য ধর্মের আধ্যাত্মিক সাধকদের মধ্যে বিশেষ কোন বিরোধ নেই। এমনকি কিছুটা উর্দ্ধে উঠে যাওয়ার পর অনেক সাধকদের বোঝা মুস্কিল তারা আসলে কোন ধর্মের। এই জন্য একাধিক উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন সুফীদের মৃত্যুর পর দুই তিন ধর্মের লোকদের মধ্যে তাদের লাশ নিয়ে টানাটানি হোয়েছে। কথাটা বোধ হয় পরিষ্কার কোরে বোঝাতে পারলাম না। এই শেষ ইসলামের যে ভারসাম্যটার কথা আগে বোলে এসেছি সেটার কথা হোচ্ছে। এক দিকে জাতীয় শরিয়াহ অন্যদিকে ব্যক্তিগত শরিয়াহ ও আত্মা এবং এ দুটোর ভারসাম্য। পূর্ববর্তী সমস্ত দ্বীনেরও ঐ ভারসাম্য ছিলো কিন্তু এই শেষ ইসলামে একটা ব্যতিক্রম এলো। এই ব্যতিক্রমটা হলো এই যে, জাতীয় শরিয়াহ এর আগের দ্বীনগুলিতে ছিলো সীমিত, সমস্ত পৃথিবীর জন্য নয়, সমস্ত মানব জাতির জন্য নয়। কিন্তু শেষটা এলো সমস্ত পৃথিবীর জন্য, যাকে বলে সার্বজনীন। শুধু তাই নয়, এলো পৃথিবীর ও মানব জাতির বাকি আয়ুষ্কালের জন্য। কাজেই এর মধ্যে এমন কোন আইন-কানুন, নিয়ম আল্লাহ (Allah) দিলেন না যা পৃথিবীর এক জায়গার জন্য ঠিক অন্য জায়গার জন্য অঠিক, পালন করা মুশকিল বা অচল। এমনও দিলেন না যা আজ ঠিক আগামীতে কঠিন বা অচল, এক কথায় স্থান বা কালের প্রভাবাধীন নয়। সুতরাং পূর্ববর্তী দ্বীনগুলো থেকে এই শেষ দ্বীনের জাতীয় দিকটার আইন-কানুন বেশ কিছু তফাৎ হোতে বাধ্য হলো। কিন্তু ভারসাম্যের যে অন্য পার্শ্বটা অর্থাৎ আত্মার দিকটা, ওটাতে তফাৎ বিশেষ কিছু হলো না, কারণ আত্মার উন্নতির প্রক্রিয়ায় বড় কোন অমিল নেই পূর্ববর্তী দ্বীনগুলোর সাথে, কারণ সব ধর্মের প্রত্যেক মানুষের মধ্যে স্বয়ং আল্লাহর (Allah) আত্মা (রুহ) অবস্থান কোরছে। ভারসাম্যহীন সুফীরা যখন জাতীয় শরিয়াহকে সম্পূর্ণভাবে বর্জন কোরে আত্মার উন্নতির প্রক্রিয়ায় লেগে গেলেন তখন দেখলেন যে, ঐ ব্যাপারে পূববর্তী দ্বীনগুলির আত্মার উন্নতির প্রক্রিয়ার সাথে যথেষ্ট মিল আছে। যে জীবন-বিধান অর্থাৎ শরিয়াহকে সংগ্রাম কোরে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা করার আদেশ স্রষ্টা দিলেন, পূববর্তী দ্বীনগুলির শারিয়াহগুলির সঙ্গে এর বৈশিষ্ট্য বেশ প্রকট, কিন্তু অপর পার্শ্বের অর্থাৎ আত্মার দিকটাতে মিল আছে। সুফীরা শুধু ঐ দিকটাকে আকড়ে ধোরে দেখলেন অন্যান্য ধর্মের, দ্বীনের ঐ দিকটায় সংঘর্ষের বিশেষ ক্ষেত্র নেই। অন্যান্য দ্বীনের পূর্ববর্তী ধর্মগুলির আধ্যাত্মিক সাধকদের সাথে সুফীদের কোন সংঘর্ষ তো হলোই না, বরং বহু সুফী দুই দ্বীনের মাঝামাঝি স্থান যাকে বলা যায় (Twilight Zone) খুঁজে নিলেন। অর্থাৎ সম্পূর্ণভাবে এটাও না ওটাও না, এর কিছু প্রক্রিয়া ওর কিছু প্রক্রিয়া। এর অসংখ্য উদাহরণ দিতে পারি- সবচেয়ে ভালো উদারহণ বোধহয় শিখ 'ধর্মের' প্রবর্তক গুরু নানক। যতদূর জানা যায় ইনি মুসলিম (Muslim) সাধক ছিলেন, সুফী ছিলেন, একাধিকবার হজ্জ্ব কোরেছিলেন। সাধনার উচ্চ স্তরে উঠে তিনি দেখলেন হিন্দু ধর্মেও (হিন্দু বোলে কোন ধর্ম নেই, উপমহাদেশে অনেক নবীর (আঃ) আগমন হোয়েছে, তাদের দ্বীনগুলির বিকৃত রূপ আজও সমস্ত উপমহাদেশময় ছড়িয়ে রোয়েছে, প্রত্যেকটি গোড়ায় সেই তওহীদ, দ্বীনুল কাইয়্যেমা, সনাতন ধর্ম)। আত্মার উন্নতির ভালো প্রক্রিয়া আছে। সেখান থেকেও নিলেন, নিয়ে মিশ্রন কোরে এক তরিকা প্রবর্তন কোরলেন, যে তরিকায় মুসলিম (Muslim), হিন্দু, খ্রীস্টান, বৌদ্ধ সব দ্বীন থেকেই লোক যোগ দিলো ঘষামাজা কোরে আত্মার শক্তি বৃদ্ধি কোরতে। এই তরিকা কালে একটি নতুন ধর্মেরই রূপ নিলো যেটা আজ শিখ ধর্ম; যেমন ইহুদী ধর্মের সংস্কারে ঈসার (আঃ) প্রচেষ্টা কালে একটি নতুন ধর্মের, খ্রীস্ট ধর্মের রূপ নিয়েছিলো। বর্তমান 'ইসলাম ধর্মের' তরিকাগুলি আলহাজ্জ্ব সুফী নানকের তরিকার মত সাফল্য লাভ কোরতে পারেনি তাই শিখ ধর্মের মত আলাদা রূপ নিতে পারেনি কিন্তু একই রাস্তায় আছে। এক তরিকার অনুসারীরা অন্য তরিকার লোকদের থেকে নিজেরের আলাদা মনে করেন, এক পীরের মুরীদরা অন্য পীরের মুরীদদের পথভ্রষ্ট মনে করেন। এরই পরবর্তী পদক্ষেপ হোচ্ছে অন্য ধর্ম সৃষ্টি যা নানক সাফল্যজনকভাবে কোরেছেন। নানকের শিষ্য অর্থাৎ মুরীদদের মধ্যে কিছু বৌদ্ধ ও খ্রীস্টান থাকলেও প্রধানতঃ প্রায় সম্পূর্ণটাই ছিলো হিন্দু ও মুসলিম (Muslim)। অমৃতসরের স্বর্ণমন্দির, শিখদের কেবলার ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন কোরছিলেন আরেক মুসলিম (Muslim) সুফী সাধক- মিয়া মীর। অদৃষ্টের বিদ্রুপ-পরবর্তীকালে ভারত ভেঙ্গে দুই রাষ্ট্র হবার সময় এই শিখরা হিন্দুদের পক্ষ হোয়ে লক্ষ লক্ষ মুসলিম (Muslim) হত্যা করেছে, আর বর্তমানে যেখানে পারছে হিন্দু হত্যা কোরছে।

পেছনে বোলে এসেছি, আবার বোলছি- এই দ্বীনের যে তাসাওয়াফ আছে তা ভারসাম্যপূর্ণ, এর জাতীয় জীবনের শরীয়াহর সঙ্গে ভারসাম্যপূর্ণ। কিন্তু মোটামুটি খ্রীস্টীয় নবম শতাব্দীতে পারস্য থেকে যে একপেশে বিকৃত সুফীবাদ ইসলামে প্রবেশ কোরে একে স্থবির কোরে দিলো, বিশ্বনবীর (দঃ) অপরাজেয়, দুর্দ্ধর্ষ উম্মাহটাকে কাপুরুষ বানিয়ে দিলো সেটা ইসলামের তাসাওয়াফ নয়। এবং আজও ঐটাই 'মুসলিম (Muslim)' দুনিয়াময় জোরে সোরে চোলছে, ঐ প্রাণ হত্যাকারী তাসাওয়াফ প্রক্রিয়াকেই ভালো মুসলিম (Muslim) হবার উপায় হিসাবে বিবেচনা করা হোচ্ছে। কঠিন পরিশ্রম রেয়াযাত করে আত্মার শক্তি বৃদ্ধি করা হোচ্ছে। এ প্রক্রিয়া অন্যান্য ধর্মেও আছে এবং তারা সাধনা কোরে শক্তি লাভ করেন। তাদের কেরামত এই 'মুসলিম (Muslim)' সাধকদের চেয়ে কোন অংশে কম নয়। এই সাধনা করার জন্য এই উম্মাহর সৃষ্টি করা হয়নি। একে সৃষ্টি করা হোয়েছে পুর্ববর্তী দ্বীনগুলির বিকৃত অবস্থার আইন-কানুন, ও মানুষের মস্তিষ্ক প্রসূত রাজনৈতিক, আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থা চুরমার কোরে এই শেষ ইসলাম প্রতিষ্ঠা কোরে পৃথিবী থেকে সর্বরকম অবিচার, অন্যায়, শোষণ-যুলম নিশ্চিন্ন কোরে শান্তি (ইসলাম) স্থাপন করার জন্য। এই ব্যাপারে আল্লাহর (Allah) সরাসরি নির্দেশ পেছনে উল্লেখ কোরে এসেছি (কোরান- সূরা ফাতাহ ২৮)। আল্লাহর (Allah) সেই পরিষ্কার দিক-নির্দেশনা তার নবী (দঃ) কি অমান্য কোরে অন্য কাজ কোরেছিলেন? অবশ্যই নয়, তার কর্মবহুল বর্হিমুখী, সংঘর্ষমুখী জীবনই তার প্রমাণ। সেই জীবনের বর্তমানে যে তাসাওয়াফ চলে তার নামগন্ধ নেই, খানকাহ বোলে কোন শব্দ রসুলাল্লাহ (দঃ) বা তার আসহাব কোনদিন শুনেনও নাই। তসবিহ কি জিনিষ তারা জানতেন না (তসবিহ বহু পরে, আধ্যাত্ববাদের অনুপ্রবেশের পর খ্রীস্টানদের Rosary ও হিন্দুদের জপমালা থেকে নেয়া হোয়েছে)। ইতিহাস ও তার (দঃ) সিরাতসমূহ সাক্ষী যে তার জীবন শুধু সংগ্রাম, সংগ্রাম আর সশস্ত্র সংগ্রাম। আর এই বিকৃত তাসাওয়াফে সংগ্রামের গন্ধও নেই। এই তাসাওয়াফ যে ইসলামের নয় তার প্রকৃষ্ট প্রমান হোচ্ছে এই যে, এই তাসাওয়াফ অনুশীলনকারীদের মধ্যে বহু লোক আছেন যারা বর্ত্তমানে চালু পাশ্চাত্যের আইন ব্যবসায়ী, বহু আছেন যারা ব্যাংকের পরিচালক, ব্যাংকে কাজ করে ব্যাংকের সঙ্গে সুদ ভিত্তিক ব্যবসা করেন। এইসব লোকদের মধ্যে অনেক আছেন যারা রেয়াযত কোরে আধ্যাত্মিক শক্তি বৃদ্ধি কোরেছেন। তাদের কাশ্‌ফ হয়, অনেক গায়েবী খবর তারা জানতে পারেন, তাদের কেরামতের শক্তিও অর্জিত হোয়েছে। এখন প্রশ্ন - মানুষের তৈরী যে আইন ধ্বংস কোরে, যে শোষণমুলক, সুদভিত্তিক ধনতান্ত্রিক অর্থনীতি মাটিতে মিশিয়ে দিয়ে আল্লাহর (Allah) আইন ও জীবন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা কোরতে আল্লাহ (Allah) তার শেষ নবীকে (দঃ) ও তার উম্মাহকে নির্দেশ দিয়েছেন, সেইগুলিই যাদের পেশা, জীবিকা তারা কি কোরে ঐ উম্মাহভূক্ত হোতে পারেন? বিশেষ জটিল কষ্টসাধ্য প্রক্রিয়ায় অন্যান্য ধর্মের লোকেরা সাধনা কোরে যেমন ঐসব শক্তি লাভ করেন, এরাও তাই কোরছেন। শেষ দ্বীনের উদ্দেশ্য ও প্রক্রিয়ার সাথে এ সবের কোন মিল নেই- দুটো সম্পূর্ণ আলাদা জিনিষ। ভূল বোললাম, আলাদা জিনিষ নয়, বিপরীতগামী জিনিষ- একটি বর্হিমুখী ও বিস্ফোরক, অন্যটি অন্তর্মুখী স্থবির।

জানি না এ কথা সবার বোঝাবার মত কোরে লিখতে পারলাম কিনা যে এই দ্বীনের, জীবন-ব্যবস্থার একমাত্র উদ্দেশ্য হোচ্ছে পৃথিবীতে সব রকম অন্যায়-অবিচার, শোষণ, অশান্তি, রক্তপাত বন্ধ কোরে শান্তি (ইসলাম) প্রতিষ্ঠা করা। এইটাই হলো আল্লাহর (Allah) প্রতি ইবলিসের চ্যালেঞ্জ, যে চ্যালেঞ্জ আল্লাহ (Allah) গ্রহণ কোরেছেন। ফেরেশতারা, মালায়েকরা বোলেছিলেন এই নতুন সৃষ্টি মানুষ পৃথিবীতে অশান্তি (ফাসাদ) ও রক্তপাত (সাফাকু দ্দিমা) কোরবে। ফাসাদ শব্দের অর্থের মধ্যে অশান্তি, অবিচার, শোষণ, অত্যাচার সব কিছুই আসে আর সাফাকু দ্দিমা শব্দের অর্থের মধ্যে খুন, যখম, যুদ্ধ ইত্যাদি সব কিছুই আসে। মালায়েকরা মানুষ সৃষ্টির বিরুদ্ধে এ যুক্তি আল্লাহর (Allah) কাছে পেশ করেননি যে মানুষ তোমার এবাদত কোরবেনা, নামায, রোযা, হজ্ব কোরবে না, মন্দীরে, মসজিদে, গীর্জায়, সীনাগগে আর প্যাগোডায় যাবে না। আজ পৃথিবীময় মানুষ মসজিদে, মন্দীরে, সীনাগগে, প্যাগোডায় আর গীর্জায় শুধু ভীড় কোরছে তা নয়, ওগুলোতে জায়গা পাওয়া মুশকিল। প্রতিদিন শত শত নতুন উপাসনালয় পৃথিবীতে তৈরী হোচ্ছে, তাও উপাসকদের জায়গা হোচ্ছে না। ও ছাড়াও নানাভাবে মানুষ যার যার ধর্মের সমস্ত রকম অনুশাসন প্রাণপনে পালন কোরতে চেষ্টা কোরছে। কি ফল হোচ্ছে? পৃথিবীতে অন্যায়, অবিচার, মযলুমের ক্রন্দন, রক্তপাত, যুদ্ধ, হত্যা কোমছে? অবশ্যই নয় যে কোন পরিসংখ্যান নিঃসন্দেহে বোলে দেবে যে ওগুলো অত্যন্ত দ্রুতগতিতে বেড়ে যাচ্ছে। এই শতাব্দীতে দুটি বিশ্বযুদ্ধে চৌদ্দ কোটি বনি আদম যে শুধু হতাহত হোয়েছে তাই নয়, ঐ যুদ্ধের পর সংঘাত এড়াবার মানবিক প্রচেষ্টার ফল জাতিসংঘের (United Nation) জন্মের পরও আজ পর্য্যন্ত পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে যুদ্ধে দুই কোটির বেশী মানুষ শুধু নিহতই হোয়েছে, আহতদের সংখ্যা এর পাঁচ গুনের বেশী (20th Century Book of the Dead by Gill Elliot এবং World Military & Scocial Expenditures. 1983 by Ruth Leger Sivard)। এই মৃত্যুর আনুসঙ্গীক যে দুঃখ, হাহাকার, আর অশ্রু তা কোন পরিসংখ্যানে নেই। এ ছাড়া প্রতিদেশে, গরীব, ধনি সব রকম দেশে, পৃথিবীময় খুন, যখম, ধর্ষণ, চুরি-ডাকাতি এক কথায় সর্বরকম অপরাধ বাড়ছে এবং লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। তাহোলে মানুষের এই যে ধর্ম পালন, অতি নিষ্ঠার সাথে যার যার ধর্মের আনুষ্ঠানিকতার অনুশীলন, এসব কোরে কি লাভ হলো? কিছু্ই না। এগুলোয় কিছুই হবে না বোলেই মানুষ সৃষ্টির বিরুদ্ধে যুক্তিতে মালায়েকরা এ যুক্তি দেন নি যে মানুষ তোমার এবাদত কোরবে না, তোমার উপাসনা কোরবে না, বোলেছিলেন মানুষ ফাসাদ আর সাফাকু দ্দিমা অর্থাৎ অন্যায়, অবিচার, অশান্তি, যুদ্ধ আর রক্তপাত কোরবে। আল্লাহ (Allah) মানুষকে ঐ ফাসাদ আর সাফাকু দ্দিমা এড়াবার জন্য একটি মাত্র পথ বোলে দিলেন, আদমকে (আঃ) বোলে দিলেন এবং আদমের (আঃ) পর তার প্রতিটি নবীর (আঃ) মাধ্যমে মানুষকে বোলে দিলেন। সেই পথটি হোচ্ছে জীবন-বিধাতা (এলাহ) বোলে একমাত্র তাকেই, আল্লাহ (Allah)কেই, স্রষ্টাকেই স্বীকার কোরে নেওয়া, অন্য কোন বিধান না মানা, এবং এটাই হলো তওহীদ, ওয়াহদানীয়াত (Monotheism)। কিন্তু মনে রাখতে হবে ঐ ওয়াহদানীয়াত আজকের এই শুধু ব্যক্তিগত জীবনের ওয়াহদানীয়াত নয়, পূর্ণ জীবনের ওয়াহদানীয়াত, ব্যক্তিগত ও জাতীয় উভয় জীবনের ওয়াহদানীয়াত। শুধু ব্যক্তিগত জীবনের ওয়াহদানীয়াত হোচ্ছে শেরক। কারণ জাতীয় জীবনে অন্যের বিধান স্বীকার করা, মেনে নেওয়ার অর্থ আল্লাহর (Allah) অংশীদার স্বীকার কোরে নেওয়া। আর যে উভয় জীবনে অন্যের বিধান মেনে নিলো, সেতো কাফের।

মানুষকে আল্লাহ (Allah) এই যে একটিমাত্র শর্ত দিলেন অর্থাৎ শুধু একমাত্র তাকেই প্রভু, এলাহ অর্থাৎ জীবন-বিধাতা বোলে স্বীকার করা অন্য সর্বরকম বিধান অস্বীকার করা, এই যথেষ্ট। এটা কেন? এত সংক্ষিপ্ত, এত সহজ, এত ছোট্ট একটি শর্ত, একটা দাবী, এ কেন? এটা এই জন্য যে ক) যে সংবিধান, জীবন-বিধান জাতীয় জীবনে মেনে চললে পৃথিবী থেকে অশান্তি দূর হোয়ে শান্তি আসবে, তেমন সংবিধান একমাত্র স্রষ্টা ছাড়া আর কেউ তৈরী কোরতে পারবে না, অসম্ভব। স্রষ্টাকেই একমাত্র বিধান দাতা বোলে স্বীকার কোরে না নিলে তার বিধান মানার প্রশ্ন আসে না। তাই তার শর্ত ও দাবী মানুষের প্রতি এই যে আমাকে ছাড়া আর কাউকে বিধান দাতা, এলাহ বোলে মানবে না খ) একবার তাকে একমাত্র এলাহ বোলে স্বীকার কোরে জাতীয় জীবনে তার দেওয়া আইন (রাজনৈতিক, আর্থ-সামাজিক, দণ্ডবিধি সব রকম) প্রতিষ্ঠার পর ব্যক্তিগত অপরাধ নিজে থেকেই প্রায় লোপ পেয়ে যাবে। ব্যক্তিগত অপরাধের নিয়ন্ত্রণের জন্য তার দেওয়া আইনই যথেষ্ট। কাজেই সর্বপ্রথম ও সব চেয়ে প্রয়োজনীয় হোচ্ছে জাতীয় জীবনের তাকে একমাত্র এলাহ বোলে স্বীকার কোরে নেওয়া। এটা করা হোলে বাদ বাকি আর সব নিজে থেকেই ঠিক হোয়ে যাবে। তাই আল্লাহ (Allah) বিচারের দিন যার মধ্যেই সাচ্চা তাওহীদ পাবেন তাকেই সমস্ত গুনাহ মাফ কোরে দেবেন, অর্থাৎ জান্নাতে প্রবেশ কোরবে। এ ব্যাপারে অগুনতি হাদীস ও হাদীসে কুদসী রোয়েছে। এমন কি চুরি ও ব্যভিচারের মত কবিরা গোনাহকারীও জান্নাতে যাবে, যদি সে সাচ্চা, সত্য সত্যই বিশ্বাস করে যে এলাহ, বিধানদাতা, আল্লাহর (Allah) ছাড়া আর কেই নেই [হাদীস- আবু যর (রাঃ) থেকে বুখারী, মুসলিম (Muslim) ও মেশকাত]। অর্থাৎ জাতীয় ও ব্যক্তিগত জীবনে সে আর কারু তৈরী আইন-কানুন নিয়ম নির্দেশ মানতে পারে না। অন্যদিকে আল্লাহ (Allah) কোরানে বহুবার বোলছেন আমার ইচ্ছা হোলে আমি আমার বান্দার সব গোনাহ মাফ কোরে দেবো কিন্তু শেরক অর্থাৎ আমার দেওয়া বিধান, আইন-কানুন বাদ দিয়ে অন্যের তৈরী আইন-কানুন গ্রহণকারীকে আমি কখনই মাফ কোরবো না (কোরান- সূরা আন নিসা ৪৮)।

আজ পৃথিবীর 'অতি মুসলিমরা'(Muslim) নামাযে, রোযায়, হজ্বে, তাহাজ্জুদে, তারাবিতে, দাড়িতে, টুপি-পাগড়ীতে, পাজামায়, কোর্তায় নিখুঁত। শুধু একটিমাত্র ব্যাপারে তারা নেই, সেটা হলো তাওহীদ, ওয়াহদানীয়াত। যে আংশিক অর্থাৎ ব্যক্তিগত ওয়াহদানীয়াত ঐ অতি মুসলীম(Muslim)দের মধ্যে আছে তা আল্লাহ (Allah) আজও যেমন ঘৃণা ভরে প্রত্যাখ্যান কোরে রেখেছেন, হাশরের দিনও তেমনি ঘৃণা ভরে প্রত্যাখ্যান কোরবেন। কারণ তিনি বোলে দিয়েছেন যে আল্লাহর (Allah) কেতাবের কোন অংশে বিশ্বাস আর কোন অংশে অবিশ্বাসের শাস্তি শুধু যে কেয়ামতের দিনে ভয়াবহ হবে তাই নয়, এই দুনিয়ার জীবনেও অপমান, লাঞ্ছনা (কোরান- আল বাকারা ৮৫)।

কোন মন্তব্য নেই: